Ajker Patrika

পরিবারের দাবি পিটিয়ে হত্যা, পুলিশ বলছে আত্মহত্যা

প্রতিনিধি, চরফ্যাশন (ভোলা)
পরিবারের দাবি পিটিয়ে হত্যা, পুলিশ বলছে আত্মহত্যা

ভোলা চরফ্যাশন উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নে রিয়াজ নামের এক জেলে বাবুর্চির মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। পরিবারের দাবি প্রেমঘটিত কারণে তাঁকে জেলে ট্রলার থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। 

বৃহস্পতিবার সকালে শশীভূষণ থানা–পুলিশ যুবকের মরদেহটি তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা মর্গে পাঠান এবং অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন।

নিহত যুবক রসুলপুর ইউনিয়নের উত্তর আইচা গ্রামের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মিলন ভুলাইর ছেলে। 

নিহতের বাবা মিলন ভুলাই অভিযোগ করে বলেন, তাঁর চাচাতো (মিলন) বোন মরিয়মের মেয়ে শাহানাজের সঙ্গে ছেলে রিয়াজের প্রেম সম্পর্ক চলছিল। বিষয়টি পারিবারিক ভাবে জানাজানি হলে ছেলে রিয়াজ পরিবারের চাপে শাহনাজের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করে দেন। ঘটনার দিন চাচাতো বোন মরিয়ম তাঁদের সম্পর্কের কথাটি তাঁকে জানান এবং রিয়াজকে না পেলে তাঁর মেয়ে শাহানাজ আত্মহত্যা করবে বলে জানান। মেয়ের কিছু হলে চাচাতো বোন মরিয়ম তাঁকে (মিলন) কে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। 

নিহতের বাবা আরও জানান, ঘটনার রাতে আটকপাট ঘাটে নোঙর করা ট্রলারে তাঁর ছেলে চলে যান। রিয়াজ প্রেমের ইতি টানায় ক্ষিপ্ত হন শাহানাজের পরিবার। রাতে চাচাতো বোন মরিয়মের ভাইয়ের ছেলে সবুজ, রায়হান, রাজিব, ননদের ছেলে জসিম, দেবর জাকিরসহ কয়েকজন মিলে রিয়াজকে জাহানপুর ইউনিয়নের আটকপাট এলাকার মৎস্য ঘাটে নোঙর করা ট্রলার থেকে তাঁকে ঘাট সংলগ্ন বালুর মাঠে তুলে নিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। মারধরে গুরুতর আহত হলে হামলাকারীরা ওই জেলে ট্রলারে তাঁকে ফেলে যায়। বিষয়টি জেলে ট্রলারের অপর জেলেরা আঁচ করতে পেরে ট্রলার মালিক রহিম মাঝিকে খবর দেন। খবর পেয়ে ট্রলার মালিক রহিম মাঝি ঘটনাস্থলে এসে তাঁর পরিবারকে না জানিয়েই গুরুতর আহত রিয়াজকে উদ্ধার করে চরফ্যাশন হাসপাতালে নিয়ে আসেন। 

জানা যায়, যুবকের অবস্থার অবনতি থেকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে ভোলা হাসপাতালে রেফার করেন। রহিম মাঝি আহত রিয়াজকে ভোলা না নিয়ে ফের বাড়িতে নিয়ে আসেন। বাড়ি আনার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত রিয়াজকে বাড়িতে রেখেই রহিম মাঝিসহ অপর সবাই পালিয়ে যায়। প্রেম সম্পর্ককে প্রত্যাখ্যান করাই পরিকল্পিত ভাবে তাঁর ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে বলে নিহতের পরিবারের দাবি। 

ঘাটে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী জেলেরা জানান, জেলে ট্রলারের বাবুর্চি রিয়াজকে কয়েকজন যুবক অজ্ঞান অবস্থায় তাঁর মালিক রহিম মাঝির ট্রলারে ফেলে গেলে ট্রলার মালিককে খবর দিই। ট্রলার মালিক রহিম মাঝিসহ তাঁকে উদ্ধার করে চরফ্যাশন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরে কি হয়েছে তা জানা নেই বলে জানান তাঁরা। 

ট্রলার মালিক রহিম মাঝি জানান, রিয়াজকে কারা যেন মারধর করে ট্রলারে ফেলে যায়। জেলেরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন, পরে তিনি হাসপাতালে নিয়ে যান। তাঁর পরিবারকে খবর দেন তিনি। কিন্তু তাঁরা আসেনি। তাঁরা কেউ না আসায় তিনি ওই যুবকে তাঁর বাড়িতে দিয়ে আসেন।   

কর্তব্যরত উপসহকারী মেডিকেল অফিসার আফজাল হোসেন জানান, ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে এলে তখন তাঁর জ্ঞান ছিল না। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে ভোলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

মরদেহ উদ্ধারকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. হানিফ জানান, হাসপাতালের তথ্যে রেজিস্ট্রারে ওই যুবক বিষপান করেছে বলে লেখানো হয়েছে। এ কারণেই প্রাথমিক ভাবে আত্মহত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সুরতহাল তদন্তে মরদেহের মুখে ও চোখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। 

শশীভূষণ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, মৃত্যুর কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত