Ajker Patrika

ফুটবলে হতাশাই বেশি, আছে অর্জনও

নাজিম আল শমষের, ঢাকা
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫: ২১
ফুটবলে হতাশাই বেশি, আছে অর্জনও

স্বাধীনতার পর ক্রীড়াঙ্গনে রাজত্ব ছিল ফুটবলেরই। কিন্তু ধীরে ধীরে কমেছে ফুটবলের দাপট। অতীতের শক্তি হারিয়ে ফুটবলে এখন শুধুই হতাশা। এসব হতাশার নিচে চাপা পড়ে থাকলেও অর্জন ও উল্লেখযোগ্য ঘটনা কম নয়। সেগুলো কেমন একবার দেখে নেওয়া যাক। 

১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ঢাকা আবাহনীজন্ম হলো আবাহনীর (১৯৭২) 
স্বাধীনতার আগে পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশের মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছে মোহামেডান, ভিক্টোরিয়া, ওয়ান্ডারার্সের মতো দলগুলো। ঢাকার মাঠে তখন আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা মোহামেডানের। সাদা-কালো শিবিরের সেই জনপ্রিয়তায় ভাগ বসাল ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত এক দল। দেশের ফুটবলে জন্ম নিল রূপকথার মতো এক দ্বৈরথের। 

জন্মলগ্ন থেকেই আধুনিকতার ছাপ রেখে দেশের ফুটবলের গতিপথ পাল্টে দিয়েছে আবাহনী। বাংলাদেশের ফুটবলে প্রথম বিদেশি কোচ এসেছে এই দলের হাত ধরেই। ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠাতা শেখ কামাল নিহত হলেও থামানো যায়নি আকাশি-নীল দলটিকে। ফুটবলে মোহামেডানের সঙ্গে আবাহনীর দ্বৈরথ যেন কোনো রূপকথার গল্প। কাজী সালাউদ্দিন, আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু, শেখ আসলাম, মোনেম মুন্নাদের তারকা হয়ে ওঠা এই আবাহনীর জার্সিতেই। এই ৫০ বছরে ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেট আর হকিতেও সমান দাপট ঐতিহ্যবাহী দলটির। দেশের ফুটবলে সবচেয়ে বেশি সাফল্যও তাদের। ১৯৭২ সালে জন্ম নেওয়া ছোট আবাহনী আজ রীতিমতো দেশের ক্রীড়াঙ্গনে মহিরুহ। 

সেদিন আটক করা হয়েছিল দেশসেরা চার ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিন, কাজী আনোয়ার, আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু ও গোলাম রব্বানী হেলালকেফুটবলের ‘ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর’ (১৯৮২) 
ফুটবল মাঠে সামরিক সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র! হাস্যকর যুক্তিতে লজ্জার এক ঘটনাই জন্ম দিয়েছিল জেনারেল এরশাদের সামরিক সরকার। ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা স্টেডিয়ামে (এখন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম) প্রিয় দুই দল মোহামেডান-আবাহনীর খেলা দেখতে হাজির হয়েছিল হাজার হাজার দর্শক। উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে মোহামেডান এগিয়ে ছিল ১-০ গোলে। এ সময়ই এক গোলের দাবিতে মাঠের রেফারির সঙ্গে উত্তেজনায় জড়িয়ে পড়েন আবাহনীর খেলোয়াড়েরা। উত্তেজনা ছড়ায় গ্যালারিতে, পরে মাঠের আশপাশের শহরগুলোতেও। 

মাঠের উত্তেজনা থামলেও পরে সেখান থেকেই জন্ম আরেক ঘটনার। খেলা শেষে আবাহনীর খেলোয়াড়েরা ফিরে গিয়েছিলেন নিজের বাড়ি কিংবা ক্লাবে। রাতের বেলা সেখান থেকেই ঘেরাও করে কাজী সালাউদ্দিন, কাজী আনোয়ার, আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু ও গোলাম রব্বানী হেলালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ-সেনার যৌথ বাহিনী। হাতে হাতকড়া পরিয়ে সামরিক আদালতে তোলা হয় চারজনকে। ১৭ দিন জেল খাটতে হয়েছিল দেশের ফুটবলের কিংবদন্তি কাজী সালাউদ্দিনকে। শোনা যায়, জেল থেকে বের হয়ে দেশের সব স্মারক আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছিলেন সালাউদ্দিন। 

প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা (১৯৯৫) 
ঘরোয়া ফুটবলের জনপ্রিয়তা তখন আকাশছোঁয়া। আফসোসের নাম শুধু আন্তর্জাতিক ফুটবল। স্বাধীনতার ২৪ বছরে ২২ টুর্নামেন্ট থেকে খালি হাতে ফেরার পর শিরোপার আক্ষেপটা মিটেছিল মোনেম মুন্নার নেতৃত্বে। মিয়ানমারে চার জাতি টুর্নামেন্টে। 

স্বাগতিক মিয়ানমার, সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কার প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল স্বাগতিকদের কাছে ৪-০ গোলে হেরে। শ্রীলঙ্কা ও সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে জয় পেয়ে ফাইনালে সেই মিয়ানমারকেই প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় মোনেম মুন্নার দল। গ্রুপ পর্বে হারের দুঃখ ভুলিয়ে নিজেদের সর্বস্ব নিংড়ে দিয়ে ২-১ গোলের এক ঐতিহাসিক জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। 

টাইব্রেকে ৫-৩ ব্যবধানে মালদ্বীপকে হারিয়ে এখন পর্যন্ত একমাত্র সাফ শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশঘরে এল সাফের শিরোপা (২০০৩) 
১৯৯৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরে ছিল না বাংলাদেশ। দুই বছর পর দ্বিতীয় আসরে প্রথমবার খেলতে নেমেই তৃতীয় হয় বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালে চতুর্থ আসরে হয় রানার্সআপ। দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবলে অন্যতম পরাশক্তি হয়েও সাফের শিরোপা জিততে না পারাটা ছিল বাংলাদেশিদের কাছে অন্যতম বড় আক্ষেপ। 

অবশেষে ঘরের মাঠে কাঙ্ক্ষিত সাফের স্বাদ পায় লাল-সবুজেরা। গ্রুপ পর্বে নেপাল, মালদ্বীপ ও ভুটানকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিতে ভারতকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় বাংলাদেশ। রোকনুজ্জামান কাঞ্চনের গোলে ৭৭ মিনিটে এগিয়ে গেলেও ৮১ মিনিটে সেই গোল শোধ দেয় ভারত। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ৯৮ মিনিটে মতিউর মুন্নার ২০ গজ দূর থেকে করা গোল্ডেন গোলে ফাইনালের টিকিট পায় বাংলাদেশ। ফাইনালে প্রতিপক্ষ হয় মালদ্বীপ। সেই ম্যাচেও কাঞ্চনের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেখানেও সমতা ফিরিয়ে ম্যাচকে টাইব্রেকে নিয়ে যায় মালদ্বীপ। টাইব্রেকে ৫-৩ ব্যবধানে মালদ্বীপকে হারিয়ে এখন পর্যন্ত একমাত্র সাফের স্বাদ নেন আলফাজরা। 

২০১৮ সালে এশিয়ান গেমসে শক্তিশালী কাতারকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল জামাল ভূঁইয়ারাএশিয়ান গেমসে ইতিহাস (২০১৮) 
ফুটবলের সবচেয়ে বাজে সময়টা বোধ হয় গত দশকেই কাটিয়েছে বাংলাদেশ। ভুটানের কাছে হেরে লম্বা সময় নির্বাসন, টানা তিন সাফের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়, ঘরোয়া ফুটবলের জনপ্রিয়তায় ধসসহ নানা কারণে ফুটবল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় দর্শক। চরম দুঃসময়ের মাঝেই এশিয়ান গেমসের দ্বিতীয় পর্বে উঠে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ২৩ ফুটবল দল। গ্রুপ পর্বে কাতারের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে ১-০ গোলে হারিয়ে দেন জামাল ভূঁইয়ারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মে. জে. ফজলুরের সেভেন সিস্টার্স দখলের মন্তব্য সমর্থন করে না সরকার: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নিজের প্রস্রাব পান করে ‘আশিকি’ অভিনেত্রী অনু আগারওয়াল বললেন, ‘আহা অমৃত’

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা-ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

গায়ে কেরোসিন ঢেলে কলেজছাত্রীর আত্মহনন, পলাতক ইমাম গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত