Ajker Patrika

পশ্চিমাদের প্রস্থানে ইরাকের তেল বাণিজ্যে আধিপত্য বাড়ছে চীনা কোম্পানির

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইরাকের তেলক্ষেত্রগুলোতে ক্রমেই বাড়ছে চীনা তেল উত্তোলন কোম্পানি। ছবি: মানি কন্ট্রোল
ইরাকের তেলক্ষেত্রগুলোতে ক্রমেই বাড়ছে চীনা তেল উত্তোলন কোম্পানি। ছবি: মানি কন্ট্রোল

বিশ্বের প্রধান তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংগঠন ওপেকের দ্বিতীয় বৃহত্তম সদস্য ইরাক। সম্প্রতি ইরাকে নিজেদের কার্যক্রম বাড়াতে শুরু করেছে চীনের স্বশাসিত তুলনামূলক ছোট ও বেসরকারি তেল কোম্পানিগুলো। যেখানে আন্তর্জাতিক বড় বড় তেল কোম্পানিগুলো ধীরে ধীরে ইরাক থেকে নিজেদের কার্যক্রম কমিয়ে আনছে, সেখানে বিপরীত পথে হাঁটছে চীনের এই কোম্পানিগুলো।

চীনের এই কোম্পানিগুলো এরই মধ্যে ইরাকে কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এই খাতে কাজ করা চারটি কোম্পানির কর্মকর্তাদের থেকে জানা যায়, তারা ইরাকে দৈনিক উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ করে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ লাখ ব্যারেলে উন্নীত করার লক্ষ্যে এগোচ্ছে।

বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানিগুলোকে আকৃষ্ট করতে লড়াই করতে থাকা ইরাকের জন্য এ বিষয়টি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে দেশটির তেল উৎপাদন খাতে চীনের বেসরকারি খাতের ক্রমাগত জায়গা করে নেওয়া উদ্বেগের সৃষ্টি করেছিল। ইরাকের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা চীনের ক্রমবর্ধমান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন এবং অনেক ক্ষেত্রে এটি ঠেকানোর চেষ্টাও করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও, ইরাকের তেল খাতে স্বশাসিত চীনা কোম্পানিগুলোর আধিপত্য স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল জায়ান্টগুলো থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করা কর্মকর্তাদের নিয়ে পরিচালিত ছোট ছোট চীনা তেল কোম্পানিগুলোর কাছে ইরাক এখন একটি বড় সুযোগ। পশ্চিমা বা বড় চীনা কোম্পানির জন্য যেসব প্রকল্প তুলনামূলকভাবে ছোট ও কম লাভজনক, সেগুলোতে কম খরচে এবং দ্রুতগতিতে উন্নয়ন ঘটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তারা।

চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত তেল ও গ্যাস খাতে নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ কম থাকায় এই বিদেশমুখী উদ্যোগ অন্য ভারী শিল্প খাতের মতোই চীনা কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন বাজার ও দক্ষতা ব্যবহারের ক্ষেত্র তৈরি করছে।

জিও-জাদে পেট্রোলিয়াম কর্প, ইউনাইটেড এনার্জি গ্রুপ, ঝংমান পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস গ্রুপ ও অ্যান্টন অয়েলফিল্ড সার্ভিসেস গ্রুপের মতো তুলনামূলকভাবে অখ্যাত কোম্পানিগুলো গত বছর ইরাকের তেল অনুসন্ধানের সুযোগ পেয়ে সবার নজরে আসে।

এই কোম্পানিগুলোর নির্বাহীরা জানান, ইরাকে বিনিয়োগের পরিবেশ আগের চেয়ে তুলনায় অনেক উন্নত হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। পাশাপাশি দেশটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ অবস্থায় বাগদাদ এখন একইসঙ্গে চীনা ও পশ্চিমা উভয় ধরনের কোম্পানিকে আকৃষ্ট করতে আগ্রহী।

২০২৯ সালের মধ্যে তেল উৎপাদন ক্ষমতা ৫০ শতাংশেরও বেশি বাড়িয়ে দৈনিক ৬০ লাখ ব্যারেলে নিয়ে যেতে চায় ইরাক। বর্তমানে দেশটির উৎপাদনের বড় একটি অংশই আসে চীনের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (সিএনপিসি) পরিচালিত হাইফায়া, রুমাইলা ও ওয়েস্ট কুর্না ১-এর মতো বিশাল তেলক্ষেত্রগুলো থেকে।

এক বছর আগে তেল প্রকল্পের জন্য আগের নির্ধারিত ফি ভিত্তিক চুক্তি থেকে সরে আসে ইরাক। এ সময় লাভ ভাগাভাগি নির্ভর মডেল চালু করে দেশটির সরকার। এক্সনমোবিল ও শেলের মতো পশ্চিমা তেল জায়ান্টদের কার্যক্রম সীমিত হওয়ার পর প্রকল্পে গতি আনার লক্ষ্যে নেওয়া এই পদক্ষেপ চীনের স্বশাসিত বেসরকারি তেল কোম্পানিগুলোর জন্য এক বড় সুযোগ তৈরি করে দেয়।

এই ছোট চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো বড় চীনা কোম্পানির তুলনায় অনেক বেশি চটপটে ও অভিযোজনযোগ্য। আবার পশ্চিমা অনেক বিনিয়োগকারীর তুলনায় তারা ঝুঁকি নিতে অনেক বেশি আগ্রহী।

ইরাকের রাষ্ট্রীয় বসরা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা আলি আব্দুলআমির জানান, চীনা কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতামূলক অর্থায়ন প্রস্তাব করে, তুলনামূলক সস্তা চীনা শ্রমিক ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে খরচ কমায় এবং দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি পেতে কম লাভেও কাজ করতে রাজি থাকে।

তিনি আরও বলেন, ‘চীনা কোম্পানিরা দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষ, সময়সীমা মেনে চলে এবং নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জপূর্ণ এলাকাতেও কাজ করতে প্রস্তুত থাকে। পশ্চিমা কোম্পানির তুলনায় তাদের সঙ্গে কাজ করা অনেক সহজ ও কম জটিল।’

চীনা কোম্পানিগুলো নির্বাহীরা জানান, পশ্চিমা কোম্পানির যেখানে একটি তেলক্ষেত্র উন্নয়নে ৫ থেকে ১০ বছর সময় লাগে, সেখানে চীনের ছোট কোম্পানিগুলো ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারে।

জিও-জাদে পেট্রোলিয়াম-এর প্রধান নির্বাহী (সিইও) ডাই শিয়াওপিং বলেন, ‘চীনের স্বশাসিত কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনাগত খরচ পশ্চিমা কোম্পানির তুলনায় অনেক কম এবং তারা রাষ্ট্রায়ত্ত চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও প্রতিযোগিতায় এগিয়ে।’

তিনি আরও জানান, এই কোম্পানিগুলোর কারণে ইরাকে একটি বড় তেলক্ষেত্রে উন্নয়নমূলক একটি কূপ খননের গড় খরচ গত এক দশকে অর্ধেকে নেমে এসেছে। এখন তা প্রায় ৪ থেকে ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে।

ইরাকের জন্য এই চীনা কোম্পানির সাশ্রয়ী প্রকল্পগুলো অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হলেও উচ্চমানের প্রযুক্তি ও দক্ষতার উন্নয়নের ক্ষেত্রে কিছু আপস করতে হচ্ছে বলে আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন ইরাকি বিশেষজ্ঞরা।

চলতি বছরের মে মাসে চীনা কোম্পানি জিও-জেডের নেতৃত্বাধীন একটি কনসোর্টিয়াম দক্ষিণ বসরার টুবা তেলক্ষেত্রের উন্নয়ন ও একটি ২ লাখ ব্যারেল দৈনিক ক্ষমতাসম্পন্ন রিফাইনারি নির্মাণে বিনিয়োগের চুক্তি করে। জিও-জেড কোম্পানির সিইও ডাই শিয়াওপিং জানান, প্রায় ৮৪৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে ২০২৭ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অচল থাকা টুবা ক্ষেত্রের উৎপাদন ৪০ হাজার ব্যারেল দৈনিক করা হবে।

এই প্রকল্পের আওতায় একটি পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্স ও দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রও নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে, যার জন্য বহু বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে বলে জানান ডাই।

অন্যদিকে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ছোট চীনা প্রতিষ্ঠান ঝেনহুয়া অয়েল ২০০৮ সালে সিএনপিসির সঙ্গে যৌথভাবে ৩ বিলিয়ন ডলারের আহদাব তেলক্ষেত্র উন্নয়নে অংশ নেয়। ২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর ওই প্রকল্পটি ছিল ইরাকে প্রথম বড় বিদেশি বিনিয়োগ। এখন ঝেনহুয়া ২০৩০ সালের মধ্যে এর উৎপাদন দ্বিগুণ করে ২ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল দৈনিক করার লক্ষ্য নিয়েছে।

চীনা কোম্পানি ঝংমান পেট্রোলিয়াম চলতি বছরের জুনে ঘোষণা দেয়, ২০২৪ সালে পাওয়া মধ্য ইউফ্রেটিস ও পূর্ব বাগদাদ উত্তর ব্লকের উন্নয়নে তারা ৪৮১ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে।

তবে, এই সাশ্রয়ী প্রকল্পগুলোর একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো এতে ইরাকের উচ্চতর প্রযুক্তি সংযোজন ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাধা তৈরি হতে পারে। বসরা অয়েলের সাবেক অপরিশোধিত তেল বিভাগের প্রধান মুওয়াফাক আব্বাস বলেন, ‘চীনা কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা ও কারিগরি মান নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। তারা প্রায়ই চীনা কর্মীদের ওপর নির্ভর করে এবং ইরাকি কর্মীদের নিম্ন বেতনের পদে সীমাবদ্ধ রাখে।’

তবে কিছু পশ্চিমা কোম্পানি আবার ইরাকে ফিরছে। ২০২৩ সালে ফরাসি কোম্পানি টোটালএনার্জি ২৭ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প ঘোষণা করেছে। আর ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান বিপি কিরকুকের আধা-স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি অঞ্চলে চারটি তেলক্ষেত্র পুনর্গঠনে ২৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও কর্মীদের সাফল্য উদ্‌যাপনে আবুল খায়ের স্টিলের ‘একেএস-একসাথে আগামীর পথে’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইস্পাত উৎপাদনক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের স্টিল (একেএস) ৬ ডিসেম্বর তাদের সব কর্মীকে নিয়ে ‘একেএস-একসাথে আগামীর পথে’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। দিনব্যাপী এই উৎসবমুখর ও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে দেশের প্রতিটি স্থান থেকে আবুল খায়ের স্টিলের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।

সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। নামাজ ও খাবারের বিরতির পর একেএসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সবার উদ্দেশে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দেন। বক্তব্যে কোম্পানির সাম্প্রতিক অর্জন ও মাইলফলকগুলো তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী রড একেএস টিএমটি বি৭০০ সি-আরের সফল উৎপাদন। বিশ্বের দ্রুততম রোলিং মিল স্থাপন। একেএস এবং কাউ ব্র্যান্ড কালার কোটেড স্টিলের মর্যাদাপূর্ণ সুপারব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন।

এই আলোচনায় প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং কর্মীদের সম্মিলিত সাফল্যের প্রতিচ্ছবিও উঠে আসে।

সন্ধ্যায় আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র‍্যাফেল ড্র পর্বটি উদ্‌যাপনকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কিংবদন্তি শিল্পী জেমসের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা ও লেজার শো উপস্থিত সবাইকে মাতিয়ে রাখে।

সমাপনী ভাষণে একেএস পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য ধন্যবাদ জানান হয়। এরপর নৈশভোজ ও ডিজে সেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির পরিচালনা পরিষদের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার (৮ ডসিম্বের) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম জুবায়দুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন।

সভায় এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুস সালাম, এফসিএ, এফসিএস, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম মাসুদ রহমান, স্বতন্ত্র পরিচালক মো. আবদুল জলিল, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন, শরী’আহ সুপারভাইজরি কাউন্সলিরে সদস্য সচিব প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আব্দুস সামাদ এবং কোম্পানি সেক্রেটারি মো. হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যাংকের নিট মুনাফা ছাড়া উৎসাহ বোনাস বন্ধ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি

কর ও সঞ্চিতি সংরক্ষণের পর নিট মুনাফা অর্জন না করলে কোনো ব্যাংকই আর উৎসাহ বোনাস দিতে পারবে না। পাশাপাশি মূলধন সংরক্ষণ ঘাটতি, প্রভিশন ঘাটতি বা পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকেই বোনাস দেওয়ার পথও পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়, ব্যাংকিং খাতের বর্তমান পরিস্থিতিতে আনরিয়েলাইজড বা নগদায়ন না করা আয়ের ভিত্তিতে বোনাস দেওয়া আর্থিক শৃঙ্খলা ও সুশাসনের পরিপন্থী। তাই এখন থেকে শুধু নির্ধারিত নিট মুনাফা অর্জন করতে পারলেই উৎসাহ বোনাস দেওয়ার অনুমতি পাবে ব্যাংকগুলো।

আরও বলা হয়, পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকে কোনো ধরনের উৎসাহ বোনাস দেওয়া যাবে না। রেগুলেটরি মূলধন বা প্রভিশনের ঘাটতি থাকলে বোনাস দেওয়া নিষিদ্ধ। প্রভিশন সংরক্ষণে বাড়তি সময় পাওয়া ব্যাংকগুলোও সেই সময়কাল মুনাফা হিসাবের ক্ষেত্রে দেখাতে পারবে না। বোনাস প্রদানে ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন কর্মসূচির উন্নতি ও খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে দৃশ্যমান সাফল্য বিবেচনায় নিতে হবে।

এদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের ক্ষেত্রে সরকারের বিদ্যমান নির্দেশিকা কার্যকর থাকবে, যেখানে নিট মুনাফা ছাড়া বোনাস না দেওয়ার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। তবে কোনো ব্যাংক নির্দিষ্ট সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে বিশেষ বোনাসের জন্য আবেদন করতে পারবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক ক্লিকেই ভ্যাট পরিশোধ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ০৩
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত

ভ্যাটব্যবস্থাকে পুরোপুরি ডিজিটাল ও সহজ করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক নতুন পর্যায়ে এগোচ্ছে। মাত্র একটি ক্লিকেই ভ্যাট পরিশোধের সুযোগ ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে এবং বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এটি ব্যবহারও শুরু করেছে।

এনবিআর জানিয়েছে, শিগগির এ পদ্ধতি সারা দেশে চালু করা হবে, যাতে সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভ্যাটের আওতায় আসে এবং নিবন্ধন ছাড়া আর কেউ ব্যবসা চালাতে না পারে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে জাতীয় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।

মো. আবদুর রহমান বলেন, দেশের বড় একটি অংশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এখনো ভ্যাট নিবন্ধনের বাইরে রয়েছে। আগামী বছর এমন একটি মেকানিজম চালু করা হবে, যার মাধ্যমে ভ্যাট নিবন্ধন ছাড়া ব্যবসার সুযোগ থাকবে না। বর্তমানে নিবন্ধিত ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠান ৬ লাখ ৪৪ হাজার; লক্ষ্য আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে তা ৩০ থেকে ৪০ লাখে উন্নীত করা। শুধু চলতি মাসেই ১ লাখ নতুন প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, ভ্যাট দিবসের প্রতিপাদ্য—‘সময়মতো নিবন্ধন নিব, সঠিকভাবে ভ্যাট দিব’—ধরে আগামীকাল বুধবার সারা দেশে ভ্যাট দিবস পালিত হবে। ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর চলবে ভ্যাট সপ্তাহ। তবে নীতিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় এ বছরও স্থগিত থাকছে ভ্যাট পুরস্কার।

রিটার্ন জমাদানেও বড় পরিবর্তন আসছে বলে জানান মো. আবদুর রহমান খান। গত অর্থবছরে ১৭ লাখ ই-রিটার্ন জমা পড়লেও চলতি অর্থবছরে তা ৪০ লাখে পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে জমা পড়েছে ২২ লাখ রিটার্ন। ভ্যাট আদায়েও গতি এসেছে—গত অর্থবছরে মোট রাজস্বের ৩৮ শতাংশ এসেছে ভ্যাট থেকে আর চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসেই ভ্যাট আদায় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ২২ শতাংশ।

করদাতাদের ঝামেলা কমাতে ই-রিটার্নে ব্যবহৃত ব্যাংকসংক্রান্ত চারটি তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান আবদুর রহমান।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করদাতারা মনে করেন, রাজস্ব কর্মকর্তারা এসব তথ্য দেখতে পারবেন—এটি ভুল ধারণা।

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৫৫ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে কেন—এ প্রশ্নের জবাবে আবদুর রহমান বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়ানোর বাস্তব প্রয়োজন থেকেই এ লক্ষ্য নির্ধারণ। তবে কারও ওপর হয়রানি বা অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করা হবে না; মূলত যাঁরা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেই কঠোরতা বাড়ানো হবে।

আমদানি করা মোবাইল ফোনে কর কমানোর সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এটি সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত; এককভাবে এনবিআর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনবিআরের সদস্য (মূসক নীতি) মো. আজিজুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত