মন্টি বৈষ্ণব
পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তান তাসমিনা নিশাত। স্বাভাবিকভাবে ছোটবেলা থেকে পরিবারের সবার আদর ও স্নেহে বেড়ে উঠেছেন। ছোটবেলা থেকেই নিশাত নিজের কাজগুলো নিজেই করার চেষ্টা করতেন। পরিবারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, স্বতন্ত্রভাবে নিজের মতো করে কিছু করতে চেয়েছেন সব সময়ই। আর সেই অদম্য আগ্রহ ও স্বাধীন চিন্তা থেকেই অনলাইনভিত্তিক শপিং প্ল্যাটফর্ম ‘কইন্যা’-এর যাত্রা শুরু করেন।
নিশাতের জন্ম, বেড়ে ওঠা, স্কুল, কলেজ ঢাকাতেই। স্কুল মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। আর কলেজ মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। স্কুল কলেজের পাট চুকিয়ে ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে। সেখানেই অনার্স-মাস্টার্স সমাপ্ত করেন।
ছোটবেলা থেকে নিশাতের গৎবাঁধা জীবন ভালো লাগত না। তিনি এমন কিছু করতে চাইতেন, যেখানে তাঁর চিন্তার স্বাধীনতা থাকবে, ভাবনাগুলোকে নিজের মতো প্রকাশ করতে পারবেন। সেই চিন্তাই তাঁর নতুন কিছু করার উৎস। পরিবারের সবাই চাকরিজীবী হলেও নিশাত বেছে নেন ব্যতিক্রমী এ পেশা। শুরু হয় স্বপ্ন ‘কইন্যা’-এর যাত্রা।
নিশাতের ব্যবসার শুরুতে ছিল না বিশাল কোনো পুঁজি। নিজের সামান্য সঞ্চয় মাত্র ১৫০০ টাকা দিয়ে শুরু করেন কাজ। একটা শাড়ি বানিয়ে সেটা বিক্রি করেন। আবার সেই টাকা দিয়ে শুরু করেন আরেকটা নতুন কাজ। এভাবে দীর্ঘদিন যায়। নিশাতের ব্যবসার শুরুতে পরিবারের তেমন কারও সহযোগিতা না থাকলেও ধীরে ধীরে সেই আস্থাটাও অর্জন করতে সক্ষম হন।
উদ্যোক্তা হিসেবে শুরুর গল্পটা শুনতে চাইলে নিশাত বলেন, ‘কইন্যা’-এর শুরুর গল্পে বলতে হলে, ফিরে যেতে হবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়টাতে। আমি আর আমার বন্ধু বাঁধন মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সের শেষ দিকে চিন্তা করি কিছু একটা করব। সেই কিছু একটা থেকে শুরু হয় আমাদের উদ্যোগ, ‘দ্বৈত’। ২০১৪ সালে দ্বৈত ছিল আমাদের প্রথম উদ্যোগ। সেখানে আমরা নিজেরা মালা বানাতাম। প্রত্যেকটা পুঁতি বুনতাম আমরা একটা মালাতে। এভাবেই মালা, হাতের ব্রেসলেট, হাতের রিং। হাতের রিংটা আমরা বানাতাম বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে। রিং এর সঙ্গে ঝালাই করে কয়েনগুলো জোড়া লাগানো হতো। এই রিংগুলো সবাই খুব পছন্দ করেছিল। সঙ্গে মালাগুলো তো আছেই। এ ছাড়া কামিজ, পাঞ্জাবি, ফতুয়াও করেছিলাম আমরা। এভাবে সময় চলে যেতে থাকে, বাড়তে থাকে মানুষের ভালোবাসা। আমাদের মাস্টার্স শেষ হয়ে যায়। আমাকে হল ছেড়ে দিতে হয়। চলে আসি ঢাকায়। আর বাঁধন থেকে যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ইসলামনগরে। যেহেতু দুজনের দূরত্ব বেড়ে যায়, কাজ করাও কঠিন হয়ে পড়ে। তখন আমরা চিন্তা করলাম তাঁতের শাড়ি নিয়ে কাজ করব। সেই ভাবনা থেকেই ‘কইন্যা’র যাত্রা।
নিশাত ও বাঁধন প্রথম দিকে কইন্যাতে শুধু ট্রেডিং করতেন। সহজ কথায় বলতে গেলে সোর্সিং করতেন। নিজেরা ছবি তুলে ফেসবুক পেজে দিতেন। এভাবে দুবছর কাটার পর মনে হলো একদম নিজেদের কিছু করতে হবে। যেই ভাবনা সেই কাজ। তাঁতিদের দিয়ে নিজেরা রং পছন্দ করে বুনতে শুরু করেন হাফসিল্ক শাড়ি। মানিকগঞ্জে কাজ শুরু হলো। সেই শাড়ির ওপর বসালেন নিজেদের নকশা করা ছাপ। সাড়াও পাওয়া গেল। জনপ্রিয়তা বাড়ায় কারখানা পত্তনের দরকার হয়ে পড়ে। নিশাত বলছেন, ‘আস্তে আস্তে কারখানা নিলাম। সেখানে ব্লকের পাশাপাশি স্ক্রিনপ্রিন্টের কাজ শুরু করলাম। তার পাশাপাশি শুরু হলো সেলাইয়ের কাজ। রেডি টপ্স, ম্যাটারনিটি ওয়্যার, কামিজ; এখন সবই করার চেষ্টা করছি। এভাবেই দ্বৈত থেকে কইন্যার যাত্রা শুরু হয়।’
নিশাত আর বাঁধনের প্রথম কাজ শুরু হয় তাঁতের সুতি শাড়ি ও হাফ সিল্ক শাড়ি দিয়ে। পরে সেই হাফসিল্ক প্রিন্টে যুক্ত করেন কাঠের ব্লক, স্ক্রিনপ্রিন্ট। হাফ সিল্কের মধ্যে পুঁতির কাজ, এমনকি তাঁতে মসলিন ও বুননের চেষ্টা করেছেন নিশাত ও বাঁধন। দেখা গেছে, ক্রেতারা সেগুলো পছন্দও করেছেন। শাড়ির পাশাপাশি তাঁরা আরও তৈরি করছেন আনস্টিচড-স্টিচড কুরতি, শাল (সিজনাল), এমব্রয়ডারি শাড়ি, ডেনিম (সিজনাল), ম্যাটারনিটি ওয়্যার, পালাজ্জো, টু-পিস, ব্লাউজ পিস, রেডি টপ্স, স্যান্ডেল, লেদারের ফুটওয়্যার ইত্যাদি। বর্তমানে নিশাত ও বাঁধনের অক্লান্ত চেষ্টায় ভিন্নতা ফুটে উঠেছে ‘কইন্যা’র সার্বিক কাজে।
নারী উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে কারও সহযোগিতা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে নিশাত ফিরে যান তাঁর মায়ের প্রসঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার মা। মা আমাকে সব সময় মানসিকভাবে সাহস জুগিয়েছেন। কাজ শুরু করার সময় অভয় দিয়ে বলেছিলেন, “ব্যবসায় ওঠা-নামা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। ওঠাটা যদি তুমি মেনে নিতে পারো, নামাটাও মানতেই হবে। তবে পিছপা হওয়া যাবে না”-মায়ের এই কথাগুলো তখন অনেক অনুপ্রাণিত করেছিল, এখনো করে। আরেকজনের কথা না বললেই নয়, সে হলো আমার বন্ধু বাঁধন। সে শুধু আমার ব্যবসায়িক পার্টনার না, আমার জীবনেরও অবিচ্ছেদ্য অংশ। শতভাগ সাপোর্ট তার থেকে আমি সব সময় পেয়ে এসেছি। আমার পরিবার এখন অনেক অনেক বড়। আমি, আমার স্বামী বাঁধন ও আমাদের ২ বছরের সন্তান নির্বাণ। আর আমরা তিন বোন ও এক ভাই।’
নিশাত কইন্যাকে এমন এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যেতে চান, যেখানে ভোক্তারা তাঁদের সকল চাহিদা এক জায়গায় পূরণ করতে পারবেন। শিক্ষার্থী বা কর্মক্ষেত্রের জন্য যেসব নারীদের বেশ কিছু পোশাকের প্রয়োজন তাদের চাহিদা ও পছন্দ নিশ্চিত করার চেষ্টা করেন নিশাত। পাশাপাশি আরামদায়ক ও টেকসই কাপড় ক্রেতাদের হাতে তুলে দিতে 'কইন্যা' বদ্ধপরিকর। এ ছাড়া ম্যাটারনিটি ওয়্যার সেকশনটি নিয়েও বড় পরিকল্পনা আছে তাঁদের। শুধু ম্যাটারনিটি ওয়্যার নয়, মাতৃত্বকালে যে জিনিসগুলো দরকার বেশি, সেসব নিয়েও কাজ করছে 'কইন্যা'।
বর্তমানে এ দেশের নারী উদ্যোক্তারা নতুন করে নিজেদের মতো করে ভাবতে শিখেছে। নিজের ব্যবসার সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারছেন। এটা আমাদের এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের জন্য একটা চ্যালেঞ্জও বটে। নারীরা ব্যবসার প্রয়োজনে ছুটে চলেছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। নারীদের এই অদম্য সাহসিকতার বিষয়টি কেমন লাগে জানতে চাইলে 'কইন্যা' স্বত্বাধিকারী তাসমিনা নিশাত বলেন, ‘বর্তমানে এ দেশের নারীদের নিজেদের চার দেয়ালে আটকে রাখার মন-মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে। এই বিষয়টা আমার ভীষণ ভালো লাগে। নারীদের স্বাবলম্বী হতে চাওয়ার ব্যাপারটা খুবই ইতিবাচক। এটি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দুই দিক দিকেই গুরুত্বপূর্ণ।
তবে যারা নারী উদ্যোক্তা হতে চাইছেন বা নতুন কিছু করতে চাইছেন তাঁদের বলব, আপনি যে উদ্দেশ্যে ব্যবসা শুরু করবেন, সে বিষয়ে আগে একটা স্বচ্ছ ধারণা নিন। কাজটা সত্যি করবেন কিনা, কাজের পুঁজি, শ্রম, সময় বিষয়ে নিজের একটা পরিষ্কার ধারণা রাখুন। ব্যবসার শুরুতে নিজের প্ল্যানের একটা খসড়া করুন। আপনার উদ্যোগটাকে কোথায় নিয়ে যেতে চান, সেটা ভাবুন। পাশাপাশি উদ্যোগের ধরন অনুযায়ী ভোক্তা ও বাজারের বিষয়টাও মাথায় রাখুন। এর পর কাজ শুরু করুন। এ ছাড়া আনুষঙ্গিক ব্যবসায়িক বিষয়ে জ্ঞান রাখাটা জরুরি। এর জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়াশোনা করাও জরুরি।’
ব্যবসার ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন নিশাত ও বাঁধন। তাঁদের ব্যবসার উৎপাদন ও আনুষঙ্গিক কাজের সঙ্গে যারা জড়িত, সব কর্মীদের উন্নয়নের দিকে খেয়াল রাখছেন তাঁরা। জোর দিয়েছেন কর্মসংস্থান তৈরিতে। ২০১৭ সালে ‘কইন্যা’ তাদের নিজেদের কারখানায় কাজ শুরু করে। সেখানে প্রত্যক্ষভাবে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেক মানুষের। বর্তমানে সব মিলিয়ে ‘কইন্যা’র সার্বিক কাজে যুক্ত আছেন ১৬ জন। এই করোনা মহামারির সংকটকালেও কইন্যা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে তাদের কর্মীদের সার্বিক দেখভালের। নিশাত ও বাঁধন বিশ্বাস করেন শুধুমাত্র নিজেরা নয়, বরং সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার মধ্যেই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা নিহিত।
নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ‘কইন্যা’ স্বত্বাধিকারী তাসমিনা নিশাত এটা বুঝতে পেরেছেন যে, ব্যবসায় দিন শেষে ক্রেতাই সব। তাই ক্রেতার ভালো লাগা, মন্দ লাগাকে সবার আগে গুরুত্ব দেন তাঁরা। আর এ কারণে ‘কইন্যা’ আজ বহু মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। নিশাতের ভাষ্যমতে, চলার পথে মানুষের জীবনে অনেক রকমের প্রতিবন্ধকতা আসবে। চ্যালেঞ্জকে আমরা স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করতে শিখেছি। আশা করি সামনের দিনে আমরা আরও বড় পরিসরে ‘কইন্যা’কে নিয়ে যেতে পারব।
পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তান তাসমিনা নিশাত। স্বাভাবিকভাবে ছোটবেলা থেকে পরিবারের সবার আদর ও স্নেহে বেড়ে উঠেছেন। ছোটবেলা থেকেই নিশাত নিজের কাজগুলো নিজেই করার চেষ্টা করতেন। পরিবারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, স্বতন্ত্রভাবে নিজের মতো করে কিছু করতে চেয়েছেন সব সময়ই। আর সেই অদম্য আগ্রহ ও স্বাধীন চিন্তা থেকেই অনলাইনভিত্তিক শপিং প্ল্যাটফর্ম ‘কইন্যা’-এর যাত্রা শুরু করেন।
নিশাতের জন্ম, বেড়ে ওঠা, স্কুল, কলেজ ঢাকাতেই। স্কুল মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। আর কলেজ মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। স্কুল কলেজের পাট চুকিয়ে ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে। সেখানেই অনার্স-মাস্টার্স সমাপ্ত করেন।
ছোটবেলা থেকে নিশাতের গৎবাঁধা জীবন ভালো লাগত না। তিনি এমন কিছু করতে চাইতেন, যেখানে তাঁর চিন্তার স্বাধীনতা থাকবে, ভাবনাগুলোকে নিজের মতো প্রকাশ করতে পারবেন। সেই চিন্তাই তাঁর নতুন কিছু করার উৎস। পরিবারের সবাই চাকরিজীবী হলেও নিশাত বেছে নেন ব্যতিক্রমী এ পেশা। শুরু হয় স্বপ্ন ‘কইন্যা’-এর যাত্রা।
নিশাতের ব্যবসার শুরুতে ছিল না বিশাল কোনো পুঁজি। নিজের সামান্য সঞ্চয় মাত্র ১৫০০ টাকা দিয়ে শুরু করেন কাজ। একটা শাড়ি বানিয়ে সেটা বিক্রি করেন। আবার সেই টাকা দিয়ে শুরু করেন আরেকটা নতুন কাজ। এভাবে দীর্ঘদিন যায়। নিশাতের ব্যবসার শুরুতে পরিবারের তেমন কারও সহযোগিতা না থাকলেও ধীরে ধীরে সেই আস্থাটাও অর্জন করতে সক্ষম হন।
উদ্যোক্তা হিসেবে শুরুর গল্পটা শুনতে চাইলে নিশাত বলেন, ‘কইন্যা’-এর শুরুর গল্পে বলতে হলে, ফিরে যেতে হবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়টাতে। আমি আর আমার বন্ধু বাঁধন মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সের শেষ দিকে চিন্তা করি কিছু একটা করব। সেই কিছু একটা থেকে শুরু হয় আমাদের উদ্যোগ, ‘দ্বৈত’। ২০১৪ সালে দ্বৈত ছিল আমাদের প্রথম উদ্যোগ। সেখানে আমরা নিজেরা মালা বানাতাম। প্রত্যেকটা পুঁতি বুনতাম আমরা একটা মালাতে। এভাবেই মালা, হাতের ব্রেসলেট, হাতের রিং। হাতের রিংটা আমরা বানাতাম বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে। রিং এর সঙ্গে ঝালাই করে কয়েনগুলো জোড়া লাগানো হতো। এই রিংগুলো সবাই খুব পছন্দ করেছিল। সঙ্গে মালাগুলো তো আছেই। এ ছাড়া কামিজ, পাঞ্জাবি, ফতুয়াও করেছিলাম আমরা। এভাবে সময় চলে যেতে থাকে, বাড়তে থাকে মানুষের ভালোবাসা। আমাদের মাস্টার্স শেষ হয়ে যায়। আমাকে হল ছেড়ে দিতে হয়। চলে আসি ঢাকায়। আর বাঁধন থেকে যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ইসলামনগরে। যেহেতু দুজনের দূরত্ব বেড়ে যায়, কাজ করাও কঠিন হয়ে পড়ে। তখন আমরা চিন্তা করলাম তাঁতের শাড়ি নিয়ে কাজ করব। সেই ভাবনা থেকেই ‘কইন্যা’র যাত্রা।
নিশাত ও বাঁধন প্রথম দিকে কইন্যাতে শুধু ট্রেডিং করতেন। সহজ কথায় বলতে গেলে সোর্সিং করতেন। নিজেরা ছবি তুলে ফেসবুক পেজে দিতেন। এভাবে দুবছর কাটার পর মনে হলো একদম নিজেদের কিছু করতে হবে। যেই ভাবনা সেই কাজ। তাঁতিদের দিয়ে নিজেরা রং পছন্দ করে বুনতে শুরু করেন হাফসিল্ক শাড়ি। মানিকগঞ্জে কাজ শুরু হলো। সেই শাড়ির ওপর বসালেন নিজেদের নকশা করা ছাপ। সাড়াও পাওয়া গেল। জনপ্রিয়তা বাড়ায় কারখানা পত্তনের দরকার হয়ে পড়ে। নিশাত বলছেন, ‘আস্তে আস্তে কারখানা নিলাম। সেখানে ব্লকের পাশাপাশি স্ক্রিনপ্রিন্টের কাজ শুরু করলাম। তার পাশাপাশি শুরু হলো সেলাইয়ের কাজ। রেডি টপ্স, ম্যাটারনিটি ওয়্যার, কামিজ; এখন সবই করার চেষ্টা করছি। এভাবেই দ্বৈত থেকে কইন্যার যাত্রা শুরু হয়।’
নিশাত আর বাঁধনের প্রথম কাজ শুরু হয় তাঁতের সুতি শাড়ি ও হাফ সিল্ক শাড়ি দিয়ে। পরে সেই হাফসিল্ক প্রিন্টে যুক্ত করেন কাঠের ব্লক, স্ক্রিনপ্রিন্ট। হাফ সিল্কের মধ্যে পুঁতির কাজ, এমনকি তাঁতে মসলিন ও বুননের চেষ্টা করেছেন নিশাত ও বাঁধন। দেখা গেছে, ক্রেতারা সেগুলো পছন্দও করেছেন। শাড়ির পাশাপাশি তাঁরা আরও তৈরি করছেন আনস্টিচড-স্টিচড কুরতি, শাল (সিজনাল), এমব্রয়ডারি শাড়ি, ডেনিম (সিজনাল), ম্যাটারনিটি ওয়্যার, পালাজ্জো, টু-পিস, ব্লাউজ পিস, রেডি টপ্স, স্যান্ডেল, লেদারের ফুটওয়্যার ইত্যাদি। বর্তমানে নিশাত ও বাঁধনের অক্লান্ত চেষ্টায় ভিন্নতা ফুটে উঠেছে ‘কইন্যা’র সার্বিক কাজে।
নারী উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে কারও সহযোগিতা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে নিশাত ফিরে যান তাঁর মায়ের প্রসঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার মা। মা আমাকে সব সময় মানসিকভাবে সাহস জুগিয়েছেন। কাজ শুরু করার সময় অভয় দিয়ে বলেছিলেন, “ব্যবসায় ওঠা-নামা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। ওঠাটা যদি তুমি মেনে নিতে পারো, নামাটাও মানতেই হবে। তবে পিছপা হওয়া যাবে না”-মায়ের এই কথাগুলো তখন অনেক অনুপ্রাণিত করেছিল, এখনো করে। আরেকজনের কথা না বললেই নয়, সে হলো আমার বন্ধু বাঁধন। সে শুধু আমার ব্যবসায়িক পার্টনার না, আমার জীবনেরও অবিচ্ছেদ্য অংশ। শতভাগ সাপোর্ট তার থেকে আমি সব সময় পেয়ে এসেছি। আমার পরিবার এখন অনেক অনেক বড়। আমি, আমার স্বামী বাঁধন ও আমাদের ২ বছরের সন্তান নির্বাণ। আর আমরা তিন বোন ও এক ভাই।’
নিশাত কইন্যাকে এমন এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যেতে চান, যেখানে ভোক্তারা তাঁদের সকল চাহিদা এক জায়গায় পূরণ করতে পারবেন। শিক্ষার্থী বা কর্মক্ষেত্রের জন্য যেসব নারীদের বেশ কিছু পোশাকের প্রয়োজন তাদের চাহিদা ও পছন্দ নিশ্চিত করার চেষ্টা করেন নিশাত। পাশাপাশি আরামদায়ক ও টেকসই কাপড় ক্রেতাদের হাতে তুলে দিতে 'কইন্যা' বদ্ধপরিকর। এ ছাড়া ম্যাটারনিটি ওয়্যার সেকশনটি নিয়েও বড় পরিকল্পনা আছে তাঁদের। শুধু ম্যাটারনিটি ওয়্যার নয়, মাতৃত্বকালে যে জিনিসগুলো দরকার বেশি, সেসব নিয়েও কাজ করছে 'কইন্যা'।
বর্তমানে এ দেশের নারী উদ্যোক্তারা নতুন করে নিজেদের মতো করে ভাবতে শিখেছে। নিজের ব্যবসার সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারছেন। এটা আমাদের এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের জন্য একটা চ্যালেঞ্জও বটে। নারীরা ব্যবসার প্রয়োজনে ছুটে চলেছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। নারীদের এই অদম্য সাহসিকতার বিষয়টি কেমন লাগে জানতে চাইলে 'কইন্যা' স্বত্বাধিকারী তাসমিনা নিশাত বলেন, ‘বর্তমানে এ দেশের নারীদের নিজেদের চার দেয়ালে আটকে রাখার মন-মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে। এই বিষয়টা আমার ভীষণ ভালো লাগে। নারীদের স্বাবলম্বী হতে চাওয়ার ব্যাপারটা খুবই ইতিবাচক। এটি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দুই দিক দিকেই গুরুত্বপূর্ণ।
তবে যারা নারী উদ্যোক্তা হতে চাইছেন বা নতুন কিছু করতে চাইছেন তাঁদের বলব, আপনি যে উদ্দেশ্যে ব্যবসা শুরু করবেন, সে বিষয়ে আগে একটা স্বচ্ছ ধারণা নিন। কাজটা সত্যি করবেন কিনা, কাজের পুঁজি, শ্রম, সময় বিষয়ে নিজের একটা পরিষ্কার ধারণা রাখুন। ব্যবসার শুরুতে নিজের প্ল্যানের একটা খসড়া করুন। আপনার উদ্যোগটাকে কোথায় নিয়ে যেতে চান, সেটা ভাবুন। পাশাপাশি উদ্যোগের ধরন অনুযায়ী ভোক্তা ও বাজারের বিষয়টাও মাথায় রাখুন। এর পর কাজ শুরু করুন। এ ছাড়া আনুষঙ্গিক ব্যবসায়িক বিষয়ে জ্ঞান রাখাটা জরুরি। এর জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়াশোনা করাও জরুরি।’
ব্যবসার ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন নিশাত ও বাঁধন। তাঁদের ব্যবসার উৎপাদন ও আনুষঙ্গিক কাজের সঙ্গে যারা জড়িত, সব কর্মীদের উন্নয়নের দিকে খেয়াল রাখছেন তাঁরা। জোর দিয়েছেন কর্মসংস্থান তৈরিতে। ২০১৭ সালে ‘কইন্যা’ তাদের নিজেদের কারখানায় কাজ শুরু করে। সেখানে প্রত্যক্ষভাবে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেক মানুষের। বর্তমানে সব মিলিয়ে ‘কইন্যা’র সার্বিক কাজে যুক্ত আছেন ১৬ জন। এই করোনা মহামারির সংকটকালেও কইন্যা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে তাদের কর্মীদের সার্বিক দেখভালের। নিশাত ও বাঁধন বিশ্বাস করেন শুধুমাত্র নিজেরা নয়, বরং সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার মধ্যেই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা নিহিত।
নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ‘কইন্যা’ স্বত্বাধিকারী তাসমিনা নিশাত এটা বুঝতে পেরেছেন যে, ব্যবসায় দিন শেষে ক্রেতাই সব। তাই ক্রেতার ভালো লাগা, মন্দ লাগাকে সবার আগে গুরুত্ব দেন তাঁরা। আর এ কারণে ‘কইন্যা’ আজ বহু মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। নিশাতের ভাষ্যমতে, চলার পথে মানুষের জীবনে অনেক রকমের প্রতিবন্ধকতা আসবে। চ্যালেঞ্জকে আমরা স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করতে শিখেছি। আশা করি সামনের দিনে আমরা আরও বড় পরিসরে ‘কইন্যা’কে নিয়ে যেতে পারব।
পশ্চিমের বলয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় বিকল্প অর্থনৈতিক জোট হিসেবে ব্রিকসের জন্ম। এই জোটের সদস্য দেশগুলো হলো—ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা। সাম্প্রতিক সময়ে মিসর, ইথিওপিয়া, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইন্দোনেশিয়া নতুন সদস্য হিসেবে যোগ দিয়েছে।
১ ঘণ্টা আগেগার্ডিয়ান লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড দেশের একটি সুপরিচিত বিমা প্রতিষ্ঠান, সম্প্রতি বিমা কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য সমালোচিত হয়েছে। প্রায় চার বছর ধরে সিইও (মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা) ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে সিইও পদটি শূন্য, যা বিমা আইন..
১৮ ঘণ্টা আগেজাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এখনো রাজস্ব আহরণের আধুনিক ব্যবস্থার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। বিশেষ করে আয়কর ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন এখনো অনেক পিছিয়ে। ২০০৫ সালে অটোমেশনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও দুই দশক পরেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।
১৮ ঘণ্টা আগেসরকারের ব্যাপক চাল আমদানি এবং দেশের ৬৪ জেলায় ওএমএসের (খোলাবাজারে খাদ্যশস্য বিক্রয়) মাধ্যমে সুলভ মূল্যে চাল বিক্রির ঘোষণার প্রভাব বাজারে ইতিবাচকভাবে পড়তে শুরু করেছে। গত মাসের শেষ দিকে হঠাৎ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া চালের দাম এখন নিম্নমুখী।
১৮ ঘণ্টা আগে