Ajker Patrika

মুক্তিপণ নেওয়ার পর মামলা দিয়ে জেল খাটানোর অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
মুক্তিপণ নেওয়ার পর মামলা দিয়ে জেল খাটানোর অভিযোগ

কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার হোসাইন আল মাসুম (৩৪) স্ত্রী জেসমিন আক্তার সিমাসহ রাজধানীর খিলগাঁও থানার বনশ্রী হাউজিংয়ের একটি বাসায় থাকেন। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। গত ৩০ মে পূর্ব পরিচিত ও কয়েকজন ব্যবসায়িক সহযোগী তাঁকে অপহরণ করেন। এরপর মুক্তিপণ পেতে চলে নির্মম নির্যাতন। ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ হিসেবে দিয়েও রেহাই মেলেনি মাসুমের। উল্টো অপহরণকারীদের মামলায় আসামি হয়ে জেল খেটেছেন। 

সম্প্রতি কারাগার থেকে বের হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ভুক্তভোগী এই ব্যবসায়ী। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন। মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে ন্যস্ত করা হয়েছে। 

আদালতে দেওয়ার মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৩০ মে রাত ১১টার দিকে বনশ্রীর বাসার কাছে ফরায়েজী হাসপাতাল থেকে স্ত্রীর (তখন সন্তানসম্ভবা) কিছু মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে ফেরার পথে মাসুমের সঙ্গে পূর্বপরিচিত শামিম রহমানের দেখা হয়। সেখানে তাপসী নামে এক তরুণী আসেন, যাকে শামিম তাঁর বন্ধু হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। কথাবার্তার একপর্যায়ে মাসুম দুজনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসার উদ্দেশে পা বাড়ান। কিছু দূর যেতেই দুটি প্রাইভেটকার তাঁর পথরোধ করে। মাসুমকে অবাককরে দিয়ে একটি গাড়ি থেকে বেরিয়ে সামনে আসেন শামিম। শামিমের নেতৃত্বে তাপসী, অপু, রিমা, হান্নান ও বাবুসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজন তাঁকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায়। 

এ বিষয়ে মাসুম বলেন, ‘গাড়ি থেকে নেমে তাঁরা ফিল্মি স্টাইলে আমাকে অস্ত্রের মুখে গাড়িতে তোলে। চিৎকার করলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এরপর আমার চোখ আর মুখ বেঁধে ফেলা হয়। আমাকে শামিমের নিকেতনের অফিসের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মামলার ২ নং আসামি ইফতেখার উদ্দিন টুটুল আমার মাথায় পিস্তল ঠেকায়। এই সুযোগে তাপসী আমার দেড় লাখ টাকা মূল্যের আইফোন ও পকেটে থাকা নগদ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে নেয়। এরপর আমাকে বেধড়ক মারধর করা হয়।’ 

মাসুম বলেন, ‘এর কিছুক্ষণ পর শামিম আমার কাছে ১ কোটি টাকা দাবি করে। আমি রাজি না হলে আবারও মারধর করা হয়। একপর্যায়ে আর সহ্য করতে না পেরে তাদের কথায় রাজি হই। এরই মধ্যে তারা আমাকে কয়েকটি খালি স্ট্যাম্প এবং সাদা কাগজে সই করায়। ফোনটা হাতে দিয়ে টাকার ব্যবস্থা করতে বলে। তখন আমি টাকার বিষয়ে আমার পরিচিত বড় ভাই মো. ফরহাদ রেজাকে জানাই। সে অনুযায়ী তিনি পরদিন অর্থাৎ ৩১ মে সকালে তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে শামিমের অ্যাকাউন্টে ৫ লাখ টাকা পাঠান। কিন্তু তারা আরও টাকার জন্য আমাকে চাপ দিতে থাকে।’ 

 ‘এরই মধ্যে আমার স্ত্রী আমাকে নানা জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ৩১ মে খিলগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। বিষয়টি টের পেয়ে শামিম, টুটুল এবং তাদের লোকেরা আমাকে নিকেতন থেকে মুন্সিগঞ্জ নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে অনেক মারধর করে। এরপর তারা আমাকে ২ জুন হাতিরঝিল থানায় এনে একটি বানোয়াট প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার করায়। এই মামলায় আমি এক মাসের বেশি জেল খেটে ৪ জুলাই বের হই। এরই মাঝে ঘটনার আকস্মিকতায় আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। নিজেকে একটু গুছিয়ে এখন ন্যায়বিচার পেতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। এরই মধ্যে আদালত আমার মামলাটির দায়িত্ব পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) দিয়েছে।’ 

অপহৃত ব্যক্তিকে পরে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে জানতে চাইলে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনার কাছ থেকে শুনলাম। থানায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানাতে পারব।’ অবশ্য পরে এ ব্যাপারে জানতে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলেও ওসি আর সাড়া দেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত