Ajker Patrika

জুয়ার টাকা জোগাতে মা-ছেলেকে গলা কেটে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১১ জুলাই ২০২২, ১৫: ৫১
জুয়ার টাকা জোগাতে মা-ছেলেকে গলা কেটে হত্যা

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার বাহ্মণনদী এলাকায় মা-ছেলেকে গলা কেটে হত্যার ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িত ঘাতককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জ। গত শনিবার (২ জুলাই) রাতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। এই ঘটনায় নিহতের মা খন্দকার তাসলিমা বেগম বাদী হয়ে আড়াইহাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে একটি সুপারি গাছের গায়ে লাগা কাদা মাটির সূত্র ধরে হত্যাকাণ্ডে জড়িতকে শনাক্ত করা হয়। 

পিবিআই বলছে, ভারতীয় টি-টোয়েন্টি লিগ আইপিএলের ম্যাচে জুয়া খেলে ৭০ হাজার টাকা ঋণী হয়ে যান গার্মেন্টস শ্রমিক সাদিকুর রহমান সাদিক। আর এই টাকার জন্য পাওনাদারদের মানসিক চাপের কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি। নিহতের চাচাতো দেবর সাদিকুর রহমান সাদিক। 

আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার। 

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার বলেন, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের ব্রাহ্মনদী ইউনিয়নের উজান গোবিন্দি এলাকার বাসিন্দা রাজিয়া সুলতানা ওরফে কাকুলি ও তার শিশু সন্তান তালহা (০৮) হত্যায় জড়িত সাদিককে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় হত্যার পরে বাসা থেকে লুট করা স্বর্ণালংকার ও হত্যায ব্যবহৃত ধারালো বটি উদ্ধার করা হয়েছে। এলাকায় নম্রভদ্র ও নামাজি ছেলে হিসেবে পরিচিত গার্মেন্টস কর্মী সাদিকুর রহমান ওরফে সাদিক জুয়ার টাকা পরিশোধ করতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে জানা গেছে। 

যেভাবে হত্যা করা হয়
গত ২ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পরে নিহত কাকুলির বাড়ির গেটে গিয়ে ‘ভাবি ভাবি’ বলে ডেকে গেট খুলতে বলে সাদিকুর। কিছু সময় পর কাকুলি দরজা খুললে সাদিক জানান তাঁর মা ইলেকট্রিক ব্লেন্ডার ধার নেওয়ার জন্য পাঠিয়েছে। পরে কাকুলির ঘরে প্রবেশ করে সাদিকুর। এ সময় নিহতের ছেলে তালহাকে (৮) ভাত খাওয়াচ্ছিলেন। তালহা ঘুম ঘুম চোখে ভাত খাচ্ছিল। কাকুলীকে পাশের রুমে আসার অনুরোধ করেন সাদিকুর। পাশের রুমে গেলে সাদিকুর কাকুলীর হাতে পায়ে ধরে দশ হাজার টাকা ধার চান। টাকা চাইলে কাকুলি জানায় তাঁর কাছে কোনও টাকা নেই। সাদিকুর অনেক জোরাজুরি করার পর কাকুলি ঘরের আলমারি খুলে দেখিয়ে বলে ‘দেখ আলমারিতে শুধু ১০০ টাকা আছে। আর কোন টাকা নাই।’ তখন আলমারির ভেতরে একটি বাক্সে কিছু স্বর্ণের গয়না দেখতে পায় সাদিকুর। আর এগুলো নেওয়ার জন্য লোভ করেন তিনি। কাকুলি আলমারি বন্ধ করে চাবি রাখার পরে তাঁকে চেয়ারে বসিয়ে প্রথমে ওড়না দিয়া গলায় ফাঁস দেয় সাদিক। কাকুলি নিস্তেজ হয়ে পড়ে গেলে বিছানার পাশেই রাখা ইস্ত্রি দিয়ে কাকুলির মাথায় সজোরে আঘাত করে সাদিকুর। এতে পুরোপুরি অজ্ঞান হয়ে যায় কাকুলি। পরে সাদিকুর দ্রুত রান্না ঘর থেকে সবজি কাটার বটি এনে অজ্ঞান অবস্থায় পরে থাকা কাকুলির গলায় পোচ দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে পাশের রুমে ঘুমন্ত তালহাকেও বটি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে সাদিক। এ সময় তালহা একটি চিৎকার দিয়েছিল। এরপর আলমারিতে থাকা স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায় ঘাতক সাদিকুর। 

পিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া সাদিকহত্যাকারী চিহ্নিত হলো যেভাবে
রাতের অন্ধকারে মা ও ঘুমন্ত শিশু ছেলেকে হত্যার ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এই ঘটনায় নিহতের মা খন্দকার তাসলিমা বেগম বাদী হয়ে আড়াইহাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে নিহতের বসত ঘরের পেছনে দেয়ালের সঙ্গে লাগানো সুপারি গাছের গোড়া থেকে আনুমানিক দুই ফিট ওপরে এক জায়গায় সদ্য কাদামাটি লাগানো দেখতে পান পিবিআই সদস্যরা। তদন্তকারী কর্মকর্তারা দেখতে পান সুপারি গাছে কোনো ফল নেই। বিষয়টি সন্দেহের সৃষ্টি করে। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তারা স্থানীয় সোর্সের মাধ্যমে জানতে পারে এই বাড়িটির ওয়াইফাই সংযোগ থাকায় নিহতের ভাশুরের ছেলে অজিদ কাজীসহ (১৬) স্থানীয় কয়েকটি ছেলে এখানে বসে অনলাইন গেমস খেলে। 

এমন তথ্যের পর জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে কাকুলির ভাশুরের ছেলে অজিদ কাজী জানান, ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ির পেছনে দেয়াল ঘেঁষে বসে অনলাইনে মোবাইলে গেমস খেলছিল তারা। হঠাৎ তালহার একটি চিৎকার শুনতে পায় তারা। এরপর বাথরুমে কারও হাত ধোয়ার শব্দ শুনতে পায়। সঙ্গে সঙ্গে অজিদ বিল্ডিংয়ের পেছনে দেয়ালের সঙ্গে লাগানো সুপারি গাছ বেয়ে বাথরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখতে পান সাদিকুর ওরফে সাদিক পানির কলে হাত ধুচ্ছেন। এরপর সাদিকুরকে দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে যেতে দেখে সে। এসময় সাদিকুর বের হয়ে যাবার সময় ঘরের পেছনে অজিদ কাজীকে বসে থাকতে দেখে। 

পরের দিন সকাল বেলা হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পরপরই আসামি সাদিকুর অজিদ কাজীর সঙ্গে দেখা করে বলে ‘আমার কথা কাউকে বললে তোরে জানে মেরে ফেলব।’ এই ভয়ে অজিদ কাজী ঘটনা চেপে যায়। 

নামাজি ও নম্র ভদ্র ছেলেটি যে কারণে ঘাতক বনে গেলো
বনজ কুমার বলেন, হত্যাকাণ্ডের পরের দিন ঘাতক সাদিক নিহতদের মরদেহ দেখতে আসলেও তাঁকে কেউ সন্দেহ করেনি। গার্মেন্টস শ্রমিক সাদিকুর এলাকায় নম্র ভদ্র ও নামাজি ছেলে হিসেবে পরিচিত। কিন্তু জুয়ার ফাঁদে পড়ে ঋণের জালে জড়িয়ে যায়। এই টাকা পরিশোধের জন্য অনবরত তাঁর ওপর চাপ সৃষ্টি করে পাওনাদাররা। ফলে মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান সাদিকুর। তদন্তের তাঁর নাম বের হওয়ার আগ পর্যন্ত কারও সন্দেহের তালিকায় ছিলেন না তিনি। এমনকি হত্যার পরেও বাড়িতেই ছিলেন ঘাতক সাদিকুর। 

ঘাতকের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা
পিবিআই কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিহত কাকুলির মা, ছোটবোনসহ আত্মীয়স্বজনরা। নিহত কাকুলির মা ও মামলার বাদী খন্দকার তাসলিমা বেগম বলেন, আমার মেয়েকে যারা হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি চাই। যেভাবে আমার মেয়েকে হত্যা করেছে সেভাবেই তাঁদের হত্যা করা হোক। 

তিনি আরও বলেন, আমার ৬ ছেলে মেয়ের মধ্যে কাকুলি তৃতীয়। আড়াই বছর আগে তাঁর স্বামী মারা যায়। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে স্বামীর বাড়িতেই থাকত। 

এদিকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার ঘাতক সাদিকুর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। দায়েরকৃত মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। এরপর তিনি আদালতে দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানান পিবিআই প্রধান। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, ভাইরাল সেই তরুণী গ্রেপ্তার

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বদলে অনৈক্যের প্রচেষ্টার জন্য কমিশনকে ধন্যবাদ: সালাহউদ্দিন

বিসিএসে রিপিট ক্যাডারে নিয়োগের পথ বন্ধ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, ভাইরাল সেই তরুণী গ্রেপ্তার

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বদলে অনৈক্যের প্রচেষ্টার জন্য কমিশনকে ধন্যবাদ: সালাহউদ্দিন

বিসিএসে রিপিট ক্যাডারে নিয়োগের পথ বন্ধ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, ভাইরাল সেই তরুণী গ্রেপ্তার

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বদলে অনৈক্যের প্রচেষ্টার জন্য কমিশনকে ধন্যবাদ: সালাহউদ্দিন

বিসিএসে রিপিট ক্যাডারে নিয়োগের পথ বন্ধ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, ভাইরাল সেই তরুণী গ্রেপ্তার

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বদলে অনৈক্যের প্রচেষ্টার জন্য কমিশনকে ধন্যবাদ: সালাহউদ্দিন

বিসিএসে রিপিট ক্যাডারে নিয়োগের পথ বন্ধ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১০
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।

গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।

এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র‍্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।

তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।

অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, ভাইরাল সেই তরুণী গ্রেপ্তার

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বদলে অনৈক্যের প্রচেষ্টার জন্য কমিশনকে ধন্যবাদ: সালাহউদ্দিন

বিসিএসে রিপিট ক্যাডারে নিয়োগের পথ বন্ধ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত