Ajker Patrika

মূল্যস্ফীতি নিয়ে ঝামেলায় আছি, এখন নতুন তহবিল সম্ভব নয়: গভর্নর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২২: ৩৪
মূল্যস্ফীতি নিয়ে ঝামেলায় আছি, এখন নতুন তহবিল সম্ভব নয়: গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, ‘দেশের চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ে ঝামেলায় আছি। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন তহবিল দেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ, টাকা দিলে নতুন করে অর্থ সৃষ্টি হয়। যা মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে সরাসরি জড়িত। এটা মাথায় রেখেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন টাকা ইস্যুর বিষয়ে সংবেদনশীল। সুতরাং, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এখন আর নতুন তহবিল দেওয়া যাবে না।’ 

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মাইক্রো ফাইন্যান্স ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর এমএফআইসিআইবি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। 

তিনি বলেন, ‘আমরা ধীরে ধীরে কেয়ারলেস সোসাইটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ২০২৬ সালের মধ্যে আমাদের ৭৫ শতাংশ লেনদেন ক্যাশলেসভিত্তিক হয়ে যাবে। তাই তথ্যের জন্য অনলাইনভিত্তিক ব্যবস্থায় যাওয়া খুবই জরুরি।’ 

ক্ষুদ্র ঋণদাতা এক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহের অনুরোধে গভর্নর বলেন, ‘এই মুহূর্তে ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আলাদা কোনো তহবিল দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, আমরা এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ে ঝামেলায় আছি। বাংলাদেশ ব্যাংক কাউকে টাকা দিলে মার্কেটে মানি ক্রিয়েশন হয়। এর ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।’ 

কোনো সিস্টেমকে ডিজিটাল করলেই তার কাজ শেষ হয়ে যায় না, সিস্টেমকে মেইনটেন্যান্স করাটা প্রধান সমস্যা বলে উল্লেখ করেন গভর্নর। 

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের প্রতি সর্বজনীন পেনশনে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান আব্দুর রউফ তালুকদার। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এবং আইসিটি বিভাগের প্রধান দেবদুলাল রায় বলেন, এই পুরো সিস্টেমটি এনআইডিভিত্তিক। এই মুহূর্তে ৫০টি প্রতিষ্ঠানে ডেটা আপলোড করা আছে। 

পিপলস ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশনের (পপি) নির্বাহী পরিচালক মোরশেদ আলম সরকার বলেন, ‘বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান যাদেরকে ঋণ দিতে চায় না আমরা তাদের নিয়েই কাজ করি। আমরা তাদেরকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলছি। আমরা নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করছি। আমাদের ঋণে ৯৬ শতাংশই ফেরত এসেছে। আমাদের গ্রাহকেরা অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত নয়।’ সুতরাং, এমআরএ প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি করতে এর জন্য গভর্নরের কাছে আলাদা তহবিল দাবি করলেন পপির এই শীর্ষকর্তা। 

তিনি আরও বলেন, ‘যেসব গ্রাহক ব্যাংকের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার সম্ভাবনাই রাখে না, তাদেরই আমরা গ্রাহক হিসেবে গড়ে তুলছি। কিন্তু আমানত সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে আমাদের বিভিন্ন শর্ত দেওয়া হয়েছে।’ এ ক্ষেত্রে সব ধরনের শর্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি। এ ছাড়া এমআরএফ প্রতিষ্ঠানগুলোতে কীভাবে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আনা যায় সে বিষয়ে নীতিমালা দাবি জানিয়েছেন তিনি। 

সাজেদা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জাহেদা ফিজ্জা কবির বলেন, ‘এমআরএ প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের আর্থিক খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু আমাদের এখানে তথ্যের ব্যাপক অভাব রয়েছে। এ জন্য আমাদের তথ্য আরও সমৃদ্ধ করা দরকার। বর্তমানে শীর্ষ ১০ এমআরএ প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্রঋণ বাজারের ৮০ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করছে। এ ক্ষেত্রে অন্ততপক্ষে এই ১০ প্রতিষ্ঠানের তথ্যকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করা দরকার। এ ছাড়া ক্ষুদ্রঋণের বিতরণের ক্ষেত্রে এবং টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো গবেষণা নেই।’ এ জন্য গবেষণার প্রতিও গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। 

মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঋণগ্রহীতার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) যাচাই করে সিআইবি প্রস্তুত করা হচ্ছে। এআইপি তথ্যভান্ডার থেকে লিংক নিয়ে গ্রাহকের তথ্য যাচাই করা হবে। এ জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের ফলে যথাযথ গ্রাহক নির্বাচন, গ্রাহকের ঋণ যোগ্যতা যাচাই ও ইতিহাস জানা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে, গ্রাহকের আর্থিক সেবাভুক্তি সহজতর করা, মাইক্রোফাইনান্স সেক্টরের সচ্ছতা আনয়ন এবং গ্রাহকের ঋণপ্রাপ্তির প্রতিবন্ধকতা দূর করা সহজ হবে। উদ্যোক্তা সৃষ্টির পথ সুগম করা তথা প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক খাতের সঙ্গে ক্ষুদ্র উদ্যোগ ঋণের সংযোগ আপনের পথ আরও সুগম হবে। 

এমআরএ আরও জানায়, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিত করে টেকসই জনবান্ধব ক্ষুদ্রঋণব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এমআরএ প্রতিষ্ঠা করা হয়। জুন ২০২৩ অনুযায়ী এমআরএ এর সনদপ্রাপ্ত ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭৩১টি, গ্রাহকসংখ্যা ৪ কোটি ৮ লাখ, বিতরণকৃত ঋণ ১ লাখ ৯১ হাজার কোটি টাকা, ঋণস্থিতি ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা, শাখার সংখ্যা ২৫ হাজার ৩৩৬টি। বর্তমানে এ খাতে ২ লাখ ৬ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে সরাসরি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দেশের ৪ কোটি ৮০ লাখের বেশি পরিবার ক্ষুদ্রঋণ পরিষেবার আওতায় রয়েছে। গ্রামীণ অর্থায়নের প্রায় ৭৩ শতাংশ জোগান আসে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে। বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৫০ শতাংশ কৃষি এবং ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ হয় ক্ষুদ্র উদ্যোগ খাতে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত