Ajker Patrika

খাদ্য আমদানিনির্ভরতা কমাতে না পারলে বৈশ্বিক রাজনীতির শিকার হতে হবে: আমীর খসরু

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে চার দিনব্যাপী ‘কৃষি ও খাদ্যে রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে চার দিনব্যাপী ‘কৃষি ও খাদ্যে রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা

খাদ্য আমদানিনির্ভরতা কমাতে না পারলে বৈশ্বিক রাজনীতির শিকার হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

আমীর খসরু বলেন, ‘খাদ্যে বিদেশের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। কারণ অনেক দেশ হঠাৎ করে কোনো একটি পণ্যের রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। আবার কোনো একটি পণ্যে ট্যারিফ আরোপ করে। এ কারণে খাদ্যে বিদেশনির্ভরতা কমাতে হবে।’

আজ শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে চার দিনব্যাপী ‘কৃষি ও খাদ্যে রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অধিবেশনের বিষয় ছিল, ‘কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার’। বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ) এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে।

বিএজেএফের সাধারণ সম্পাদক আবু খালিদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সাহানোয়ার সাঈদ শাহীন।

কৃষির বিশাল পরিবর্তন হচ্ছে উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, ‘কৃষিতেও বিপ্লব সম্ভব। জিয়াউর রহমানের স্লোগান ছিল, উৎপাদনের রাজনীতি। তখন বিদেশে চাল রপ্তানি হয়েছে। কৃষির সর্বোচ্চ উৎপাদন নিশ্চিত করতে সরকার, বেসরকারি খাত ও এনজিওগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এই মাটিতে অনেক কিছু হয়, যা আমরা করতে পারি না। সবকিছুর সম্মিলন করতে পারলে কৃষিতে বিপ্লব আনতে পারব।’

কৃষির সুফল কৃষক পায় না বলে মন্তব্য করেন বিএনপির নেতা আমীর খসরু। তিনি বলেন, ‘কৃষি খাতে নীতি আছে; কিন্তু নীতি বাস্তবায়ন করার মানুষ কম। অনেক সংস্কার হয়; কিন্তু কৃষক এর সুফল পায় না। কৃষকের ফসল পচে নষ্ট হয়। এটিকে প্রক্রিয়াজাত করতে হবে। কৃষিতে বিনিয়োগ দরকার। প্রযুক্তির উন্নয়ন দরকার।’

আমীর খসরু বলেন, ‘দেশে এখনো সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান কৃষিতে। কৃষিই দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। ১৮ মাসে আমরা ১ কোটি কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি, সেটির অন্যতম একটি খাত কৃষি।’

কৃষির অঞ্চলভিত্তিক ম্যাপিং দরকার উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, ‘দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করছে কৃষি। কোন অঞ্চলে কোন ফসল উৎপাদন করব, বাংলাদেশের কৃষিতে তার একটি ম্যাপিং দরকার। যেখানে যে সম্ভাবনা আছে, সেই সম্ভাবনা খুঁজে বের করব এবং অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটাব।’

কৃষক ছাড়াও অন্যান্য গ্রামীণ জনগোষ্ঠীও মজুরি বৈষম্যের স্বীকার বলে জানান আমীর খসরু। তিনি বলেন, ‘শুধু কৃষক নয়, গ্রামগঞ্জের কামার-কুমার, তারাও ভালো দাম (মজুরি) পায় না। কৃষকসহ সর্বক্ষেত্রে একত্রীকরণ (ইন্ট্রিগ্রেশন) করতে হবে। কৃষিপণ্যের বৈশ্বিক বাজারের সঙ্গে আমাদের সংযোগ ঘটাতে হবে। কৃষককে সাহায্য করতে চাইলে অন্যভাবে সাপোর্ট দিতে হবে। কিন্তু কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া বোকামি সিদ্ধান্ত।’

আগামীতে দেশের শাসনব্যবস্থায় যেকোনো অবস্থানে থেকে দেশের উন্নয়নে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বিরোধী দলে থাকলেও দেশের উন্নয়নে আমাদের কথা চলতে থাকবে। যত সংস্কার হয়েছে, বিএনপির সময় (শাসনামল) হয়েছে। বিএনপি অব্যাহত থাকলে প্রবৃদ্ধি এত দিনে ডাবল ডিজিট হয়ে যেত।’

বিএনপি সহনশীল আচরণ করছে জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘গণতান্ত্রিক সরকার না থাকলে দেশ এগোবে না। তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে জিয়াউর রহমান দেশের কৃষিকে রপ্তানির দিকে নিয়ে গেছেন। পল্লী বিদ্যুৎ গ্রামে নিয়ে গেছেন সেচের জন্য। জিয়াউর রহমানের সময় চাল রপ্তানি হয়েছে। আমরা নির্বাচিত হলে দেশের কৃষিকে এগিয়ে নেব।’

অনুষ্ঠানে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। নতুবা দেশের উন্নয়ন ঘটবে না। মাছ ও মুরগি উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে। হর্টিকালচারে আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। তবে হর্টিকালচারে আমরা চীনের সহায়তা নিতে পারি।’

বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে যত ধরনের পরামর্শ আছে, সেগুলো দিতে হবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। আমার ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করব, বেচাকেনার ক্ষেত্রে আমরা পরিমিত লাভ করব। আমরা যদি পরিমিত লাভ না করি, তাহলে আপনারা (সাংবাদিক) ধরিয়ে দেবেন। এভাবেই সবার সহযোগিতায় দেশের কৃষি খাতকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব।’

কৃষি খাতে উন্নত দেশের মতো সক্ষমতা তৈরি করতে হবে জানিয়ে আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের কৃষিকে নেদারল্যান্ডসের মতো করতে হবে। বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের কৃষিতে যে গ্যাপ আছে, তা আমাদের কমাতে হবে। মাছের উৎপাদন ব্যয় কমাতে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছি। খাদ্য ও আমিষে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে কৃষিতে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ