Ajker Patrika

এসএমই মেলায় এবারও নারী উদ্যোক্তার প্রাধান্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
এসএমই মেলায় এবারও নারী উদ্যোক্তার প্রাধান্য

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলছে নবম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা। মেলার আয়োজক বরাবরের মতোই এসএমই ফাউন্ডেশন। করোনা পরিস্থিতির কারণে বড় সংকটের মধ্য দিয়ে গেছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। এবার এই মেলার মধ্য দিয়ে যেন তাঁরা শ্বাস ফেলেছেন। বরাবরের মতো এবারও মেলায় নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণই বেশি।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢুকতেই যেন এক টুকরো বাংলাদেশ সামনে এসে হাজির হলো। এমনিতে মেলা তো সারা দেশের উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন পণ্য বিপণন ও প্রদর্শনীর স্থল। কিন্তু এই মেলাই অংশগ্রহণকারীদের বৈচিত্র্যে আলাদা মাত্রা পেয়েছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার ও অঞ্চলের উদ্যোক্তারা এসেছেন মেলায়। প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গের উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ যেমন আছে, তেমনি আছে বিভিন্ন জাতি পরিচয় ও প্রান্তিক জনপদের উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ। 

মেলায় সারা দেশের উদ্যোক্তাদের তৈরি দেশীয় পণ্য যেমন পাটজাত পণ্য, পোশাক, ডিজাইন ও ফ্যাশনওয়্যার, চামড়াজাত সামগ্রী, প্লাস্টিক পণ্য, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস, হালকা সরঞ্জাম, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ পণ্যসহ নানা পণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রি করা হয়। বলে রাখা ভালো—এ মেলায় কোনো বিদেশি পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করা হয় না। 

 নিজের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে রাঙামাটি থেকে এসেছেন ক্যালি চাকমামেলায় ঘুরতে ঘুরতেই দেখা হয়ে গেল জান্নাতুল ফেরদৌসের সঙ্গে। শারীরিক প্রতিবন্ধী এই নারী উদ্যোক্তা এসেছেন বগুড়া থেকে। মেলায় প্রথমবারের মতো আসা এই নারী নিজের ভালো লাগার কথা জানিয়ে বলেন, ‘আমি এই মেলায় প্রথম এসেছি। শারীরিক সমস্যাকে ডিঙিয়ে এই জায়গায় আসতে পেরেছি বলে ভালো লাগছে। এখানে স্টল নেওয়াতে আরও আরেক নারী উদ্যোক্তার সঙ্গে দেখা হচ্ছে। বিক্রির পাশাপাশি তাঁদের সঙ্গে কথা বলছি। অনেক কিছু শিখছি। আমার স্বপ্ন একটা শোরুম দেওয়ার। সে ক্ষেত্রে অফলাইনে কীভাবে ব্যবসা করতে হবে—সেটা আমি এই মেলা থেকে শিখছি।’ 

করোনার কারণে দেড় বছর স্থবির ছিল দেশের অর্থনীতি। এ সময় উদ্যোক্তাদের কাজও ছিল মোটামুটি বন্ধ। দীর্ঘ সময়ের পর মেলায় অংশ নিতে পেরে আনন্দিত ময়মনসিংহ থেকে আসা আরেক উদ্যোক্তা শাহনাজ। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘উদ্যোক্তা হিসেবে ২০১৬ থেকে এই মেলায় অংশ নিচ্ছি। করোনার কারণে দীর্ঘদিন ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ ছিল। করোনাতে বলতে গেলে কারও সঙ্গে তেমন কোনো যোগাযোগ ছিল না। এখানে অনেকের সঙ্গে দেখা হচ্ছে, কথা হচ্ছে। অনুপ্রেরণা পাচ্ছি। মানুষ কিছু কিনুক আর না কিনুক, দোকানে তো আসছে। 

মেলায় আসার কারণ হিসেবে শহানাজ বলেন, ‘মেলায় আশার কারণ হলো উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের একটা পরিচিতি গড়ে তোলা। আমি ময়মনসিংহের হাজী কাসেম আলী কলেজের শিক্ষক ছিলাম। এখন কলেজের শিক্ষকতা ছেড়ে মনপ্রাণ দিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছি। আমার এই কাজে অনেক নারী যুক্ত আছেন।’ 

এসএমই মেলায় বরাবরই নারীদের অংশগ্রহণ বেশি। এবারের মেলার নারী উদ্যোক্তা অংশগ্রহণের হার ৬০ শতাংশ। বিগত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান বলছে, আগের কয়েক বছরের তুলনায় এবার নারী অংশগ্রহণ কিছুটা কমেছে। আশার দিক হলো পুরুষ অংশগ্রহণ বেড়েছে। অর্থাৎ পুরুষদের মধ্যে ছোট ছোট উদ্যোগ গ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে এসএমই মেলায় নারী উদ্যোক্তা অংশগ্রহণের হার ছিল ৬৮ দশমিক ৭ শতাংশ। পরের দুই বছরে এ হার দাঁড়ায় যথাক্রমে ৭০ ও ৬৪ দশমিক ৬৩ শতাংশে। 

এসএমই মেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন নারী উদ্যোক্তা ক্যালি চাকমা। এত দূর থেকে এসে মেলায় অংশগ্রহণ করতে কেমন লাগছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাঙামাটি থেকে এসেছি। আমি প্রথমবারের মতো এই মেলায় অংশগ্রহণ করছি। এখানে এসে দেখলাম আমার মতো আরও হাজার হাজার উদ্যোক্তা আছেন। এখানে অংশ নিয়ে আমার পণ্যের প্রচার বাড়ছে। আবার অন্য উদ্যোক্তাদের পণ্য সম্পর্কেও জানতে পারছি।’ 

পাহাড়ের মেয়ে ক্যালি চাকমা নিজের এই অংশগ্রহণকে বিশেষ কিছু বলে মনে করছেন। তাঁর দৃষ্টিতে এর মাধ্যমে পাহাড়ের অন্য উদ্যোক্তারাও অনুপ্রেরণা পাবে। বললেন, ‘আমরা আমাদের ব্যবসার কাজে সরকারের সহযোগিতা আশা করি, যাতে ভবিষ্যতে কাজের পরিধি বাড়াতে পারি।’ 

রুনা লায়লা এসেছেন যশোর থেকে। এবারই প্রথম অংশ নেওয়া। এখন পর্যন্ত বেশ অর্ডারও পেয়েছেন। বললেন, ‘আমার যাবতীয় কাজ যশোরে হয়। সেখানে ৬০০ শ্রমিক কাজ করেন। ভালো কিছু করার চিন্তা থেকে এই মেলায় আসা। এখানে এসে দেখলাম, খুচরা বিক্রি কম। অনেক পাইকারি পণ্যের অর্ডার পেয়েছি। এটা আমার কাছে অনেক বেশি কিছু। আরেকটা বিষয় এখানে এসে দেখলাম—আমি একা নই। আমার মতো আরও অনেক নারী উদ্যোক্তা আছেন, যারা অনেক সমস্যাকে পেছনে ফেলে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে পরিচিত করতে চাইছেন। ঘর থেকে বের হয়ে আসছেন। এটা নারীদের জন্য অনেক বড় একটা সফলতা।’ 

মেলায় ছিল খাবারের স্টলওএকই কথা জানালেন আইরিন। অন্য উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে দেখে, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে অনেক কিছু জানতে পারছেন বলে জানালেন। তাঁকে মূলত টানছে বৈচিত্র্য। তিনি বলেন, ‘এসএমই মেলা আসলে উদ্যোক্তাদের মিলনমেলা। অনেক জেলার মানুষের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ভালো লাগছে। বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন পণ্যের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি। এই যে দেশের বিভিন্ন জেলার নানা রকম পণ্য দেখছি, এসব দেখে ভবিষ্যতে উদ্যোক্তা হিসেবে আরও অনেক দূর যাওয়ার ইচ্ছা তৈরি হলো।’ 

দেশীয় পণ্যের আরেক উদ্যোক্তা জান্নাত সুলতানা এসেছেন নারায়ণগঞ্জ থেকে। নিজের মতো দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করা এত এত উদ্যোক্তা দেখে মুগ্ধ তিনি। জান্নাত বলেন, ‘এখানে প্রতিদিন নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করছি। আমি উদ্যোক্তা হিসেবে ১৫ বছর কাজ করার সত্ত্বেও যেটা জানতাম না, এসএমই মেলায় এসে সে বিষয়ে জানছি। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। এখানে অনেক উদ্যোক্তা আমার পণ্যের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এতে আমার পণ্যের প্রচার বাড়ছে।’ 

বুটিকের নকশা করা খুরশিদা জাহানের কাছে অবশ্য এটাই প্রথম অভিজ্ঞতা নয়। মেলায় ২০১৫ সাল থেকেই অংশ নিচ্ছেন তিনি। উদ্যোক্তা হিসেবে পথচলা শুরুর তিন বছরের মাথায় মেলায় প্রথম অংশ নেন। অর্ডারও বেশ পাচ্ছেন জানিয়ে বলেন, ‘সারা দেশে আমার মতো আরও অনেক উদ্যোক্তা আছেন। তাদের সঙ্গে একটা যোগাযোগমাধ্যম হলো এই মেলা। আমি এই মেলায় অংশগ্রহণ করে অনেক বড় কিছু প্রতিষ্ঠানের পাইকারি পণ্যের অর্ডার পেয়েছি।’ 

সব মিলিয়ে জমজমাট মেলা হচ্ছে। গত ৫ ডিসেম্বর মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে এই মেলা। প্রথমবারের মতো এতে ১০টি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) অংশ নিচ্ছে। এবারের এসএমই পণ্য মেলায় সারা দেশ থেকে বাছাই করা ৩০০ এসএমই প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গাড়ি কেনার টাকা না দেওয়ায় স্ত্রীকে মারধর, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে মামলা

মুক্তি পেয়ে আ.লীগ নেতার ভিডিও বার্তা, বেআইনি বলল বিএনপি

যুদ্ধবিমানের ২৫০ ইঞ্জিন কিনছে ভারত, ফ্রান্সের সঙ্গে ৬১ হাজার কোটি রুপির চুক্তি

সালাহউদ্দিনকে নিয়ে বিষোদ্‌গার: চকরিয়ায় এনসিপির পথসভার মঞ্চে বিএনপির হামলা-ভাঙচুর

ফকিরহাটে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে নারীর মৃত্যু, স্বামী গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত