Ajker Patrika

ভুল পথে জ্বালানি বাজেট

  • নবায়নযোগ্যে বরাদ্দ কমেছে।
  • জীবাশ্ম জ্বালানিতে বাড়তি সুবিধা।
  • সুশাসনহীনতায় অপচয়ের অভিযোগ।
  • জ্বালানির মূল্য সমন্বয় পদ্ধতি ভুল।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৭ জুন ২০২৫, ০৮: ১৫
ভুল পথে জ্বালানি বাজেট

বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম সামান্য কমাতে গিয়ে সরকার আসলে পুরো জ্বালানি নীতিকে ‘ভুল রাস্তায়’ ঠেলে দিচ্ছে, এমনই সতর্কবার্তা দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

এই মন্তব্য এসেছে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত এক সংলাপে। ‘২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে শক্তি ও শক্তির খাত: শক্তি পরিবর্তনের জন্য অগ্রাধিকারের প্রতিফলন’ শীর্ষক এই আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা সহযোগী হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তি। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয়ে কিছুটা ‘ভুল কৌশল’ নিচ্ছে, যার ফলে রাষ্ট্রীয় ঋণ ও ভর্তুকির বোঝা বাড়ছে, কিন্তু জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না।

প্রবন্ধে সিপিডি জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের আটটি বড় সংকট তুলে ধরে। এসবের মধ্যে রয়েছে—নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর আর্থিক দুর্বলতা, গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারা, দাম ঠিক করতে ভুল পদ্ধতি ব্যবহার, জ্বালানি রূপান্তরের ধীরগতি, অতিরিক্তভাবে কয়লা ও এলএনজির ওপর নির্ভরতা, প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্বলতা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়ে পর্যাপ্ত উদ্যোগের অভাব।

সিপিডির ভাষায়, এই দুর্বলতার কারণে বাজেটে ঘোষিত তিনটি বড় লক্ষ্য দারিদ্র্য নির্মূল, বেকারত্ব হ্রাস এবং নিট কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার অঙ্গীকার পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। তারা বলছে, বাংলাদেশ এখনো এই তিন ‘শূন্য’ লক্ষ্যের মাত্র ২.৫০ ‘শূন্য’ পর্যন্তই এগোতে পেরেছে।

সংলাপে বলা হয়, বাজেটে নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য ৭০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল রাখা হলেও প্রকল্পের সংখ্যা মাত্র সাতটি এবং বাস্তবায়ন বরাদ্দ আগের তুলনায় কমে গেছে। বিপরীতে এলএনজি আমদানির মতো জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভ্যাট ছাড় দেওয়া হয়েছে। সিপিডির মন্তব্য, এভাবে নবায়নযোগ্য শক্তিকে উপেক্ষা করে জীবাশ্ম জ্বালানিকে অগ্রাধিকার দেওয়াটা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য ‘উল্টো পথে হাঁটার’ নামান্তর।

গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করিয়ে দেন, গত এক যুগের বিপুল বিনিয়োগ বিদ্যুৎপ্রাপ্যতার কিছু উন্নতি আনলেও মানসম্মত সেবা ও জ্বালানি রূপান্তর নিশ্চিত করতে পারেনি; বরং ‘লুটপাট’ ও ‘অপচয়ের’ অভিযোগ বেড়েছে। তাঁর প্রত্যাশা, অন্তর্বর্তী সরকার জ্বালানি-বিদ্যুতে সুশাসনের দুর্বল স্থানগুলো চিহ্নিত করে দীর্ঘমেয়াদি ভারসাম্য আনবে।

ফোরামে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, নীতিকাঠামো পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজন সরকার স্বীকার করছে, যদিও দ্রুত রূপান্তর নিশ্চিত করতে সব পক্ষের সমন্বয় জরুরি। ব্যবসায়ী সংগঠন বিজিএমইএ ও ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব থেকেও একই সুরে সতর্কতা আসে, অতিরিক্ত ব্যয়ের ধাক্কা শিল্প ও ভোক্তাকে একসঙ্গে কোণঠাসা করছে।

সংলাপে সিপিডির সুপারিশ অনুযায়ী, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণে স্বচ্ছ ও সূচকভিত্তিক ফর্মুলা পুনরায় চালু করা জরুরি, যাতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এড়িয়ে নিয়মতান্ত্রিক মূল্য সমন্বয় সম্ভব হয়। তারা আরও বলেছে, এলএনজি ও কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিপুল ভর্তুকি নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিচ্ছে। তাই এই ভর্তুকি কমিয়ে নবায়নযোগ্য খাতে করছাড় ও প্রণোদনা বাড়ানো উচিত।

সিপিডি মনে করে, বিদ্যুৎ খাতে বর্তমানে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি হওয়ায় অপচয় বাড়ছে। এ জন্য উৎপাদন, চাহিদা ও বিনিয়োগের মধ্যে ভারসাম্য আনতে ক্ষতিমুক্ত একটি সক্ষমতা কাঠামো পুনর্বিন্যাসের পরামর্শ দেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত