Ajker Patrika

এম এন নিটওয়্যার: ৪০ বছরের প্রতিষ্ঠান ২৪২ কোটির খেলাপি

  • ঋণ আদায়ে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে পাওনাদার ব্যাংকগুলো।
  • ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করার আশায় কর্তৃপক্ষ।
  • বর্তমানে বন্ধ রয়েছে কারখানাটি।
ওমর ফারুক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৮: ১৯
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

চট্টগ্রামভিত্তিক পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এম এন নিটওয়্যারস লিমিটেড। ১৯৮৪ সালে (সীমা গার্মেন্টস) প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিন যুগ পোশাক খাতে ভালো ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটির ৭২ লাখ ১৯ হাজার ৮২৩ ডলারের পোশাক রপ্তানির রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু গত তিন বছর (২০২৩ সাল) থেকে তাদের পোশাক রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগ করা তিন ব্যাংকের ২৪২ কোটি টাকা ঋণ ঝুঁকিতে পড়েছে।

ঋণ আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে পাওনাদার ব্যাংকগুলো।

ব্যাংকের তথ্যমতে, গ্রুপটির কাছে ওয়ান ব্যাংকের পাওনা আটকে গেছে ১০৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। ঋণখেলাপি হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৫টি এনআই অ্যাক্ট (চেক প্রত্যাখ্যান) মামলা করেছে ব্যাংকটি।

ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ২০০২ সাল থেকে ওয়ান ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখায় ব্যবসা করে আসছে এম এন নিটওয়্যার। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকের ব্যবসা করতে এই ঋণসুবিধা নেয় প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ব্যবসার পাশাপাশি ব্যাংকের ঋণও শোধ করেছে নিয়মিত। কিন্তু গত চার-পাঁচ বছর ধরে ব্যাংক ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করছে। এর মধ্যে ঋণটি ৩ বার পুনঃ তফসিল (রিসিডিউল) করা হয়েছে।

এরপরও সময়মতো কিস্তি না দিতে পারায় প্রতিষ্ঠানটি ঋণখেলাপিতে পরিণত হয়েছে। ‍ঋণ আদায়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধারদের বিরুদ্ধে ৫টি এনআই অ্যাক্ট (চেক প্রত্যাখ্যান) মামলা করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ১০৫ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের কাছে প্রতিষ্ঠানটির চট্টগ্রাম নগরীর ঈদগা এলাকায় ১১ শতক জায়গা বন্ধক রয়েছে; যার মূল্য সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা।

এদিকে এম এন নিটওয়্যারের কাছে ইসলামী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার পাওনা ১১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৪ কোটি টাকা শ্রেণিকৃত হয়ে পড়েছে। ঋণের বিপরীতে ব্যাংকটির কাছে মাত্র ১৭ কোটি টাকার জমি বন্ধক রয়েছে।

ইসলামী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ইসলামী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার পুরোনো গ্রাহক এম এন নিটওয়্যার।

এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির কাছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখারও ২৭ কোটি টাকা ইতিমধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে। ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, এই ঋণের বিপরীতে জামানতের পরিমাণ খুবই কম। তাই ঋণ আদায়ে ইতিমধ্যে একটি চেক প্রত্যাখ্যান মামলা করা হয়েছে।

খেলাপি হওয়ার কারণ হিসেবে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর ঈদগা এলাকার বাসিন্দা মুনির আহমেদের হাত ধরে গড়ে ওঠে প্রতিষ্ঠানটি। তাঁর মৃত্যুর পর দুই সন্তান ব্যবসার হাল ধরেন। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে তাঁদের ব্যবসা আলাদা হয়ে যায়।

এর পর থেকে এম এন নিটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন মুনির আহমেদের ছেলে মঈন উদ্দিন আহমেদ। মঈন উদ্দিনের স্ত্রী রোকসানা আহমেদ চেয়ারম্যান এবং ছেলে মুসলিম উদ্দিন আহমেদ পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান কর্ণধার মঈন উদ্দিন আহমেদ আগের সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে গিয়ে অনেক টাকা খরচ করেছেন।

এ ছাড়া করোনার প্রভাবে পোশাক রপ্তানি কমে গেলেও কারখানার খরচ চালাতে হয়েছে। পরে কারখানার চলতি মূলধন (ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল) সংকট হলে বিনিয়োগকারী ব্যাংকগুলো মুখ ফিরিয়ে নেয়।

তবে এম এন নিটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন, ‘ব্যবসায় উত্থান-পতন থাকে। প্রায় ৪০ বছর তৈরি পোশাক খাতে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছি। দুবার বিজিএমইএর ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলাম, চিটাগাং চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক ছিলাম। স্থিতিশীল সরকার না থাকায় পোশাক রপ্তানির অর্ডার কমে গেছে। তাই আপাতত কারখানার উৎপাদন বন্ধ রেখেছি।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ সার্কুলার অনুযায়ী ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে খেলাপি ঋণ রিসিডিউল করবেন বলে তিনি জানান।

গত রোববার নগরীর ঈদগা এলাকায় এম এন নিটওয়্যার কারখানায় গিয়ে কারখানাটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফটকের পাশের মেসার্স খতিজা হার্ডওয়্যারের দোকানি বলেন, কয়েক বছর ধরে কারখানার অবস্থা খারাপ। এক-দেড় মাস থেকে কারখানাটি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।

সম্প্রতি কারখানা পরিদর্শন করা পাওনাদার ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, গত ৩০ আগস্ট থেকে গ্রুপটির সব কারখানার উৎপাদন ও ব্যবসা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

মোদির সঙ্গে রাহুলের ৮৮ মিনিটের বৈঠক, কী আলোচনা হলো

মধ্যরাতে দেশে দুই দফা ভূমিকম্প, উৎপত্তিস্থল সিলেট ও মৌলভীবাজার

শিশু উদ্ধারে ৪০ ফুট গর্ত করে চলছে সুড়ঙ্গ করার কাজ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পার্ক অ্যাভিনিউর নতুন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর জামাল ভূঁইয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের ফুটবল তারকা ও জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াকে অফিশিয়াল ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে ঘোষণা করেছে পার্ক অ্যাভিনিউ। ১০ ডিসেম্বর গোদরেজ কনজ্যুমার প্রোডাক্টস লিমিটেড সার্কের হেড সমীর সূর্যবংশীর উপস্থিতিতে ঢাকায় এই সাইনিং সেরিমনি হয়।

এতে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য ভাস্কর কুমার দে (হেড অব মার্কেটিং), রিতেশ বড়ুয়া (হেড অব সেলস), গোপাল দ্বিবেদী (হেড অব প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন) এবং শশাঙ্ক পানম্বুর (ডিজিএম হিউম্যান রিসোর্সেস, সার্ক)।

পার্ক অ্যাভিনিউ, গোদরেজ কনজ্যুমার প্রোডাক্টস লিমিটেড একটি গ্রুমিং ব্র্যান্ড। এটি আত্মবিশ্বাসী ও আধুনিক পুরুষদের জন্য প্রিমিয়াম বডি স্প্রে ও পারফিউমসহ ব্যক্তিগত সুগন্ধির জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। জামালের ক্যারিয়ারের যাত্রা ও ব্যক্তিগত পরিচয় পার্ক অ্যাভিনিউ ব্র্যান্ডের সঙ্গে মানানসই, যা আত্মবিশ্বাসকে প্রতিফলিত করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

মোদির সঙ্গে রাহুলের ৮৮ মিনিটের বৈঠক, কী আলোচনা হলো

মধ্যরাতে দেশে দুই দফা ভূমিকম্প, উৎপত্তিস্থল সিলেট ও মৌলভীবাজার

শিশু উদ্ধারে ৪০ ফুট গর্ত করে চলছে সুড়ঙ্গ করার কাজ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বীকন ফার্মার কর্ণধার এবাদুল করিমের মৃত্যু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৩
প্রয়াত এবাদুল করিম। ছবি: সংগৃহীত
প্রয়াত এবাদুল করিম। ছবি: সংগৃহীত

বীকন ফার্মাসিউটিক্যালসের কর্ণধার এবং কোহিনূর কেমিক্যালসে সম্মানিত পরিচালক মো. এবাদুল করিম মারা গেছেন।

আজ বুধবার সকাল ৯টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মরহুমের জানাজা বাদ আছর গুলশান সোসাইটি মসজিদ-এ অনুষ্ঠিত হবে।

ব্যবসাজগতে এবাদুল করিম একটি সফল নাম। তিনি স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করার পরই ব্যবসায় নামেন। উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি গত কয়েক দশক সুনামের সঙ্গে কাজ করেন। ওষুধ, আবাসন, ভোক্তাপণ্যসহ বিভিন্ন খাতে তিনি বড় উদ্যোক্তা ছিলেন।

এবাদুল করিম বীকন ফার্মাসিউটিক্যালসের এমডি ছিলেন; এর পাশাপাশি বীকন পয়েন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বীকন ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডেরও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। 

দেশের ওষুধ শিল্পে উচ্চপ্রযুক্তি সম্পন্ন নতুন পণ্য, বিশেষ করে ক্যান্সার চিকিৎসার ওষুধ উৎপাদনে প্রতিষ্ঠানটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করেন এবাদুল করিম।

দেশের শীর্ষস্থানীয় সাবান, প্রসাধনী ও টয়লেট্রিজ প্রস্তুতকারী কোহিনূর কেমিক্যালসের পরিচালক ছিলেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

মোদির সঙ্গে রাহুলের ৮৮ মিনিটের বৈঠক, কী আলোচনা হলো

মধ্যরাতে দেশে দুই দফা ভূমিকম্প, উৎপত্তিস্থল সিলেট ও মৌলভীবাজার

শিশু উদ্ধারে ৪০ ফুট গর্ত করে চলছে সুড়ঙ্গ করার কাজ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ‘এক্সিসেবল ডিজিটাল সেবা’ নিশ্চিতের আহ্বান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ‘এক্সিসেবল ডিজিটাল সেবা’ নিশ্চিতের আহ্বান

ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য দ্রুত সম্প্রসারিত ডিজিটাল সেবা পুরোপুরি প্রবেশযোগ্য করতে সুস্পষ্ট ও সময়বদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। বক্তারা বলেন, দেশের ডিজিটাল অগ্রযাত্রা তখনই পরিপূর্ণ হবে, যখন সব নাগরিক বিশেষ করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা নিরাপদ, স্বচ্ছন্দ ও স্বাধীনভাবে সরকারি ই-সেবা ব্যবহার করতে পারবেন। এ জন্য সাশ্রয়ী ইন্টারনেট, নিয়মিত অ্যাক্সেসিবিলিটি মূল্যায়ন এবং বিদ্যমান আইন ও নীতিমালার কার্যকর প্রয়োগকে অত্যাবশ্যক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

“ইনোভেশন টু ইনক্লুশন ইন দ্য ডিজিটাল এইজ” শীর্ষক সেমিনারটি আগারগাঁওয়ের বিডা অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজন করে এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রাম ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ। ১৫০ জনের বেশি অংশগ্রহণকারী সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন আইসিটি বিভাগ, এটুআই, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, সমাজসেবা অধিদফতর, জাতিসংঘ সংস্থা, উন্নয়ন অংশীদার, মোবাইল অপারেটর, ব্যাংক, ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, সিভিল সোসাইটি, ডিজিটাল অ্যাক্সেসিবিলিটি বিশেষজ্ঞ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনের প্রতিনিধি।

সেমিনারে অতিথি ছিলেন আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ দেবনাথ, এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মোহা: আব্দুর রফিক, প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট লিড আব্দুল্লাহ আল ফাহিম, ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্ট ম্যানেজার মাহা আবু এমায়ের, হেড অব ইনোভেশন ক্লাস্টার মো. নাহিদ আলম, কনসালট্যান্ট (অ্যাক্সেসিবিলিটি) ভাস্কর ভট্টাচার্য, ইউএনডিপি বাংলাদেশের অ্যাসিস্টেন্ট রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ আনোয়ারুল হক এবং ডাইভার্সিটি অ্যান্ড ইনক্লুশন অফিসার মো. নাজমুস সাকিব।

অনুষ্ঠানে এটুআই ও ইউএনডিপি বাংলাদেশ যৌথভাবে “ডিজিটাল বৈষম্য দূরীকরণ: বাংলাদেশের ডিজিটাল ইকোসিস্টেমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশযোগ্যতা উন্নয়ন” শীর্ষক নতুন গবেষণা ও পলিসি ব্রিফ উপস্থাপন করে। এতে বলা হয়, দেশে এক হাজারের বেশি ই-সেবা চালু হলেও অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এখনো এসব সেবা ব্যবহারে বাধার মুখে পড়েন। অনেকের জন্য সেবা কার্যত অপ্রবেশযোগ্য রয়ে গেছে।

গবেষণাটি উপস্থাপন করেন ভাস্কর ভট্টাচার্য। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীতে পরিচালিত সার্ভে, ফোকাস গ্রুপ আলোচনা, কর্মশালা ও সাক্ষাৎকার থেকে প্রাপ্ত তথ্যে সহায়ক প্রযুক্তি ও সাশ্রয়ী ইন্টারনেটের সীমিত প্রাপ্যতা, ডিজিটাল দক্ষতার অভাব, অনিরাপদ অনলাইন পরিবেশ এবং ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপে অ্যাক্সেসিবিলিটি ফিচারের ঘাটতি প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উঠে আসে। পাশাপাশি বলা হয়, প্রতিবন্ধী নারীরা অনলাইন হয়রানির বিশেষ ঝুঁকিতে থাকেন এবং তুলনামূলক কম মোবাইল ব্যবহারের কারণে তাঁদের সেবা গ্রহণে বাধা আরও বাড়ে।

সেমিনারে বাস্তব অভিজ্ঞতার উদাহরণও উঠে আসে। একজন প্রতিবন্ধী নারী জানান, তাঁর ছবি বিকৃত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। আরেক অংশগ্রহণকারী জানান, প্রতিবন্ধী ভাতার আবেদন অনলাইনে করা গেলেও শেষ পর্যন্ত ফরম প্রিন্ট করে হাতে জমা দিতে হয়, যা ডিজিটালাইজেশনের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, প্রবেশযোগ্যতাকে সেবা ডিজাইনের প্রাথমিক স্তর থেকেই বাধ্যতামূলক করতে হবে। সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান বলেন, প্রবেশযোগ্যতা মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক মোহা: আব্দুর রফিক বলেন, সমন্বিত প্রচেষ্টাই ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে পারে।

বিজয় কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, প্রতিবন্ধিতা-সংক্রান্ত সেবা ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে বিচ্ছিন্ন কাঠামোর মধ্যে না রেখে সমন্বিতভাবে পরিচালনা করা জরুরি। আব্দুল্লাহ আল ফাহিম বলেন, প্রবেশযোগ্যতা জনসেবার মূল শর্ত, বাড়তি সুবিধা নয়। আনোয়ারুল হক বলেন, ডিজিটাল অগ্রগতির সত্যিকারের মানদণ্ড হলো কতজন মানুষ বাস্তবে সেবা ব্যবহার করতে পারছে।

সেমিনারে উপস্থাপিত নীতি-প্রস্তাবে আগামী পাঁচ বছরের জন্য একটি ধাপে ধাপে বাস্তবায়নযোগ্য রোডম্যাপ তুলে ধরা হয়। প্রথম বছরে সাশ্রয়ী ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু, সব সরকারি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের অ্যাক্সেসিবিলিটি অডিট, ডিজাইন গাইডলাইন বাস্তবায়ন, প্রতিবন্ধী নারী ও তরুণদের ডিজিটাল নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ, ডেভেলপারদের জন্য বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ ও ডিজিটাল স্কিলস হাব স্থাপনের সুপারিশ করা হয়।

দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় বছরে সরকারি ভাতা ও ভর্তুকিতে দূরবর্তী পরিচয় যাচাইকরণ, সহজ ন্যাশনাল ডিজেবিলিটি হেল্পলাইন, ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের প্রবেশযোগ্যতা বৃদ্ধি, সহায়ক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও দেশীয় উদ্ভাবনে সহায়তা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়।

তৃতীয় থেকে পঞ্চম বছরে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ডিজিটাল অ্যাক্সেসিবিলিটি অ্যাক্ট প্রণয়ন, ওয়েব অ্যাক্সেসিবিলিটি মনিটরিং অথরিটি গঠন, মুক্তপাঠ ও নাইসসহ গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মে পূর্ণ প্রবেশযোগ্যতা নিশ্চিতকরণ এবং সরকারি তথ্য ও জরুরি বার্তাকে সবার জন্য সম্পূর্ণ প্রবেশযোগ্য করার সুপারিশ করা হয়।

বক্তাদের মতে, এসব সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও নাগরিক জীবনের সব ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ এক অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল পরিবেশের দিকে এগোবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

মোদির সঙ্গে রাহুলের ৮৮ মিনিটের বৈঠক, কী আলোচনা হলো

মধ্যরাতে দেশে দুই দফা ভূমিকম্প, উৎপত্তিস্থল সিলেট ও মৌলভীবাজার

শিশু উদ্ধারে ৪০ ফুট গর্ত করে চলছে সুড়ঙ্গ করার কাজ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্টারলিংকসহ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে প্রাণচাঞ্চল্য

 রিমন রহমান, রাজশাহী
রাজশাহী হাইটেক পার্ক
রাজশাহী হাইটেক পার্ক

দীর্ঘ স্থবিরতার পর আবারও প্রাণ ফিরে পাচ্ছে রাজশাহী হাইটেক পার্ক। নতুন করে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ শুরু হওয়ায় পার্ককেন্দ্রিক অর্থনীতিতে এসেছে দৃশ্যমান গতি। এতে প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থান ও আঞ্চলিক উন্নয়নের সম্ভাবনাও জোরদার হয়েছে।

পার্কসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন খালি পড়ে থাকা আটটি বাণিজ্যিক প্লটই এখন লিজ নিয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সবচেয়ে আলোচিত বিনিয়োগটি এসেছে মার্কিন প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক থেকে। তারা ৪০ বছরের জন্য এক একর জায়গা লিজ নিয়ে স্থাপন করেছে অত্যাধুনিক গ্রাউন্ড স্টেশন। একই সময়ে দেশীয় অগ্নিসিস্টেম নতুন প্লট বরাদ্দ পেয়েছে এবং ব্র্যাক-আইটি দুই একর জায়গায় কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ছাড়া ১২ তলা সিলিকন টাওয়ারে প্রাণ-আরএফএলসহ একাধিক কোম্পানি মোট ২ হাজার ৪০০ বর্গফুট স্পেস ভাড়া নিয়েছে।

ভর্তুকিনির্ভর পার্কে উন্নতির আশা

বর্তমানে হাইটেক পার্কে ভাড়া ও সার্ভিস চার্জ বাবদ মাসিক আয় মাত্র ২ লাখ টাকা, যেখানে ব্যয় ৮ লাখ টাকার বেশি। ফলে প্রতি মাসেই প্রায় ৬ লাখ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। তবে নতুন বছরের শুরু থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোর পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু হলে ঘাটতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।

পার্কের উপপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আগে ৮টি প্লটের সবই খালি পড়ে ছিল। এখন সাত প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়মিত কার্যক্রম চালাচ্ছে। ১২ তলা সিলিকন টাওয়ারেও ১৯টি কোম্পানিকে স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে, অনেকে অফিস সাজাচ্ছে।’

অবকাঠামো-নিরাপত্তা ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ

অবকাঠামো ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত কিছু সমস্যার কথা জানিয়ে উদ্যোক্তারা বলছেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে যে ক্ষতি হয়েছিল, তা পুষিয়ে নিতে দ্রুত অবকাঠামো সংস্কার ও নিরাপত্তা জোরদার না করলে বড় বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়তে পারে। বিনিয়োগ বাড়তে থাকলেও নিরাপত্তা, পরিবেশ ও ব্র্যান্ডিংয়ে এখনো পিছিয়ে কর্তৃপক্ষ।

হাইটেক পার্কের রাজ আইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম আক্তারুজ্জামান মাসুদ বলেন, ‘এখানে এখনো সিকিউরিটি ক্যামেরা নেই, বিদ্যুৎ ব্যাকআপও দুর্বল। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চলে যায়। হাইটেক পার্কে এমন হতে পারে না। কারণ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ও কর্মীবান্ধব পরিবেশ ছাড়া কোনো হাইটেক পার্ক টেকসই হতে পারে না। এ বিষয়গুলো দ্রুত সমাধান করতে হবে।’

সম্ভাবনার কেন্দ্র হতে পারে রাজশাহী

শিক্ষানগরী রাজশাহীতে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ শিক্ষার্থী কর্মসংস্থানের সুযোগ খোঁজেন। এমন প্রেক্ষাপটে হাইটেক পার্কে কমপক্ষে ১৪ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক রোকনুজ্জামান বলেন, ‘হাইটেক পার্ক ও বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে কাজ করলে একটি শক্তিশালী মানবসম্পদ ভান্ডার তৈরি হতে পারে। আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত চাকরি খুঁজছে। পার্কের প্রতিষ্ঠানগুলো যদি আমাদের আমন্ত্রণ জানায়, আমরা তাদের সঙ্গে দক্ষ জনবল তৈরিতে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

মোদির সঙ্গে রাহুলের ৮৮ মিনিটের বৈঠক, কী আলোচনা হলো

মধ্যরাতে দেশে দুই দফা ভূমিকম্প, উৎপত্তিস্থল সিলেট ও মৌলভীবাজার

শিশু উদ্ধারে ৪০ ফুট গর্ত করে চলছে সুড়ঙ্গ করার কাজ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত