Ajker Patrika

চীনাদের ফাঁদে রাতে কোটিপতি, সকালে শূন্য

রিমন রহমান, রাজশাহী ও অর্চি হক, ঢাকা
আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৩: ০৯
চীনাদের ফাঁদে রাতে কোটিপতি, সকালে শূন্য

অ্যাপে গ্রাহক হয়ে বিদেশি সিনেমার টিকিট কিনে রাখলেই লভ্যাংশ। যত টিকিট তত লাভ। টাকায় নয়, বিনিয়োগ-লাভের সব হিসাব মার্কিন ডলারে। অ্যাপে জমা রাখা ডলার লাভ-আসলে এক মাসেই বেড়ে দ্বিগুণ থেকে ৩৬০ গুণ পর্যন্ত হচ্ছিল। এভাবে অ্যাপে কেউ লাখ, কেউবা হাজার হাজার ডলারের মালিক বনে গিয়েছিলেন। রাতে নিজেকে বড়লোক দেখে ঘুমালেও সকালে উঠে সবার চোখ ছানাবড়া। কারণ, হিসাবের খাতা শূন্য। ভোজবাজির মতো সব গায়েব।

দ্রুত ধনী হওয়ার লোভে এই অ্যাপে বিনিয়োগ করা কয়েক হাজার মানুষ এখন দিশেহারা। তাঁদের বিনিয়োগের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এই অ্যাপটির নাম ‘ই-মুভি প্ল্যান’। গুগল প্লে স্টোরের এই অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত বিদেশিসহ দেশি একটি প্রতারক চক্র।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত ই-মুভি প্ল্যানের হাজার হাজার বিনিয়োগকারী রয়েছে। বেকার তরুণ-তরুণীরাই এর বড় ইউজার (গ্রাহক)। তাঁদের মাধ্যমে কিশোর, বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষ এই অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খুলে ইউজার হয়েছিলেন। বাদ ছিলেন না সরকারি চাকরিজীবীরাও। কিছুদিন গ্রাহকেরা এই অ্যাপ থেকে টাকাও তুলেছেন। তা দেখে নতুন নতুন ইউজার লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এখন অ্যাপ থেকে টাকা তোলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন তাঁরা। তবে এ নিয়ে কেউ এখনো থানায় অভিযোগ করেননি।

গতকাল মঙ্গলবার গুগল প্লেতে গিয়ে দেখা যায়, ই-মুভি প্ল্যান নামে কোনো অ্যাপ নেই। তবে ই-মুভিপ্ল্যান প্লাস নামে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করা যাচ্ছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘ই-মুভির বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। এটা আমাদের অথরাইজড সাইট নয়। তাই আমাদের ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগও নেই। তাদের বিষয়টি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দেখবে।’

 খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী গ্রামের এক যুবক গত বছরের অক্টোবরে ই-মুভি প্ল্যানে প্রথমে ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন। অ্যাপে দেওয়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নম্বরে টাকা দেওয়ার পর ই-মুভি প্ল্যানের অ্যাকাউন্টে তা ডলারে রূপান্তরিত হয়। সেই ডলার দিয়ে তিনি সিনেমার টিকিট কিনতে থাকেন। অ্যাকাউন্টে থাকা ডলারের সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে লভ্যাংশ। ডলারে আসা লভ্যাংশও তোলেন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। রাতারাতি বদলে যায় তাঁর অবস্থা। দামি মোটরসাইকেল কেনেন। একতলার বাড়ির ছাদ ঢালাই দিয়ে দোতলার কাজ শুরু করেন। তাঁর এমন উন্নতির কারণ জেনে ওই অ্যাপে বিনিয়োগ করেন এলাকার অসংখ্য মানুষ।

প্রেমতলীর এই যুবক জানান, সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা বিনিয়োগ করা যেত ই-মুভি প্ল্যানে। গত সোমবার রাতেও ই-মুভি প্ল্যানে তাঁর ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৪৫ ডলার (প্রায় ২ কোটি টাকা) ছিল। গতকাল সকালে সব শূন্য। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে যারা অল্প বিনিয়োগ করেছে, তাদের টাকা উঠে গেছে। কিন্তু শেষ দিকে লোভে পড়ে যাঁরা চার-পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছেন, তাঁরা আসল টাকা তুলতে পারেননি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রেমতলী গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষ এই অ্যাপে বিনিয়োগ করেছেন। এলাকাবাসী জানেন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রুহুল আমিন নয়ন বলেন, ‘অনেক ভালো ভালো মানুষ এতে টাকা ঢুকিয়েছিলেন। সবার টাকা গেছে! এখন লজ্জায় স্বীকার করছেন না। আমি ২ হাজার টাকা দিয়ে অ্যাকাউন্ট করেছিলাম।’

ভুক্তভোগীরা জানান, জেলায় জেলায় নিযুক্ত ই-মুভি প্ল্যানের এজেন্টরা এটি চীনা প্রতিষ্ঠান বলে মানুষকে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করেছেন। কেউ একটি অ্যাকাউন্ট খোলার পর কাউকে রেফার করলে ওই তথ্যও নিজের অ্যাপে দেখাত। এরপর তার নিচে যতজন ই-মুভি প্ল্যানে যুক্ত হতো, তাদের লভ্যাংশের একটা অংশও প্রথমজন পেতেন। কারও কারও নিচে ২ হাজারের বেশি ইউজার হয়ে গিয়েছিল। সম্প্রতি অ্যাপ থেকে টাকা তোলার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে আবার টাকা তোলা যাবে। কিন্তু তা হয়নি।

প্রতারিত ব্যক্তিরা জানান, ঢাকার উত্তরার সাইফুল নামের এক ব্যক্তি ই-মুভি প্ল্যানের এজেন্ট। রাজশাহীর এজেন্টের নাম আজমল হুদা মানিক। নওগাঁর এজেন্ট লিজা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের তোফায়েল। এই এজেন্টদের নগদ টাকা দিলে তাঁরাই অ্যাপে ডলার দিতে পারতেন।

নোয়াখালীর ভুক্তভোগী মোহাম্মদ সিজান জানান, আজিজুর রহমান নামের এজেন্টের মাধ্যমে মাসখানেক আগে ২১২ ডলার বিনিয়োগ করার পরপরই তাঁকে নিষিদ্ধ করা হয়। এজেন্ট আজিজুরও লাপাত্তা।

রাজশাহীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্কের জেবিডি আইটির প্রতিষ্ঠাতা ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বিক্রম কুমার বলেন, ‘এভাবে ডিজিটালি প্রতারণা হচ্ছে। এ ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক হতে হবে।’

ভুক্তভোগীরা জানান, বিদেশি প্রতারকেরা সব সময় টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত থেকে বার্তা দিতেন। ইউজারদের কাছে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্য করতে গত ৭ জানুয়ারি পাঁচ তারকা হোটেল ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে সারা দেশের এজেন্ট ও বড় বড় বিনিয়োগকারীকে নিয়ে সম্মেলন করা হয়। এতে চার চীনা নাগরিক এসেছিলেন। এদের তিনজন পুরুষ ও একজন নারী। সেখানে নিজেদের ই-মুভির ভাইস প্রেসিডেন্ট পরিচয় দিয়ে কথা বলেছিলেন ব্রায়ান জন ও মিস্টার মাইকেল নামের দুজন। এই মাইকেল মাঝে মাঝে বিভিন্ন বার্তা নিয়ে ই-মুভি প্ল্যানের ভেরিফায়েড অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে আসতেন।

ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার যোগাযোগ করা হলে একজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে জানান, সিঙ্গাপুরের একটি ব্যবসায়িক গ্রুপের পরিচয়ে ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে ই-মুভি প্ল্যানের নামে তাদের একটি হল বুক করা হয়েছিল। ব্যবসায়িক নীতির কারণে রিজেন্সির ওই কর্মকর্তা এর বেশি জানাতে অস্বীকৃতি জানান।

ভুক্তভোগীরা জানান, এমডি কৃষ্ণা নামের একটি টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে ইউজারদের সঙ্গে কথা বলতেন নিজেকে ই-মুভির পরিচালক পরিচয় দেওয়া একজন। তাঁর টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টটি হংকংয়ের +৮৫২৬০৯১৭৩৯৬ নম্বর দিয়ে খোলা। এলিস নামের একজন সহকারী এবং মু লি জি নামের আরেকজন কথা বলতেন। আগামী ২৪ মার্চ রাজশাহী শহরের একটি তিন তারকা হোটেলে তাঁদের উপস্থিতিতে সম্মেলনের কথা জানানো হয়েছিল।

 ই-মুভি প্ল্যানের রাজশাহীর এজেন্ট আজমল হুদা মানিকের অফিস শহরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের শিরোইল কলোনি সাড়ে ৩ নম্বর গলির ৫১৩ নম্বর ভাড়া বাড়িতে। গতকাল সকালে ওই অফিসের অবস্থান জানতে চাইলে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের কর্মী মো. তন্ময়ের প্রশ্ন, ‘অনলাইনে কাজ করে ওই মানিক? ধরা খাইছেন?’ তিনি জানান, মানিক এখানে অফিস করার পর কাউন্সিলরের কার্যালয়ে তাঁর বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ এসেছিল।

মানিকের অফিসের সামনে গিয়ে দেখা যায়, সেটি তালাবদ্ধ। কিছুক্ষণ পর তাঁকে খুঁজতে মোটরসাইকেলে চড়ে এলেন কয়েকজন যুবক। তাঁদের একজন মোবাইলে কাউকে বলছিলেন, ‘আমাকে সাত দিন আগে পামপট্টি মেরে ই-মুভিতে ঢুকিয়ে দিল মামা! আমি ১২ হাজার টাকা দিয়েছি। আমাকে এমনভাবে মুরগি বানালো মামা!’

কথা বলে জানা গেল, ওই যুবকের নাম হিমেল। বাড়ি শহরের উপশহরে। সঙ্গে আসা ফাহিম ও রিংকুও ই-মুভিতে বিনিয়োগ করেছেন। তাই এজেন্ট মানিককে ধরতে এসেছেন। তাঁর মোবাইল নম্বরও বন্ধ। সোমবার রাতে মানিক টেলিগ্রাম গ্রুপে এক বার্তায় বলেছেন, নিজের ডলার নিয়েই তিনি বিপাকে পড়েছেন। তাঁকে যেন কেউ ফোন করে বিরক্ত না করেন। 
বিষয়টি জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করে মানিকের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। ই-মুভির এই প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত কয়েকটি হংকংয়ের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। টেলিগ্রামে বার্তা পাঠানো হলেও কেউ সাড়া দেননি।

প্রতারণার শিকার এক তরুণ জানান, ই-মুভিতে তাঁর প্রায় ২ লাখ ডলার জমা হয়েছিল। কিন্তু টাকা ওঠানো যাচ্ছিল না দেখে তিনি কাস্টমার সার্ভিসের গ্রুপে যোগাযোগ করেন। গ্রুপটি পরিচালনা করা হতো হংকংয়ের +৮৫২৬৭৩৫৭৬২১ নম্বর থেকে। কিন্তু উত্তর মেলেনি। পরে মু লি জি নামের টেলিগ্রাম আইডি থেকে জানানো হয়, তাঁর ই-মুভিতে যত ডলার আছে তার ৩০ শতাংশ ১৫ ফেব্রুয়ারির আগে ডিপোজিট করলে তিনি তাঁর সব ডলার ভাঙাতে পারবেন। নির্ধারিত সময়ে ডিপোজিট না করলে বাংলাদেশ সরকার সব ডলার বাজেয়াপ্ত করবে। 
জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এস এ এম রফিকুন্নবী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ই-মুভি প্ল্যান নামে কোনো অ্যাপের কথা আমাদের জানা নেই। কিসের কে ডলার বাজেয়াপ্ত করবে? এটা পুরোপুরি প্রতারণার ফাঁদ।’

 বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘সব ভাঁওতাবাজি। প্রতারিত কেউ অভিযোগ করলে এখানকার এজেন্টদের খুঁজে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেল) মুহাম্মদ সাঈদ আলী বলেন, ‘আমরা ই-মুভি প্ল্যানের নামে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে বা যে অভিযোগ উঠছে সেগুলোর সত্যতা পেলে বিটিআরসিকে সাইটটি বন্ধ করতে বলব।’ তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা অভিযুক্ত ৩৩১টি ওয়েবসাইট বন্ধ করিয়েছি। আরও ৬৯টি ওয়েবসাইটের নাম গোয়েন্দা সংস্থাকে তদন্তের জন্য দেওয়া হয়েছে।’

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম শোভন বলেন, ‘ই-কমার্সের নামে এ ধরনের ব্যবসা করা হলে আমরা সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান না হলে কিছু করার এখতিয়ার আসলে আমাদের নেই।’

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ বলেন, ‘আমরা নিজেরা কোনো সাইট বন্ধ করি না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অথবা কোনো সংস্থা আমাদের কাছে সুপারিশ করলে আমরা সেটা বন্ধ করতে পারি। ই-মুভি প্ল্যান বন্ধের বিষয়ে যদি কোনো সুপারিশ আসে, তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১০
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।

গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।

এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র‍্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।

তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।

অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত