
লিখতে বসতেই কেন যেন মনে পড়ছে ছোটবেলার ‘ফার্স্ট ডে অ্যাট স্কুল’ রচনার কথা। গৎবাঁধা মুখস্থ সেই রচনা। সবচেয়ে সাহসী ছেলেটা বা মেয়েটাকেও লিখতে হতো–‘স্কুলের প্রথম দিন তার বুক দুরুদুরু কাঁপছিল।’ তবে হ্যাঁ, একসঙ্গে নতুন কোনো কিছু শুরু করার সময় বুক একটু দুরুদুরু করেই বৈকি…। সাংবাদিকতা শুরু করেছি আজ থেকে প্রায় আট বছর আগে। অনলাইন ও প্রিন্ট দুই মাধ্যমেই কাজ করেছি। কিন্তু কর্মজীবনে প্রথম যে পত্রিকার জন্মলগ্ন থেকে সংযুক্ত হয়েছি, তার নাম ‘আজকের পত্রিকা’। গোটা এক বছরে এক ঝুড়ি কথা জমেছে। না বলে উপায় কী…।
আমার সংযুক্তি
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের কোনো এক দিন আলী আজম ভাই জানালেন, ‘একটা নতুন প্রজেক্ট শুরু হতে যাচ্ছে।’ এর পর তিনি লাইফস্টাইল বিভাগে কাজ করার বিষয়ে জানালেন। আলী আজম ভাই আজকের পত্রিকার যুগ্ম বার্তা সম্পাদক। এর আগে আরেকটি দৈনিক পত্রিকায় আমরা দুজন ভিন্ন দুটি বিভাগে কাজ করেছি, কিন্তু সেভাবে কথা হয়নি কখনো। একটু ভেবেই আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলাম। আজম ভাই একদিন আজকের পত্রিকার ক্যাম্প অফিসে এসে ইন্টারভিউ দিয়ে যেতে বললেন। গেলাম। আমাকে একটি ঘরে বসিয়ে রেখে আজম ভাই যাঁকে নিয়ে ফিরলেন তাঁকে দেখে আরও চমকে উঠলাম, ‘নেলসন ভাই’! আজম ভাই আর আমি যে প্রতিষ্ঠানে ছিলাম, সেখানে নেলসন ভাইকে কিছুদিন পেয়েছি। তবে বিভাগ আলাদা বলে তাঁর সঙ্গেও একটি শব্দও আদান-প্রদান হয়নি আগে। যাই হোক, সেদিন কথা হলো। আমার চাওয়া ছিল, ‘কাজের চাপ নিতে কোনো অসুবিধে নেই। কিন্তু মানসিকভাবে ভালো থাকতে চাই। হেসে খেলে কাজ করতে চাই।’ আজম ভাই ও নেলসন ভাই আশ্বাস দিলেন, ‘এখানে ভালো পরিবেশ পাবেন। নিজের বিভাগ ছাড়াও অন্যান্য আরও অনেক পাতা বা অনলাইনে স্পেস আছে স্বাধীনভাবে লেখার।’ খুশি হয়ে গেলাম। এর পরের দিন অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।
প্রথম সেদিন
২০২১ সালের ১ মার্চ অফিশিয়ালি আমরা জয়েন করি। অফিসের নিচে পৌঁছে আজম ভাইকে ফোন দিলাম। তিনি বললেন, ‘চতুর্থতলায় সবাই আছি। লিফটের তিন-এ চলে আসেন।’ আনুষ্ঠানিকতা ও পরিচয়পর্ব কাটল বিকেল অবধি। জানলাম, আনিকা জীনাত, রিক্তা রিচি, মন্টি বৈষ্ণব ও দিতি আহমেদও লাইফস্টাইল টিমে রয়েছেন। প্রাথমিকভাবে কাজের শুরুটা এর পরদিন থেকেই হবে।
নানা রঙের দিনগুলি
শুরুর কিছুদিন কোনো বিভাগেরই নির্ধারিত ডেস্ক ছিল না। যখন গিয়ে যেখানে জায়গা পেতাম, বসে পড়তাম। তখনো জানি না লাইফস্টাইল বিভাগে লিড কে দেবেন। রোজই একটি করে স্টোরি তৈরি করে আজম ভাই আর নেলসন ভাইয়ের মেইলে পাঠিয়ে বাড়ি যাই। তখন ধীরে ধীরে জানতে পারি সহকর্মীদের একে অপরকে। কে কোন ধরনের কাজ করতে ভালোবাসে—সবকিছু। কাজ-আড্ডা সবই চলে। একটা উপলব্ধি হয়েছে সে সময়, এখানে সিনিয়র যাঁরা আছেন, তাঁরা ‘লিডার’, ‘বস’ নন।
মার্চ মাসের অর্ধেক কেটে গেলে রঞ্জু ভাই যোগ দেন; রঞ্জু চৌধুরী। তাঁর লিডে আমরা কাজ শুরু করি। ফ্যাশন, বিউটি, ফুড—এই তিনটি সেগমেন্ট ভাগ করে দেন লাইফস্টাইলে আমরা যে কজন আছি তাঁদের মধ্যে। এর বাইরে মিলেমিশে করার আরও কাজ আছে। কাজ শুরু করি। প্রথম দিকে ডামি পাতা বানাতেন গ্র্যাফিক্সের জুলিও আপা। এর আগে ডামি তৈরি ও পেজ প্ল্যানিংয়ের একটা অভিজ্ঞতা ছিল আমার। একটা প্ল্যান জমা দিই রঞ্জু ভাইকে। সেটা ধরে একটু একটু করে এগোনোর কথা বলেন তিনি। সঙ্গে আরও সংযোজন ছিল। সে সময় ইন্টারনাল সিস্টেম বা ডেটা সেন্টার চালু হয়নি। ফলে আমরা কাজ তৈরির পর ডেটা পেনড্রাইভে করে গ্রাফিক্সে নিয়ে যেতাম। জুলিও আপা পাতা বানাতেন। প্রথমে লাইফস্টাইল পাতার নাম রাখা হয় ‘আজকের জীবনধারা’। পরে সেটা পাল্টে আজকের চালচলন। এরপর ফাইনালি দাঁড়ায় ‘আজকের জীবন’ নামে। আজকের পত্রিকার তিন নম্বর পাতা এটি। প্রথম পেজ ওল্টালেই একটা ঝলমলে পাতা। মনটাই ভালো হয়ে যায়।
এক গল্পের জাদুকরের আগমন
খোঁজ খবর পাচ্ছিলাম তিনি এই যাত্রায় সঙ্গী হবেন। গল্প শুনেছি, তবে দেখিনি সরাসরি। যখন দেখলাম; মনে হলো উচ্ছল। এ মানুষটি যেন বৃষ্টির মতো ঝরেন, আর অমনি সবুজাভ লতাগুলো বেড়ে ওঠে অনায়াসে। বলছি, জাহীদ রেজা নূরের কথা। কাজের এপাশ-ওপাশ ঘর কাঁপিয়ে দুষ্টুমিতেও মেতে ওঠেন বড়। বড্ড গুছিয়ে কথা বলেন। মনে হয়, কবিতা বলছেন। কী শুদ্ধ উচ্চারণ। জাহীদ ভাইয়ের সঙ্গে ভেতরে-ভেতরে প্ল্যান করছিলাম, ‘শিশুদের জন্য কিছু না কিছু করতেই হবে।’ একটা লিখিত প্ল্যান দাঁড় করানো হয়। সে অনুযায়ী কাজ চলছে এখনো। আর সবকিছুর বাইরে যা বলার–জাহীদ রেজা নূর—এমন একজন যাকে আশ্রয় করা যায়। মন গলিয়ে বহুক্ষণ কথা বলা যায়। মানুষটাই এমন, যাঁকে আমাদের ঘর মনে হয়। মাঝে মাঝে মন খারাপ হলে, ক্লান্ত লাগলে জাহীদ ভাইয়ের সামনের চেয়ারে বসে বলি, ‘ভাইয়া একটা গল্প বলেন।’ জাহীদ ভাই গল্প শোনান, ‘সনকাকে কী করে সেই ভূতের ছানাটা ছোট্ট রবীন্দ্রনাথের বাড়ি নিয়ে যায়!’
এ কুলম্যান ও তাঁর বাহিনী
এবার মূল যুদ্ধের প্রস্তুতি। লাইফস্টাইল পাতার লিডিংয়ে যোগ দিলেন রজত কান্তি রায়। প্রথম দিকে মনে হতো, ‘উফ রজতদা কি অনেক গম্ভীর; একটু হলেই কি ঝাড়ি দেবেন?’ রোজ কাজ শেষে বিদায় নেওয়ার সময় মন্টি দি আর রিক্তা আয়রন লেডির মতো শক্ত হয়ে বসে থাকতেন দাদার সামনে। আর দাদা পাতার যোগ-বিয়োগ নিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন। এই দৃশ্য দূর থেকে দেখে হাসতাম আনিকা আর আমি। ধীরে ধীরে বোঝা গেল, রজতদা মোটেও এমন নন, যেমনটা ভেবেছিলাম। বরং কাজের বিষয়ে টিমের সদস্যদের মতামত নিয়েই পরিকল্পনা করতে পছন্দ করেন। এভাবেই আমরা রোজকার পাতা ও প্রতিটি বিশেষ সংখ্যা নিয়ে এগিয়েছি।
আজকের জীবন পাতায় শিশুদের ছোট্ট একটা স্পেস আছে। এই জায়গাটায় শিশুতোষ বইয়ের পরিচিতি থাকবে—এটা আগেই ঠিক ছিল। রজতদা এখানে শিশুর উপযোগী অ্যাপ যোগ করেন। এর পর আমি ক্র্যাফট, ফুড আর্ট, খেলা সেগমেন্টগুলো জুড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি সাদরে গ্রহণ করেন। মোটকথা বিভাগীয় প্রধান বলে কখনো নিজের চারপাশে বারান্দা জুড়ে দেননি তিনি। কাজের যেকোনো বিষয়ে যেকোনো সময়েই কথা বলতে পেরেছি। ফলে তাঁকে ‘কুলম্যান’ না বলে উপায় কী!
অপেক্ষার পালা ফুরোল
প্রায় সাড়ে তিন মাসের প্রস্তুতি শেষে পত্রিকা প্রকাশের তারিখ ঘোষণা হলো। উফ, কি যে এক উত্তেজনা তা বলে বোঝানোর মতো না। সবচেয়ে ভালো পাতা হতে হবে শুরুর দিন। তত দিনে পাতার ক্যারেক্টার দাঁড়িয়ে গেছে। এবার শুধু ছক্কা তোলার পালা। পত্রিকা প্রকাশের পাঁচ দিন আগে ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় পড়লাম। জ্বর কমলই না। ২৭ জুন, ২০২১-এ বিছানায় শুয়ে শুয়েই দেখলাম প্রকাশিত আজকের পত্রিকার প্রথম দিনের পাতা। এদিন অফিস যাওয়ার জন্য যে শাড়িটা পরব বলে ভেবেছিলাম, তা আলমারিতেই বন্দী রইল। আক্ষেপের কথা লিখে হোয়াটসঅ্যাপ করলাম জাহীদ ভাইকে। ফিরতি মেসেজে তিনি বললেন, ‘সুস্থ হয়ে তবেই ফিরিস, জীবন অনেক বড় ব্যাপার। আজ তোর লেখা পেস্টিং হচ্ছে। ফিরে এসে আবার লিখবি।’ আমি জানলাম পরদিন আমার লেখা প্রকাশ পাবে। জীবনে অনেক লিড স্টোরি করেছি। কিন্তু এমন একটা অনুভূতি হলো, যেন জীবনে প্রথম বুঝি নিজের লেখা প্রকাশের আনন্দ পাচ্ছি, আর কখনো বুঝি লিখিইনি! আসলে একটি পত্রিকার জন্ম হতে দেখা খুবই আনন্দের বিষয়। এত এত ভাবনা, পরিকল্পনা, এত এত মানুষের পরিশ্রম, সময়, প্রচেষ্টার ফল। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
যোজন-বিয়োজন
মোট সাতজন সদস্যের লাইফস্টাইল বিভাগ থেকে মন্টি বৈষ্ণব দিদিকে অনলাইন বিভাগে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়। নারী ও শিশু নিয়ে তাঁর কাজ করার অভিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতার কারণে অনলাইনে তাঁকে প্রয়োজন পড়ে। যদিও একই অফিসেই থাকব সবাই, তবুও মনে হচ্ছিল টিম থেকে বড় বোনটা চলে যাচ্ছে, অন্যরকম শূন্যতাবোধ হলো আমাদের। রজতদা, জাহীদ ভাই, নেলসন ভাই প্রত্যেকেই আমাদের আন্তঃসম্পর্কের এই অনুভূতিগুলো বুঝলেন। তবে দিন শেষে কাজের জায়গায় নিজের সেরা কাজটিই দিতে হয়। আর সেদিক থেকে এখনো আজকের জীবন পাতার স্বাস্থ্য সেগমেন্টে লেখা সংগ্রহের কিছু কাজ মন্টি দি করে যাচ্ছেন।
এদিকে আমাদের বিভাগ থেকে আমরা চেষ্টা করি সময় সুযোগ বুঝে অনলাইনকে একটু হলেও এগিয়ে রাখার। যে যেই বিভাগেই থাকি না কেন, আজকের পত্রিকা তো আমাদেরই। আগে জুলিও আপা পাতা পেস্টিংয়ের কাজটি করতেন। তিনি এখন অন্য বিভাগে পাতা তৈরির কাজ নিয়ে ব্যস্ত। তাঁর পরিবর্তে আমাদের সঙ্গে যোগ দেন মোশারফ ভাই। তাঁকে আমরা ব্রো বলে ডাকি! এরই মধ্যে রঞ্জু ভাই আমাদের ছেড়ে বিদায় নেন। তাঁর অবদান কম নয়। গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ও ছবির স্টক তিনি রেখে গেছেন। প্রায় তিন মাস হলো আনিকা জীনাতও আমাদের সঙ্গে নেই। কাজ ও যাতায়াতের সুবিধার্থে অন্য একটি হাউসে যোগ দিয়েছেন সম্প্রতি। আজকের জীবনের গেজেট ও প্রযুক্তি বিষয়ক লেখাগুলো তিনি লিখতেন। এখন তাঁর শূন্যস্থান পূরণ করেছেন অলকানন্দা রায়। আনিকা কাজ করতে করতে গান শুনতেন। আর এখন ওই চেয়ারে বসে অলকানন্দা কাজ করতে করতে গান গেয়ে ওঠেন, ‘এসো নীপবনে ছায়া বীথিতলে, এসো করো স্নান নব ধারাজলে।’
সত্যি বলছি…
আজকের পত্রিকায় জয়েন করার পর পর নানা সময়ে নানা মিটিংয়ে নির্বাহী সম্পাদক সেলিম খান বলতেন, ‘অফিসকে ঘর মনে করতে হবে।’ প্রথম প্রথম মনে হতো, অফিস ঘর হবে কেন? কিন্তু এখন ঘর থেকে বেরিয়ে অফিসে ঢোকার পর আসলেই মনে হয় না ঘর ছেড়ে এসেছি। সহকর্মীদের নিয়ে এই কর্মক্ষেত্র আমার আরেকটি পরিবার হয়ে উঠেছে। একজন অন্যজনের অসুবিধায় সমঝোতা করেই কাজ এগিয়ে নিই। কখনো ছেড়ে যেতে হলে, সত্যিই কষ্ট পাব। আরেকটা আনন্দের ব্যাপার ছিল, শুরুতে এই অফিসে আমরা সব মিলে প্রায় ১৫ জন নারী সাংবাদিক ছিলাম। এই অঙ্কটা বেশ ভালো। আর লাইফস্টাইল বিভাগে বিভাগীয় প্রধান ছাড়া বাকি সবাই নারী। অনেকে জানতে চান, এখানে নারীর কর্মপরিবেশ কেমন? এই বিষয়টা নিয়ে কর্মজীবনের শুরু থেকে কিছু শঙ্কা আমারও কাজ করেছে। কিন্তু এখানে জয়েন করার পরপরই সম্পাদক গোলাম রহমান স্যার ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কামরুল হাসান অফিসের সব নারী সদস্যদের নিয়ে একটি মিটিং করেন। সেখানে নিশ্চয়তা দেন সব সময় সুরক্ষিত থাকব আমরা। সত্যি বলতে, এখনো সুরক্ষিতবোধ করছি।
তারুণ্যের জয়গান
তারুণ্য শব্দটা উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে আরও যে শব্দগুলো মস্তিষ্কে ঘুরপাক খায় তা হলো, বিশুদ্ধতা, উচ্ছলতা, হাসি, আনন্দ, উদার আর আলোকময়—ঠিক আকাশের মতো। আজকের পত্রিকায় কর্মরতদের মধ্যে অধিকাংশই তরুণ। ফলে হই হই রই রই করতে করতেই আমরা কাজ করি রোজ। পত্রিকার শুরুর দিনগুলোয় সহকারী বার্তা সম্পাদক নেলসন ভাই বলেছিলেন, ‘আমরা হই হই করতে করতে অফিস ঢুকব, হই হই করতে করতে বের হব।’ হ্যাঁ, তাই তো করছি!

লিখতে বসতেই কেন যেন মনে পড়ছে ছোটবেলার ‘ফার্স্ট ডে অ্যাট স্কুল’ রচনার কথা। গৎবাঁধা মুখস্থ সেই রচনা। সবচেয়ে সাহসী ছেলেটা বা মেয়েটাকেও লিখতে হতো–‘স্কুলের প্রথম দিন তার বুক দুরুদুরু কাঁপছিল।’ তবে হ্যাঁ, একসঙ্গে নতুন কোনো কিছু শুরু করার সময় বুক একটু দুরুদুরু করেই বৈকি…। সাংবাদিকতা শুরু করেছি আজ থেকে প্রায় আট বছর আগে। অনলাইন ও প্রিন্ট দুই মাধ্যমেই কাজ করেছি। কিন্তু কর্মজীবনে প্রথম যে পত্রিকার জন্মলগ্ন থেকে সংযুক্ত হয়েছি, তার নাম ‘আজকের পত্রিকা’। গোটা এক বছরে এক ঝুড়ি কথা জমেছে। না বলে উপায় কী…।
আমার সংযুক্তি
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের কোনো এক দিন আলী আজম ভাই জানালেন, ‘একটা নতুন প্রজেক্ট শুরু হতে যাচ্ছে।’ এর পর তিনি লাইফস্টাইল বিভাগে কাজ করার বিষয়ে জানালেন। আলী আজম ভাই আজকের পত্রিকার যুগ্ম বার্তা সম্পাদক। এর আগে আরেকটি দৈনিক পত্রিকায় আমরা দুজন ভিন্ন দুটি বিভাগে কাজ করেছি, কিন্তু সেভাবে কথা হয়নি কখনো। একটু ভেবেই আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলাম। আজম ভাই একদিন আজকের পত্রিকার ক্যাম্প অফিসে এসে ইন্টারভিউ দিয়ে যেতে বললেন। গেলাম। আমাকে একটি ঘরে বসিয়ে রেখে আজম ভাই যাঁকে নিয়ে ফিরলেন তাঁকে দেখে আরও চমকে উঠলাম, ‘নেলসন ভাই’! আজম ভাই আর আমি যে প্রতিষ্ঠানে ছিলাম, সেখানে নেলসন ভাইকে কিছুদিন পেয়েছি। তবে বিভাগ আলাদা বলে তাঁর সঙ্গেও একটি শব্দও আদান-প্রদান হয়নি আগে। যাই হোক, সেদিন কথা হলো। আমার চাওয়া ছিল, ‘কাজের চাপ নিতে কোনো অসুবিধে নেই। কিন্তু মানসিকভাবে ভালো থাকতে চাই। হেসে খেলে কাজ করতে চাই।’ আজম ভাই ও নেলসন ভাই আশ্বাস দিলেন, ‘এখানে ভালো পরিবেশ পাবেন। নিজের বিভাগ ছাড়াও অন্যান্য আরও অনেক পাতা বা অনলাইনে স্পেস আছে স্বাধীনভাবে লেখার।’ খুশি হয়ে গেলাম। এর পরের দিন অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।
প্রথম সেদিন
২০২১ সালের ১ মার্চ অফিশিয়ালি আমরা জয়েন করি। অফিসের নিচে পৌঁছে আজম ভাইকে ফোন দিলাম। তিনি বললেন, ‘চতুর্থতলায় সবাই আছি। লিফটের তিন-এ চলে আসেন।’ আনুষ্ঠানিকতা ও পরিচয়পর্ব কাটল বিকেল অবধি। জানলাম, আনিকা জীনাত, রিক্তা রিচি, মন্টি বৈষ্ণব ও দিতি আহমেদও লাইফস্টাইল টিমে রয়েছেন। প্রাথমিকভাবে কাজের শুরুটা এর পরদিন থেকেই হবে।
নানা রঙের দিনগুলি
শুরুর কিছুদিন কোনো বিভাগেরই নির্ধারিত ডেস্ক ছিল না। যখন গিয়ে যেখানে জায়গা পেতাম, বসে পড়তাম। তখনো জানি না লাইফস্টাইল বিভাগে লিড কে দেবেন। রোজই একটি করে স্টোরি তৈরি করে আজম ভাই আর নেলসন ভাইয়ের মেইলে পাঠিয়ে বাড়ি যাই। তখন ধীরে ধীরে জানতে পারি সহকর্মীদের একে অপরকে। কে কোন ধরনের কাজ করতে ভালোবাসে—সবকিছু। কাজ-আড্ডা সবই চলে। একটা উপলব্ধি হয়েছে সে সময়, এখানে সিনিয়র যাঁরা আছেন, তাঁরা ‘লিডার’, ‘বস’ নন।
মার্চ মাসের অর্ধেক কেটে গেলে রঞ্জু ভাই যোগ দেন; রঞ্জু চৌধুরী। তাঁর লিডে আমরা কাজ শুরু করি। ফ্যাশন, বিউটি, ফুড—এই তিনটি সেগমেন্ট ভাগ করে দেন লাইফস্টাইলে আমরা যে কজন আছি তাঁদের মধ্যে। এর বাইরে মিলেমিশে করার আরও কাজ আছে। কাজ শুরু করি। প্রথম দিকে ডামি পাতা বানাতেন গ্র্যাফিক্সের জুলিও আপা। এর আগে ডামি তৈরি ও পেজ প্ল্যানিংয়ের একটা অভিজ্ঞতা ছিল আমার। একটা প্ল্যান জমা দিই রঞ্জু ভাইকে। সেটা ধরে একটু একটু করে এগোনোর কথা বলেন তিনি। সঙ্গে আরও সংযোজন ছিল। সে সময় ইন্টারনাল সিস্টেম বা ডেটা সেন্টার চালু হয়নি। ফলে আমরা কাজ তৈরির পর ডেটা পেনড্রাইভে করে গ্রাফিক্সে নিয়ে যেতাম। জুলিও আপা পাতা বানাতেন। প্রথমে লাইফস্টাইল পাতার নাম রাখা হয় ‘আজকের জীবনধারা’। পরে সেটা পাল্টে আজকের চালচলন। এরপর ফাইনালি দাঁড়ায় ‘আজকের জীবন’ নামে। আজকের পত্রিকার তিন নম্বর পাতা এটি। প্রথম পেজ ওল্টালেই একটা ঝলমলে পাতা। মনটাই ভালো হয়ে যায়।
এক গল্পের জাদুকরের আগমন
খোঁজ খবর পাচ্ছিলাম তিনি এই যাত্রায় সঙ্গী হবেন। গল্প শুনেছি, তবে দেখিনি সরাসরি। যখন দেখলাম; মনে হলো উচ্ছল। এ মানুষটি যেন বৃষ্টির মতো ঝরেন, আর অমনি সবুজাভ লতাগুলো বেড়ে ওঠে অনায়াসে। বলছি, জাহীদ রেজা নূরের কথা। কাজের এপাশ-ওপাশ ঘর কাঁপিয়ে দুষ্টুমিতেও মেতে ওঠেন বড়। বড্ড গুছিয়ে কথা বলেন। মনে হয়, কবিতা বলছেন। কী শুদ্ধ উচ্চারণ। জাহীদ ভাইয়ের সঙ্গে ভেতরে-ভেতরে প্ল্যান করছিলাম, ‘শিশুদের জন্য কিছু না কিছু করতেই হবে।’ একটা লিখিত প্ল্যান দাঁড় করানো হয়। সে অনুযায়ী কাজ চলছে এখনো। আর সবকিছুর বাইরে যা বলার–জাহীদ রেজা নূর—এমন একজন যাকে আশ্রয় করা যায়। মন গলিয়ে বহুক্ষণ কথা বলা যায়। মানুষটাই এমন, যাঁকে আমাদের ঘর মনে হয়। মাঝে মাঝে মন খারাপ হলে, ক্লান্ত লাগলে জাহীদ ভাইয়ের সামনের চেয়ারে বসে বলি, ‘ভাইয়া একটা গল্প বলেন।’ জাহীদ ভাই গল্প শোনান, ‘সনকাকে কী করে সেই ভূতের ছানাটা ছোট্ট রবীন্দ্রনাথের বাড়ি নিয়ে যায়!’
এ কুলম্যান ও তাঁর বাহিনী
এবার মূল যুদ্ধের প্রস্তুতি। লাইফস্টাইল পাতার লিডিংয়ে যোগ দিলেন রজত কান্তি রায়। প্রথম দিকে মনে হতো, ‘উফ রজতদা কি অনেক গম্ভীর; একটু হলেই কি ঝাড়ি দেবেন?’ রোজ কাজ শেষে বিদায় নেওয়ার সময় মন্টি দি আর রিক্তা আয়রন লেডির মতো শক্ত হয়ে বসে থাকতেন দাদার সামনে। আর দাদা পাতার যোগ-বিয়োগ নিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন। এই দৃশ্য দূর থেকে দেখে হাসতাম আনিকা আর আমি। ধীরে ধীরে বোঝা গেল, রজতদা মোটেও এমন নন, যেমনটা ভেবেছিলাম। বরং কাজের বিষয়ে টিমের সদস্যদের মতামত নিয়েই পরিকল্পনা করতে পছন্দ করেন। এভাবেই আমরা রোজকার পাতা ও প্রতিটি বিশেষ সংখ্যা নিয়ে এগিয়েছি।
আজকের জীবন পাতায় শিশুদের ছোট্ট একটা স্পেস আছে। এই জায়গাটায় শিশুতোষ বইয়ের পরিচিতি থাকবে—এটা আগেই ঠিক ছিল। রজতদা এখানে শিশুর উপযোগী অ্যাপ যোগ করেন। এর পর আমি ক্র্যাফট, ফুড আর্ট, খেলা সেগমেন্টগুলো জুড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি সাদরে গ্রহণ করেন। মোটকথা বিভাগীয় প্রধান বলে কখনো নিজের চারপাশে বারান্দা জুড়ে দেননি তিনি। কাজের যেকোনো বিষয়ে যেকোনো সময়েই কথা বলতে পেরেছি। ফলে তাঁকে ‘কুলম্যান’ না বলে উপায় কী!
অপেক্ষার পালা ফুরোল
প্রায় সাড়ে তিন মাসের প্রস্তুতি শেষে পত্রিকা প্রকাশের তারিখ ঘোষণা হলো। উফ, কি যে এক উত্তেজনা তা বলে বোঝানোর মতো না। সবচেয়ে ভালো পাতা হতে হবে শুরুর দিন। তত দিনে পাতার ক্যারেক্টার দাঁড়িয়ে গেছে। এবার শুধু ছক্কা তোলার পালা। পত্রিকা প্রকাশের পাঁচ দিন আগে ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় পড়লাম। জ্বর কমলই না। ২৭ জুন, ২০২১-এ বিছানায় শুয়ে শুয়েই দেখলাম প্রকাশিত আজকের পত্রিকার প্রথম দিনের পাতা। এদিন অফিস যাওয়ার জন্য যে শাড়িটা পরব বলে ভেবেছিলাম, তা আলমারিতেই বন্দী রইল। আক্ষেপের কথা লিখে হোয়াটসঅ্যাপ করলাম জাহীদ ভাইকে। ফিরতি মেসেজে তিনি বললেন, ‘সুস্থ হয়ে তবেই ফিরিস, জীবন অনেক বড় ব্যাপার। আজ তোর লেখা পেস্টিং হচ্ছে। ফিরে এসে আবার লিখবি।’ আমি জানলাম পরদিন আমার লেখা প্রকাশ পাবে। জীবনে অনেক লিড স্টোরি করেছি। কিন্তু এমন একটা অনুভূতি হলো, যেন জীবনে প্রথম বুঝি নিজের লেখা প্রকাশের আনন্দ পাচ্ছি, আর কখনো বুঝি লিখিইনি! আসলে একটি পত্রিকার জন্ম হতে দেখা খুবই আনন্দের বিষয়। এত এত ভাবনা, পরিকল্পনা, এত এত মানুষের পরিশ্রম, সময়, প্রচেষ্টার ফল। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
যোজন-বিয়োজন
মোট সাতজন সদস্যের লাইফস্টাইল বিভাগ থেকে মন্টি বৈষ্ণব দিদিকে অনলাইন বিভাগে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়। নারী ও শিশু নিয়ে তাঁর কাজ করার অভিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতার কারণে অনলাইনে তাঁকে প্রয়োজন পড়ে। যদিও একই অফিসেই থাকব সবাই, তবুও মনে হচ্ছিল টিম থেকে বড় বোনটা চলে যাচ্ছে, অন্যরকম শূন্যতাবোধ হলো আমাদের। রজতদা, জাহীদ ভাই, নেলসন ভাই প্রত্যেকেই আমাদের আন্তঃসম্পর্কের এই অনুভূতিগুলো বুঝলেন। তবে দিন শেষে কাজের জায়গায় নিজের সেরা কাজটিই দিতে হয়। আর সেদিক থেকে এখনো আজকের জীবন পাতার স্বাস্থ্য সেগমেন্টে লেখা সংগ্রহের কিছু কাজ মন্টি দি করে যাচ্ছেন।
এদিকে আমাদের বিভাগ থেকে আমরা চেষ্টা করি সময় সুযোগ বুঝে অনলাইনকে একটু হলেও এগিয়ে রাখার। যে যেই বিভাগেই থাকি না কেন, আজকের পত্রিকা তো আমাদেরই। আগে জুলিও আপা পাতা পেস্টিংয়ের কাজটি করতেন। তিনি এখন অন্য বিভাগে পাতা তৈরির কাজ নিয়ে ব্যস্ত। তাঁর পরিবর্তে আমাদের সঙ্গে যোগ দেন মোশারফ ভাই। তাঁকে আমরা ব্রো বলে ডাকি! এরই মধ্যে রঞ্জু ভাই আমাদের ছেড়ে বিদায় নেন। তাঁর অবদান কম নয়। গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ও ছবির স্টক তিনি রেখে গেছেন। প্রায় তিন মাস হলো আনিকা জীনাতও আমাদের সঙ্গে নেই। কাজ ও যাতায়াতের সুবিধার্থে অন্য একটি হাউসে যোগ দিয়েছেন সম্প্রতি। আজকের জীবনের গেজেট ও প্রযুক্তি বিষয়ক লেখাগুলো তিনি লিখতেন। এখন তাঁর শূন্যস্থান পূরণ করেছেন অলকানন্দা রায়। আনিকা কাজ করতে করতে গান শুনতেন। আর এখন ওই চেয়ারে বসে অলকানন্দা কাজ করতে করতে গান গেয়ে ওঠেন, ‘এসো নীপবনে ছায়া বীথিতলে, এসো করো স্নান নব ধারাজলে।’
সত্যি বলছি…
আজকের পত্রিকায় জয়েন করার পর পর নানা সময়ে নানা মিটিংয়ে নির্বাহী সম্পাদক সেলিম খান বলতেন, ‘অফিসকে ঘর মনে করতে হবে।’ প্রথম প্রথম মনে হতো, অফিস ঘর হবে কেন? কিন্তু এখন ঘর থেকে বেরিয়ে অফিসে ঢোকার পর আসলেই মনে হয় না ঘর ছেড়ে এসেছি। সহকর্মীদের নিয়ে এই কর্মক্ষেত্র আমার আরেকটি পরিবার হয়ে উঠেছে। একজন অন্যজনের অসুবিধায় সমঝোতা করেই কাজ এগিয়ে নিই। কখনো ছেড়ে যেতে হলে, সত্যিই কষ্ট পাব। আরেকটা আনন্দের ব্যাপার ছিল, শুরুতে এই অফিসে আমরা সব মিলে প্রায় ১৫ জন নারী সাংবাদিক ছিলাম। এই অঙ্কটা বেশ ভালো। আর লাইফস্টাইল বিভাগে বিভাগীয় প্রধান ছাড়া বাকি সবাই নারী। অনেকে জানতে চান, এখানে নারীর কর্মপরিবেশ কেমন? এই বিষয়টা নিয়ে কর্মজীবনের শুরু থেকে কিছু শঙ্কা আমারও কাজ করেছে। কিন্তু এখানে জয়েন করার পরপরই সম্পাদক গোলাম রহমান স্যার ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কামরুল হাসান অফিসের সব নারী সদস্যদের নিয়ে একটি মিটিং করেন। সেখানে নিশ্চয়তা দেন সব সময় সুরক্ষিত থাকব আমরা। সত্যি বলতে, এখনো সুরক্ষিতবোধ করছি।
তারুণ্যের জয়গান
তারুণ্য শব্দটা উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে আরও যে শব্দগুলো মস্তিষ্কে ঘুরপাক খায় তা হলো, বিশুদ্ধতা, উচ্ছলতা, হাসি, আনন্দ, উদার আর আলোকময়—ঠিক আকাশের মতো। আজকের পত্রিকায় কর্মরতদের মধ্যে অধিকাংশই তরুণ। ফলে হই হই রই রই করতে করতেই আমরা কাজ করি রোজ। পত্রিকার শুরুর দিনগুলোয় সহকারী বার্তা সম্পাদক নেলসন ভাই বলেছিলেন, ‘আমরা হই হই করতে করতে অফিস ঢুকব, হই হই করতে করতে বের হব।’ হ্যাঁ, তাই তো করছি!

লিখতে বসতেই কেন যেন মনে পড়ছে ছোটবেলার ‘ফার্স্ট ডে অ্যাট স্কুল’ রচনার কথা। গৎবাঁধা মুখস্থ সেই রচনা। সবচেয়ে সাহসী ছেলেটা বা মেয়েটাকেও লিখতে হতো–‘স্কুলের প্রথম দিন তার বুক দুরুদুরু কাঁপছিল।’ তবে হ্যাঁ, একসঙ্গে নতুন কোনো কিছু শুরু করার সময় বুক একটু দুরুদুরু করেই বৈকি…। সাংবাদিকতা শুরু করেছি আজ থেকে প্রায় আট বছর আগে। অনলাইন ও প্রিন্ট দুই মাধ্যমেই কাজ করেছি। কিন্তু কর্মজীবনে প্রথম যে পত্রিকার জন্মলগ্ন থেকে সংযুক্ত হয়েছি, তার নাম ‘আজকের পত্রিকা’। গোটা এক বছরে এক ঝুড়ি কথা জমেছে। না বলে উপায় কী…।
আমার সংযুক্তি
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের কোনো এক দিন আলী আজম ভাই জানালেন, ‘একটা নতুন প্রজেক্ট শুরু হতে যাচ্ছে।’ এর পর তিনি লাইফস্টাইল বিভাগে কাজ করার বিষয়ে জানালেন। আলী আজম ভাই আজকের পত্রিকার যুগ্ম বার্তা সম্পাদক। এর আগে আরেকটি দৈনিক পত্রিকায় আমরা দুজন ভিন্ন দুটি বিভাগে কাজ করেছি, কিন্তু সেভাবে কথা হয়নি কখনো। একটু ভেবেই আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলাম। আজম ভাই একদিন আজকের পত্রিকার ক্যাম্প অফিসে এসে ইন্টারভিউ দিয়ে যেতে বললেন। গেলাম। আমাকে একটি ঘরে বসিয়ে রেখে আজম ভাই যাঁকে নিয়ে ফিরলেন তাঁকে দেখে আরও চমকে উঠলাম, ‘নেলসন ভাই’! আজম ভাই আর আমি যে প্রতিষ্ঠানে ছিলাম, সেখানে নেলসন ভাইকে কিছুদিন পেয়েছি। তবে বিভাগ আলাদা বলে তাঁর সঙ্গেও একটি শব্দও আদান-প্রদান হয়নি আগে। যাই হোক, সেদিন কথা হলো। আমার চাওয়া ছিল, ‘কাজের চাপ নিতে কোনো অসুবিধে নেই। কিন্তু মানসিকভাবে ভালো থাকতে চাই। হেসে খেলে কাজ করতে চাই।’ আজম ভাই ও নেলসন ভাই আশ্বাস দিলেন, ‘এখানে ভালো পরিবেশ পাবেন। নিজের বিভাগ ছাড়াও অন্যান্য আরও অনেক পাতা বা অনলাইনে স্পেস আছে স্বাধীনভাবে লেখার।’ খুশি হয়ে গেলাম। এর পরের দিন অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।
প্রথম সেদিন
২০২১ সালের ১ মার্চ অফিশিয়ালি আমরা জয়েন করি। অফিসের নিচে পৌঁছে আজম ভাইকে ফোন দিলাম। তিনি বললেন, ‘চতুর্থতলায় সবাই আছি। লিফটের তিন-এ চলে আসেন।’ আনুষ্ঠানিকতা ও পরিচয়পর্ব কাটল বিকেল অবধি। জানলাম, আনিকা জীনাত, রিক্তা রিচি, মন্টি বৈষ্ণব ও দিতি আহমেদও লাইফস্টাইল টিমে রয়েছেন। প্রাথমিকভাবে কাজের শুরুটা এর পরদিন থেকেই হবে।
নানা রঙের দিনগুলি
শুরুর কিছুদিন কোনো বিভাগেরই নির্ধারিত ডেস্ক ছিল না। যখন গিয়ে যেখানে জায়গা পেতাম, বসে পড়তাম। তখনো জানি না লাইফস্টাইল বিভাগে লিড কে দেবেন। রোজই একটি করে স্টোরি তৈরি করে আজম ভাই আর নেলসন ভাইয়ের মেইলে পাঠিয়ে বাড়ি যাই। তখন ধীরে ধীরে জানতে পারি সহকর্মীদের একে অপরকে। কে কোন ধরনের কাজ করতে ভালোবাসে—সবকিছু। কাজ-আড্ডা সবই চলে। একটা উপলব্ধি হয়েছে সে সময়, এখানে সিনিয়র যাঁরা আছেন, তাঁরা ‘লিডার’, ‘বস’ নন।
মার্চ মাসের অর্ধেক কেটে গেলে রঞ্জু ভাই যোগ দেন; রঞ্জু চৌধুরী। তাঁর লিডে আমরা কাজ শুরু করি। ফ্যাশন, বিউটি, ফুড—এই তিনটি সেগমেন্ট ভাগ করে দেন লাইফস্টাইলে আমরা যে কজন আছি তাঁদের মধ্যে। এর বাইরে মিলেমিশে করার আরও কাজ আছে। কাজ শুরু করি। প্রথম দিকে ডামি পাতা বানাতেন গ্র্যাফিক্সের জুলিও আপা। এর আগে ডামি তৈরি ও পেজ প্ল্যানিংয়ের একটা অভিজ্ঞতা ছিল আমার। একটা প্ল্যান জমা দিই রঞ্জু ভাইকে। সেটা ধরে একটু একটু করে এগোনোর কথা বলেন তিনি। সঙ্গে আরও সংযোজন ছিল। সে সময় ইন্টারনাল সিস্টেম বা ডেটা সেন্টার চালু হয়নি। ফলে আমরা কাজ তৈরির পর ডেটা পেনড্রাইভে করে গ্রাফিক্সে নিয়ে যেতাম। জুলিও আপা পাতা বানাতেন। প্রথমে লাইফস্টাইল পাতার নাম রাখা হয় ‘আজকের জীবনধারা’। পরে সেটা পাল্টে আজকের চালচলন। এরপর ফাইনালি দাঁড়ায় ‘আজকের জীবন’ নামে। আজকের পত্রিকার তিন নম্বর পাতা এটি। প্রথম পেজ ওল্টালেই একটা ঝলমলে পাতা। মনটাই ভালো হয়ে যায়।
এক গল্পের জাদুকরের আগমন
খোঁজ খবর পাচ্ছিলাম তিনি এই যাত্রায় সঙ্গী হবেন। গল্প শুনেছি, তবে দেখিনি সরাসরি। যখন দেখলাম; মনে হলো উচ্ছল। এ মানুষটি যেন বৃষ্টির মতো ঝরেন, আর অমনি সবুজাভ লতাগুলো বেড়ে ওঠে অনায়াসে। বলছি, জাহীদ রেজা নূরের কথা। কাজের এপাশ-ওপাশ ঘর কাঁপিয়ে দুষ্টুমিতেও মেতে ওঠেন বড়। বড্ড গুছিয়ে কথা বলেন। মনে হয়, কবিতা বলছেন। কী শুদ্ধ উচ্চারণ। জাহীদ ভাইয়ের সঙ্গে ভেতরে-ভেতরে প্ল্যান করছিলাম, ‘শিশুদের জন্য কিছু না কিছু করতেই হবে।’ একটা লিখিত প্ল্যান দাঁড় করানো হয়। সে অনুযায়ী কাজ চলছে এখনো। আর সবকিছুর বাইরে যা বলার–জাহীদ রেজা নূর—এমন একজন যাকে আশ্রয় করা যায়। মন গলিয়ে বহুক্ষণ কথা বলা যায়। মানুষটাই এমন, যাঁকে আমাদের ঘর মনে হয়। মাঝে মাঝে মন খারাপ হলে, ক্লান্ত লাগলে জাহীদ ভাইয়ের সামনের চেয়ারে বসে বলি, ‘ভাইয়া একটা গল্প বলেন।’ জাহীদ ভাই গল্প শোনান, ‘সনকাকে কী করে সেই ভূতের ছানাটা ছোট্ট রবীন্দ্রনাথের বাড়ি নিয়ে যায়!’
এ কুলম্যান ও তাঁর বাহিনী
এবার মূল যুদ্ধের প্রস্তুতি। লাইফস্টাইল পাতার লিডিংয়ে যোগ দিলেন রজত কান্তি রায়। প্রথম দিকে মনে হতো, ‘উফ রজতদা কি অনেক গম্ভীর; একটু হলেই কি ঝাড়ি দেবেন?’ রোজ কাজ শেষে বিদায় নেওয়ার সময় মন্টি দি আর রিক্তা আয়রন লেডির মতো শক্ত হয়ে বসে থাকতেন দাদার সামনে। আর দাদা পাতার যোগ-বিয়োগ নিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন। এই দৃশ্য দূর থেকে দেখে হাসতাম আনিকা আর আমি। ধীরে ধীরে বোঝা গেল, রজতদা মোটেও এমন নন, যেমনটা ভেবেছিলাম। বরং কাজের বিষয়ে টিমের সদস্যদের মতামত নিয়েই পরিকল্পনা করতে পছন্দ করেন। এভাবেই আমরা রোজকার পাতা ও প্রতিটি বিশেষ সংখ্যা নিয়ে এগিয়েছি।
আজকের জীবন পাতায় শিশুদের ছোট্ট একটা স্পেস আছে। এই জায়গাটায় শিশুতোষ বইয়ের পরিচিতি থাকবে—এটা আগেই ঠিক ছিল। রজতদা এখানে শিশুর উপযোগী অ্যাপ যোগ করেন। এর পর আমি ক্র্যাফট, ফুড আর্ট, খেলা সেগমেন্টগুলো জুড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি সাদরে গ্রহণ করেন। মোটকথা বিভাগীয় প্রধান বলে কখনো নিজের চারপাশে বারান্দা জুড়ে দেননি তিনি। কাজের যেকোনো বিষয়ে যেকোনো সময়েই কথা বলতে পেরেছি। ফলে তাঁকে ‘কুলম্যান’ না বলে উপায় কী!
অপেক্ষার পালা ফুরোল
প্রায় সাড়ে তিন মাসের প্রস্তুতি শেষে পত্রিকা প্রকাশের তারিখ ঘোষণা হলো। উফ, কি যে এক উত্তেজনা তা বলে বোঝানোর মতো না। সবচেয়ে ভালো পাতা হতে হবে শুরুর দিন। তত দিনে পাতার ক্যারেক্টার দাঁড়িয়ে গেছে। এবার শুধু ছক্কা তোলার পালা। পত্রিকা প্রকাশের পাঁচ দিন আগে ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় পড়লাম। জ্বর কমলই না। ২৭ জুন, ২০২১-এ বিছানায় শুয়ে শুয়েই দেখলাম প্রকাশিত আজকের পত্রিকার প্রথম দিনের পাতা। এদিন অফিস যাওয়ার জন্য যে শাড়িটা পরব বলে ভেবেছিলাম, তা আলমারিতেই বন্দী রইল। আক্ষেপের কথা লিখে হোয়াটসঅ্যাপ করলাম জাহীদ ভাইকে। ফিরতি মেসেজে তিনি বললেন, ‘সুস্থ হয়ে তবেই ফিরিস, জীবন অনেক বড় ব্যাপার। আজ তোর লেখা পেস্টিং হচ্ছে। ফিরে এসে আবার লিখবি।’ আমি জানলাম পরদিন আমার লেখা প্রকাশ পাবে। জীবনে অনেক লিড স্টোরি করেছি। কিন্তু এমন একটা অনুভূতি হলো, যেন জীবনে প্রথম বুঝি নিজের লেখা প্রকাশের আনন্দ পাচ্ছি, আর কখনো বুঝি লিখিইনি! আসলে একটি পত্রিকার জন্ম হতে দেখা খুবই আনন্দের বিষয়। এত এত ভাবনা, পরিকল্পনা, এত এত মানুষের পরিশ্রম, সময়, প্রচেষ্টার ফল। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
যোজন-বিয়োজন
মোট সাতজন সদস্যের লাইফস্টাইল বিভাগ থেকে মন্টি বৈষ্ণব দিদিকে অনলাইন বিভাগে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়। নারী ও শিশু নিয়ে তাঁর কাজ করার অভিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতার কারণে অনলাইনে তাঁকে প্রয়োজন পড়ে। যদিও একই অফিসেই থাকব সবাই, তবুও মনে হচ্ছিল টিম থেকে বড় বোনটা চলে যাচ্ছে, অন্যরকম শূন্যতাবোধ হলো আমাদের। রজতদা, জাহীদ ভাই, নেলসন ভাই প্রত্যেকেই আমাদের আন্তঃসম্পর্কের এই অনুভূতিগুলো বুঝলেন। তবে দিন শেষে কাজের জায়গায় নিজের সেরা কাজটিই দিতে হয়। আর সেদিক থেকে এখনো আজকের জীবন পাতার স্বাস্থ্য সেগমেন্টে লেখা সংগ্রহের কিছু কাজ মন্টি দি করে যাচ্ছেন।
এদিকে আমাদের বিভাগ থেকে আমরা চেষ্টা করি সময় সুযোগ বুঝে অনলাইনকে একটু হলেও এগিয়ে রাখার। যে যেই বিভাগেই থাকি না কেন, আজকের পত্রিকা তো আমাদেরই। আগে জুলিও আপা পাতা পেস্টিংয়ের কাজটি করতেন। তিনি এখন অন্য বিভাগে পাতা তৈরির কাজ নিয়ে ব্যস্ত। তাঁর পরিবর্তে আমাদের সঙ্গে যোগ দেন মোশারফ ভাই। তাঁকে আমরা ব্রো বলে ডাকি! এরই মধ্যে রঞ্জু ভাই আমাদের ছেড়ে বিদায় নেন। তাঁর অবদান কম নয়। গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ও ছবির স্টক তিনি রেখে গেছেন। প্রায় তিন মাস হলো আনিকা জীনাতও আমাদের সঙ্গে নেই। কাজ ও যাতায়াতের সুবিধার্থে অন্য একটি হাউসে যোগ দিয়েছেন সম্প্রতি। আজকের জীবনের গেজেট ও প্রযুক্তি বিষয়ক লেখাগুলো তিনি লিখতেন। এখন তাঁর শূন্যস্থান পূরণ করেছেন অলকানন্দা রায়। আনিকা কাজ করতে করতে গান শুনতেন। আর এখন ওই চেয়ারে বসে অলকানন্দা কাজ করতে করতে গান গেয়ে ওঠেন, ‘এসো নীপবনে ছায়া বীথিতলে, এসো করো স্নান নব ধারাজলে।’
সত্যি বলছি…
আজকের পত্রিকায় জয়েন করার পর পর নানা সময়ে নানা মিটিংয়ে নির্বাহী সম্পাদক সেলিম খান বলতেন, ‘অফিসকে ঘর মনে করতে হবে।’ প্রথম প্রথম মনে হতো, অফিস ঘর হবে কেন? কিন্তু এখন ঘর থেকে বেরিয়ে অফিসে ঢোকার পর আসলেই মনে হয় না ঘর ছেড়ে এসেছি। সহকর্মীদের নিয়ে এই কর্মক্ষেত্র আমার আরেকটি পরিবার হয়ে উঠেছে। একজন অন্যজনের অসুবিধায় সমঝোতা করেই কাজ এগিয়ে নিই। কখনো ছেড়ে যেতে হলে, সত্যিই কষ্ট পাব। আরেকটা আনন্দের ব্যাপার ছিল, শুরুতে এই অফিসে আমরা সব মিলে প্রায় ১৫ জন নারী সাংবাদিক ছিলাম। এই অঙ্কটা বেশ ভালো। আর লাইফস্টাইল বিভাগে বিভাগীয় প্রধান ছাড়া বাকি সবাই নারী। অনেকে জানতে চান, এখানে নারীর কর্মপরিবেশ কেমন? এই বিষয়টা নিয়ে কর্মজীবনের শুরু থেকে কিছু শঙ্কা আমারও কাজ করেছে। কিন্তু এখানে জয়েন করার পরপরই সম্পাদক গোলাম রহমান স্যার ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কামরুল হাসান অফিসের সব নারী সদস্যদের নিয়ে একটি মিটিং করেন। সেখানে নিশ্চয়তা দেন সব সময় সুরক্ষিত থাকব আমরা। সত্যি বলতে, এখনো সুরক্ষিতবোধ করছি।
তারুণ্যের জয়গান
তারুণ্য শব্দটা উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে আরও যে শব্দগুলো মস্তিষ্কে ঘুরপাক খায় তা হলো, বিশুদ্ধতা, উচ্ছলতা, হাসি, আনন্দ, উদার আর আলোকময়—ঠিক আকাশের মতো। আজকের পত্রিকায় কর্মরতদের মধ্যে অধিকাংশই তরুণ। ফলে হই হই রই রই করতে করতেই আমরা কাজ করি রোজ। পত্রিকার শুরুর দিনগুলোয় সহকারী বার্তা সম্পাদক নেলসন ভাই বলেছিলেন, ‘আমরা হই হই করতে করতে অফিস ঢুকব, হই হই করতে করতে বের হব।’ হ্যাঁ, তাই তো করছি!

লিখতে বসতেই কেন যেন মনে পড়ছে ছোটবেলার ‘ফার্স্ট ডে অ্যাট স্কুল’ রচনার কথা। গৎবাঁধা মুখস্থ সেই রচনা। সবচেয়ে সাহসী ছেলেটা বা মেয়েটাকেও লিখতে হতো–‘স্কুলের প্রথম দিন তার বুক দুরুদুরু কাঁপছিল।’ তবে হ্যাঁ, একসঙ্গে নতুন কোনো কিছু শুরু করার সময় বুক একটু দুরুদুরু করেই বৈকি…। সাংবাদিকতা শুরু করেছি আজ থেকে প্রায় আট বছর আগে। অনলাইন ও প্রিন্ট দুই মাধ্যমেই কাজ করেছি। কিন্তু কর্মজীবনে প্রথম যে পত্রিকার জন্মলগ্ন থেকে সংযুক্ত হয়েছি, তার নাম ‘আজকের পত্রিকা’। গোটা এক বছরে এক ঝুড়ি কথা জমেছে। না বলে উপায় কী…।
আমার সংযুক্তি
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের কোনো এক দিন আলী আজম ভাই জানালেন, ‘একটা নতুন প্রজেক্ট শুরু হতে যাচ্ছে।’ এর পর তিনি লাইফস্টাইল বিভাগে কাজ করার বিষয়ে জানালেন। আলী আজম ভাই আজকের পত্রিকার যুগ্ম বার্তা সম্পাদক। এর আগে আরেকটি দৈনিক পত্রিকায় আমরা দুজন ভিন্ন দুটি বিভাগে কাজ করেছি, কিন্তু সেভাবে কথা হয়নি কখনো। একটু ভেবেই আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলাম। আজম ভাই একদিন আজকের পত্রিকার ক্যাম্প অফিসে এসে ইন্টারভিউ দিয়ে যেতে বললেন। গেলাম। আমাকে একটি ঘরে বসিয়ে রেখে আজম ভাই যাঁকে নিয়ে ফিরলেন তাঁকে দেখে আরও চমকে উঠলাম, ‘নেলসন ভাই’! আজম ভাই আর আমি যে প্রতিষ্ঠানে ছিলাম, সেখানে নেলসন ভাইকে কিছুদিন পেয়েছি। তবে বিভাগ আলাদা বলে তাঁর সঙ্গেও একটি শব্দও আদান-প্রদান হয়নি আগে। যাই হোক, সেদিন কথা হলো। আমার চাওয়া ছিল, ‘কাজের চাপ নিতে কোনো অসুবিধে নেই। কিন্তু মানসিকভাবে ভালো থাকতে চাই। হেসে খেলে কাজ করতে চাই।’ আজম ভাই ও নেলসন ভাই আশ্বাস দিলেন, ‘এখানে ভালো পরিবেশ পাবেন। নিজের বিভাগ ছাড়াও অন্যান্য আরও অনেক পাতা বা অনলাইনে স্পেস আছে স্বাধীনভাবে লেখার।’ খুশি হয়ে গেলাম। এর পরের দিন অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।
প্রথম সেদিন
২০২১ সালের ১ মার্চ অফিশিয়ালি আমরা জয়েন করি। অফিসের নিচে পৌঁছে আজম ভাইকে ফোন দিলাম। তিনি বললেন, ‘চতুর্থতলায় সবাই আছি। লিফটের তিন-এ চলে আসেন।’ আনুষ্ঠানিকতা ও পরিচয়পর্ব কাটল বিকেল অবধি। জানলাম, আনিকা জীনাত, রিক্তা রিচি, মন্টি বৈষ্ণব ও দিতি আহমেদও লাইফস্টাইল টিমে রয়েছেন। প্রাথমিকভাবে কাজের শুরুটা এর পরদিন থেকেই হবে।
নানা রঙের দিনগুলি
শুরুর কিছুদিন কোনো বিভাগেরই নির্ধারিত ডেস্ক ছিল না। যখন গিয়ে যেখানে জায়গা পেতাম, বসে পড়তাম। তখনো জানি না লাইফস্টাইল বিভাগে লিড কে দেবেন। রোজই একটি করে স্টোরি তৈরি করে আজম ভাই আর নেলসন ভাইয়ের মেইলে পাঠিয়ে বাড়ি যাই। তখন ধীরে ধীরে জানতে পারি সহকর্মীদের একে অপরকে। কে কোন ধরনের কাজ করতে ভালোবাসে—সবকিছু। কাজ-আড্ডা সবই চলে। একটা উপলব্ধি হয়েছে সে সময়, এখানে সিনিয়র যাঁরা আছেন, তাঁরা ‘লিডার’, ‘বস’ নন।
মার্চ মাসের অর্ধেক কেটে গেলে রঞ্জু ভাই যোগ দেন; রঞ্জু চৌধুরী। তাঁর লিডে আমরা কাজ শুরু করি। ফ্যাশন, বিউটি, ফুড—এই তিনটি সেগমেন্ট ভাগ করে দেন লাইফস্টাইলে আমরা যে কজন আছি তাঁদের মধ্যে। এর বাইরে মিলেমিশে করার আরও কাজ আছে। কাজ শুরু করি। প্রথম দিকে ডামি পাতা বানাতেন গ্র্যাফিক্সের জুলিও আপা। এর আগে ডামি তৈরি ও পেজ প্ল্যানিংয়ের একটা অভিজ্ঞতা ছিল আমার। একটা প্ল্যান জমা দিই রঞ্জু ভাইকে। সেটা ধরে একটু একটু করে এগোনোর কথা বলেন তিনি। সঙ্গে আরও সংযোজন ছিল। সে সময় ইন্টারনাল সিস্টেম বা ডেটা সেন্টার চালু হয়নি। ফলে আমরা কাজ তৈরির পর ডেটা পেনড্রাইভে করে গ্রাফিক্সে নিয়ে যেতাম। জুলিও আপা পাতা বানাতেন। প্রথমে লাইফস্টাইল পাতার নাম রাখা হয় ‘আজকের জীবনধারা’। পরে সেটা পাল্টে আজকের চালচলন। এরপর ফাইনালি দাঁড়ায় ‘আজকের জীবন’ নামে। আজকের পত্রিকার তিন নম্বর পাতা এটি। প্রথম পেজ ওল্টালেই একটা ঝলমলে পাতা। মনটাই ভালো হয়ে যায়।
এক গল্পের জাদুকরের আগমন
খোঁজ খবর পাচ্ছিলাম তিনি এই যাত্রায় সঙ্গী হবেন। গল্প শুনেছি, তবে দেখিনি সরাসরি। যখন দেখলাম; মনে হলো উচ্ছল। এ মানুষটি যেন বৃষ্টির মতো ঝরেন, আর অমনি সবুজাভ লতাগুলো বেড়ে ওঠে অনায়াসে। বলছি, জাহীদ রেজা নূরের কথা। কাজের এপাশ-ওপাশ ঘর কাঁপিয়ে দুষ্টুমিতেও মেতে ওঠেন বড়। বড্ড গুছিয়ে কথা বলেন। মনে হয়, কবিতা বলছেন। কী শুদ্ধ উচ্চারণ। জাহীদ ভাইয়ের সঙ্গে ভেতরে-ভেতরে প্ল্যান করছিলাম, ‘শিশুদের জন্য কিছু না কিছু করতেই হবে।’ একটা লিখিত প্ল্যান দাঁড় করানো হয়। সে অনুযায়ী কাজ চলছে এখনো। আর সবকিছুর বাইরে যা বলার–জাহীদ রেজা নূর—এমন একজন যাকে আশ্রয় করা যায়। মন গলিয়ে বহুক্ষণ কথা বলা যায়। মানুষটাই এমন, যাঁকে আমাদের ঘর মনে হয়। মাঝে মাঝে মন খারাপ হলে, ক্লান্ত লাগলে জাহীদ ভাইয়ের সামনের চেয়ারে বসে বলি, ‘ভাইয়া একটা গল্প বলেন।’ জাহীদ ভাই গল্প শোনান, ‘সনকাকে কী করে সেই ভূতের ছানাটা ছোট্ট রবীন্দ্রনাথের বাড়ি নিয়ে যায়!’
এ কুলম্যান ও তাঁর বাহিনী
এবার মূল যুদ্ধের প্রস্তুতি। লাইফস্টাইল পাতার লিডিংয়ে যোগ দিলেন রজত কান্তি রায়। প্রথম দিকে মনে হতো, ‘উফ রজতদা কি অনেক গম্ভীর; একটু হলেই কি ঝাড়ি দেবেন?’ রোজ কাজ শেষে বিদায় নেওয়ার সময় মন্টি দি আর রিক্তা আয়রন লেডির মতো শক্ত হয়ে বসে থাকতেন দাদার সামনে। আর দাদা পাতার যোগ-বিয়োগ নিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন। এই দৃশ্য দূর থেকে দেখে হাসতাম আনিকা আর আমি। ধীরে ধীরে বোঝা গেল, রজতদা মোটেও এমন নন, যেমনটা ভেবেছিলাম। বরং কাজের বিষয়ে টিমের সদস্যদের মতামত নিয়েই পরিকল্পনা করতে পছন্দ করেন। এভাবেই আমরা রোজকার পাতা ও প্রতিটি বিশেষ সংখ্যা নিয়ে এগিয়েছি।
আজকের জীবন পাতায় শিশুদের ছোট্ট একটা স্পেস আছে। এই জায়গাটায় শিশুতোষ বইয়ের পরিচিতি থাকবে—এটা আগেই ঠিক ছিল। রজতদা এখানে শিশুর উপযোগী অ্যাপ যোগ করেন। এর পর আমি ক্র্যাফট, ফুড আর্ট, খেলা সেগমেন্টগুলো জুড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি সাদরে গ্রহণ করেন। মোটকথা বিভাগীয় প্রধান বলে কখনো নিজের চারপাশে বারান্দা জুড়ে দেননি তিনি। কাজের যেকোনো বিষয়ে যেকোনো সময়েই কথা বলতে পেরেছি। ফলে তাঁকে ‘কুলম্যান’ না বলে উপায় কী!
অপেক্ষার পালা ফুরোল
প্রায় সাড়ে তিন মাসের প্রস্তুতি শেষে পত্রিকা প্রকাশের তারিখ ঘোষণা হলো। উফ, কি যে এক উত্তেজনা তা বলে বোঝানোর মতো না। সবচেয়ে ভালো পাতা হতে হবে শুরুর দিন। তত দিনে পাতার ক্যারেক্টার দাঁড়িয়ে গেছে। এবার শুধু ছক্কা তোলার পালা। পত্রিকা প্রকাশের পাঁচ দিন আগে ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় পড়লাম। জ্বর কমলই না। ২৭ জুন, ২০২১-এ বিছানায় শুয়ে শুয়েই দেখলাম প্রকাশিত আজকের পত্রিকার প্রথম দিনের পাতা। এদিন অফিস যাওয়ার জন্য যে শাড়িটা পরব বলে ভেবেছিলাম, তা আলমারিতেই বন্দী রইল। আক্ষেপের কথা লিখে হোয়াটসঅ্যাপ করলাম জাহীদ ভাইকে। ফিরতি মেসেজে তিনি বললেন, ‘সুস্থ হয়ে তবেই ফিরিস, জীবন অনেক বড় ব্যাপার। আজ তোর লেখা পেস্টিং হচ্ছে। ফিরে এসে আবার লিখবি।’ আমি জানলাম পরদিন আমার লেখা প্রকাশ পাবে। জীবনে অনেক লিড স্টোরি করেছি। কিন্তু এমন একটা অনুভূতি হলো, যেন জীবনে প্রথম বুঝি নিজের লেখা প্রকাশের আনন্দ পাচ্ছি, আর কখনো বুঝি লিখিইনি! আসলে একটি পত্রিকার জন্ম হতে দেখা খুবই আনন্দের বিষয়। এত এত ভাবনা, পরিকল্পনা, এত এত মানুষের পরিশ্রম, সময়, প্রচেষ্টার ফল। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
যোজন-বিয়োজন
মোট সাতজন সদস্যের লাইফস্টাইল বিভাগ থেকে মন্টি বৈষ্ণব দিদিকে অনলাইন বিভাগে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়। নারী ও শিশু নিয়ে তাঁর কাজ করার অভিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতার কারণে অনলাইনে তাঁকে প্রয়োজন পড়ে। যদিও একই অফিসেই থাকব সবাই, তবুও মনে হচ্ছিল টিম থেকে বড় বোনটা চলে যাচ্ছে, অন্যরকম শূন্যতাবোধ হলো আমাদের। রজতদা, জাহীদ ভাই, নেলসন ভাই প্রত্যেকেই আমাদের আন্তঃসম্পর্কের এই অনুভূতিগুলো বুঝলেন। তবে দিন শেষে কাজের জায়গায় নিজের সেরা কাজটিই দিতে হয়। আর সেদিক থেকে এখনো আজকের জীবন পাতার স্বাস্থ্য সেগমেন্টে লেখা সংগ্রহের কিছু কাজ মন্টি দি করে যাচ্ছেন।
এদিকে আমাদের বিভাগ থেকে আমরা চেষ্টা করি সময় সুযোগ বুঝে অনলাইনকে একটু হলেও এগিয়ে রাখার। যে যেই বিভাগেই থাকি না কেন, আজকের পত্রিকা তো আমাদেরই। আগে জুলিও আপা পাতা পেস্টিংয়ের কাজটি করতেন। তিনি এখন অন্য বিভাগে পাতা তৈরির কাজ নিয়ে ব্যস্ত। তাঁর পরিবর্তে আমাদের সঙ্গে যোগ দেন মোশারফ ভাই। তাঁকে আমরা ব্রো বলে ডাকি! এরই মধ্যে রঞ্জু ভাই আমাদের ছেড়ে বিদায় নেন। তাঁর অবদান কম নয়। গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ও ছবির স্টক তিনি রেখে গেছেন। প্রায় তিন মাস হলো আনিকা জীনাতও আমাদের সঙ্গে নেই। কাজ ও যাতায়াতের সুবিধার্থে অন্য একটি হাউসে যোগ দিয়েছেন সম্প্রতি। আজকের জীবনের গেজেট ও প্রযুক্তি বিষয়ক লেখাগুলো তিনি লিখতেন। এখন তাঁর শূন্যস্থান পূরণ করেছেন অলকানন্দা রায়। আনিকা কাজ করতে করতে গান শুনতেন। আর এখন ওই চেয়ারে বসে অলকানন্দা কাজ করতে করতে গান গেয়ে ওঠেন, ‘এসো নীপবনে ছায়া বীথিতলে, এসো করো স্নান নব ধারাজলে।’
সত্যি বলছি…
আজকের পত্রিকায় জয়েন করার পর পর নানা সময়ে নানা মিটিংয়ে নির্বাহী সম্পাদক সেলিম খান বলতেন, ‘অফিসকে ঘর মনে করতে হবে।’ প্রথম প্রথম মনে হতো, অফিস ঘর হবে কেন? কিন্তু এখন ঘর থেকে বেরিয়ে অফিসে ঢোকার পর আসলেই মনে হয় না ঘর ছেড়ে এসেছি। সহকর্মীদের নিয়ে এই কর্মক্ষেত্র আমার আরেকটি পরিবার হয়ে উঠেছে। একজন অন্যজনের অসুবিধায় সমঝোতা করেই কাজ এগিয়ে নিই। কখনো ছেড়ে যেতে হলে, সত্যিই কষ্ট পাব। আরেকটা আনন্দের ব্যাপার ছিল, শুরুতে এই অফিসে আমরা সব মিলে প্রায় ১৫ জন নারী সাংবাদিক ছিলাম। এই অঙ্কটা বেশ ভালো। আর লাইফস্টাইল বিভাগে বিভাগীয় প্রধান ছাড়া বাকি সবাই নারী। অনেকে জানতে চান, এখানে নারীর কর্মপরিবেশ কেমন? এই বিষয়টা নিয়ে কর্মজীবনের শুরু থেকে কিছু শঙ্কা আমারও কাজ করেছে। কিন্তু এখানে জয়েন করার পরপরই সম্পাদক গোলাম রহমান স্যার ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কামরুল হাসান অফিসের সব নারী সদস্যদের নিয়ে একটি মিটিং করেন। সেখানে নিশ্চয়তা দেন সব সময় সুরক্ষিত থাকব আমরা। সত্যি বলতে, এখনো সুরক্ষিতবোধ করছি।
তারুণ্যের জয়গান
তারুণ্য শব্দটা উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে আরও যে শব্দগুলো মস্তিষ্কে ঘুরপাক খায় তা হলো, বিশুদ্ধতা, উচ্ছলতা, হাসি, আনন্দ, উদার আর আলোকময়—ঠিক আকাশের মতো। আজকের পত্রিকায় কর্মরতদের মধ্যে অধিকাংশই তরুণ। ফলে হই হই রই রই করতে করতেই আমরা কাজ করি রোজ। পত্রিকার শুরুর দিনগুলোয় সহকারী বার্তা সম্পাদক নেলসন ভাই বলেছিলেন, ‘আমরা হই হই করতে করতে অফিস ঢুকব, হই হই করতে করতে বের হব।’ হ্যাঁ, তাই তো করছি!

উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।
নাদিম নেওয়াজ

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

তারুণ্য শব্দটা উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে আরও যে শব্দগুলো মস্তিষ্কে ঘুরপাক খায় তা হলো, বিশুদ্ধতা, উচ্ছলতা, হাসি, আনন্দ, উদার আর আলোকময়—ঠিক আকাশের মতো। আজকের পত্রিকায় কর্মরতদের মধ্যে অধিকাংশই তরুণ। ফলে হই হই রই রই করতে করতেই আমরা কাজ করি রোজ।
২৭ জুন ২০২২
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।
আসাদুজ্জামান নূর

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

তারুণ্য শব্দটা উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে আরও যে শব্দগুলো মস্তিষ্কে ঘুরপাক খায় তা হলো, বিশুদ্ধতা, উচ্ছলতা, হাসি, আনন্দ, উদার আর আলোকময়—ঠিক আকাশের মতো। আজকের পত্রিকায় কর্মরতদের মধ্যে অধিকাংশই তরুণ। ফলে হই হই রই রই করতে করতেই আমরা কাজ করি রোজ।
২৭ জুন ২০২২
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম।
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

তারুণ্য শব্দটা উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে আরও যে শব্দগুলো মস্তিষ্কে ঘুরপাক খায় তা হলো, বিশুদ্ধতা, উচ্ছলতা, হাসি, আনন্দ, উদার আর আলোকময়—ঠিক আকাশের মতো। আজকের পত্রিকায় কর্মরতদের মধ্যে অধিকাংশই তরুণ। ফলে হই হই রই রই করতে করতেই আমরা কাজ করি রোজ।
২৭ জুন ২০২২
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

তারুণ্য শব্দটা উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে আরও যে শব্দগুলো মস্তিষ্কে ঘুরপাক খায় তা হলো, বিশুদ্ধতা, উচ্ছলতা, হাসি, আনন্দ, উদার আর আলোকময়—ঠিক আকাশের মতো। আজকের পত্রিকায় কর্মরতদের মধ্যে অধিকাংশই তরুণ। ফলে হই হই রই রই করতে করতেই আমরা কাজ করি রোজ।
২৭ জুন ২০২২
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫