Ajker Patrika

শাহজাহানপুরে যুবলীগ কর্মী খুনের যেসব কারণ জানাল র‍্যাব ও ডিবি 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৩, ১৪: ১৪
Thumbnail image

এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ১২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের কমিটি, খিলগাঁও-মালিবাগ এলাকায় ফুটপাতের ব্যবসা ও পানির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে স্থানীয় শাহজালাল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে বিরোধের জেরে খুন হন যুবলীগের কর্মী অলিউল্লাহ রুবেল। শাহজালাল ওই এলাকায় চাঁদাবাজি করে বেড়াতেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অন্তত ২৫টি মামলা রয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রাথমিক তদন্তে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছে র‍্যাব ও ডিবি। 

গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে রাজধানীর শাহজাহানপুরে গুলবাগ জোয়ারদার লেনের বাসার পাশের রাস্তায় রুবেলের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। পরিবারের লোকজন তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসক রাত ২টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন। 

রুবেল হত্যাকাণ্ডে জড়িত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব ও ডিবি। এর মধ্যে আটজনকে গোয়েন্দা পুলিশ ও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-৩। গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবার তাঁদের রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

ডিবির হাতে গ্রেপ্তার আটজন হলেন হাবিব আহসান, মো. আলিফ হোসাইন, মো. রবিউল সানি, মো. মেহেদী হাসান, মো. শাহজালাল, মো. রফিকুল ইসলাম, নুর আলম ও মো. সুমন মীর। আর র‍্যাব গ্রেপ্তার করেছে আদনান আসিফ ও মো. শাকিলকে। নিহতের স্ত্রী তানজিনা দেওয়ানের শাহজাহানপুর থানায় করা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অনন ও নিবির নামে দুজনকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

র‍্যাব বলছে, পানির ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চেষ্টা করছিলেন রুবেল। এই ব্যবসা ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শাহজালালের সঙ্গে রুবেলের শত্রুতা তৈরি হয়। শাহজালালের নির্দেশে রুবেলকে হত্যা করা হয়েছে। 

র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার দুজনআজ রোববার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে দুজনের গ্রেপ্তারের বিষয় জানান র‍্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। 

লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, হত্যার শিকার অলিউল্লাহ রুবেল রাজধানীর শাহজাহানপুরে পরিবার নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। শান্তিবাগ এলাকায় ইন্টারনেট ও ডিমের পাইকারি ব্যবসা করতেন রুবেল। সম্প্রতি ওই এলাকায় পানির ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চেষ্টা করছিলেন তিনি। মূলত এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শাহজালাল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর বিরোধ তৈরি হয় এবং তাঁকে হত্যা করা হয়। 

এদিকে একই ঘটনায় আজ দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আটজনের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানান ডিবির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ। 

 আটজনকে গ্রেপ্তারের পর তাঁদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিবির প্রধান বলেন, রুবেলের সঙ্গে নিবির ও শাহজালালের এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ হয়। আধিপত্য বিস্তারের জেরে নিবির ও শাহজালাল দুজন মিলে রুবেলকে হত্যার জন্য হাবিবকে ঠিক করেন। নিবির হাবিবকে চাপাতি কেনার ৪ হাজার টাকা দেন। টাকা দিয়ে হাবিব খিলগাঁও বাজার থেকে দুটি চাপাতি কেনেন। ঘটনার আগের দিন শাহজালাল ও হাবিব দুজন মিলে রুবেলকে মারার পরিকল্পনা করেন। 

তিনি বলেন, ঘটনার দিন অনন তাঁর ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল নিয়ে রুবেলের গতিবিধির ওপর নজর রাখেন। হাবিব ও আলিফ চাপাতি নিয়ে রুবেলের বাড়ির সামনে অবস্থান নেন। মেহেদী হাসান ও সানি দুপাশে লোকজনের পাহারায় থাকেন। রুবেল রিকশাযোগে বাসার দিকে রওনা দিলে অনন হাবিবকে খবর দেন। তখন হাবিব ও আলিফ চাপাতি নিয়ে প্রস্তুত থাকেন। রুবেলকে রিকশায় দেখেতে পেয়ে হাবিব ও আলিফ চাপাতি নিয়ে এগিয়ে এলে রুবেল দৌড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। তখন পেছন থেকে হাবিব ও আলিফ তাঁকে ধাওয়া করেন। 

ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদ আরও বলেন, আলিফ রুবেলের মাথায় চাপাতি দিয়ে কোপ দিলে তিনি মাটিতে পড়ে যান। সে সময় হাবিব ও আলিফ এলোপাতাড়ি কুপিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান। পালানোর সময় চাপাতি রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে যান। 

এদিকে র‍্যাব জানায়, হত্যাকারীরা রুবেলের পায়ের পাতা কুপিয়ে বিচ্ছিন্ন করে দেন। এ অবস্থায়ও বাঁচার জন্য রুবেল রক্তাক্ত শরীর নিয়েই এগিয়ে গিয়ে মালিবাগ সরলতা ভবনের সামনে রাস্তায় গিয়ে লুটিয়ে পড়লে দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে রুবেল মারা যান। 

নিহত রুবেল শাহজাহানপুর থানা ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ছিলেন এবং এলাকায় ইন্টারনেটের ব্যবসা করতেন। স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে জোয়ারদার লেনের ১৫৩/এ নম্বর বাসায় ভাড়া থাকতেন তিনি। তাঁর বাবার নাম শেখ নবী উল্লাহ খোকন। শান্তিবাগে তাঁদের নিজেদের বাড়ি রয়েছে। 

হাসপাতালে তাঁর ভগ্নিপতি মো. মামুন আহমেদ সিদ্দিকী জানান, রুবেল শাহজাহানপুর থানা ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক। পরে যুবলীগের রাজনীতি করতেন। কিন্তু কোনো পদে ছিলেন না। এলাকায় তাঁর ইন্টারনেটের ব্যবসা রয়েছে। এ ছাড়া তেজগাঁও থেকে ডিম এনে শান্তিনগর, সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় বিক্রি করতেন। তাঁর স্ত্রী তানজিনা দেওয়ান কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত