Ajker Patrika

ফটোশপের মাধ্যমে ট্রেনের টিকিট পরিবর্তন, রেলসেবা অ্যাপসে ধরা

আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২১, ১৪: ৩৫
ফটোশপের মাধ্যমে ট্রেনের টিকিট পরিবর্তন, রেলসেবা অ্যাপসে ধরা

আব্দুল্লাহ্ আল রাফিউ হাসান রাজশাহী নগরীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তিনি 'বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস ট্রেনে' রাজশাহী যাওয়ার জন্য গত ৩ অক্টোবর পঞ্চগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেশন থেকে আক্কেলপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত দুটি আসনের টিকিট কেনেন। এরপর ফটোশপের মাধ্যমে আক্কেলপুর রেলস্টেশনের জায়গায় এডিট করে রাজশাহী লিখে রেখেছিলেন।

একই দিন অপর এক যাত্রী একই নম্বরের টিকিটে রাজশাহী যাচ্ছিলেন। দুজনের কাছে একই নম্বেরের দুটি টিকিট থাকায় সেটি আক্কেলপুর রেলস্টেশন মাস্টারের রেলসেবা অ্যাপসের মাধ্যমে যাচাই করা হয়। এ সময় প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ে।

এ ঘটনায় গত ৪ অক্টোবর বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে আক্কেলপুর রেলস্টেশন ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রতারণার বিষয়টি তুলে ধরে একটি জনসচেতনতামূলক লেখা পোস্ট করা হয়।

ফেসবুকের ওই পোস্টে স্টেশনমাস্টার খাদিজা খাতুন উল্লেখ করেন, আব্দুল্লাহ্ আল রাফিউ হাসান নামে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র গত ২৯ সেপ্টেম্বর রেলসেবা অ্যাপসে পঞ্চগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেশন থেকে আক্কেলপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত 'ঘ' নম্বর বগির ৯১ ও ৯২ নম্বর আসনের দুটি টিকিট ৪৫০ টাকা কিনে নেন। সেই টিকিটে ফটোশপের মাধ্যমে আক্কেলপুর রেলস্টেশনের স্থানে এডিট করে রাজশাহী লিখে রাখেন। পড়ে ৩ অক্টোবর আক্কেলপুর রেলস্টেশন থেকে রাজশাহীগামী এক যাত্রী বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস ট্রেনে যাত্রার জন্য একই বগিতে ৯২ নম্বর আসনের একটি টিকিট ১৪০ টাকায় কিনে ট্রেনে ওঠেন। এরপর ওই ব্যক্তি ট্রেনে উঠে দেখেন তাঁর ৯২ নম্বর আসনে অপর এক যাত্রী বসে রয়েছেন। তিনি তাঁর কাছে থাকা টিকিট বসে থাকা যাত্রী আব্দুল্লাহ্ আল রাফিউল হাসানকে দেখান। তখন তিনি ৯২ নম্বর আসনটি তাঁর দাবি করেন।

এ নিয়ে চলে দুই যাত্রীর মধ্যে তর্কবিতর্ক। শেষে আক্কেলপুর থেকে ট্রেনে ওঠা যাত্রী ট্রেন থেকে নেমে এসে স্টেশনমাস্টারকে বিষয়টি জানান। তখন স্টেশনমাস্টার খাদিজা খাতুন তাঁর অফিসের একজন প্রতিনিধিকে ট্রেনে থাকা আব্দুল্লাহ্ আল রাফিউল হাসানের টিকিট চেক করতে বলেন। তখনো বিষয়টি ধরা পড়েনি। পরে দুজনের টিকেট রেলসেবা অ্যাপসের মাধ্যমে যাচাই করে দেখা যায় রাফিউল  ফটোশপের মাধ্যমে তাঁর টিকিটে আক্কেলপুরের জায়গায় রাজশাহী লেখেন। এরপর আব্দুল্লাহ্ আল রাফিউ হাসান বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য রাজশাহী যাচ্ছিলেন বলে টিকিটে স্টেশনের নাম পরিবর্তন করেছিলেন। তবে ভাড়া ঠিকই রেখেছিলেন বলেও জানান তিনি।

টিকিটে প্রতারণার বিষয়ে জানাতে চাইলে মুঠোফোনে রাফিউল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, `আমার বাড়ি পঞ্চগড় সদরে। আমি রাজশাহীতে একটি অ্যাডমিশন পরীক্ষা দিতে বাংলাবান্ধা ট্রেনে রাজশাহী আসছিলাম। ওই ট্রেনে ভিড় ছিল আর টিকিটও ছিল না। তাই সিটে বসে থেকে যাওয়ার জন্য আমি ফটোশপে টিকিট এডিট করেছিলাম। বিষয়টি আক্কেলপুর রেলস্টেশন মাস্টারের সঙ্গে মীমাংসা করেছি।'

আক্কেলপুর রেলস্টেশনের মাস্টার খাদিজা খাতুন বলেন, গত ৩ অক্টোবর বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস ট্রেনটি দুপুর ১টা ২০ মিনিটে আক্কেলপুর রেলস্টেশনে যাত্রাবিরতির জন্য দাঁড়ায়। ট্রেনটি ছেড়ে যায় দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে। এইি সময়ের মধ্যে আক্কেলপুর রেলস্টেশন থেকে এক যাত্রী টিকিট কেটে রাজশাহী যাওয়ার উদ্দেশে ট্রেনে ওঠেন। পরে সিট না পেয়ে বিষয়টি জানালে রেলসেবা অ্যাপসে চেক করে ঘটনাটি সামনে আসে।

খাদিজা খাতুন আরও বলেন, `রাফিউল হাসান ছাত্র মানুষ, আর পরীক্ষা দিতে তিনি রাজশাহী যাওয়ার কথা বলায় আমরা তাঁর বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করিনি। তবে তিনি যে অপরাধ করেছেন, তাঁর কঠিন সাজা হতে পারত। রেলসেবা অ্যাপসের মাধ্যমে ট্রেনের টিকিটের সব ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। যে কেউ এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিক টিকিটসংক্রান্ত সব সেবা পেতে পারেন। তাই এ ধরনের প্রতারণা না করার অনুরোধ রইল।'

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত