Ajker Patrika

সঞ্চিত লোকসানে সোনারগাঁও টেক্সটাইলস কোম্পানির ভবিষ্যৎ শঙ্কার মুখে

  • ২৬ কোটি টাকার কোম্পানির বিপরীতে ১৪ কোটি টাকাই লোকসান
  • শ্রম আইনের লঙ্ঘন
  • সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের অভিযোগও উঠেছে
আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা 
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০: ৫২
Thumbnail image
ছবি: সংগৃহীত

সোনারগাঁও টেক্সটাইলস লিমিটেড, যা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানি, তার পরিশোধিত মূলধনের অর্ধেকের বেশি পুঞ্জীভূত লোকসানের সম্মুখীন। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ব্যাংকের সঙ্গে ঋণসংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে এবং এ বিষয়ে একটি মামলা আদালতে চলমান। পাশাপাশি, শ্রম আইন লঙ্ঘন এবং সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের মতো অভিযোগও রয়েছে। কোম্পানিটির ভবিষ্যৎ ব্যবসা পরিচালনা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নিরীক্ষক, যাঁরা লোকসান ও আর্থিক প্রতিবেদনে অসংগতিগুলো তুলে ধরেছেন। এসব তথ্য ২০২৩-২৪ সালের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, সোনারগাঁও টেক্সটাইলসের ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত পুঞ্জীভূত লোকসান দাঁড়িয়েছে ১৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এই অবস্থায় কোম্পানির ব্যবসা পুনরুদ্ধার বা টিকিয়ে রাখার সক্ষমতা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

নিরীক্ষক আরও জানিয়েছেন, সোনারগাঁও টেক্সটাইলসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। তবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সুদ মওকুফের জন্য চেষ্টা করছে, আর তা বাস্তবায়নের আগেই তারা দীর্ঘমেয়াদি ঋণের বিপরীতে সুদ হিসাব বন্ধ করে দিয়েছে, এতে করে ব্যয় কম দেখানো হচ্ছে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, কোম্পানির অবণ্টিত লভ্যাংশ পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে সোনারগাঁও টেক্সটাইলসের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ২৮ লাখ ৩৩ হাজার টাকা অবণ্টিত লভ্যাংশ রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে সর্বশেষ অর্থবছরের ১৪ লাখ ৬০ হাজার এবং ২০১৯ সালের ১৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা রয়েছে। বিষয়টি সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

শ্রম আইন, ২০০৬ অনুযায়ী, কোম্পানির মুনাফা থেকে শ্রমিকদের জন্য ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) গঠন এবং শ্রমিকদের মাঝে তা বিতরণ করার নিয়ম থাকলেও সোনারগাঁও কর্তৃপক্ষ এটি করেনি। বর্তমানে ২৪ লাখ ২৮ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়নি। এ ছাড়া কোম্পানির মজুত পণ্য সরাসরি যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে নিরীক্ষক জানিয়েছেন।

রিটেইনড আর্নিংস নেতিবাচক হলেও গত বছরের চেয়ে ইতিবাচক। গত বছর যতটুকু কমেছিল, এবার সেটা হয়নি। যদি আগের চেয়ে আরও নেগেটিভ হতো, তাহলে বিষয়টা খারাপ হতো। কিন্তু আস্তে আস্তে ভালোর দিকে যাচ্ছি আমরা। মনিরুল ইসলাম সিএফও, সোনারগাঁও টেক্সটাইলস

তবে আগের বছরের লোকসান কাটিয়ে সোনারগাঁও টেক্সটাইলস মুনাফায় ফিরেছে। ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ২৭ পয়সা, যা আগের বছরে ছিল ঋণাত্মক ২৩ পয়সা।

এদিকে মুনাফা হলেও কোম্পানির লভ্যাংশের পরিবর্তন ঘটেনি। আগের বছরের মতো এবারও বিনিয়োগকারীদের ১ শতাংশ নগদ বা শেয়ারপ্রতি ১০ পয়সা লভ্যাংশ দেবে কোম্পানিটি। লভ্যাংশের পরিমাণ সামান্য হলেও কোম্পানিটির শেয়ারের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। রোববার এক দিনেই শেয়ারের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ বা ২ টাকা ২০ পয়সা। সর্বশেষ শেয়ারটি লেনদেন হয়েছে ২৫ টাকা ১০ পয়সায়।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সোনারগাঁও টেক্সটাইলসের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মনিরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রিটেইনড আর্নিংস নেতিবাচক হলেও গত বছরের চেয়ে ইতিবাচক। গত বছর যতটুকু কমেছিল, এবার সেটা হয়নি। যদি আগের চেয়ে আরও নেগেটিভ হতো, তাহলে বিষয়টা খারাপ হতো। কিন্তু আস্তে আস্তে ভালোর দিকে যাচ্ছি আমরা।’

অবণ্টিত লভ্যাংশ, মুনাফায় শ্রমিকদের অংশ ইত্যাদি দেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে জানিয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, সেগুলোও দিয়ে দেওয়া হবে।

সিএফও মনিরুল বলেন, ব্যাংকের ঋণের টাকা শোধ করা হয়েছে। এটা সুদের টাকা মওকুফের চেষ্টা করা হচ্ছে। কথা বললে অনেকটাই কমাতে পারে। সে রকম উদ্যোগ নিচ্ছে কোম্পানি।

১৯৯৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া সোনারগাঁও টেক্সটাইলসের শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা বা পরিচালক বাদে ৫৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ মালিকানা রয়েছে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের হাতে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত