Ajker Patrika

ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে অস্থির তেলের বাজার, মার্কিন শেয়ারবাজারেও প্রভাব

অনলাইন ডেস্ক
ইসরায়েল ইরানের একাধিক তেল ও গ্যাস স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে। ছবি: এএফপি
ইসরায়েল ইরানের একাধিক তেল ও গ্যাস স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে। ছবি: এএফপি

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত গড়িয়েছে যুদ্ধে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ‘যুদ্ধ শুরু’ ঘোষণার পর ছয় দিন ধরে চলা এই সংঘাত এখন যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। এদিকে এই যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে বিশ্ববাজারে। অস্থির হয়ে পড়েছে তেলের বাজার। অন্যদিকে এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়তে পারে এই আশঙ্কায় মার্কিন শেয়ারবাজারে দেখা গেছে পতন।

গতকাল মঙ্গলবার বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত জনপ্রিয় দুই তেল সূচক ব্রেন্ট নর্থ সি ক্রুড এবং ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) যথাক্রমে ৪ দশমিক ৪ ও ৪ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধির পর ব্রেন্ট প্রতি ব্যারেল ৭৬ দশমিক ৪৫ ডলার এবং ডব্লিউটিআই প্রতি ব্যারেল ৭৪ দশমিক ৮৪ ডলারে পৌঁছায়।

এরপর আজ বুধবার দিনের শুরুতে (গ্রিনিচ মান সময় অনুযায়ী ৩টা ৩০ মিনিটে) তেলের দাম আরও বেড়ে যায়। তখন দুই সূচকই প্রায় শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ ঊর্ধ্বমুখী ছিল।

তেলের বাজারের এই অস্থিরতা যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারেও প্রভাব ফেলেছে। রাতারাতি দেশটির প্রধান সূচক এসঅ্যান্ডপি ৫০০ এবং প্রযুক্তিনির্ভর নাসডাক কম্পোজিট যথাক্রমে শূন্য দশমিক ৮৪ ও শূন্য দশমিক ৯১ শতাংশ কমে যায়।

গত শুক্রবার থেকে ইসরায়েল ইরানের একাধিক তেল ও গ্যাস স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে। যেসব স্থাপনায় হামলা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ পার্স গ্যাসফিল্ড, ফজর জাম গ্যাস প্ল্যান্ট, শেহরান তেল ডিপো এবং শেহর রেই শোধনাগার।

যদিও এখন পর্যন্ত বৈশ্বিক জ্বালানি প্রবাহে বড় ধরনের কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি, তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে— বিশেষ করে যদি ইসরায়েলের এই অভিযানকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সামরিকভাবে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। এই আশঙ্কায় বাজারে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানবিরোধী বক্তব্য আরও কঠোর করেন। ইরানকে ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ করতে বলেন তিনি। এতে আশঙ্কা বাড়ে, তাঁর প্রশাসন ইরানের ফরদো পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক হামলার নির্দেশ দিতে পারে।

কই দিনে ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির প্রতি একটি পরোক্ষ হুমকিও দেন। নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমরা জানি তিনি কোথায় আছেন, কিন্তু আমরা তাঁকে হত্যা করব না— অন্তত আপাতত না।’

বিশ্বে অপরিশোধিত তেলের তৃতীয় এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের দ্বিতীয় বৃহত্তম মজুত রয়েছে ইরানে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির জ্বালানি রপ্তানি সক্ষমতা অনেকটা সীমিত হয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য সংস্থা ইউইআইএ জানায়, ২০২৩ সালে ইরান দৈনিক গড়ে ৩৯ লাখ ৯০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উৎপাদন করেছে, যা বৈশ্বিক তেল সরবরাহের প্রায় ৪ শতাংশ।

ভৌগোলিক দিক থেকেও ইরান কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। দেশটি হরমুজ প্রণালির পাশে অবস্থিত। এই প্রণালি দিয়ে বিশ্বের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ তেল পরিবাহিত হয়।

ইরানের প্রায় সব তেল রপ্তানি খারগ দ্বীপের টার্মিনালের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এখন পর্যন্ত এই গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনালে ইসরায়েল কোনো হামলা চালায়নি।

ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) জ্যেষ্ঠ গবেষক ক্লেটন সিগেল সোমবার এক বিশ্লেষণে বলেন, ‘ইরানকে অস্থিতিশীল করতে চাইলে ইসরায়েল তাদের তেল রপ্তানি কেন্দ্রে হামলার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তারা হয়তো মনে করছে, একটি শত্রু শাসনব্যবস্থাকে ধ্বংস করার চেষ্টা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে এতে জ্বালানি দামের উত্থানে উদ্বিগ্ন মিত্রদের ক্ষুব্ধ হওয়ার ঝুঁকিও নেওয়া যেতে পারে।’

তিনি আরও লেখেন, ইসরায়েল ভালোভাবেই জানে ইরানের তেল রপ্তানি অবকাঠামো খুবই দুর্বল এবং একে সহজেই ব্যাহত করা সম্ভব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত