আশরাফ-উল-আলম, ঢাকা

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের প্রতিবাদে পুরো পাকিস্তান আমলেই আন্দোলন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৮ সাল থেকে পূর্ব পাকিস্তানে মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। সেই সময় থেকেই শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন। পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনামলে তিনি প্রায় চৌদ্দ বছর কারাভোগ করেন। ১৮বার তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে বিখ্যাত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। এই মামলার নানা তথ্য বিভিন্ন উৎস থেকে জানা গেলেও এর নথিপত্র কোথায় আছে, তা এখনো অজানা।
বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যেসব মামলা করা হয়, তার মধ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বিখ্যাত। তিনিসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে এই মামলা করেছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার। বঙ্গবন্ধুকে এক নম্বর আসামি করা হয় এতে। বাকি ৩৪ জন ছিলেন তৎকালীন সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী এবং সরকারি কর্মকর্তা।
বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, ১৯৬৭ সালে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের পর তিনি আটক থাকা অবস্থায় ১৯৬৮ সালের ৬ জানুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১টার সময় আগের মামলা থেকে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। জেলগেট থেকেই আবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে হেফাজতে নেওয়া হয়। অন্য ৩৪ জনকেও এর আগে ও পরে গ্রেপ্তার করা হয়। শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের মুখে ক্যান্টনমেন্টেই একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। কিন্তু ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের সময় প্রচণ্ড চাপের মুখে ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবকে মুক্তি দেওয়া হয়।
ঘটনাবহুল এই মামলায় ১১ জন সাক্ষী, চারজন রাজসাক্ষী ছিলেন। তিনজন বিচারক বিচারকাজ পরিচালনা করেছিলেন। বিখ্যাত মামলা হওয়ায় এই মামলার তথ্য বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেলেও মূল মামলা বা মামলা-সংক্রান্ত নথিপত্র কোথায় আছে, তা অজানা।
এই মামলায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল শেখ মুজিবের আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য, চারজন রাজসাক্ষীর বক্তব্য। রাজসাক্ষীরা শেষ মুহূর্তে শেখ মুজিবকে সমর্থন করে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মামলা হওয়ায় এর নথি সংরক্ষণে থাকার কথা।
শুধু এই মামলাই নয় বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা গেছে, শেখ মুজিব এবং তখনকার সময়ে আন্দোলনরত বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের নামে অনেক মামলা হয়েছিল। কোনো মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধুর নামে একের পর এক মামলা হচ্ছিল। কারণে-অকারণে শুধু হয়রানি করার জন্য এসব মামলা করা হতো। এ রকম শুধু ঢাকায় ৩৬টি মামলা হয়েছিল বলে কথিত আছে। শেখ মুজিবুর রহমান একসময় বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। পর্যায়ক্রমে তিনি হয়ে ওঠেন জাতির জনক। তাঁর বিরুদ্ধে করা সব মামলাই তাই ঐতিহাসিক। সব মামলার নথিই সংরক্ষিত রাখা তাই ঐতিহাসিক দাবি। কিন্তু কোনো মামলাই সংরক্ষিত নেই। ঢাকার আদালতের কোনো রেকর্ডরুমেই এসব মামলার অস্তিত্ব এখন নেই।
সবগুলো মামলার সন্ধান পাওয়া না গেলেও কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে পুরোনো পত্রিকা ঘেঁটে। সেখান থেকে দেখা গেছে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা হয়েছিল রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে। একটি প্রতারণার মামলাও করা হয়েছিল। বাকি মামলাগুলো ছিল পূর্ব পাকিস্তান জননিরাপত্তা আইনে করা। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ এবং পুলিশকে মারধর করার অভিযোগেও কয়েকটি মামলা হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—রাষ্ট্রদ্রোহের তিনটি মামলা। ১৯৬৪ সালের মার্চ মাসে পল্টন ময়দানে শেখ মুজিব বক্তব্য দেন। পাকিস্তান সরকারের বিভিন্ন দমন-পীড়নের প্রতিবাদে ওই সভায় তিনি জনসাধারণকে উসকানি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করে ১৯৬৪ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকার পুলিশ সুপার অতিরিক্ত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মামলা বাতিলের দাবিতে হাইকোর্টে আবেদন জানানোর পরও হাইকোর্ট ওই আবেদন খারিজ করেন। বিশিষ্ট আইনজীবী বি বি রায় চৌধুরী শেখ মুজিবের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন। ১৯৬৬ সালের ২৯ জানুয়ারি এই মামলায় দুটি ধারায় শেখ মুজিবকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আরেকটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছিল ১৯৬৩ সালে। ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর পল্টন ময়দানে এক সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ায় শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত কমিশনারের আদালতে ওই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়। এর পর ১৯৬৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি জুলুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে পল্টনের জনসভায় বক্তব্য দেওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহের আরেকটি মামলা করা হয়। তৎকালীন ঢাকার প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট এম এ মালেকের আদালতে এই মামলার শুনানি হয়। এর পর ১৯৬৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার আউটার স্টেডিয়ামে এক বক্তৃতাকে কেন্দ্র করে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান জননিরাপত্তা আইনের ৭-৩ ধারায় ১৯৬৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর আরেকটি মামলা হয়।
এ ছাড়া ১৯৬৫ সালে সাভারে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের গাড়িতে ‘পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও’ শিরোনামে প্রচারপত্র নিক্ষেপের অপরাধে শেখ মুজিবুর রহমান, শাহ আজিজুর রহমানসহ সাতজনের বিরুদ্ধে জননিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। তৎকালীন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল হকের আদালতে এই মামলা চলে। ১৯৬৬ সালের ২৯ জানুয়ারি জননিরাপত্তা আইনে করা আরেকটি মামলায় শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। পরদিন দৈনিক সংবাদে এ সম্পর্কিত খবর ছাপা হয়।
১৯৫০ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের আগমন উপলক্ষে দুর্ভিক্ষ বিরোধী মিছিল হয়। ওই মিছিলে শেখ মুজিব নেতৃত্ব দেন। সেখান থেকে তাঁকে আটক করে তাঁর বিরুদ্ধে জননিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। ওই মামলায় দুই বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে। ১৯৫৮ সালের ১১ অক্টোবর সামরিক শাসনের প্রতিবাদে মিছিল করে আবারও আটক হন শেখ মুজিব। তখনো জননিরাপত্তা আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। ঢাকার প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ওই মামলার বিচার চলে।
সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনি কারাগারে থাকা অবস্থায় ১৯৫৯ সালের ১০ ডিসেম্বর শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে একটি প্রতারণা মামলা হয়। ওই মামলায় মহিউদ্দিন ও আজিজুল ইসলাম খন্দকার নামের আরও দুই ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, মোমেনশাহীর (বর্তমানে ময়মনসিংহ) ইব্রাহিম আলী এবং অন্য ছয় ব্যক্তির কাছ থেকে সরকারি চাকরির আশ্বাস দিয়ে অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন শেখ মুজিব। এই মামলার বিচার করেন ঢাকার প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট কে এম রহমান। তিনি অবশ্য শেখ মুজিবকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন।
১৯৪৮ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অপরাধে শেখ মুজিবকে ১১ মার্চ বন্দী করা হয়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে খাজা নাজিম উদ্দিনের সরকারের সমঝোতা চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ মার্চ তিনি মুক্তি পান। এতে তাঁকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় আটক করা হয়েছিল।
ঢাকার আরমানিটোলা ময়দানে ১৯৪৯ সালের ১১ অক্টোবর নবগঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জনসভায় মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, আতাউর রহমান খান, শামসুল হক ও শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ বক্তৃতা করেন। জনসভা শেষে মিছিলের নেতৃত্ব দেন শেখ মুজিবুর রহমান। ওই মিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় ১৭ অক্টোবর ঢাকার কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। বেআইনি সমাবেশ ও পুলিশকে আহত করার অভিযোগে দণ্ডবিধির ১৪৭ ও ৩২৫ ধারায় এবং জননিরাপত্তা আইনের ৭(৩) ধারায় মামলা হয়। শেখ মুজিব, মৌলভি শামসুল হকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে একই বছর ২৬ ডিসেম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। ডিসেম্বরে শেষ সপ্তাহে শেখ মুজিবকে ওইই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। ওই মামলাও ঢাকার প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন ছিল।
বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে হওয়া এসব মামলার খবরগুলো তৎকালীন বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই খবরগুলো থেকেই মামলাগুলোর বিষয়ে এসব তথ্য জানা যায়। গত কয়েক দিনে এসব মামলার খোঁজ নিতে ঢাকার আদালতের নথি সংরক্ষণ রুম বা রেকর্ড রুমে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু এসব মামলার হদিস কেউ দিতে পারেননি। ঢাকার জেলা প্রশাসকের দপ্তরের নথি সংরক্ষণাগার বা রেকর্ডরুমে যোগাযোগ করা হলে রেকর্ড কিপার মাসুদুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই রেকর্ডরুমে মামলা-সংক্রান্ত কোনো নথিপত্র নেই। আগে যেসব নথিপত্র ছিল, তার কিছু জেলা জজ আদালতের রেকর্ডরুমে এবং কিছু জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রেকর্ডরুমে পাঠানো হয়েছিল বলে শুনেছি।’
জেলা জজ আদালতের রেকর্ডরুমের দায়িত্বে নিয়োজিত রেকর্ড কিপার আতাউর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল, তিনি এই প্রথম তা শুনলেন। তিনি বলেন, ‘ওই আমলে আমরা চাকরি করিনি। তখনকার কেউ হয়তো বেঁচে নেই। এই রেকর্ডরুমে এই ধরনের কোনো মামলার নথি আছে বলে আমার জানা নেই।’
জেলা জজ পদমর্যাদার এক বিচারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকার ৩৬টি মামলা করেছিলেন বলে তিনি জানেন। এই মামলাগুলো একসময় জেলা জজ আদালতের রেকর্ডরুমে ছিল। কিন্তু নথিগুলোর অস্তিত্ব এখন আর নেই। তিনি মনে করেন, ঐতিহাসিক কারণে এই মামলার নথিগুলো সংরক্ষণে রাখা উচিত ছিল। কীভাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি পাকিস্তান সরকার নির্যাতন চালিয়েছিল, তার নমুনা এই মামলাগুলো।
এসব মামলার নথি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঢাকার সিনিয়র আইনজীবী সৈয়দ আহমেদ গাজী। আদালত অঙ্গনে প্রতি ১২ বছর পর পুরোনো নথি ধ্বংসের একটা প্রথা চালু আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতি ১২ বছর পর পর পুরোনো নথি ধ্বংস করার একটা প্রথা চালু আছে। বঙ্গবন্ধুর নামে দায়ের করা মামলা অবশ্যই ইতিহাসের অংশ। এসব মামলা যদি ধ্বংস করা হয়ে থাকে, সেটা ঠিক হয়নি। ধ্বংস হয়ে না থাকলে তা খুঁজে বের করে সংরক্ষণ করা উচিত।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জাতির পিতা। তাঁর জীবনের প্রতিটি ঘটনাই ঐতিহাসিক গুরুত্ব রাখে উল্লেখ করে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আইনজীবী কাজী নজীবুল্লাহ হিরু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের জাতির জনক। তাঁর জীবনের প্রতিটি ঘটনাই ইতিহাস। তাঁর বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের করা মামলাগুলোর প্রতিটিই ইতিহাসের অংশ। আর এই ইতিহাস সংরক্ষণের দায়িত্ব সবার।’

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের প্রতিবাদে পুরো পাকিস্তান আমলেই আন্দোলন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৮ সাল থেকে পূর্ব পাকিস্তানে মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। সেই সময় থেকেই শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন। পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনামলে তিনি প্রায় চৌদ্দ বছর কারাভোগ করেন। ১৮বার তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে বিখ্যাত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। এই মামলার নানা তথ্য বিভিন্ন উৎস থেকে জানা গেলেও এর নথিপত্র কোথায় আছে, তা এখনো অজানা।
বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যেসব মামলা করা হয়, তার মধ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বিখ্যাত। তিনিসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে এই মামলা করেছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার। বঙ্গবন্ধুকে এক নম্বর আসামি করা হয় এতে। বাকি ৩৪ জন ছিলেন তৎকালীন সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী এবং সরকারি কর্মকর্তা।
বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, ১৯৬৭ সালে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের পর তিনি আটক থাকা অবস্থায় ১৯৬৮ সালের ৬ জানুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১টার সময় আগের মামলা থেকে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। জেলগেট থেকেই আবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে হেফাজতে নেওয়া হয়। অন্য ৩৪ জনকেও এর আগে ও পরে গ্রেপ্তার করা হয়। শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের মুখে ক্যান্টনমেন্টেই একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। কিন্তু ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের সময় প্রচণ্ড চাপের মুখে ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবকে মুক্তি দেওয়া হয়।
ঘটনাবহুল এই মামলায় ১১ জন সাক্ষী, চারজন রাজসাক্ষী ছিলেন। তিনজন বিচারক বিচারকাজ পরিচালনা করেছিলেন। বিখ্যাত মামলা হওয়ায় এই মামলার তথ্য বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেলেও মূল মামলা বা মামলা-সংক্রান্ত নথিপত্র কোথায় আছে, তা অজানা।
এই মামলায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল শেখ মুজিবের আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য, চারজন রাজসাক্ষীর বক্তব্য। রাজসাক্ষীরা শেষ মুহূর্তে শেখ মুজিবকে সমর্থন করে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মামলা হওয়ায় এর নথি সংরক্ষণে থাকার কথা।
শুধু এই মামলাই নয় বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা গেছে, শেখ মুজিব এবং তখনকার সময়ে আন্দোলনরত বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের নামে অনেক মামলা হয়েছিল। কোনো মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধুর নামে একের পর এক মামলা হচ্ছিল। কারণে-অকারণে শুধু হয়রানি করার জন্য এসব মামলা করা হতো। এ রকম শুধু ঢাকায় ৩৬টি মামলা হয়েছিল বলে কথিত আছে। শেখ মুজিবুর রহমান একসময় বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। পর্যায়ক্রমে তিনি হয়ে ওঠেন জাতির জনক। তাঁর বিরুদ্ধে করা সব মামলাই তাই ঐতিহাসিক। সব মামলার নথিই সংরক্ষিত রাখা তাই ঐতিহাসিক দাবি। কিন্তু কোনো মামলাই সংরক্ষিত নেই। ঢাকার আদালতের কোনো রেকর্ডরুমেই এসব মামলার অস্তিত্ব এখন নেই।
সবগুলো মামলার সন্ধান পাওয়া না গেলেও কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে পুরোনো পত্রিকা ঘেঁটে। সেখান থেকে দেখা গেছে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা হয়েছিল রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে। একটি প্রতারণার মামলাও করা হয়েছিল। বাকি মামলাগুলো ছিল পূর্ব পাকিস্তান জননিরাপত্তা আইনে করা। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ এবং পুলিশকে মারধর করার অভিযোগেও কয়েকটি মামলা হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—রাষ্ট্রদ্রোহের তিনটি মামলা। ১৯৬৪ সালের মার্চ মাসে পল্টন ময়দানে শেখ মুজিব বক্তব্য দেন। পাকিস্তান সরকারের বিভিন্ন দমন-পীড়নের প্রতিবাদে ওই সভায় তিনি জনসাধারণকে উসকানি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করে ১৯৬৪ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকার পুলিশ সুপার অতিরিক্ত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মামলা বাতিলের দাবিতে হাইকোর্টে আবেদন জানানোর পরও হাইকোর্ট ওই আবেদন খারিজ করেন। বিশিষ্ট আইনজীবী বি বি রায় চৌধুরী শেখ মুজিবের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন। ১৯৬৬ সালের ২৯ জানুয়ারি এই মামলায় দুটি ধারায় শেখ মুজিবকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আরেকটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছিল ১৯৬৩ সালে। ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর পল্টন ময়দানে এক সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ায় শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত কমিশনারের আদালতে ওই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়। এর পর ১৯৬৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি জুলুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে পল্টনের জনসভায় বক্তব্য দেওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহের আরেকটি মামলা করা হয়। তৎকালীন ঢাকার প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট এম এ মালেকের আদালতে এই মামলার শুনানি হয়। এর পর ১৯৬৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার আউটার স্টেডিয়ামে এক বক্তৃতাকে কেন্দ্র করে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান জননিরাপত্তা আইনের ৭-৩ ধারায় ১৯৬৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর আরেকটি মামলা হয়।
এ ছাড়া ১৯৬৫ সালে সাভারে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের গাড়িতে ‘পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও’ শিরোনামে প্রচারপত্র নিক্ষেপের অপরাধে শেখ মুজিবুর রহমান, শাহ আজিজুর রহমানসহ সাতজনের বিরুদ্ধে জননিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। তৎকালীন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল হকের আদালতে এই মামলা চলে। ১৯৬৬ সালের ২৯ জানুয়ারি জননিরাপত্তা আইনে করা আরেকটি মামলায় শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। পরদিন দৈনিক সংবাদে এ সম্পর্কিত খবর ছাপা হয়।
১৯৫০ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের আগমন উপলক্ষে দুর্ভিক্ষ বিরোধী মিছিল হয়। ওই মিছিলে শেখ মুজিব নেতৃত্ব দেন। সেখান থেকে তাঁকে আটক করে তাঁর বিরুদ্ধে জননিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। ওই মামলায় দুই বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে। ১৯৫৮ সালের ১১ অক্টোবর সামরিক শাসনের প্রতিবাদে মিছিল করে আবারও আটক হন শেখ মুজিব। তখনো জননিরাপত্তা আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। ঢাকার প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ওই মামলার বিচার চলে।
সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনি কারাগারে থাকা অবস্থায় ১৯৫৯ সালের ১০ ডিসেম্বর শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে একটি প্রতারণা মামলা হয়। ওই মামলায় মহিউদ্দিন ও আজিজুল ইসলাম খন্দকার নামের আরও দুই ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, মোমেনশাহীর (বর্তমানে ময়মনসিংহ) ইব্রাহিম আলী এবং অন্য ছয় ব্যক্তির কাছ থেকে সরকারি চাকরির আশ্বাস দিয়ে অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন শেখ মুজিব। এই মামলার বিচার করেন ঢাকার প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট কে এম রহমান। তিনি অবশ্য শেখ মুজিবকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন।
১৯৪৮ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অপরাধে শেখ মুজিবকে ১১ মার্চ বন্দী করা হয়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে খাজা নাজিম উদ্দিনের সরকারের সমঝোতা চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ মার্চ তিনি মুক্তি পান। এতে তাঁকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় আটক করা হয়েছিল।
ঢাকার আরমানিটোলা ময়দানে ১৯৪৯ সালের ১১ অক্টোবর নবগঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জনসভায় মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, আতাউর রহমান খান, শামসুল হক ও শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ বক্তৃতা করেন। জনসভা শেষে মিছিলের নেতৃত্ব দেন শেখ মুজিবুর রহমান। ওই মিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় ১৭ অক্টোবর ঢাকার কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। বেআইনি সমাবেশ ও পুলিশকে আহত করার অভিযোগে দণ্ডবিধির ১৪৭ ও ৩২৫ ধারায় এবং জননিরাপত্তা আইনের ৭(৩) ধারায় মামলা হয়। শেখ মুজিব, মৌলভি শামসুল হকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে একই বছর ২৬ ডিসেম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। ডিসেম্বরে শেষ সপ্তাহে শেখ মুজিবকে ওইই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। ওই মামলাও ঢাকার প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন ছিল।
বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে হওয়া এসব মামলার খবরগুলো তৎকালীন বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই খবরগুলো থেকেই মামলাগুলোর বিষয়ে এসব তথ্য জানা যায়। গত কয়েক দিনে এসব মামলার খোঁজ নিতে ঢাকার আদালতের নথি সংরক্ষণ রুম বা রেকর্ড রুমে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু এসব মামলার হদিস কেউ দিতে পারেননি। ঢাকার জেলা প্রশাসকের দপ্তরের নথি সংরক্ষণাগার বা রেকর্ডরুমে যোগাযোগ করা হলে রেকর্ড কিপার মাসুদুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই রেকর্ডরুমে মামলা-সংক্রান্ত কোনো নথিপত্র নেই। আগে যেসব নথিপত্র ছিল, তার কিছু জেলা জজ আদালতের রেকর্ডরুমে এবং কিছু জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রেকর্ডরুমে পাঠানো হয়েছিল বলে শুনেছি।’
জেলা জজ আদালতের রেকর্ডরুমের দায়িত্বে নিয়োজিত রেকর্ড কিপার আতাউর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল, তিনি এই প্রথম তা শুনলেন। তিনি বলেন, ‘ওই আমলে আমরা চাকরি করিনি। তখনকার কেউ হয়তো বেঁচে নেই। এই রেকর্ডরুমে এই ধরনের কোনো মামলার নথি আছে বলে আমার জানা নেই।’
জেলা জজ পদমর্যাদার এক বিচারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকার ৩৬টি মামলা করেছিলেন বলে তিনি জানেন। এই মামলাগুলো একসময় জেলা জজ আদালতের রেকর্ডরুমে ছিল। কিন্তু নথিগুলোর অস্তিত্ব এখন আর নেই। তিনি মনে করেন, ঐতিহাসিক কারণে এই মামলার নথিগুলো সংরক্ষণে রাখা উচিত ছিল। কীভাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি পাকিস্তান সরকার নির্যাতন চালিয়েছিল, তার নমুনা এই মামলাগুলো।
এসব মামলার নথি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঢাকার সিনিয়র আইনজীবী সৈয়দ আহমেদ গাজী। আদালত অঙ্গনে প্রতি ১২ বছর পর পুরোনো নথি ধ্বংসের একটা প্রথা চালু আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতি ১২ বছর পর পর পুরোনো নথি ধ্বংস করার একটা প্রথা চালু আছে। বঙ্গবন্ধুর নামে দায়ের করা মামলা অবশ্যই ইতিহাসের অংশ। এসব মামলা যদি ধ্বংস করা হয়ে থাকে, সেটা ঠিক হয়নি। ধ্বংস হয়ে না থাকলে তা খুঁজে বের করে সংরক্ষণ করা উচিত।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জাতির পিতা। তাঁর জীবনের প্রতিটি ঘটনাই ঐতিহাসিক গুরুত্ব রাখে উল্লেখ করে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আইনজীবী কাজী নজীবুল্লাহ হিরু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের জাতির জনক। তাঁর জীবনের প্রতিটি ঘটনাই ইতিহাস। তাঁর বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের করা মামলাগুলোর প্রতিটিই ইতিহাসের অংশ। আর এই ইতিহাস সংরক্ষণের দায়িত্ব সবার।’
আশরাফ-উল-আলম, ঢাকা

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের প্রতিবাদে পুরো পাকিস্তান আমলেই আন্দোলন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৮ সাল থেকে পূর্ব পাকিস্তানে মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। সেই সময় থেকেই শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন। পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনামলে তিনি প্রায় চৌদ্দ বছর কারাভোগ করেন। ১৮বার তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে বিখ্যাত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। এই মামলার নানা তথ্য বিভিন্ন উৎস থেকে জানা গেলেও এর নথিপত্র কোথায় আছে, তা এখনো অজানা।
বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যেসব মামলা করা হয়, তার মধ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বিখ্যাত। তিনিসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে এই মামলা করেছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার। বঙ্গবন্ধুকে এক নম্বর আসামি করা হয় এতে। বাকি ৩৪ জন ছিলেন তৎকালীন সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী এবং সরকারি কর্মকর্তা।
বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, ১৯৬৭ সালে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের পর তিনি আটক থাকা অবস্থায় ১৯৬৮ সালের ৬ জানুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১টার সময় আগের মামলা থেকে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। জেলগেট থেকেই আবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে হেফাজতে নেওয়া হয়। অন্য ৩৪ জনকেও এর আগে ও পরে গ্রেপ্তার করা হয়। শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের মুখে ক্যান্টনমেন্টেই একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। কিন্তু ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের সময় প্রচণ্ড চাপের মুখে ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবকে মুক্তি দেওয়া হয়।
ঘটনাবহুল এই মামলায় ১১ জন সাক্ষী, চারজন রাজসাক্ষী ছিলেন। তিনজন বিচারক বিচারকাজ পরিচালনা করেছিলেন। বিখ্যাত মামলা হওয়ায় এই মামলার তথ্য বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেলেও মূল মামলা বা মামলা-সংক্রান্ত নথিপত্র কোথায় আছে, তা অজানা।
এই মামলায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল শেখ মুজিবের আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য, চারজন রাজসাক্ষীর বক্তব্য। রাজসাক্ষীরা শেষ মুহূর্তে শেখ মুজিবকে সমর্থন করে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মামলা হওয়ায় এর নথি সংরক্ষণে থাকার কথা।
শুধু এই মামলাই নয় বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা গেছে, শেখ মুজিব এবং তখনকার সময়ে আন্দোলনরত বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের নামে অনেক মামলা হয়েছিল। কোনো মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধুর নামে একের পর এক মামলা হচ্ছিল। কারণে-অকারণে শুধু হয়রানি করার জন্য এসব মামলা করা হতো। এ রকম শুধু ঢাকায় ৩৬টি মামলা হয়েছিল বলে কথিত আছে। শেখ মুজিবুর রহমান একসময় বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। পর্যায়ক্রমে তিনি হয়ে ওঠেন জাতির জনক। তাঁর বিরুদ্ধে করা সব মামলাই তাই ঐতিহাসিক। সব মামলার নথিই সংরক্ষিত রাখা তাই ঐতিহাসিক দাবি। কিন্তু কোনো মামলাই সংরক্ষিত নেই। ঢাকার আদালতের কোনো রেকর্ডরুমেই এসব মামলার অস্তিত্ব এখন নেই।
সবগুলো মামলার সন্ধান পাওয়া না গেলেও কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে পুরোনো পত্রিকা ঘেঁটে। সেখান থেকে দেখা গেছে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা হয়েছিল রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে। একটি প্রতারণার মামলাও করা হয়েছিল। বাকি মামলাগুলো ছিল পূর্ব পাকিস্তান জননিরাপত্তা আইনে করা। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ এবং পুলিশকে মারধর করার অভিযোগেও কয়েকটি মামলা হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—রাষ্ট্রদ্রোহের তিনটি মামলা। ১৯৬৪ সালের মার্চ মাসে পল্টন ময়দানে শেখ মুজিব বক্তব্য দেন। পাকিস্তান সরকারের বিভিন্ন দমন-পীড়নের প্রতিবাদে ওই সভায় তিনি জনসাধারণকে উসকানি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করে ১৯৬৪ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকার পুলিশ সুপার অতিরিক্ত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মামলা বাতিলের দাবিতে হাইকোর্টে আবেদন জানানোর পরও হাইকোর্ট ওই আবেদন খারিজ করেন। বিশিষ্ট আইনজীবী বি বি রায় চৌধুরী শেখ মুজিবের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন। ১৯৬৬ সালের ২৯ জানুয়ারি এই মামলায় দুটি ধারায় শেখ মুজিবকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আরেকটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছিল ১৯৬৩ সালে। ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর পল্টন ময়দানে এক সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ায় শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত কমিশনারের আদালতে ওই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়। এর পর ১৯৬৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি জুলুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে পল্টনের জনসভায় বক্তব্য দেওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহের আরেকটি মামলা করা হয়। তৎকালীন ঢাকার প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট এম এ মালেকের আদালতে এই মামলার শুনানি হয়। এর পর ১৯৬৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার আউটার স্টেডিয়ামে এক বক্তৃতাকে কেন্দ্র করে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান জননিরাপত্তা আইনের ৭-৩ ধারায় ১৯৬৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর আরেকটি মামলা হয়।
এ ছাড়া ১৯৬৫ সালে সাভারে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের গাড়িতে ‘পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও’ শিরোনামে প্রচারপত্র নিক্ষেপের অপরাধে শেখ মুজিবুর রহমান, শাহ আজিজুর রহমানসহ সাতজনের বিরুদ্ধে জননিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। তৎকালীন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল হকের আদালতে এই মামলা চলে। ১৯৬৬ সালের ২৯ জানুয়ারি জননিরাপত্তা আইনে করা আরেকটি মামলায় শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। পরদিন দৈনিক সংবাদে এ সম্পর্কিত খবর ছাপা হয়।
১৯৫০ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের আগমন উপলক্ষে দুর্ভিক্ষ বিরোধী মিছিল হয়। ওই মিছিলে শেখ মুজিব নেতৃত্ব দেন। সেখান থেকে তাঁকে আটক করে তাঁর বিরুদ্ধে জননিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। ওই মামলায় দুই বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে। ১৯৫৮ সালের ১১ অক্টোবর সামরিক শাসনের প্রতিবাদে মিছিল করে আবারও আটক হন শেখ মুজিব। তখনো জননিরাপত্তা আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। ঢাকার প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ওই মামলার বিচার চলে।
সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনি কারাগারে থাকা অবস্থায় ১৯৫৯ সালের ১০ ডিসেম্বর শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে একটি প্রতারণা মামলা হয়। ওই মামলায় মহিউদ্দিন ও আজিজুল ইসলাম খন্দকার নামের আরও দুই ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, মোমেনশাহীর (বর্তমানে ময়মনসিংহ) ইব্রাহিম আলী এবং অন্য ছয় ব্যক্তির কাছ থেকে সরকারি চাকরির আশ্বাস দিয়ে অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন শেখ মুজিব। এই মামলার বিচার করেন ঢাকার প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট কে এম রহমান। তিনি অবশ্য শেখ মুজিবকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন।
১৯৪৮ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অপরাধে শেখ মুজিবকে ১১ মার্চ বন্দী করা হয়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে খাজা নাজিম উদ্দিনের সরকারের সমঝোতা চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ মার্চ তিনি মুক্তি পান। এতে তাঁকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় আটক করা হয়েছিল।
ঢাকার আরমানিটোলা ময়দানে ১৯৪৯ সালের ১১ অক্টোবর নবগঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জনসভায় মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, আতাউর রহমান খান, শামসুল হক ও শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ বক্তৃতা করেন। জনসভা শেষে মিছিলের নেতৃত্ব দেন শেখ মুজিবুর রহমান। ওই মিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় ১৭ অক্টোবর ঢাকার কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। বেআইনি সমাবেশ ও পুলিশকে আহত করার অভিযোগে দণ্ডবিধির ১৪৭ ও ৩২৫ ধারায় এবং জননিরাপত্তা আইনের ৭(৩) ধারায় মামলা হয়। শেখ মুজিব, মৌলভি শামসুল হকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে একই বছর ২৬ ডিসেম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। ডিসেম্বরে শেষ সপ্তাহে শেখ মুজিবকে ওইই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। ওই মামলাও ঢাকার প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন ছিল।
বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে হওয়া এসব মামলার খবরগুলো তৎকালীন বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই খবরগুলো থেকেই মামলাগুলোর বিষয়ে এসব তথ্য জানা যায়। গত কয়েক দিনে এসব মামলার খোঁজ নিতে ঢাকার আদালতের নথি সংরক্ষণ রুম বা রেকর্ড রুমে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু এসব মামলার হদিস কেউ দিতে পারেননি। ঢাকার জেলা প্রশাসকের দপ্তরের নথি সংরক্ষণাগার বা রেকর্ডরুমে যোগাযোগ করা হলে রেকর্ড কিপার মাসুদুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই রেকর্ডরুমে মামলা-সংক্রান্ত কোনো নথিপত্র নেই। আগে যেসব নথিপত্র ছিল, তার কিছু জেলা জজ আদালতের রেকর্ডরুমে এবং কিছু জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রেকর্ডরুমে পাঠানো হয়েছিল বলে শুনেছি।’
জেলা জজ আদালতের রেকর্ডরুমের দায়িত্বে নিয়োজিত রেকর্ড কিপার আতাউর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল, তিনি এই প্রথম তা শুনলেন। তিনি বলেন, ‘ওই আমলে আমরা চাকরি করিনি। তখনকার কেউ হয়তো বেঁচে নেই। এই রেকর্ডরুমে এই ধরনের কোনো মামলার নথি আছে বলে আমার জানা নেই।’
জেলা জজ পদমর্যাদার এক বিচারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকার ৩৬টি মামলা করেছিলেন বলে তিনি জানেন। এই মামলাগুলো একসময় জেলা জজ আদালতের রেকর্ডরুমে ছিল। কিন্তু নথিগুলোর অস্তিত্ব এখন আর নেই। তিনি মনে করেন, ঐতিহাসিক কারণে এই মামলার নথিগুলো সংরক্ষণে রাখা উচিত ছিল। কীভাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি পাকিস্তান সরকার নির্যাতন চালিয়েছিল, তার নমুনা এই মামলাগুলো।
এসব মামলার নথি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঢাকার সিনিয়র আইনজীবী সৈয়দ আহমেদ গাজী। আদালত অঙ্গনে প্রতি ১২ বছর পর পুরোনো নথি ধ্বংসের একটা প্রথা চালু আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতি ১২ বছর পর পর পুরোনো নথি ধ্বংস করার একটা প্রথা চালু আছে। বঙ্গবন্ধুর নামে দায়ের করা মামলা অবশ্যই ইতিহাসের অংশ। এসব মামলা যদি ধ্বংস করা হয়ে থাকে, সেটা ঠিক হয়নি। ধ্বংস হয়ে না থাকলে তা খুঁজে বের করে সংরক্ষণ করা উচিত।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জাতির পিতা। তাঁর জীবনের প্রতিটি ঘটনাই ঐতিহাসিক গুরুত্ব রাখে উল্লেখ করে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আইনজীবী কাজী নজীবুল্লাহ হিরু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের জাতির জনক। তাঁর জীবনের প্রতিটি ঘটনাই ইতিহাস। তাঁর বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের করা মামলাগুলোর প্রতিটিই ইতিহাসের অংশ। আর এই ইতিহাস সংরক্ষণের দায়িত্ব সবার।’

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের প্রতিবাদে পুরো পাকিস্তান আমলেই আন্দোলন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৮ সাল থেকে পূর্ব পাকিস্তানে মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। সেই সময় থেকেই শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন। পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনামলে তিনি প্রায় চৌদ্দ বছর কারাভোগ করেন। ১৮বার তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে বিখ্যাত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। এই মামলার নানা তথ্য বিভিন্ন উৎস থেকে জানা গেলেও এর নথিপত্র কোথায় আছে, তা এখনো অজানা।
বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যেসব মামলা করা হয়, তার মধ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বিখ্যাত। তিনিসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে এই মামলা করেছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার। বঙ্গবন্ধুকে এক নম্বর আসামি করা হয় এতে। বাকি ৩৪ জন ছিলেন তৎকালীন সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী এবং সরকারি কর্মকর্তা।
বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, ১৯৬৭ সালে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের পর তিনি আটক থাকা অবস্থায় ১৯৬৮ সালের ৬ জানুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১টার সময় আগের মামলা থেকে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। জেলগেট থেকেই আবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে হেফাজতে নেওয়া হয়। অন্য ৩৪ জনকেও এর আগে ও পরে গ্রেপ্তার করা হয়। শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের মুখে ক্যান্টনমেন্টেই একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। কিন্তু ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের সময় প্রচণ্ড চাপের মুখে ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবকে মুক্তি দেওয়া হয়।
ঘটনাবহুল এই মামলায় ১১ জন সাক্ষী, চারজন রাজসাক্ষী ছিলেন। তিনজন বিচারক বিচারকাজ পরিচালনা করেছিলেন। বিখ্যাত মামলা হওয়ায় এই মামলার তথ্য বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেলেও মূল মামলা বা মামলা-সংক্রান্ত নথিপত্র কোথায় আছে, তা অজানা।
এই মামলায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল শেখ মুজিবের আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য, চারজন রাজসাক্ষীর বক্তব্য। রাজসাক্ষীরা শেষ মুহূর্তে শেখ মুজিবকে সমর্থন করে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মামলা হওয়ায় এর নথি সংরক্ষণে থাকার কথা।
শুধু এই মামলাই নয় বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা গেছে, শেখ মুজিব এবং তখনকার সময়ে আন্দোলনরত বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের নামে অনেক মামলা হয়েছিল। কোনো মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধুর নামে একের পর এক মামলা হচ্ছিল। কারণে-অকারণে শুধু হয়রানি করার জন্য এসব মামলা করা হতো। এ রকম শুধু ঢাকায় ৩৬টি মামলা হয়েছিল বলে কথিত আছে। শেখ মুজিবুর রহমান একসময় বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। পর্যায়ক্রমে তিনি হয়ে ওঠেন জাতির জনক। তাঁর বিরুদ্ধে করা সব মামলাই তাই ঐতিহাসিক। সব মামলার নথিই সংরক্ষিত রাখা তাই ঐতিহাসিক দাবি। কিন্তু কোনো মামলাই সংরক্ষিত নেই। ঢাকার আদালতের কোনো রেকর্ডরুমেই এসব মামলার অস্তিত্ব এখন নেই।
সবগুলো মামলার সন্ধান পাওয়া না গেলেও কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে পুরোনো পত্রিকা ঘেঁটে। সেখান থেকে দেখা গেছে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা হয়েছিল রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে। একটি প্রতারণার মামলাও করা হয়েছিল। বাকি মামলাগুলো ছিল পূর্ব পাকিস্তান জননিরাপত্তা আইনে করা। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ এবং পুলিশকে মারধর করার অভিযোগেও কয়েকটি মামলা হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—রাষ্ট্রদ্রোহের তিনটি মামলা। ১৯৬৪ সালের মার্চ মাসে পল্টন ময়দানে শেখ মুজিব বক্তব্য দেন। পাকিস্তান সরকারের বিভিন্ন দমন-পীড়নের প্রতিবাদে ওই সভায় তিনি জনসাধারণকে উসকানি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করে ১৯৬৪ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকার পুলিশ সুপার অতিরিক্ত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মামলা বাতিলের দাবিতে হাইকোর্টে আবেদন জানানোর পরও হাইকোর্ট ওই আবেদন খারিজ করেন। বিশিষ্ট আইনজীবী বি বি রায় চৌধুরী শেখ মুজিবের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন। ১৯৬৬ সালের ২৯ জানুয়ারি এই মামলায় দুটি ধারায় শেখ মুজিবকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আরেকটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছিল ১৯৬৩ সালে। ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর পল্টন ময়দানে এক সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ায় শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত কমিশনারের আদালতে ওই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়। এর পর ১৯৬৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি জুলুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে পল্টনের জনসভায় বক্তব্য দেওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহের আরেকটি মামলা করা হয়। তৎকালীন ঢাকার প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট এম এ মালেকের আদালতে এই মামলার শুনানি হয়। এর পর ১৯৬৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার আউটার স্টেডিয়ামে এক বক্তৃতাকে কেন্দ্র করে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান জননিরাপত্তা আইনের ৭-৩ ধারায় ১৯৬৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর আরেকটি মামলা হয়।
এ ছাড়া ১৯৬৫ সালে সাভারে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের গাড়িতে ‘পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও’ শিরোনামে প্রচারপত্র নিক্ষেপের অপরাধে শেখ মুজিবুর রহমান, শাহ আজিজুর রহমানসহ সাতজনের বিরুদ্ধে জননিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। তৎকালীন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল হকের আদালতে এই মামলা চলে। ১৯৬৬ সালের ২৯ জানুয়ারি জননিরাপত্তা আইনে করা আরেকটি মামলায় শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। পরদিন দৈনিক সংবাদে এ সম্পর্কিত খবর ছাপা হয়।
১৯৫০ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের আগমন উপলক্ষে দুর্ভিক্ষ বিরোধী মিছিল হয়। ওই মিছিলে শেখ মুজিব নেতৃত্ব দেন। সেখান থেকে তাঁকে আটক করে তাঁর বিরুদ্ধে জননিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। ওই মামলায় দুই বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে। ১৯৫৮ সালের ১১ অক্টোবর সামরিক শাসনের প্রতিবাদে মিছিল করে আবারও আটক হন শেখ মুজিব। তখনো জননিরাপত্তা আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। ঢাকার প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ওই মামলার বিচার চলে।
সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনি কারাগারে থাকা অবস্থায় ১৯৫৯ সালের ১০ ডিসেম্বর শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে একটি প্রতারণা মামলা হয়। ওই মামলায় মহিউদ্দিন ও আজিজুল ইসলাম খন্দকার নামের আরও দুই ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, মোমেনশাহীর (বর্তমানে ময়মনসিংহ) ইব্রাহিম আলী এবং অন্য ছয় ব্যক্তির কাছ থেকে সরকারি চাকরির আশ্বাস দিয়ে অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন শেখ মুজিব। এই মামলার বিচার করেন ঢাকার প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট কে এম রহমান। তিনি অবশ্য শেখ মুজিবকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন।
১৯৪৮ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অপরাধে শেখ মুজিবকে ১১ মার্চ বন্দী করা হয়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে খাজা নাজিম উদ্দিনের সরকারের সমঝোতা চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ মার্চ তিনি মুক্তি পান। এতে তাঁকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় আটক করা হয়েছিল।
ঢাকার আরমানিটোলা ময়দানে ১৯৪৯ সালের ১১ অক্টোবর নবগঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জনসভায় মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, আতাউর রহমান খান, শামসুল হক ও শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ বক্তৃতা করেন। জনসভা শেষে মিছিলের নেতৃত্ব দেন শেখ মুজিবুর রহমান। ওই মিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় ১৭ অক্টোবর ঢাকার কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। বেআইনি সমাবেশ ও পুলিশকে আহত করার অভিযোগে দণ্ডবিধির ১৪৭ ও ৩২৫ ধারায় এবং জননিরাপত্তা আইনের ৭(৩) ধারায় মামলা হয়। শেখ মুজিব, মৌলভি শামসুল হকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে একই বছর ২৬ ডিসেম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। ডিসেম্বরে শেষ সপ্তাহে শেখ মুজিবকে ওইই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। ওই মামলাও ঢাকার প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন ছিল।
বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে হওয়া এসব মামলার খবরগুলো তৎকালীন বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই খবরগুলো থেকেই মামলাগুলোর বিষয়ে এসব তথ্য জানা যায়। গত কয়েক দিনে এসব মামলার খোঁজ নিতে ঢাকার আদালতের নথি সংরক্ষণ রুম বা রেকর্ড রুমে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু এসব মামলার হদিস কেউ দিতে পারেননি। ঢাকার জেলা প্রশাসকের দপ্তরের নথি সংরক্ষণাগার বা রেকর্ডরুমে যোগাযোগ করা হলে রেকর্ড কিপার মাসুদুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই রেকর্ডরুমে মামলা-সংক্রান্ত কোনো নথিপত্র নেই। আগে যেসব নথিপত্র ছিল, তার কিছু জেলা জজ আদালতের রেকর্ডরুমে এবং কিছু জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রেকর্ডরুমে পাঠানো হয়েছিল বলে শুনেছি।’
জেলা জজ আদালতের রেকর্ডরুমের দায়িত্বে নিয়োজিত রেকর্ড কিপার আতাউর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল, তিনি এই প্রথম তা শুনলেন। তিনি বলেন, ‘ওই আমলে আমরা চাকরি করিনি। তখনকার কেউ হয়তো বেঁচে নেই। এই রেকর্ডরুমে এই ধরনের কোনো মামলার নথি আছে বলে আমার জানা নেই।’
জেলা জজ পদমর্যাদার এক বিচারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকার ৩৬টি মামলা করেছিলেন বলে তিনি জানেন। এই মামলাগুলো একসময় জেলা জজ আদালতের রেকর্ডরুমে ছিল। কিন্তু নথিগুলোর অস্তিত্ব এখন আর নেই। তিনি মনে করেন, ঐতিহাসিক কারণে এই মামলার নথিগুলো সংরক্ষণে রাখা উচিত ছিল। কীভাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি পাকিস্তান সরকার নির্যাতন চালিয়েছিল, তার নমুনা এই মামলাগুলো।
এসব মামলার নথি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঢাকার সিনিয়র আইনজীবী সৈয়দ আহমেদ গাজী। আদালত অঙ্গনে প্রতি ১২ বছর পর পুরোনো নথি ধ্বংসের একটা প্রথা চালু আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতি ১২ বছর পর পর পুরোনো নথি ধ্বংস করার একটা প্রথা চালু আছে। বঙ্গবন্ধুর নামে দায়ের করা মামলা অবশ্যই ইতিহাসের অংশ। এসব মামলা যদি ধ্বংস করা হয়ে থাকে, সেটা ঠিক হয়নি। ধ্বংস হয়ে না থাকলে তা খুঁজে বের করে সংরক্ষণ করা উচিত।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জাতির পিতা। তাঁর জীবনের প্রতিটি ঘটনাই ঐতিহাসিক গুরুত্ব রাখে উল্লেখ করে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আইনজীবী কাজী নজীবুল্লাহ হিরু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের জাতির জনক। তাঁর জীবনের প্রতিটি ঘটনাই ইতিহাস। তাঁর বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের করা মামলাগুলোর প্রতিটিই ইতিহাসের অংশ। আর এই ইতিহাস সংরক্ষণের দায়িত্ব সবার।’

উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।
নাদিম নেওয়াজ

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

আদালত অঙ্গনে প্রতি ১২ বছর পর পর পুরোনো নথি ধ্বংস করার একটা প্রথা চালু আছে। বঙ্গবন্ধুর নামে দায়ের করা মামলা অবশ্যই ইতিহাসের অংশ। এসব মামলা যদি ধ্বংস করা হয়ে থাকে, সেটা ঠিক হয়নি। ধ্বংস হয়ে না থাকলে তা খুঁজে বের করে সংরক্ষণ করা উচিত...
১৫ আগস্ট ২০২২
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।
আসাদুজ্জামান নূর

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

আদালত অঙ্গনে প্রতি ১২ বছর পর পর পুরোনো নথি ধ্বংস করার একটা প্রথা চালু আছে। বঙ্গবন্ধুর নামে দায়ের করা মামলা অবশ্যই ইতিহাসের অংশ। এসব মামলা যদি ধ্বংস করা হয়ে থাকে, সেটা ঠিক হয়নি। ধ্বংস হয়ে না থাকলে তা খুঁজে বের করে সংরক্ষণ করা উচিত...
১৫ আগস্ট ২০২২
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম।
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

আদালত অঙ্গনে প্রতি ১২ বছর পর পর পুরোনো নথি ধ্বংস করার একটা প্রথা চালু আছে। বঙ্গবন্ধুর নামে দায়ের করা মামলা অবশ্যই ইতিহাসের অংশ। এসব মামলা যদি ধ্বংস করা হয়ে থাকে, সেটা ঠিক হয়নি। ধ্বংস হয়ে না থাকলে তা খুঁজে বের করে সংরক্ষণ করা উচিত...
১৫ আগস্ট ২০২২
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

আদালত অঙ্গনে প্রতি ১২ বছর পর পর পুরোনো নথি ধ্বংস করার একটা প্রথা চালু আছে। বঙ্গবন্ধুর নামে দায়ের করা মামলা অবশ্যই ইতিহাসের অংশ। এসব মামলা যদি ধ্বংস করা হয়ে থাকে, সেটা ঠিক হয়নি। ধ্বংস হয়ে না থাকলে তা খুঁজে বের করে সংরক্ষণ করা উচিত...
১৫ আগস্ট ২০২২
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫