Ajker Patrika

ঝিনাইদহে আওয়ামী লীগ কর্মী বরুণ হত্যা রাজনৈতিক নাকি জমি সংক্রান্ত

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ০১: ০৯
ঝিনাইদহে আওয়ামী লীগ কর্মী বরুণ হত্যা রাজনৈতিক নাকি জমি সংক্রান্ত

ঝিনাইদহ শহরের হামদহ ঘোষপাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগ কর্মী বরুণ ঘোষ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা করছে পুলিশ। পরিবারের বক্তব্যে এই হত্যাকাণ্ডে রাজনৈতিক বিরোধের ইঙ্গিত রয়েছে। তবে জমিজমা নিয়েও স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে তাঁর বিরোধ ছিল বলে জানা যাচ্ছে। সেখানে নৌকার প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী উভয়েই দাবি করছেন, বরুণ তাঁদের পক্ষে কাজ করেছেন। পরিবার বলছে, নির্বাচনী প্রচার শুরু হওয়ার পর থেকেই বরুণ জীবননাশের হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। 

এদিকে বুধবার বরুণ হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন তাঁর বন্ধুরা। এদিন দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা। 

কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন—বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম–সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ কুমার নাথ, পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের যুগ্ম–সাধারণ সম্পাদক শুভাশীষ বিশ্বাস সাধন, সাংগঠনিক সম্পাদক বিপ্লব দে। এ সময় স্থানীয় নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। 
 
এর আগে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের পুরাতন ডিসি কোর্ট চত্বর থেকে এসএসসি–৯৪ ব্যাচে বরুণের বন্ধুরা শহরে বিক্ষোভ করেন। পরে পোস্ট অফিস মোড়ে গিয়ে মানববন্ধন করেন তাঁরা। 

মানববন্ধনে বরুণের বন্ধু শামীম আহমেদ, রবিন অধিকারী, মোহাম্মদ আলীসহ বন্ধুরা বলেন, বরুণ খুব ভালো ছেলে ছিল। ওর হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে একটি মহল রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। আমরা কাউকে উদ্দেশ করে নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শুধু বলতে চাই, আমাদের বন্ধু হত্যার সঠিক কারণ খুঁজে বের করুন। দোষীদের আইনের আওতায় আনুন। 

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে ঝিনাইদহ শহরের ঘোষপাড়া মোড়ে ব্রিজের ধারে একটি চায়ের দোকানের সামনে ছিলেন বরুণ ঘোষ। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাঁকে কুপিয়ে আহত করে। স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। 

বরুণ ঘোষ (৪০) ঝিনাইদহ শহরের হামদহ ঘোষপাড়া এলাকার নরেন ঘোষের ছেলে। তিনি রড-সিমেন্টের ব্যবসা করতেন। 

বরুণ হত্যাকাণ্ডের সময় চায়ের দোকানে কারা অবস্থান করছিলেন তা স্থানীয়রা বা পুলিশ কেউই জানাতে পারছে না। ঘটনার পর সেখানে ধারালো অস্ত্রের একটি হাতল পড়ে ছিল। 
 
বরুণ হত্যার বিচার দাবিতে বুধবার মানববন্ধন করেন তাঁর বন্ধুরা। ছবি: আজকের পত্রিকানাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জানান, বরুণ আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন। তিনি নৌকার পক্ষে ছিলেন। তবে সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করতেন না। হামদহ এলাকাসহ আশপাশে বেশ সম্পত্তি রয়েছে তাঁদের। এটি নিয়েও অনেকের সঙ্গে বিরোধ ছিল। জমির বিরোধ থেকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে অনেকের ধারণা। আবার কেউ কেউ এটি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা বলে দাবি করছেন। 

বরুণ ঘোষের বোন সুচিত্রা রানী ঘোষ গত মঙ্গলবার রাতে সদর হাসপাতালে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমরা কোন দিকে যাব, নিরাপত্তা কে দেবে? তোমরা কি 
বিচার করো? তোমরা কোনো বিচার করো না। ভোট করে পাস করে তোমরা কি হও আর গরিব মানুষের কী লাভ হয়?’ 

হাসপাতালে বরুণের ভাবি নীলিমা ঘোষ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচনের পর থেকেই বরুণ বলত বাড়ি বাইরে যাব না। যদি আমার কিছু ক্ষতি হয়ে যায়। আমরাও বলতাম তুই বাসায় থাক। কেবল ভোট শেষ হলো। কিছুদিন পরে বাইরে যাবি।’ 

তবে বুধবার দুপুরে বরুণের বাড়িতে গেলে এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে বরুণের পরিবারের সদস্যরা আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা। ছবি: আজকের পত্রিকাজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কনক কান্তি দাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, বরুণ আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছিল, বিভিন্ন সভায় গিয়েছিল। এটিএ হত্যাকাণ্ডের একটি কারণ হতে পারে বলে তাঁর ধারণা। 

ঝিনাইদহ-২ আসনের পরাজিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকী বলেন, বরুণ নৌকার কর্মী ছিলেন। ভোটের বরুণ তাঁকে গিয়ে বলেছিলেন, বিশেষ মহল তাঁকে নৌকার ভোট না করতে হুমকি–ধামকি দিচ্ছে। 

তাহজীব বলেন, ‘আমি তাকে আশ্বস্ত করেছিলাম যে, তুমি নৌকার সমর্থন কর, শেখ হাসিনার দল কর, তোমার কোনো ভয় নেই। তারপর ভোট শেষ হলো এবং এই হত্যার ঘটনা ঘটল।’ 

অন্যদিকে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল বলেন, বরুণ ঘোষ নির্বাচনে তাঁর পক্ষে কাজ করেছেন, বিভিন্ন প্রচার সভাতেও গেছেন। 

তিনি বলেন, ‘আমি বলতে পারি, সে আমার একজন কর্মী ছিল। পরিবারের পক্ষ থেকে যেটা বলা হচ্ছে, সেটি সঠিক কথা না। তবে আমিও চাই এর ঘটনার প্রকৃত সত্য বের করে আনা হোক এবং জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।’ 

বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম–সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ কুমার নাথ বলেন, ‘নির্বাচন পরবর্তী সময়ে আক্রোশের বশবর্তী হয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় এ ধরনের আঘাত সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত। অনতিবিলম্বে এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। বিচারের আওতায় নেওয়া হোক।’ 
 
ময়নাতদন্তে অংশ নেওয়া চিকিৎসকদের মধ্যে ডা. রেজাউল ইসলাম রেজা জানান, বরুণের হাত ও পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত বেশি ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বাকি তথ্য ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই জানা যাবে। 

বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ বরুণ হত্যা রহস্য উদ্‌ঘাটনে কাজ করছে। আমরাও তার পরিবারের এজাহারের অপেক্ষায় আছি। মৃতদেহের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। বরুণদের জমি–জমা সংক্রান্ত মামলা আদালতে চলমান আছে। ২০১৯ সালের শেষ দিকে থানায় অন্যদের বিরুদ্ধে তাঁর ভাই অরুণ বাদী হয়ে আদার সেকশনের একটি মামলাও করেছিলেন। যেটার চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১০
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।

গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।

এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র‍্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।

তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।

অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত