মাহা মির্জা

প্রায় ১০ বছর আগে ফিলিপাইনের এক অধ্যাপক এসেছিলেন ঢাকায়। ব্র্যাকের আমন্ত্রণে। তাঁর বক্তব্য শুনতে গেলাম (দুর্ভাগ্যবশত অধ্যাপকের নাম মনে নেই)। সেই অধ্যাপক ফিলিপাইনের ‘মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার’ নিয়ে কথা বলেছিলেন।
ফিলিপাইন তখন বিশ্বের অন্যতম বেশি রেমিট্যান্স পাওয়া দেশ। প্রবাসী শ্রমিকেরা ফিলিপাইনের অর্থনীতির ‘মেরুদণ্ড’। আমার ধারণা ছিল, ফিলিপাইনের অর্থনীতিতে প্রবাসী শ্রমিকদের অবদান নিয়ে অধ্যাপক কথা বলবেন। কী করে প্রবাসী শ্রমিকেরা বদলে দিলেন ফিলিপাইনের অর্থনীতির চেহারা, কী করে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো টাকায় জিডিপি বাড়ল, মাথাপিছু আয় বাড়ল, কী করে আশি-নব্বইয়ের দশকজুড়ে সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান আর দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোতে হাজার হাজার ফিলিপিনো নারীর কর্মসংস্থান হলো ইত্যাদি ইত্যাদি।
ফিলিপিনো অধ্যাপক খুবই অবাক করলেন আমাকে। তিনি ফিলিপাইনের বৈদেশিক রিজার্ভের গল্প করলেন না। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির গল্প করলেন না। তিনি অন্য এক ফিলিপাইনের গল্প বললেন। তিনি ফিলিপাইনের ভেঙে পড়া এক সমাজের গল্প বললেন। বললেন তিল তিল করে দেশে অর্থ পাঠানো সেই সব মায়ের গল্প, যাঁরা শিশুসন্তানকে বাড়িতে ফেলে কাঁদতে কাঁদতে প্লেনে উঠেছেন। তিনি বললেন মা-বিহীন এক অন্ধকার সমাজের গল্প। স্কুলের শিশুদের মাদক আর বিষণ্নতার গল্প। বছরে একবার দেশে বেড়াতে আসা মাকে দেখে চিনতে না পারা শিশুদের গল্প। আশি-নব্বইয়ের দশকে ইন্টারনেটের ব্যবহার ছিল না, ফোন ব্যয়বহুল ছিল, ফিলিপাইনের যে মা সিঙ্গাপুরে বাসাবাড়িতে কাজ করেন, সেই মাকে দেখা যায় বছরে মাত্র একবার। মায়ের সঙ্গে সংযোগবিহীন এক সমাজের গল্প বললেন সেই অধ্যাপক।
তাইওয়ানে, সিঙ্গাপুরে, মালয়েশিয়ার বাসাবাড়িতে কাজ করা ফিলিপিনো মায়েরা নিয়মিত দেশে টাকা পাঠিয়েছেন। সেই পাঠানো টাকায় ফিলিপাইনের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে গেলেও গোটা একটা সমাজ তছনছ হয়ে গেছে।
আমার মাথায় হাজারটা প্রশ্নটা এল। একটা দেশের অর্থনীতি কি তার সমাজ থেকে আলাদা? অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে গিয়ে সমাজ কেন ভেঙে যায়? দেশের অর্থনীতির ভালো হলে দেশের মানুষের ভালো হয় না কেন? অর্থনীতির ভালোটা তাহলে কার ভালো?
নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশেরও বিপুলসংখ্যক শ্রমিক গেছেন মধ্যপ্রাচ্যে। মালয়েশিয়ার নির্মাণশ্রমিক, আবুধাবির শপিং মলের পরিচ্ছন্নতা কর্মী, তুরস্কের বিমানবন্দরে টয়লেট ক্লিনার—সবই তো আমার দেশেরই মানুষ। নিজে খেয়ে না খেয়ে তাঁরা দেশে টাকা পাঠিয়েছেন। গত ৩০ বছরে বৈদেশিক রিজার্ভে বিপ্লব ঘটেছে, অর্থনীতির আকার বেড়েছে। বর্তমানে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স আমাদের জিডিপির ৭ শতাংশ।
শ্রীলঙ্কায় ডলারের সংকট চলছে। বিদেশ থেকে জরুরি খাদ্য, ওষুধ আর জ্বালানি কেনার মতো ডলার ফুরিয়ে এসেছে। শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির এই মহাসংকট দেখে এ দেশের অর্থনীতিবিদেরা খুব স্বাভাবিকভাবেই তুলনামূলক আলোচনা করছেন। প্রায় সবাই বলছেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে এমন বিপদের আশঙ্কা কম। আমাদের রেমিট্যান্সের প্রবাহ ভালো, রিজার্ভ সন্তোষজনক। সরকারের পক্ষ থেকেও বারবার আশ্বস্ত করা হয়েছে, আমরা শ্রীলঙ্কা হব না।
চলতি বছরের বাজেট আলোচনায় দেশের সাম্প্রতিক ডলার-সংকটের ব্যাপারটি বারবার সামনে এসেছে। এ বছরের মার্চেও রিজার্ভ ছিল ৫০ বিলিয়ন ডলার। জুন মাসে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৪২ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ, সংকটের আভাস। বাজেট আলোচনার একটা বড় অংশজুড়েই তাই রিজার্ভের আলাপ। রিজার্ভ কমছে কেন? প্রবাসী শ্রমিকদের হঠাৎ কী হলো? তাঁরা কি টাকা পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন, নাকি ঠিক চ্যানেলে টাকা পাঠাচ্ছেন না? সরকারি চ্যানেলে টাকা না পাঠিয়ে হুন্ডিতে পাঠাচ্ছেন? কেন যে তাঁরা এমন অবৈধ কাজ করেন! অর্থনীতিবিদ, মন্ত্রী, মিডিয়া—সবাই হা-হুতাশ করছেন। সরকারের উচিত বেশি বেশি করে সরকারি চ্যানেলে টাকা পাঠাতে উৎসাহ দেওয়া। সরকারের উচিত বেশি বেশি শ্রমিক বিদেশে ‘এক্সপোর্ট’ করা। সরকারের উচিত বেশি বেশি করে মধ্যপ্রাচ্যের বাজার ধরা। অথচ এসব দীর্ঘ আলোচনায় কোথাও কেউ বললেন না, ‘ভাই রে, প্রবাসী শ্রমিকেরা তো ভালো নেই।’
বিশ্বব্যাংক আর আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার বিভিন্ন সময়ের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশের অভিবাসন খরচ অন্য প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বেশি। যেমন কুয়েতে যেতে বাংলাদেশের একজন শ্রমিকের লাগছে ২ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা, যা পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা বা নেপালি শ্রমিকের খরচের তুলনায় অনেক বেশি। এর মধ্যে আবার মোট খরচের ৭৭ শতাংশই লুটে নিচ্ছে দালাল চক্র! এই চক্রের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। টাকা জোগাড় করতে কেউ চড়া সুদে ঋণ করেন, কেউ জমিজমা বিক্রি করেন। এরপর চক্রাকারে বাড়তে থাকে সুদের বোঝা।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা জানাচ্ছে, ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করেও পর্যাপ্ত মজুরি পাচ্ছেন না মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করা অনেক শ্রমিক। তার ওপর খরচ বাঁচাতে ৮-১০ জন মিলে চাপাচাপি করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকাও একটি স্বাভাবিক ঘটনা। অর্থাৎ, অতিরিক্ত শ্রম, অল্প খাবার, ঋণের বোঝা প্রবাসী শ্রমিকের জীবনের নিত্যসঙ্গী। সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনা হলো, প্রতিবছর মধ্যপ্রাচ্য থেকে হাজার হাজার শ্রমিকের লাশ ফিরছে কফিনে। ১৩ বছরে ফেরত এসেছে ৩৩ হাজার শ্রমিকের লাশ!
সরকারি সূত্রই বলছে, বেশির ভাগের মৃত্যুর কারণ হৃদ্রোগ বা স্ট্রোক। অথচ এই শ্রমিকদের বয়স মাত্র ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এটা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়? হাজার হাজার কর্মক্ষম টগবগে তরুণের এই বয়সে স্ট্রোক হবে কেন? আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ বা হিটওয়েভের মধ্যেও দীর্ঘ সময় ধরে দালান নির্মাণের কাজে রোদে থাকা, প্রতি মাসে দেশে টাকা পাঠানোর অমানবিক চাপ এবং সর্বোপরি সুদ বৃদ্ধির দুশ্চিন্তায় দুর্বল শরীরে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এসব তরুণ শ্রমিক।
অথচ অর্থনীতিবিদদের আলোচনায় প্রবাসী শ্রমিকের জীবনমান, কর্মপরিবেশ এবং অতিরিক্ত অভিবাসন খরচ ঠাঁই পায় না। রেমিট্যান্সের আলোচনায় নেই কোনো ‘হিউম্যান ফেইস’। যেন অর্থনীতিবিদ শুধু রিজার্ভের হিসাব করবেন, রেমিট্যান্স জিডিপির কত শতাংশ, সেই হিসাব করবেন অথবা এক মাসের রেমিট্যান্সের টাকা দিয়ে কত মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যায়, সেই হিসাব করবেন। বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকদের বিদেশে যেতে এত বেশি খরচ লাগছে কেন—সেটা তো টাকারই আলাপ। কিন্তু শ্রমিক পরিবারের সেই রক্ত পানি করা টাকার হিসাব অর্থনীতিবিদদের আলাপের বিষয় হয়ে উঠতে পারেনি আজও। বাজেট আলোচনায় প্রায় সবাই পরামর্শ দিয়েছেন, আরও বেশি বেশি শ্রমিক বিদেশে পাঠাতে হবে। কিন্তু কাউকে বলতে শুনিনি, বাংলাদেশের শ্রমিকদের কুয়েতে যেতে ডাবল খরচ লাগছে কেন? যেন ‘ওদের বেশি টাকা লাগলে লাগুক, ওরা ম্যানেজ করুক, আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহ যেন কমে-টমে না যায় আরকি!’
এই যে প্রবাসী শ্রমিকের হাড়ভাঙা রেমিট্যান্সের ওপর একচেটিয়া নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে দেশের অর্থনীতি, এর কি বিকল্প ছিল না? ছিল তো বটেই। বিকল্প ছিল দেশের ভেতরে স্থানীয় শিল্পের বিকাশ এবং দেশের ভেতরে মানসম্মত কর্মসংস্থান তৈরি। এ ছাড়া বিদেশের চাহিদার বদলে দেশের ভেতরে শ্রমিকের আয়রোজগার বৃদ্ধির মাধ্যমে স্থানীয় পণ্যের চাহিদা তৈরি করা যেত। আশির দশকে দক্ষিণ কোরিয়া বা মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পেছনে মূল চালিকাশক্তি ছিল ব্যাপক হারে স্থানীয় শিল্পায়ন ও স্থানীয় কর্মসংস্থান তৈরি। যদিও প্রচার করা হয় যে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পুরোটাই রপ্তানিশিল্পের অবদান। বাস্তবতা হলো, একই সময়ে রপ্তানিশিল্পের পাশাপাশি এসব দেশে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল বহু স্থানীয় শিল্পকারখানা। তাই বৈশ্বিক মন্দা-পরবর্তী সময়ে এশিয়ার রপ্তানিবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও স্থানীয় মানুষের রমরমা চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই নতুন নতুন স্থানীয় শিল্পের বিকাশ ঘটে এবং টেকসই কর্মসংস্থান তৈরি হয়।
আর আমরা কী করেছি? একের পর এক আমাদের রাষ্ট্রীয় শিল্পকারখানাগুলো বন্ধ করেছি। কয়েক লাখ সচল কর্মসংস্থান নষ্ট করেছি। কারখানার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা একেকটি প্রাণবন্ত স্থানীয় অর্থনীতিকেও ধ্বংস করেছি। পাটকল ও চিনিকলের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কয়েক লাখ পাটচাষি ও আখচাষির জীবন-জীবিকা অনিশ্চিত করেছি। দীর্ঘদিনের সচল জীবিকা নষ্ট করা হয়েছে, কিন্তু নতুন কর্মসংস্থান তৈরির কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। গত কয়েক বছরে পোশাকশিল্পে অটোমেশনের কারণে ব্যাপক ছাঁটাই শুরু হয়েছে। ম্যাকেঞ্জি রিপোর্ট বলছে, ভবিষ্যতে গার্মেন্টস খাতের ছাঁটাই আরও ব্যাপক আকার ধারণ করবে। কিন্তু গার্মেন্টস খাতের বিকল্প নিয়ে ভাবার ফুরসত আমাদের হয়ে ওঠেনি।
নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে উদ্যোগ নেই, স্থানীয় শিল্পে আগ্রহ নেই, উল্টো একের পর এক চালু কারখানা বন্ধ। নিজ থেকে তৈরি হওয়া অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক নিয়মিত প্রশাসনিক জুলুমের শিকার। দেশীয় শিল্প অবহেলিত। আমদানি পণ্যের বিকল্প হিসেবে গড়ে উঠতে পারত যে সম্ভাবনাময় দেশীয় খাতগুলো, চীন ও ভারতের পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে সেই খাতগুলোও আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি। সম্ভাবনাময় শিল্প বাঁচাতে রাষ্ট্রের শুল্কনীতি, ভ্যাট বা বাণিজ্যনীতিতেও কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেই। নিজের দেশের শ্রমিকের জীবন নিয়েই যাঁরা ভাবেননি কখনো, তাঁরা প্রবাসী শ্রমিকের জীবন নিয়ে ভাববেন কেন?
১৯৭৩ সালে আমেরিকান লেখক আরসুলা লে গুইন লিখেছিলেন সেই বিখ্যাত ছোট গল্প ‘দ্য ওয়ান্স হু ওয়াক অ্যাওয়ে ফ্রম ওমেলাস’। এক রূপকথার মতো সুন্দর শহর। শহরের নাম ওমেলাস। কোনো কিছুর অভাব নেই সেখানে। সবার ঘরে ঘরে খাবার। বসন্ত এলে উৎসব হয়। শিশুরা সবাই হাসছে-খেলছে, ছেলে-মেয়ে, তরুণ-বৃদ্ধ—সবাই নেচে-গেয়ে আনন্দে জীবন পার করছে। কোথাও কোনো দুঃখ নেই। শুধু একটা ‘সিক্রেট’ আছে ওমেলাসে। কী সেই গোপন কথা? শহরের এক প্রান্তে একটা অন্ধকার বাড়ির নিচে একটা জানালাবিহীন ছোট্ট ঘর। সেই অন্ধকার ঘরে আটক রাখা হয়েছে ছয় বছরের এক ছেলেকে। ছেলেটা আছে সবাই জানে, কিন্তু ছেলেটাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা কেউ বলে না। কারণ, এই ছোট্ট ছেলেটিকে আটকে রাখলেই ওমেলাসের মানুষ সুখে-শান্তিতে থাকবে। অর্থাৎ, এই আটকে রাখা ছেলেটাই ওমেলাসের প্রাণভোমরা। ছেলেটাকে ছেড়ে দিলে ওমেলাসের ঘরে ঘরে দুর্যোগ নেমে আসবে। ওমেলাসের মানুষের আনন্দের দিন শেষ হবে।
ওমেলাসকে নিয়ে রচিত হয়েছে অসংখ্য বিশ্লেষণী লেখা। কেউ বলেছে, ওমেলাস এই যুগের আধুনিক সভ্যতার গল্প। আমাদের ভালো থাকার জন্য কোথাও না কোথাও একটা অন্ধকার কারখানা আছে, কোথাও না কোথাও শ্রমিক মারা যাচ্ছেন।
১৯৩১ সালে রাশিয়ার চিঠিতে রবীন্দ্রনাথও লিখেছেন সেই একই গল্প, ‘…চিরকালই মানুষের সভ্যতায় একদল অখ্যাত লোক থাকে, তাদেরই সংখ্যা বেশি, তারাই বাহন; তাদের মানুষ হওয়ার সময় নেই; দেশের সম্পদের উচ্ছিষ্টে তারা পালিত। সব চেয়ে কম খেয়ে, কম পরে, কম শিখে, বাকি সকলের পরিচর্যা করে; সকলের চেয়ে বেশি তাদের পরিশ্রম, সকলের চেয়ে বেশি তাদের অসম্মান। কথায় কথায় তারা রোগে মরে, উপোসে মরে, উপরওয়ালাদের লাথি-ঝাঁটা খেয়ে মরে—জীবনযাত্রার জন্য যত কিছু সুযোগ-সুবিধে, সবকিছুর থেকেই তারা বঞ্চিত। তারা সভ্যতার পিলসুজ, মাথায় প্রদীপ নিয়ে খাঁড়া দাঁড়িয়ে থাকে—উপরের সবাই আলো পায়, তাদের গা দিয়ে তেল গড়িয়ে পড়ে।’
আমাদের প্রবাসী শ্রমিক সেই সভ্যতার পিলসুজই তো। ওমেলাসের অন্ধকার ঘরে আটকে থাকা সেই ছেলেটা আমাদের ‘ওপেন সিক্রেট’। তাদের কম খেয়ে টাকা পাঠানোর ওপর দাঁড়িয়ে গেছে আমাদের অর্থনীতি। তাদের কফিনগুলো আমাদের আলোচনার বিষয় নয়, বরং আমরা বেশি বেশি করে শ্রমিক বিদেশে পাঠাব আর শ্রমিকদের বকে দেব—হুন্ডি যেন না করেন! কিন্তু ভুলেও জিজ্ঞেস করব না, তাঁরা মারা যাচ্ছেন কেন?
লেখক: উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক গবেষক

প্রায় ১০ বছর আগে ফিলিপাইনের এক অধ্যাপক এসেছিলেন ঢাকায়। ব্র্যাকের আমন্ত্রণে। তাঁর বক্তব্য শুনতে গেলাম (দুর্ভাগ্যবশত অধ্যাপকের নাম মনে নেই)। সেই অধ্যাপক ফিলিপাইনের ‘মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার’ নিয়ে কথা বলেছিলেন।
ফিলিপাইন তখন বিশ্বের অন্যতম বেশি রেমিট্যান্স পাওয়া দেশ। প্রবাসী শ্রমিকেরা ফিলিপাইনের অর্থনীতির ‘মেরুদণ্ড’। আমার ধারণা ছিল, ফিলিপাইনের অর্থনীতিতে প্রবাসী শ্রমিকদের অবদান নিয়ে অধ্যাপক কথা বলবেন। কী করে প্রবাসী শ্রমিকেরা বদলে দিলেন ফিলিপাইনের অর্থনীতির চেহারা, কী করে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো টাকায় জিডিপি বাড়ল, মাথাপিছু আয় বাড়ল, কী করে আশি-নব্বইয়ের দশকজুড়ে সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান আর দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোতে হাজার হাজার ফিলিপিনো নারীর কর্মসংস্থান হলো ইত্যাদি ইত্যাদি।
ফিলিপিনো অধ্যাপক খুবই অবাক করলেন আমাকে। তিনি ফিলিপাইনের বৈদেশিক রিজার্ভের গল্প করলেন না। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির গল্প করলেন না। তিনি অন্য এক ফিলিপাইনের গল্প বললেন। তিনি ফিলিপাইনের ভেঙে পড়া এক সমাজের গল্প বললেন। বললেন তিল তিল করে দেশে অর্থ পাঠানো সেই সব মায়ের গল্প, যাঁরা শিশুসন্তানকে বাড়িতে ফেলে কাঁদতে কাঁদতে প্লেনে উঠেছেন। তিনি বললেন মা-বিহীন এক অন্ধকার সমাজের গল্প। স্কুলের শিশুদের মাদক আর বিষণ্নতার গল্প। বছরে একবার দেশে বেড়াতে আসা মাকে দেখে চিনতে না পারা শিশুদের গল্প। আশি-নব্বইয়ের দশকে ইন্টারনেটের ব্যবহার ছিল না, ফোন ব্যয়বহুল ছিল, ফিলিপাইনের যে মা সিঙ্গাপুরে বাসাবাড়িতে কাজ করেন, সেই মাকে দেখা যায় বছরে মাত্র একবার। মায়ের সঙ্গে সংযোগবিহীন এক সমাজের গল্প বললেন সেই অধ্যাপক।
তাইওয়ানে, সিঙ্গাপুরে, মালয়েশিয়ার বাসাবাড়িতে কাজ করা ফিলিপিনো মায়েরা নিয়মিত দেশে টাকা পাঠিয়েছেন। সেই পাঠানো টাকায় ফিলিপাইনের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে গেলেও গোটা একটা সমাজ তছনছ হয়ে গেছে।
আমার মাথায় হাজারটা প্রশ্নটা এল। একটা দেশের অর্থনীতি কি তার সমাজ থেকে আলাদা? অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে গিয়ে সমাজ কেন ভেঙে যায়? দেশের অর্থনীতির ভালো হলে দেশের মানুষের ভালো হয় না কেন? অর্থনীতির ভালোটা তাহলে কার ভালো?
নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশেরও বিপুলসংখ্যক শ্রমিক গেছেন মধ্যপ্রাচ্যে। মালয়েশিয়ার নির্মাণশ্রমিক, আবুধাবির শপিং মলের পরিচ্ছন্নতা কর্মী, তুরস্কের বিমানবন্দরে টয়লেট ক্লিনার—সবই তো আমার দেশেরই মানুষ। নিজে খেয়ে না খেয়ে তাঁরা দেশে টাকা পাঠিয়েছেন। গত ৩০ বছরে বৈদেশিক রিজার্ভে বিপ্লব ঘটেছে, অর্থনীতির আকার বেড়েছে। বর্তমানে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স আমাদের জিডিপির ৭ শতাংশ।
শ্রীলঙ্কায় ডলারের সংকট চলছে। বিদেশ থেকে জরুরি খাদ্য, ওষুধ আর জ্বালানি কেনার মতো ডলার ফুরিয়ে এসেছে। শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির এই মহাসংকট দেখে এ দেশের অর্থনীতিবিদেরা খুব স্বাভাবিকভাবেই তুলনামূলক আলোচনা করছেন। প্রায় সবাই বলছেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে এমন বিপদের আশঙ্কা কম। আমাদের রেমিট্যান্সের প্রবাহ ভালো, রিজার্ভ সন্তোষজনক। সরকারের পক্ষ থেকেও বারবার আশ্বস্ত করা হয়েছে, আমরা শ্রীলঙ্কা হব না।
চলতি বছরের বাজেট আলোচনায় দেশের সাম্প্রতিক ডলার-সংকটের ব্যাপারটি বারবার সামনে এসেছে। এ বছরের মার্চেও রিজার্ভ ছিল ৫০ বিলিয়ন ডলার। জুন মাসে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৪২ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ, সংকটের আভাস। বাজেট আলোচনার একটা বড় অংশজুড়েই তাই রিজার্ভের আলাপ। রিজার্ভ কমছে কেন? প্রবাসী শ্রমিকদের হঠাৎ কী হলো? তাঁরা কি টাকা পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন, নাকি ঠিক চ্যানেলে টাকা পাঠাচ্ছেন না? সরকারি চ্যানেলে টাকা না পাঠিয়ে হুন্ডিতে পাঠাচ্ছেন? কেন যে তাঁরা এমন অবৈধ কাজ করেন! অর্থনীতিবিদ, মন্ত্রী, মিডিয়া—সবাই হা-হুতাশ করছেন। সরকারের উচিত বেশি বেশি করে সরকারি চ্যানেলে টাকা পাঠাতে উৎসাহ দেওয়া। সরকারের উচিত বেশি বেশি শ্রমিক বিদেশে ‘এক্সপোর্ট’ করা। সরকারের উচিত বেশি বেশি করে মধ্যপ্রাচ্যের বাজার ধরা। অথচ এসব দীর্ঘ আলোচনায় কোথাও কেউ বললেন না, ‘ভাই রে, প্রবাসী শ্রমিকেরা তো ভালো নেই।’
বিশ্বব্যাংক আর আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার বিভিন্ন সময়ের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশের অভিবাসন খরচ অন্য প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বেশি। যেমন কুয়েতে যেতে বাংলাদেশের একজন শ্রমিকের লাগছে ২ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা, যা পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা বা নেপালি শ্রমিকের খরচের তুলনায় অনেক বেশি। এর মধ্যে আবার মোট খরচের ৭৭ শতাংশই লুটে নিচ্ছে দালাল চক্র! এই চক্রের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। টাকা জোগাড় করতে কেউ চড়া সুদে ঋণ করেন, কেউ জমিজমা বিক্রি করেন। এরপর চক্রাকারে বাড়তে থাকে সুদের বোঝা।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা জানাচ্ছে, ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করেও পর্যাপ্ত মজুরি পাচ্ছেন না মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করা অনেক শ্রমিক। তার ওপর খরচ বাঁচাতে ৮-১০ জন মিলে চাপাচাপি করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকাও একটি স্বাভাবিক ঘটনা। অর্থাৎ, অতিরিক্ত শ্রম, অল্প খাবার, ঋণের বোঝা প্রবাসী শ্রমিকের জীবনের নিত্যসঙ্গী। সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনা হলো, প্রতিবছর মধ্যপ্রাচ্য থেকে হাজার হাজার শ্রমিকের লাশ ফিরছে কফিনে। ১৩ বছরে ফেরত এসেছে ৩৩ হাজার শ্রমিকের লাশ!
সরকারি সূত্রই বলছে, বেশির ভাগের মৃত্যুর কারণ হৃদ্রোগ বা স্ট্রোক। অথচ এই শ্রমিকদের বয়স মাত্র ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এটা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়? হাজার হাজার কর্মক্ষম টগবগে তরুণের এই বয়সে স্ট্রোক হবে কেন? আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ বা হিটওয়েভের মধ্যেও দীর্ঘ সময় ধরে দালান নির্মাণের কাজে রোদে থাকা, প্রতি মাসে দেশে টাকা পাঠানোর অমানবিক চাপ এবং সর্বোপরি সুদ বৃদ্ধির দুশ্চিন্তায় দুর্বল শরীরে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এসব তরুণ শ্রমিক।
অথচ অর্থনীতিবিদদের আলোচনায় প্রবাসী শ্রমিকের জীবনমান, কর্মপরিবেশ এবং অতিরিক্ত অভিবাসন খরচ ঠাঁই পায় না। রেমিট্যান্সের আলোচনায় নেই কোনো ‘হিউম্যান ফেইস’। যেন অর্থনীতিবিদ শুধু রিজার্ভের হিসাব করবেন, রেমিট্যান্স জিডিপির কত শতাংশ, সেই হিসাব করবেন অথবা এক মাসের রেমিট্যান্সের টাকা দিয়ে কত মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যায়, সেই হিসাব করবেন। বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকদের বিদেশে যেতে এত বেশি খরচ লাগছে কেন—সেটা তো টাকারই আলাপ। কিন্তু শ্রমিক পরিবারের সেই রক্ত পানি করা টাকার হিসাব অর্থনীতিবিদদের আলাপের বিষয় হয়ে উঠতে পারেনি আজও। বাজেট আলোচনায় প্রায় সবাই পরামর্শ দিয়েছেন, আরও বেশি বেশি শ্রমিক বিদেশে পাঠাতে হবে। কিন্তু কাউকে বলতে শুনিনি, বাংলাদেশের শ্রমিকদের কুয়েতে যেতে ডাবল খরচ লাগছে কেন? যেন ‘ওদের বেশি টাকা লাগলে লাগুক, ওরা ম্যানেজ করুক, আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহ যেন কমে-টমে না যায় আরকি!’
এই যে প্রবাসী শ্রমিকের হাড়ভাঙা রেমিট্যান্সের ওপর একচেটিয়া নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে দেশের অর্থনীতি, এর কি বিকল্প ছিল না? ছিল তো বটেই। বিকল্প ছিল দেশের ভেতরে স্থানীয় শিল্পের বিকাশ এবং দেশের ভেতরে মানসম্মত কর্মসংস্থান তৈরি। এ ছাড়া বিদেশের চাহিদার বদলে দেশের ভেতরে শ্রমিকের আয়রোজগার বৃদ্ধির মাধ্যমে স্থানীয় পণ্যের চাহিদা তৈরি করা যেত। আশির দশকে দক্ষিণ কোরিয়া বা মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পেছনে মূল চালিকাশক্তি ছিল ব্যাপক হারে স্থানীয় শিল্পায়ন ও স্থানীয় কর্মসংস্থান তৈরি। যদিও প্রচার করা হয় যে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পুরোটাই রপ্তানিশিল্পের অবদান। বাস্তবতা হলো, একই সময়ে রপ্তানিশিল্পের পাশাপাশি এসব দেশে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল বহু স্থানীয় শিল্পকারখানা। তাই বৈশ্বিক মন্দা-পরবর্তী সময়ে এশিয়ার রপ্তানিবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও স্থানীয় মানুষের রমরমা চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই নতুন নতুন স্থানীয় শিল্পের বিকাশ ঘটে এবং টেকসই কর্মসংস্থান তৈরি হয়।
আর আমরা কী করেছি? একের পর এক আমাদের রাষ্ট্রীয় শিল্পকারখানাগুলো বন্ধ করেছি। কয়েক লাখ সচল কর্মসংস্থান নষ্ট করেছি। কারখানার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা একেকটি প্রাণবন্ত স্থানীয় অর্থনীতিকেও ধ্বংস করেছি। পাটকল ও চিনিকলের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কয়েক লাখ পাটচাষি ও আখচাষির জীবন-জীবিকা অনিশ্চিত করেছি। দীর্ঘদিনের সচল জীবিকা নষ্ট করা হয়েছে, কিন্তু নতুন কর্মসংস্থান তৈরির কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। গত কয়েক বছরে পোশাকশিল্পে অটোমেশনের কারণে ব্যাপক ছাঁটাই শুরু হয়েছে। ম্যাকেঞ্জি রিপোর্ট বলছে, ভবিষ্যতে গার্মেন্টস খাতের ছাঁটাই আরও ব্যাপক আকার ধারণ করবে। কিন্তু গার্মেন্টস খাতের বিকল্প নিয়ে ভাবার ফুরসত আমাদের হয়ে ওঠেনি।
নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে উদ্যোগ নেই, স্থানীয় শিল্পে আগ্রহ নেই, উল্টো একের পর এক চালু কারখানা বন্ধ। নিজ থেকে তৈরি হওয়া অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক নিয়মিত প্রশাসনিক জুলুমের শিকার। দেশীয় শিল্প অবহেলিত। আমদানি পণ্যের বিকল্প হিসেবে গড়ে উঠতে পারত যে সম্ভাবনাময় দেশীয় খাতগুলো, চীন ও ভারতের পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে সেই খাতগুলোও আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি। সম্ভাবনাময় শিল্প বাঁচাতে রাষ্ট্রের শুল্কনীতি, ভ্যাট বা বাণিজ্যনীতিতেও কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেই। নিজের দেশের শ্রমিকের জীবন নিয়েই যাঁরা ভাবেননি কখনো, তাঁরা প্রবাসী শ্রমিকের জীবন নিয়ে ভাববেন কেন?
১৯৭৩ সালে আমেরিকান লেখক আরসুলা লে গুইন লিখেছিলেন সেই বিখ্যাত ছোট গল্প ‘দ্য ওয়ান্স হু ওয়াক অ্যাওয়ে ফ্রম ওমেলাস’। এক রূপকথার মতো সুন্দর শহর। শহরের নাম ওমেলাস। কোনো কিছুর অভাব নেই সেখানে। সবার ঘরে ঘরে খাবার। বসন্ত এলে উৎসব হয়। শিশুরা সবাই হাসছে-খেলছে, ছেলে-মেয়ে, তরুণ-বৃদ্ধ—সবাই নেচে-গেয়ে আনন্দে জীবন পার করছে। কোথাও কোনো দুঃখ নেই। শুধু একটা ‘সিক্রেট’ আছে ওমেলাসে। কী সেই গোপন কথা? শহরের এক প্রান্তে একটা অন্ধকার বাড়ির নিচে একটা জানালাবিহীন ছোট্ট ঘর। সেই অন্ধকার ঘরে আটক রাখা হয়েছে ছয় বছরের এক ছেলেকে। ছেলেটা আছে সবাই জানে, কিন্তু ছেলেটাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা কেউ বলে না। কারণ, এই ছোট্ট ছেলেটিকে আটকে রাখলেই ওমেলাসের মানুষ সুখে-শান্তিতে থাকবে। অর্থাৎ, এই আটকে রাখা ছেলেটাই ওমেলাসের প্রাণভোমরা। ছেলেটাকে ছেড়ে দিলে ওমেলাসের ঘরে ঘরে দুর্যোগ নেমে আসবে। ওমেলাসের মানুষের আনন্দের দিন শেষ হবে।
ওমেলাসকে নিয়ে রচিত হয়েছে অসংখ্য বিশ্লেষণী লেখা। কেউ বলেছে, ওমেলাস এই যুগের আধুনিক সভ্যতার গল্প। আমাদের ভালো থাকার জন্য কোথাও না কোথাও একটা অন্ধকার কারখানা আছে, কোথাও না কোথাও শ্রমিক মারা যাচ্ছেন।
১৯৩১ সালে রাশিয়ার চিঠিতে রবীন্দ্রনাথও লিখেছেন সেই একই গল্প, ‘…চিরকালই মানুষের সভ্যতায় একদল অখ্যাত লোক থাকে, তাদেরই সংখ্যা বেশি, তারাই বাহন; তাদের মানুষ হওয়ার সময় নেই; দেশের সম্পদের উচ্ছিষ্টে তারা পালিত। সব চেয়ে কম খেয়ে, কম পরে, কম শিখে, বাকি সকলের পরিচর্যা করে; সকলের চেয়ে বেশি তাদের পরিশ্রম, সকলের চেয়ে বেশি তাদের অসম্মান। কথায় কথায় তারা রোগে মরে, উপোসে মরে, উপরওয়ালাদের লাথি-ঝাঁটা খেয়ে মরে—জীবনযাত্রার জন্য যত কিছু সুযোগ-সুবিধে, সবকিছুর থেকেই তারা বঞ্চিত। তারা সভ্যতার পিলসুজ, মাথায় প্রদীপ নিয়ে খাঁড়া দাঁড়িয়ে থাকে—উপরের সবাই আলো পায়, তাদের গা দিয়ে তেল গড়িয়ে পড়ে।’
আমাদের প্রবাসী শ্রমিক সেই সভ্যতার পিলসুজই তো। ওমেলাসের অন্ধকার ঘরে আটকে থাকা সেই ছেলেটা আমাদের ‘ওপেন সিক্রেট’। তাদের কম খেয়ে টাকা পাঠানোর ওপর দাঁড়িয়ে গেছে আমাদের অর্থনীতি। তাদের কফিনগুলো আমাদের আলোচনার বিষয় নয়, বরং আমরা বেশি বেশি করে শ্রমিক বিদেশে পাঠাব আর শ্রমিকদের বকে দেব—হুন্ডি যেন না করেন! কিন্তু ভুলেও জিজ্ঞেস করব না, তাঁরা মারা যাচ্ছেন কেন?
লেখক: উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক গবেষক
মাহা মির্জা

প্রায় ১০ বছর আগে ফিলিপাইনের এক অধ্যাপক এসেছিলেন ঢাকায়। ব্র্যাকের আমন্ত্রণে। তাঁর বক্তব্য শুনতে গেলাম (দুর্ভাগ্যবশত অধ্যাপকের নাম মনে নেই)। সেই অধ্যাপক ফিলিপাইনের ‘মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার’ নিয়ে কথা বলেছিলেন।
ফিলিপাইন তখন বিশ্বের অন্যতম বেশি রেমিট্যান্স পাওয়া দেশ। প্রবাসী শ্রমিকেরা ফিলিপাইনের অর্থনীতির ‘মেরুদণ্ড’। আমার ধারণা ছিল, ফিলিপাইনের অর্থনীতিতে প্রবাসী শ্রমিকদের অবদান নিয়ে অধ্যাপক কথা বলবেন। কী করে প্রবাসী শ্রমিকেরা বদলে দিলেন ফিলিপাইনের অর্থনীতির চেহারা, কী করে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো টাকায় জিডিপি বাড়ল, মাথাপিছু আয় বাড়ল, কী করে আশি-নব্বইয়ের দশকজুড়ে সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান আর দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোতে হাজার হাজার ফিলিপিনো নারীর কর্মসংস্থান হলো ইত্যাদি ইত্যাদি।
ফিলিপিনো অধ্যাপক খুবই অবাক করলেন আমাকে। তিনি ফিলিপাইনের বৈদেশিক রিজার্ভের গল্প করলেন না। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির গল্প করলেন না। তিনি অন্য এক ফিলিপাইনের গল্প বললেন। তিনি ফিলিপাইনের ভেঙে পড়া এক সমাজের গল্প বললেন। বললেন তিল তিল করে দেশে অর্থ পাঠানো সেই সব মায়ের গল্প, যাঁরা শিশুসন্তানকে বাড়িতে ফেলে কাঁদতে কাঁদতে প্লেনে উঠেছেন। তিনি বললেন মা-বিহীন এক অন্ধকার সমাজের গল্প। স্কুলের শিশুদের মাদক আর বিষণ্নতার গল্প। বছরে একবার দেশে বেড়াতে আসা মাকে দেখে চিনতে না পারা শিশুদের গল্প। আশি-নব্বইয়ের দশকে ইন্টারনেটের ব্যবহার ছিল না, ফোন ব্যয়বহুল ছিল, ফিলিপাইনের যে মা সিঙ্গাপুরে বাসাবাড়িতে কাজ করেন, সেই মাকে দেখা যায় বছরে মাত্র একবার। মায়ের সঙ্গে সংযোগবিহীন এক সমাজের গল্প বললেন সেই অধ্যাপক।
তাইওয়ানে, সিঙ্গাপুরে, মালয়েশিয়ার বাসাবাড়িতে কাজ করা ফিলিপিনো মায়েরা নিয়মিত দেশে টাকা পাঠিয়েছেন। সেই পাঠানো টাকায় ফিলিপাইনের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে গেলেও গোটা একটা সমাজ তছনছ হয়ে গেছে।
আমার মাথায় হাজারটা প্রশ্নটা এল। একটা দেশের অর্থনীতি কি তার সমাজ থেকে আলাদা? অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে গিয়ে সমাজ কেন ভেঙে যায়? দেশের অর্থনীতির ভালো হলে দেশের মানুষের ভালো হয় না কেন? অর্থনীতির ভালোটা তাহলে কার ভালো?
নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশেরও বিপুলসংখ্যক শ্রমিক গেছেন মধ্যপ্রাচ্যে। মালয়েশিয়ার নির্মাণশ্রমিক, আবুধাবির শপিং মলের পরিচ্ছন্নতা কর্মী, তুরস্কের বিমানবন্দরে টয়লেট ক্লিনার—সবই তো আমার দেশেরই মানুষ। নিজে খেয়ে না খেয়ে তাঁরা দেশে টাকা পাঠিয়েছেন। গত ৩০ বছরে বৈদেশিক রিজার্ভে বিপ্লব ঘটেছে, অর্থনীতির আকার বেড়েছে। বর্তমানে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স আমাদের জিডিপির ৭ শতাংশ।
শ্রীলঙ্কায় ডলারের সংকট চলছে। বিদেশ থেকে জরুরি খাদ্য, ওষুধ আর জ্বালানি কেনার মতো ডলার ফুরিয়ে এসেছে। শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির এই মহাসংকট দেখে এ দেশের অর্থনীতিবিদেরা খুব স্বাভাবিকভাবেই তুলনামূলক আলোচনা করছেন। প্রায় সবাই বলছেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে এমন বিপদের আশঙ্কা কম। আমাদের রেমিট্যান্সের প্রবাহ ভালো, রিজার্ভ সন্তোষজনক। সরকারের পক্ষ থেকেও বারবার আশ্বস্ত করা হয়েছে, আমরা শ্রীলঙ্কা হব না।
চলতি বছরের বাজেট আলোচনায় দেশের সাম্প্রতিক ডলার-সংকটের ব্যাপারটি বারবার সামনে এসেছে। এ বছরের মার্চেও রিজার্ভ ছিল ৫০ বিলিয়ন ডলার। জুন মাসে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৪২ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ, সংকটের আভাস। বাজেট আলোচনার একটা বড় অংশজুড়েই তাই রিজার্ভের আলাপ। রিজার্ভ কমছে কেন? প্রবাসী শ্রমিকদের হঠাৎ কী হলো? তাঁরা কি টাকা পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন, নাকি ঠিক চ্যানেলে টাকা পাঠাচ্ছেন না? সরকারি চ্যানেলে টাকা না পাঠিয়ে হুন্ডিতে পাঠাচ্ছেন? কেন যে তাঁরা এমন অবৈধ কাজ করেন! অর্থনীতিবিদ, মন্ত্রী, মিডিয়া—সবাই হা-হুতাশ করছেন। সরকারের উচিত বেশি বেশি করে সরকারি চ্যানেলে টাকা পাঠাতে উৎসাহ দেওয়া। সরকারের উচিত বেশি বেশি শ্রমিক বিদেশে ‘এক্সপোর্ট’ করা। সরকারের উচিত বেশি বেশি করে মধ্যপ্রাচ্যের বাজার ধরা। অথচ এসব দীর্ঘ আলোচনায় কোথাও কেউ বললেন না, ‘ভাই রে, প্রবাসী শ্রমিকেরা তো ভালো নেই।’
বিশ্বব্যাংক আর আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার বিভিন্ন সময়ের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশের অভিবাসন খরচ অন্য প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বেশি। যেমন কুয়েতে যেতে বাংলাদেশের একজন শ্রমিকের লাগছে ২ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা, যা পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা বা নেপালি শ্রমিকের খরচের তুলনায় অনেক বেশি। এর মধ্যে আবার মোট খরচের ৭৭ শতাংশই লুটে নিচ্ছে দালাল চক্র! এই চক্রের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। টাকা জোগাড় করতে কেউ চড়া সুদে ঋণ করেন, কেউ জমিজমা বিক্রি করেন। এরপর চক্রাকারে বাড়তে থাকে সুদের বোঝা।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা জানাচ্ছে, ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করেও পর্যাপ্ত মজুরি পাচ্ছেন না মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করা অনেক শ্রমিক। তার ওপর খরচ বাঁচাতে ৮-১০ জন মিলে চাপাচাপি করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকাও একটি স্বাভাবিক ঘটনা। অর্থাৎ, অতিরিক্ত শ্রম, অল্প খাবার, ঋণের বোঝা প্রবাসী শ্রমিকের জীবনের নিত্যসঙ্গী। সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনা হলো, প্রতিবছর মধ্যপ্রাচ্য থেকে হাজার হাজার শ্রমিকের লাশ ফিরছে কফিনে। ১৩ বছরে ফেরত এসেছে ৩৩ হাজার শ্রমিকের লাশ!
সরকারি সূত্রই বলছে, বেশির ভাগের মৃত্যুর কারণ হৃদ্রোগ বা স্ট্রোক। অথচ এই শ্রমিকদের বয়স মাত্র ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এটা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়? হাজার হাজার কর্মক্ষম টগবগে তরুণের এই বয়সে স্ট্রোক হবে কেন? আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ বা হিটওয়েভের মধ্যেও দীর্ঘ সময় ধরে দালান নির্মাণের কাজে রোদে থাকা, প্রতি মাসে দেশে টাকা পাঠানোর অমানবিক চাপ এবং সর্বোপরি সুদ বৃদ্ধির দুশ্চিন্তায় দুর্বল শরীরে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এসব তরুণ শ্রমিক।
অথচ অর্থনীতিবিদদের আলোচনায় প্রবাসী শ্রমিকের জীবনমান, কর্মপরিবেশ এবং অতিরিক্ত অভিবাসন খরচ ঠাঁই পায় না। রেমিট্যান্সের আলোচনায় নেই কোনো ‘হিউম্যান ফেইস’। যেন অর্থনীতিবিদ শুধু রিজার্ভের হিসাব করবেন, রেমিট্যান্স জিডিপির কত শতাংশ, সেই হিসাব করবেন অথবা এক মাসের রেমিট্যান্সের টাকা দিয়ে কত মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যায়, সেই হিসাব করবেন। বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকদের বিদেশে যেতে এত বেশি খরচ লাগছে কেন—সেটা তো টাকারই আলাপ। কিন্তু শ্রমিক পরিবারের সেই রক্ত পানি করা টাকার হিসাব অর্থনীতিবিদদের আলাপের বিষয় হয়ে উঠতে পারেনি আজও। বাজেট আলোচনায় প্রায় সবাই পরামর্শ দিয়েছেন, আরও বেশি বেশি শ্রমিক বিদেশে পাঠাতে হবে। কিন্তু কাউকে বলতে শুনিনি, বাংলাদেশের শ্রমিকদের কুয়েতে যেতে ডাবল খরচ লাগছে কেন? যেন ‘ওদের বেশি টাকা লাগলে লাগুক, ওরা ম্যানেজ করুক, আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহ যেন কমে-টমে না যায় আরকি!’
এই যে প্রবাসী শ্রমিকের হাড়ভাঙা রেমিট্যান্সের ওপর একচেটিয়া নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে দেশের অর্থনীতি, এর কি বিকল্প ছিল না? ছিল তো বটেই। বিকল্প ছিল দেশের ভেতরে স্থানীয় শিল্পের বিকাশ এবং দেশের ভেতরে মানসম্মত কর্মসংস্থান তৈরি। এ ছাড়া বিদেশের চাহিদার বদলে দেশের ভেতরে শ্রমিকের আয়রোজগার বৃদ্ধির মাধ্যমে স্থানীয় পণ্যের চাহিদা তৈরি করা যেত। আশির দশকে দক্ষিণ কোরিয়া বা মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পেছনে মূল চালিকাশক্তি ছিল ব্যাপক হারে স্থানীয় শিল্পায়ন ও স্থানীয় কর্মসংস্থান তৈরি। যদিও প্রচার করা হয় যে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পুরোটাই রপ্তানিশিল্পের অবদান। বাস্তবতা হলো, একই সময়ে রপ্তানিশিল্পের পাশাপাশি এসব দেশে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল বহু স্থানীয় শিল্পকারখানা। তাই বৈশ্বিক মন্দা-পরবর্তী সময়ে এশিয়ার রপ্তানিবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও স্থানীয় মানুষের রমরমা চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই নতুন নতুন স্থানীয় শিল্পের বিকাশ ঘটে এবং টেকসই কর্মসংস্থান তৈরি হয়।
আর আমরা কী করেছি? একের পর এক আমাদের রাষ্ট্রীয় শিল্পকারখানাগুলো বন্ধ করেছি। কয়েক লাখ সচল কর্মসংস্থান নষ্ট করেছি। কারখানার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা একেকটি প্রাণবন্ত স্থানীয় অর্থনীতিকেও ধ্বংস করেছি। পাটকল ও চিনিকলের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কয়েক লাখ পাটচাষি ও আখচাষির জীবন-জীবিকা অনিশ্চিত করেছি। দীর্ঘদিনের সচল জীবিকা নষ্ট করা হয়েছে, কিন্তু নতুন কর্মসংস্থান তৈরির কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। গত কয়েক বছরে পোশাকশিল্পে অটোমেশনের কারণে ব্যাপক ছাঁটাই শুরু হয়েছে। ম্যাকেঞ্জি রিপোর্ট বলছে, ভবিষ্যতে গার্মেন্টস খাতের ছাঁটাই আরও ব্যাপক আকার ধারণ করবে। কিন্তু গার্মেন্টস খাতের বিকল্প নিয়ে ভাবার ফুরসত আমাদের হয়ে ওঠেনি।
নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে উদ্যোগ নেই, স্থানীয় শিল্পে আগ্রহ নেই, উল্টো একের পর এক চালু কারখানা বন্ধ। নিজ থেকে তৈরি হওয়া অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক নিয়মিত প্রশাসনিক জুলুমের শিকার। দেশীয় শিল্প অবহেলিত। আমদানি পণ্যের বিকল্প হিসেবে গড়ে উঠতে পারত যে সম্ভাবনাময় দেশীয় খাতগুলো, চীন ও ভারতের পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে সেই খাতগুলোও আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি। সম্ভাবনাময় শিল্প বাঁচাতে রাষ্ট্রের শুল্কনীতি, ভ্যাট বা বাণিজ্যনীতিতেও কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেই। নিজের দেশের শ্রমিকের জীবন নিয়েই যাঁরা ভাবেননি কখনো, তাঁরা প্রবাসী শ্রমিকের জীবন নিয়ে ভাববেন কেন?
১৯৭৩ সালে আমেরিকান লেখক আরসুলা লে গুইন লিখেছিলেন সেই বিখ্যাত ছোট গল্প ‘দ্য ওয়ান্স হু ওয়াক অ্যাওয়ে ফ্রম ওমেলাস’। এক রূপকথার মতো সুন্দর শহর। শহরের নাম ওমেলাস। কোনো কিছুর অভাব নেই সেখানে। সবার ঘরে ঘরে খাবার। বসন্ত এলে উৎসব হয়। শিশুরা সবাই হাসছে-খেলছে, ছেলে-মেয়ে, তরুণ-বৃদ্ধ—সবাই নেচে-গেয়ে আনন্দে জীবন পার করছে। কোথাও কোনো দুঃখ নেই। শুধু একটা ‘সিক্রেট’ আছে ওমেলাসে। কী সেই গোপন কথা? শহরের এক প্রান্তে একটা অন্ধকার বাড়ির নিচে একটা জানালাবিহীন ছোট্ট ঘর। সেই অন্ধকার ঘরে আটক রাখা হয়েছে ছয় বছরের এক ছেলেকে। ছেলেটা আছে সবাই জানে, কিন্তু ছেলেটাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা কেউ বলে না। কারণ, এই ছোট্ট ছেলেটিকে আটকে রাখলেই ওমেলাসের মানুষ সুখে-শান্তিতে থাকবে। অর্থাৎ, এই আটকে রাখা ছেলেটাই ওমেলাসের প্রাণভোমরা। ছেলেটাকে ছেড়ে দিলে ওমেলাসের ঘরে ঘরে দুর্যোগ নেমে আসবে। ওমেলাসের মানুষের আনন্দের দিন শেষ হবে।
ওমেলাসকে নিয়ে রচিত হয়েছে অসংখ্য বিশ্লেষণী লেখা। কেউ বলেছে, ওমেলাস এই যুগের আধুনিক সভ্যতার গল্প। আমাদের ভালো থাকার জন্য কোথাও না কোথাও একটা অন্ধকার কারখানা আছে, কোথাও না কোথাও শ্রমিক মারা যাচ্ছেন।
১৯৩১ সালে রাশিয়ার চিঠিতে রবীন্দ্রনাথও লিখেছেন সেই একই গল্প, ‘…চিরকালই মানুষের সভ্যতায় একদল অখ্যাত লোক থাকে, তাদেরই সংখ্যা বেশি, তারাই বাহন; তাদের মানুষ হওয়ার সময় নেই; দেশের সম্পদের উচ্ছিষ্টে তারা পালিত। সব চেয়ে কম খেয়ে, কম পরে, কম শিখে, বাকি সকলের পরিচর্যা করে; সকলের চেয়ে বেশি তাদের পরিশ্রম, সকলের চেয়ে বেশি তাদের অসম্মান। কথায় কথায় তারা রোগে মরে, উপোসে মরে, উপরওয়ালাদের লাথি-ঝাঁটা খেয়ে মরে—জীবনযাত্রার জন্য যত কিছু সুযোগ-সুবিধে, সবকিছুর থেকেই তারা বঞ্চিত। তারা সভ্যতার পিলসুজ, মাথায় প্রদীপ নিয়ে খাঁড়া দাঁড়িয়ে থাকে—উপরের সবাই আলো পায়, তাদের গা দিয়ে তেল গড়িয়ে পড়ে।’
আমাদের প্রবাসী শ্রমিক সেই সভ্যতার পিলসুজই তো। ওমেলাসের অন্ধকার ঘরে আটকে থাকা সেই ছেলেটা আমাদের ‘ওপেন সিক্রেট’। তাদের কম খেয়ে টাকা পাঠানোর ওপর দাঁড়িয়ে গেছে আমাদের অর্থনীতি। তাদের কফিনগুলো আমাদের আলোচনার বিষয় নয়, বরং আমরা বেশি বেশি করে শ্রমিক বিদেশে পাঠাব আর শ্রমিকদের বকে দেব—হুন্ডি যেন না করেন! কিন্তু ভুলেও জিজ্ঞেস করব না, তাঁরা মারা যাচ্ছেন কেন?
লেখক: উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক গবেষক

প্রায় ১০ বছর আগে ফিলিপাইনের এক অধ্যাপক এসেছিলেন ঢাকায়। ব্র্যাকের আমন্ত্রণে। তাঁর বক্তব্য শুনতে গেলাম (দুর্ভাগ্যবশত অধ্যাপকের নাম মনে নেই)। সেই অধ্যাপক ফিলিপাইনের ‘মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার’ নিয়ে কথা বলেছিলেন।
ফিলিপাইন তখন বিশ্বের অন্যতম বেশি রেমিট্যান্স পাওয়া দেশ। প্রবাসী শ্রমিকেরা ফিলিপাইনের অর্থনীতির ‘মেরুদণ্ড’। আমার ধারণা ছিল, ফিলিপাইনের অর্থনীতিতে প্রবাসী শ্রমিকদের অবদান নিয়ে অধ্যাপক কথা বলবেন। কী করে প্রবাসী শ্রমিকেরা বদলে দিলেন ফিলিপাইনের অর্থনীতির চেহারা, কী করে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো টাকায় জিডিপি বাড়ল, মাথাপিছু আয় বাড়ল, কী করে আশি-নব্বইয়ের দশকজুড়ে সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান আর দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোতে হাজার হাজার ফিলিপিনো নারীর কর্মসংস্থান হলো ইত্যাদি ইত্যাদি।
ফিলিপিনো অধ্যাপক খুবই অবাক করলেন আমাকে। তিনি ফিলিপাইনের বৈদেশিক রিজার্ভের গল্প করলেন না। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির গল্প করলেন না। তিনি অন্য এক ফিলিপাইনের গল্প বললেন। তিনি ফিলিপাইনের ভেঙে পড়া এক সমাজের গল্প বললেন। বললেন তিল তিল করে দেশে অর্থ পাঠানো সেই সব মায়ের গল্প, যাঁরা শিশুসন্তানকে বাড়িতে ফেলে কাঁদতে কাঁদতে প্লেনে উঠেছেন। তিনি বললেন মা-বিহীন এক অন্ধকার সমাজের গল্প। স্কুলের শিশুদের মাদক আর বিষণ্নতার গল্প। বছরে একবার দেশে বেড়াতে আসা মাকে দেখে চিনতে না পারা শিশুদের গল্প। আশি-নব্বইয়ের দশকে ইন্টারনেটের ব্যবহার ছিল না, ফোন ব্যয়বহুল ছিল, ফিলিপাইনের যে মা সিঙ্গাপুরে বাসাবাড়িতে কাজ করেন, সেই মাকে দেখা যায় বছরে মাত্র একবার। মায়ের সঙ্গে সংযোগবিহীন এক সমাজের গল্প বললেন সেই অধ্যাপক।
তাইওয়ানে, সিঙ্গাপুরে, মালয়েশিয়ার বাসাবাড়িতে কাজ করা ফিলিপিনো মায়েরা নিয়মিত দেশে টাকা পাঠিয়েছেন। সেই পাঠানো টাকায় ফিলিপাইনের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে গেলেও গোটা একটা সমাজ তছনছ হয়ে গেছে।
আমার মাথায় হাজারটা প্রশ্নটা এল। একটা দেশের অর্থনীতি কি তার সমাজ থেকে আলাদা? অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে গিয়ে সমাজ কেন ভেঙে যায়? দেশের অর্থনীতির ভালো হলে দেশের মানুষের ভালো হয় না কেন? অর্থনীতির ভালোটা তাহলে কার ভালো?
নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশেরও বিপুলসংখ্যক শ্রমিক গেছেন মধ্যপ্রাচ্যে। মালয়েশিয়ার নির্মাণশ্রমিক, আবুধাবির শপিং মলের পরিচ্ছন্নতা কর্মী, তুরস্কের বিমানবন্দরে টয়লেট ক্লিনার—সবই তো আমার দেশেরই মানুষ। নিজে খেয়ে না খেয়ে তাঁরা দেশে টাকা পাঠিয়েছেন। গত ৩০ বছরে বৈদেশিক রিজার্ভে বিপ্লব ঘটেছে, অর্থনীতির আকার বেড়েছে। বর্তমানে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স আমাদের জিডিপির ৭ শতাংশ।
শ্রীলঙ্কায় ডলারের সংকট চলছে। বিদেশ থেকে জরুরি খাদ্য, ওষুধ আর জ্বালানি কেনার মতো ডলার ফুরিয়ে এসেছে। শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির এই মহাসংকট দেখে এ দেশের অর্থনীতিবিদেরা খুব স্বাভাবিকভাবেই তুলনামূলক আলোচনা করছেন। প্রায় সবাই বলছেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে এমন বিপদের আশঙ্কা কম। আমাদের রেমিট্যান্সের প্রবাহ ভালো, রিজার্ভ সন্তোষজনক। সরকারের পক্ষ থেকেও বারবার আশ্বস্ত করা হয়েছে, আমরা শ্রীলঙ্কা হব না।
চলতি বছরের বাজেট আলোচনায় দেশের সাম্প্রতিক ডলার-সংকটের ব্যাপারটি বারবার সামনে এসেছে। এ বছরের মার্চেও রিজার্ভ ছিল ৫০ বিলিয়ন ডলার। জুন মাসে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৪২ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ, সংকটের আভাস। বাজেট আলোচনার একটা বড় অংশজুড়েই তাই রিজার্ভের আলাপ। রিজার্ভ কমছে কেন? প্রবাসী শ্রমিকদের হঠাৎ কী হলো? তাঁরা কি টাকা পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন, নাকি ঠিক চ্যানেলে টাকা পাঠাচ্ছেন না? সরকারি চ্যানেলে টাকা না পাঠিয়ে হুন্ডিতে পাঠাচ্ছেন? কেন যে তাঁরা এমন অবৈধ কাজ করেন! অর্থনীতিবিদ, মন্ত্রী, মিডিয়া—সবাই হা-হুতাশ করছেন। সরকারের উচিত বেশি বেশি করে সরকারি চ্যানেলে টাকা পাঠাতে উৎসাহ দেওয়া। সরকারের উচিত বেশি বেশি শ্রমিক বিদেশে ‘এক্সপোর্ট’ করা। সরকারের উচিত বেশি বেশি করে মধ্যপ্রাচ্যের বাজার ধরা। অথচ এসব দীর্ঘ আলোচনায় কোথাও কেউ বললেন না, ‘ভাই রে, প্রবাসী শ্রমিকেরা তো ভালো নেই।’
বিশ্বব্যাংক আর আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার বিভিন্ন সময়ের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশের অভিবাসন খরচ অন্য প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বেশি। যেমন কুয়েতে যেতে বাংলাদেশের একজন শ্রমিকের লাগছে ২ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা, যা পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা বা নেপালি শ্রমিকের খরচের তুলনায় অনেক বেশি। এর মধ্যে আবার মোট খরচের ৭৭ শতাংশই লুটে নিচ্ছে দালাল চক্র! এই চক্রের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। টাকা জোগাড় করতে কেউ চড়া সুদে ঋণ করেন, কেউ জমিজমা বিক্রি করেন। এরপর চক্রাকারে বাড়তে থাকে সুদের বোঝা।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা জানাচ্ছে, ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করেও পর্যাপ্ত মজুরি পাচ্ছেন না মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করা অনেক শ্রমিক। তার ওপর খরচ বাঁচাতে ৮-১০ জন মিলে চাপাচাপি করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকাও একটি স্বাভাবিক ঘটনা। অর্থাৎ, অতিরিক্ত শ্রম, অল্প খাবার, ঋণের বোঝা প্রবাসী শ্রমিকের জীবনের নিত্যসঙ্গী। সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনা হলো, প্রতিবছর মধ্যপ্রাচ্য থেকে হাজার হাজার শ্রমিকের লাশ ফিরছে কফিনে। ১৩ বছরে ফেরত এসেছে ৩৩ হাজার শ্রমিকের লাশ!
সরকারি সূত্রই বলছে, বেশির ভাগের মৃত্যুর কারণ হৃদ্রোগ বা স্ট্রোক। অথচ এই শ্রমিকদের বয়স মাত্র ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এটা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়? হাজার হাজার কর্মক্ষম টগবগে তরুণের এই বয়সে স্ট্রোক হবে কেন? আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ বা হিটওয়েভের মধ্যেও দীর্ঘ সময় ধরে দালান নির্মাণের কাজে রোদে থাকা, প্রতি মাসে দেশে টাকা পাঠানোর অমানবিক চাপ এবং সর্বোপরি সুদ বৃদ্ধির দুশ্চিন্তায় দুর্বল শরীরে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এসব তরুণ শ্রমিক।
অথচ অর্থনীতিবিদদের আলোচনায় প্রবাসী শ্রমিকের জীবনমান, কর্মপরিবেশ এবং অতিরিক্ত অভিবাসন খরচ ঠাঁই পায় না। রেমিট্যান্সের আলোচনায় নেই কোনো ‘হিউম্যান ফেইস’। যেন অর্থনীতিবিদ শুধু রিজার্ভের হিসাব করবেন, রেমিট্যান্স জিডিপির কত শতাংশ, সেই হিসাব করবেন অথবা এক মাসের রেমিট্যান্সের টাকা দিয়ে কত মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যায়, সেই হিসাব করবেন। বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকদের বিদেশে যেতে এত বেশি খরচ লাগছে কেন—সেটা তো টাকারই আলাপ। কিন্তু শ্রমিক পরিবারের সেই রক্ত পানি করা টাকার হিসাব অর্থনীতিবিদদের আলাপের বিষয় হয়ে উঠতে পারেনি আজও। বাজেট আলোচনায় প্রায় সবাই পরামর্শ দিয়েছেন, আরও বেশি বেশি শ্রমিক বিদেশে পাঠাতে হবে। কিন্তু কাউকে বলতে শুনিনি, বাংলাদেশের শ্রমিকদের কুয়েতে যেতে ডাবল খরচ লাগছে কেন? যেন ‘ওদের বেশি টাকা লাগলে লাগুক, ওরা ম্যানেজ করুক, আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহ যেন কমে-টমে না যায় আরকি!’
এই যে প্রবাসী শ্রমিকের হাড়ভাঙা রেমিট্যান্সের ওপর একচেটিয়া নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে দেশের অর্থনীতি, এর কি বিকল্প ছিল না? ছিল তো বটেই। বিকল্প ছিল দেশের ভেতরে স্থানীয় শিল্পের বিকাশ এবং দেশের ভেতরে মানসম্মত কর্মসংস্থান তৈরি। এ ছাড়া বিদেশের চাহিদার বদলে দেশের ভেতরে শ্রমিকের আয়রোজগার বৃদ্ধির মাধ্যমে স্থানীয় পণ্যের চাহিদা তৈরি করা যেত। আশির দশকে দক্ষিণ কোরিয়া বা মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পেছনে মূল চালিকাশক্তি ছিল ব্যাপক হারে স্থানীয় শিল্পায়ন ও স্থানীয় কর্মসংস্থান তৈরি। যদিও প্রচার করা হয় যে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পুরোটাই রপ্তানিশিল্পের অবদান। বাস্তবতা হলো, একই সময়ে রপ্তানিশিল্পের পাশাপাশি এসব দেশে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল বহু স্থানীয় শিল্পকারখানা। তাই বৈশ্বিক মন্দা-পরবর্তী সময়ে এশিয়ার রপ্তানিবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও স্থানীয় মানুষের রমরমা চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই নতুন নতুন স্থানীয় শিল্পের বিকাশ ঘটে এবং টেকসই কর্মসংস্থান তৈরি হয়।
আর আমরা কী করেছি? একের পর এক আমাদের রাষ্ট্রীয় শিল্পকারখানাগুলো বন্ধ করেছি। কয়েক লাখ সচল কর্মসংস্থান নষ্ট করেছি। কারখানার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা একেকটি প্রাণবন্ত স্থানীয় অর্থনীতিকেও ধ্বংস করেছি। পাটকল ও চিনিকলের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কয়েক লাখ পাটচাষি ও আখচাষির জীবন-জীবিকা অনিশ্চিত করেছি। দীর্ঘদিনের সচল জীবিকা নষ্ট করা হয়েছে, কিন্তু নতুন কর্মসংস্থান তৈরির কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। গত কয়েক বছরে পোশাকশিল্পে অটোমেশনের কারণে ব্যাপক ছাঁটাই শুরু হয়েছে। ম্যাকেঞ্জি রিপোর্ট বলছে, ভবিষ্যতে গার্মেন্টস খাতের ছাঁটাই আরও ব্যাপক আকার ধারণ করবে। কিন্তু গার্মেন্টস খাতের বিকল্প নিয়ে ভাবার ফুরসত আমাদের হয়ে ওঠেনি।
নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে উদ্যোগ নেই, স্থানীয় শিল্পে আগ্রহ নেই, উল্টো একের পর এক চালু কারখানা বন্ধ। নিজ থেকে তৈরি হওয়া অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক নিয়মিত প্রশাসনিক জুলুমের শিকার। দেশীয় শিল্প অবহেলিত। আমদানি পণ্যের বিকল্প হিসেবে গড়ে উঠতে পারত যে সম্ভাবনাময় দেশীয় খাতগুলো, চীন ও ভারতের পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে সেই খাতগুলোও আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি। সম্ভাবনাময় শিল্প বাঁচাতে রাষ্ট্রের শুল্কনীতি, ভ্যাট বা বাণিজ্যনীতিতেও কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেই। নিজের দেশের শ্রমিকের জীবন নিয়েই যাঁরা ভাবেননি কখনো, তাঁরা প্রবাসী শ্রমিকের জীবন নিয়ে ভাববেন কেন?
১৯৭৩ সালে আমেরিকান লেখক আরসুলা লে গুইন লিখেছিলেন সেই বিখ্যাত ছোট গল্প ‘দ্য ওয়ান্স হু ওয়াক অ্যাওয়ে ফ্রম ওমেলাস’। এক রূপকথার মতো সুন্দর শহর। শহরের নাম ওমেলাস। কোনো কিছুর অভাব নেই সেখানে। সবার ঘরে ঘরে খাবার। বসন্ত এলে উৎসব হয়। শিশুরা সবাই হাসছে-খেলছে, ছেলে-মেয়ে, তরুণ-বৃদ্ধ—সবাই নেচে-গেয়ে আনন্দে জীবন পার করছে। কোথাও কোনো দুঃখ নেই। শুধু একটা ‘সিক্রেট’ আছে ওমেলাসে। কী সেই গোপন কথা? শহরের এক প্রান্তে একটা অন্ধকার বাড়ির নিচে একটা জানালাবিহীন ছোট্ট ঘর। সেই অন্ধকার ঘরে আটক রাখা হয়েছে ছয় বছরের এক ছেলেকে। ছেলেটা আছে সবাই জানে, কিন্তু ছেলেটাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা কেউ বলে না। কারণ, এই ছোট্ট ছেলেটিকে আটকে রাখলেই ওমেলাসের মানুষ সুখে-শান্তিতে থাকবে। অর্থাৎ, এই আটকে রাখা ছেলেটাই ওমেলাসের প্রাণভোমরা। ছেলেটাকে ছেড়ে দিলে ওমেলাসের ঘরে ঘরে দুর্যোগ নেমে আসবে। ওমেলাসের মানুষের আনন্দের দিন শেষ হবে।
ওমেলাসকে নিয়ে রচিত হয়েছে অসংখ্য বিশ্লেষণী লেখা। কেউ বলেছে, ওমেলাস এই যুগের আধুনিক সভ্যতার গল্প। আমাদের ভালো থাকার জন্য কোথাও না কোথাও একটা অন্ধকার কারখানা আছে, কোথাও না কোথাও শ্রমিক মারা যাচ্ছেন।
১৯৩১ সালে রাশিয়ার চিঠিতে রবীন্দ্রনাথও লিখেছেন সেই একই গল্প, ‘…চিরকালই মানুষের সভ্যতায় একদল অখ্যাত লোক থাকে, তাদেরই সংখ্যা বেশি, তারাই বাহন; তাদের মানুষ হওয়ার সময় নেই; দেশের সম্পদের উচ্ছিষ্টে তারা পালিত। সব চেয়ে কম খেয়ে, কম পরে, কম শিখে, বাকি সকলের পরিচর্যা করে; সকলের চেয়ে বেশি তাদের পরিশ্রম, সকলের চেয়ে বেশি তাদের অসম্মান। কথায় কথায় তারা রোগে মরে, উপোসে মরে, উপরওয়ালাদের লাথি-ঝাঁটা খেয়ে মরে—জীবনযাত্রার জন্য যত কিছু সুযোগ-সুবিধে, সবকিছুর থেকেই তারা বঞ্চিত। তারা সভ্যতার পিলসুজ, মাথায় প্রদীপ নিয়ে খাঁড়া দাঁড়িয়ে থাকে—উপরের সবাই আলো পায়, তাদের গা দিয়ে তেল গড়িয়ে পড়ে।’
আমাদের প্রবাসী শ্রমিক সেই সভ্যতার পিলসুজই তো। ওমেলাসের অন্ধকার ঘরে আটকে থাকা সেই ছেলেটা আমাদের ‘ওপেন সিক্রেট’। তাদের কম খেয়ে টাকা পাঠানোর ওপর দাঁড়িয়ে গেছে আমাদের অর্থনীতি। তাদের কফিনগুলো আমাদের আলোচনার বিষয় নয়, বরং আমরা বেশি বেশি করে শ্রমিক বিদেশে পাঠাব আর শ্রমিকদের বকে দেব—হুন্ডি যেন না করেন! কিন্তু ভুলেও জিজ্ঞেস করব না, তাঁরা মারা যাচ্ছেন কেন?
লেখক: উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক গবেষক

উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।
নাদিম নেওয়াজ

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

প্রায় ১০ বছর আগে ফিলিপাইনের এক অধ্যাপক এসেছিলেন ঢাকায়। ব্র্যাকের আমন্ত্রণে। তাঁর বক্তব্য শুনতে গেলাম (দুর্ভাগ্যবশত অধ্যাপকের নাম মনে নেই)। সেই অধ্যাপক ফিলিপাইনের ‘মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার’ নিয়ে কথা বলেছিলেন...
৩০ জুন ২০২২
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।
আসাদুজ্জামান নূর

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

প্রায় ১০ বছর আগে ফিলিপাইনের এক অধ্যাপক এসেছিলেন ঢাকায়। ব্র্যাকের আমন্ত্রণে। তাঁর বক্তব্য শুনতে গেলাম (দুর্ভাগ্যবশত অধ্যাপকের নাম মনে নেই)। সেই অধ্যাপক ফিলিপাইনের ‘মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার’ নিয়ে কথা বলেছিলেন...
৩০ জুন ২০২২
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম।
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

প্রায় ১০ বছর আগে ফিলিপাইনের এক অধ্যাপক এসেছিলেন ঢাকায়। ব্র্যাকের আমন্ত্রণে। তাঁর বক্তব্য শুনতে গেলাম (দুর্ভাগ্যবশত অধ্যাপকের নাম মনে নেই)। সেই অধ্যাপক ফিলিপাইনের ‘মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার’ নিয়ে কথা বলেছিলেন...
৩০ জুন ২০২২
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

প্রায় ১০ বছর আগে ফিলিপাইনের এক অধ্যাপক এসেছিলেন ঢাকায়। ব্র্যাকের আমন্ত্রণে। তাঁর বক্তব্য শুনতে গেলাম (দুর্ভাগ্যবশত অধ্যাপকের নাম মনে নেই)। সেই অধ্যাপক ফিলিপাইনের ‘মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার’ নিয়ে কথা বলেছিলেন...
৩০ জুন ২০২২
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫