সেলিম জাহান

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় দিন। এদিন ষড়যন্ত্রকারীরা সপরিবারে হত্যা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এ নৃশংসতার কোনো তুলনা নেই। মনে আছে, এ ঘটনার তিন দশক পর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে তৎকালীন মহাসচিব কফি আনান আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তোমরা কী করে এ জঘন্যতম কাজটি করতে পারলে?’ লজ্জায় আমি তাঁর মুখের দিকে তাকাতে পারিনি, উত্তর দেওয়া তো দূরের কথা।
আমার সব সময় মনে হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তো শুধু জাতির পিতাকেই হত্যা করা হয়নি, তাঁর চিন্তা-চেতনা আর মূল্যবোধ, যার ভিত্তিতে বাংলাদেশের জন্ম সেগুলোকেও হত্যা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ষড়যন্ত্র শুরু হয় বাঙালি জাতিকে পথভ্রান্ত করার, পরবর্তী প্রজন্মকে বেপথু করার। ১৯৭৫–এর ১৫ আগস্টের ঘটনা ‘একদল পথভ্রষ্ট সৈনিকের’ হঠকারী কোনো কাজ ছিল না, এটা ছিল একটি শান্তমাথার দীর্ঘদিনের ষড়যন্ত্রের ফল। সে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল বাংলাদেশের বিরোধী শক্তি, তাদের স্থানীয় দোসর এবং বিদেশি সহযোগীরা।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মাত্র চার বছর আগে তাঁর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে ৯ মাসের একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা ছিনিয়ে এনেছিলাম বিজয়ের লাল সূর্য। আমাদের স্বাধীনতা শুধু একটি ভূখণ্ডের নয়, নয় একটি মানবগোষ্ঠীর; সে বিজয় একটি চেতনার, একটি সংগ্রামের, একটি মূল্যবোধের।
১৯৭১-এর ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ শেষ করেছিলেন এই বলে যে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। আমাদের মু্ক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশের সংগ্রামের মূলমন্ত্রটি ওই ডাকের মধ্যেই নিহিত। বঙ্গবন্ধু ‘স্বাধীনতা’ ও ‘মুক্তি’ শব্দ দুটোকে সুচিন্তিতভাবে আলাদা করে উচ্চারণ করেছিলেন। কারণ, বাঙালির সংগ্রামকে তিনি দুটো প্রেক্ষিত থেকে দেখেছিলেন। একটি দেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতাই একটি সংগ্রামের শেষ কথা নয়, তার জনগণের সার্বিক মু্ক্তিই হচ্ছে সেই সংগ্রামের চূড়ান্ত লক্ষ্য। রাজনৈতিক স্বাধীনতা সার্বিক মুক্তির আবশ্যিক শর্ত, কিন্তু পর্যাপ্ত শর্ত নয়।
দ্বিতীয়ত, শোষণের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু ছিলেন আপসহীন। সারাটি জীবন তিনি শোষণের বিরুদ্ধে বলেছেন, বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, রুখে দাঁড়িয়েছেন শোষকদের বিরুদ্ধে। শোষণকে তিনি দেখেছেন বঞ্চনার একটি শক্তিশালী খুঁটি হিসেবে, সাম্যের পরিপন্থী হিসেবে এবং মানবাধিকারের সঙ্গে সংগতিহীন হিসেবে। সেই প্রেক্ষিত থেকেই তিনি বলেছেন, ‘বিশ্ব আজ দুটো শিবিরে বিভক্ত– শোষক ও শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’
তৃতীয়ত, সামাজিক ন্যায্যতাকে তিনি একটি শোষণমুক্ত সমাজের অপরিহার্য প্রাকশর্ত হিসেবে দেখেছেন। তিনি গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের কথা বলেছেন, কিন্তু দুটোকেই দেখেছেন সামাজিক ন্যায্যতার এক একটি স্তম্ভ হিসেবে। তাই সত্তর দশকের প্রথম দিকে নানা মনে ‘গণতন্ত্র’ ও ‘সমাজতন্ত্র’ বিষয়ে নানা রকমের ধোঁয়াটে ভাব থাকলেও, এ বিষয় দুটিতে বঙ্গবন্ধুর ধারণা ছিল শার্সির মতো স্বচ্ছ। ‘গণতন্ত্রকে’ তিনি শুদ্ধ একটি বিষয় হিসেবে ভাবেননি, ভেবেছেন, ‘সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র’ হিসেবে; আবার ‘সমাজতন্ত্রকেও’ একটি যান্ত্রিক মাত্রায় দেখেননি, দেখেছেন ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র’ হিসেবে। এবং এ দুটোকেই সম্পৃক্ত করেছেন সামাজিক ন্যায্যতার সঙ্গে।
চতুর্থত, বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনায় ‘জাতীয়তাবাদ’ এবং ‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ একটা বিশেষ স্থান ছিল। বাঙালি জাতীয়তাবাদকে তিনি ‘চরম জাতীয়তাবাদ’ হিসেবে দেখেননি, দেখেছেন বাঙালি জাতির আত্মসত্ত্বার নির্ণায়ক হিসেবে। তেমনিভাবে বারবার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন এই বলে যে, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়’। রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ও সমাজজীবনে তিনি ধর্ম এবং জাতীয়তাবাদকে এমন জায়গায় রেখেছেন, যেখানে বাঙালি জাতির আত্মসত্ত্বা-অস্তিত্বে কোনো দ্বন্দ্ব না থাকে, আর ধর্ম বিষয়ে কোনো সংশয় না থাকে। পরবর্তী সময়ের সব দ্বন্দ্ব ও সংশয়ের স্রষ্টা আমরাই, বহু মীমাংসিত বিষয়কে আবার ঘোলাটে করে দিয়ে।
পঞ্চমত, মনেপ্রাণে বাঙালি হয়েও বঙ্গবন্ধুর ছিল একটি বিস্তৃত বৈশ্বিক মানসিকতা। এ ব্যাপারে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী ছিল অনেকটা রবীন্দ্রনাথের মতো। তাই তিনি শুধু বাঙালির নেতা ছিলেন না, ছিলেন বিশ্বনেতা। বৈশ্বিক অঙ্গনে তিনি যূথবদ্ধতার পক্ষে ছিলেন, কিন্তু স্বার্থ জোটবদ্ধতার পক্ষে নয়। তাই তাঁকে দেখা গেছে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের নেতা হিসেবে টিটো, কাস্ত্রোর সঙ্গে একই কাতারে। বিশ্ব শান্তির সপক্ষে তাঁর জোরালো বাণী, বিশ্ব শান্তি কাউন্সিলের প্রতি তাঁর সমর্থন ও মানবতাবাদী বিশ্ব ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে তাঁর আলাপ-আলোচনা তাঁকে এক বিশ্ববরেণ্য নেতায় পরিণত করেছিল। তাই তিনি শুধু ‘বঙ্গবন্ধুই’ নন, ‘বিশ্ববন্ধুও’ বটে।
এ চালচিত্র মাথায় রেখে বঙ্গবন্ধু চারটি বিষয়কে জাতীয় নীতি হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। জাতীয়তাবাদ আমাদের বাঙালি আত্মসত্ত্বার জন্য আবশ্যিক শর্ত। আত্মসত্ত্বার বোধ একটি জাতির স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য দরকার। গণতন্ত্র ভিন্ন স্বাধীনতা বা মুক্তিকে একটি বজায়ক্ষম ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা মানবিকতা, সামাজিক ন্যায্যতা, ও সর্বপ্রকার সমতার জন্য অত্যাবশ্যকীয়।
এই আদর্শিক মূল্যবোধগুলোর ওপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশের জন্ম ও পথচলার শুরু। কিন্তু আমরা দেখেছি, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর নিকটজনকে নৃশংসভাবে হত্যার পর রাষ্ট্রযন্ত্র এসব মূল্যবোধকে অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে জলাঞ্জলি দিয়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে, ইতিহাসের বহু নিষ্পত্তিকৃত সত্যকে খুঁচিয়ে অনাবশ্যক বিতর্কের সৃষ্টি করা হয়েছে, আমাদের নতুন প্রজন্মকে বেপথু করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।
১৯৭৫–এর পর বাঙালি জাতি এবং বাংলাদেশের মৌলিক চিন্তা-চেতনা ও মূল্যবোধকে নস্যাৎ করার জন্য তখনকার রাষ্ট্রযন্ত্র বিবিধ প্রক্রিয়া শুরু করে, যার নানান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক মাত্রিকতা ছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরপরই রাষ্ট্রীয় অপশক্তি তাদের অপকর্মের শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে।
বলা প্রয়োজন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরপরই তাঁর সহযোগী কিছু আওয়ামী লীগ নেতা এসব অপশক্তির সঙ্গে হাত মেলান এবং নতুন সরকারে যোগদান করেন। ফলে তাঁদের কর্মকাণ্ডের দ্বারা তাঁরা একটি অবৈধ প্রক্রিয়াকে স্বীকৃতি দান করেন এবং একে একটি বৈধতা দান করেন। এ ঘৃ্ণ্য কাজের ধিক্কার জানানোর ভাষা কোথায়?
১৯৭৫ সালের পরবর্তী সময়ে ইতিহাসের ধারা পালটে দেওয়ার পাঁচটি চিহ্নিত কাজ করা হয়। প্রথমত, সংবিধানকে ওলটপালট করে তা থেকে মৌলিক চার নীতির বিচ্যুতি ঘটানো যেমন, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্দ্রকে বাদ দেওয়া। ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং বাংলাদেশকে ইসলামি প্রজাতন্ত্রে পরিণত করার অপপ্রয়াস চালানো হয়।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের বিরোধী মৌলবাদী শক্তিগুলোর পুনর্বাসন এবং ১৯৭১–এর গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশের যারা বিরোধিতা করে, যারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল, তারাই বাংলাদেশের মন্ত্রী হয়ে গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা টাঙিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখাতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের নানান উচ্চপদে প্রতিষ্ঠিত করে বিদেশে নিরাপদে প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
তৃতীয়ত, পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাসকে বিকৃত করে তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করে বেপথু করার অপপ্রয়াস চালানো হয়। পাঠ্যসূচিকে ইসলামীকরণের জন্য অন্য ধর্মের কবি-লেখকদের লেখা বাদ দেওয়া হয়। বহু নিষ্পত্তিকৃত সত্যকে খুঁচিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হয় যেমন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা কে ঘোষণা করেন, আমরা বাঙালি না বাংলাদেশি।
চতুর্থত, দেশের মধ্যে উদারপন্থী চিন্তা-চেতনাকে নস্যাৎ করা এবং সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সব রকমের সংখ্যালঘু জোটের নিপীড়ন সংহত করা হলো। রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের নাম করে আমাদের মূল্যবোধের ধর্মনিরপেক্ষকে নষ্ট করা হলো এবং সমাজের অসাম্প্রদায়িক কাঠামোকে আঘাত করা হলো।
পঞ্চমত, জোটনিরপেক্ষ চরিত্র ত্যাগ করে মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামী জেটের সঙ্গে সম্পৃক্ততা। এর একটি উদ্দেশ্য ছিল সম্পদশালী মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে অর্থপ্রাপ্তি, অন্যদিকে এসব দেশের সঙ্গে একটি আদর্শগত সংযোগ স্থাপন।
এসব কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে তিনটি প্রবণতা লক্ষণীয়: এক, একসময়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পীঠস্থান থেকে বলা হয়েছিল, ‘অর্থ কোনো সমস্যা নয়’। দৃশ্যমানতা। জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতা নষ্ট করার এর চেয়ে আর ভালো উপকরণ হয় না। দুই, ‘আমি রাজনীতিকে রাজনীতিকদের জন্য কঠিন করে তুলব’। একটি সুস্থ রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করতে এর চেয়ে মোক্ষম অস্ত্র নেই। তিন, দলবদলের রাজনীতিতে উৎসাহিত করা হয়েছিল। এসবেরই সমন্বিত ফলাফল হচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সমাজনীতিতে সুস্থ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে স্থায়ীভাবে পঙ্গু করে দেওয়া।
এসব কিছুর কারণে পরবর্তী সময়ে তিনটে ধারার সৃষ্টি হয়েছে স্বদেশে। এক, যারা ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও আদর্শিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করেনি এবং এর বিরোধিতা করেছে, তাদের অবস্থান আরও সংহত হয়েছে। দুই, আমরা যারা একাত্তরের প্রজন্ম, তাদের একটি অংশ যেমন বাংলাদেশ নামটি, তার মুক্তিযুদ্ধ, তার আদর্শিক মূল্যবোধ দ্বারা সর্বদা সার্বক্ষণিকভাবে উদ্বেলিত হয়েছি, তেমনি আমাদের প্রজন্মের আরেকটি অংশ তো সবকিছু শুধু বিস্মৃতই হই নি, বেপথুও তো হয়েছি। তিন, জাতির নতুন প্রজন্মের কাছে আমদের মু্ক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাস, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের আদর্শিক মূল্যবোধ হয় সম্পূর্ণ অজ্ঞাত রয়ে গেছে, নয় বিকৃত হয়ে উপস্হাপিত হয়েছে।
২০২১ সাল বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। আমরা একটি ক্রান্তিকালের মাঝখান দিয়ে চলেছি। ১৯৭১ সালের মতো আজও একটি সংগ্রাম আমাদের করতে হবে, সে লড়াই বাংলাদেশের মূল্যবোধকে সংহত করার, সে যুদ্ধ বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চিন্তা-চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করার। চূড়ান্ত বিচারে, এ লড়াই আমাদের বাঁচার লড়াই¬– এ লড়াই জিততে হবে।

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় দিন। এদিন ষড়যন্ত্রকারীরা সপরিবারে হত্যা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এ নৃশংসতার কোনো তুলনা নেই। মনে আছে, এ ঘটনার তিন দশক পর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে তৎকালীন মহাসচিব কফি আনান আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তোমরা কী করে এ জঘন্যতম কাজটি করতে পারলে?’ লজ্জায় আমি তাঁর মুখের দিকে তাকাতে পারিনি, উত্তর দেওয়া তো দূরের কথা।
আমার সব সময় মনে হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তো শুধু জাতির পিতাকেই হত্যা করা হয়নি, তাঁর চিন্তা-চেতনা আর মূল্যবোধ, যার ভিত্তিতে বাংলাদেশের জন্ম সেগুলোকেও হত্যা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ষড়যন্ত্র শুরু হয় বাঙালি জাতিকে পথভ্রান্ত করার, পরবর্তী প্রজন্মকে বেপথু করার। ১৯৭৫–এর ১৫ আগস্টের ঘটনা ‘একদল পথভ্রষ্ট সৈনিকের’ হঠকারী কোনো কাজ ছিল না, এটা ছিল একটি শান্তমাথার দীর্ঘদিনের ষড়যন্ত্রের ফল। সে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল বাংলাদেশের বিরোধী শক্তি, তাদের স্থানীয় দোসর এবং বিদেশি সহযোগীরা।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মাত্র চার বছর আগে তাঁর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে ৯ মাসের একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা ছিনিয়ে এনেছিলাম বিজয়ের লাল সূর্য। আমাদের স্বাধীনতা শুধু একটি ভূখণ্ডের নয়, নয় একটি মানবগোষ্ঠীর; সে বিজয় একটি চেতনার, একটি সংগ্রামের, একটি মূল্যবোধের।
১৯৭১-এর ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ শেষ করেছিলেন এই বলে যে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। আমাদের মু্ক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশের সংগ্রামের মূলমন্ত্রটি ওই ডাকের মধ্যেই নিহিত। বঙ্গবন্ধু ‘স্বাধীনতা’ ও ‘মুক্তি’ শব্দ দুটোকে সুচিন্তিতভাবে আলাদা করে উচ্চারণ করেছিলেন। কারণ, বাঙালির সংগ্রামকে তিনি দুটো প্রেক্ষিত থেকে দেখেছিলেন। একটি দেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতাই একটি সংগ্রামের শেষ কথা নয়, তার জনগণের সার্বিক মু্ক্তিই হচ্ছে সেই সংগ্রামের চূড়ান্ত লক্ষ্য। রাজনৈতিক স্বাধীনতা সার্বিক মুক্তির আবশ্যিক শর্ত, কিন্তু পর্যাপ্ত শর্ত নয়।
দ্বিতীয়ত, শোষণের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু ছিলেন আপসহীন। সারাটি জীবন তিনি শোষণের বিরুদ্ধে বলেছেন, বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, রুখে দাঁড়িয়েছেন শোষকদের বিরুদ্ধে। শোষণকে তিনি দেখেছেন বঞ্চনার একটি শক্তিশালী খুঁটি হিসেবে, সাম্যের পরিপন্থী হিসেবে এবং মানবাধিকারের সঙ্গে সংগতিহীন হিসেবে। সেই প্রেক্ষিত থেকেই তিনি বলেছেন, ‘বিশ্ব আজ দুটো শিবিরে বিভক্ত– শোষক ও শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’
তৃতীয়ত, সামাজিক ন্যায্যতাকে তিনি একটি শোষণমুক্ত সমাজের অপরিহার্য প্রাকশর্ত হিসেবে দেখেছেন। তিনি গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের কথা বলেছেন, কিন্তু দুটোকেই দেখেছেন সামাজিক ন্যায্যতার এক একটি স্তম্ভ হিসেবে। তাই সত্তর দশকের প্রথম দিকে নানা মনে ‘গণতন্ত্র’ ও ‘সমাজতন্ত্র’ বিষয়ে নানা রকমের ধোঁয়াটে ভাব থাকলেও, এ বিষয় দুটিতে বঙ্গবন্ধুর ধারণা ছিল শার্সির মতো স্বচ্ছ। ‘গণতন্ত্রকে’ তিনি শুদ্ধ একটি বিষয় হিসেবে ভাবেননি, ভেবেছেন, ‘সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র’ হিসেবে; আবার ‘সমাজতন্ত্রকেও’ একটি যান্ত্রিক মাত্রায় দেখেননি, দেখেছেন ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র’ হিসেবে। এবং এ দুটোকেই সম্পৃক্ত করেছেন সামাজিক ন্যায্যতার সঙ্গে।
চতুর্থত, বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনায় ‘জাতীয়তাবাদ’ এবং ‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ একটা বিশেষ স্থান ছিল। বাঙালি জাতীয়তাবাদকে তিনি ‘চরম জাতীয়তাবাদ’ হিসেবে দেখেননি, দেখেছেন বাঙালি জাতির আত্মসত্ত্বার নির্ণায়ক হিসেবে। তেমনিভাবে বারবার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন এই বলে যে, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়’। রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ও সমাজজীবনে তিনি ধর্ম এবং জাতীয়তাবাদকে এমন জায়গায় রেখেছেন, যেখানে বাঙালি জাতির আত্মসত্ত্বা-অস্তিত্বে কোনো দ্বন্দ্ব না থাকে, আর ধর্ম বিষয়ে কোনো সংশয় না থাকে। পরবর্তী সময়ের সব দ্বন্দ্ব ও সংশয়ের স্রষ্টা আমরাই, বহু মীমাংসিত বিষয়কে আবার ঘোলাটে করে দিয়ে।
পঞ্চমত, মনেপ্রাণে বাঙালি হয়েও বঙ্গবন্ধুর ছিল একটি বিস্তৃত বৈশ্বিক মানসিকতা। এ ব্যাপারে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী ছিল অনেকটা রবীন্দ্রনাথের মতো। তাই তিনি শুধু বাঙালির নেতা ছিলেন না, ছিলেন বিশ্বনেতা। বৈশ্বিক অঙ্গনে তিনি যূথবদ্ধতার পক্ষে ছিলেন, কিন্তু স্বার্থ জোটবদ্ধতার পক্ষে নয়। তাই তাঁকে দেখা গেছে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের নেতা হিসেবে টিটো, কাস্ত্রোর সঙ্গে একই কাতারে। বিশ্ব শান্তির সপক্ষে তাঁর জোরালো বাণী, বিশ্ব শান্তি কাউন্সিলের প্রতি তাঁর সমর্থন ও মানবতাবাদী বিশ্ব ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে তাঁর আলাপ-আলোচনা তাঁকে এক বিশ্ববরেণ্য নেতায় পরিণত করেছিল। তাই তিনি শুধু ‘বঙ্গবন্ধুই’ নন, ‘বিশ্ববন্ধুও’ বটে।
এ চালচিত্র মাথায় রেখে বঙ্গবন্ধু চারটি বিষয়কে জাতীয় নীতি হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। জাতীয়তাবাদ আমাদের বাঙালি আত্মসত্ত্বার জন্য আবশ্যিক শর্ত। আত্মসত্ত্বার বোধ একটি জাতির স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য দরকার। গণতন্ত্র ভিন্ন স্বাধীনতা বা মুক্তিকে একটি বজায়ক্ষম ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা মানবিকতা, সামাজিক ন্যায্যতা, ও সর্বপ্রকার সমতার জন্য অত্যাবশ্যকীয়।
এই আদর্শিক মূল্যবোধগুলোর ওপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশের জন্ম ও পথচলার শুরু। কিন্তু আমরা দেখেছি, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর নিকটজনকে নৃশংসভাবে হত্যার পর রাষ্ট্রযন্ত্র এসব মূল্যবোধকে অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে জলাঞ্জলি দিয়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে, ইতিহাসের বহু নিষ্পত্তিকৃত সত্যকে খুঁচিয়ে অনাবশ্যক বিতর্কের সৃষ্টি করা হয়েছে, আমাদের নতুন প্রজন্মকে বেপথু করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।
১৯৭৫–এর পর বাঙালি জাতি এবং বাংলাদেশের মৌলিক চিন্তা-চেতনা ও মূল্যবোধকে নস্যাৎ করার জন্য তখনকার রাষ্ট্রযন্ত্র বিবিধ প্রক্রিয়া শুরু করে, যার নানান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক মাত্রিকতা ছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরপরই রাষ্ট্রীয় অপশক্তি তাদের অপকর্মের শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে।
বলা প্রয়োজন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরপরই তাঁর সহযোগী কিছু আওয়ামী লীগ নেতা এসব অপশক্তির সঙ্গে হাত মেলান এবং নতুন সরকারে যোগদান করেন। ফলে তাঁদের কর্মকাণ্ডের দ্বারা তাঁরা একটি অবৈধ প্রক্রিয়াকে স্বীকৃতি দান করেন এবং একে একটি বৈধতা দান করেন। এ ঘৃ্ণ্য কাজের ধিক্কার জানানোর ভাষা কোথায়?
১৯৭৫ সালের পরবর্তী সময়ে ইতিহাসের ধারা পালটে দেওয়ার পাঁচটি চিহ্নিত কাজ করা হয়। প্রথমত, সংবিধানকে ওলটপালট করে তা থেকে মৌলিক চার নীতির বিচ্যুতি ঘটানো যেমন, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্দ্রকে বাদ দেওয়া। ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং বাংলাদেশকে ইসলামি প্রজাতন্ত্রে পরিণত করার অপপ্রয়াস চালানো হয়।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের বিরোধী মৌলবাদী শক্তিগুলোর পুনর্বাসন এবং ১৯৭১–এর গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশের যারা বিরোধিতা করে, যারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল, তারাই বাংলাদেশের মন্ত্রী হয়ে গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা টাঙিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখাতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের নানান উচ্চপদে প্রতিষ্ঠিত করে বিদেশে নিরাপদে প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
তৃতীয়ত, পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাসকে বিকৃত করে তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করে বেপথু করার অপপ্রয়াস চালানো হয়। পাঠ্যসূচিকে ইসলামীকরণের জন্য অন্য ধর্মের কবি-লেখকদের লেখা বাদ দেওয়া হয়। বহু নিষ্পত্তিকৃত সত্যকে খুঁচিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হয় যেমন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা কে ঘোষণা করেন, আমরা বাঙালি না বাংলাদেশি।
চতুর্থত, দেশের মধ্যে উদারপন্থী চিন্তা-চেতনাকে নস্যাৎ করা এবং সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সব রকমের সংখ্যালঘু জোটের নিপীড়ন সংহত করা হলো। রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের নাম করে আমাদের মূল্যবোধের ধর্মনিরপেক্ষকে নষ্ট করা হলো এবং সমাজের অসাম্প্রদায়িক কাঠামোকে আঘাত করা হলো।
পঞ্চমত, জোটনিরপেক্ষ চরিত্র ত্যাগ করে মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামী জেটের সঙ্গে সম্পৃক্ততা। এর একটি উদ্দেশ্য ছিল সম্পদশালী মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে অর্থপ্রাপ্তি, অন্যদিকে এসব দেশের সঙ্গে একটি আদর্শগত সংযোগ স্থাপন।
এসব কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে তিনটি প্রবণতা লক্ষণীয়: এক, একসময়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পীঠস্থান থেকে বলা হয়েছিল, ‘অর্থ কোনো সমস্যা নয়’। দৃশ্যমানতা। জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতা নষ্ট করার এর চেয়ে আর ভালো উপকরণ হয় না। দুই, ‘আমি রাজনীতিকে রাজনীতিকদের জন্য কঠিন করে তুলব’। একটি সুস্থ রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করতে এর চেয়ে মোক্ষম অস্ত্র নেই। তিন, দলবদলের রাজনীতিতে উৎসাহিত করা হয়েছিল। এসবেরই সমন্বিত ফলাফল হচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সমাজনীতিতে সুস্থ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে স্থায়ীভাবে পঙ্গু করে দেওয়া।
এসব কিছুর কারণে পরবর্তী সময়ে তিনটে ধারার সৃষ্টি হয়েছে স্বদেশে। এক, যারা ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও আদর্শিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করেনি এবং এর বিরোধিতা করেছে, তাদের অবস্থান আরও সংহত হয়েছে। দুই, আমরা যারা একাত্তরের প্রজন্ম, তাদের একটি অংশ যেমন বাংলাদেশ নামটি, তার মুক্তিযুদ্ধ, তার আদর্শিক মূল্যবোধ দ্বারা সর্বদা সার্বক্ষণিকভাবে উদ্বেলিত হয়েছি, তেমনি আমাদের প্রজন্মের আরেকটি অংশ তো সবকিছু শুধু বিস্মৃতই হই নি, বেপথুও তো হয়েছি। তিন, জাতির নতুন প্রজন্মের কাছে আমদের মু্ক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাস, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের আদর্শিক মূল্যবোধ হয় সম্পূর্ণ অজ্ঞাত রয়ে গেছে, নয় বিকৃত হয়ে উপস্হাপিত হয়েছে।
২০২১ সাল বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। আমরা একটি ক্রান্তিকালের মাঝখান দিয়ে চলেছি। ১৯৭১ সালের মতো আজও একটি সংগ্রাম আমাদের করতে হবে, সে লড়াই বাংলাদেশের মূল্যবোধকে সংহত করার, সে যুদ্ধ বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চিন্তা-চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করার। চূড়ান্ত বিচারে, এ লড়াই আমাদের বাঁচার লড়াই¬– এ লড়াই জিততে হবে।
সেলিম জাহান

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় দিন। এদিন ষড়যন্ত্রকারীরা সপরিবারে হত্যা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এ নৃশংসতার কোনো তুলনা নেই। মনে আছে, এ ঘটনার তিন দশক পর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে তৎকালীন মহাসচিব কফি আনান আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তোমরা কী করে এ জঘন্যতম কাজটি করতে পারলে?’ লজ্জায় আমি তাঁর মুখের দিকে তাকাতে পারিনি, উত্তর দেওয়া তো দূরের কথা।
আমার সব সময় মনে হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তো শুধু জাতির পিতাকেই হত্যা করা হয়নি, তাঁর চিন্তা-চেতনা আর মূল্যবোধ, যার ভিত্তিতে বাংলাদেশের জন্ম সেগুলোকেও হত্যা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ষড়যন্ত্র শুরু হয় বাঙালি জাতিকে পথভ্রান্ত করার, পরবর্তী প্রজন্মকে বেপথু করার। ১৯৭৫–এর ১৫ আগস্টের ঘটনা ‘একদল পথভ্রষ্ট সৈনিকের’ হঠকারী কোনো কাজ ছিল না, এটা ছিল একটি শান্তমাথার দীর্ঘদিনের ষড়যন্ত্রের ফল। সে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল বাংলাদেশের বিরোধী শক্তি, তাদের স্থানীয় দোসর এবং বিদেশি সহযোগীরা।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মাত্র চার বছর আগে তাঁর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে ৯ মাসের একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা ছিনিয়ে এনেছিলাম বিজয়ের লাল সূর্য। আমাদের স্বাধীনতা শুধু একটি ভূখণ্ডের নয়, নয় একটি মানবগোষ্ঠীর; সে বিজয় একটি চেতনার, একটি সংগ্রামের, একটি মূল্যবোধের।
১৯৭১-এর ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ শেষ করেছিলেন এই বলে যে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। আমাদের মু্ক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশের সংগ্রামের মূলমন্ত্রটি ওই ডাকের মধ্যেই নিহিত। বঙ্গবন্ধু ‘স্বাধীনতা’ ও ‘মুক্তি’ শব্দ দুটোকে সুচিন্তিতভাবে আলাদা করে উচ্চারণ করেছিলেন। কারণ, বাঙালির সংগ্রামকে তিনি দুটো প্রেক্ষিত থেকে দেখেছিলেন। একটি দেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতাই একটি সংগ্রামের শেষ কথা নয়, তার জনগণের সার্বিক মু্ক্তিই হচ্ছে সেই সংগ্রামের চূড়ান্ত লক্ষ্য। রাজনৈতিক স্বাধীনতা সার্বিক মুক্তির আবশ্যিক শর্ত, কিন্তু পর্যাপ্ত শর্ত নয়।
দ্বিতীয়ত, শোষণের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু ছিলেন আপসহীন। সারাটি জীবন তিনি শোষণের বিরুদ্ধে বলেছেন, বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, রুখে দাঁড়িয়েছেন শোষকদের বিরুদ্ধে। শোষণকে তিনি দেখেছেন বঞ্চনার একটি শক্তিশালী খুঁটি হিসেবে, সাম্যের পরিপন্থী হিসেবে এবং মানবাধিকারের সঙ্গে সংগতিহীন হিসেবে। সেই প্রেক্ষিত থেকেই তিনি বলেছেন, ‘বিশ্ব আজ দুটো শিবিরে বিভক্ত– শোষক ও শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’
তৃতীয়ত, সামাজিক ন্যায্যতাকে তিনি একটি শোষণমুক্ত সমাজের অপরিহার্য প্রাকশর্ত হিসেবে দেখেছেন। তিনি গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের কথা বলেছেন, কিন্তু দুটোকেই দেখেছেন সামাজিক ন্যায্যতার এক একটি স্তম্ভ হিসেবে। তাই সত্তর দশকের প্রথম দিকে নানা মনে ‘গণতন্ত্র’ ও ‘সমাজতন্ত্র’ বিষয়ে নানা রকমের ধোঁয়াটে ভাব থাকলেও, এ বিষয় দুটিতে বঙ্গবন্ধুর ধারণা ছিল শার্সির মতো স্বচ্ছ। ‘গণতন্ত্রকে’ তিনি শুদ্ধ একটি বিষয় হিসেবে ভাবেননি, ভেবেছেন, ‘সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র’ হিসেবে; আবার ‘সমাজতন্ত্রকেও’ একটি যান্ত্রিক মাত্রায় দেখেননি, দেখেছেন ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র’ হিসেবে। এবং এ দুটোকেই সম্পৃক্ত করেছেন সামাজিক ন্যায্যতার সঙ্গে।
চতুর্থত, বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনায় ‘জাতীয়তাবাদ’ এবং ‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ একটা বিশেষ স্থান ছিল। বাঙালি জাতীয়তাবাদকে তিনি ‘চরম জাতীয়তাবাদ’ হিসেবে দেখেননি, দেখেছেন বাঙালি জাতির আত্মসত্ত্বার নির্ণায়ক হিসেবে। তেমনিভাবে বারবার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন এই বলে যে, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়’। রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ও সমাজজীবনে তিনি ধর্ম এবং জাতীয়তাবাদকে এমন জায়গায় রেখেছেন, যেখানে বাঙালি জাতির আত্মসত্ত্বা-অস্তিত্বে কোনো দ্বন্দ্ব না থাকে, আর ধর্ম বিষয়ে কোনো সংশয় না থাকে। পরবর্তী সময়ের সব দ্বন্দ্ব ও সংশয়ের স্রষ্টা আমরাই, বহু মীমাংসিত বিষয়কে আবার ঘোলাটে করে দিয়ে।
পঞ্চমত, মনেপ্রাণে বাঙালি হয়েও বঙ্গবন্ধুর ছিল একটি বিস্তৃত বৈশ্বিক মানসিকতা। এ ব্যাপারে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী ছিল অনেকটা রবীন্দ্রনাথের মতো। তাই তিনি শুধু বাঙালির নেতা ছিলেন না, ছিলেন বিশ্বনেতা। বৈশ্বিক অঙ্গনে তিনি যূথবদ্ধতার পক্ষে ছিলেন, কিন্তু স্বার্থ জোটবদ্ধতার পক্ষে নয়। তাই তাঁকে দেখা গেছে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের নেতা হিসেবে টিটো, কাস্ত্রোর সঙ্গে একই কাতারে। বিশ্ব শান্তির সপক্ষে তাঁর জোরালো বাণী, বিশ্ব শান্তি কাউন্সিলের প্রতি তাঁর সমর্থন ও মানবতাবাদী বিশ্ব ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে তাঁর আলাপ-আলোচনা তাঁকে এক বিশ্ববরেণ্য নেতায় পরিণত করেছিল। তাই তিনি শুধু ‘বঙ্গবন্ধুই’ নন, ‘বিশ্ববন্ধুও’ বটে।
এ চালচিত্র মাথায় রেখে বঙ্গবন্ধু চারটি বিষয়কে জাতীয় নীতি হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। জাতীয়তাবাদ আমাদের বাঙালি আত্মসত্ত্বার জন্য আবশ্যিক শর্ত। আত্মসত্ত্বার বোধ একটি জাতির স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য দরকার। গণতন্ত্র ভিন্ন স্বাধীনতা বা মুক্তিকে একটি বজায়ক্ষম ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা মানবিকতা, সামাজিক ন্যায্যতা, ও সর্বপ্রকার সমতার জন্য অত্যাবশ্যকীয়।
এই আদর্শিক মূল্যবোধগুলোর ওপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশের জন্ম ও পথচলার শুরু। কিন্তু আমরা দেখেছি, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর নিকটজনকে নৃশংসভাবে হত্যার পর রাষ্ট্রযন্ত্র এসব মূল্যবোধকে অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে জলাঞ্জলি দিয়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে, ইতিহাসের বহু নিষ্পত্তিকৃত সত্যকে খুঁচিয়ে অনাবশ্যক বিতর্কের সৃষ্টি করা হয়েছে, আমাদের নতুন প্রজন্মকে বেপথু করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।
১৯৭৫–এর পর বাঙালি জাতি এবং বাংলাদেশের মৌলিক চিন্তা-চেতনা ও মূল্যবোধকে নস্যাৎ করার জন্য তখনকার রাষ্ট্রযন্ত্র বিবিধ প্রক্রিয়া শুরু করে, যার নানান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক মাত্রিকতা ছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরপরই রাষ্ট্রীয় অপশক্তি তাদের অপকর্মের শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে।
বলা প্রয়োজন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরপরই তাঁর সহযোগী কিছু আওয়ামী লীগ নেতা এসব অপশক্তির সঙ্গে হাত মেলান এবং নতুন সরকারে যোগদান করেন। ফলে তাঁদের কর্মকাণ্ডের দ্বারা তাঁরা একটি অবৈধ প্রক্রিয়াকে স্বীকৃতি দান করেন এবং একে একটি বৈধতা দান করেন। এ ঘৃ্ণ্য কাজের ধিক্কার জানানোর ভাষা কোথায়?
১৯৭৫ সালের পরবর্তী সময়ে ইতিহাসের ধারা পালটে দেওয়ার পাঁচটি চিহ্নিত কাজ করা হয়। প্রথমত, সংবিধানকে ওলটপালট করে তা থেকে মৌলিক চার নীতির বিচ্যুতি ঘটানো যেমন, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্দ্রকে বাদ দেওয়া। ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং বাংলাদেশকে ইসলামি প্রজাতন্ত্রে পরিণত করার অপপ্রয়াস চালানো হয়।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের বিরোধী মৌলবাদী শক্তিগুলোর পুনর্বাসন এবং ১৯৭১–এর গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশের যারা বিরোধিতা করে, যারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল, তারাই বাংলাদেশের মন্ত্রী হয়ে গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা টাঙিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখাতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের নানান উচ্চপদে প্রতিষ্ঠিত করে বিদেশে নিরাপদে প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
তৃতীয়ত, পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাসকে বিকৃত করে তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করে বেপথু করার অপপ্রয়াস চালানো হয়। পাঠ্যসূচিকে ইসলামীকরণের জন্য অন্য ধর্মের কবি-লেখকদের লেখা বাদ দেওয়া হয়। বহু নিষ্পত্তিকৃত সত্যকে খুঁচিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হয় যেমন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা কে ঘোষণা করেন, আমরা বাঙালি না বাংলাদেশি।
চতুর্থত, দেশের মধ্যে উদারপন্থী চিন্তা-চেতনাকে নস্যাৎ করা এবং সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সব রকমের সংখ্যালঘু জোটের নিপীড়ন সংহত করা হলো। রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের নাম করে আমাদের মূল্যবোধের ধর্মনিরপেক্ষকে নষ্ট করা হলো এবং সমাজের অসাম্প্রদায়িক কাঠামোকে আঘাত করা হলো।
পঞ্চমত, জোটনিরপেক্ষ চরিত্র ত্যাগ করে মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামী জেটের সঙ্গে সম্পৃক্ততা। এর একটি উদ্দেশ্য ছিল সম্পদশালী মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে অর্থপ্রাপ্তি, অন্যদিকে এসব দেশের সঙ্গে একটি আদর্শগত সংযোগ স্থাপন।
এসব কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে তিনটি প্রবণতা লক্ষণীয়: এক, একসময়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পীঠস্থান থেকে বলা হয়েছিল, ‘অর্থ কোনো সমস্যা নয়’। দৃশ্যমানতা। জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতা নষ্ট করার এর চেয়ে আর ভালো উপকরণ হয় না। দুই, ‘আমি রাজনীতিকে রাজনীতিকদের জন্য কঠিন করে তুলব’। একটি সুস্থ রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করতে এর চেয়ে মোক্ষম অস্ত্র নেই। তিন, দলবদলের রাজনীতিতে উৎসাহিত করা হয়েছিল। এসবেরই সমন্বিত ফলাফল হচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সমাজনীতিতে সুস্থ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে স্থায়ীভাবে পঙ্গু করে দেওয়া।
এসব কিছুর কারণে পরবর্তী সময়ে তিনটে ধারার সৃষ্টি হয়েছে স্বদেশে। এক, যারা ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও আদর্শিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করেনি এবং এর বিরোধিতা করেছে, তাদের অবস্থান আরও সংহত হয়েছে। দুই, আমরা যারা একাত্তরের প্রজন্ম, তাদের একটি অংশ যেমন বাংলাদেশ নামটি, তার মুক্তিযুদ্ধ, তার আদর্শিক মূল্যবোধ দ্বারা সর্বদা সার্বক্ষণিকভাবে উদ্বেলিত হয়েছি, তেমনি আমাদের প্রজন্মের আরেকটি অংশ তো সবকিছু শুধু বিস্মৃতই হই নি, বেপথুও তো হয়েছি। তিন, জাতির নতুন প্রজন্মের কাছে আমদের মু্ক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাস, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের আদর্শিক মূল্যবোধ হয় সম্পূর্ণ অজ্ঞাত রয়ে গেছে, নয় বিকৃত হয়ে উপস্হাপিত হয়েছে।
২০২১ সাল বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। আমরা একটি ক্রান্তিকালের মাঝখান দিয়ে চলেছি। ১৯৭১ সালের মতো আজও একটি সংগ্রাম আমাদের করতে হবে, সে লড়াই বাংলাদেশের মূল্যবোধকে সংহত করার, সে যুদ্ধ বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চিন্তা-চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করার। চূড়ান্ত বিচারে, এ লড়াই আমাদের বাঁচার লড়াই¬– এ লড়াই জিততে হবে।

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় দিন। এদিন ষড়যন্ত্রকারীরা সপরিবারে হত্যা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এ নৃশংসতার কোনো তুলনা নেই। মনে আছে, এ ঘটনার তিন দশক পর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে তৎকালীন মহাসচিব কফি আনান আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তোমরা কী করে এ জঘন্যতম কাজটি করতে পারলে?’ লজ্জায় আমি তাঁর মুখের দিকে তাকাতে পারিনি, উত্তর দেওয়া তো দূরের কথা।
আমার সব সময় মনে হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তো শুধু জাতির পিতাকেই হত্যা করা হয়নি, তাঁর চিন্তা-চেতনা আর মূল্যবোধ, যার ভিত্তিতে বাংলাদেশের জন্ম সেগুলোকেও হত্যা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ষড়যন্ত্র শুরু হয় বাঙালি জাতিকে পথভ্রান্ত করার, পরবর্তী প্রজন্মকে বেপথু করার। ১৯৭৫–এর ১৫ আগস্টের ঘটনা ‘একদল পথভ্রষ্ট সৈনিকের’ হঠকারী কোনো কাজ ছিল না, এটা ছিল একটি শান্তমাথার দীর্ঘদিনের ষড়যন্ত্রের ফল। সে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল বাংলাদেশের বিরোধী শক্তি, তাদের স্থানীয় দোসর এবং বিদেশি সহযোগীরা।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মাত্র চার বছর আগে তাঁর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে ৯ মাসের একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা ছিনিয়ে এনেছিলাম বিজয়ের লাল সূর্য। আমাদের স্বাধীনতা শুধু একটি ভূখণ্ডের নয়, নয় একটি মানবগোষ্ঠীর; সে বিজয় একটি চেতনার, একটি সংগ্রামের, একটি মূল্যবোধের।
১৯৭১-এর ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ শেষ করেছিলেন এই বলে যে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। আমাদের মু্ক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশের সংগ্রামের মূলমন্ত্রটি ওই ডাকের মধ্যেই নিহিত। বঙ্গবন্ধু ‘স্বাধীনতা’ ও ‘মুক্তি’ শব্দ দুটোকে সুচিন্তিতভাবে আলাদা করে উচ্চারণ করেছিলেন। কারণ, বাঙালির সংগ্রামকে তিনি দুটো প্রেক্ষিত থেকে দেখেছিলেন। একটি দেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতাই একটি সংগ্রামের শেষ কথা নয়, তার জনগণের সার্বিক মু্ক্তিই হচ্ছে সেই সংগ্রামের চূড়ান্ত লক্ষ্য। রাজনৈতিক স্বাধীনতা সার্বিক মুক্তির আবশ্যিক শর্ত, কিন্তু পর্যাপ্ত শর্ত নয়।
দ্বিতীয়ত, শোষণের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু ছিলেন আপসহীন। সারাটি জীবন তিনি শোষণের বিরুদ্ধে বলেছেন, বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, রুখে দাঁড়িয়েছেন শোষকদের বিরুদ্ধে। শোষণকে তিনি দেখেছেন বঞ্চনার একটি শক্তিশালী খুঁটি হিসেবে, সাম্যের পরিপন্থী হিসেবে এবং মানবাধিকারের সঙ্গে সংগতিহীন হিসেবে। সেই প্রেক্ষিত থেকেই তিনি বলেছেন, ‘বিশ্ব আজ দুটো শিবিরে বিভক্ত– শোষক ও শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’
তৃতীয়ত, সামাজিক ন্যায্যতাকে তিনি একটি শোষণমুক্ত সমাজের অপরিহার্য প্রাকশর্ত হিসেবে দেখেছেন। তিনি গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের কথা বলেছেন, কিন্তু দুটোকেই দেখেছেন সামাজিক ন্যায্যতার এক একটি স্তম্ভ হিসেবে। তাই সত্তর দশকের প্রথম দিকে নানা মনে ‘গণতন্ত্র’ ও ‘সমাজতন্ত্র’ বিষয়ে নানা রকমের ধোঁয়াটে ভাব থাকলেও, এ বিষয় দুটিতে বঙ্গবন্ধুর ধারণা ছিল শার্সির মতো স্বচ্ছ। ‘গণতন্ত্রকে’ তিনি শুদ্ধ একটি বিষয় হিসেবে ভাবেননি, ভেবেছেন, ‘সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র’ হিসেবে; আবার ‘সমাজতন্ত্রকেও’ একটি যান্ত্রিক মাত্রায় দেখেননি, দেখেছেন ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র’ হিসেবে। এবং এ দুটোকেই সম্পৃক্ত করেছেন সামাজিক ন্যায্যতার সঙ্গে।
চতুর্থত, বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনায় ‘জাতীয়তাবাদ’ এবং ‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ একটা বিশেষ স্থান ছিল। বাঙালি জাতীয়তাবাদকে তিনি ‘চরম জাতীয়তাবাদ’ হিসেবে দেখেননি, দেখেছেন বাঙালি জাতির আত্মসত্ত্বার নির্ণায়ক হিসেবে। তেমনিভাবে বারবার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন এই বলে যে, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়’। রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ও সমাজজীবনে তিনি ধর্ম এবং জাতীয়তাবাদকে এমন জায়গায় রেখেছেন, যেখানে বাঙালি জাতির আত্মসত্ত্বা-অস্তিত্বে কোনো দ্বন্দ্ব না থাকে, আর ধর্ম বিষয়ে কোনো সংশয় না থাকে। পরবর্তী সময়ের সব দ্বন্দ্ব ও সংশয়ের স্রষ্টা আমরাই, বহু মীমাংসিত বিষয়কে আবার ঘোলাটে করে দিয়ে।
পঞ্চমত, মনেপ্রাণে বাঙালি হয়েও বঙ্গবন্ধুর ছিল একটি বিস্তৃত বৈশ্বিক মানসিকতা। এ ব্যাপারে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী ছিল অনেকটা রবীন্দ্রনাথের মতো। তাই তিনি শুধু বাঙালির নেতা ছিলেন না, ছিলেন বিশ্বনেতা। বৈশ্বিক অঙ্গনে তিনি যূথবদ্ধতার পক্ষে ছিলেন, কিন্তু স্বার্থ জোটবদ্ধতার পক্ষে নয়। তাই তাঁকে দেখা গেছে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের নেতা হিসেবে টিটো, কাস্ত্রোর সঙ্গে একই কাতারে। বিশ্ব শান্তির সপক্ষে তাঁর জোরালো বাণী, বিশ্ব শান্তি কাউন্সিলের প্রতি তাঁর সমর্থন ও মানবতাবাদী বিশ্ব ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে তাঁর আলাপ-আলোচনা তাঁকে এক বিশ্ববরেণ্য নেতায় পরিণত করেছিল। তাই তিনি শুধু ‘বঙ্গবন্ধুই’ নন, ‘বিশ্ববন্ধুও’ বটে।
এ চালচিত্র মাথায় রেখে বঙ্গবন্ধু চারটি বিষয়কে জাতীয় নীতি হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। জাতীয়তাবাদ আমাদের বাঙালি আত্মসত্ত্বার জন্য আবশ্যিক শর্ত। আত্মসত্ত্বার বোধ একটি জাতির স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য দরকার। গণতন্ত্র ভিন্ন স্বাধীনতা বা মুক্তিকে একটি বজায়ক্ষম ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা মানবিকতা, সামাজিক ন্যায্যতা, ও সর্বপ্রকার সমতার জন্য অত্যাবশ্যকীয়।
এই আদর্শিক মূল্যবোধগুলোর ওপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশের জন্ম ও পথচলার শুরু। কিন্তু আমরা দেখেছি, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর নিকটজনকে নৃশংসভাবে হত্যার পর রাষ্ট্রযন্ত্র এসব মূল্যবোধকে অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে জলাঞ্জলি দিয়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে, ইতিহাসের বহু নিষ্পত্তিকৃত সত্যকে খুঁচিয়ে অনাবশ্যক বিতর্কের সৃষ্টি করা হয়েছে, আমাদের নতুন প্রজন্মকে বেপথু করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।
১৯৭৫–এর পর বাঙালি জাতি এবং বাংলাদেশের মৌলিক চিন্তা-চেতনা ও মূল্যবোধকে নস্যাৎ করার জন্য তখনকার রাষ্ট্রযন্ত্র বিবিধ প্রক্রিয়া শুরু করে, যার নানান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক মাত্রিকতা ছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরপরই রাষ্ট্রীয় অপশক্তি তাদের অপকর্মের শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে।
বলা প্রয়োজন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরপরই তাঁর সহযোগী কিছু আওয়ামী লীগ নেতা এসব অপশক্তির সঙ্গে হাত মেলান এবং নতুন সরকারে যোগদান করেন। ফলে তাঁদের কর্মকাণ্ডের দ্বারা তাঁরা একটি অবৈধ প্রক্রিয়াকে স্বীকৃতি দান করেন এবং একে একটি বৈধতা দান করেন। এ ঘৃ্ণ্য কাজের ধিক্কার জানানোর ভাষা কোথায়?
১৯৭৫ সালের পরবর্তী সময়ে ইতিহাসের ধারা পালটে দেওয়ার পাঁচটি চিহ্নিত কাজ করা হয়। প্রথমত, সংবিধানকে ওলটপালট করে তা থেকে মৌলিক চার নীতির বিচ্যুতি ঘটানো যেমন, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্দ্রকে বাদ দেওয়া। ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং বাংলাদেশকে ইসলামি প্রজাতন্ত্রে পরিণত করার অপপ্রয়াস চালানো হয়।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের বিরোধী মৌলবাদী শক্তিগুলোর পুনর্বাসন এবং ১৯৭১–এর গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশের যারা বিরোধিতা করে, যারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল, তারাই বাংলাদেশের মন্ত্রী হয়ে গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা টাঙিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখাতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের নানান উচ্চপদে প্রতিষ্ঠিত করে বিদেশে নিরাপদে প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
তৃতীয়ত, পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাসকে বিকৃত করে তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করে বেপথু করার অপপ্রয়াস চালানো হয়। পাঠ্যসূচিকে ইসলামীকরণের জন্য অন্য ধর্মের কবি-লেখকদের লেখা বাদ দেওয়া হয়। বহু নিষ্পত্তিকৃত সত্যকে খুঁচিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হয় যেমন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা কে ঘোষণা করেন, আমরা বাঙালি না বাংলাদেশি।
চতুর্থত, দেশের মধ্যে উদারপন্থী চিন্তা-চেতনাকে নস্যাৎ করা এবং সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সব রকমের সংখ্যালঘু জোটের নিপীড়ন সংহত করা হলো। রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের নাম করে আমাদের মূল্যবোধের ধর্মনিরপেক্ষকে নষ্ট করা হলো এবং সমাজের অসাম্প্রদায়িক কাঠামোকে আঘাত করা হলো।
পঞ্চমত, জোটনিরপেক্ষ চরিত্র ত্যাগ করে মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামী জেটের সঙ্গে সম্পৃক্ততা। এর একটি উদ্দেশ্য ছিল সম্পদশালী মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে অর্থপ্রাপ্তি, অন্যদিকে এসব দেশের সঙ্গে একটি আদর্শগত সংযোগ স্থাপন।
এসব কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে তিনটি প্রবণতা লক্ষণীয়: এক, একসময়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পীঠস্থান থেকে বলা হয়েছিল, ‘অর্থ কোনো সমস্যা নয়’। দৃশ্যমানতা। জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতা নষ্ট করার এর চেয়ে আর ভালো উপকরণ হয় না। দুই, ‘আমি রাজনীতিকে রাজনীতিকদের জন্য কঠিন করে তুলব’। একটি সুস্থ রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করতে এর চেয়ে মোক্ষম অস্ত্র নেই। তিন, দলবদলের রাজনীতিতে উৎসাহিত করা হয়েছিল। এসবেরই সমন্বিত ফলাফল হচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সমাজনীতিতে সুস্থ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে স্থায়ীভাবে পঙ্গু করে দেওয়া।
এসব কিছুর কারণে পরবর্তী সময়ে তিনটে ধারার সৃষ্টি হয়েছে স্বদেশে। এক, যারা ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও আদর্শিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করেনি এবং এর বিরোধিতা করেছে, তাদের অবস্থান আরও সংহত হয়েছে। দুই, আমরা যারা একাত্তরের প্রজন্ম, তাদের একটি অংশ যেমন বাংলাদেশ নামটি, তার মুক্তিযুদ্ধ, তার আদর্শিক মূল্যবোধ দ্বারা সর্বদা সার্বক্ষণিকভাবে উদ্বেলিত হয়েছি, তেমনি আমাদের প্রজন্মের আরেকটি অংশ তো সবকিছু শুধু বিস্মৃতই হই নি, বেপথুও তো হয়েছি। তিন, জাতির নতুন প্রজন্মের কাছে আমদের মু্ক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাস, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের আদর্শিক মূল্যবোধ হয় সম্পূর্ণ অজ্ঞাত রয়ে গেছে, নয় বিকৃত হয়ে উপস্হাপিত হয়েছে।
২০২১ সাল বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। আমরা একটি ক্রান্তিকালের মাঝখান দিয়ে চলেছি। ১৯৭১ সালের মতো আজও একটি সংগ্রাম আমাদের করতে হবে, সে লড়াই বাংলাদেশের মূল্যবোধকে সংহত করার, সে যুদ্ধ বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চিন্তা-চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করার। চূড়ান্ত বিচারে, এ লড়াই আমাদের বাঁচার লড়াই¬– এ লড়াই জিততে হবে।

উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।
নাদিম নেওয়াজ

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় দিন। এদিন ষড়যন্ত্রকারীরা সপরিবারে হত্যা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এ নৃশংসতার কোনো তুলনা নেই। মনে আছে, এ ঘটনার তিন দশক পর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে তৎকালীন মহাসচিব কফি আনান আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন
১৫ আগস্ট ২০২১
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।
আসাদুজ্জামান নূর

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় দিন। এদিন ষড়যন্ত্রকারীরা সপরিবারে হত্যা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এ নৃশংসতার কোনো তুলনা নেই। মনে আছে, এ ঘটনার তিন দশক পর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে তৎকালীন মহাসচিব কফি আনান আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন
১৫ আগস্ট ২০২১
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম।
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় দিন। এদিন ষড়যন্ত্রকারীরা সপরিবারে হত্যা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এ নৃশংসতার কোনো তুলনা নেই। মনে আছে, এ ঘটনার তিন দশক পর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে তৎকালীন মহাসচিব কফি আনান আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন
১৫ আগস্ট ২০২১
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় দিন। এদিন ষড়যন্ত্রকারীরা সপরিবারে হত্যা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এ নৃশংসতার কোনো তুলনা নেই। মনে আছে, এ ঘটনার তিন দশক পর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে তৎকালীন মহাসচিব কফি আনান আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন
১৫ আগস্ট ২০২১
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫