দীপেন ভট্টাচার্য

দুরবিনের ব্যাস যত বড় হবে, তত ছোট ও গোল বস্তুর আকার সেটি দেখতে পাবে। এই ক্ষেত্রে দুরবিনের ব্যাস আমাদের পৃথিবীর সমান হয়েছিল। ২০১৯ সালে একই পদ্ধতিতে ইএইচটি আমাদের থেকে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরের, ‘এম-এইটি সেভেন’ নামে একটি বিশাল গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা অতিকায় কৃষ্ণবিবরের ছবি তুলতে সমর্থ হয়েছিল।
উদ্দেশ্যহীন মহাবিশ্ব?
এ বছর বিজ্ঞানীরা ঘোষণা করলেন, ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ (ইএইচটি) দিয়ে তাঁরা মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গে আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রের কৃষ্ণবিবরটির ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছেন। ‘বিবর’ অর্থ ‘গর্ত’ বা ‘গহ্বর’। সেই অর্থে কৃষ্ণবিবর হলো ‘ব্ল্যাক হোল’ কথাটির বঙ্গানুবাদ। আসলে এটিকে সরাসরি বিবরের ছবি বলা যাবে না। কারণ, সাধারণ ধারণা অনুযায়ী কৃষ্ণগহ্বর থেকে আলো বের হতে পারে না। তাই এই ছবি আসলে হলো বিবরটি যে ছায়া সৃষ্টি করে, সেটির প্রতিবিম্ব। ইএইচটি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা আটটি দুরবিনের তথ্যকে একত্র করে একটি বিশাল ১০ হাজার ৭০০ কিলোমিটার ব্যাসের দুরবিনের ভূমিকা পালন করে। দুরবিনের ব্যাস যত বড় হবে, তত ছোট ও গোল বস্তুর আকার সেটি দেখতে পাবে। এই ক্ষেত্রে দুরবিনের ব্যাস আমাদের পৃথিবীর সমান হয়েছিল। এর আগে ২০১৯ সালে একই পদ্ধতিতে ইএইচটি আমাদের থেকে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরের, ‘এম-এইটি সেভেন’ নামে একটি বিশাল গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা অতিকায় কৃষ্ণবিবরের ছবি তুলতে সমর্থ হয়েছিল।
১৯১৫ সালে আইনস্টাইন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব প্রকাশের কয়েক মাসের মধ্যেই জার্মান বিজ্ঞানী কার্ল সোয়ার্ৎসশিল্ড আপেক্ষিকতা সমীকরণের একটি সমাধান বের করেন। একটি স্থির (ঘূর্ণমান নয়) বড় তারার চারদিকে দেশ-কালের মেট্রিক (বা চাদর) কী রকম হবে, সেটা এই সমাধান থেকে পাওয়া যায়। এই মেট্রিক ব্যবহার করে আমরা দেখি যে তারাটির সমস্ত ভর যদি একটি বিন্দুসমেত কেন্দ্রে আপতিত হয়, তবে সেই বিন্দু থেকে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত কোনো আলোক কণিকা থাকলে, সেই কণিকা তার উচ্চগতি সত্ত্বেও কেন্দ্রটির মাধ্যাকর্ষণ থেকে মুক্তি পাবে না এবং আমরা ওই তারা সম্পর্কে সরাসরিভাবে কোনো তথ্যই পাব না। এই দূরত্বকে সোয়ার্ৎসশিল্ড ব্যাসার্ধ বলা হয়, যা ঘটনা-দিগন্তকে নির্দিষ্ট করে। ঘটনা-দিগন্তের মধ্য থেকে কোনো সংবাদই বহির্বিশ্বে পৌঁছাবে না।
সোয়ার্ৎসশিল্ড মেট্রিকের একটি পরিণাম হচ্ছে সিংগুলারিটি। সিংগুলারিটি কী? একটি বড় ভরের তারা, যদি সেটা সূর্যের চেয়ে অন্তত পাঁচ গুণ বেশি ভরের হয়, তার সমস্ত জ্বালানি ফুরিয়ে ফেললে; অর্থাৎ, তার জীবনের শেষে, একটি বিন্দুসমেত কেন্দ্রে খুবই ক্ষুদ্র বস্তুতে আপতিত হবে। সেই বস্তুর (তাকে বস্তু বলা হয়তো সংগত নয়) ঘনত্ব এমনই, বা তার মহাকর্ষ বল এমনই যে, সেটি চারদিকের দেশ-কালের বক্রতাকে অসীম করে দেবে। সেই বক্রতা ভেতরের বস্তুটিকে পুরোপুরি ঢেকে দেবে। অর্থাৎ, সে আমাদের মহাবিশ্ব থেকে বিযুক্ত হয়ে যাবে। এই অসীম ঘনত্বের বা অসীম মহাকর্ষীয় বলের বিন্দুটিকে ইংরেজিতে সিংগুলারিটি বলা হয়। সিংগুলারিটির অর্থ হলো অনন্য। এমন অনন্য অবস্থা মহাবিশ্বের আর অন্য কোথাও বিরাজ করে না।
কৃষ্ণবিবর বা ব্ল্যাক হোল বলতে আমরা সিংগুলারিটিসহ ঘটনা-দিগন্তের মধ্যে যা আছে, তা-ই বোঝাই। অর্থাৎ, কৃষ্ণগহ্বর হলো সিংগুলারিটি ও ঘটনা-দিগন্তের যোগফল।
আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রের কৃষ্ণগহ্বরটি, যার নাম হলো Sgr A*, তার ভর হলো প্রায় ৪০ লাখ সৌরভর। অর্থাৎ, ৪০ লাখ সূর্য একত্র করলে যে ভর পাওয়া যায়। অন্যদিকে অতিকায় গ্যালাক্সি M৮৭-এর কেন্দ্রের কৃষ্ণবিবরটির ভর হলো প্রায় ৬৬০ কোটি সূর্যের সমান। Sgr A* আমাদের থেকে ২৭ হাজার আলোকবর্ষ দূরে। আলো এক সেকেন্ডে প্রায় ৩ লাখ কিলোমিটার ভ্রমণ করে। আজ যে Sgr A* আমরা দেখছি, তার আলো ২৭ হাজার বছর আগে রওনা দিয়েছিল। আর M৮৭ থেকে যে আলো আমরা দেখছি, সেটি সেখান থেকে বিকিরিত হয়েছিল সাড়ে ৫ কোটি বছর আগে। সাড়ে ৫ কোটি বছর আগে বাংলাদেশ যে বঙ্গীয় বদ্বীপের ওপর অবস্থিত, সেটির জন্মই হয়নি। সাড়ে ৫ কোটি বছর আগে ভারতীয় উপমহাদেশের টেকটনিক পাত সবে ইউরেশীয় পাতের সঙ্গে ধাক্কা খেতে শুরু করেছে, হিমালয় তখনো ওঠা শুরু করেনি।
আমাদের এই মহাবিশ্বের শুরু ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩৮০ কোটি বছর আগে। এই শুরুটা হয়েছে কোনো এক মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে, যাকে বিগ ব্যাং বলা হয়। এর ফলে আমাদের বর্তমান মহাবিশ্ব ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে। বিগ ব্যাং একটি মডেল। এটিকে যে একটা মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমেই সংঘটিত হতে হবে—এমন নয়। বরং ‘কোনো কিছু নেই’—এমন একটি পর্যায়ের মধ্যে কোয়ান্টাম বিচলনের ফলে দেশ-কালের আবির্ভাবের মধ্যেও বিগ ব্যাং হতে পারে। এ নিয়ে পরে বলছি। বিগ ব্যাং-এর কয়েক শ মিলিয়ন বছরের মধ্যেই প্রথম নক্ষত্র ও প্রথম গ্যালাক্সির আবির্ভাব হয়। সেই প্রথম একটি গ্যালাক্সি থেকে আমাদের কাছে আলো আসতে ১ হাজার ৩০০ কোটি বছরের বেশি সময় নেয়। কিন্তু সেই গ্যালাক্সি মহাবিশ্বের প্রসারণের ফলে ‘এই মুহূর্তে’ ১ হাজার ৩০০ কোটি আলোকবর্ষ নয়, বরং ৪ হাজার ৬০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এই মুহূর্তে সেই গ্যালাক্সি থেকে যে আলো বিকিরিত হচ্ছে, তা আমাদের পৃথিবীর এই জায়গায় কোনো দিনই পৌঁছাবে না। অনেক বিজ্ঞানীর ধারণা, আমাদের দৃশ্যমান যে মহাবিশ্ব, তা বিশাল এক মহাবিশ্বের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ মাত্র। সেই অর্থে পুরো মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমরা কোনো দিনই জানতে পারব না।
আমাদের ক্ষুদ্র জীবনের সময় দিয়ে এই ধরনের মহাজাগতিক দূরত্ব ও সময়কে কীভাবে বোঝা সম্ভব? নোবেল পুরস্কার বিজয়ী স্টিভেন ওয়াইনবার্গ একবার বলেছিলেন, ‘মহাবিশ্বকে আমরা যত বুঝতে পারছি, ততই সেটিকে উদ্দেশ্যহীন মনে হচ্ছে।’ ওয়াইনবার্গ ‘পয়েন্টলেস’ কথাটি ব্যবহার করেছিলেন। এই উক্তির জন্য ওয়াইনবার্গকে অনেক গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছিল। কিন্তু অনেকেই ওই উক্তির পরবর্তী বাক্যগুলো পড়েননি। ওয়াইনবার্গ লিখছেন—
‘আমাদের গবেষণার ফলাফল আমাদের স্বস্তি না দিতে পারে, কিন্তু কিছু শান্তি পাওয়া যাবে গবেষণা প্রক্রিয়ার ভেতরেই। দেবতা বা ক্ষমতাশীলদের গল্পকথা দিয়ে, অথবা প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডে তাদের চিন্তা আবদ্ধ রেখে নারী ও পুরুষেরা যে সান্ত্বনা পায়, তাতে তারা আর সন্তুষ্ট নয়। তারা এখন তৈরি করছে দুরবিন, কৃত্রিম উপগ্রহ, কণাত্বরক যন্ত্র। তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের ডেস্কে বসে গবেষণালব্ধ তথ্যের অন্তর্নিহিত অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা করছে। মহাবিশ্বকে বোঝার এই যে প্রচেষ্টা—তা খুব কম জিনিসের মধ্যে একটি, যা মানুষের জীবনকে প্রহসনের ওপরে ওঠায়, তাকে ট্র্যাজেডির সৌন্দর্যের কিছুটা অংশ দেয়।’
ওয়াইনবার্গ ‘গ্রেস অব ট্র্যাজেডি’ কথাটি ব্যবহার করেছেন। বলাই বাহুল্য, ‘গ্রেস’ শুধু সৌন্দর্য নয়, তার মধ্যে আধ্যাত্মিক একটি ভাব নিহিত আছে। যে বিজ্ঞানীরা মহাজগৎ ও পদার্থবিদ্যার মৌলিক সূত্রগুলো নিয়ে গবেষণা করেন, তাঁরা তাঁদের কাজে সেই ‘গ্রেস’ খুঁজে পান। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁরা এটি সম্বন্ধেও সচেতন যে মহাবিশ্ব বা প্রকৃতির গঠনে এমন কিছু আছে, যা আমাদের জ্ঞানকে পূর্ণতা দেবে না। সেই অপূর্ণতাকে মেনে নেওয়ার মধ্যেও একধরনের বলিষ্ঠতা প্রয়োজন।
প্রকৃতির অপূর্ণতা
১৯২৫ সালে হাইজেনবার্গ তাঁর অনিশ্চয়তা (বা অনির্দেশ্যতার) নীতি প্রণয়ন করেন: কণার অবস্থান এবং ভরবেগ (বা বেগ), এই দুটি জিনিসকে একই সঙ্গে যথেচ্ছ সূক্ষ্মভাবে পরিমাপ করা যাবে না। অর্থাৎ, আমরা যদি কণার অবস্থানকে সূক্ষ্মভাবে মাপতে পারি, তবে তার বেগ সম্বন্ধে আমাদের ধারণা থাকবে অস্পষ্ট। ফলে সেটির পরমুহূর্তের অবস্থান থাকবে অজ্ঞাত। অনুরূপভাবে কণার বেগকে যথার্থভাবে জানলে, সেটির অবস্থানকে নিশ্চিতভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। (একইভাবে এই নীতি অনুযায়ী শূন্য থেকে শক্তি ঋণ করে কণারা খুব অল্প সময়ের জন্য বাস্তবে আবির্ভূত হতে পারে। এবং সেই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সময় শেষে আবার হারিয়ে শূন্যে মিলিয়ে যেতে পারে।) ফলে নিউটনীয় চিরায়ত বলবিদ্যার পরিণামবাদী বা নিষ্পত্তিমূলক মহাবিশ্বের অবসান ঘটল। ১৮১৪ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী লাপলাস বলেছিলেন, এমন কোনো অস্তিত্ব যদি থাকে, যে সে কোনো একটা মুহূর্তে মহাবিশ্বের সমস্ত কণার অবস্থান এবং তাদের ওপর প্রযোজ্য বলের পরিমাণ জানবে, তাহলে তার পক্ষে মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ ও অতীত অবস্থা নির্ধারণ করা কঠিন হবে না। এই অস্তিত্বকে অনেকে লাপলাসের দানব বলে অভিহিত করেন।
কোয়ান্টাম বলবিদ্যা সুনিশ্চিতভাবে লাপলাসের দানবের পরিণামবাদী মহাবিশ্বের অবসান ঘটাল। শুধু তা-ই নয়, কোয়ান্টাম বলবিদ্যা বলল কণাসমূহের শুধু কণা বৈশিষ্ট্যই নয়, একটি তরঙ্গ বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। তবে এই তরঙ্গ প্রকৃত ‘বাস্তব তরঙ্গ’, নাকি একটি ‘সম্ভাবনা তরঙ্গ’ তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। যদিও বেশির ভাগ বিজ্ঞানীই মনে করেন, মুক্ত কণার (যেমন ইলেকট্রনের) অবস্থান প্রসারণশীল ‘সম্ভাবনা তরঙ্গ’ দিয়ে বর্ণনা করা সম্ভব, যার প্রকৃতি নিতান্তই গাণিতিক। অন্যদিকে যে মুহূর্তে ওই ইলেকট্রনটিকে অবলোকন করা হবে, সেটি একটি কণায় রূপান্তরিত হবে। কণা ও তরঙ্গের এই যে দ্বৈত বাস্তবতা, তা আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার বাইরে। একটি ইলেকট্রন একটি বিন্দু থেকে আরেকটি বিন্দুতে কীভাবে ভ্রমণ করে, আমরা তা সঠিক জানি না। কারণ, দুটি বিন্দুর মধ্যে অসংখ্য সম্ভাব্য পথ রয়েছে। সেই পথগুলোকে আমাদের মনে চিত্রিত করা সম্ভব নয়; শুধু গাণিতিকভাবে বিশ্লেষণ করা সম্ভব।
বিজ্ঞানের দর্শনে পজিটিভিজমের মত হলো, শুধু সরাসরি অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বস্তু সম্পর্কে যে জ্ঞান লাভ করা যাবে তা-ই একমাত্র সত্য, এর বাইরে কিছু বললে সেটা হবে জল্পনা। ভিয়েনার বিজ্ঞানী আর্নেস্ট মাখ এর অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন। যেহেতু ১৮ শতকের শেষে ও ১৯ শতকের প্রথম দিকে পরমাণুকে সরাসরি পর্যবেক্ষণের কোনো পদ্ধতি জানা ছিল না, পজিটিভিস্টরা পরমাণু সম্পর্কে আলোচনাকে বিজ্ঞানবহির্ভূত মনে করতেন। অন্যদিকে রিয়্যালিস্ট বা বাস্তববাদীরা সরাসরি পরমাণু দেখা না গেলেও সেটিকে বাস্তব ধরে নিয়ে গবেষণা করতেন। আইনস্টাইনকে মাখ বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিলেন। কিন্তু ১৯২০-এর দশকের আইনস্টাইন পজিটিভিস্ট ছিলেন না, বরং বাস্তববাদী ছিলেন। অন্যদিকে কোয়ান্টাম তত্ত্বের প্রবক্তারা, বিশেষ করে নিলস বোর ও হাইজেনবার্গ পজিটিভিজমকে পুরোপুরি ত্যাগ করেননি। তাঁরা মনে করতেন, কোয়ান্টাম পর্যবেক্ষণের ফলাফল পরীক্ষক কী দেখতে চাইছেন, সেটার ওপর নির্ভর করে: পরীক্ষক যদি ইলেকট্রনের তরঙ্গদৈর্ঘ্য মাপতে চান, তো ইলেকট্রনকে তরঙ্গ হিসেবে দেখবেন। অন্যদিকে তিনি যদি তাঁর ভরবেগ নির্ধারণ করতে চান, তাহলে কণা হিসেবে দেখবেন। কণা বা তরঙ্গ এ দুই বৈশিষ্ট্যের কোনো অর্থ নেই, যতক্ষণ না পরীক্ষক তাঁর স্বাধীন চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যকে অবলোকন করবেন। বাস্তববাদী আইনস্টাইনের কাছে এ রকম অজ্ঞেয়বাদ ছিল পুরোপুরিই পরিত্যাজ্য।
হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি বলে, কণার অবস্থান ও গতিবেগ একই সঙ্গে যথার্থভাবে জানা যাবে না। প্রকৃতি সম্পর্কে এটাও একধরনের অজ্ঞানতা। অর্থাৎ, আমাদের পর্যবেক্ষণপদ্ধতি যতই দক্ষ হোক না কেন, আমাদের কাছে এ দুই জিনিস একসঙ্গে অজানা থেকে যাবে। এই অজ্ঞানতা দেশ-কালের চাদরের মধ্যেই প্রোথিত। একে এড়ানোর উপায় নেই। আইনস্টাইনের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য ছিল না। তিনি বললেন, কোয়ান্টাম তত্ত্বপূর্ণ নয়। লিখলেন, ‘ঈশ্বর পাশা খেলতে পারে, ঠিক আছে; কিন্তু সে যে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে জুয়া খেলবে, এটা আমার ধারণার বাইরে।’ ঈশ্বর অর্থে এখানে তিনি প্রকৃতিকেই বুঝিয়েছিলেন। ১৯৩০ সালের ১৯ আগস্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে আলাপে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরমাণুর রাজ্যে আকস্মিকতা কাজ করে। কাজেই, অস্তিত্বের নাটক পুরোপুরি পূর্বনির্ধারিত নয়।’ তখন আইনস্টাইন উত্তর দিয়েছিলেন, ‘তার মানে এই নয় যে, বিজ্ঞান থেকে কার্যকারণ বিদায় হয়েছে।’ কার্যকারণ আইনস্টাইনের দর্শনে একটা বড় ভূমিকা রেখেছিল। তিনি বাস্তববাদী ছিলেন এবং মানব-নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র বাস্তবতায় বিশ্বাস করতেন। একই সঙ্গে প্রকৃতি যে কিছু জ্ঞান আমাদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখবে, তাতে বিশ্বাস করতেন না।
আইনস্টাইন নিজে খেয়ালিপনায় সে রকম বিশ্বাস করতেন না। যদিও তাঁর অগোছালো চুলের যে ছবিটি সবচেয়ে জনপ্রিয়, তাতে তাঁকে মন-ভোলা খেয়ালি বিজ্ঞানী হিসেবেই আমরা দেখি। কোয়ান্টাম তত্ত্বে ভরসা না রেখে তিনি জীবনের শেষ ২৫টি বছর আপেক্ষিকতা ও তড়িৎ-চুম্বকীয় ক্ষেত্রতত্ত্বের সংমিশ্রণে পদার্থবিদ্যার চূড়ান্ত নীতি প্রণয়ন করতে চেয়েছিলেন। ‘প্রকৃতি জুয়া খেলবে না’—এই জীবন দর্শন তাঁকে এই পথে পরিচালিত করে। তাঁর সেই উদ্যোগ অবশ্য সফল হয়নি। তাই আইনস্টাইনের পক্ষে কৃষ্ণবিবরের সিংগুলারিটির অস্তিত্ব মেনে নেওয়া কঠিন ছিল। তাঁর কাছে সিংগুলারিটি হলো প্রকৃতির খেয়ালিপনা, যার বৈশিষ্ট্যকে আমরা কোনোভাবেই নির্ধারণ করতে পারব না। যে সিংগুলারিটি থেকে আমরা কোনো তথ্যই আর আহরণ করতে পারব না (যদিও ইদানীং এই ধারণাটির পরিবর্তন হয়েছে)। আইনস্টাইন বিশ্বাস করতেন, প্রকৃতি কোনোভাবে সিংগুলারিটি (বা ব্ল্যাক হোল) সৃষ্টিতে বাধা দেবে। কারণ, সিংগুলারিটি হলো প্রকৃতি সম্বন্ধে আমাদের একধরনের অজ্ঞানতা। এ হলো যেন প্রকৃতির অপূর্ণতা। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার পরিসংখ্যানগত অনিশ্চয়তাকে তিনি যেমন পছন্দ করেননি, তেমনি একটি তারার পতন সিংগুলারিটি সৃষ্টি করতে পারে—সেটাও মেনে নেননি। অথচ এই দুটি বিষয়ের সূত্রপাত তিনি নিজ হাতে করে গিয়েছিলেন।
পরম ‘কিছু না’
চিন্তা করুন এমন একটি অবস্থা, যেখানে স্থান-কাল-পাত্র নেই। নেই দেশ-কালের চাদর, সময় নেই, স্পেস বা স্থান বলতে যা বোঝাই, সেই স্থান নেই। এমন একটি অবস্থা চিন্তা করা দুরূহ। কারণ, চিন্তার মাধ্যমে আমরা সেটিকে আকার দিই। কারণ, ‘কিছু না’-কে মনে স্থান দিলে সেটি ‘কিছু’-তে পরিণত হয়। বিখ্যাত চৈনিক দার্শনিক গ্রন্থ তাও-তে-চিং শুরুই হয়েছে এই পঙ্ক্তি দিয়ে—
‘যে তাওকে (পথকে) বর্ণনা করা যায়, তা চিরন্তন তাও নয়
যে নামকে উচ্চারণ করা যায়, তা চিরন্তন নাম নয়।
নামহীন যা তা স্বর্গ ও মর্ত্যের সীমানা
আর নামযুক্ত যা তা সকল সৃষ্টির মাতা।।’
আমাদের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, পরম ‘কিছু না’-কে নাম দিয়ে আমরা সেটির পরমত্বকে খর্ব করেছি। তবু যদি ধরা যায়, এ রকম একটা অবস্থা থাকা সম্ভব, তাহলে সেটিরই হওয়া উচিত ছিল প্রকৃতির স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। এই বাক্যটি যে স্ববিরোধিতায় পূর্ণ, তা স্বীকার করি। কিন্তু তাত্ত্বিক বিজ্ঞানীরা এই নিয়ে ভাবেন এবং কেন ‘কিছু না’-এর পরিবর্তে ‘কিছু’-এর (মহাবিশ্বের) আবির্ভাব হয়েছে, এই ধাঁধা তাদের রাতে জাগিয়ে রাখে।
সেই ‘কিছু না’ অবস্থায় হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা তত্ত্ব যদি কাজ করে, তবে ক্রমাগতই তাতে ছোট ছোট দেশ-কাল সৃষ্টি হবে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই সেগুলো আবার ‘কিছু না’-তে বিলীন হয়ে যাবে। একে কোয়ান্টাম বিচলন বলা যেতে পারে। কিন্তু মাঝেমধ্যে যদি সেই ক্ষণিক দেশ-কালের বুদ্বুদে অন্য কোনো বিশেষ ‘ক্ষেত্রের’ আবির্ভাব হয়, যা সেই বুদ্বুদকে খুব দ্রুত স্ফীত করবে, তাহলে সেই দেশ-কালটি স্থায়ী হয়ে যেতে পারে। এবং আমরা এই দেশ-কালের বুদ্বুদের আবির্ভাব ও দ্রুত প্রসারণকে বিগ ব্যাং বলে অভিহিত করতে পারি।
এই মডেল খুব আকর্ষণীয়, শুধু এখানে একটি বড় সমস্যা রয়ে গেছে। আমরা যখন ‘কিছু না’ বলছি, তার মধ্যে পদার্থবিদ্যা বা প্রকৃতির কোনো নীতিও থাকবে না। তাই হাইজেনবার্গের তত্ত্ব বা কোয়ান্টাম বিচলনের সেখানে কাজ করার কথা নয়। যদি করে, তাহলে সেটি পরম শূন্য বা ‘কিছু না’ হবে না। এই মডেলে মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগেই কোয়ান্টাম বিচলনকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাহলে বলতে হবে—পরম ‘কিছু না’ বলে কখনোই কিছু সম্ভব নয়। কারণ, কোয়ান্টাম তত্ত্ব ‘সব জায়গায়’ প্রতিষ্ঠিত।
নইলে আমাদের এমন এক মহাবিশ্বের কথা ভাবতে হবে, যার ঠিক শুরু নেই, যেমন ভেবেছিলেন স্টিফেন হকিং বহু বছর আগে। তাঁর সেই মডেলে মহাবিশ্বের শুরুতে ‘সময়’ বলে কিছু ছিল না, শুধু ছিল ‘দেশ’ বা ‘স্থান’। যেহেতু সময় ছিল না, বিগ ব্যাং-এর আগে কী ছিল, সেই প্রশ্নটি তখন আর করা যাবে না। কিন্তু যা-ই হোক না কেন, এই ধরনের ধাঁধা বা প্রশ্ন যে খুব গভীর এবং দর্শনের সঙ্গে জড়িত, তা বোঝাই যাচ্ছে।
আমাদের গ্যালাক্সিতে তারার সংখ্যা ৪০০ বিলিয়নের (৪০ হাজার কোটি) মতো হবে হয়তো। অথচ আমাদের নিকটবর্তী তারা প্রায় সাড়ে চার আলোকবর্ষ দূরে। এখনকার প্রযুক্তি ব্যবহার করলে সেখানে পৌঁছাতে ৬০-৭০ হাজার বছর লেগে যাবে। শুধু তা-ই নয়, পৃথিবীর সমস্ত রাসায়নিক জ্বালানি যথেষ্ট হবে না এই কাজ সম্পন্ন করতে। আমরা চাঁদে, মঙ্গলে, এমনকি বৃহস্পতির চাঁদগুলোতেও হয়তো যেতে পারব। কিন্তু আকাশের তারারা হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের হাতের বাইরে থাকবে। সেখানে হয়তো আমরা আদৌ পৌঁছাতে পারব না।
আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্বে গ্যালাক্সির সংখ্যা হতে পারে প্রায় ১০ ট্রিলিয়নের (১০ লাখ কোটি) মতো। আর দৃশ্যমান মহাবিশ্ব হয়তো-বা সমগ্র মহাবিশ্বের একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ। নিঃসন্দেহে শুধু ক্ষুদ্র একটি পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির, বুদ্ধিমান চেতনার উদ্ভবের জন্য মহাবিশ্বের কোটি কোটি গ্যালাক্সির প্রয়োজন ছিল না। এই গ্যালাক্সিগুলো সম্পর্কে যতই আমরা জানছি, আমাদের ব্যবহার্য জীবনে তাদের ভূমিকা যে শূন্য, তা-ও বুঝতে পারছি। মহাবিশ্বের এই বিশালতা একদিকে যেমন আমাদের বিস্মিত করে, অন্যদিকে ওয়াইনবার্গের সেই ‘উদ্দেশ্যহীনতা’ উক্তির কথা মনে করিয়ে দেয়। কিছু জ্ঞান প্রকৃতি হয়তো আমাদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখবে—কণার সঠিক অবস্থান ও ভরবেগ একসঙ্গে আমরা কখনোই নিরূপণ করতে পারব না। কৃষ্ণবিবরের মধ্যে সিংগুলারিটিকে আমরা কখনোই দেখব না। সমগ্র মহাবিশ্বের (শুধু দৃশ্যমান মহাবিশ্ব নয়) বিস্তার আমাদের কাছে রইবে অজানা, যেমন অজানা রইবে হয়তো এই প্রশ্নের উত্তর—কেন ‘কিছু’ আছে ‘কোনো কিছু না থাকা’-এর বদলে। কিন্তু এর মধ্যেই রয়েছে আমাদের জীবনদর্শনের পরিপূর্ণতা। প্রকৃতির এই খেলার নিগূঢ় নির্যাসকে স্বীকার করে নেওয়ার মধ্যে রয়েছে একধরনের স্বস্তি। সেই স্বস্তি আমাদের জীবনকে দেয় অর্থ। জীবনের শেষে এসে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন—
‘রূপনারানের কূলে
জেগে উঠিলাম,
জানিলাম এ জগৎ
স্বপ্ন নয়।
রক্তের অক্ষরে দেখিলাম
আপনার রূপ,
চিনিলাম আপনারে
আঘাতে আঘাতে
বেদনায় বেদনায়;
সত্য যে কঠিন,
কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,
সে কখনো করে না বঞ্চনা।
আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন,
সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করিবারে,
মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দিতে।’
বিজ্ঞান অনেক ক্ষেত্রেই মানুষকে কঠিন সত্যের মুখোমুখি করে। আমাদের মধ্যে কে স্বস্তি বোধ করবে এই ভেবে যে আমরা উদ্ভূত হয়েছি এক প্রাককেন্দ্রিক এক কোষী প্রাণী থেকে? আমাদের মধ্যে কে স্বস্তি বোধ করবে, এই ভেবে যে তাপগতি-বিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রের অমোঘ গতিতে একদিন আকাশের সব তারা নিভে যাবে? আমি বলব, এই যে অস্বস্তি, সেটিই আমাদের মানবিক বোধকে পরবর্তী পর্যায়ে উন্নীত করে। একদিকে যেমন আমরা মহাবিশ্বের উদাসীনতায় বিভ্রান্ত, অন্যদিকে সেই মহাবিশ্বকে আমাদের চেতনায়, বোধে পুনর্গঠিত করার মধ্যে আমাদের অস্তিত্বের অনন্য মূল্য নির্ধারিত হয়। আমাদের বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলতে এই জ্ঞানটির, এই বোধটির ভূমিকা অতুলনীয়। এটিকে গ্রহণ করতে সাহসের প্রয়োজন। সাধারণ মানুষ যখন তার সমস্ত ভঙ্গুরতা, নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে কঠিন সত্যকে আত্মস্থ করতে পারবে; অর্থাৎ, তার বাসস্থান, পৃথিবী নামের এই জাহাজটিকে অসীম স্থান-কালের অনুপাতে বিচার করতে পারবে; তখন সে আরেক ধরনের শান্তি ও স্বস্তি পাবে। সামগ্রিক মানবকল্যাণের জন্যও সেই বোধটির প্রয়োজন।
দীপেন ভট্টাচার্য: জ্যোতিঃপদার্থবিদ, অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, মোরেনো ভ্যালি কলেজ, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র

দুরবিনের ব্যাস যত বড় হবে, তত ছোট ও গোল বস্তুর আকার সেটি দেখতে পাবে। এই ক্ষেত্রে দুরবিনের ব্যাস আমাদের পৃথিবীর সমান হয়েছিল। ২০১৯ সালে একই পদ্ধতিতে ইএইচটি আমাদের থেকে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরের, ‘এম-এইটি সেভেন’ নামে একটি বিশাল গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা অতিকায় কৃষ্ণবিবরের ছবি তুলতে সমর্থ হয়েছিল।
উদ্দেশ্যহীন মহাবিশ্ব?
এ বছর বিজ্ঞানীরা ঘোষণা করলেন, ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ (ইএইচটি) দিয়ে তাঁরা মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গে আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রের কৃষ্ণবিবরটির ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছেন। ‘বিবর’ অর্থ ‘গর্ত’ বা ‘গহ্বর’। সেই অর্থে কৃষ্ণবিবর হলো ‘ব্ল্যাক হোল’ কথাটির বঙ্গানুবাদ। আসলে এটিকে সরাসরি বিবরের ছবি বলা যাবে না। কারণ, সাধারণ ধারণা অনুযায়ী কৃষ্ণগহ্বর থেকে আলো বের হতে পারে না। তাই এই ছবি আসলে হলো বিবরটি যে ছায়া সৃষ্টি করে, সেটির প্রতিবিম্ব। ইএইচটি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা আটটি দুরবিনের তথ্যকে একত্র করে একটি বিশাল ১০ হাজার ৭০০ কিলোমিটার ব্যাসের দুরবিনের ভূমিকা পালন করে। দুরবিনের ব্যাস যত বড় হবে, তত ছোট ও গোল বস্তুর আকার সেটি দেখতে পাবে। এই ক্ষেত্রে দুরবিনের ব্যাস আমাদের পৃথিবীর সমান হয়েছিল। এর আগে ২০১৯ সালে একই পদ্ধতিতে ইএইচটি আমাদের থেকে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরের, ‘এম-এইটি সেভেন’ নামে একটি বিশাল গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা অতিকায় কৃষ্ণবিবরের ছবি তুলতে সমর্থ হয়েছিল।
১৯১৫ সালে আইনস্টাইন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব প্রকাশের কয়েক মাসের মধ্যেই জার্মান বিজ্ঞানী কার্ল সোয়ার্ৎসশিল্ড আপেক্ষিকতা সমীকরণের একটি সমাধান বের করেন। একটি স্থির (ঘূর্ণমান নয়) বড় তারার চারদিকে দেশ-কালের মেট্রিক (বা চাদর) কী রকম হবে, সেটা এই সমাধান থেকে পাওয়া যায়। এই মেট্রিক ব্যবহার করে আমরা দেখি যে তারাটির সমস্ত ভর যদি একটি বিন্দুসমেত কেন্দ্রে আপতিত হয়, তবে সেই বিন্দু থেকে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত কোনো আলোক কণিকা থাকলে, সেই কণিকা তার উচ্চগতি সত্ত্বেও কেন্দ্রটির মাধ্যাকর্ষণ থেকে মুক্তি পাবে না এবং আমরা ওই তারা সম্পর্কে সরাসরিভাবে কোনো তথ্যই পাব না। এই দূরত্বকে সোয়ার্ৎসশিল্ড ব্যাসার্ধ বলা হয়, যা ঘটনা-দিগন্তকে নির্দিষ্ট করে। ঘটনা-দিগন্তের মধ্য থেকে কোনো সংবাদই বহির্বিশ্বে পৌঁছাবে না।
সোয়ার্ৎসশিল্ড মেট্রিকের একটি পরিণাম হচ্ছে সিংগুলারিটি। সিংগুলারিটি কী? একটি বড় ভরের তারা, যদি সেটা সূর্যের চেয়ে অন্তত পাঁচ গুণ বেশি ভরের হয়, তার সমস্ত জ্বালানি ফুরিয়ে ফেললে; অর্থাৎ, তার জীবনের শেষে, একটি বিন্দুসমেত কেন্দ্রে খুবই ক্ষুদ্র বস্তুতে আপতিত হবে। সেই বস্তুর (তাকে বস্তু বলা হয়তো সংগত নয়) ঘনত্ব এমনই, বা তার মহাকর্ষ বল এমনই যে, সেটি চারদিকের দেশ-কালের বক্রতাকে অসীম করে দেবে। সেই বক্রতা ভেতরের বস্তুটিকে পুরোপুরি ঢেকে দেবে। অর্থাৎ, সে আমাদের মহাবিশ্ব থেকে বিযুক্ত হয়ে যাবে। এই অসীম ঘনত্বের বা অসীম মহাকর্ষীয় বলের বিন্দুটিকে ইংরেজিতে সিংগুলারিটি বলা হয়। সিংগুলারিটির অর্থ হলো অনন্য। এমন অনন্য অবস্থা মহাবিশ্বের আর অন্য কোথাও বিরাজ করে না।
কৃষ্ণবিবর বা ব্ল্যাক হোল বলতে আমরা সিংগুলারিটিসহ ঘটনা-দিগন্তের মধ্যে যা আছে, তা-ই বোঝাই। অর্থাৎ, কৃষ্ণগহ্বর হলো সিংগুলারিটি ও ঘটনা-দিগন্তের যোগফল।
আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রের কৃষ্ণগহ্বরটি, যার নাম হলো Sgr A*, তার ভর হলো প্রায় ৪০ লাখ সৌরভর। অর্থাৎ, ৪০ লাখ সূর্য একত্র করলে যে ভর পাওয়া যায়। অন্যদিকে অতিকায় গ্যালাক্সি M৮৭-এর কেন্দ্রের কৃষ্ণবিবরটির ভর হলো প্রায় ৬৬০ কোটি সূর্যের সমান। Sgr A* আমাদের থেকে ২৭ হাজার আলোকবর্ষ দূরে। আলো এক সেকেন্ডে প্রায় ৩ লাখ কিলোমিটার ভ্রমণ করে। আজ যে Sgr A* আমরা দেখছি, তার আলো ২৭ হাজার বছর আগে রওনা দিয়েছিল। আর M৮৭ থেকে যে আলো আমরা দেখছি, সেটি সেখান থেকে বিকিরিত হয়েছিল সাড়ে ৫ কোটি বছর আগে। সাড়ে ৫ কোটি বছর আগে বাংলাদেশ যে বঙ্গীয় বদ্বীপের ওপর অবস্থিত, সেটির জন্মই হয়নি। সাড়ে ৫ কোটি বছর আগে ভারতীয় উপমহাদেশের টেকটনিক পাত সবে ইউরেশীয় পাতের সঙ্গে ধাক্কা খেতে শুরু করেছে, হিমালয় তখনো ওঠা শুরু করেনি।
আমাদের এই মহাবিশ্বের শুরু ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩৮০ কোটি বছর আগে। এই শুরুটা হয়েছে কোনো এক মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে, যাকে বিগ ব্যাং বলা হয়। এর ফলে আমাদের বর্তমান মহাবিশ্ব ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে। বিগ ব্যাং একটি মডেল। এটিকে যে একটা মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমেই সংঘটিত হতে হবে—এমন নয়। বরং ‘কোনো কিছু নেই’—এমন একটি পর্যায়ের মধ্যে কোয়ান্টাম বিচলনের ফলে দেশ-কালের আবির্ভাবের মধ্যেও বিগ ব্যাং হতে পারে। এ নিয়ে পরে বলছি। বিগ ব্যাং-এর কয়েক শ মিলিয়ন বছরের মধ্যেই প্রথম নক্ষত্র ও প্রথম গ্যালাক্সির আবির্ভাব হয়। সেই প্রথম একটি গ্যালাক্সি থেকে আমাদের কাছে আলো আসতে ১ হাজার ৩০০ কোটি বছরের বেশি সময় নেয়। কিন্তু সেই গ্যালাক্সি মহাবিশ্বের প্রসারণের ফলে ‘এই মুহূর্তে’ ১ হাজার ৩০০ কোটি আলোকবর্ষ নয়, বরং ৪ হাজার ৬০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এই মুহূর্তে সেই গ্যালাক্সি থেকে যে আলো বিকিরিত হচ্ছে, তা আমাদের পৃথিবীর এই জায়গায় কোনো দিনই পৌঁছাবে না। অনেক বিজ্ঞানীর ধারণা, আমাদের দৃশ্যমান যে মহাবিশ্ব, তা বিশাল এক মহাবিশ্বের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ মাত্র। সেই অর্থে পুরো মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমরা কোনো দিনই জানতে পারব না।
আমাদের ক্ষুদ্র জীবনের সময় দিয়ে এই ধরনের মহাজাগতিক দূরত্ব ও সময়কে কীভাবে বোঝা সম্ভব? নোবেল পুরস্কার বিজয়ী স্টিভেন ওয়াইনবার্গ একবার বলেছিলেন, ‘মহাবিশ্বকে আমরা যত বুঝতে পারছি, ততই সেটিকে উদ্দেশ্যহীন মনে হচ্ছে।’ ওয়াইনবার্গ ‘পয়েন্টলেস’ কথাটি ব্যবহার করেছিলেন। এই উক্তির জন্য ওয়াইনবার্গকে অনেক গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছিল। কিন্তু অনেকেই ওই উক্তির পরবর্তী বাক্যগুলো পড়েননি। ওয়াইনবার্গ লিখছেন—
‘আমাদের গবেষণার ফলাফল আমাদের স্বস্তি না দিতে পারে, কিন্তু কিছু শান্তি পাওয়া যাবে গবেষণা প্রক্রিয়ার ভেতরেই। দেবতা বা ক্ষমতাশীলদের গল্পকথা দিয়ে, অথবা প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডে তাদের চিন্তা আবদ্ধ রেখে নারী ও পুরুষেরা যে সান্ত্বনা পায়, তাতে তারা আর সন্তুষ্ট নয়। তারা এখন তৈরি করছে দুরবিন, কৃত্রিম উপগ্রহ, কণাত্বরক যন্ত্র। তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের ডেস্কে বসে গবেষণালব্ধ তথ্যের অন্তর্নিহিত অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা করছে। মহাবিশ্বকে বোঝার এই যে প্রচেষ্টা—তা খুব কম জিনিসের মধ্যে একটি, যা মানুষের জীবনকে প্রহসনের ওপরে ওঠায়, তাকে ট্র্যাজেডির সৌন্দর্যের কিছুটা অংশ দেয়।’
ওয়াইনবার্গ ‘গ্রেস অব ট্র্যাজেডি’ কথাটি ব্যবহার করেছেন। বলাই বাহুল্য, ‘গ্রেস’ শুধু সৌন্দর্য নয়, তার মধ্যে আধ্যাত্মিক একটি ভাব নিহিত আছে। যে বিজ্ঞানীরা মহাজগৎ ও পদার্থবিদ্যার মৌলিক সূত্রগুলো নিয়ে গবেষণা করেন, তাঁরা তাঁদের কাজে সেই ‘গ্রেস’ খুঁজে পান। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁরা এটি সম্বন্ধেও সচেতন যে মহাবিশ্ব বা প্রকৃতির গঠনে এমন কিছু আছে, যা আমাদের জ্ঞানকে পূর্ণতা দেবে না। সেই অপূর্ণতাকে মেনে নেওয়ার মধ্যেও একধরনের বলিষ্ঠতা প্রয়োজন।
প্রকৃতির অপূর্ণতা
১৯২৫ সালে হাইজেনবার্গ তাঁর অনিশ্চয়তা (বা অনির্দেশ্যতার) নীতি প্রণয়ন করেন: কণার অবস্থান এবং ভরবেগ (বা বেগ), এই দুটি জিনিসকে একই সঙ্গে যথেচ্ছ সূক্ষ্মভাবে পরিমাপ করা যাবে না। অর্থাৎ, আমরা যদি কণার অবস্থানকে সূক্ষ্মভাবে মাপতে পারি, তবে তার বেগ সম্বন্ধে আমাদের ধারণা থাকবে অস্পষ্ট। ফলে সেটির পরমুহূর্তের অবস্থান থাকবে অজ্ঞাত। অনুরূপভাবে কণার বেগকে যথার্থভাবে জানলে, সেটির অবস্থানকে নিশ্চিতভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। (একইভাবে এই নীতি অনুযায়ী শূন্য থেকে শক্তি ঋণ করে কণারা খুব অল্প সময়ের জন্য বাস্তবে আবির্ভূত হতে পারে। এবং সেই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সময় শেষে আবার হারিয়ে শূন্যে মিলিয়ে যেতে পারে।) ফলে নিউটনীয় চিরায়ত বলবিদ্যার পরিণামবাদী বা নিষ্পত্তিমূলক মহাবিশ্বের অবসান ঘটল। ১৮১৪ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী লাপলাস বলেছিলেন, এমন কোনো অস্তিত্ব যদি থাকে, যে সে কোনো একটা মুহূর্তে মহাবিশ্বের সমস্ত কণার অবস্থান এবং তাদের ওপর প্রযোজ্য বলের পরিমাণ জানবে, তাহলে তার পক্ষে মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ ও অতীত অবস্থা নির্ধারণ করা কঠিন হবে না। এই অস্তিত্বকে অনেকে লাপলাসের দানব বলে অভিহিত করেন।
কোয়ান্টাম বলবিদ্যা সুনিশ্চিতভাবে লাপলাসের দানবের পরিণামবাদী মহাবিশ্বের অবসান ঘটাল। শুধু তা-ই নয়, কোয়ান্টাম বলবিদ্যা বলল কণাসমূহের শুধু কণা বৈশিষ্ট্যই নয়, একটি তরঙ্গ বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। তবে এই তরঙ্গ প্রকৃত ‘বাস্তব তরঙ্গ’, নাকি একটি ‘সম্ভাবনা তরঙ্গ’ তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। যদিও বেশির ভাগ বিজ্ঞানীই মনে করেন, মুক্ত কণার (যেমন ইলেকট্রনের) অবস্থান প্রসারণশীল ‘সম্ভাবনা তরঙ্গ’ দিয়ে বর্ণনা করা সম্ভব, যার প্রকৃতি নিতান্তই গাণিতিক। অন্যদিকে যে মুহূর্তে ওই ইলেকট্রনটিকে অবলোকন করা হবে, সেটি একটি কণায় রূপান্তরিত হবে। কণা ও তরঙ্গের এই যে দ্বৈত বাস্তবতা, তা আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার বাইরে। একটি ইলেকট্রন একটি বিন্দু থেকে আরেকটি বিন্দুতে কীভাবে ভ্রমণ করে, আমরা তা সঠিক জানি না। কারণ, দুটি বিন্দুর মধ্যে অসংখ্য সম্ভাব্য পথ রয়েছে। সেই পথগুলোকে আমাদের মনে চিত্রিত করা সম্ভব নয়; শুধু গাণিতিকভাবে বিশ্লেষণ করা সম্ভব।
বিজ্ঞানের দর্শনে পজিটিভিজমের মত হলো, শুধু সরাসরি অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বস্তু সম্পর্কে যে জ্ঞান লাভ করা যাবে তা-ই একমাত্র সত্য, এর বাইরে কিছু বললে সেটা হবে জল্পনা। ভিয়েনার বিজ্ঞানী আর্নেস্ট মাখ এর অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন। যেহেতু ১৮ শতকের শেষে ও ১৯ শতকের প্রথম দিকে পরমাণুকে সরাসরি পর্যবেক্ষণের কোনো পদ্ধতি জানা ছিল না, পজিটিভিস্টরা পরমাণু সম্পর্কে আলোচনাকে বিজ্ঞানবহির্ভূত মনে করতেন। অন্যদিকে রিয়্যালিস্ট বা বাস্তববাদীরা সরাসরি পরমাণু দেখা না গেলেও সেটিকে বাস্তব ধরে নিয়ে গবেষণা করতেন। আইনস্টাইনকে মাখ বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিলেন। কিন্তু ১৯২০-এর দশকের আইনস্টাইন পজিটিভিস্ট ছিলেন না, বরং বাস্তববাদী ছিলেন। অন্যদিকে কোয়ান্টাম তত্ত্বের প্রবক্তারা, বিশেষ করে নিলস বোর ও হাইজেনবার্গ পজিটিভিজমকে পুরোপুরি ত্যাগ করেননি। তাঁরা মনে করতেন, কোয়ান্টাম পর্যবেক্ষণের ফলাফল পরীক্ষক কী দেখতে চাইছেন, সেটার ওপর নির্ভর করে: পরীক্ষক যদি ইলেকট্রনের তরঙ্গদৈর্ঘ্য মাপতে চান, তো ইলেকট্রনকে তরঙ্গ হিসেবে দেখবেন। অন্যদিকে তিনি যদি তাঁর ভরবেগ নির্ধারণ করতে চান, তাহলে কণা হিসেবে দেখবেন। কণা বা তরঙ্গ এ দুই বৈশিষ্ট্যের কোনো অর্থ নেই, যতক্ষণ না পরীক্ষক তাঁর স্বাধীন চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যকে অবলোকন করবেন। বাস্তববাদী আইনস্টাইনের কাছে এ রকম অজ্ঞেয়বাদ ছিল পুরোপুরিই পরিত্যাজ্য।
হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি বলে, কণার অবস্থান ও গতিবেগ একই সঙ্গে যথার্থভাবে জানা যাবে না। প্রকৃতি সম্পর্কে এটাও একধরনের অজ্ঞানতা। অর্থাৎ, আমাদের পর্যবেক্ষণপদ্ধতি যতই দক্ষ হোক না কেন, আমাদের কাছে এ দুই জিনিস একসঙ্গে অজানা থেকে যাবে। এই অজ্ঞানতা দেশ-কালের চাদরের মধ্যেই প্রোথিত। একে এড়ানোর উপায় নেই। আইনস্টাইনের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য ছিল না। তিনি বললেন, কোয়ান্টাম তত্ত্বপূর্ণ নয়। লিখলেন, ‘ঈশ্বর পাশা খেলতে পারে, ঠিক আছে; কিন্তু সে যে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে জুয়া খেলবে, এটা আমার ধারণার বাইরে।’ ঈশ্বর অর্থে এখানে তিনি প্রকৃতিকেই বুঝিয়েছিলেন। ১৯৩০ সালের ১৯ আগস্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে আলাপে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরমাণুর রাজ্যে আকস্মিকতা কাজ করে। কাজেই, অস্তিত্বের নাটক পুরোপুরি পূর্বনির্ধারিত নয়।’ তখন আইনস্টাইন উত্তর দিয়েছিলেন, ‘তার মানে এই নয় যে, বিজ্ঞান থেকে কার্যকারণ বিদায় হয়েছে।’ কার্যকারণ আইনস্টাইনের দর্শনে একটা বড় ভূমিকা রেখেছিল। তিনি বাস্তববাদী ছিলেন এবং মানব-নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র বাস্তবতায় বিশ্বাস করতেন। একই সঙ্গে প্রকৃতি যে কিছু জ্ঞান আমাদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখবে, তাতে বিশ্বাস করতেন না।
আইনস্টাইন নিজে খেয়ালিপনায় সে রকম বিশ্বাস করতেন না। যদিও তাঁর অগোছালো চুলের যে ছবিটি সবচেয়ে জনপ্রিয়, তাতে তাঁকে মন-ভোলা খেয়ালি বিজ্ঞানী হিসেবেই আমরা দেখি। কোয়ান্টাম তত্ত্বে ভরসা না রেখে তিনি জীবনের শেষ ২৫টি বছর আপেক্ষিকতা ও তড়িৎ-চুম্বকীয় ক্ষেত্রতত্ত্বের সংমিশ্রণে পদার্থবিদ্যার চূড়ান্ত নীতি প্রণয়ন করতে চেয়েছিলেন। ‘প্রকৃতি জুয়া খেলবে না’—এই জীবন দর্শন তাঁকে এই পথে পরিচালিত করে। তাঁর সেই উদ্যোগ অবশ্য সফল হয়নি। তাই আইনস্টাইনের পক্ষে কৃষ্ণবিবরের সিংগুলারিটির অস্তিত্ব মেনে নেওয়া কঠিন ছিল। তাঁর কাছে সিংগুলারিটি হলো প্রকৃতির খেয়ালিপনা, যার বৈশিষ্ট্যকে আমরা কোনোভাবেই নির্ধারণ করতে পারব না। যে সিংগুলারিটি থেকে আমরা কোনো তথ্যই আর আহরণ করতে পারব না (যদিও ইদানীং এই ধারণাটির পরিবর্তন হয়েছে)। আইনস্টাইন বিশ্বাস করতেন, প্রকৃতি কোনোভাবে সিংগুলারিটি (বা ব্ল্যাক হোল) সৃষ্টিতে বাধা দেবে। কারণ, সিংগুলারিটি হলো প্রকৃতি সম্বন্ধে আমাদের একধরনের অজ্ঞানতা। এ হলো যেন প্রকৃতির অপূর্ণতা। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার পরিসংখ্যানগত অনিশ্চয়তাকে তিনি যেমন পছন্দ করেননি, তেমনি একটি তারার পতন সিংগুলারিটি সৃষ্টি করতে পারে—সেটাও মেনে নেননি। অথচ এই দুটি বিষয়ের সূত্রপাত তিনি নিজ হাতে করে গিয়েছিলেন।
পরম ‘কিছু না’
চিন্তা করুন এমন একটি অবস্থা, যেখানে স্থান-কাল-পাত্র নেই। নেই দেশ-কালের চাদর, সময় নেই, স্পেস বা স্থান বলতে যা বোঝাই, সেই স্থান নেই। এমন একটি অবস্থা চিন্তা করা দুরূহ। কারণ, চিন্তার মাধ্যমে আমরা সেটিকে আকার দিই। কারণ, ‘কিছু না’-কে মনে স্থান দিলে সেটি ‘কিছু’-তে পরিণত হয়। বিখ্যাত চৈনিক দার্শনিক গ্রন্থ তাও-তে-চিং শুরুই হয়েছে এই পঙ্ক্তি দিয়ে—
‘যে তাওকে (পথকে) বর্ণনা করা যায়, তা চিরন্তন তাও নয়
যে নামকে উচ্চারণ করা যায়, তা চিরন্তন নাম নয়।
নামহীন যা তা স্বর্গ ও মর্ত্যের সীমানা
আর নামযুক্ত যা তা সকল সৃষ্টির মাতা।।’
আমাদের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, পরম ‘কিছু না’-কে নাম দিয়ে আমরা সেটির পরমত্বকে খর্ব করেছি। তবু যদি ধরা যায়, এ রকম একটা অবস্থা থাকা সম্ভব, তাহলে সেটিরই হওয়া উচিত ছিল প্রকৃতির স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। এই বাক্যটি যে স্ববিরোধিতায় পূর্ণ, তা স্বীকার করি। কিন্তু তাত্ত্বিক বিজ্ঞানীরা এই নিয়ে ভাবেন এবং কেন ‘কিছু না’-এর পরিবর্তে ‘কিছু’-এর (মহাবিশ্বের) আবির্ভাব হয়েছে, এই ধাঁধা তাদের রাতে জাগিয়ে রাখে।
সেই ‘কিছু না’ অবস্থায় হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা তত্ত্ব যদি কাজ করে, তবে ক্রমাগতই তাতে ছোট ছোট দেশ-কাল সৃষ্টি হবে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই সেগুলো আবার ‘কিছু না’-তে বিলীন হয়ে যাবে। একে কোয়ান্টাম বিচলন বলা যেতে পারে। কিন্তু মাঝেমধ্যে যদি সেই ক্ষণিক দেশ-কালের বুদ্বুদে অন্য কোনো বিশেষ ‘ক্ষেত্রের’ আবির্ভাব হয়, যা সেই বুদ্বুদকে খুব দ্রুত স্ফীত করবে, তাহলে সেই দেশ-কালটি স্থায়ী হয়ে যেতে পারে। এবং আমরা এই দেশ-কালের বুদ্বুদের আবির্ভাব ও দ্রুত প্রসারণকে বিগ ব্যাং বলে অভিহিত করতে পারি।
এই মডেল খুব আকর্ষণীয়, শুধু এখানে একটি বড় সমস্যা রয়ে গেছে। আমরা যখন ‘কিছু না’ বলছি, তার মধ্যে পদার্থবিদ্যা বা প্রকৃতির কোনো নীতিও থাকবে না। তাই হাইজেনবার্গের তত্ত্ব বা কোয়ান্টাম বিচলনের সেখানে কাজ করার কথা নয়। যদি করে, তাহলে সেটি পরম শূন্য বা ‘কিছু না’ হবে না। এই মডেলে মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগেই কোয়ান্টাম বিচলনকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাহলে বলতে হবে—পরম ‘কিছু না’ বলে কখনোই কিছু সম্ভব নয়। কারণ, কোয়ান্টাম তত্ত্ব ‘সব জায়গায়’ প্রতিষ্ঠিত।
নইলে আমাদের এমন এক মহাবিশ্বের কথা ভাবতে হবে, যার ঠিক শুরু নেই, যেমন ভেবেছিলেন স্টিফেন হকিং বহু বছর আগে। তাঁর সেই মডেলে মহাবিশ্বের শুরুতে ‘সময়’ বলে কিছু ছিল না, শুধু ছিল ‘দেশ’ বা ‘স্থান’। যেহেতু সময় ছিল না, বিগ ব্যাং-এর আগে কী ছিল, সেই প্রশ্নটি তখন আর করা যাবে না। কিন্তু যা-ই হোক না কেন, এই ধরনের ধাঁধা বা প্রশ্ন যে খুব গভীর এবং দর্শনের সঙ্গে জড়িত, তা বোঝাই যাচ্ছে।
আমাদের গ্যালাক্সিতে তারার সংখ্যা ৪০০ বিলিয়নের (৪০ হাজার কোটি) মতো হবে হয়তো। অথচ আমাদের নিকটবর্তী তারা প্রায় সাড়ে চার আলোকবর্ষ দূরে। এখনকার প্রযুক্তি ব্যবহার করলে সেখানে পৌঁছাতে ৬০-৭০ হাজার বছর লেগে যাবে। শুধু তা-ই নয়, পৃথিবীর সমস্ত রাসায়নিক জ্বালানি যথেষ্ট হবে না এই কাজ সম্পন্ন করতে। আমরা চাঁদে, মঙ্গলে, এমনকি বৃহস্পতির চাঁদগুলোতেও হয়তো যেতে পারব। কিন্তু আকাশের তারারা হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের হাতের বাইরে থাকবে। সেখানে হয়তো আমরা আদৌ পৌঁছাতে পারব না।
আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্বে গ্যালাক্সির সংখ্যা হতে পারে প্রায় ১০ ট্রিলিয়নের (১০ লাখ কোটি) মতো। আর দৃশ্যমান মহাবিশ্ব হয়তো-বা সমগ্র মহাবিশ্বের একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ। নিঃসন্দেহে শুধু ক্ষুদ্র একটি পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির, বুদ্ধিমান চেতনার উদ্ভবের জন্য মহাবিশ্বের কোটি কোটি গ্যালাক্সির প্রয়োজন ছিল না। এই গ্যালাক্সিগুলো সম্পর্কে যতই আমরা জানছি, আমাদের ব্যবহার্য জীবনে তাদের ভূমিকা যে শূন্য, তা-ও বুঝতে পারছি। মহাবিশ্বের এই বিশালতা একদিকে যেমন আমাদের বিস্মিত করে, অন্যদিকে ওয়াইনবার্গের সেই ‘উদ্দেশ্যহীনতা’ উক্তির কথা মনে করিয়ে দেয়। কিছু জ্ঞান প্রকৃতি হয়তো আমাদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখবে—কণার সঠিক অবস্থান ও ভরবেগ একসঙ্গে আমরা কখনোই নিরূপণ করতে পারব না। কৃষ্ণবিবরের মধ্যে সিংগুলারিটিকে আমরা কখনোই দেখব না। সমগ্র মহাবিশ্বের (শুধু দৃশ্যমান মহাবিশ্ব নয়) বিস্তার আমাদের কাছে রইবে অজানা, যেমন অজানা রইবে হয়তো এই প্রশ্নের উত্তর—কেন ‘কিছু’ আছে ‘কোনো কিছু না থাকা’-এর বদলে। কিন্তু এর মধ্যেই রয়েছে আমাদের জীবনদর্শনের পরিপূর্ণতা। প্রকৃতির এই খেলার নিগূঢ় নির্যাসকে স্বীকার করে নেওয়ার মধ্যে রয়েছে একধরনের স্বস্তি। সেই স্বস্তি আমাদের জীবনকে দেয় অর্থ। জীবনের শেষে এসে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন—
‘রূপনারানের কূলে
জেগে উঠিলাম,
জানিলাম এ জগৎ
স্বপ্ন নয়।
রক্তের অক্ষরে দেখিলাম
আপনার রূপ,
চিনিলাম আপনারে
আঘাতে আঘাতে
বেদনায় বেদনায়;
সত্য যে কঠিন,
কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,
সে কখনো করে না বঞ্চনা।
আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন,
সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করিবারে,
মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দিতে।’
বিজ্ঞান অনেক ক্ষেত্রেই মানুষকে কঠিন সত্যের মুখোমুখি করে। আমাদের মধ্যে কে স্বস্তি বোধ করবে এই ভেবে যে আমরা উদ্ভূত হয়েছি এক প্রাককেন্দ্রিক এক কোষী প্রাণী থেকে? আমাদের মধ্যে কে স্বস্তি বোধ করবে, এই ভেবে যে তাপগতি-বিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রের অমোঘ গতিতে একদিন আকাশের সব তারা নিভে যাবে? আমি বলব, এই যে অস্বস্তি, সেটিই আমাদের মানবিক বোধকে পরবর্তী পর্যায়ে উন্নীত করে। একদিকে যেমন আমরা মহাবিশ্বের উদাসীনতায় বিভ্রান্ত, অন্যদিকে সেই মহাবিশ্বকে আমাদের চেতনায়, বোধে পুনর্গঠিত করার মধ্যে আমাদের অস্তিত্বের অনন্য মূল্য নির্ধারিত হয়। আমাদের বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলতে এই জ্ঞানটির, এই বোধটির ভূমিকা অতুলনীয়। এটিকে গ্রহণ করতে সাহসের প্রয়োজন। সাধারণ মানুষ যখন তার সমস্ত ভঙ্গুরতা, নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে কঠিন সত্যকে আত্মস্থ করতে পারবে; অর্থাৎ, তার বাসস্থান, পৃথিবী নামের এই জাহাজটিকে অসীম স্থান-কালের অনুপাতে বিচার করতে পারবে; তখন সে আরেক ধরনের শান্তি ও স্বস্তি পাবে। সামগ্রিক মানবকল্যাণের জন্যও সেই বোধটির প্রয়োজন।
দীপেন ভট্টাচার্য: জ্যোতিঃপদার্থবিদ, অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, মোরেনো ভ্যালি কলেজ, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র
দীপেন ভট্টাচার্য

দুরবিনের ব্যাস যত বড় হবে, তত ছোট ও গোল বস্তুর আকার সেটি দেখতে পাবে। এই ক্ষেত্রে দুরবিনের ব্যাস আমাদের পৃথিবীর সমান হয়েছিল। ২০১৯ সালে একই পদ্ধতিতে ইএইচটি আমাদের থেকে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরের, ‘এম-এইটি সেভেন’ নামে একটি বিশাল গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা অতিকায় কৃষ্ণবিবরের ছবি তুলতে সমর্থ হয়েছিল।
উদ্দেশ্যহীন মহাবিশ্ব?
এ বছর বিজ্ঞানীরা ঘোষণা করলেন, ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ (ইএইচটি) দিয়ে তাঁরা মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গে আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রের কৃষ্ণবিবরটির ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছেন। ‘বিবর’ অর্থ ‘গর্ত’ বা ‘গহ্বর’। সেই অর্থে কৃষ্ণবিবর হলো ‘ব্ল্যাক হোল’ কথাটির বঙ্গানুবাদ। আসলে এটিকে সরাসরি বিবরের ছবি বলা যাবে না। কারণ, সাধারণ ধারণা অনুযায়ী কৃষ্ণগহ্বর থেকে আলো বের হতে পারে না। তাই এই ছবি আসলে হলো বিবরটি যে ছায়া সৃষ্টি করে, সেটির প্রতিবিম্ব। ইএইচটি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা আটটি দুরবিনের তথ্যকে একত্র করে একটি বিশাল ১০ হাজার ৭০০ কিলোমিটার ব্যাসের দুরবিনের ভূমিকা পালন করে। দুরবিনের ব্যাস যত বড় হবে, তত ছোট ও গোল বস্তুর আকার সেটি দেখতে পাবে। এই ক্ষেত্রে দুরবিনের ব্যাস আমাদের পৃথিবীর সমান হয়েছিল। এর আগে ২০১৯ সালে একই পদ্ধতিতে ইএইচটি আমাদের থেকে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরের, ‘এম-এইটি সেভেন’ নামে একটি বিশাল গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা অতিকায় কৃষ্ণবিবরের ছবি তুলতে সমর্থ হয়েছিল।
১৯১৫ সালে আইনস্টাইন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব প্রকাশের কয়েক মাসের মধ্যেই জার্মান বিজ্ঞানী কার্ল সোয়ার্ৎসশিল্ড আপেক্ষিকতা সমীকরণের একটি সমাধান বের করেন। একটি স্থির (ঘূর্ণমান নয়) বড় তারার চারদিকে দেশ-কালের মেট্রিক (বা চাদর) কী রকম হবে, সেটা এই সমাধান থেকে পাওয়া যায়। এই মেট্রিক ব্যবহার করে আমরা দেখি যে তারাটির সমস্ত ভর যদি একটি বিন্দুসমেত কেন্দ্রে আপতিত হয়, তবে সেই বিন্দু থেকে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত কোনো আলোক কণিকা থাকলে, সেই কণিকা তার উচ্চগতি সত্ত্বেও কেন্দ্রটির মাধ্যাকর্ষণ থেকে মুক্তি পাবে না এবং আমরা ওই তারা সম্পর্কে সরাসরিভাবে কোনো তথ্যই পাব না। এই দূরত্বকে সোয়ার্ৎসশিল্ড ব্যাসার্ধ বলা হয়, যা ঘটনা-দিগন্তকে নির্দিষ্ট করে। ঘটনা-দিগন্তের মধ্য থেকে কোনো সংবাদই বহির্বিশ্বে পৌঁছাবে না।
সোয়ার্ৎসশিল্ড মেট্রিকের একটি পরিণাম হচ্ছে সিংগুলারিটি। সিংগুলারিটি কী? একটি বড় ভরের তারা, যদি সেটা সূর্যের চেয়ে অন্তত পাঁচ গুণ বেশি ভরের হয়, তার সমস্ত জ্বালানি ফুরিয়ে ফেললে; অর্থাৎ, তার জীবনের শেষে, একটি বিন্দুসমেত কেন্দ্রে খুবই ক্ষুদ্র বস্তুতে আপতিত হবে। সেই বস্তুর (তাকে বস্তু বলা হয়তো সংগত নয়) ঘনত্ব এমনই, বা তার মহাকর্ষ বল এমনই যে, সেটি চারদিকের দেশ-কালের বক্রতাকে অসীম করে দেবে। সেই বক্রতা ভেতরের বস্তুটিকে পুরোপুরি ঢেকে দেবে। অর্থাৎ, সে আমাদের মহাবিশ্ব থেকে বিযুক্ত হয়ে যাবে। এই অসীম ঘনত্বের বা অসীম মহাকর্ষীয় বলের বিন্দুটিকে ইংরেজিতে সিংগুলারিটি বলা হয়। সিংগুলারিটির অর্থ হলো অনন্য। এমন অনন্য অবস্থা মহাবিশ্বের আর অন্য কোথাও বিরাজ করে না।
কৃষ্ণবিবর বা ব্ল্যাক হোল বলতে আমরা সিংগুলারিটিসহ ঘটনা-দিগন্তের মধ্যে যা আছে, তা-ই বোঝাই। অর্থাৎ, কৃষ্ণগহ্বর হলো সিংগুলারিটি ও ঘটনা-দিগন্তের যোগফল।
আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রের কৃষ্ণগহ্বরটি, যার নাম হলো Sgr A*, তার ভর হলো প্রায় ৪০ লাখ সৌরভর। অর্থাৎ, ৪০ লাখ সূর্য একত্র করলে যে ভর পাওয়া যায়। অন্যদিকে অতিকায় গ্যালাক্সি M৮৭-এর কেন্দ্রের কৃষ্ণবিবরটির ভর হলো প্রায় ৬৬০ কোটি সূর্যের সমান। Sgr A* আমাদের থেকে ২৭ হাজার আলোকবর্ষ দূরে। আলো এক সেকেন্ডে প্রায় ৩ লাখ কিলোমিটার ভ্রমণ করে। আজ যে Sgr A* আমরা দেখছি, তার আলো ২৭ হাজার বছর আগে রওনা দিয়েছিল। আর M৮৭ থেকে যে আলো আমরা দেখছি, সেটি সেখান থেকে বিকিরিত হয়েছিল সাড়ে ৫ কোটি বছর আগে। সাড়ে ৫ কোটি বছর আগে বাংলাদেশ যে বঙ্গীয় বদ্বীপের ওপর অবস্থিত, সেটির জন্মই হয়নি। সাড়ে ৫ কোটি বছর আগে ভারতীয় উপমহাদেশের টেকটনিক পাত সবে ইউরেশীয় পাতের সঙ্গে ধাক্কা খেতে শুরু করেছে, হিমালয় তখনো ওঠা শুরু করেনি।
আমাদের এই মহাবিশ্বের শুরু ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩৮০ কোটি বছর আগে। এই শুরুটা হয়েছে কোনো এক মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে, যাকে বিগ ব্যাং বলা হয়। এর ফলে আমাদের বর্তমান মহাবিশ্ব ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে। বিগ ব্যাং একটি মডেল। এটিকে যে একটা মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমেই সংঘটিত হতে হবে—এমন নয়। বরং ‘কোনো কিছু নেই’—এমন একটি পর্যায়ের মধ্যে কোয়ান্টাম বিচলনের ফলে দেশ-কালের আবির্ভাবের মধ্যেও বিগ ব্যাং হতে পারে। এ নিয়ে পরে বলছি। বিগ ব্যাং-এর কয়েক শ মিলিয়ন বছরের মধ্যেই প্রথম নক্ষত্র ও প্রথম গ্যালাক্সির আবির্ভাব হয়। সেই প্রথম একটি গ্যালাক্সি থেকে আমাদের কাছে আলো আসতে ১ হাজার ৩০০ কোটি বছরের বেশি সময় নেয়। কিন্তু সেই গ্যালাক্সি মহাবিশ্বের প্রসারণের ফলে ‘এই মুহূর্তে’ ১ হাজার ৩০০ কোটি আলোকবর্ষ নয়, বরং ৪ হাজার ৬০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এই মুহূর্তে সেই গ্যালাক্সি থেকে যে আলো বিকিরিত হচ্ছে, তা আমাদের পৃথিবীর এই জায়গায় কোনো দিনই পৌঁছাবে না। অনেক বিজ্ঞানীর ধারণা, আমাদের দৃশ্যমান যে মহাবিশ্ব, তা বিশাল এক মহাবিশ্বের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ মাত্র। সেই অর্থে পুরো মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমরা কোনো দিনই জানতে পারব না।
আমাদের ক্ষুদ্র জীবনের সময় দিয়ে এই ধরনের মহাজাগতিক দূরত্ব ও সময়কে কীভাবে বোঝা সম্ভব? নোবেল পুরস্কার বিজয়ী স্টিভেন ওয়াইনবার্গ একবার বলেছিলেন, ‘মহাবিশ্বকে আমরা যত বুঝতে পারছি, ততই সেটিকে উদ্দেশ্যহীন মনে হচ্ছে।’ ওয়াইনবার্গ ‘পয়েন্টলেস’ কথাটি ব্যবহার করেছিলেন। এই উক্তির জন্য ওয়াইনবার্গকে অনেক গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছিল। কিন্তু অনেকেই ওই উক্তির পরবর্তী বাক্যগুলো পড়েননি। ওয়াইনবার্গ লিখছেন—
‘আমাদের গবেষণার ফলাফল আমাদের স্বস্তি না দিতে পারে, কিন্তু কিছু শান্তি পাওয়া যাবে গবেষণা প্রক্রিয়ার ভেতরেই। দেবতা বা ক্ষমতাশীলদের গল্পকথা দিয়ে, অথবা প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডে তাদের চিন্তা আবদ্ধ রেখে নারী ও পুরুষেরা যে সান্ত্বনা পায়, তাতে তারা আর সন্তুষ্ট নয়। তারা এখন তৈরি করছে দুরবিন, কৃত্রিম উপগ্রহ, কণাত্বরক যন্ত্র। তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের ডেস্কে বসে গবেষণালব্ধ তথ্যের অন্তর্নিহিত অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা করছে। মহাবিশ্বকে বোঝার এই যে প্রচেষ্টা—তা খুব কম জিনিসের মধ্যে একটি, যা মানুষের জীবনকে প্রহসনের ওপরে ওঠায়, তাকে ট্র্যাজেডির সৌন্দর্যের কিছুটা অংশ দেয়।’
ওয়াইনবার্গ ‘গ্রেস অব ট্র্যাজেডি’ কথাটি ব্যবহার করেছেন। বলাই বাহুল্য, ‘গ্রেস’ শুধু সৌন্দর্য নয়, তার মধ্যে আধ্যাত্মিক একটি ভাব নিহিত আছে। যে বিজ্ঞানীরা মহাজগৎ ও পদার্থবিদ্যার মৌলিক সূত্রগুলো নিয়ে গবেষণা করেন, তাঁরা তাঁদের কাজে সেই ‘গ্রেস’ খুঁজে পান। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁরা এটি সম্বন্ধেও সচেতন যে মহাবিশ্ব বা প্রকৃতির গঠনে এমন কিছু আছে, যা আমাদের জ্ঞানকে পূর্ণতা দেবে না। সেই অপূর্ণতাকে মেনে নেওয়ার মধ্যেও একধরনের বলিষ্ঠতা প্রয়োজন।
প্রকৃতির অপূর্ণতা
১৯২৫ সালে হাইজেনবার্গ তাঁর অনিশ্চয়তা (বা অনির্দেশ্যতার) নীতি প্রণয়ন করেন: কণার অবস্থান এবং ভরবেগ (বা বেগ), এই দুটি জিনিসকে একই সঙ্গে যথেচ্ছ সূক্ষ্মভাবে পরিমাপ করা যাবে না। অর্থাৎ, আমরা যদি কণার অবস্থানকে সূক্ষ্মভাবে মাপতে পারি, তবে তার বেগ সম্বন্ধে আমাদের ধারণা থাকবে অস্পষ্ট। ফলে সেটির পরমুহূর্তের অবস্থান থাকবে অজ্ঞাত। অনুরূপভাবে কণার বেগকে যথার্থভাবে জানলে, সেটির অবস্থানকে নিশ্চিতভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। (একইভাবে এই নীতি অনুযায়ী শূন্য থেকে শক্তি ঋণ করে কণারা খুব অল্প সময়ের জন্য বাস্তবে আবির্ভূত হতে পারে। এবং সেই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সময় শেষে আবার হারিয়ে শূন্যে মিলিয়ে যেতে পারে।) ফলে নিউটনীয় চিরায়ত বলবিদ্যার পরিণামবাদী বা নিষ্পত্তিমূলক মহাবিশ্বের অবসান ঘটল। ১৮১৪ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী লাপলাস বলেছিলেন, এমন কোনো অস্তিত্ব যদি থাকে, যে সে কোনো একটা মুহূর্তে মহাবিশ্বের সমস্ত কণার অবস্থান এবং তাদের ওপর প্রযোজ্য বলের পরিমাণ জানবে, তাহলে তার পক্ষে মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ ও অতীত অবস্থা নির্ধারণ করা কঠিন হবে না। এই অস্তিত্বকে অনেকে লাপলাসের দানব বলে অভিহিত করেন।
কোয়ান্টাম বলবিদ্যা সুনিশ্চিতভাবে লাপলাসের দানবের পরিণামবাদী মহাবিশ্বের অবসান ঘটাল। শুধু তা-ই নয়, কোয়ান্টাম বলবিদ্যা বলল কণাসমূহের শুধু কণা বৈশিষ্ট্যই নয়, একটি তরঙ্গ বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। তবে এই তরঙ্গ প্রকৃত ‘বাস্তব তরঙ্গ’, নাকি একটি ‘সম্ভাবনা তরঙ্গ’ তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। যদিও বেশির ভাগ বিজ্ঞানীই মনে করেন, মুক্ত কণার (যেমন ইলেকট্রনের) অবস্থান প্রসারণশীল ‘সম্ভাবনা তরঙ্গ’ দিয়ে বর্ণনা করা সম্ভব, যার প্রকৃতি নিতান্তই গাণিতিক। অন্যদিকে যে মুহূর্তে ওই ইলেকট্রনটিকে অবলোকন করা হবে, সেটি একটি কণায় রূপান্তরিত হবে। কণা ও তরঙ্গের এই যে দ্বৈত বাস্তবতা, তা আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার বাইরে। একটি ইলেকট্রন একটি বিন্দু থেকে আরেকটি বিন্দুতে কীভাবে ভ্রমণ করে, আমরা তা সঠিক জানি না। কারণ, দুটি বিন্দুর মধ্যে অসংখ্য সম্ভাব্য পথ রয়েছে। সেই পথগুলোকে আমাদের মনে চিত্রিত করা সম্ভব নয়; শুধু গাণিতিকভাবে বিশ্লেষণ করা সম্ভব।
বিজ্ঞানের দর্শনে পজিটিভিজমের মত হলো, শুধু সরাসরি অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বস্তু সম্পর্কে যে জ্ঞান লাভ করা যাবে তা-ই একমাত্র সত্য, এর বাইরে কিছু বললে সেটা হবে জল্পনা। ভিয়েনার বিজ্ঞানী আর্নেস্ট মাখ এর অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন। যেহেতু ১৮ শতকের শেষে ও ১৯ শতকের প্রথম দিকে পরমাণুকে সরাসরি পর্যবেক্ষণের কোনো পদ্ধতি জানা ছিল না, পজিটিভিস্টরা পরমাণু সম্পর্কে আলোচনাকে বিজ্ঞানবহির্ভূত মনে করতেন। অন্যদিকে রিয়্যালিস্ট বা বাস্তববাদীরা সরাসরি পরমাণু দেখা না গেলেও সেটিকে বাস্তব ধরে নিয়ে গবেষণা করতেন। আইনস্টাইনকে মাখ বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিলেন। কিন্তু ১৯২০-এর দশকের আইনস্টাইন পজিটিভিস্ট ছিলেন না, বরং বাস্তববাদী ছিলেন। অন্যদিকে কোয়ান্টাম তত্ত্বের প্রবক্তারা, বিশেষ করে নিলস বোর ও হাইজেনবার্গ পজিটিভিজমকে পুরোপুরি ত্যাগ করেননি। তাঁরা মনে করতেন, কোয়ান্টাম পর্যবেক্ষণের ফলাফল পরীক্ষক কী দেখতে চাইছেন, সেটার ওপর নির্ভর করে: পরীক্ষক যদি ইলেকট্রনের তরঙ্গদৈর্ঘ্য মাপতে চান, তো ইলেকট্রনকে তরঙ্গ হিসেবে দেখবেন। অন্যদিকে তিনি যদি তাঁর ভরবেগ নির্ধারণ করতে চান, তাহলে কণা হিসেবে দেখবেন। কণা বা তরঙ্গ এ দুই বৈশিষ্ট্যের কোনো অর্থ নেই, যতক্ষণ না পরীক্ষক তাঁর স্বাধীন চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যকে অবলোকন করবেন। বাস্তববাদী আইনস্টাইনের কাছে এ রকম অজ্ঞেয়বাদ ছিল পুরোপুরিই পরিত্যাজ্য।
হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি বলে, কণার অবস্থান ও গতিবেগ একই সঙ্গে যথার্থভাবে জানা যাবে না। প্রকৃতি সম্পর্কে এটাও একধরনের অজ্ঞানতা। অর্থাৎ, আমাদের পর্যবেক্ষণপদ্ধতি যতই দক্ষ হোক না কেন, আমাদের কাছে এ দুই জিনিস একসঙ্গে অজানা থেকে যাবে। এই অজ্ঞানতা দেশ-কালের চাদরের মধ্যেই প্রোথিত। একে এড়ানোর উপায় নেই। আইনস্টাইনের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য ছিল না। তিনি বললেন, কোয়ান্টাম তত্ত্বপূর্ণ নয়। লিখলেন, ‘ঈশ্বর পাশা খেলতে পারে, ঠিক আছে; কিন্তু সে যে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে জুয়া খেলবে, এটা আমার ধারণার বাইরে।’ ঈশ্বর অর্থে এখানে তিনি প্রকৃতিকেই বুঝিয়েছিলেন। ১৯৩০ সালের ১৯ আগস্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে আলাপে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরমাণুর রাজ্যে আকস্মিকতা কাজ করে। কাজেই, অস্তিত্বের নাটক পুরোপুরি পূর্বনির্ধারিত নয়।’ তখন আইনস্টাইন উত্তর দিয়েছিলেন, ‘তার মানে এই নয় যে, বিজ্ঞান থেকে কার্যকারণ বিদায় হয়েছে।’ কার্যকারণ আইনস্টাইনের দর্শনে একটা বড় ভূমিকা রেখেছিল। তিনি বাস্তববাদী ছিলেন এবং মানব-নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র বাস্তবতায় বিশ্বাস করতেন। একই সঙ্গে প্রকৃতি যে কিছু জ্ঞান আমাদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখবে, তাতে বিশ্বাস করতেন না।
আইনস্টাইন নিজে খেয়ালিপনায় সে রকম বিশ্বাস করতেন না। যদিও তাঁর অগোছালো চুলের যে ছবিটি সবচেয়ে জনপ্রিয়, তাতে তাঁকে মন-ভোলা খেয়ালি বিজ্ঞানী হিসেবেই আমরা দেখি। কোয়ান্টাম তত্ত্বে ভরসা না রেখে তিনি জীবনের শেষ ২৫টি বছর আপেক্ষিকতা ও তড়িৎ-চুম্বকীয় ক্ষেত্রতত্ত্বের সংমিশ্রণে পদার্থবিদ্যার চূড়ান্ত নীতি প্রণয়ন করতে চেয়েছিলেন। ‘প্রকৃতি জুয়া খেলবে না’—এই জীবন দর্শন তাঁকে এই পথে পরিচালিত করে। তাঁর সেই উদ্যোগ অবশ্য সফল হয়নি। তাই আইনস্টাইনের পক্ষে কৃষ্ণবিবরের সিংগুলারিটির অস্তিত্ব মেনে নেওয়া কঠিন ছিল। তাঁর কাছে সিংগুলারিটি হলো প্রকৃতির খেয়ালিপনা, যার বৈশিষ্ট্যকে আমরা কোনোভাবেই নির্ধারণ করতে পারব না। যে সিংগুলারিটি থেকে আমরা কোনো তথ্যই আর আহরণ করতে পারব না (যদিও ইদানীং এই ধারণাটির পরিবর্তন হয়েছে)। আইনস্টাইন বিশ্বাস করতেন, প্রকৃতি কোনোভাবে সিংগুলারিটি (বা ব্ল্যাক হোল) সৃষ্টিতে বাধা দেবে। কারণ, সিংগুলারিটি হলো প্রকৃতি সম্বন্ধে আমাদের একধরনের অজ্ঞানতা। এ হলো যেন প্রকৃতির অপূর্ণতা। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার পরিসংখ্যানগত অনিশ্চয়তাকে তিনি যেমন পছন্দ করেননি, তেমনি একটি তারার পতন সিংগুলারিটি সৃষ্টি করতে পারে—সেটাও মেনে নেননি। অথচ এই দুটি বিষয়ের সূত্রপাত তিনি নিজ হাতে করে গিয়েছিলেন।
পরম ‘কিছু না’
চিন্তা করুন এমন একটি অবস্থা, যেখানে স্থান-কাল-পাত্র নেই। নেই দেশ-কালের চাদর, সময় নেই, স্পেস বা স্থান বলতে যা বোঝাই, সেই স্থান নেই। এমন একটি অবস্থা চিন্তা করা দুরূহ। কারণ, চিন্তার মাধ্যমে আমরা সেটিকে আকার দিই। কারণ, ‘কিছু না’-কে মনে স্থান দিলে সেটি ‘কিছু’-তে পরিণত হয়। বিখ্যাত চৈনিক দার্শনিক গ্রন্থ তাও-তে-চিং শুরুই হয়েছে এই পঙ্ক্তি দিয়ে—
‘যে তাওকে (পথকে) বর্ণনা করা যায়, তা চিরন্তন তাও নয়
যে নামকে উচ্চারণ করা যায়, তা চিরন্তন নাম নয়।
নামহীন যা তা স্বর্গ ও মর্ত্যের সীমানা
আর নামযুক্ত যা তা সকল সৃষ্টির মাতা।।’
আমাদের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, পরম ‘কিছু না’-কে নাম দিয়ে আমরা সেটির পরমত্বকে খর্ব করেছি। তবু যদি ধরা যায়, এ রকম একটা অবস্থা থাকা সম্ভব, তাহলে সেটিরই হওয়া উচিত ছিল প্রকৃতির স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। এই বাক্যটি যে স্ববিরোধিতায় পূর্ণ, তা স্বীকার করি। কিন্তু তাত্ত্বিক বিজ্ঞানীরা এই নিয়ে ভাবেন এবং কেন ‘কিছু না’-এর পরিবর্তে ‘কিছু’-এর (মহাবিশ্বের) আবির্ভাব হয়েছে, এই ধাঁধা তাদের রাতে জাগিয়ে রাখে।
সেই ‘কিছু না’ অবস্থায় হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা তত্ত্ব যদি কাজ করে, তবে ক্রমাগতই তাতে ছোট ছোট দেশ-কাল সৃষ্টি হবে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই সেগুলো আবার ‘কিছু না’-তে বিলীন হয়ে যাবে। একে কোয়ান্টাম বিচলন বলা যেতে পারে। কিন্তু মাঝেমধ্যে যদি সেই ক্ষণিক দেশ-কালের বুদ্বুদে অন্য কোনো বিশেষ ‘ক্ষেত্রের’ আবির্ভাব হয়, যা সেই বুদ্বুদকে খুব দ্রুত স্ফীত করবে, তাহলে সেই দেশ-কালটি স্থায়ী হয়ে যেতে পারে। এবং আমরা এই দেশ-কালের বুদ্বুদের আবির্ভাব ও দ্রুত প্রসারণকে বিগ ব্যাং বলে অভিহিত করতে পারি।
এই মডেল খুব আকর্ষণীয়, শুধু এখানে একটি বড় সমস্যা রয়ে গেছে। আমরা যখন ‘কিছু না’ বলছি, তার মধ্যে পদার্থবিদ্যা বা প্রকৃতির কোনো নীতিও থাকবে না। তাই হাইজেনবার্গের তত্ত্ব বা কোয়ান্টাম বিচলনের সেখানে কাজ করার কথা নয়। যদি করে, তাহলে সেটি পরম শূন্য বা ‘কিছু না’ হবে না। এই মডেলে মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগেই কোয়ান্টাম বিচলনকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাহলে বলতে হবে—পরম ‘কিছু না’ বলে কখনোই কিছু সম্ভব নয়। কারণ, কোয়ান্টাম তত্ত্ব ‘সব জায়গায়’ প্রতিষ্ঠিত।
নইলে আমাদের এমন এক মহাবিশ্বের কথা ভাবতে হবে, যার ঠিক শুরু নেই, যেমন ভেবেছিলেন স্টিফেন হকিং বহু বছর আগে। তাঁর সেই মডেলে মহাবিশ্বের শুরুতে ‘সময়’ বলে কিছু ছিল না, শুধু ছিল ‘দেশ’ বা ‘স্থান’। যেহেতু সময় ছিল না, বিগ ব্যাং-এর আগে কী ছিল, সেই প্রশ্নটি তখন আর করা যাবে না। কিন্তু যা-ই হোক না কেন, এই ধরনের ধাঁধা বা প্রশ্ন যে খুব গভীর এবং দর্শনের সঙ্গে জড়িত, তা বোঝাই যাচ্ছে।
আমাদের গ্যালাক্সিতে তারার সংখ্যা ৪০০ বিলিয়নের (৪০ হাজার কোটি) মতো হবে হয়তো। অথচ আমাদের নিকটবর্তী তারা প্রায় সাড়ে চার আলোকবর্ষ দূরে। এখনকার প্রযুক্তি ব্যবহার করলে সেখানে পৌঁছাতে ৬০-৭০ হাজার বছর লেগে যাবে। শুধু তা-ই নয়, পৃথিবীর সমস্ত রাসায়নিক জ্বালানি যথেষ্ট হবে না এই কাজ সম্পন্ন করতে। আমরা চাঁদে, মঙ্গলে, এমনকি বৃহস্পতির চাঁদগুলোতেও হয়তো যেতে পারব। কিন্তু আকাশের তারারা হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের হাতের বাইরে থাকবে। সেখানে হয়তো আমরা আদৌ পৌঁছাতে পারব না।
আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্বে গ্যালাক্সির সংখ্যা হতে পারে প্রায় ১০ ট্রিলিয়নের (১০ লাখ কোটি) মতো। আর দৃশ্যমান মহাবিশ্ব হয়তো-বা সমগ্র মহাবিশ্বের একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ। নিঃসন্দেহে শুধু ক্ষুদ্র একটি পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির, বুদ্ধিমান চেতনার উদ্ভবের জন্য মহাবিশ্বের কোটি কোটি গ্যালাক্সির প্রয়োজন ছিল না। এই গ্যালাক্সিগুলো সম্পর্কে যতই আমরা জানছি, আমাদের ব্যবহার্য জীবনে তাদের ভূমিকা যে শূন্য, তা-ও বুঝতে পারছি। মহাবিশ্বের এই বিশালতা একদিকে যেমন আমাদের বিস্মিত করে, অন্যদিকে ওয়াইনবার্গের সেই ‘উদ্দেশ্যহীনতা’ উক্তির কথা মনে করিয়ে দেয়। কিছু জ্ঞান প্রকৃতি হয়তো আমাদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখবে—কণার সঠিক অবস্থান ও ভরবেগ একসঙ্গে আমরা কখনোই নিরূপণ করতে পারব না। কৃষ্ণবিবরের মধ্যে সিংগুলারিটিকে আমরা কখনোই দেখব না। সমগ্র মহাবিশ্বের (শুধু দৃশ্যমান মহাবিশ্ব নয়) বিস্তার আমাদের কাছে রইবে অজানা, যেমন অজানা রইবে হয়তো এই প্রশ্নের উত্তর—কেন ‘কিছু’ আছে ‘কোনো কিছু না থাকা’-এর বদলে। কিন্তু এর মধ্যেই রয়েছে আমাদের জীবনদর্শনের পরিপূর্ণতা। প্রকৃতির এই খেলার নিগূঢ় নির্যাসকে স্বীকার করে নেওয়ার মধ্যে রয়েছে একধরনের স্বস্তি। সেই স্বস্তি আমাদের জীবনকে দেয় অর্থ। জীবনের শেষে এসে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন—
‘রূপনারানের কূলে
জেগে উঠিলাম,
জানিলাম এ জগৎ
স্বপ্ন নয়।
রক্তের অক্ষরে দেখিলাম
আপনার রূপ,
চিনিলাম আপনারে
আঘাতে আঘাতে
বেদনায় বেদনায়;
সত্য যে কঠিন,
কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,
সে কখনো করে না বঞ্চনা।
আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন,
সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করিবারে,
মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দিতে।’
বিজ্ঞান অনেক ক্ষেত্রেই মানুষকে কঠিন সত্যের মুখোমুখি করে। আমাদের মধ্যে কে স্বস্তি বোধ করবে এই ভেবে যে আমরা উদ্ভূত হয়েছি এক প্রাককেন্দ্রিক এক কোষী প্রাণী থেকে? আমাদের মধ্যে কে স্বস্তি বোধ করবে, এই ভেবে যে তাপগতি-বিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রের অমোঘ গতিতে একদিন আকাশের সব তারা নিভে যাবে? আমি বলব, এই যে অস্বস্তি, সেটিই আমাদের মানবিক বোধকে পরবর্তী পর্যায়ে উন্নীত করে। একদিকে যেমন আমরা মহাবিশ্বের উদাসীনতায় বিভ্রান্ত, অন্যদিকে সেই মহাবিশ্বকে আমাদের চেতনায়, বোধে পুনর্গঠিত করার মধ্যে আমাদের অস্তিত্বের অনন্য মূল্য নির্ধারিত হয়। আমাদের বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলতে এই জ্ঞানটির, এই বোধটির ভূমিকা অতুলনীয়। এটিকে গ্রহণ করতে সাহসের প্রয়োজন। সাধারণ মানুষ যখন তার সমস্ত ভঙ্গুরতা, নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে কঠিন সত্যকে আত্মস্থ করতে পারবে; অর্থাৎ, তার বাসস্থান, পৃথিবী নামের এই জাহাজটিকে অসীম স্থান-কালের অনুপাতে বিচার করতে পারবে; তখন সে আরেক ধরনের শান্তি ও স্বস্তি পাবে। সামগ্রিক মানবকল্যাণের জন্যও সেই বোধটির প্রয়োজন।
দীপেন ভট্টাচার্য: জ্যোতিঃপদার্থবিদ, অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, মোরেনো ভ্যালি কলেজ, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র

দুরবিনের ব্যাস যত বড় হবে, তত ছোট ও গোল বস্তুর আকার সেটি দেখতে পাবে। এই ক্ষেত্রে দুরবিনের ব্যাস আমাদের পৃথিবীর সমান হয়েছিল। ২০১৯ সালে একই পদ্ধতিতে ইএইচটি আমাদের থেকে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরের, ‘এম-এইটি সেভেন’ নামে একটি বিশাল গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা অতিকায় কৃষ্ণবিবরের ছবি তুলতে সমর্থ হয়েছিল।
উদ্দেশ্যহীন মহাবিশ্ব?
এ বছর বিজ্ঞানীরা ঘোষণা করলেন, ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ (ইএইচটি) দিয়ে তাঁরা মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গে আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রের কৃষ্ণবিবরটির ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছেন। ‘বিবর’ অর্থ ‘গর্ত’ বা ‘গহ্বর’। সেই অর্থে কৃষ্ণবিবর হলো ‘ব্ল্যাক হোল’ কথাটির বঙ্গানুবাদ। আসলে এটিকে সরাসরি বিবরের ছবি বলা যাবে না। কারণ, সাধারণ ধারণা অনুযায়ী কৃষ্ণগহ্বর থেকে আলো বের হতে পারে না। তাই এই ছবি আসলে হলো বিবরটি যে ছায়া সৃষ্টি করে, সেটির প্রতিবিম্ব। ইএইচটি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা আটটি দুরবিনের তথ্যকে একত্র করে একটি বিশাল ১০ হাজার ৭০০ কিলোমিটার ব্যাসের দুরবিনের ভূমিকা পালন করে। দুরবিনের ব্যাস যত বড় হবে, তত ছোট ও গোল বস্তুর আকার সেটি দেখতে পাবে। এই ক্ষেত্রে দুরবিনের ব্যাস আমাদের পৃথিবীর সমান হয়েছিল। এর আগে ২০১৯ সালে একই পদ্ধতিতে ইএইচটি আমাদের থেকে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরের, ‘এম-এইটি সেভেন’ নামে একটি বিশাল গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা অতিকায় কৃষ্ণবিবরের ছবি তুলতে সমর্থ হয়েছিল।
১৯১৫ সালে আইনস্টাইন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব প্রকাশের কয়েক মাসের মধ্যেই জার্মান বিজ্ঞানী কার্ল সোয়ার্ৎসশিল্ড আপেক্ষিকতা সমীকরণের একটি সমাধান বের করেন। একটি স্থির (ঘূর্ণমান নয়) বড় তারার চারদিকে দেশ-কালের মেট্রিক (বা চাদর) কী রকম হবে, সেটা এই সমাধান থেকে পাওয়া যায়। এই মেট্রিক ব্যবহার করে আমরা দেখি যে তারাটির সমস্ত ভর যদি একটি বিন্দুসমেত কেন্দ্রে আপতিত হয়, তবে সেই বিন্দু থেকে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত কোনো আলোক কণিকা থাকলে, সেই কণিকা তার উচ্চগতি সত্ত্বেও কেন্দ্রটির মাধ্যাকর্ষণ থেকে মুক্তি পাবে না এবং আমরা ওই তারা সম্পর্কে সরাসরিভাবে কোনো তথ্যই পাব না। এই দূরত্বকে সোয়ার্ৎসশিল্ড ব্যাসার্ধ বলা হয়, যা ঘটনা-দিগন্তকে নির্দিষ্ট করে। ঘটনা-দিগন্তের মধ্য থেকে কোনো সংবাদই বহির্বিশ্বে পৌঁছাবে না।
সোয়ার্ৎসশিল্ড মেট্রিকের একটি পরিণাম হচ্ছে সিংগুলারিটি। সিংগুলারিটি কী? একটি বড় ভরের তারা, যদি সেটা সূর্যের চেয়ে অন্তত পাঁচ গুণ বেশি ভরের হয়, তার সমস্ত জ্বালানি ফুরিয়ে ফেললে; অর্থাৎ, তার জীবনের শেষে, একটি বিন্দুসমেত কেন্দ্রে খুবই ক্ষুদ্র বস্তুতে আপতিত হবে। সেই বস্তুর (তাকে বস্তু বলা হয়তো সংগত নয়) ঘনত্ব এমনই, বা তার মহাকর্ষ বল এমনই যে, সেটি চারদিকের দেশ-কালের বক্রতাকে অসীম করে দেবে। সেই বক্রতা ভেতরের বস্তুটিকে পুরোপুরি ঢেকে দেবে। অর্থাৎ, সে আমাদের মহাবিশ্ব থেকে বিযুক্ত হয়ে যাবে। এই অসীম ঘনত্বের বা অসীম মহাকর্ষীয় বলের বিন্দুটিকে ইংরেজিতে সিংগুলারিটি বলা হয়। সিংগুলারিটির অর্থ হলো অনন্য। এমন অনন্য অবস্থা মহাবিশ্বের আর অন্য কোথাও বিরাজ করে না।
কৃষ্ণবিবর বা ব্ল্যাক হোল বলতে আমরা সিংগুলারিটিসহ ঘটনা-দিগন্তের মধ্যে যা আছে, তা-ই বোঝাই। অর্থাৎ, কৃষ্ণগহ্বর হলো সিংগুলারিটি ও ঘটনা-দিগন্তের যোগফল।
আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রের কৃষ্ণগহ্বরটি, যার নাম হলো Sgr A*, তার ভর হলো প্রায় ৪০ লাখ সৌরভর। অর্থাৎ, ৪০ লাখ সূর্য একত্র করলে যে ভর পাওয়া যায়। অন্যদিকে অতিকায় গ্যালাক্সি M৮৭-এর কেন্দ্রের কৃষ্ণবিবরটির ভর হলো প্রায় ৬৬০ কোটি সূর্যের সমান। Sgr A* আমাদের থেকে ২৭ হাজার আলোকবর্ষ দূরে। আলো এক সেকেন্ডে প্রায় ৩ লাখ কিলোমিটার ভ্রমণ করে। আজ যে Sgr A* আমরা দেখছি, তার আলো ২৭ হাজার বছর আগে রওনা দিয়েছিল। আর M৮৭ থেকে যে আলো আমরা দেখছি, সেটি সেখান থেকে বিকিরিত হয়েছিল সাড়ে ৫ কোটি বছর আগে। সাড়ে ৫ কোটি বছর আগে বাংলাদেশ যে বঙ্গীয় বদ্বীপের ওপর অবস্থিত, সেটির জন্মই হয়নি। সাড়ে ৫ কোটি বছর আগে ভারতীয় উপমহাদেশের টেকটনিক পাত সবে ইউরেশীয় পাতের সঙ্গে ধাক্কা খেতে শুরু করেছে, হিমালয় তখনো ওঠা শুরু করেনি।
আমাদের এই মহাবিশ্বের শুরু ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩৮০ কোটি বছর আগে। এই শুরুটা হয়েছে কোনো এক মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে, যাকে বিগ ব্যাং বলা হয়। এর ফলে আমাদের বর্তমান মহাবিশ্ব ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে। বিগ ব্যাং একটি মডেল। এটিকে যে একটা মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমেই সংঘটিত হতে হবে—এমন নয়। বরং ‘কোনো কিছু নেই’—এমন একটি পর্যায়ের মধ্যে কোয়ান্টাম বিচলনের ফলে দেশ-কালের আবির্ভাবের মধ্যেও বিগ ব্যাং হতে পারে। এ নিয়ে পরে বলছি। বিগ ব্যাং-এর কয়েক শ মিলিয়ন বছরের মধ্যেই প্রথম নক্ষত্র ও প্রথম গ্যালাক্সির আবির্ভাব হয়। সেই প্রথম একটি গ্যালাক্সি থেকে আমাদের কাছে আলো আসতে ১ হাজার ৩০০ কোটি বছরের বেশি সময় নেয়। কিন্তু সেই গ্যালাক্সি মহাবিশ্বের প্রসারণের ফলে ‘এই মুহূর্তে’ ১ হাজার ৩০০ কোটি আলোকবর্ষ নয়, বরং ৪ হাজার ৬০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এই মুহূর্তে সেই গ্যালাক্সি থেকে যে আলো বিকিরিত হচ্ছে, তা আমাদের পৃথিবীর এই জায়গায় কোনো দিনই পৌঁছাবে না। অনেক বিজ্ঞানীর ধারণা, আমাদের দৃশ্যমান যে মহাবিশ্ব, তা বিশাল এক মহাবিশ্বের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ মাত্র। সেই অর্থে পুরো মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমরা কোনো দিনই জানতে পারব না।
আমাদের ক্ষুদ্র জীবনের সময় দিয়ে এই ধরনের মহাজাগতিক দূরত্ব ও সময়কে কীভাবে বোঝা সম্ভব? নোবেল পুরস্কার বিজয়ী স্টিভেন ওয়াইনবার্গ একবার বলেছিলেন, ‘মহাবিশ্বকে আমরা যত বুঝতে পারছি, ততই সেটিকে উদ্দেশ্যহীন মনে হচ্ছে।’ ওয়াইনবার্গ ‘পয়েন্টলেস’ কথাটি ব্যবহার করেছিলেন। এই উক্তির জন্য ওয়াইনবার্গকে অনেক গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছিল। কিন্তু অনেকেই ওই উক্তির পরবর্তী বাক্যগুলো পড়েননি। ওয়াইনবার্গ লিখছেন—
‘আমাদের গবেষণার ফলাফল আমাদের স্বস্তি না দিতে পারে, কিন্তু কিছু শান্তি পাওয়া যাবে গবেষণা প্রক্রিয়ার ভেতরেই। দেবতা বা ক্ষমতাশীলদের গল্পকথা দিয়ে, অথবা প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডে তাদের চিন্তা আবদ্ধ রেখে নারী ও পুরুষেরা যে সান্ত্বনা পায়, তাতে তারা আর সন্তুষ্ট নয়। তারা এখন তৈরি করছে দুরবিন, কৃত্রিম উপগ্রহ, কণাত্বরক যন্ত্র। তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের ডেস্কে বসে গবেষণালব্ধ তথ্যের অন্তর্নিহিত অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা করছে। মহাবিশ্বকে বোঝার এই যে প্রচেষ্টা—তা খুব কম জিনিসের মধ্যে একটি, যা মানুষের জীবনকে প্রহসনের ওপরে ওঠায়, তাকে ট্র্যাজেডির সৌন্দর্যের কিছুটা অংশ দেয়।’
ওয়াইনবার্গ ‘গ্রেস অব ট্র্যাজেডি’ কথাটি ব্যবহার করেছেন। বলাই বাহুল্য, ‘গ্রেস’ শুধু সৌন্দর্য নয়, তার মধ্যে আধ্যাত্মিক একটি ভাব নিহিত আছে। যে বিজ্ঞানীরা মহাজগৎ ও পদার্থবিদ্যার মৌলিক সূত্রগুলো নিয়ে গবেষণা করেন, তাঁরা তাঁদের কাজে সেই ‘গ্রেস’ খুঁজে পান। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁরা এটি সম্বন্ধেও সচেতন যে মহাবিশ্ব বা প্রকৃতির গঠনে এমন কিছু আছে, যা আমাদের জ্ঞানকে পূর্ণতা দেবে না। সেই অপূর্ণতাকে মেনে নেওয়ার মধ্যেও একধরনের বলিষ্ঠতা প্রয়োজন।
প্রকৃতির অপূর্ণতা
১৯২৫ সালে হাইজেনবার্গ তাঁর অনিশ্চয়তা (বা অনির্দেশ্যতার) নীতি প্রণয়ন করেন: কণার অবস্থান এবং ভরবেগ (বা বেগ), এই দুটি জিনিসকে একই সঙ্গে যথেচ্ছ সূক্ষ্মভাবে পরিমাপ করা যাবে না। অর্থাৎ, আমরা যদি কণার অবস্থানকে সূক্ষ্মভাবে মাপতে পারি, তবে তার বেগ সম্বন্ধে আমাদের ধারণা থাকবে অস্পষ্ট। ফলে সেটির পরমুহূর্তের অবস্থান থাকবে অজ্ঞাত। অনুরূপভাবে কণার বেগকে যথার্থভাবে জানলে, সেটির অবস্থানকে নিশ্চিতভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। (একইভাবে এই নীতি অনুযায়ী শূন্য থেকে শক্তি ঋণ করে কণারা খুব অল্প সময়ের জন্য বাস্তবে আবির্ভূত হতে পারে। এবং সেই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সময় শেষে আবার হারিয়ে শূন্যে মিলিয়ে যেতে পারে।) ফলে নিউটনীয় চিরায়ত বলবিদ্যার পরিণামবাদী বা নিষ্পত্তিমূলক মহাবিশ্বের অবসান ঘটল। ১৮১৪ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী লাপলাস বলেছিলেন, এমন কোনো অস্তিত্ব যদি থাকে, যে সে কোনো একটা মুহূর্তে মহাবিশ্বের সমস্ত কণার অবস্থান এবং তাদের ওপর প্রযোজ্য বলের পরিমাণ জানবে, তাহলে তার পক্ষে মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ ও অতীত অবস্থা নির্ধারণ করা কঠিন হবে না। এই অস্তিত্বকে অনেকে লাপলাসের দানব বলে অভিহিত করেন।
কোয়ান্টাম বলবিদ্যা সুনিশ্চিতভাবে লাপলাসের দানবের পরিণামবাদী মহাবিশ্বের অবসান ঘটাল। শুধু তা-ই নয়, কোয়ান্টাম বলবিদ্যা বলল কণাসমূহের শুধু কণা বৈশিষ্ট্যই নয়, একটি তরঙ্গ বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। তবে এই তরঙ্গ প্রকৃত ‘বাস্তব তরঙ্গ’, নাকি একটি ‘সম্ভাবনা তরঙ্গ’ তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। যদিও বেশির ভাগ বিজ্ঞানীই মনে করেন, মুক্ত কণার (যেমন ইলেকট্রনের) অবস্থান প্রসারণশীল ‘সম্ভাবনা তরঙ্গ’ দিয়ে বর্ণনা করা সম্ভব, যার প্রকৃতি নিতান্তই গাণিতিক। অন্যদিকে যে মুহূর্তে ওই ইলেকট্রনটিকে অবলোকন করা হবে, সেটি একটি কণায় রূপান্তরিত হবে। কণা ও তরঙ্গের এই যে দ্বৈত বাস্তবতা, তা আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার বাইরে। একটি ইলেকট্রন একটি বিন্দু থেকে আরেকটি বিন্দুতে কীভাবে ভ্রমণ করে, আমরা তা সঠিক জানি না। কারণ, দুটি বিন্দুর মধ্যে অসংখ্য সম্ভাব্য পথ রয়েছে। সেই পথগুলোকে আমাদের মনে চিত্রিত করা সম্ভব নয়; শুধু গাণিতিকভাবে বিশ্লেষণ করা সম্ভব।
বিজ্ঞানের দর্শনে পজিটিভিজমের মত হলো, শুধু সরাসরি অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বস্তু সম্পর্কে যে জ্ঞান লাভ করা যাবে তা-ই একমাত্র সত্য, এর বাইরে কিছু বললে সেটা হবে জল্পনা। ভিয়েনার বিজ্ঞানী আর্নেস্ট মাখ এর অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন। যেহেতু ১৮ শতকের শেষে ও ১৯ শতকের প্রথম দিকে পরমাণুকে সরাসরি পর্যবেক্ষণের কোনো পদ্ধতি জানা ছিল না, পজিটিভিস্টরা পরমাণু সম্পর্কে আলোচনাকে বিজ্ঞানবহির্ভূত মনে করতেন। অন্যদিকে রিয়্যালিস্ট বা বাস্তববাদীরা সরাসরি পরমাণু দেখা না গেলেও সেটিকে বাস্তব ধরে নিয়ে গবেষণা করতেন। আইনস্টাইনকে মাখ বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিলেন। কিন্তু ১৯২০-এর দশকের আইনস্টাইন পজিটিভিস্ট ছিলেন না, বরং বাস্তববাদী ছিলেন। অন্যদিকে কোয়ান্টাম তত্ত্বের প্রবক্তারা, বিশেষ করে নিলস বোর ও হাইজেনবার্গ পজিটিভিজমকে পুরোপুরি ত্যাগ করেননি। তাঁরা মনে করতেন, কোয়ান্টাম পর্যবেক্ষণের ফলাফল পরীক্ষক কী দেখতে চাইছেন, সেটার ওপর নির্ভর করে: পরীক্ষক যদি ইলেকট্রনের তরঙ্গদৈর্ঘ্য মাপতে চান, তো ইলেকট্রনকে তরঙ্গ হিসেবে দেখবেন। অন্যদিকে তিনি যদি তাঁর ভরবেগ নির্ধারণ করতে চান, তাহলে কণা হিসেবে দেখবেন। কণা বা তরঙ্গ এ দুই বৈশিষ্ট্যের কোনো অর্থ নেই, যতক্ষণ না পরীক্ষক তাঁর স্বাধীন চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যকে অবলোকন করবেন। বাস্তববাদী আইনস্টাইনের কাছে এ রকম অজ্ঞেয়বাদ ছিল পুরোপুরিই পরিত্যাজ্য।
হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি বলে, কণার অবস্থান ও গতিবেগ একই সঙ্গে যথার্থভাবে জানা যাবে না। প্রকৃতি সম্পর্কে এটাও একধরনের অজ্ঞানতা। অর্থাৎ, আমাদের পর্যবেক্ষণপদ্ধতি যতই দক্ষ হোক না কেন, আমাদের কাছে এ দুই জিনিস একসঙ্গে অজানা থেকে যাবে। এই অজ্ঞানতা দেশ-কালের চাদরের মধ্যেই প্রোথিত। একে এড়ানোর উপায় নেই। আইনস্টাইনের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য ছিল না। তিনি বললেন, কোয়ান্টাম তত্ত্বপূর্ণ নয়। লিখলেন, ‘ঈশ্বর পাশা খেলতে পারে, ঠিক আছে; কিন্তু সে যে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে জুয়া খেলবে, এটা আমার ধারণার বাইরে।’ ঈশ্বর অর্থে এখানে তিনি প্রকৃতিকেই বুঝিয়েছিলেন। ১৯৩০ সালের ১৯ আগস্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে আলাপে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরমাণুর রাজ্যে আকস্মিকতা কাজ করে। কাজেই, অস্তিত্বের নাটক পুরোপুরি পূর্বনির্ধারিত নয়।’ তখন আইনস্টাইন উত্তর দিয়েছিলেন, ‘তার মানে এই নয় যে, বিজ্ঞান থেকে কার্যকারণ বিদায় হয়েছে।’ কার্যকারণ আইনস্টাইনের দর্শনে একটা বড় ভূমিকা রেখেছিল। তিনি বাস্তববাদী ছিলেন এবং মানব-নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র বাস্তবতায় বিশ্বাস করতেন। একই সঙ্গে প্রকৃতি যে কিছু জ্ঞান আমাদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখবে, তাতে বিশ্বাস করতেন না।
আইনস্টাইন নিজে খেয়ালিপনায় সে রকম বিশ্বাস করতেন না। যদিও তাঁর অগোছালো চুলের যে ছবিটি সবচেয়ে জনপ্রিয়, তাতে তাঁকে মন-ভোলা খেয়ালি বিজ্ঞানী হিসেবেই আমরা দেখি। কোয়ান্টাম তত্ত্বে ভরসা না রেখে তিনি জীবনের শেষ ২৫টি বছর আপেক্ষিকতা ও তড়িৎ-চুম্বকীয় ক্ষেত্রতত্ত্বের সংমিশ্রণে পদার্থবিদ্যার চূড়ান্ত নীতি প্রণয়ন করতে চেয়েছিলেন। ‘প্রকৃতি জুয়া খেলবে না’—এই জীবন দর্শন তাঁকে এই পথে পরিচালিত করে। তাঁর সেই উদ্যোগ অবশ্য সফল হয়নি। তাই আইনস্টাইনের পক্ষে কৃষ্ণবিবরের সিংগুলারিটির অস্তিত্ব মেনে নেওয়া কঠিন ছিল। তাঁর কাছে সিংগুলারিটি হলো প্রকৃতির খেয়ালিপনা, যার বৈশিষ্ট্যকে আমরা কোনোভাবেই নির্ধারণ করতে পারব না। যে সিংগুলারিটি থেকে আমরা কোনো তথ্যই আর আহরণ করতে পারব না (যদিও ইদানীং এই ধারণাটির পরিবর্তন হয়েছে)। আইনস্টাইন বিশ্বাস করতেন, প্রকৃতি কোনোভাবে সিংগুলারিটি (বা ব্ল্যাক হোল) সৃষ্টিতে বাধা দেবে। কারণ, সিংগুলারিটি হলো প্রকৃতি সম্বন্ধে আমাদের একধরনের অজ্ঞানতা। এ হলো যেন প্রকৃতির অপূর্ণতা। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার পরিসংখ্যানগত অনিশ্চয়তাকে তিনি যেমন পছন্দ করেননি, তেমনি একটি তারার পতন সিংগুলারিটি সৃষ্টি করতে পারে—সেটাও মেনে নেননি। অথচ এই দুটি বিষয়ের সূত্রপাত তিনি নিজ হাতে করে গিয়েছিলেন।
পরম ‘কিছু না’
চিন্তা করুন এমন একটি অবস্থা, যেখানে স্থান-কাল-পাত্র নেই। নেই দেশ-কালের চাদর, সময় নেই, স্পেস বা স্থান বলতে যা বোঝাই, সেই স্থান নেই। এমন একটি অবস্থা চিন্তা করা দুরূহ। কারণ, চিন্তার মাধ্যমে আমরা সেটিকে আকার দিই। কারণ, ‘কিছু না’-কে মনে স্থান দিলে সেটি ‘কিছু’-তে পরিণত হয়। বিখ্যাত চৈনিক দার্শনিক গ্রন্থ তাও-তে-চিং শুরুই হয়েছে এই পঙ্ক্তি দিয়ে—
‘যে তাওকে (পথকে) বর্ণনা করা যায়, তা চিরন্তন তাও নয়
যে নামকে উচ্চারণ করা যায়, তা চিরন্তন নাম নয়।
নামহীন যা তা স্বর্গ ও মর্ত্যের সীমানা
আর নামযুক্ত যা তা সকল সৃষ্টির মাতা।।’
আমাদের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, পরম ‘কিছু না’-কে নাম দিয়ে আমরা সেটির পরমত্বকে খর্ব করেছি। তবু যদি ধরা যায়, এ রকম একটা অবস্থা থাকা সম্ভব, তাহলে সেটিরই হওয়া উচিত ছিল প্রকৃতির স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। এই বাক্যটি যে স্ববিরোধিতায় পূর্ণ, তা স্বীকার করি। কিন্তু তাত্ত্বিক বিজ্ঞানীরা এই নিয়ে ভাবেন এবং কেন ‘কিছু না’-এর পরিবর্তে ‘কিছু’-এর (মহাবিশ্বের) আবির্ভাব হয়েছে, এই ধাঁধা তাদের রাতে জাগিয়ে রাখে।
সেই ‘কিছু না’ অবস্থায় হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা তত্ত্ব যদি কাজ করে, তবে ক্রমাগতই তাতে ছোট ছোট দেশ-কাল সৃষ্টি হবে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই সেগুলো আবার ‘কিছু না’-তে বিলীন হয়ে যাবে। একে কোয়ান্টাম বিচলন বলা যেতে পারে। কিন্তু মাঝেমধ্যে যদি সেই ক্ষণিক দেশ-কালের বুদ্বুদে অন্য কোনো বিশেষ ‘ক্ষেত্রের’ আবির্ভাব হয়, যা সেই বুদ্বুদকে খুব দ্রুত স্ফীত করবে, তাহলে সেই দেশ-কালটি স্থায়ী হয়ে যেতে পারে। এবং আমরা এই দেশ-কালের বুদ্বুদের আবির্ভাব ও দ্রুত প্রসারণকে বিগ ব্যাং বলে অভিহিত করতে পারি।
এই মডেল খুব আকর্ষণীয়, শুধু এখানে একটি বড় সমস্যা রয়ে গেছে। আমরা যখন ‘কিছু না’ বলছি, তার মধ্যে পদার্থবিদ্যা বা প্রকৃতির কোনো নীতিও থাকবে না। তাই হাইজেনবার্গের তত্ত্ব বা কোয়ান্টাম বিচলনের সেখানে কাজ করার কথা নয়। যদি করে, তাহলে সেটি পরম শূন্য বা ‘কিছু না’ হবে না। এই মডেলে মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগেই কোয়ান্টাম বিচলনকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাহলে বলতে হবে—পরম ‘কিছু না’ বলে কখনোই কিছু সম্ভব নয়। কারণ, কোয়ান্টাম তত্ত্ব ‘সব জায়গায়’ প্রতিষ্ঠিত।
নইলে আমাদের এমন এক মহাবিশ্বের কথা ভাবতে হবে, যার ঠিক শুরু নেই, যেমন ভেবেছিলেন স্টিফেন হকিং বহু বছর আগে। তাঁর সেই মডেলে মহাবিশ্বের শুরুতে ‘সময়’ বলে কিছু ছিল না, শুধু ছিল ‘দেশ’ বা ‘স্থান’। যেহেতু সময় ছিল না, বিগ ব্যাং-এর আগে কী ছিল, সেই প্রশ্নটি তখন আর করা যাবে না। কিন্তু যা-ই হোক না কেন, এই ধরনের ধাঁধা বা প্রশ্ন যে খুব গভীর এবং দর্শনের সঙ্গে জড়িত, তা বোঝাই যাচ্ছে।
আমাদের গ্যালাক্সিতে তারার সংখ্যা ৪০০ বিলিয়নের (৪০ হাজার কোটি) মতো হবে হয়তো। অথচ আমাদের নিকটবর্তী তারা প্রায় সাড়ে চার আলোকবর্ষ দূরে। এখনকার প্রযুক্তি ব্যবহার করলে সেখানে পৌঁছাতে ৬০-৭০ হাজার বছর লেগে যাবে। শুধু তা-ই নয়, পৃথিবীর সমস্ত রাসায়নিক জ্বালানি যথেষ্ট হবে না এই কাজ সম্পন্ন করতে। আমরা চাঁদে, মঙ্গলে, এমনকি বৃহস্পতির চাঁদগুলোতেও হয়তো যেতে পারব। কিন্তু আকাশের তারারা হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের হাতের বাইরে থাকবে। সেখানে হয়তো আমরা আদৌ পৌঁছাতে পারব না।
আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্বে গ্যালাক্সির সংখ্যা হতে পারে প্রায় ১০ ট্রিলিয়নের (১০ লাখ কোটি) মতো। আর দৃশ্যমান মহাবিশ্ব হয়তো-বা সমগ্র মহাবিশ্বের একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ। নিঃসন্দেহে শুধু ক্ষুদ্র একটি পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির, বুদ্ধিমান চেতনার উদ্ভবের জন্য মহাবিশ্বের কোটি কোটি গ্যালাক্সির প্রয়োজন ছিল না। এই গ্যালাক্সিগুলো সম্পর্কে যতই আমরা জানছি, আমাদের ব্যবহার্য জীবনে তাদের ভূমিকা যে শূন্য, তা-ও বুঝতে পারছি। মহাবিশ্বের এই বিশালতা একদিকে যেমন আমাদের বিস্মিত করে, অন্যদিকে ওয়াইনবার্গের সেই ‘উদ্দেশ্যহীনতা’ উক্তির কথা মনে করিয়ে দেয়। কিছু জ্ঞান প্রকৃতি হয়তো আমাদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখবে—কণার সঠিক অবস্থান ও ভরবেগ একসঙ্গে আমরা কখনোই নিরূপণ করতে পারব না। কৃষ্ণবিবরের মধ্যে সিংগুলারিটিকে আমরা কখনোই দেখব না। সমগ্র মহাবিশ্বের (শুধু দৃশ্যমান মহাবিশ্ব নয়) বিস্তার আমাদের কাছে রইবে অজানা, যেমন অজানা রইবে হয়তো এই প্রশ্নের উত্তর—কেন ‘কিছু’ আছে ‘কোনো কিছু না থাকা’-এর বদলে। কিন্তু এর মধ্যেই রয়েছে আমাদের জীবনদর্শনের পরিপূর্ণতা। প্রকৃতির এই খেলার নিগূঢ় নির্যাসকে স্বীকার করে নেওয়ার মধ্যে রয়েছে একধরনের স্বস্তি। সেই স্বস্তি আমাদের জীবনকে দেয় অর্থ। জীবনের শেষে এসে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন—
‘রূপনারানের কূলে
জেগে উঠিলাম,
জানিলাম এ জগৎ
স্বপ্ন নয়।
রক্তের অক্ষরে দেখিলাম
আপনার রূপ,
চিনিলাম আপনারে
আঘাতে আঘাতে
বেদনায় বেদনায়;
সত্য যে কঠিন,
কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,
সে কখনো করে না বঞ্চনা।
আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন,
সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করিবারে,
মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দিতে।’
বিজ্ঞান অনেক ক্ষেত্রেই মানুষকে কঠিন সত্যের মুখোমুখি করে। আমাদের মধ্যে কে স্বস্তি বোধ করবে এই ভেবে যে আমরা উদ্ভূত হয়েছি এক প্রাককেন্দ্রিক এক কোষী প্রাণী থেকে? আমাদের মধ্যে কে স্বস্তি বোধ করবে, এই ভেবে যে তাপগতি-বিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রের অমোঘ গতিতে একদিন আকাশের সব তারা নিভে যাবে? আমি বলব, এই যে অস্বস্তি, সেটিই আমাদের মানবিক বোধকে পরবর্তী পর্যায়ে উন্নীত করে। একদিকে যেমন আমরা মহাবিশ্বের উদাসীনতায় বিভ্রান্ত, অন্যদিকে সেই মহাবিশ্বকে আমাদের চেতনায়, বোধে পুনর্গঠিত করার মধ্যে আমাদের অস্তিত্বের অনন্য মূল্য নির্ধারিত হয়। আমাদের বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলতে এই জ্ঞানটির, এই বোধটির ভূমিকা অতুলনীয়। এটিকে গ্রহণ করতে সাহসের প্রয়োজন। সাধারণ মানুষ যখন তার সমস্ত ভঙ্গুরতা, নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে কঠিন সত্যকে আত্মস্থ করতে পারবে; অর্থাৎ, তার বাসস্থান, পৃথিবী নামের এই জাহাজটিকে অসীম স্থান-কালের অনুপাতে বিচার করতে পারবে; তখন সে আরেক ধরনের শান্তি ও স্বস্তি পাবে। সামগ্রিক মানবকল্যাণের জন্যও সেই বোধটির প্রয়োজন।
দীপেন ভট্টাচার্য: জ্যোতিঃপদার্থবিদ, অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, মোরেনো ভ্যালি কলেজ, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র

উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।
নাদিম নেওয়াজ

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

দুরবিনের ব্যাস যত বড় হবে, তত ছোট ও গোল বস্তুর আকার সেটি দেখতে পাবে। এই ক্ষেত্রে দুরবিনের ব্যাস আমাদের পৃথিবীর সমান হয়েছিল। ২০১৯ সালে একই পদ্ধতিতে ইএইচটি আমাদের থেকে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরের, ‘এম-এইটি সেভেন’ নামে একটি বিশাল গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা অতিকায় কৃষ্ণবিবরের ছবি তুলতে সমর্থ হয়েছিল।
০১ জুলাই ২০২২
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।
আসাদুজ্জামান নূর

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

দুরবিনের ব্যাস যত বড় হবে, তত ছোট ও গোল বস্তুর আকার সেটি দেখতে পাবে। এই ক্ষেত্রে দুরবিনের ব্যাস আমাদের পৃথিবীর সমান হয়েছিল। ২০১৯ সালে একই পদ্ধতিতে ইএইচটি আমাদের থেকে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরের, ‘এম-এইটি সেভেন’ নামে একটি বিশাল গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা অতিকায় কৃষ্ণবিবরের ছবি তুলতে সমর্থ হয়েছিল।
০১ জুলাই ২০২২
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম।
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

দুরবিনের ব্যাস যত বড় হবে, তত ছোট ও গোল বস্তুর আকার সেটি দেখতে পাবে। এই ক্ষেত্রে দুরবিনের ব্যাস আমাদের পৃথিবীর সমান হয়েছিল। ২০১৯ সালে একই পদ্ধতিতে ইএইচটি আমাদের থেকে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরের, ‘এম-এইটি সেভেন’ নামে একটি বিশাল গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা অতিকায় কৃষ্ণবিবরের ছবি তুলতে সমর্থ হয়েছিল।
০১ জুলাই ২০২২
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

দুরবিনের ব্যাস যত বড় হবে, তত ছোট ও গোল বস্তুর আকার সেটি দেখতে পাবে। এই ক্ষেত্রে দুরবিনের ব্যাস আমাদের পৃথিবীর সমান হয়েছিল। ২০১৯ সালে একই পদ্ধতিতে ইএইচটি আমাদের থেকে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরের, ‘এম-এইটি সেভেন’ নামে একটি বিশাল গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা অতিকায় কৃষ্ণবিবরের ছবি তুলতে সমর্থ হয়েছিল।
০১ জুলাই ২০২২
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫