Ajker Patrika

সনির বাবার অমূল্য সম্পদ

কামরুল হাসান
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২: ৫৬
সনির বাবার অমূল্য সম্পদ

আমার প্রকৌশলী বন্ধু মনিমুলের স্বভাবই হলো সামান্য কিছু নিয়ে হইচই শুরু করা। সেটা হোক অফিসে, বাসায়, সামনাসামনি অথবা টেলিফোনে। তার অবস্থা দেখলে মনে হয়, এখনই কোনো দক্ষযজ্ঞ কাণ্ড ঘটে যাবে।

সপ্তাহখানেক আগে সেই মনিমুলের ফোন, সঙ্গে অনুযোগ। তার কাছে বিরাট গোপন খবর আছে, আমি সাংবাদিক হয়েও সেটা কেন জানি না, ইত্যাদি ইত্যাদি…। যা হোক, তাকে কোনোমতে শান্ত করে জানতে চাইলাম, খবরটা কী। মনিমুল বলল, টগরকে সে রাস্তায় দেখেছে।

কোন টগর?
মনিমুল বলল, বুয়েটের ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনি খুনের মামলার আসামি মুকি-টগরের টগর।

আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম, সনি হত্যা মামলায় তাঁদের তো যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিল। সেই টগর জেলের বাইরে আসবেন কী করে! এবার মনিমুলের গলায় উত্তেজনা। এত বড় ঘটনা আমি কেন জানি না!

মনিমুলের সঙ্গে কথা শেষ করে কয়েক জায়গায় ফোন দিলাম, কেউ কিছু বলতে পারেন না। সনির ভাই রানাকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনিও কিছু জানেন না। ফোন দিলাম আজকের পত্রিকার মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলা প্রতিনিধি মোহাম্মদ উজ্জ্বলকে। তিনি একটু খোঁজখবর নিয়ে বললেন, ঘটনা ঠিক। টগরের বড় ভাই মেজবাউদ্দিন কায়েস তাঁকে জানিয়েছেন, দুই বছর আগেই টগর জেলখানা থেকে বেরিয়ে গেছেন। এখন মাঝেমধ্যে গ্রামে আসেন, তবে কারও সঙ্গে খুব একটা মেশেন না।

সে সময় টগরের সঙ্গে জোড়া লাগানো নামটি ছিল মুকি ওরফে মুকিত। সেই মুকির খোঁজ নিতে ফোন দিলাম আজকের পত্রিকার চট্টগ্রাম ব্যুরোপ্রধান সবুর শুভকে। তিনি খোঁজখবর নিয়ে বললেন, মুকি এখন অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। সনি খুনের পর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সহায়তায় প্রথমে তিনি লন্ডনে এবং পরে সেখান থেকে যান অস্ট্রেলিয়ায়। এখন সেখানেই থিতু।

সবুর শুভর ফোন রাখতেই আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল ২১ বছর আগের এক হত্যাকাণ্ড। সেদিন ছিল শনিবার, ২০০২ সালের ৮ জুন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) চত্বরে ঘটে যাওয়া সেই খুনের ঘটনা নিয়ে কেঁপে উঠেছিল শিক্ষাঙ্গন। সে সময় ক্ষমতায় থাকা বিএনপি সরকারকে এর জন্য কম খেসারত দিতে হয়নি।

যত দূর মনে পড়ে, অফিসের নিয়মিত মিটিং শেষে সেদিন আমরা উঠি উঠি করছি। জনকণ্ঠের বুয়েট প্রতিনিধি রাকিবুর রহমান রূপক ফোন করে জানালেন, বুয়েটে ছাত্রদলের দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হচ্ছে। আমার সামনেই চিফ রিপোর্টার বসে ছিলেন। তিনি নির্দেশ দিলেন, এখনই বুয়েটে যাও। চোখের নিমেষে আমাদের গন্তব্য হয়ে গেল বুয়েট।

আমি যখন বুয়েটে পৌঁছালাম, শুনি গোলাগুলি থেমে গেছে। কিন্তু ভেতরের পরিবেশ থমথমে। ছাত্রদলের দুই পক্ষের একটি ক্যাফেটেরিয়ার দিকে, আরেক পক্ষ শহীদ মিনারের পাশে বসে আছে। প্রায় সবার হাতেই অস্ত্র। বুয়েট ক্যাম্পাসের বাইরের রাস্তায় পুলিশ দাঁড়িয়ে, কিন্তু তারা কেউ ভেতরে ঢুকছে না।

ছাত্ররাজনীতিতে মূলত বিরোধ হয় দুটি কারণে—একটি হলো প্রভাব বিস্তার, অন্যটি টাকাপয়সা-সংক্রান্ত। আমি প্রথমে বোঝার চেষ্টা করলাম, এখানে বিরোধটা কী নিয়ে। সবাই বললেন, বুয়েটে কিছু উন্নয়নকাজ শুরু হয়েছে। দুই দিন পরে তার টেন্ডার হবে।

সেই কাজ কারা দখলে নেবে, তা নিয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। এর একটি পক্ষে ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক এবং বুয়েট শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোকাম্মেল হায়াত খান মুকি, আরেক পক্ষে ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহপ্রচার সম্পাদক মুশফিক উদ্দিন টগর।

বুয়েটে তখন একটি অদ্ভুত নিয়ম ছিল, ক্যাফেটেরিয়া যাঁর দখলে, ক্যাম্পাস তাঁর দখলে থাকবে। সপ্তাহখানেক আগে মুকির দল ক্যাফেটেরিয়া দখল করে নেয় টগরের গ্রুপকে বিতাড়িত করে। সে সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এরপর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে প্রতিশোধের আগুন জ্বলতে থাকে।

৮ জুন শনিবার কোনো ক্লাস ছিল না। হঠাৎ দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়। একটু পর আবার সেটা থেমে যায়। সাবেকুন নাহার সনি সে সময় এক বান্ধবীকে নিয়ে ছাত্রী হলের দিকে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি গুলি এসে তাঁর পেটে লাগে। সনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়, কিন্তু তাতে শেষরক্ষা হয়নি। সনিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। গুলিতে সনির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় উত্তেজনা। ছাত্রলীগ ও সাধারণ ছাত্ররা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। পুলিশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটে হলে তল্লাশি চালিয়ে ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করে। সনির লাশ দেখতে মর্গে আসেন বিএনপির নেতা মির্জা আব্বাস, লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাদেক হোসেন খোকা। বুয়েট বন্ধ হয়ে যায়।

আমরা তখন টগর আর মুকির পেছনে দৌড়াতে থাকি। মুকির বাড়ি চট্টগ্রামের জামাল খান রোডে। পড়েছেন ইস্পাহানি স্কুল ও কলেজে। ’৯৩ সালে বস্তু ও ধাতব কৌশলে পড়তে বুয়েটে ভর্তি হন। এরপর ছাত্রদলের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল। এই খুনের পর তাঁর সহায়তায় গা ঢাকা দেন। একপর্যায়ে বিদেশে চলে যান।

টগর পড়তেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, দর্শনে। সনি খুন হওয়ার পরও তিনি প্রকাশ্যে চলাফেরা করতেন। সেই অবস্থায় ২৩ জুন সোনারগাঁও হোটেলের লবি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। টগরের কথা শুনে মাসুম বিল্লাহকে আটক করে পুলিশ। এ মামলায় ১৯ জন গ্রেপ্তার হন। ৯ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

২০০৩ সালের ২৯ জুন মামলার রায় হয়। নিম্ন আদালত সনি হত্যার মূল তিন আসামি মোকাম্মেল হায়াত খান মুকি, টগর এবং নুরুল ইসলাম সাগর ওরফে শুটার নুরুর মৃত্যুদণ্ড এবং এস এম মাসুম বিল্লাহ ও মাসুমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। পরে ২০০৬ সালের ১০ মার্চ মুকি, টগর ও সাগরের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন হাইকোর্ট। আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া এস এম মাসুম বিল্লাহ ও মাসুমকে খালাস দেন। মুকির মতো সাগরও কখনো ধরা পড়েননি।

ঢাকা বারের আইনজীবী আলী আসগর স্বপন সেদিন বললেন, সে সময় যাবজ্জীবন সাজা ছিল ২০ বছর। জেলখানা বছরের হিসাব করে ৯ মাস করে। কাজেই সনি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কোনো আসামি যে আর কারাগারে নেই, সে ব্যাপারে নিঃসন্দেহ।

সনির পরিবার তখন থাকত উত্তরায়, সোনালী ব্যাংকের কোয়ার্টারে। সনির মা দিলরুবা বেগম ছিলেন সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা। আর বাবা হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া ছিলেন টিঅ্যান্ডটির কর্মকর্তা। সনির মৃত্যুর পর একটি ছাত্রী হলের নাম হয় ‘সাবেকুন নাহার সনি হল’। সনি নিহত হওয়ার দিনটি ‘সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালিত হয়।

সনির মৃত্যুর পর তাঁর বাবা অদ্ভুত একটি কাজ শুরু করেন। সেটা হলো, সনি মারা যাওয়ার পর স্বাধীনতা-পরবর্তী শিক্ষাঙ্গনে যত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটেছে, সেগুলোর তথ্য তিনি জোগাড় করেন। সেসব তথ্যে আছে, স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে ১৫৯ জন নিহত হয়েছেন, আর আহতের সংখ্যা কয়েক হাজার। কী কারণে এসব ঘটেছে, তা লিখে রাখতেন তিনি। দেখা গেল টেন্ডারবাজি, আধিপত্য বিস্তার এবং চাঁদাবাজির কারণেই এসব সংঘর্ষ হয়েছে। তাঁর এই কাজ সাংবাদিকদের বেশ কাজে লাগত। কোনো ক্যাম্পাসে মারামারি হলেই তাঁর তথ্য ছিল ‘রেডি জিনিস’।

কয়েক দিন আগে অনুজ সাংবাদিক গোলাম মর্তুজা অন্তু জানালেন, সনির বাবা হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে। তাঁর চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে পরিবার। সনির ভাই মাকসুদুর রহমান রানা গতকাল বললেন, তাঁর বাবার তথ্য জোগাড়ের সব কাজও বন্ধ হয়ে গেছে। শরীর দ্রুত খারাপ হচ্ছে, হয়তো আর বেশি দিন বাঁচবেন না।

যে যায়, সে সবকিছু নিয়ে যেতে পারে না। কিছু না কিছু ফেলে যায়। কেউ চোখের চশমা, কেউ চাবির গোছা, কেউ হাতের ছড়ি। আর সনির বাবা হাবিবুর রহমান চলে গেলেও রেখে যাবেন ৫০ বছরের শিক্ষাঙ্গনের সন্ত্রাসের চিত্র। সংবাদকর্মীদের কাছে সেটা নিঃসন্দেহে অমূল্য সম্পদ।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১০
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।

গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।

এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র‍্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।

তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।

অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সালমান শাহর মৃত্যুর ২৯ বছর পর হত্যা মামলা করার নির্দেশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১৯: ৫৮
চিত্রনায়ক সালমান শাহ। ছবি: সংগৃহীত
চিত্রনায়ক সালমান শাহ। ছবি: সংগৃহীত

জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় করা অপমৃত্যুর মামলাকে হত্যা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঘটনার ২৯ বছর পর আজ সোমবার (২০ অক্টোবর) ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক এ আদেশ দেন।

সালমান শাহের মৃত্যুকে ‘অপমৃত্যু’ হিসেবে দ্বিতীয় দফায় দেওয়া আদালতের রায়ের বিরুদ্ধের তাঁর মা নীলা চৌধুরী দ্বিতীয় দফায় যে রিভিশন মামলা করেছিলেন, তা মঞ্জুর করে আজ এই আদেশ দিলেন আদালত।

রিভিশনকারী পক্ষের আইনজীবী মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, আদেশে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তাই অপমৃত্যুর মামলাকে হত্যা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।

নীলা চৌধুরীর এ রিভিশন মামলার শুনানি শেষে গত ১৩ অক্টোবর আদালত আদেশের জন্য ২০ অক্টোবর দিন করেন।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার (ইমন) ওরফে সালমান শাহ। সে সময় এ বিষয়ে রমনা থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেছিলেন তাঁর বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী।

পরের বছর ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে আবার আদালতে মামলা করেন তাঁর বাবা। ওই সময় সিআইডিকে অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যার অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।

১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর সিআইডি ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন গৃহীত হয়।

ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা করেন কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। ওই প্রতিবেদনেও সালমান শাহর মৃত্যুকে অপমৃত্যু বলা হয়।

কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর ছেলে রিভিশন মামলার বাদী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন মা নীলা চৌধুরী। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি সিএমএম আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজির আবেদন করেন। সর্বশেষ মামলাটি পিবিআই তদন্ত করে।

২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর আদালত ওই প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলাটি নিষ্পত্তি করেন। ২০২২ সালের ১২ জুন এই আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবার রিভিশন মামলা করে বাদীপক্ষ।

রিভিশন মামলায় বলা হয়, সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তদন্তে বারবার তাঁর মৃত্যুকে ‘অপমৃত্যু’ হিসেবে বলা হচ্ছে। কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে হত্যাকে ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে আরও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

ভক্তদের মানববন্ধন

এদিকে সালমান শাহর ভক্তরা সকাল থেকে আদালত এলাকায় হাজির হন। হত্যার বিচার চেয়ে আদালতে সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যার আরও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের দাবি জানান তাঁরা। এ সময় তাঁরা সালমান শাহ হত্যার বিচার চেয়ে স্লোগান দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পরকীয়ার সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখেন নজরুল: পুলিশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২০: ২০
পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

বৈবাহিক জীবনে টানাপোড়েন, তাতে যুক্ত হয় সন্দেহ। সেই সন্দেহই কাল হয়ে দাঁড়ায় তাসলিমা আক্তারের জীবনে। রাজধানীর কলাবাগানে স্বামীর দায়ের কোপে হয়েছেন খুন। হত্যার পর স্ত্রীর লাশ ডিপ ফ্রিজে লুকিয়ে রাখেন নজরুল ইসলাম।

আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বংশালের নবাবপুর রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।

ডিসি মাসুদ আলম বলেন, নজরুলের স্ত্রী তাসলিমার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে তাঁর পারিবারিক কলহ চলছিল। নজরুলের ধারণা ছিল, তাঁর স্ত্রী অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্ক রাখছেন। পাশাপাশি সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার আশঙ্কাও করতেন তিনি। এসব সন্দেহ থেকেই তাসলিমাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন নজরুল।

গত রোববার রাতে বাসায় ফিরে নজরুল দেখেন, ফ্ল্যাটের তিনটি লকের মধ্যে দুটি খোলা। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে স্ত্রী তাসলিমাকে হত্যা করেন। পরে গামছা দিয়ে লাশ বেঁধে বিছানার চাদর ও ওড়না মুড়িয়ে ডিপ ফ্রিজে লুকিয়ে রাখেন। আলামত গোপনের জন্য রক্তমাখা তোশক উল্টে দেন, মেঝে ধুয়ে ফেলেন এবং নিজের জামাকাপড় ধুয়ে ফেলেন।

পরদিন সকালে সন্তানদের জানান, তাদের মা অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে পালিয়ে গেছেন। বড় সন্তান দেয়ালে রক্তের দাগ দেখে সন্দেহ করে। এরপর নজরুল দুই সন্তানকে নানার বাড়ি পাঠানোর কথা বলে রাজধানীর আদাবরে ফুফুর বাসায় রেখে পালিয়ে যান।

তাসলিমার ছোট ভাই নাঈম হোসেন জানান, বোনের কোনো খোঁজ না পেয়ে তিনি সন্তানদের সঙ্গে সোমবার সন্ধ্যায় কলাবাগান থানায় অভিযোগ দেন। অভিযোগের পর পুলিশ ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে। একপর্যায়ে ডিপ ফ্রিজ খুললে মাছ-মাংসের নিচে কাপড়ে মোড়ানো তাসলিমার লাশ উদ্ধার হয়।

এ ঘটনায় তাসলিমার ভাই নাঈম হোসেন বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় হত্যা মামলা করেন। পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রযুক্তির সহায়তায় নজরুলের অবস্থান শনাক্ত করে মঙ্গলবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ডিসি মাসুদ আলম বলেন, নজরুলের সন্দেহই এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। মামলার তদন্ত চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সালমান শাহ হত্যা মামলায় রিভিশনের শুনানি শেষ, রায় ২০ অক্টোবর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৮: ৫৩
সালমান শাহ। ছবি: সংগৃহীত
সালমান শাহ। ছবি: সংগৃহীত

দেশের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ হত্যা মামলা নিষ্পত্তির আদেশের বিরুদ্ধে করা রিভিশন মামলার শুনানি শেষে ২০ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিন ঠিক করেছেন আদালত। আজ সোমবার ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক রায়ের দিন নির্ধারণ করেন। রিভিশনকারী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. ওবায়দুল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার (ইমন) ওরফে সালমান শাহ। এ ঘটনায় প্রথমে অপমৃত্যুর মামলা করেন তাঁর বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। পরের বছর ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যার অভিযোগে আবার মামলা করেন তিনি। তখন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত অপমৃত্যু ও হত্যার মামলার একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ বলে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি।

ওই বছরের ২৫ নভেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন গৃহীত হয়। তবে প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে রিভিশন মামলা করেন কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। পরে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মহানগর হাকিম ইমদাদুল হক। ওই প্রতিবেদনেও সালমান শাহর মৃত্যুকে ‘অপমৃত্যু’ বলা হয়। কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর ছেলে হত্যা মামলার বাদী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন মা নীলা চৌধুরী। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি সিএমএম আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজির আবেদন করেন। সর্বশেষ মামলাটি পিবিআই তদন্ত করে। ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর আদালত ওই প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলাটি নিষ্পত্তি করেন। এরপর ২০২২ সালের ১২ জুন এই আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা করে বাদীপক্ষ।

রিভিশন মামলায় বলা হয়, সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু বারবার তদন্তে তাঁর মৃত্যুকে অপমৃত্যু মামলা হিসেবে বলা হচ্ছে। কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে হত্যার ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে আরও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত