Ajker Patrika

গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর উৎপাদন কমেছে ৩০-৫০ শতাংশ—সেমিনারে উদ্যোক্তারা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
‘বাংলাদেশের শিল্প খাতে জ্বালানি সক্ষমতা নীতিমালা, টেকসই উন্নয়নের পথ-নির্দেশনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় আগত আলোচকেরা। ছবি: সংগৃহীত
‘বাংলাদেশের শিল্প খাতে জ্বালানি সক্ষমতা নীতিমালা, টেকসই উন্নয়নের পথ-নির্দেশনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় আগত আলোচকেরা। ছবি: সংগৃহীত

২০২৩-২৪ সালে গ্যাসের দাম রেকর্ড ১৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি ও সম্প্রতি শিল্প খাতে আরও ৩৩ শতাংশ বাড়ানোর ফলে টেক্সটাইল, স্টিল ও সারের মতো খাতগুলোর উৎপাদন ৩০-৫০ শতাংশ কমে গেছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। বিশেষ করে এসএমই খাতের কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। এ বাস্তবতায় শিল্প খাতে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা কেবল নীতিগত অগ্রাধিকারই নয়; বরং টেকসই শিল্পায়নের পূর্বশর্ত বলেও তাঁরা জানান।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং সানেম যৌথভাবে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের শিল্প খাতে জ্বালানি সক্ষমতা নীতিমালা; টেকসই উন্নয়নের পথ-নির্দেশনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তাঁরা এসব বিষয় তুলে ধরেন। আজ শনিবার ডিসিসিআই মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা উৎপাদন, বিনিয়োগ এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। দেশের শিল্প ও অর্থনীতিকে বাঁচাতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার সম্প্রসারণ এবং টেকসই জ্বালানি কাঠামো গঠন ও অপচয় রোধ করতে হবে।

বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, ‘২০৩০ সালের পর দেশীয় গ্যাসের মজুত হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি বলা হলেও অফশোর-অনশোরে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমে তেমন উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম দেখা যায়নি। তাই আমরা নিজস্ব উৎপাদিত গ্যাস ব্যবহার করতে পারছি না, আমাদের আমদানিনির্ভর গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে।’

বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, জ্বালানি খাতে সরকার ক্রমাগত ভর্তুকি দিচ্ছে, কারণ এর সঙ্গে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জ্বালানি খাতে বর্তমানে দক্ষতার হার ৩০ শতাংশের কাছাকাছি, এ দক্ষতা আরও বাড়ানো সম্ভব হলে বিদ্যুতের ঘাটতি হ্রাস পাবে।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এতে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে মাস্টারপ্ল্যান থাকলেও সহায়ক নীতিমালার অনুপস্থিতির বিষয়টি শিল্প খাতকে বেশ ভোগাচ্ছে। শিল্পে জ্বালানি সক্ষমতার বিষয়ে যেমন সুস্পষ্ট সংজ্ঞা নেই, তেমনিভাবে সব শিল্প খাতে জ্বালানি সক্ষমতার প্রণোদনা পাওয়ার ক্ষেত্রেও বৈষম্য রয়েছে।

বাংলাদেশ এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার রিসার্চ কাউন্সিলের (বিইপিআরসি) সদস্য ড. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, জ্বালানি উৎপাদনে আমদানির ওপর বেশিমাত্রায় নির্ভরশীল হলে ব্যবসায়িক খরচ ক্রমাগত বাড়বে, তাই দেশীয় উৎসের ওপর বেশি হারে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। গত অর্থবছরে জ্বালানি খাতে প্রায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আমদানি হয়েছে, তাই এ খাতে দেশীয় বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসির চেয়ারম্যান ড. এম রেজওয়ান খান বলেন, বিদ্যমান শুল্ক কাঠামো পরিবর্তন না হলে এ খাতের সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। এ ছাড়া পিক ও অফ-পিক সময়ে বিদ্যুতের দামে পার্থক্য নির্ধারণ করতে হবে।

ডিসিসিআইর সাবেক পরিচালক মনোয়ার হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন করে শিল্প-কারখানা পর্যন্ত পৌঁছানোর বিষয়টিকে সরকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে, কারণ প্রয়োজনীয় জ্বালানি না পাওয়ার কারণে প্রায়ই শিল্প খাতে ৫০ শতাংশ পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, বিষয়টি মোটেও কাম্য নয়। তাই এ খাতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো দ্রুত নিরসন করতে হবে।

বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, এলপিজি শিল্প খাতের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, তবে কোনো আর্থিক প্রণোদনা নেই বরং প্রায় ১০ শতাংশ করারোপ করা রয়েছে, বিষয়টি সমাধানে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।

বাংলাদেশ সাস্টেইনেবল অ্যান্ড রিনিউবেল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসআরইএ) সভাপতি মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, প্রতিনিয়ত গ্যাস উত্তোলন কমলেও চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে এবং প্রতিবছর দেশে জ্বালানি চাহিদা ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, জ্বালানিবিষয়ক ভালো নীতিমালা থাকলেও বাস্তবায়ন অবস্থা মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়।

মোস্তফা আল মাহমুদ আরও বলেন, ‘আমাদের উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫০ শতাংশ শিল্প খাতে ব্যবহৃত হয়, তাই এনার্জি অডিট বাধ্যতামূলকের বিকল্প নেই।’

বিজিএমইএ সহসভাপতি ভিদিয়া অমৃত খান বলেন, ‘আমাদের জাতীয় গ্রিডে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের অবদান মাত্র ৪ শতাংশ, যদিও বৈশ্বিক ক্রেতারা বিষয়টিতে বেশ প্রাধান্য দিচ্ছেন, এ ক্ষেত্রে নীতি-সহায়তার বেশ অভাব রয়েছে। তবে ভবন স্থাপনে গ্রিন ফান্ড থাকলেও বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে সেটার অনুপস্থিত রয়েছে এবং এ ছাড়াও জ্বালানি খাতে অর্থায়ন অত্যন্ত কষ্টকর।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ