Ajker Patrika

নারী পোশাক শ্রমিককে হাত-পা বেঁধে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যাচেষ্টা, গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২২, ১৮: ০৬
Thumbnail image

গাজীপুরের শ্রীপুরে কাজ শেষে রাতে বাড়ি ফেরার পথে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নারী পোশাক শ্রমিক। ধর্ষণের পর ওই নারীকে কীটনাশক পান করিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। কুকুরের হট্টগোল শুনে স্থানীয়রা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলে বিবস্ত্র অবস্থায় ফেলে যায় অভিযুক্তরা। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯- এ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।

গাজীপুরের শ্রীপুরে গত সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত পৌনে ১১টার দিকে উপজেলা কাওরাইদ ইউনিয়নের এ ঘটনা।

ভুক্তভোগী নারী শ্রমিকের (২৮) বাড়ি শ্রীপুর উপজেলায়। তিনি পার্শ্ববর্তী ভালুকা উপজেলায় একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁর স্বামীর বাড়ি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে। ভুক্তভোগী নারী বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ভুক্তভোগী নারী শ্রমিকের বরাত দিয়ে তাঁর ভাবি জানান, গত সোমবার রাত পৌনে ৭টার দিকে কারখানা ছুটি শেষে অটোরিকশা নিয়ে বাড়িতে রওনা হন ভুক্তভোগী। এরপর একটি এলাকায় পৌঁছালে তাঁকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে শরীরের জামাকাপড় কেটে হাত-পা বেঁধে পালাক্রমে চারজন মিলে ধর্ষণ করে। এরপর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে যায় অভিযুক্তরা।

বোনের নির্যাতনের কথা বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী ওই নারীর ভাই বলেন, ‘গত সোমবার রাত পৌনে ১১টার দিকে স্থানীয়রা ফোন করে আমাকে বিষয়টি জানায়। আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই পুলিশ এসে আমার বোনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরপর আমি হাসপাতালে গিয়ে আমার বোনের কাছে বিস্তারিত শুনি। সে জানায়, স্থানীয় বিধাই গ্রামের নাজমুল (৩০), রফিকুল (৫০), শহিদ (৪৫) ও খোকন (৪০) এরা চারজন মিলে আমার বোনের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। এ সময় আমার বোনের শরীরের জামাকাপড় খুলে নেয়। ধর্ষণের পর অভিযুক্ত আমার বোনকে কীটনাশক পান করিয়ে হত্যা করতে চায়। পরবর্তী রাস্তার পাশে ফেলে যায়।’

ভুক্তভোগীর ভাই আরও বলেন, ‘আমার বোন আরও জানিয়েছে বৃষ্টির পানিতে ওরা তাঁকে চুবিয়েছে। এভাবে দীর্ঘ দুই ঘণ্টা সময় ধরে পালাক্রমে নির্যাতন করে। রোগী নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করার কারণে থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে দেরি হচ্ছে। আমার বোনের শারীরিক অবস্থা খারাপ, অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে। এ জন্য রক্ত দেওয়া হচ্ছে। সুস্থ হওয়ার পর মামলা করব।’

এদিকে নারী শ্রমিকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আজ বুধবার অভিযুক্তদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের সকলের বাড়ি তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন ঘটনার পর থেকে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন অভিযুক্তরা।

শ্রীপুর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডাক্তার হাসিবুল হাসান তানিম বলেন, ‘ওই নারীকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তার মুখ থেকে কীটনাশকের গন্ধ পাওয়া যায়। তখন তাঁর পেটের ভেতর ওয়াশ করে কীটনাশক বের করা হয়। পরে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

আরএমও আরও বলেন, ‘ধর্ষণের আলামত পাওয়ার মতো কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই। এই জন্য তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তানসেন চৌধুরী বলেন, সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় জরুরি সেবা সুরক্ষা নম্বর ৯৯৯ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছিল। এ সময় অজ্ঞান অবস্থায় নারীকে উদ্ধার করে শ্রীপুর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। নারীর শরীরের তেমন কোনো জামাকাপড় ছিল না। হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ছিল। ওই নারী তখন অজ্ঞান অবস্থায় ছিল। এরপর হাসপাতালে চাদরে মুড়িয়ে দেয় হাসপাতালে একজন নার্স। এ সময় ওই নারীর মুখ দিয়ে কীটনাশকের গন্ধ বেড় হচ্ছিল। পরবর্তীতে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁর ভেতর থেকে কীটনাশক ওয়াশ করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এসআই আরও জানান, স্থানীয় বাসিন্দারা একাধিক কুকুর হট্টগোলের শব্দ শুনে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে বিবস্ত্র অবস্থায় ওই নারীকে পড়ে থাকতে দেখে। 

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘জরুরি সেবা সুরক্ষা নম্বর ৯৯৯ ফোন পেয়ে পুলিশ টহল টিম ওই নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। ভুক্তভোগী নারীর স্বজনেরা এখনো পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ভুক্তভোগী পোশাক কারখানার নারী শ্রমিকের স্বজনেরা জানিয়েছেন তাঁরা রোগী নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত