Ajker Patrika

‘মধু হই হই’ গান গেয়ে উল্লাস করে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, ভিডিও ভাইরাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪: ৩২
‘মধু হই হই’ গান গেয়ে উল্লাস করে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, ভিডিও ভাইরাল

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার জনপ্রিয় গান ‘মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলা’ গানটি দল বেঁধে গাইছিলেন কয়েকজন। ফাঁকে ফাঁকে লাঠি দিয়ে এক যুবককে মারধরও করছিলেন। একপর্যায়ে মারধরের শিকার শাহাদাত হোসেন (২৪) মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। দৃশ্যটি ধরা পড়ে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে। 

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, একদল যুবক ‘মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলা’ গানটির সঙ্গে নেচে নেচে উল্লাস করছেন। আর দুই হাত খুঁটিতে বেঁধে এক যুবককে পেটাচ্ছেন। মার খেয়ে ভুক্তভোগী যুবকের মাথা ঢলে পড়ে এবং একপর্যায়ে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। 

ঘটনাটি গত ১৪ আগস্টের হলেও প্রকাশ্যে এসেছে গতকাল শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর)। পাঁচ সপ্তাহ আগে গত ১৪ আগস্ট নগরের ২ নম্বর গেট এলাকায় নির্মম এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। হত্যার পর তাঁর লাশ ফেলে রাখা হয়েছিল নগরের প্রবর্তক মোড়ের অদূরে বেসরকারি একটি হাসপাতালের সামনের রাস্তায়। 

শাহাদাত হোসেন নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানাধীন পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামের মিয়া জান ভুঁইয়াবাড়ির মৃত মোহাম্মদ হারুনের ছেলে। থাকতেন নগরের কোতোয়ালি থানাধীন বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে। 

এ ঘটনায় পরদিন পাঁচলাইশ থানায় ভুক্তভোগীর চাচা মো. হারুন অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু সে সময় তাঁকে (শাহাদাত) মারধরের ভিডিওটি ফেসবুকে আসেনি। গত দুই দিন ধরে ওই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে নড়েচড়ে বসে নগর পুলিশ প্রশাসন। 

মামলার বাদী জানান, শাহাদাত হোসেন বিআরটিসি এলাকার ফলমণ্ডীতে কাজ করতেন। দুই বছর আগে শারমীন আক্তার নামে এক নারীকে বিয়ে করেন। 
 
এজাহারের বর্ণনা অনুযায়ী, গত ১৩ আগস্ট দুপুর ২টার দিকে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন শাহাদাত। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফোন করলে কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় চলে আসবেন বলে স্ত্রীকে জানান। গভীর রাত পর্যন্ত স্বামী বাসায় ফিরে না আসায় খোঁজাখুঁজি করেন শারমিন। এ সময় শাহাদাতের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। 

 ১৪ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফেসবুকে ভুক্তভোগীর চাচা দেখতে পান, নগরের প্রবর্তক মোড়ের অদূরে বদনাশাহ মিয়া (রহ.) মাজারের বিপরীতে সড়কের পাশে তাঁর ভাতিজা শাহাদাত হোসেনের মৃতদেহ পড়ে আছে। 

এদিকে রাত ৯টার দিকে খবর পেয়ে নগরের পাঁচলাইশ থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শাহাদাতের নিথর দেহ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। 

ওই দিন রাতেই চমেক হাসপাতালে গিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে শাহাদাতের লাশ শনাক্ত করেন তাঁর স্ত্রী শারমীন আক্তার এবং মামলার বাদী হারুন। সেদিন রাতে মৃত অবস্থায় শাহাদাতকে চমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন বাদী। 

পুলিশ জানায়, চমেক হাসপাতালে মৃত ঘোষণার পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য শাহাদাতের লাশ চমেকের ফরেনসিক মর্গে পাঠায় পুলিশ। সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, তাঁর মাথা, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। বাদীর ধারণা, অজ্ঞাত আসামিরা তাঁর ভাতিজাকে মারধরের পর শ্বাসরোধে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় পরদিন শাহাদাতের চাচা মোহাম্মদ হারুন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। 

নগর পুলিশের মুখপাত্র উপকমিশনার (অপরাধ) মোহাম্মদ রইছ উদ্দিন বলেন, ‘ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে জানতে পারি মারধরের শিকার যুবকটিই শাহাদাত হোসেন। আমরা তাঁর (শাহাদাত হোসেন) স্ত্রীকে থানায় ডেকে পাঠাই। থানায় এলে ওই ভিডিও তাঁকে দেখানো হলে তাঁর স্বামী বলে শনাক্ত করেন। শাহাদাত হোসেনকে মারধরকারীদের শনাক্ত করে তাদের শিগগিরই আইনের আওতায় আনতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত