Ajker Patrika

কলমাকান্দায় মহাদেও নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
কলমাকান্দায় মহাদেও নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার মহাদেও নদ থেকে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রংছাতি ইউনিয়নের পাতলাবন এলাকায় ‘মহাদেও নদ রক্ষা কমিটি’ ও ‘রংছাতি ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণের’ ব্যানারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সহযোগিতা করে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘বেলা’।

এ ছাড়াও সংগঠনের ব্যানার নিয়ে সংহতি প্রকাশ করে ‘বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস) ’ বাংলাদেশ গারো লিঙাম ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, ট্রাইব্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (গাসু), গারো স্টুডেন্ট ফেডারেশন (জিএসএফ), লিঙাম স্টুডেন্ট ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কলমাকান্দার মহাদেও নদের ওমরগাঁও, হাসানোয়াগাঁও এবং বিশাউতি মৌজায় প্রায় ৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকায় ইজারা পান মো. চান মিয়া নামের এক ব্যক্তি। কিন্তু ইজারাদারের সঙ্গে স্থানীয় এমপি মানু মজুমদারের শ্যালক উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পলাশ বিশ্বাস, তাঁর ভাই সুজন বিশ্বাসসহ আত্মীয়স্বজন, সাবেক যুবলীগ নেতা এরশাদুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তি যুক্ত রয়েছেন। তাঁরা ইজারাকৃত নির্দিষ্ট জায়গা থেকে বালু উত্তোলন না করে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে মহাদেও, সন্ন্যাসীপাড়া, চিকনটুপ, বড়ুয়াকোনা, পাতলাবনসহ নদের বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন করে আসছেন। এতে করে এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্টের পাশাপাশি নদের তীরের বাড়ি ঘর, স্থানীয় বাজার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গির্জাসহ বেশ কিছু স্থাপনা ভাঙার উপক্রম হয়েছে। এ ছাড়া বালু ও পাথর পরিবহনের ফলে গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ভেঙে যাচ্ছে। অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধের দাবিতে স্থানীয়রা বিভিন্ন সময় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ, মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আসছে।

উপজেলা যুবলীগের সাবেক সদস্য শফিকুল আলম বলেন, ‘মহাদেও নদ থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বালু পাথর তোলা হচ্ছে। আমি বাধা দেওয়ায় গত কয়েক দিন আগে ডায়ারকান্দা বাজারে কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী হামলা চালিয়ে আমার ব্যক্তিগত চেম্বার ভাঙচুর ও মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।’

মানববন্ধনে সংগঠনের ব্যানার নিয়ে সংহতি প্রকাশ করে কয়েকটি সংগঠনউপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা চন্দন বিশ্বাস বলেন, ‘অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধে আমি গত বছরের ২৬ এপ্রিল জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’

এ বিষয়ে ইজারাদার চাঁন মিয়ার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পলাশ বিশ্বাস বলেন, বালুমহালের সীমানা নিয়ে কিছু জটিলতা আছে। জেলা প্রশাসন থেকে যে স্থান কয়েক বছর ধরে বালুমহাল হিসেবে ইজারা দিয়ে আসছে সেখানে তেমন বালু নেই। ইজারাদার অনেক টাকা রাজস্ব হিসেবে জমা দিয়েছেন। বাধ্য হয়ে অন্যস্থান থেকে বালু তুলছেন। তবে তিনি (পলাশ) বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেন।

কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাসেম বলেন, ‘প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইজারা বহির্ভূত স্থান থেকে লুকিয়ে মাঝে মধ্যে বালু-পাথর উত্তোলনের খবর পেয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। গত এক মাসে ১৫টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ২০টি ড্রেজার ধ্বংস, ৫ লাখ টাকা জরিমানা ও দুজনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

মহাদেও নদ রক্ষা কমিটির সভাপতি লুয়ের নংমিনের সভাপতিত্বে ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচি চলাকালে আরও বক্তব্য দেন, গারো লিঙাম ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুরঞ্জন হাজং, সাধারণ সম্পাদক পিটারসন কুবি, গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল ঘাঘড়া, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সদস্য শফিকুল আলম, রংছাতি মানবতার সংগঠনের সভাপতি রিপন খান, পাতলাবনের বাসিন্দা সেলিনা ঘাঘড়া, সন্ন্যাসীপাড়ার জেসেফ নাফাক, ইউনিয়ন বাগাছাসের সভাপতি অরবিল রিছিল, ইউনিয়ন লিঙামের সাধারণ সম্পাদক নবীন কুবি, আদিবাসী নেতা অঙ্কুর ঘাঘড়া, আদিবাসী নেতা মোহন রংখেংসহ প্রমুখ। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত