কামরুল হাসান

মিন্টো রোডের ডিবি অফিসের পুরোনো ভবনে ঢুকতেই একটি কাঠের সিঁড়ি ওপরে উঠে গেছে। সিঁড়ির মুখ থেকে বাঁয়ে ঘুরলে ডানে ছোট একটি হাজতখানা। দরজায় লোহার গ্রিল দেওয়া, বাইরে থেকে ভেতরের সবকিছুই দেখা যায়। সেটা পার হলেই একটি কক্ষ, সেখানে বসেন ডিসি সৈয়দ বজলুল করিম, যিনি সবার কাছে পরিচিত ‘বি করিম’ নামে।
ডিবি অফিসের ফটকে তখন এত কড়াকড়ি ছিল না। আমরা যেতাম বিনা বাধায়, কোনো রকম আগাম অনুমতি ছাড়াই। তো একদিন দুপুরে গিয়ে দেখি, সেই হাজতখানার খালি মেঝেতে ইয়া লম্বা এক লোক শুয়ে গুনগুন করে গান গাইছেন। তাঁর পরনে টি-শার্ট আর হাফপ্যান্ট। হাজতের আশপাশে কেউ নেই। উল্টো দিকে একটি পুরোনো সোফায় এক পুলিশ সদস্য বসে কী যেন পড়ছেন। শুয়ে থাকা লোকটার মুখ দেয়ালের দিকে বলে প্রথমে চিনতে পারিনি। এগিয়ে গিয়ে তাকাতেই চমকে উঠি, ও মা! এ যে আজিজ মোহাম্মদ ভাই! মানে ধনকুবের আজিজ মোহাম্মদ ভাই।
এ ঘটনা ১৯৯৯ সালের জানুয়ারির। তার আগে বলে রাখি, আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে দেশের অনেক সাংবাদিকের পরিচয় ছিল বা আছে। নানা ঘটন-অঘটনে বরাবরই তিনি ছিলেন আলোচনায়। সংবাদের প্রয়োজনে আমরা অনেকবার তাঁর অফিসে বা বাসায় গিয়ে বক্তব্য নিয়েছি। সেই সুবাদে অনেকের মতো তিনি আমাকেও চিনতেন। সেই আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে হাজতে দেখে বেশ অবাক হলাম। কিন্তু তিনি খুব স্বাভাবিক। আমাকে দেখে মৃদু হেসে বললেন, ‘কী মিয়া, তামাশা দেখছ, দেখো।’
এবার বলি, আজিজ মোহাম্মদ ভাই কেন হাজতে এলেন। ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবদিন টাওয়ারে সাততলায় ‘ক্লাব ট্রাম্পস’ নামে একটি ডিসকো ক্লাব গড়ে উঠেছিল। সেটা করেছিলেন আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের চাচাশ্বশুর, আরেক আলোচিত ব্যবসায়ী বান্টি ইসলাম। সেই ক্লাবে ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর খুন হন চিত্রনায়িকা দিতির স্বামী চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী। ক্লাবের ভেতরেই তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ নিয়ে গুলশান থানায় মামলা হয়। তদন্ত আসে ডিবিতে। সেই মামলায় ১৯৯৯ সালের ৩ জানুয়ারি গুলশান থেকে প্রথমে বান্টি ইসলামকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
তিন দিন পর ৬ জানুয়ারি গুলশান লেডিস পার্কের সামনে থেকে এসবির সহকারী পুলিশ সুপার খলিলুর রহমান গ্রেপ্তার করেন আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে। পরে এসবি তাঁকে ডিবির কাছে হস্তান্তর করে। সোহেল চৌধুরী খুনের মামলায় বান্টি ও আজিজ মোহাম্মদ ভাই ছাড়া আরও আসামি ছিলেন তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন, ফারুক আব্বাসী, আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী এবং শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন। ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। হাইকোর্টের আদেশে এই মামলার কার্যক্রম এখন অবধি স্থগিত আছে।
হাজতে বসে আজিজ মোহাম্মদ ভাই আমাকে বলেন, গ্রেপ্তারের প্রথম কয়েক দিন তাঁকে অন্য জায়গায় রাখা হয়েছিল। আজ তাঁকে ডিবির হাজতে আনা হয়েছে। ডিবির ডিসি বি করিম তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন কয়েক দফা। এটুকু বলতেই সামনে বসা কনস্টেবল এগিয়ে এসে বললেন, ‘ওনার সঙ্গে কথা বলতে মানা আছে।’
তখন সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার ফলোআপ করতে আমরা প্রতিদিনই বি করিমের কাছে যেতাম। আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে তাঁকে নানা দরকারি-অদরকারি প্রশ্ন করতাম। বি করিমও বেশ রসিক মানুষ, বিরক্ত না হয়ে তিনি সব প্রশ্নের জবাব দিতেন। একদিন তিনি আমাকে সিলেটি ভাষায় বললেন, ‘তাইন তো খুন লইয়া কুনতা মাতইন না, খালি কুন পুরির লগে কিতা সম্পর্ক ইতা খালি ইনাইয়া-বিনাইয়া গফ করইন।’ (তিনি তো খুন নিয়ে কিছু বলেন না। শুধু কোন মেয়ের সঙ্গে কী সম্পর্ক, সেই গল্প ইনিয়ে-বিনিয়ে বলেন।)
আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে আমাকে প্রথম পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন এক সিনে সাংবাদিক। তখন ৩৪ বিজয়নগর ঠিকানার ভবনটির নিচতলায় ছিল লাল-সবুজ পত্রিকার অফিস আর ওপরে এমবি ফ্লিমস। একদিন সেই সাংবাদিক আমাকে নিয়ে গেলেন আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে।
আমরা দুজন দোতলার একটি কক্ষে ঢুকে দেখি ইয়া মোটা এক লোকের পাশে বসে শ্যামলা রঙের হালকা-পাতলা এক তরুণী বয়স্ক লোকটার ডান হাতের আঙুল ফুটিয়ে দিচ্ছেন আর ‘দাদু দাদু’ করছেন। সাংবাদিক সাহেব সেই মোটা লোকটিকে দেখিয়ে বললেন, ইনিই চিত্রপরিচালক এহতেশাম। আর মেয়েটিকে দেখিয়ে বললেন, তাঁর নতুন ছবিতে নায়িকা হচ্ছেন, নাম শাবনূর। সিমেনার নাম ‘চাঁদনি রাতে’। পরে শুনেছি, ছবিটি ফ্লপ করেছিল।
এহতেশামের পাশের রুমে বসতেন সিনেমা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এমবি ফ্লিমসের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই। আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হয়েছিল, যার বেশির ভাগই ছিল বিভিন্ন নায়িকা প্রসঙ্গে। তিনি কথা বলেন হেসে হেসে আর একটু পরপর নিভে যাওয়া চুরুটে আগুন দেন। তাঁর কথা বলার ধরন এবং চুরুট টানা আমার খুব পছন্দ হয়েছিল।
১৯৯৩-৯৪ সালের দিকে একটি টুথপেস্টের বিজ্ঞাপন খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। সেই বিজ্ঞাপনের মডেল ছিলেন নওরিন ইসলাম নামে এক তরুণী। তাঁর বাবা ববি ইসলাম ইংরেজি দৈনিক মর্নিং সানের মালিক। ববি ইসলামের ছোট ভাই বান্টি ইসলাম ছিলেন আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বন্ধু। ববির বাড়িতে যাতায়াতের সুবাদে বয়সের বিস্তর ব্যবধান থাকার পরও নওরিনের সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদের সম্পর্ক তৈরি হয়। একপর্যায়ে পরিবারের অমতে আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে বিয়ে করেন নওরিন। সেই সংসার এখনো আছে। নওরিন এখন তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মা। তবে নওরিনকে বিয়ে করার আগে আজিজ মোহাম্মদ ভাই এক পাকিস্তানি তরুণীকে বিয়ে করেছিলেন।
যত দূর শুনেছি, ১৯৪৭-এ দেশভাগের পর আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের পরিবার ভারতের কানপুর থেকে পুরান ঢাকায় আসে। তাঁরা মূলত পারস্য বংশোদ্ভূত ‘শিয়া’ সম্প্রদায়ের লোক। আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের জন্ম ১৯৬২ সালে, আরমানিটোলায়। তাঁর বাবা মোহাম্মদ ভাই ইস্পাতের ব্যবসা শুরু করেন। ধীরে ধীরে অলিম্পিক ব্যাটারি, অলিম্পিক বলপেন, অলিম্পিক ব্রেড ও বিস্কুট, এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস, এমবি ফিল্মসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। মোহাম্মদ ভাইয়ের বয়স হয়ে গেলে ব্যবসা দেখাশোনার দায়িত্ব পড়ে ছেলে আজিজ মোহাম্মদের ওপর। এতে খুব কম বয়সে তিনি বিপুল বিত্তের মালিক হন। সেই অর্থের একটি বিরাট অংশ নিজের ভোগবিলাসে ব্যয় করতে থাকেন। তাঁর গুলশানের বাড়িতে ছিল বিশাল একটি বার। সেখানে নিয়মিত পার্টি হতো। দেশের হোমরাচোমরারা সেই পার্টিতে যেতেন। দেশ ছাড়াও বোম্বের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা আসতেন তাঁর বাড়িতে। একবার সেই বাড়ির পার্টিতে উপস্থিত অভিনেত্রী মুনমুন সেন ও মমতা কুলকার্নির ছবিও ছাপা হয়েছিল কাগজে। গুলশান-বনানীর অনেক তরুণী সেই পার্টিতে আসতেন উদ্ভট পোশাক পরে। শুনেছি, এসব পার্টিতে তিনি নিজে কখনো মদ পান করতেন না। পার্টির সময় চুরুট হাতে ঘুরে বেড়াতেন। সেসব পার্টিতে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতও আসতেন। আসতেন অনেক অচেনা মানুষ। এঁদের সঙ্গে আলাদা কথা বলতেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই।
শোনা যায়, সেই সময় নামীদামি অনেক অভিনেত্রী ও তারকার সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বিশেষ সম্পর্ক ছিল। সেই গল্প রসিয়ে রসিয়ে করতেন আর বলতেন, মেয়েদের ‘মন জয়’ করতে তিনি দামি উপহার দিতেন।
আজিজ মোহাম্মদ একবার আমাকে বলেছিলেন, এক বান্ধবীকে নিয়ে এরশাদের সঙ্গে তাঁর অনেক ঝামেলা হয়। এরপর এরশাদ তাঁকে গ্রেপ্তার করিয়েছিলেন। পরে তাঁকে মুক্ত করতে প্রিন্স করিম আগা খান নিজে বাংলাদেশে আসেন।
ভোগবিলাস নিয়ে আজিজ ভাইয়ের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠলেও প্রথম খুনের অভিযোগ ওঠে জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ মারা যাওয়ার পর। সালমান শাহর মা অভিযোগ করেন, সালমানের স্ত্রী সামিরার সঙ্গে সম্পর্কের সুবাদে আজিজ ভাই তাঁর ছেলে সালমান শাহকে খুন করিয়েছেন। এ ঘটনার দুই বছর পর সোহেল চৌধুরী খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হন তিনি। তবে তিনি সব সময় কিছু না কিছু করে আলোচনায় থাকতেন।
১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনায় পুঁজিবাজারবিষয়ক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। কিন্তু তাঁকে গ্রেপ্তার হতে হয়নি। এর আগে এটিভি নামে একটি স্যাটেলাইট চ্যানেল করেছিলেন তিনি। ব্যাংকক থেকে সেই চ্যানেল সম্প্রচার করা হতো। এ নিয়েও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হলে চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় এসবি পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তবে খুনের মামলায় জামিন পাওয়ার পর তিনি আর দেশে থাকেননি। বিদেশে চলে যান, আর ফিরেও আসেননি।
আজিজ মোহাম্মদ ভাই দেশে না থাকলেও তাঁর আত্মীয়স্বজনও কম যান না। ২০০৭ সালে ইয়াবা ট্যাবলেট তৈরির জন্য তাঁর ভাতিজা আমিন হুদাকে র্যাব গ্রেপ্তার করে। সে সময় ইয়াবার সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের নাম আসে। ২০১৩ সালে আমিন হুদার ৭৯ বছরের জেল হয়। পরে তিনি কারাগারে মারা যান।
২০১৯ সালের অক্টোবরে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের গুলশানের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বিপুল পরিমাণ মদের বোতল, সিসা ও ক্যাসিনোসামগ্রী উদ্ধার করে। ২০২১ সালের আগস্টে এনবিআর তাঁর যাবতীয় ব্যাংক হিসাব জব্দ করে।
আজিজ মোহাম্মদ ভাই এখন পরিবার নিয়ে থাইল্যান্ডে থাকেন। স্ত্রী নওরিন দেশে এসে ব্যবসা দেখেন। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং ও সিঙ্গাপুরে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের হোটেল ও রিসোর্ট আছে। শোনা যায়, মুম্বাইয়ের ডন দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। কিন্তু এসব নিয়ে আমি যতবার তাঁর কাছে জানতে চেয়েছি, তিনি বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই ভিত্তিহীন; বরং মিডিয়াই তাঁকে ডন হিসেবে বারবার প্রতিষ্ঠিত করেছে।
জানি না, তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আদৌ সত্য কি না। হয়তো সময়ই বলে দেবে চমকে ঘেরা এই রহস্যময় লোকটি আসলেই কেমন।
আরও পড়ুন:

মিন্টো রোডের ডিবি অফিসের পুরোনো ভবনে ঢুকতেই একটি কাঠের সিঁড়ি ওপরে উঠে গেছে। সিঁড়ির মুখ থেকে বাঁয়ে ঘুরলে ডানে ছোট একটি হাজতখানা। দরজায় লোহার গ্রিল দেওয়া, বাইরে থেকে ভেতরের সবকিছুই দেখা যায়। সেটা পার হলেই একটি কক্ষ, সেখানে বসেন ডিসি সৈয়দ বজলুল করিম, যিনি সবার কাছে পরিচিত ‘বি করিম’ নামে।
ডিবি অফিসের ফটকে তখন এত কড়াকড়ি ছিল না। আমরা যেতাম বিনা বাধায়, কোনো রকম আগাম অনুমতি ছাড়াই। তো একদিন দুপুরে গিয়ে দেখি, সেই হাজতখানার খালি মেঝেতে ইয়া লম্বা এক লোক শুয়ে গুনগুন করে গান গাইছেন। তাঁর পরনে টি-শার্ট আর হাফপ্যান্ট। হাজতের আশপাশে কেউ নেই। উল্টো দিকে একটি পুরোনো সোফায় এক পুলিশ সদস্য বসে কী যেন পড়ছেন। শুয়ে থাকা লোকটার মুখ দেয়ালের দিকে বলে প্রথমে চিনতে পারিনি। এগিয়ে গিয়ে তাকাতেই চমকে উঠি, ও মা! এ যে আজিজ মোহাম্মদ ভাই! মানে ধনকুবের আজিজ মোহাম্মদ ভাই।
এ ঘটনা ১৯৯৯ সালের জানুয়ারির। তার আগে বলে রাখি, আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে দেশের অনেক সাংবাদিকের পরিচয় ছিল বা আছে। নানা ঘটন-অঘটনে বরাবরই তিনি ছিলেন আলোচনায়। সংবাদের প্রয়োজনে আমরা অনেকবার তাঁর অফিসে বা বাসায় গিয়ে বক্তব্য নিয়েছি। সেই সুবাদে অনেকের মতো তিনি আমাকেও চিনতেন। সেই আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে হাজতে দেখে বেশ অবাক হলাম। কিন্তু তিনি খুব স্বাভাবিক। আমাকে দেখে মৃদু হেসে বললেন, ‘কী মিয়া, তামাশা দেখছ, দেখো।’
এবার বলি, আজিজ মোহাম্মদ ভাই কেন হাজতে এলেন। ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবদিন টাওয়ারে সাততলায় ‘ক্লাব ট্রাম্পস’ নামে একটি ডিসকো ক্লাব গড়ে উঠেছিল। সেটা করেছিলেন আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের চাচাশ্বশুর, আরেক আলোচিত ব্যবসায়ী বান্টি ইসলাম। সেই ক্লাবে ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর খুন হন চিত্রনায়িকা দিতির স্বামী চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী। ক্লাবের ভেতরেই তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ নিয়ে গুলশান থানায় মামলা হয়। তদন্ত আসে ডিবিতে। সেই মামলায় ১৯৯৯ সালের ৩ জানুয়ারি গুলশান থেকে প্রথমে বান্টি ইসলামকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
তিন দিন পর ৬ জানুয়ারি গুলশান লেডিস পার্কের সামনে থেকে এসবির সহকারী পুলিশ সুপার খলিলুর রহমান গ্রেপ্তার করেন আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে। পরে এসবি তাঁকে ডিবির কাছে হস্তান্তর করে। সোহেল চৌধুরী খুনের মামলায় বান্টি ও আজিজ মোহাম্মদ ভাই ছাড়া আরও আসামি ছিলেন তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন, ফারুক আব্বাসী, আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী এবং শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন। ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। হাইকোর্টের আদেশে এই মামলার কার্যক্রম এখন অবধি স্থগিত আছে।
হাজতে বসে আজিজ মোহাম্মদ ভাই আমাকে বলেন, গ্রেপ্তারের প্রথম কয়েক দিন তাঁকে অন্য জায়গায় রাখা হয়েছিল। আজ তাঁকে ডিবির হাজতে আনা হয়েছে। ডিবির ডিসি বি করিম তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন কয়েক দফা। এটুকু বলতেই সামনে বসা কনস্টেবল এগিয়ে এসে বললেন, ‘ওনার সঙ্গে কথা বলতে মানা আছে।’
তখন সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার ফলোআপ করতে আমরা প্রতিদিনই বি করিমের কাছে যেতাম। আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে তাঁকে নানা দরকারি-অদরকারি প্রশ্ন করতাম। বি করিমও বেশ রসিক মানুষ, বিরক্ত না হয়ে তিনি সব প্রশ্নের জবাব দিতেন। একদিন তিনি আমাকে সিলেটি ভাষায় বললেন, ‘তাইন তো খুন লইয়া কুনতা মাতইন না, খালি কুন পুরির লগে কিতা সম্পর্ক ইতা খালি ইনাইয়া-বিনাইয়া গফ করইন।’ (তিনি তো খুন নিয়ে কিছু বলেন না। শুধু কোন মেয়ের সঙ্গে কী সম্পর্ক, সেই গল্প ইনিয়ে-বিনিয়ে বলেন।)
আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে আমাকে প্রথম পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন এক সিনে সাংবাদিক। তখন ৩৪ বিজয়নগর ঠিকানার ভবনটির নিচতলায় ছিল লাল-সবুজ পত্রিকার অফিস আর ওপরে এমবি ফ্লিমস। একদিন সেই সাংবাদিক আমাকে নিয়ে গেলেন আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে।
আমরা দুজন দোতলার একটি কক্ষে ঢুকে দেখি ইয়া মোটা এক লোকের পাশে বসে শ্যামলা রঙের হালকা-পাতলা এক তরুণী বয়স্ক লোকটার ডান হাতের আঙুল ফুটিয়ে দিচ্ছেন আর ‘দাদু দাদু’ করছেন। সাংবাদিক সাহেব সেই মোটা লোকটিকে দেখিয়ে বললেন, ইনিই চিত্রপরিচালক এহতেশাম। আর মেয়েটিকে দেখিয়ে বললেন, তাঁর নতুন ছবিতে নায়িকা হচ্ছেন, নাম শাবনূর। সিমেনার নাম ‘চাঁদনি রাতে’। পরে শুনেছি, ছবিটি ফ্লপ করেছিল।
এহতেশামের পাশের রুমে বসতেন সিনেমা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এমবি ফ্লিমসের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই। আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হয়েছিল, যার বেশির ভাগই ছিল বিভিন্ন নায়িকা প্রসঙ্গে। তিনি কথা বলেন হেসে হেসে আর একটু পরপর নিভে যাওয়া চুরুটে আগুন দেন। তাঁর কথা বলার ধরন এবং চুরুট টানা আমার খুব পছন্দ হয়েছিল।
১৯৯৩-৯৪ সালের দিকে একটি টুথপেস্টের বিজ্ঞাপন খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। সেই বিজ্ঞাপনের মডেল ছিলেন নওরিন ইসলাম নামে এক তরুণী। তাঁর বাবা ববি ইসলাম ইংরেজি দৈনিক মর্নিং সানের মালিক। ববি ইসলামের ছোট ভাই বান্টি ইসলাম ছিলেন আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বন্ধু। ববির বাড়িতে যাতায়াতের সুবাদে বয়সের বিস্তর ব্যবধান থাকার পরও নওরিনের সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদের সম্পর্ক তৈরি হয়। একপর্যায়ে পরিবারের অমতে আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে বিয়ে করেন নওরিন। সেই সংসার এখনো আছে। নওরিন এখন তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মা। তবে নওরিনকে বিয়ে করার আগে আজিজ মোহাম্মদ ভাই এক পাকিস্তানি তরুণীকে বিয়ে করেছিলেন।
যত দূর শুনেছি, ১৯৪৭-এ দেশভাগের পর আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের পরিবার ভারতের কানপুর থেকে পুরান ঢাকায় আসে। তাঁরা মূলত পারস্য বংশোদ্ভূত ‘শিয়া’ সম্প্রদায়ের লোক। আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের জন্ম ১৯৬২ সালে, আরমানিটোলায়। তাঁর বাবা মোহাম্মদ ভাই ইস্পাতের ব্যবসা শুরু করেন। ধীরে ধীরে অলিম্পিক ব্যাটারি, অলিম্পিক বলপেন, অলিম্পিক ব্রেড ও বিস্কুট, এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস, এমবি ফিল্মসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। মোহাম্মদ ভাইয়ের বয়স হয়ে গেলে ব্যবসা দেখাশোনার দায়িত্ব পড়ে ছেলে আজিজ মোহাম্মদের ওপর। এতে খুব কম বয়সে তিনি বিপুল বিত্তের মালিক হন। সেই অর্থের একটি বিরাট অংশ নিজের ভোগবিলাসে ব্যয় করতে থাকেন। তাঁর গুলশানের বাড়িতে ছিল বিশাল একটি বার। সেখানে নিয়মিত পার্টি হতো। দেশের হোমরাচোমরারা সেই পার্টিতে যেতেন। দেশ ছাড়াও বোম্বের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা আসতেন তাঁর বাড়িতে। একবার সেই বাড়ির পার্টিতে উপস্থিত অভিনেত্রী মুনমুন সেন ও মমতা কুলকার্নির ছবিও ছাপা হয়েছিল কাগজে। গুলশান-বনানীর অনেক তরুণী সেই পার্টিতে আসতেন উদ্ভট পোশাক পরে। শুনেছি, এসব পার্টিতে তিনি নিজে কখনো মদ পান করতেন না। পার্টির সময় চুরুট হাতে ঘুরে বেড়াতেন। সেসব পার্টিতে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতও আসতেন। আসতেন অনেক অচেনা মানুষ। এঁদের সঙ্গে আলাদা কথা বলতেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই।
শোনা যায়, সেই সময় নামীদামি অনেক অভিনেত্রী ও তারকার সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বিশেষ সম্পর্ক ছিল। সেই গল্প রসিয়ে রসিয়ে করতেন আর বলতেন, মেয়েদের ‘মন জয়’ করতে তিনি দামি উপহার দিতেন।
আজিজ মোহাম্মদ একবার আমাকে বলেছিলেন, এক বান্ধবীকে নিয়ে এরশাদের সঙ্গে তাঁর অনেক ঝামেলা হয়। এরপর এরশাদ তাঁকে গ্রেপ্তার করিয়েছিলেন। পরে তাঁকে মুক্ত করতে প্রিন্স করিম আগা খান নিজে বাংলাদেশে আসেন।
ভোগবিলাস নিয়ে আজিজ ভাইয়ের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠলেও প্রথম খুনের অভিযোগ ওঠে জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ মারা যাওয়ার পর। সালমান শাহর মা অভিযোগ করেন, সালমানের স্ত্রী সামিরার সঙ্গে সম্পর্কের সুবাদে আজিজ ভাই তাঁর ছেলে সালমান শাহকে খুন করিয়েছেন। এ ঘটনার দুই বছর পর সোহেল চৌধুরী খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হন তিনি। তবে তিনি সব সময় কিছু না কিছু করে আলোচনায় থাকতেন।
১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনায় পুঁজিবাজারবিষয়ক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। কিন্তু তাঁকে গ্রেপ্তার হতে হয়নি। এর আগে এটিভি নামে একটি স্যাটেলাইট চ্যানেল করেছিলেন তিনি। ব্যাংকক থেকে সেই চ্যানেল সম্প্রচার করা হতো। এ নিয়েও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হলে চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় এসবি পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তবে খুনের মামলায় জামিন পাওয়ার পর তিনি আর দেশে থাকেননি। বিদেশে চলে যান, আর ফিরেও আসেননি।
আজিজ মোহাম্মদ ভাই দেশে না থাকলেও তাঁর আত্মীয়স্বজনও কম যান না। ২০০৭ সালে ইয়াবা ট্যাবলেট তৈরির জন্য তাঁর ভাতিজা আমিন হুদাকে র্যাব গ্রেপ্তার করে। সে সময় ইয়াবার সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের নাম আসে। ২০১৩ সালে আমিন হুদার ৭৯ বছরের জেল হয়। পরে তিনি কারাগারে মারা যান।
২০১৯ সালের অক্টোবরে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের গুলশানের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বিপুল পরিমাণ মদের বোতল, সিসা ও ক্যাসিনোসামগ্রী উদ্ধার করে। ২০২১ সালের আগস্টে এনবিআর তাঁর যাবতীয় ব্যাংক হিসাব জব্দ করে।
আজিজ মোহাম্মদ ভাই এখন পরিবার নিয়ে থাইল্যান্ডে থাকেন। স্ত্রী নওরিন দেশে এসে ব্যবসা দেখেন। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং ও সিঙ্গাপুরে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের হোটেল ও রিসোর্ট আছে। শোনা যায়, মুম্বাইয়ের ডন দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। কিন্তু এসব নিয়ে আমি যতবার তাঁর কাছে জানতে চেয়েছি, তিনি বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই ভিত্তিহীন; বরং মিডিয়াই তাঁকে ডন হিসেবে বারবার প্রতিষ্ঠিত করেছে।
জানি না, তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আদৌ সত্য কি না। হয়তো সময়ই বলে দেবে চমকে ঘেরা এই রহস্যময় লোকটি আসলেই কেমন।
আরও পড়ুন:
কামরুল হাসান

মিন্টো রোডের ডিবি অফিসের পুরোনো ভবনে ঢুকতেই একটি কাঠের সিঁড়ি ওপরে উঠে গেছে। সিঁড়ির মুখ থেকে বাঁয়ে ঘুরলে ডানে ছোট একটি হাজতখানা। দরজায় লোহার গ্রিল দেওয়া, বাইরে থেকে ভেতরের সবকিছুই দেখা যায়। সেটা পার হলেই একটি কক্ষ, সেখানে বসেন ডিসি সৈয়দ বজলুল করিম, যিনি সবার কাছে পরিচিত ‘বি করিম’ নামে।
ডিবি অফিসের ফটকে তখন এত কড়াকড়ি ছিল না। আমরা যেতাম বিনা বাধায়, কোনো রকম আগাম অনুমতি ছাড়াই। তো একদিন দুপুরে গিয়ে দেখি, সেই হাজতখানার খালি মেঝেতে ইয়া লম্বা এক লোক শুয়ে গুনগুন করে গান গাইছেন। তাঁর পরনে টি-শার্ট আর হাফপ্যান্ট। হাজতের আশপাশে কেউ নেই। উল্টো দিকে একটি পুরোনো সোফায় এক পুলিশ সদস্য বসে কী যেন পড়ছেন। শুয়ে থাকা লোকটার মুখ দেয়ালের দিকে বলে প্রথমে চিনতে পারিনি। এগিয়ে গিয়ে তাকাতেই চমকে উঠি, ও মা! এ যে আজিজ মোহাম্মদ ভাই! মানে ধনকুবের আজিজ মোহাম্মদ ভাই।
এ ঘটনা ১৯৯৯ সালের জানুয়ারির। তার আগে বলে রাখি, আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে দেশের অনেক সাংবাদিকের পরিচয় ছিল বা আছে। নানা ঘটন-অঘটনে বরাবরই তিনি ছিলেন আলোচনায়। সংবাদের প্রয়োজনে আমরা অনেকবার তাঁর অফিসে বা বাসায় গিয়ে বক্তব্য নিয়েছি। সেই সুবাদে অনেকের মতো তিনি আমাকেও চিনতেন। সেই আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে হাজতে দেখে বেশ অবাক হলাম। কিন্তু তিনি খুব স্বাভাবিক। আমাকে দেখে মৃদু হেসে বললেন, ‘কী মিয়া, তামাশা দেখছ, দেখো।’
এবার বলি, আজিজ মোহাম্মদ ভাই কেন হাজতে এলেন। ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবদিন টাওয়ারে সাততলায় ‘ক্লাব ট্রাম্পস’ নামে একটি ডিসকো ক্লাব গড়ে উঠেছিল। সেটা করেছিলেন আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের চাচাশ্বশুর, আরেক আলোচিত ব্যবসায়ী বান্টি ইসলাম। সেই ক্লাবে ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর খুন হন চিত্রনায়িকা দিতির স্বামী চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী। ক্লাবের ভেতরেই তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ নিয়ে গুলশান থানায় মামলা হয়। তদন্ত আসে ডিবিতে। সেই মামলায় ১৯৯৯ সালের ৩ জানুয়ারি গুলশান থেকে প্রথমে বান্টি ইসলামকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
তিন দিন পর ৬ জানুয়ারি গুলশান লেডিস পার্কের সামনে থেকে এসবির সহকারী পুলিশ সুপার খলিলুর রহমান গ্রেপ্তার করেন আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে। পরে এসবি তাঁকে ডিবির কাছে হস্তান্তর করে। সোহেল চৌধুরী খুনের মামলায় বান্টি ও আজিজ মোহাম্মদ ভাই ছাড়া আরও আসামি ছিলেন তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন, ফারুক আব্বাসী, আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী এবং শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন। ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। হাইকোর্টের আদেশে এই মামলার কার্যক্রম এখন অবধি স্থগিত আছে।
হাজতে বসে আজিজ মোহাম্মদ ভাই আমাকে বলেন, গ্রেপ্তারের প্রথম কয়েক দিন তাঁকে অন্য জায়গায় রাখা হয়েছিল। আজ তাঁকে ডিবির হাজতে আনা হয়েছে। ডিবির ডিসি বি করিম তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন কয়েক দফা। এটুকু বলতেই সামনে বসা কনস্টেবল এগিয়ে এসে বললেন, ‘ওনার সঙ্গে কথা বলতে মানা আছে।’
তখন সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার ফলোআপ করতে আমরা প্রতিদিনই বি করিমের কাছে যেতাম। আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে তাঁকে নানা দরকারি-অদরকারি প্রশ্ন করতাম। বি করিমও বেশ রসিক মানুষ, বিরক্ত না হয়ে তিনি সব প্রশ্নের জবাব দিতেন। একদিন তিনি আমাকে সিলেটি ভাষায় বললেন, ‘তাইন তো খুন লইয়া কুনতা মাতইন না, খালি কুন পুরির লগে কিতা সম্পর্ক ইতা খালি ইনাইয়া-বিনাইয়া গফ করইন।’ (তিনি তো খুন নিয়ে কিছু বলেন না। শুধু কোন মেয়ের সঙ্গে কী সম্পর্ক, সেই গল্প ইনিয়ে-বিনিয়ে বলেন।)
আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে আমাকে প্রথম পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন এক সিনে সাংবাদিক। তখন ৩৪ বিজয়নগর ঠিকানার ভবনটির নিচতলায় ছিল লাল-সবুজ পত্রিকার অফিস আর ওপরে এমবি ফ্লিমস। একদিন সেই সাংবাদিক আমাকে নিয়ে গেলেন আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে।
আমরা দুজন দোতলার একটি কক্ষে ঢুকে দেখি ইয়া মোটা এক লোকের পাশে বসে শ্যামলা রঙের হালকা-পাতলা এক তরুণী বয়স্ক লোকটার ডান হাতের আঙুল ফুটিয়ে দিচ্ছেন আর ‘দাদু দাদু’ করছেন। সাংবাদিক সাহেব সেই মোটা লোকটিকে দেখিয়ে বললেন, ইনিই চিত্রপরিচালক এহতেশাম। আর মেয়েটিকে দেখিয়ে বললেন, তাঁর নতুন ছবিতে নায়িকা হচ্ছেন, নাম শাবনূর। সিমেনার নাম ‘চাঁদনি রাতে’। পরে শুনেছি, ছবিটি ফ্লপ করেছিল।
এহতেশামের পাশের রুমে বসতেন সিনেমা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এমবি ফ্লিমসের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই। আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হয়েছিল, যার বেশির ভাগই ছিল বিভিন্ন নায়িকা প্রসঙ্গে। তিনি কথা বলেন হেসে হেসে আর একটু পরপর নিভে যাওয়া চুরুটে আগুন দেন। তাঁর কথা বলার ধরন এবং চুরুট টানা আমার খুব পছন্দ হয়েছিল।
১৯৯৩-৯৪ সালের দিকে একটি টুথপেস্টের বিজ্ঞাপন খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। সেই বিজ্ঞাপনের মডেল ছিলেন নওরিন ইসলাম নামে এক তরুণী। তাঁর বাবা ববি ইসলাম ইংরেজি দৈনিক মর্নিং সানের মালিক। ববি ইসলামের ছোট ভাই বান্টি ইসলাম ছিলেন আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বন্ধু। ববির বাড়িতে যাতায়াতের সুবাদে বয়সের বিস্তর ব্যবধান থাকার পরও নওরিনের সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদের সম্পর্ক তৈরি হয়। একপর্যায়ে পরিবারের অমতে আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে বিয়ে করেন নওরিন। সেই সংসার এখনো আছে। নওরিন এখন তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মা। তবে নওরিনকে বিয়ে করার আগে আজিজ মোহাম্মদ ভাই এক পাকিস্তানি তরুণীকে বিয়ে করেছিলেন।
যত দূর শুনেছি, ১৯৪৭-এ দেশভাগের পর আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের পরিবার ভারতের কানপুর থেকে পুরান ঢাকায় আসে। তাঁরা মূলত পারস্য বংশোদ্ভূত ‘শিয়া’ সম্প্রদায়ের লোক। আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের জন্ম ১৯৬২ সালে, আরমানিটোলায়। তাঁর বাবা মোহাম্মদ ভাই ইস্পাতের ব্যবসা শুরু করেন। ধীরে ধীরে অলিম্পিক ব্যাটারি, অলিম্পিক বলপেন, অলিম্পিক ব্রেড ও বিস্কুট, এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস, এমবি ফিল্মসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। মোহাম্মদ ভাইয়ের বয়স হয়ে গেলে ব্যবসা দেখাশোনার দায়িত্ব পড়ে ছেলে আজিজ মোহাম্মদের ওপর। এতে খুব কম বয়সে তিনি বিপুল বিত্তের মালিক হন। সেই অর্থের একটি বিরাট অংশ নিজের ভোগবিলাসে ব্যয় করতে থাকেন। তাঁর গুলশানের বাড়িতে ছিল বিশাল একটি বার। সেখানে নিয়মিত পার্টি হতো। দেশের হোমরাচোমরারা সেই পার্টিতে যেতেন। দেশ ছাড়াও বোম্বের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা আসতেন তাঁর বাড়িতে। একবার সেই বাড়ির পার্টিতে উপস্থিত অভিনেত্রী মুনমুন সেন ও মমতা কুলকার্নির ছবিও ছাপা হয়েছিল কাগজে। গুলশান-বনানীর অনেক তরুণী সেই পার্টিতে আসতেন উদ্ভট পোশাক পরে। শুনেছি, এসব পার্টিতে তিনি নিজে কখনো মদ পান করতেন না। পার্টির সময় চুরুট হাতে ঘুরে বেড়াতেন। সেসব পার্টিতে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতও আসতেন। আসতেন অনেক অচেনা মানুষ। এঁদের সঙ্গে আলাদা কথা বলতেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই।
শোনা যায়, সেই সময় নামীদামি অনেক অভিনেত্রী ও তারকার সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বিশেষ সম্পর্ক ছিল। সেই গল্প রসিয়ে রসিয়ে করতেন আর বলতেন, মেয়েদের ‘মন জয়’ করতে তিনি দামি উপহার দিতেন।
আজিজ মোহাম্মদ একবার আমাকে বলেছিলেন, এক বান্ধবীকে নিয়ে এরশাদের সঙ্গে তাঁর অনেক ঝামেলা হয়। এরপর এরশাদ তাঁকে গ্রেপ্তার করিয়েছিলেন। পরে তাঁকে মুক্ত করতে প্রিন্স করিম আগা খান নিজে বাংলাদেশে আসেন।
ভোগবিলাস নিয়ে আজিজ ভাইয়ের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠলেও প্রথম খুনের অভিযোগ ওঠে জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ মারা যাওয়ার পর। সালমান শাহর মা অভিযোগ করেন, সালমানের স্ত্রী সামিরার সঙ্গে সম্পর্কের সুবাদে আজিজ ভাই তাঁর ছেলে সালমান শাহকে খুন করিয়েছেন। এ ঘটনার দুই বছর পর সোহেল চৌধুরী খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হন তিনি। তবে তিনি সব সময় কিছু না কিছু করে আলোচনায় থাকতেন।
১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনায় পুঁজিবাজারবিষয়ক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। কিন্তু তাঁকে গ্রেপ্তার হতে হয়নি। এর আগে এটিভি নামে একটি স্যাটেলাইট চ্যানেল করেছিলেন তিনি। ব্যাংকক থেকে সেই চ্যানেল সম্প্রচার করা হতো। এ নিয়েও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হলে চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় এসবি পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তবে খুনের মামলায় জামিন পাওয়ার পর তিনি আর দেশে থাকেননি। বিদেশে চলে যান, আর ফিরেও আসেননি।
আজিজ মোহাম্মদ ভাই দেশে না থাকলেও তাঁর আত্মীয়স্বজনও কম যান না। ২০০৭ সালে ইয়াবা ট্যাবলেট তৈরির জন্য তাঁর ভাতিজা আমিন হুদাকে র্যাব গ্রেপ্তার করে। সে সময় ইয়াবার সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের নাম আসে। ২০১৩ সালে আমিন হুদার ৭৯ বছরের জেল হয়। পরে তিনি কারাগারে মারা যান।
২০১৯ সালের অক্টোবরে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের গুলশানের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বিপুল পরিমাণ মদের বোতল, সিসা ও ক্যাসিনোসামগ্রী উদ্ধার করে। ২০২১ সালের আগস্টে এনবিআর তাঁর যাবতীয় ব্যাংক হিসাব জব্দ করে।
আজিজ মোহাম্মদ ভাই এখন পরিবার নিয়ে থাইল্যান্ডে থাকেন। স্ত্রী নওরিন দেশে এসে ব্যবসা দেখেন। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং ও সিঙ্গাপুরে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের হোটেল ও রিসোর্ট আছে। শোনা যায়, মুম্বাইয়ের ডন দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। কিন্তু এসব নিয়ে আমি যতবার তাঁর কাছে জানতে চেয়েছি, তিনি বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই ভিত্তিহীন; বরং মিডিয়াই তাঁকে ডন হিসেবে বারবার প্রতিষ্ঠিত করেছে।
জানি না, তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আদৌ সত্য কি না। হয়তো সময়ই বলে দেবে চমকে ঘেরা এই রহস্যময় লোকটি আসলেই কেমন।
আরও পড়ুন:

মিন্টো রোডের ডিবি অফিসের পুরোনো ভবনে ঢুকতেই একটি কাঠের সিঁড়ি ওপরে উঠে গেছে। সিঁড়ির মুখ থেকে বাঁয়ে ঘুরলে ডানে ছোট একটি হাজতখানা। দরজায় লোহার গ্রিল দেওয়া, বাইরে থেকে ভেতরের সবকিছুই দেখা যায়। সেটা পার হলেই একটি কক্ষ, সেখানে বসেন ডিসি সৈয়দ বজলুল করিম, যিনি সবার কাছে পরিচিত ‘বি করিম’ নামে।
ডিবি অফিসের ফটকে তখন এত কড়াকড়ি ছিল না। আমরা যেতাম বিনা বাধায়, কোনো রকম আগাম অনুমতি ছাড়াই। তো একদিন দুপুরে গিয়ে দেখি, সেই হাজতখানার খালি মেঝেতে ইয়া লম্বা এক লোক শুয়ে গুনগুন করে গান গাইছেন। তাঁর পরনে টি-শার্ট আর হাফপ্যান্ট। হাজতের আশপাশে কেউ নেই। উল্টো দিকে একটি পুরোনো সোফায় এক পুলিশ সদস্য বসে কী যেন পড়ছেন। শুয়ে থাকা লোকটার মুখ দেয়ালের দিকে বলে প্রথমে চিনতে পারিনি। এগিয়ে গিয়ে তাকাতেই চমকে উঠি, ও মা! এ যে আজিজ মোহাম্মদ ভাই! মানে ধনকুবের আজিজ মোহাম্মদ ভাই।
এ ঘটনা ১৯৯৯ সালের জানুয়ারির। তার আগে বলে রাখি, আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে দেশের অনেক সাংবাদিকের পরিচয় ছিল বা আছে। নানা ঘটন-অঘটনে বরাবরই তিনি ছিলেন আলোচনায়। সংবাদের প্রয়োজনে আমরা অনেকবার তাঁর অফিসে বা বাসায় গিয়ে বক্তব্য নিয়েছি। সেই সুবাদে অনেকের মতো তিনি আমাকেও চিনতেন। সেই আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে হাজতে দেখে বেশ অবাক হলাম। কিন্তু তিনি খুব স্বাভাবিক। আমাকে দেখে মৃদু হেসে বললেন, ‘কী মিয়া, তামাশা দেখছ, দেখো।’
এবার বলি, আজিজ মোহাম্মদ ভাই কেন হাজতে এলেন। ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবদিন টাওয়ারে সাততলায় ‘ক্লাব ট্রাম্পস’ নামে একটি ডিসকো ক্লাব গড়ে উঠেছিল। সেটা করেছিলেন আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের চাচাশ্বশুর, আরেক আলোচিত ব্যবসায়ী বান্টি ইসলাম। সেই ক্লাবে ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর খুন হন চিত্রনায়িকা দিতির স্বামী চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী। ক্লাবের ভেতরেই তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ নিয়ে গুলশান থানায় মামলা হয়। তদন্ত আসে ডিবিতে। সেই মামলায় ১৯৯৯ সালের ৩ জানুয়ারি গুলশান থেকে প্রথমে বান্টি ইসলামকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
তিন দিন পর ৬ জানুয়ারি গুলশান লেডিস পার্কের সামনে থেকে এসবির সহকারী পুলিশ সুপার খলিলুর রহমান গ্রেপ্তার করেন আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে। পরে এসবি তাঁকে ডিবির কাছে হস্তান্তর করে। সোহেল চৌধুরী খুনের মামলায় বান্টি ও আজিজ মোহাম্মদ ভাই ছাড়া আরও আসামি ছিলেন তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন, ফারুক আব্বাসী, আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী এবং শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন। ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। হাইকোর্টের আদেশে এই মামলার কার্যক্রম এখন অবধি স্থগিত আছে।
হাজতে বসে আজিজ মোহাম্মদ ভাই আমাকে বলেন, গ্রেপ্তারের প্রথম কয়েক দিন তাঁকে অন্য জায়গায় রাখা হয়েছিল। আজ তাঁকে ডিবির হাজতে আনা হয়েছে। ডিবির ডিসি বি করিম তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন কয়েক দফা। এটুকু বলতেই সামনে বসা কনস্টেবল এগিয়ে এসে বললেন, ‘ওনার সঙ্গে কথা বলতে মানা আছে।’
তখন সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার ফলোআপ করতে আমরা প্রতিদিনই বি করিমের কাছে যেতাম। আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে তাঁকে নানা দরকারি-অদরকারি প্রশ্ন করতাম। বি করিমও বেশ রসিক মানুষ, বিরক্ত না হয়ে তিনি সব প্রশ্নের জবাব দিতেন। একদিন তিনি আমাকে সিলেটি ভাষায় বললেন, ‘তাইন তো খুন লইয়া কুনতা মাতইন না, খালি কুন পুরির লগে কিতা সম্পর্ক ইতা খালি ইনাইয়া-বিনাইয়া গফ করইন।’ (তিনি তো খুন নিয়ে কিছু বলেন না। শুধু কোন মেয়ের সঙ্গে কী সম্পর্ক, সেই গল্প ইনিয়ে-বিনিয়ে বলেন।)
আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে আমাকে প্রথম পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন এক সিনে সাংবাদিক। তখন ৩৪ বিজয়নগর ঠিকানার ভবনটির নিচতলায় ছিল লাল-সবুজ পত্রিকার অফিস আর ওপরে এমবি ফ্লিমস। একদিন সেই সাংবাদিক আমাকে নিয়ে গেলেন আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে।
আমরা দুজন দোতলার একটি কক্ষে ঢুকে দেখি ইয়া মোটা এক লোকের পাশে বসে শ্যামলা রঙের হালকা-পাতলা এক তরুণী বয়স্ক লোকটার ডান হাতের আঙুল ফুটিয়ে দিচ্ছেন আর ‘দাদু দাদু’ করছেন। সাংবাদিক সাহেব সেই মোটা লোকটিকে দেখিয়ে বললেন, ইনিই চিত্রপরিচালক এহতেশাম। আর মেয়েটিকে দেখিয়ে বললেন, তাঁর নতুন ছবিতে নায়িকা হচ্ছেন, নাম শাবনূর। সিমেনার নাম ‘চাঁদনি রাতে’। পরে শুনেছি, ছবিটি ফ্লপ করেছিল।
এহতেশামের পাশের রুমে বসতেন সিনেমা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এমবি ফ্লিমসের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই। আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হয়েছিল, যার বেশির ভাগই ছিল বিভিন্ন নায়িকা প্রসঙ্গে। তিনি কথা বলেন হেসে হেসে আর একটু পরপর নিভে যাওয়া চুরুটে আগুন দেন। তাঁর কথা বলার ধরন এবং চুরুট টানা আমার খুব পছন্দ হয়েছিল।
১৯৯৩-৯৪ সালের দিকে একটি টুথপেস্টের বিজ্ঞাপন খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। সেই বিজ্ঞাপনের মডেল ছিলেন নওরিন ইসলাম নামে এক তরুণী। তাঁর বাবা ববি ইসলাম ইংরেজি দৈনিক মর্নিং সানের মালিক। ববি ইসলামের ছোট ভাই বান্টি ইসলাম ছিলেন আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বন্ধু। ববির বাড়িতে যাতায়াতের সুবাদে বয়সের বিস্তর ব্যবধান থাকার পরও নওরিনের সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদের সম্পর্ক তৈরি হয়। একপর্যায়ে পরিবারের অমতে আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে বিয়ে করেন নওরিন। সেই সংসার এখনো আছে। নওরিন এখন তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মা। তবে নওরিনকে বিয়ে করার আগে আজিজ মোহাম্মদ ভাই এক পাকিস্তানি তরুণীকে বিয়ে করেছিলেন।
যত দূর শুনেছি, ১৯৪৭-এ দেশভাগের পর আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের পরিবার ভারতের কানপুর থেকে পুরান ঢাকায় আসে। তাঁরা মূলত পারস্য বংশোদ্ভূত ‘শিয়া’ সম্প্রদায়ের লোক। আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের জন্ম ১৯৬২ সালে, আরমানিটোলায়। তাঁর বাবা মোহাম্মদ ভাই ইস্পাতের ব্যবসা শুরু করেন। ধীরে ধীরে অলিম্পিক ব্যাটারি, অলিম্পিক বলপেন, অলিম্পিক ব্রেড ও বিস্কুট, এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস, এমবি ফিল্মসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। মোহাম্মদ ভাইয়ের বয়স হয়ে গেলে ব্যবসা দেখাশোনার দায়িত্ব পড়ে ছেলে আজিজ মোহাম্মদের ওপর। এতে খুব কম বয়সে তিনি বিপুল বিত্তের মালিক হন। সেই অর্থের একটি বিরাট অংশ নিজের ভোগবিলাসে ব্যয় করতে থাকেন। তাঁর গুলশানের বাড়িতে ছিল বিশাল একটি বার। সেখানে নিয়মিত পার্টি হতো। দেশের হোমরাচোমরারা সেই পার্টিতে যেতেন। দেশ ছাড়াও বোম্বের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা আসতেন তাঁর বাড়িতে। একবার সেই বাড়ির পার্টিতে উপস্থিত অভিনেত্রী মুনমুন সেন ও মমতা কুলকার্নির ছবিও ছাপা হয়েছিল কাগজে। গুলশান-বনানীর অনেক তরুণী সেই পার্টিতে আসতেন উদ্ভট পোশাক পরে। শুনেছি, এসব পার্টিতে তিনি নিজে কখনো মদ পান করতেন না। পার্টির সময় চুরুট হাতে ঘুরে বেড়াতেন। সেসব পার্টিতে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতও আসতেন। আসতেন অনেক অচেনা মানুষ। এঁদের সঙ্গে আলাদা কথা বলতেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই।
শোনা যায়, সেই সময় নামীদামি অনেক অভিনেত্রী ও তারকার সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বিশেষ সম্পর্ক ছিল। সেই গল্প রসিয়ে রসিয়ে করতেন আর বলতেন, মেয়েদের ‘মন জয়’ করতে তিনি দামি উপহার দিতেন।
আজিজ মোহাম্মদ একবার আমাকে বলেছিলেন, এক বান্ধবীকে নিয়ে এরশাদের সঙ্গে তাঁর অনেক ঝামেলা হয়। এরপর এরশাদ তাঁকে গ্রেপ্তার করিয়েছিলেন। পরে তাঁকে মুক্ত করতে প্রিন্স করিম আগা খান নিজে বাংলাদেশে আসেন।
ভোগবিলাস নিয়ে আজিজ ভাইয়ের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠলেও প্রথম খুনের অভিযোগ ওঠে জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ মারা যাওয়ার পর। সালমান শাহর মা অভিযোগ করেন, সালমানের স্ত্রী সামিরার সঙ্গে সম্পর্কের সুবাদে আজিজ ভাই তাঁর ছেলে সালমান শাহকে খুন করিয়েছেন। এ ঘটনার দুই বছর পর সোহেল চৌধুরী খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হন তিনি। তবে তিনি সব সময় কিছু না কিছু করে আলোচনায় থাকতেন।
১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনায় পুঁজিবাজারবিষয়ক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। কিন্তু তাঁকে গ্রেপ্তার হতে হয়নি। এর আগে এটিভি নামে একটি স্যাটেলাইট চ্যানেল করেছিলেন তিনি। ব্যাংকক থেকে সেই চ্যানেল সম্প্রচার করা হতো। এ নিয়েও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হলে চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় এসবি পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তবে খুনের মামলায় জামিন পাওয়ার পর তিনি আর দেশে থাকেননি। বিদেশে চলে যান, আর ফিরেও আসেননি।
আজিজ মোহাম্মদ ভাই দেশে না থাকলেও তাঁর আত্মীয়স্বজনও কম যান না। ২০০৭ সালে ইয়াবা ট্যাবলেট তৈরির জন্য তাঁর ভাতিজা আমিন হুদাকে র্যাব গ্রেপ্তার করে। সে সময় ইয়াবার সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের নাম আসে। ২০১৩ সালে আমিন হুদার ৭৯ বছরের জেল হয়। পরে তিনি কারাগারে মারা যান।
২০১৯ সালের অক্টোবরে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের গুলশানের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বিপুল পরিমাণ মদের বোতল, সিসা ও ক্যাসিনোসামগ্রী উদ্ধার করে। ২০২১ সালের আগস্টে এনবিআর তাঁর যাবতীয় ব্যাংক হিসাব জব্দ করে।
আজিজ মোহাম্মদ ভাই এখন পরিবার নিয়ে থাইল্যান্ডে থাকেন। স্ত্রী নওরিন দেশে এসে ব্যবসা দেখেন। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং ও সিঙ্গাপুরে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের হোটেল ও রিসোর্ট আছে। শোনা যায়, মুম্বাইয়ের ডন দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। কিন্তু এসব নিয়ে আমি যতবার তাঁর কাছে জানতে চেয়েছি, তিনি বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই ভিত্তিহীন; বরং মিডিয়াই তাঁকে ডন হিসেবে বারবার প্রতিষ্ঠিত করেছে।
জানি না, তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আদৌ সত্য কি না। হয়তো সময়ই বলে দেবে চমকে ঘেরা এই রহস্যময় লোকটি আসলেই কেমন।
আরও পড়ুন:

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৬ দিন আগে
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৯ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৯ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
১০ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।
জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।
জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

ডিবি অফিসের ফটকে তখন এত কড়াকড়ি ছিল না। আমরা যেতাম বিনা বাধায়, কোনো রকম আগাম অনুমতি ছাড়াই। তো একদিন দুপুরে গিয়ে দেখি, সেই হাজতখানার খালি মেঝেতে ইয়া লম্বা এক লোক শুয়ে গুনগুন করে গান গাইছেন। তাঁর পরনে টি-শার্ট আর হাফপ্যান্ট। হাজতের আশপাশে কেউ নেই। উল্টো দিকে
১৮ ডিসেম্বর ২০২১
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৯ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৯ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
১০ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।
ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।
ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

ডিবি অফিসের ফটকে তখন এত কড়াকড়ি ছিল না। আমরা যেতাম বিনা বাধায়, কোনো রকম আগাম অনুমতি ছাড়াই। তো একদিন দুপুরে গিয়ে দেখি, সেই হাজতখানার খালি মেঝেতে ইয়া লম্বা এক লোক শুয়ে গুনগুন করে গান গাইছেন। তাঁর পরনে টি-শার্ট আর হাফপ্যান্ট। হাজতের আশপাশে কেউ নেই। উল্টো দিকে
১৮ ডিসেম্বর ২০২১
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৬ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৯ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
১০ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।
সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।
১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’
অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।
সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।
সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।
১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’
অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।
সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

ডিবি অফিসের ফটকে তখন এত কড়াকড়ি ছিল না। আমরা যেতাম বিনা বাধায়, কোনো রকম আগাম অনুমতি ছাড়াই। তো একদিন দুপুরে গিয়ে দেখি, সেই হাজতখানার খালি মেঝেতে ইয়া লম্বা এক লোক শুয়ে গুনগুন করে গান গাইছেন। তাঁর পরনে টি-শার্ট আর হাফপ্যান্ট। হাজতের আশপাশে কেউ নেই। উল্টো দিকে
১৮ ডিসেম্বর ২০২১
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৬ দিন আগে
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৯ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
১০ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।
গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।
সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।
এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।
তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।
সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।
অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।
গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।
সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।
এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।
তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।
সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।
অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

ডিবি অফিসের ফটকে তখন এত কড়াকড়ি ছিল না। আমরা যেতাম বিনা বাধায়, কোনো রকম আগাম অনুমতি ছাড়াই। তো একদিন দুপুরে গিয়ে দেখি, সেই হাজতখানার খালি মেঝেতে ইয়া লম্বা এক লোক শুয়ে গুনগুন করে গান গাইছেন। তাঁর পরনে টি-শার্ট আর হাফপ্যান্ট। হাজতের আশপাশে কেউ নেই। উল্টো দিকে
১৮ ডিসেম্বর ২০২১
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৬ দিন আগে
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৯ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৯ দিন আগে