Ajker Patrika

সেমিনারে বক্তারা

দেশের অর্থনীতি ব্যাংকঋণে আটকা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩: ৩০
‘বাংলাদেশের বন্ড ও সুকুক বাজার উন্মোচন: রাজস্ব স্থিতি, অবকাঠামো বাস্তবায়ন ও ইসলামি মানি মার্কেট উন্নয়ন’ শীর্ষক সেমিনারে অতিথিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
‘বাংলাদেশের বন্ড ও সুকুক বাজার উন্মোচন: রাজস্ব স্থিতি, অবকাঠামো বাস্তবায়ন ও ইসলামি মানি মার্কেট উন্নয়ন’ শীর্ষক সেমিনারে অতিথিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের কর-জিডিপি অনুপাত উদ্বেগজনকভাবে কম। করদাতারা যথাযথ সেবা না পাওয়ায় কর দিতে নিরুৎসাহিত হন। এর ফলে রাজস্ব ঘাটতি বাড়ছে এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা খাত চরম অর্থাভাবের মুখে পড়ছে। বিশ্বের উন্নত অর্থনীতিগুলো যেখানে বন্ডনির্ভর, সেখানে বাংলাদেশের বন্ড বাজার খুবই ক্ষুদ্র এবং করপোরেট বন্ড কার্যত অচল। ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদি ঋণের জন্য হলেও দেশে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পগুলোও ব্যাংকঋণে চলছে, যা অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। এ ছাড়া বিমা ও পেনশন খাতও জিডিপির তুলনায় নগণ্য, যা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর নিকুঞ্জে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের বন্ড ও সুকুক বাজার উন্মোচন: রাজস্ব স্থিতি, অবকাঠামো বাস্তবায়ন ও ইসলামি মানি মার্কেট উন্নয়ন’ শীর্ষক সেমিনারে এসব সমস্যা তুলে ধরেন বক্তারা। অনুষ্ঠানটি ডিএসই ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) যৌথভাবে আয়োজন করে।

বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে মানুষ কর দেয়, কিন্তু সেবা পায় না। তাই কর দিতে অনিচ্ছুক। ট্যাক্স কমানোর বিষয়টি বারবার উঠছে; যার কারণে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তার মতো খাতে অর্থায়নের সংকট বাড়ছে। আমাদের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও মাত্র ৭ দশমিক ২ শতাংশ; যেখানে ব্রাজিলে এটি ২৬ শতাংশ।’

সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, প্রাইভেট সেক্টরের বিনিয়োগ প্রায় সম্পূর্ণভাবে ব্যাংকের ঋণের ওপর নির্ভরশীল। দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পগুলো ব্যাংকঋণে পরিচালনা করা হচ্ছে, যা দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। গ্র্যাচুইটি ও পেনশন ফান্ডে আইনি ও প্রশাসনিক বাধার কারণে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করা সম্ভব নয়।

পুঁজিবাজার থেকে সব সময় মুনাফা আসবে, এমন ধারণা ভুল বলে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এটিকে যদি কেউ নিয়মিত আয়ের স্থায়ী উৎস মনে করে, তবে তা বিনিয়োগকারীদের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। মুনাফার সুযোগ আছে, তেমনি ক্ষতির ঝুঁকিও রয়েছে। সুকুক বন্ডের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এই ইনস্ট্রুমেন্ট ব্যাংকের ওপর চাপ কমাতে ব্যাপক সম্ভাবনা রাখে, যদি সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশে ২৪ হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্যের সুকুক আছে, কিন্তু তার প্রায় সবই সরকারি প্রকল্পে ব্যবহৃত হচ্ছে।’

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বিশ্বব্যাপী এখন অবকাঠামো বিনিয়োগ সরকারি খাত থেকে বেসরকারি খাতে চলে গেছে। সরকার ভূমি দেবে, বাকি কাজ করবে বেসরকারি খাত। ঝুঁকিও বেসরকারি খাত বহন করবে। এখানে ঝুঁকির তেমন কিছু নেই; কারণ, চাহিদা সব সময়ই থাকে। তাই ঋণনির্ভর অবকাঠামো থেকে সরে এসে শেয়ার বা বন্ডের মাধ্যমে বেসরকারি অংশীদারত্বে যেতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সঞ্চয়পত্র এখন আংশিকভাবে বাজারের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু এটিকে পুরোপুরি লেনদেনযোগ্য করতে হবে। এতে সেকেন্ডারি মার্কেট তৈরি হবে। সরকারি বন্ড সাধারণ মানুষ কিনতে পারছে; এখন বেসরকারি বন্ডও লেনদেনযোগ্য করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে আর্থিক কাঠামো মূলত ব্যাংকনির্ভর, যেখানে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি বন্ডনির্ভর। পেনশন ও বিমা খাতও জিডিপির মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ, যেখানে ভারতে এটি ৪ শতাংশ এবং উন্নত দেশে ১২ শতাংশ।

বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, দেশের অর্থনীতির জন্য মানি মার্কেট ও ক্যাপিটাল মার্কেট উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পরও বাংলাদেশের অর্থনীতি শুধু মানি মার্কেটের ওপর নির্ভরশীল।

সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘ব্যাংকগুলো স্বল্প মেয়াদে ঋণ দেবে, ব্যবসায় সহায়তা করবে, কর্মসংস্থান তৈরি করবে। দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ দেওয়া ব্যাংকের কাজ না। দেশের অর্থনীতির অগ্রগতির জন্য বড় বড় প্রকল্প নেওয়া দরকার। মনে করেন, ৫ হাজার কোটি টাকায় ২০ বছরের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প হবে। দীর্ঘ সময়ের জন্য এই অর্থ কী ব্যাংকগুলো দিতে পারে? অর্থাৎ বন্ড ছাড়া আমাদের সামনে কোনো গতি নেই। অথচ আমাদের পুরো আর্থিক খাত এখনো ঋণের মধ্যে পড়ে আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত