Ajker Patrika

২০২৫-২৬ প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা

মূল্যস্ফীতির লাগাম, প্রবৃদ্ধির সংযম

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
মূল্যস্ফীতির লাগাম, প্রবৃদ্ধির সংযম

প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) জন্য চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার নীতি সুদহার ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার, যদিও সর্বশেষ জুন মাসের তথ্যমতে তা এখনো রয়েছে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, যা তুলনামূলকভাবে রক্ষণশীল এবং সতর্ক পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সদর দপ্তরে এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। বর্তমান গভর্নরের এটি দ্বিতীয় মুদ্রানীতি এবং এটি অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে ঘোষিত হলো।

মুদ্রানীতির সার্বিক কাঠামো তুলে ধরে গভর্নর বলেন, ‘এখন প্রবৃদ্ধির চেয়ে মূল্যস্ফীতিই বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ সহায়তার মাধ্যমে মিথ্যা প্রবৃদ্ধি দেখাতে চাই না।’ তিনি জানান, গত বছর ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে, এবার ৫.৫ শতাংশের বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তাঁর মতে, মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিম্নমুখী হলেও তা এখনো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আসেনি। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘যখন মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামবে, তখনই নীতি সুদহার হ্রাসের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে।’ বর্তমান নীতি সুদহার মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বল্পমেয়াদি রেপো হারে প্রতিফলিত হয়। রেপো হার ১০ শতাংশেই অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে, যা ২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর সর্বশেষ ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছিল। এ হার ব্যাংকগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে সরকারি সিকিউরিটিজ বন্ধক রেখে স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

আন্তব্যাংক ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ‘স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি’ বা এসএলএফ হারও আগের মতো ১১ দশমিক ৫০ শতাংশেই রয়েছে। তবে ১৫ জুলাই ‘স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি’ বা এসডিএফ হার ৮.৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশে নামানো হয়েছে, যা ব্যাংকগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অর্থ জমা রাখার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

মূল্যস্ফীতির বর্তমান চিত্র ও লক্ষ্যমাত্রা

চলতি বছরের জুনে সার্বিক মূল্যস্ফীতি নেমে এসেছে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে, যা মে মাসে ছিল ৯ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং গত ডিসেম্বরে ছিল ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক চায়, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে তা ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে। তবে এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নীতিনির্ধারণ প্রয়োজন হবে।

বেসরকারি ঋণপ্রবাহে সংযম

নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়ানো হয়নি। গত জুন পর্যন্ত এই প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ, যা আগের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত এই প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২০ শতাংশ এবং ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত ৮ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ

সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ দশমিক ৪ শতাংশ, যা আগের বছরের ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ থেকে কিছুটা বেশি। তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন—গত জুন পর্যন্ত এই খাতে অর্জিত প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ।

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ

গভর্নর মনে করেন, বর্তমান বাস্তবতায় ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি খারাপ নয়। তাঁর ভাষায়, ‘প্রবৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা না থাকলে অর্থনৈতিক গতিশীলতা অর্জন কঠিন হয়ে পড়ে।’

ব্যাংকিং খাত নিয়ে আশ্বাস ও সংস্কারের বার্তা

এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ‘আমানতকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সঞ্চয় নিরাপদ রয়েছে।’ পাশাপাশি জানান, ব্যাংক খাতে বড় আকারের ‘সার্জারি’ আসছে। সরকারের তরফ থেকে তহবিল সরবরাহ করা হবে এবং সেই অর্থ লাভসহ ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।

বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে নমনীয়তা ও হস্তক্ষেপ

বিশ্ববাজারে অনিশ্চয়তা ও যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রধান বাজারে সম্ভাব্য শুল্ক বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে রপ্তানি আয়ে চাপ বাড়ার আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমন পরিস্থিতিতে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে নমনীয়তা আনা হয়েছে। বর্তমানে দিনে দুবার রেফারেন্স এক্সচেঞ্জ রেট ঘোষণা করা হচ্ছে, যাতে মুদ্রাবাজারে স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। তবে প্রয়োজন পড়লে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে হস্তক্ষেপ করতেও প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে।

সংযত প্রবৃদ্ধি, কড়াকড়ি মূল্যস্ফীতিতে—এই হলো এবারকার বার্তা

নতুন মুদ্রানীতি পর্যালোচনায় বোঝা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক এ পর্বে ‘কঠোর মুদ্রানীতি’ অব্যাহত রাখলেও কিছু নির্দিষ্ট স্থানে শিথিলতা ও নমনীয়তার ইঙ্গিত দিয়েছে। রেপো হার অপরিবর্তিত রেখে এবং বেসরকারি ঋণে সংযম ধরে রেখে এটি একদিকে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে চাচ্ছে, অন্যদিকে বিনিময় হারে নমনীয়তা দিয়ে বৈদেশিক খাতকে সহনীয় রাখার চেষ্টায় রয়েছে।

সর্বোপরি, এবারের মুদ্রানীতি রাজনৈতিক বাস্তবতা, বৈশ্বিক বাজারের চাপ এবং অভ্যন্তরীণ মুদ্রানীতিক ভারসাম্য মিলিয়ে একধরনের সংযত কৌশল গ্রহণ করেছে, যেখানে প্রবৃদ্ধির মোহে না ছুটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই হচ্ছে মূল লক্ষ্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও কর্মীদের সাফল্য উদ্‌যাপনে আবুল খায়ের স্টিলের ‘একেএস-একসাথে আগামীর পথে’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইস্পাত উৎপাদনক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের স্টিল (একেএস) ৬ ডিসেম্বর তাদের সব কর্মীকে নিয়ে ‘একেএস-একসাথে আগামীর পথে’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। দিনব্যাপী এই উৎসবমুখর ও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে দেশের প্রতিটি স্থান থেকে আবুল খায়ের স্টিলের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।

সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। নামাজ ও খাবারের বিরতির পর একেএসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সবার উদ্দেশে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দেন। বক্তব্যে কোম্পানির সাম্প্রতিক অর্জন ও মাইলফলকগুলো তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী রড একেএস টিএমটি বি৭০০ সি-আরের সফল উৎপাদন। বিশ্বের দ্রুততম রোলিং মিল স্থাপন। একেএস এবং কাউ ব্র্যান্ড কালার কোটেড স্টিলের মর্যাদাপূর্ণ সুপারব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন।

এই আলোচনায় প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং কর্মীদের সম্মিলিত সাফল্যের প্রতিচ্ছবিও উঠে আসে।

সন্ধ্যায় আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র‍্যাফেল ড্র পর্বটি উদ্‌যাপনকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কিংবদন্তি শিল্পী জেমসের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা ও লেজার শো উপস্থিত সবাইকে মাতিয়ে রাখে।

সমাপনী ভাষণে একেএস পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য ধন্যবাদ জানান হয়। এরপর নৈশভোজ ও ডিজে সেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির পরিচালনা পরিষদের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার (৮ ডসিম্বের) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম জুবায়দুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন।

সভায় এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুস সালাম, এফসিএ, এফসিএস, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম মাসুদ রহমান, স্বতন্ত্র পরিচালক মো. আবদুল জলিল, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন, শরী’আহ সুপারভাইজরি কাউন্সলিরে সদস্য সচিব প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আব্দুস সামাদ এবং কোম্পানি সেক্রেটারি মো. হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যাংকের নিট মুনাফা ছাড়া উৎসাহ বোনাস বন্ধ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি

কর ও সঞ্চিতি সংরক্ষণের পর নিট মুনাফা অর্জন না করলে কোনো ব্যাংকই আর উৎসাহ বোনাস দিতে পারবে না। পাশাপাশি মূলধন সংরক্ষণ ঘাটতি, প্রভিশন ঘাটতি বা পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকেই বোনাস দেওয়ার পথও পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়, ব্যাংকিং খাতের বর্তমান পরিস্থিতিতে আনরিয়েলাইজড বা নগদায়ন না করা আয়ের ভিত্তিতে বোনাস দেওয়া আর্থিক শৃঙ্খলা ও সুশাসনের পরিপন্থী। তাই এখন থেকে শুধু নির্ধারিত নিট মুনাফা অর্জন করতে পারলেই উৎসাহ বোনাস দেওয়ার অনুমতি পাবে ব্যাংকগুলো।

আরও বলা হয়, পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকে কোনো ধরনের উৎসাহ বোনাস দেওয়া যাবে না। রেগুলেটরি মূলধন বা প্রভিশনের ঘাটতি থাকলে বোনাস দেওয়া নিষিদ্ধ। প্রভিশন সংরক্ষণে বাড়তি সময় পাওয়া ব্যাংকগুলোও সেই সময়কাল মুনাফা হিসাবের ক্ষেত্রে দেখাতে পারবে না। বোনাস প্রদানে ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন কর্মসূচির উন্নতি ও খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে দৃশ্যমান সাফল্য বিবেচনায় নিতে হবে।

এদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের ক্ষেত্রে সরকারের বিদ্যমান নির্দেশিকা কার্যকর থাকবে, যেখানে নিট মুনাফা ছাড়া বোনাস না দেওয়ার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। তবে কোনো ব্যাংক নির্দিষ্ট সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে বিশেষ বোনাসের জন্য আবেদন করতে পারবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক ক্লিকেই ভ্যাট পরিশোধ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ০৩
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত

ভ্যাটব্যবস্থাকে পুরোপুরি ডিজিটাল ও সহজ করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক নতুন পর্যায়ে এগোচ্ছে। মাত্র একটি ক্লিকেই ভ্যাট পরিশোধের সুযোগ ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে এবং বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এটি ব্যবহারও শুরু করেছে।

এনবিআর জানিয়েছে, শিগগির এ পদ্ধতি সারা দেশে চালু করা হবে, যাতে সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভ্যাটের আওতায় আসে এবং নিবন্ধন ছাড়া আর কেউ ব্যবসা চালাতে না পারে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে জাতীয় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।

মো. আবদুর রহমান বলেন, দেশের বড় একটি অংশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এখনো ভ্যাট নিবন্ধনের বাইরে রয়েছে। আগামী বছর এমন একটি মেকানিজম চালু করা হবে, যার মাধ্যমে ভ্যাট নিবন্ধন ছাড়া ব্যবসার সুযোগ থাকবে না। বর্তমানে নিবন্ধিত ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠান ৬ লাখ ৪৪ হাজার; লক্ষ্য আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে তা ৩০ থেকে ৪০ লাখে উন্নীত করা। শুধু চলতি মাসেই ১ লাখ নতুন প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, ভ্যাট দিবসের প্রতিপাদ্য—‘সময়মতো নিবন্ধন নিব, সঠিকভাবে ভ্যাট দিব’—ধরে আগামীকাল বুধবার সারা দেশে ভ্যাট দিবস পালিত হবে। ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর চলবে ভ্যাট সপ্তাহ। তবে নীতিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় এ বছরও স্থগিত থাকছে ভ্যাট পুরস্কার।

রিটার্ন জমাদানেও বড় পরিবর্তন আসছে বলে জানান মো. আবদুর রহমান খান। গত অর্থবছরে ১৭ লাখ ই-রিটার্ন জমা পড়লেও চলতি অর্থবছরে তা ৪০ লাখে পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে জমা পড়েছে ২২ লাখ রিটার্ন। ভ্যাট আদায়েও গতি এসেছে—গত অর্থবছরে মোট রাজস্বের ৩৮ শতাংশ এসেছে ভ্যাট থেকে আর চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসেই ভ্যাট আদায় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ২২ শতাংশ।

করদাতাদের ঝামেলা কমাতে ই-রিটার্নে ব্যবহৃত ব্যাংকসংক্রান্ত চারটি তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান আবদুর রহমান।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করদাতারা মনে করেন, রাজস্ব কর্মকর্তারা এসব তথ্য দেখতে পারবেন—এটি ভুল ধারণা।

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৫৫ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে কেন—এ প্রশ্নের জবাবে আবদুর রহমান বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়ানোর বাস্তব প্রয়োজন থেকেই এ লক্ষ্য নির্ধারণ। তবে কারও ওপর হয়রানি বা অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করা হবে না; মূলত যাঁরা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেই কঠোরতা বাড়ানো হবে।

আমদানি করা মোবাইল ফোনে কর কমানোর সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এটি সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত; এককভাবে এনবিআর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনবিআরের সদস্য (মূসক নীতি) মো. আজিজুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত