Ajker Patrika

মন্দার বাজারে নতুন আশার আলো

রোকন উদ্দীন, ঢাকা
মন্দার বাজারে নতুন আশার আলো
প্রতীকী ছবি

পোশাক রপ্তানি কমছে, চামড়ায় ধাক্কা, কৃষিপণ্যেও মন্থর গতি। তবু এই মন্দার সময়ে দেশের এক খাত চুপচাপ এগিয়ে চলেছে। প্রকৌশল শিল্প, বহুদিন ধরে ‘সহায়ক খাত’ বলে উপেক্ষিত। এখন ধীরে ধীরে জাতীয় রপ্তানি কাঠামোর এক সম্ভাবনাময় স্তম্ভে পরিণত হচ্ছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শেষে প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৫ কোটি মার্কিন ডলারে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৪৫ শতাংশ বেশি। কেবল সেপ্টেম্বরে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৬ শতাংশ, যা বৈশ্বিক রপ্তানি মন্থরতার মধ্যেও এক ব্যতিক্রমী চিত্র।

দেশে প্রায় ৮০ হাজার মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিট রয়েছে। স্থানীয় বাজারের আকার ইতিমধ্যে ৮০০ কোটি ডলার এবং এটি বছরে ২৮ শতাংশ হারে বাড়ছে। তবে এখনো পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘ পথ। বৈশ্বিক বাজারের আকার বর্তমানে যেখানে ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের, সেখানে বাংলাদেশের অংশীদারত্ব এখনো ৫০ কোটি ডলারের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, যা বিশ্ববাজারের মাত্র ০.০১ শতাংশ। বর্তমানে দেশ থেকে প্রকৌশল খাতের রপ্তানি মূলত তিন ভাগে হচ্ছে। এর মধ্যে প্রকৌশল যন্ত্রপাতি, বাইসাইকেল ও ধাতব সামগ্রী; যেমন আয়রন-স্টিল, তামার তার, স্টেইনলেস স্টিল ও ইলেকট্রিক সরঞ্জাম। এই পণ্যগুলো এখন ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও এশিয়ার ৪০টির বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ আজকের পত্রিকাকে জানান, যদি খাতটিতে নীতিগত সহায়তা ও সমন্বিত বিনিয়োগ আসে, তাহলে আগামী সাত বছরের মধ্যে এই বাজার ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে।

মন্দার মধ্যেও গতি

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা সামলে ইউরোপ ও আমেরিকার অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এতে শিল্পকারখানার সরঞ্জাম, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও যান্ত্রিক উপকরণের চাহিদা আবার বেড়েছে। এই প্রবাহে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরাও নতুন অর্ডার ও স্থগিত থাকা পুরোনো অর্ডারগুলো একসঙ্গে পাচ্ছেন।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রকৌশল পণ্যের মোট রপ্তানি আয় ছিল ৫৩.৫ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট আয় ছিল ৪৮.৬৭ কোটি ডলার। এই বৃদ্ধির ধারাই চলতি অর্থবছরে আরও ত্বরান্বিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির (বাইশিমাস) সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘গত কয়েক মাসে যে রপ্তানি বেড়েছে, তার পেছনে অনেক পুরোনো অর্ডারের ডেলিভারি রয়েছে। আমাদের টেস্টিং ল্যাব না থাকা, স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সেভেন সিস্টার্সে রপ্তানি বন্ধ থাকা—এসব বড় প্রতিবন্ধকতা। তবু এই বৃদ্ধিই প্রমাণ করে খাতটির অন্তর্নিহিত শক্তি কতটা।’

প্রকৌশল পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল প্রবৃদ্ধি এসেছে বাইসাইকেল রপ্তানিতে। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-সেপ্টেম্বরে বাইসাইকেল রপ্তানি বেড়েছে ৬৩ শতাংশ, আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ কোটি ডলারে, যেখানে আগের বছর একই সময়ে ছিল ২ কোটি ৩৮ লাখ ডলার।

ইলেকট্রিক পণ্যের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও কম নয়; ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে তা দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ২৮ লাখ ডলারে। এই দুটি উপখাতই এখন প্রকৌশল রপ্তানির প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের মার্কেটিং ডিরেক্টর কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন অনেক স্থিতিশীল। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে নতুন ক্রেতা পেয়েছি। আগের বাজারেও বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। এ কারণে রপ্তানিতে দৃশ্যমান গতি এসেছে।’

করোনা মহামারির সময় ইউরোপে ব্যক্তিগত পরিবহনের চাহিদা বাড়ায় বাইসাইকেল শিল্পে ব্যাপক উত্থান দেখা দিয়েছিল। যুদ্ধ-পরবর্তী অস্থিরতায় সেই গতি থেমে ছিল, কিন্তু বৈশ্বিক অর্থনীতি যখন আবার সচল হচ্ছে, তখন বাংলাদেশি বাইসাইকেল আবার জায়গা করে নিচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে।

তবু সীমাবদ্ধতাও কম নয়। টেস্টিং ও স্ট্যান্ডার্ড সার্টিফিকেশনের ঘাটতি, অবকাঠামোগত দুর্বলতা এবং সরকারি নীতি সহায়তার অভাব খাতটির সম্ভাবনাকে বারবার আঘাত করেছে। আব্দুর রাজ্জাকের মতে, ‘আমাদের খাত এখনো ফরমাল ইকোনমিতে ঢুকতে পারেনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

১২৮ জুলাই যোদ্ধার গেজেট বাতিল

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

জাতীয়করণের দাবিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশত মাদ্রাসাশিক্ষক আহত

নির্বাচন বানচালের জন্য দেশের ভেতরে–বাইরে অনেক শক্তি কাজ করবে, প্রধান উপদেষ্টার সতর্কতা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ