Ajker Patrika

চাপের মুখে সিদ্ধান্ত দিলেন বিমানের বিদায়ী এমডি, জানালেন আপত্তিও

মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২৪, ১৮: ০২
চাপের মুখে সিদ্ধান্ত দিলেন বিমানের বিদায়ী এমডি, জানালেন আপত্তিও

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নানা স্তরের কর্মীরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করেন। এ অবস্থায় কয়েক দিন কর্মস্থলে অনিয়মিত থাকার পর ১২ আগস্ট বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করেন বিমানের সদ্য বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জাহিদুল ইসলাম ভূঞা। বৈঠকে চাপের মুখে নির্বাহী পরিচালকদের আহ্বানে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এ ধারা অব্যাহত থাকে পরবর্তী কয়েক দিন। তবে ১৫ আগস্ট বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হওয়ার আগেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দেওয়া এক চিঠিতে চাপের মুখে নেওয়া নিজের সিদ্ধান্তগুলোর বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে যান তিনি। 

জানা গেছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এমডিসহ মন্ত্রণালয় থেকে আসা সব কর্মকর্তার পদত্যাগসহ বেশ কিছু দাবিতে ৮ আগস্ট থেকে আন্দোলনে নামেন প্রতিষ্ঠানটির সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাঁদের দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল প্রেষণে আসা আমলাদের প্রত্যাহার, কোভিডকালীন স্টাফদের কর্তিত বেতন ফিরিয়ে দেওয়া, তিন হাজার ক্যাজুয়াল (অস্থায়ী) কর্মচারীর চাকরি স্থায়ী করা, বিমানের প্রায় ছয় হাজার জনবলকে পেনশনের আওতাভুক্ত করা। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে এয়ারলাইনসটিতে বেতন, ভাতাদি, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন ও বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে নানা  বৈষম্য, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি বন্ধ করার দাবিও জানান তাঁরা। 

কর্মীদের এসব দাবির মুখে ১২ আগস্ট বিমানের প্রধান কার্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করেন সদ্য বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও। বৈঠকে বিমানের প্রকৌশলীদের প্রোডাকটিভিটি ও অন্যান্য ভাতা এবং নিরাপত্তা বিভাগের কর্মীদের ঝুঁকি ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৈমানিকসহ সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর চলমান মামলা নিষ্পত্তি, চাকরি-সংক্রান্ত বিবিধ অভিযোগ, অনিচ্ছাকৃত স্বেচ্ছা অবসর, পদোন্নতি-সংক্রান্ত জটিলতায় থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবেদন নিষ্পত্তি করতে কমিটিকে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এ ছাড়া কোভিডকালীন স্টাফদের কর্তিত বেতন ফিরিয়ে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়। 

বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়, বেতন বিভাগ ৩(২)-এ ক্যাজুয়াল হিসেবে কর্মরতদের চাকরির মেয়াদ ১ বছর পর ৩ বছর মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হবে। ওই ৩ বছর সন্তোষজনকভাবে চাকরি সম্পন্ন হলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের তারিখ থেকে স্থায়ী করা হবে। অন্যদিকে বেতন বিভাগ ৩(১)-এ ক্যাজুয়াল হিসেবে চাকরির মেয়াদ ৫ বছর থেকে কমিয়ে ৩ বছর করা হয়। বলা হয়, ক্যাজুয়াল হিসেবে ৩ বছর চাকরি করার পর ৩ বছর মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হবে। ওই ৩ বছর সন্তোষজনকভাবে চাকরি সম্পন্ন হলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের তারিখ থেকে স্থায়ী করা হবে। 

এর আগে ২০ দফা দাবিতে ৮ আগস্ট স্মারকলিপি দেয় বিমানের কেবিন ক্রু ইউনিয়ন। তাঁদের অন্যতম দাবি ছিল, ফ্লাইট সার্ভিসে সব চুক্তিভিত্তিক কেবিন ক্রুর চাকরি স্থায়ীকরণ করা ও পেনশন সুবিধার আওতায় আনা। দাবি না মানলে তাঁরা কর্মবিরতির হুমকিও দেন। পরবর্তী সময়ে ১২ আগস্টের বৈঠকে বেতন বিভাগ চতুর্থের চুক্তিভিত্তিক কেবিন ক্রুদের নিয়োগের তারিখ থেকে স্থায়ীকরণের ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন বিদায়ী এমডি। 

এদিকে ১৪ আগস্ট বিমানে শীর্ষ পদে বড় রদবদল করেন বিদায়ী এমডি। ওই দিন এক অফিস আদেশে বিমানের পরিচালক করপোরেট প্ল্যানিং অ্যান্ড ট্রেনিং (ভারপ্রাপ্ত) পদে নিয়োগ দেওয়া হয় শাকিল মেরাজকে। তিনি বিমানের গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইক্যুইপমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক হিসেবে ছিলেন। পৃথক আরেক আদেশে বিমানের জেলা বিক্রয় অফিসের (মতিঝিল) মহাব্যবস্থাপক আশরাফুল আলমকে পরিচালক বিপণন ও বিক্রয় পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। 

এদিকে একই দিনে জারি করা আদেশে বিমানের ডিজিএম-ফ্লাইট সার্ভিস মনিরুজ্জামান খানকে প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড লজিস্টিক সাপোর্ট পরিদপ্তর, বিমানের আইন বিভাগের ডিজিএম রাশেদ মেহের চৌধুরীকে বিমান এয়ারলাইনস ট্রেনিং সেন্টার এবং বিমানের ম্যানেজার (জনসংযোগ) মো. আল মাসুদ খানকে আইন উপবিভাগে বদলি করা হয়। 

১৫ আগস্ট জাহিদুল ইসলাম ভূঞাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। এর আগেই ১৪ আগস্ট বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বল প্রয়োগে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর বিষয়ে আপত্তি জানান তিনি। 

চিঠিতে জাহিদুল ইসলাম ভূঞা উল্লেখ করেন, ‘দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মতো বিমানেও যৌক্তিক-অযৌক্তিক অনেক দাবি উত্থাপিত হয়েছে এবং ফ্লাইট সার্ভিস ও এয়ারপোর্টের কার্যক্রম চলমান রাখার প্রয়োজনে চাপের মুখে নির্বাহী পরিচালকমণ্ডলীর আহ্বানপূর্বক অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে এবং প্রশাসনিক আদেশ জারি করতে হয়েছে। যেগুলোর মধ্যে কিছু ব্যত্যয় হতে পারে, যা বোর্ডে উপস্থাপনের মাধ্যমে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করার প্রয়োজন হতে পারে।’ 

উল্লেখ্য, অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম ভূঞা বিমানে এমডি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তির আগের ৫ বছর সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের একান্ত সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি বিসিএস (প্রশাসন) ১৮তম ব্যাচের কর্মকর্তা। 

এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকা’কে জানান, বিমানের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মীরা নানা দাবি নিয়ে সদ্য বিদায়ী এমডিকে চাপ দিচ্ছিলেন। এ অবস্থায় ফ্লাইট চলাচলে বিঘ্ন ঘটলে সাধারণ যাত্রী বিশেষ করে প্রবাসী কর্মীরা সংকটে পড়তেন। পাশাপাশি বিমানের ভাবমূর্তিও নষ্ট হতো। এমন পরিস্থিতি এড়াতে অধিকাংশ দাবি মানতে বাধ্য হয়েছিলেন সাবেক এমডি। যদিও নিয়ম অনুযায়ী এসব সিদ্ধান্ত পরিচালনা পর্ষদে পাস হওয়া প্রয়োজন ছিল।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জার্মানির শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গেছে চীন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জার্মানির ব্রেমারহাভেন বন্দর। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
জার্মানির ব্রেমারহাভেন বন্দর। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

চলতি বছরের প্রথম আট মাসে জার্মানির বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গেছে চীন। জার্মানির পরিসংখ্যান অফিসের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত উচ্চ শুল্কের কারণে জার্মান রপ্তানি প্রভাবিত হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত চীন ও জার্মানির মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ১৬৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ১৯০.৭ বিলিয়ন ডলার)। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জার্মানির মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৬২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ইউরো।

ঠিক এক বছর আগে অর্থাৎ ২০২৪ সালে চীনের আট বছরের আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে জার্মানির শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদার হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ এনে চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে চেয়েছিল বার্লিন। তবে চলতি বছর ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে আরোপিত শুল্কের জেরে আগের বছরের বাণিজ্যিক গতি কমে যায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রাম্পের শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে জার্মান রপ্তানি কমেছে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে জার্মান রপ্তানি ৭ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ৯৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ইউরোতে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে শুধু আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে জার্মান রপ্তানি কমেছে ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ, যা এই পতনের গতি বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।

বিজিএ ফরেন ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ডর্ক জান্দুরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ও নতুন বাণিজ্য নীতি রপ্তানি কমার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি জানান, এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি, যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিকের মতো জনপ্রিয় জার্মান পণ্যের চাহিদা কমেছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইএনজির গ্লোবাল হেড অব ম্যাক্রো কার্স্টেন ব্রেজেস্কি বলেন, ট্রাম্পের চলমান শুল্ক হুমকি এবং ইউরোর শক্তিশালী অবস্থানের কারণে অদূর ভবিষ্যতেও যুক্তরাষ্ট্রে জার্মান রপ্তানি বাড়ার সম্ভাবনা নেই।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মতো চীনেও জার্মান রপ্তানি কমেছে। ২০২৫ সালের প্রথম আট মাসে চীনে জার্মান রপ্তানি ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ কমে ৫৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ইউরোতে দাঁড়িয়েছে। এর বিপরীতে, চীন থেকে জার্মানিতে আমদানি ৮ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ১০৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে।

ব্রেজেস্কি সতর্ক করে বলেন, চীন থেকে আমদানির এই নতুন উত্থান উদ্বেগজনক। কারণ, এই আমদানি পণ্যগুলোর বেশির ভাগই ডাম্পিং মূল্যে আসছে। তিনি আরও বলেন, এটি কেবল চীনের ওপর জার্মানির নির্ভরতা বাড়াবে না, বরং জার্মানির মূল শিল্পগুলোতে চাপ বাড়াবে। প্রকৃতপক্ষে চীন জার্মান শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে।

ইউরোপীয় বেসরকারি ব্যাংক বেরেনবার্গের অর্থনীতিবিদ স্যালোমন ফিডলার বলেন, অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক গতিশীলতার অভাবে বৈশ্বিক বাজারের যেকোনো পরিবর্তন এখন জার্মানিতে অনেকের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জিটুজি চুক্তিতে পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করবে সরকার

বাসস, ঢাকা  
জিটুজি চুক্তিতে পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করবে সরকার

সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে ২০২৬ সালের জন্য পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে।

অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের কমিটি আজ বুধবার দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে আরেকটি হলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের উপকরণ সংগ্রহ।

চলতি বছরের ৩৪তম অর্থনৈতিকবিষয়ক কমিটির সভায় এসব সুপারিশ করা হয়। আজ অনুষ্ঠিত এ সভায় ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

প্রথম প্রস্তাবে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ জিটুজি চুক্তির মাধ্যমে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির জন্য নীতিগত অনুমোদন চায়।

কমিটি প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করার পর নীতিগতভাবে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করে। দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা মেটাতে স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করার গুরুত্ব বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

দ্বিতীয় প্রস্তাবটি আসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। এটি ‘বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন’ প্রকল্পের আওতায়।

প্রস্তাব অনুযায়ী ১ কোটি ই-পাসপোর্ট কাঁচামাল সংগ্রহ করা হবে। এর মধ্যে জরুরি প্রয়োজনে ৫০ লাখ কাঁচামাল বইয়ে রূপান্তর করা যাবে। এ ছাড়া ৫৭ লাখ ই-পাসপোর্ট বই ও সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ প্যাকেজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা হবে।

বিস্তারিত আলোচনার পর কমিটি প্রস্তাবটি নীতিগত অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করেছে। কমিটি উল্লেখ করে, ই-পাসপোর্ট বিতরণ অব্যাহত রাখা এবং সীমান্ত ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য এই প্রকল্প কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকা কাস্টমসে ২৪ ঘণ্টা বিরতিহীন চলবে শুল্ক কার্যক্রম

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ৩০
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর আমদানি, রপ্তানি ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম সচল রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা কাস্টম হাউস। দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে বাণিজ্য স্বাভাবিক রাখতে বিমানবন্দরের অধিক্ষেত্রাধীন এয়ারফ্রেইট ইউনিট ও এক্সপ্রেস সার্ভিস ইউনিটে ২৪ ঘণ্টা তিন শিফটে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশ জারি করা হয়েছে।

ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনারের নির্দেশক্রমে জয়েন্ট কমিশনার সুমন দাশ স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোতে সহকারী কমিশনার ও উপকমিশনার পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রভাতি, দিবা ও নৈশ—এই তিন শিফটে দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি, পর্যাপ্ত সংখ্যক রাজস্ব কর্মকর্তা, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, সাব-ইন্সপেক্টর ও সিপাই নিয়োজিত রেখে শুল্ক কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা কাস্টম হাউসের একটি সূত্র জানায়, ২৪ ঘণ্টা কার্যক্রম চালুর ফলে বিমানবন্দর এলাকায় পণ্য খালাস, পরীক্ষা ও ছাড়পত্র প্রক্রিয়া আরও সহজ ও দ্রুততর হবে। এতে আমদানিকারক, রপ্তানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের জন্যও বাড়তি সুবিধা তৈরি হবে।

ঢাকা কাস্টম হাউস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম ভুইয়া মিঠু বলেন, ‘এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। এতে সবাই উপকৃত হবে এবং পণ্য খালাসের প্রক্রিয়া আরও গতিশীল হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুদে শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ে বড় আশা

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ০০
খুদে শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ে বড় আশা

শিক্ষার খরচ মেটাতে কিংবা একটু একটু করে নিজের টাকায় কিছু করার স্বপ্নে খুদে শিক্ষার্থীরা এখন ব্যাংকের সঙ্গী। আগে যেখানে সঞ্চয়ের মানে ছিল মাটির ব্যাংকে কয়েন জমানো, এখন সেটি ডিজিটাল পর্দায় ব্যালেন্স হিসাবে দেখা যায়। দেশের ব্যাংকগুলো এখন শিশু-কিশোরদের সেই হাতেখড়ির জায়গা হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫ লাখ ১৫ হাজার ২৫টি। এর মধ্যে ২৩ লাখ ছেলে, আর ২২ লাখের বেশি মেয়ে শিক্ষার্থীর নামে হিসাব খোলা হয়েছে। গ্রামে এই উদ্যোগের বিস্তার আরও বড়—২৩ লাখ ৯১ হাজার শিক্ষার্থীর হিসাব গ্রামাঞ্চলে, শহরে ২১ লাখ ২৩ হাজার।

এখন পর্যন্ত এসব খুদে সঞ্চয়কারীর ব্যাংকে জমা স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১০৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে শহরের শিক্ষার্থীদের ১ হাজার ৪৪৫ কোটি, গ্রামের শিক্ষার্থীদের ৬৬৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ সংখ্যা অনুযায়ী গ্রাম এগিয়ে থাকলেও সঞ্চয়ের অঙ্কে পিছিয়ে তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এই পুরো উদ্যোগই মূলত আর্থিক অন্তর্ভুক্তির একটি নতুন দরজা খুলে দিয়েছে। করোনাকালে কিছুটা ভাটা পড়লেও এখন আবার উল্টো স্রোত—স্কুল ব্যাংকিং দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। এর পেছনে বড় কারণ, ব্যাংকগুলোর ডিজিটাল সেবা। এখন অনেক স্কুলেই ব্যাংক প্রতিনিধি গিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ সঞ্চয় হিসাব খুলে দেন। তাতে স্কুলের ফি, বৃত্তি বা উপবৃত্তির টাকা সহজে জমা বা উত্তোলন করা যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এ বিষয়ে বলেন, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির কোনো জাদুকরি যন্ত্র নেই। প্রত্যেক স্কুলশিক্ষার্থীর ব্যাংক হিসাব নিশ্চিত করা গেলে সেটাই হবে শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি গড়ার ভিত্তি।’

২০১১ সালে মাত্র ১০০ টাকা জমা দিয়ে ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের জন্য শুরু হয় স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম। সে সময় কয়েকটি ব্যাংকে সীমিতভাবে হিসাব খোলা হতো। এখন দেশের ৬১ ব্যাংকের মধ্যে ৫৯টিতেই রয়েছে স্কুল ব্যাংকিং এবং এর ৭১ শতাংশ হিসাব বেসরকারি ব্যাংকে। শুধু বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেই শিক্ষার্থীদের আমানত পৌঁছেছে ১ হাজার ৭২৮ কোটিতে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ভাগে এসেছে ৩৮০ কোটি টাকা।

সবচেয়ে সক্রিয় ব্যাংকগুলোর তালিকায় রয়েছে ডাচ্‌-বাংলা, ইসলামী, অগ্রণী, সোনালী ও রূপালী ব্যাংক। বিশেষ করে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের ডিজিটাল স্কুল ব্যাংকিং সেবা সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থীর নাগাল পেয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘এই উদ্যোগ শুধু সঞ্চয় নয়, শিক্ষার্থীদের অর্থনীতির ধারায় যুক্ত করছে। এতে অভিভাবকের ওপর চাপ কমে, আর ব্যাংকও দীর্ঘমেয়াদি আমানতের ভিত্তি পায়। এই খুদে আমানতই পরোক্ষভাবে জাতীয় বিনিয়োগের জ্বালানি।’

অন্যদিকে, জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মজিবর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্কুল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শিশুরা এখন থেকেই টাকা ব্যবস্থাপনার কৌশল শিখছে। এতে সঞ্চয়ের সঙ্গে শিক্ষাবিমা, বৃত্তি গ্রহণ বা স্কুল ফি পরিশোধের সুবিধাও পাচ্ছে তারা।’

মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র আইমান জানায়, ‘উৎসবে পাওয়া টাকা আর টিফিনের কিছু অংশ ব্যাংকে রাখি। পরীক্ষার সময় সেই টাকা তুলে খরচ করেছি। ভালো লাগছে; কারণ, বাবার ওপর চাপ পড়েনি।’

বাংলাদেশ ব্যাংক এখন এই উদ্যোগকে আরও বিস্তৃত করতে মাঠে নেমেছে। চলতি বছরের মার্চে একটি নির্দেশনা জারি করে বলা হয়, প্রতিটি ব্যাংকের শাখা অন্তত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কুল ব্যাংকিং চালু করবে। এতে একদিকে শিক্ষার্থীরা ব্যাংকিং জগতে হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা পাবে, অন্যদিকে দেশের চার লাখের বেশি স্কুল হয়ে উঠবে আর্থিক শিক্ষার মাঠ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘এই উদ্যোগে সবাই লাভবান হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা সঞ্চয় করছে, অভিভাবকেরা স্বস্তি পাচ্ছেন, ব্যাংকও আমানত বাড়াচ্ছে। সব মিলিয়ে অর্থনীতিতে খুদে শিক্ষার্থীরাও এখন অবদান রাখছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত