লুৎফর রহমান রিটন

ভবিষ্যতে কেমন বাংলাদেশ চাই, সে বিষয়ে বলতে গেলে প্রথমে বাংলাদেশ থেকে প্রায় সাড়ে বারো হাজার কিলোমিটার দূরের একটি দেশে আমার যাপিত জীবন, সাম্প্রতিক ভৌগোলিক অবস্থান, পরিপার্শ্ব এবং বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতাটা তুলে ধরতে হবে।
০২. ২২ বছর হতে চলল কানাডায় থিতু হয়েছি। তার আগেই ইংল্যান্ড-জার্মানি-ফ্রান্স-আমেরিকা-জাপানসহ পৃথিবীর নানা দেশের নানা শহরে সপরিবারে ভ্রমণ এবং স্বল্পকালীন অবস্থানের সুবাদে একটা বিষয় জানা হয়ে গিয়েছিল, আর তা হচ্ছে স্বদেশনিবাসী এবং বিদেশপ্রবাসী বাঙালিদের একটা দৃষ্টিগ্রাহ্য অংশই বঙ্গবন্ধুবিদ্বেষী। আবার এই বঙ্গবন্ধুবিদ্বেষী বাঙালিদের সিংহভাগই ইংরেজি জানা।
আড়াই কলম ইংরেজি জানা বাঙালিদের বঙ্গবন্ধুবিদ্বেষের কারণ খুঁজতে গিয়ে লক্ষ করেছি—জামায়াত-বিএনপিজাত পাকিস্তানিদের ছানাপোনারা বংশানুক্রমিকভাবেই উত্তরাধিকারটি বহন করছে। কিন্তু তার বাইরে আপাতশিক্ষিত একটা এলিট শ্রেণির সদস্যরাও একই রোগে আক্রান্ত। এই শ্রেণিটা নীরব ঘাতকের মতো। সরাসরি জামায়াতি না হলেও এরা প্রধানত বঙ্গবন্ধুবিদ্বেষী, তারপর শেখ হাসিনাবিরোধী এবং দিন শেষে প্রচণ্ড আওয়ামীবিরোধী। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামীবিরোধিতা করতে করতে একপর্যায়ে ওরা জামায়াতিদের কোলে গিয়ে সমর্পিত হয়।
নিজের অবস্থান আরেকটি মহাদেশে হলেও জাতীয় নির্বাচনে ওরা জামায়াত-বিএনপির রোলটাই প্লে করে। স্বদেশে থাকা আত্মীয়-পরিজনের কাছে টাকা পাঠানোর পাশাপাশি এরা আওয়ামী লীগকে ভোট না দিয়ে বিএনপি, প্রয়োজনে জামায়াত প্রার্থীকে জয়ী করার নির্দেশ পাঠায়। আসুক বিএনপি, আসুক জামায়াত; কিন্তু আওয়ামী লীগকে ঠেকাতেই হবে। প্রয়োজনে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের রাষ্ট্রক্ষমতায় বসাতে হবে; কিন্তু আওয়ামী লীগকে ঠেকাও।
আপাতশিক্ষিত এলিট শ্রেণির প্রতিনিধিত্বকারী স্বদেশনিবাসী এবং বিদেশপ্রবাসীদের অধিকাংশই ধনাঢ্য। পরিপাটি পোশাক কিংবা ঝাঁ-চকচকে গাড়ি এবং অভিজাত এলাকায় দামি বাড়িতে এদের বসবাস। পেশায় এরা প্রায়শ সফল, সরকারি উচ্চ পদে আসীন অথবা বিশাল এনজিও কর্তা। প্রতিরাতে স্যুট-কোট-টাই, বাহারি পাঞ্জাবি কিংবা শাড়ি-টিপ-চশমা পরে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টক শোতে এরা উপস্থিত হয়। তারপর ইনিয়ে-বিনিয়ে গরু রচনাকে নদীতে নিয়ে না ফেলা পর্যন্ত এদের প্যারেড শেষ হয় না। প্রবাসেও সক্রিয় এদের প্রতিনিধিরা।
প্রবাসী বাঙালি পরিবারের একান্ত আড্ডা বা পার্টিতেও এরা পরস্পর ইংরেজিতে কথা বলে। এই শ্রেণির পালোয়ানরা তাদের বাতচিতের বিষয়বস্তু হিসেবে খুব দ্রুতই বাংলাদেশ-শেখ হাসিনা-আওয়ামী লীগ হয়ে শেষমেশ বঙ্গবন্ধুর চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধারপর্বে এসে সমাপ্ত হয়।বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে কথা না বললে এদের আত্মার শান্তি হয় না। সলিড একটা ঘুম হয় না।
স্বদেশনিবাসী এবং বিদেশপ্রবাসী এলিট শ্রেণির প্রতিনিধিরা টুঙ্গিপাড়া নামের অখ্যাত একটা গ্রাম থেকে উঠে আসা মৃত্তিকাসংলগ্ন নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে মেনে নিতে পারেন না। শ্রেণিগত একটা দূরত্ব অনুভব করা বা সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্সে ভুগতে থাকা এই শ্রেণি তাই চিরশত্রুভাবাপন্ন বঙ্গবন্ধুর প্রতি।
এই শ্রেণির সঙ্গে আরেকটি শ্রেণির খুব মিল। এরাও শিক্ষিত, ইংরেজিতে পক্ব-দক্ষ। দর্শন-রাজনীতি, ধর্ম-ইতিহাস, সাহিত্য-পেইন্টিংস, মার্ক্স-অ্যাঙ্গেলস-ফুকো-দেরিদা, ন্যারেটিভ-রিকনসিলিয়েশন-হেজিমনি থিওরি কপচানোতেও অতিশয় দক্ষ। দিন শেষে এরাও হাসিনা-আওয়ামী লীগ ও মুজিববিদ্বেষী। সরকারের সমালোচনা করা যেতেই পারে; কিন্তু অযৌক্তিক এত বঙ্গবন্ধুবিদ্বেষ কেন?
আপাতশিক্ষিত ইংরেজি জানা বঙ্গীয় এলিট সোসাইটি এবং শিল্প ও দর্শনবোদ্ধা বঙ্গসন্তানদের এই দুই শ্রেণির সঙ্গে প্রায়ই দেখা হয়ে যায়। খুব দ্রুতই আমি এদের সঙ্গ ত্যাগে কামিয়াব হই। প্রবাসী বাঙালিদের এ রকম আড্ডা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। তারপরও নিয়তি আমার পিছু ছাড়ে না। কী করে যেন মোলাকাত হয়ে যায় এদের সঙ্গে।
০৩. সেবা প্রকাশনীর বিখ্যাত অনুবাদক-লেখক রওশন জামিল ছিলেন ঢাকায় আমার মহল্লাকা বড়া ভাই। আমি থাকতাম ওয়ারীর হেয়ার স্ট্রিটে আর তিনি ঠাটারিবাজার বিসিসি রোডে। রওশন ভাই আমার বহু আগেই থিতু হয়েছেন নিউইয়র্কে। টেলিফোনে তাঁর সঙ্গে প্রায়ই কথা হয়। ফেসবুকে তাঁর স্ট্যাটাস দেখি নিয়মিত।
নিউইয়র্কপ্রবাসী আবেদিন কাদের একসময় বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিউজ প্রডিউসার ছিলেন। বিদ্বান মেধাবী এই মানুষ নিউইয়র্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। তিনিও মোটামুটি সক্রিয়, ফেসবুকে। এই দুজন জ্ঞানী মানুষ আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড।
বছর তিনেক আগে, রওশন জামিল ফেসবুকে নিজের একটি স্ট্যাটাসে লিখলেন, ‘বদরুদ্দীন উমরের বুদ্ধিজীবিতার বড় কৃতিত্ব, তিনি তাঁর বুঝের সঙ্গে আপস করেননি কখনো। ক্ষমতার খয়ের খাঁগিরি করেননি, যেটা তাঁর সমসাময়িকেরা কম-বেশি প্রায় সবাই করেছেন, করে যাচ্ছেন। বদরুদ্দীন উমরের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অমত করতে পারি, কিন্তু তাঁর সততাকে সালাম ঠুকতেই হয়।’
শিক্ষিত এলিট বদরুদ্দীন উমরের বুদ্ধিবৃত্তিক সততা নিয়ে আমার দ্বিমত ছিল। আমি তাই মন্তব্যের ঘরে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলাম এইভাবে—‘বদরুদ্দীন উমরের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অমত করতে পারি, কিন্তু তাঁর সততাকে সালাম ঠুকতেই হয়।—সততা?’
আবেদিন কাদের প্রত্যুত্তরে বললেন, ‘Yes, honest, I consider him intellectually honest...’
সাধারণত ফেসবুকে আমি কোনো বাহাসেই অংশ নিই না। কম্পোজ বা টাইপিংয়ে আলস্যের কারণে এমনিতেই আমার প্রচুর পরিকল্পনা অলিখিতই থেকে যায়। যতটা সময় খরচ করে আমি একটা বাহাস করব, টাইপ করব, ততটা সময় ব্যয় করলে অনায়াসেই একটা ছড়া লেখা হয়ে যায়। আমি তাই দ্বিতীয়টাই প্রেফার করি। শামিল হই না তর্কে।
কিন্তু আবেদিন কাদেরের উত্তরটা, বিশেষ করে ‘I consider him intellectually honest’ বাক্যটির জবাব দেওয়া জরুরি মনে করে মূল স্ট্যাটাসদাতা রওশন জামিলকে ফোন করে বিষয়টা ব্যাখ্যা করি।
জনাব বদরুদ্দীন উমরের একটা আত্মকথা ধরনের স্মৃতিগদ্য ঢাকার ২০০০ কিংবা সাপ্তাহিক-এ খুব আগ্রহ নিয়ে পড়েছিলাম। একটি পর্বে তিনি উনসত্তরের ঢাকার বিশেষ একটি দিনের বর্ণনা করছিলেন। নবাবপুর রোডের কম দামি হোটেলের গমগমে ভিড়ের আড্ডায় সাধারণ মধ্যবিত্ত নাগরিকদের চিন্তা-চেতনা, স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষার টুকরো টুকরো ঘটনার বয়ান তিনি করছিলেন।
নবাবপুর রোড থেকে জিন্নাহ অ্যাভিনিউ (বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ), বায়তুল মোকাররম স্টেডিয়াম অঞ্চলের বিপুল জনস্রোতের ডিটেইল একটি চিত্র তিনি ফুটিয়ে তুলছিলেন। সেদিনের বিকেলের উল্লেখযোগ্য প্রায় সবকিছুই উঠে এসেছিল তাঁর রচনায়, শুধু একটি বিষয় ছাড়া।সবকিছুই অবলোকন করেছিলেন তিনি সেই বিকেলের, শুধু একটি বিষয় ছাড়া। আর সেটা হচ্ছে—ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদের শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেওয়া। উনসত্তরের ২৩ ফেব্রুয়ারির সেই বিকেলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল সেটা।
এত কিছু আমি কমেন্টে লিখতে অনাগ্রহী বলে টেলিফোনে রওশন জামিলকে খুলে বলেছিলাম। রওশন সে কথা উল্লেখ করেছিলেন তাঁর প্রত্যুত্তরের ঘরে– ‘কাল রিটনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ওর আপত্তির জায়গা বদরুদ্দীন উমরের বৌদ্ধিক চর্চায় শেখ মুজিবুর রহমানকে কৃতিত্ব না দেওয়া বা যেমন একটি দিনের তাৎপর্য ব্যাখ্যায় বা তাঁর ডায়েরিধর্মী লেখায় সাধারণ সব ঘটনার কথা এসেছে, কিন্তু সেদিন যে শেখ মুজিবকে পল্টন ময়দানে “বঙ্গবন্ধু” উপাধি দেওয়া হয়েছিল, সেই ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়নি; যা এ দেশের প্রেক্ষাপটে একটা ঐতিহাসিক ঘটনা ছিল। সে কারণে রিটন বলতে চাইছে, উমরের “মুজিববিদ্বেষ” তাঁর (উমরের) বৌদ্ধিক সততার পরিচয় দেয় না।’
রওশনের এই মন্তব্যের জবাবে আবেদিন লিখলেন, ‘সেটা রিটন বলতেই পারেন। কিন্তু তাতে উমরের বুদ্ধিবৃত্তিক সততা প্রশ্নবিদ্ধ হয় না। একজন মানুষ বঙ্গবন্ধুকে তাঁর জীবনের কোনো লেখায় উল্লেখ না করেও বৌদ্ধিকভাবে সৎ থাকতে পারেন।’
আবেদিনের জবাবের প্রত্যুত্তরে আমি শুধু লিখলাম, ‘মারহাবা!’ ‘কিন্তু তাতে উমরের বুদ্ধিবৃত্তিক সততা প্রশ্নবিদ্ধ হয় না’ শোনার পরে ‘মারহাবা’ বলা ছাড়া কী আর বলতে পারতাম সংক্ষেপে!
০৪. কিছুদিন আগে নায়াগ্রা জলপ্রপাত এলাকার একটা চমৎকার বুকশপে গিয়েছিলাম বন্ধু দিনু বিল্লাহর সঙ্গে। ওখানে একটা র্যাকে পেঙ্গুইন সাইজের ছোট্ট একটা বইয়ের দিকে তাকাতেই প্রচ্ছদে মুদ্রিত BANGLADESH শব্দটায় আমার চোখ আটকে গেল। বইটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখে খুবই আগ্রহী হয়ে উঠলাম।
বইটির নাম The essential guide to customs & culture BANGLADESH. বইটি CULTURE SMART সিরিজের একটি প্রকাশনা। প্রকাশিত হয়েছে লন্ডনভিত্তিক ব্রিটিশ লাইব্রেরি থেকে। লিখেছেন লেখক-সাংবাদিক ঊর্মি রহমান। আকর্ষণীয় মেকআপ গেটআপ-সমৃদ্ধ ১৬৮ পৃষ্ঠার চমৎকার এই বইয়ে ৯টি চ্যাপ্টারে বিভিন্নশিরোনামে অনেক এন্ট্রি আছে।
প্রতিটি অধ্যায়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি ভুক্তি। আছে পাতায় পাতায় প্রাসঙ্গিক অনেক ছবি। যেমন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বর্ণনার সঙ্গে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ছবি আছে। কিন্তু সত্তরের নির্বাচনে শেখ মুজিবের বিপুল বিজয় এবং ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ কিংবা ২৫ মার্চ রাতে গ্রেপ্তারের আগে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বর্ণনায় শেখ মুজিবের কোনো ছবি নেই। অথচ প্রফেসর ইউনূসের ছবি আছে গ্রামীণ ব্যাংকের বর্ণনায়।
বইটির সঙ্গে ব্যবহারের জন্য প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয় ছবিগুলো সরবরাহ করেছেন কে? অনুমান করি, স্বয়ং লেখক নিশ্চয়ই। সেটাই হওয়ার কথা। তাই যদি হয়, তবে আমার প্রশ্ন—বঙ্গবন্ধুর ছবি কই? বাংলাদেশের পরিচিতিমূলক একটা গাইডবই বা পুস্তিকা বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাড়া কি পরিপূর্ণ হয়? হয় না। বাংলাদেশের নামোচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গেই যে মানুষের ছবি সবার আগে দীপ্যমান হয়ে ওঠে, সেটি শেখ মুজিবুর রহমানের, বাংলাদেশের স্থপতির। পায়ে কাদামাটি মাখা যিনি উঠে এসেছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মৃত্তিকা থেকে। বঙ্গবন্ধু ও সাম্প্রতিক বাংলাদেশ বিষয়ে তথাকথিত শিক্ষিতদের এই বিদ্বেষপ্রবণতাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখতেই হবে আগামীর বাংলাদেশ নিয়ে ভাবতে গেলে।
কোনো রূপকথার দেশ নয় আমার বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৩০ লাখ শহীদের রক্তস্রোতের ওপর জন্ম হয়েছে বাংলাদেশ নামের স্বাধীন দেশটির। চার বছরের মাথায় স্বাধীনতার বিরুদ্ধ পক্ষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর স্বাধীন বাংলাদেশ ইউটার্ন নিয়েছিল পাকিস্তানের দিকে। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধীরা আবার একটা পাকিস্তান পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়েছিল। এরপর টানা একুশ বছর ধরে বঙ্গবন্ধু ছিলেন নির্বাসিত।
শেখ মুজিবুর রহমান নামটা প্রায় মুছেই ফেলা হয়েছিল ইতিহাস থেকে। সংবিধানকে কেটে-ছিঁড়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের দেওয়া হয়েছিল দায়মুক্তি। একাত্তরের চিহ্নিত ঘাতক-রাজাকার-আলবদরদের গাড়িতে উড়ছিল ৩০ লাখ শহীদের রক্তস্নাত লাল-সবুজ পতাকাটি।
একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে পাল্টে যেতে থাকে দৃশ্যপট। আবার একটা ইউটার্ন নেয় বাংলাদেশ। এবার স্বাধীনতার দিকে। মিনি পাকিস্তান পুনরায় বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়। জাতির পিতার খুনিদের বিচারকাজ শুরু হয়। ধাপে ধাপে দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়ায় আদালত মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন খুনিদের। সেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মাধ্যমে মোচন করা সম্ভব হয় বাংলাদেশের কপালে লেপ্টে থাকা কলঙ্কতিলকটি। কলঙ্কমুক্ত হয় বাংলাদেশ।
অতঃপর মানবতাবিরোধী বেশ কয়েকজন শীর্ষ অপরাধীর বিচার এবং আদালতের রায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে আরেক দফা শুদ্ধ হয় বাংলাদেশ। কিন্তু একাত্তরের পরাজিত শক্তির বিনাশ হয় না। দালাল-রাজাকারদের ছানাপোনা সক্রিয় থাকে রাজনীতিতে। ফলে পরিস্থিতি মোটেও স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অনুকূলে থাকে না
একাত্তরের পরাজিত শক্তির ছানাপোনাদের সঙ্গে আড়াই কলম ইংরেজি জানা শিক্ষিত এলিট শ্রেণিটি সংহতি প্রকাশ করে প্রায়ই বিভিন্ন ব্যানারের আনুষ্ঠানিকতায়। স্যাটেলাইট টিভির রাতের টক শোগুলোতে তারা নানান থিওরি কপচায়। এদের পোশাকি নাম সুশীল।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, ৩০ লাখ মানুষের আত্মত্যাগ এবং তার বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার ব্যাখ্যায় তারা শৃগালচাতুর্যে ‘ন্যারেটিভ-রিকনসিলিয়েশন-ডায়ালেক্ট-হেজিমনি’ ইত্যাকার শব্দের তুবড়ি ছুটিয়ে এমন একটা সিচুয়েশন তৈরি করে যে তখন খুব সাধারণ মানুষের কাছে, এমনকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী চলচ্চিত্র ‘মেহেরজান’কেও মনে হয় মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র।
যে চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে—একাত্তরে পাকিস্তানি সৈনিকদের হত্যালীলা ও পৈশাচিক ধর্ষণকালে ধর্ষক পাকিস্তানি সৈন্যের প্রেমে আকুল বাঙালি মেয়েটি তার বাবার কাছে কান্নাকাটি করে বলছে, ‘বাবা, আমাকে সৈন্য এনে দাও...সৈন্য এনে দাও!’
একাত্তরের পরাজিত শক্তির ছানাপোনা এবং আড়াই কলম ইংরেজি জানা বাংলাদেশবিরোধী এই দুই শ্রেণিকে সঠিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রতিহত করার মাধ্যমেই এগিয়ে যেতে হবে আগামী দিনের বাংলাদেশকে।
একাত্তরের ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আসা বাংলাদেশ, পঁচাত্তরের পর পাকিস্তানের দিকে ক্ষিপ্রগতিতে ধাবমান বাংলাদেশ যে ছিয়ানব্বইয়ের পর ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, সেই অগ্রযাত্রা মাঝখানে বছরকয়েক বিপর্যস্ত হয়ে পুনরায় সঠিক ট্র্যাকে চলমান। বাংলাদেশ এখন আর ‘বটমলেস বাস্কেট’ নয়।
আমি সেই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, যে বাংলাদেশে একটি শিশুও অনাহারে থাকবে না। প্রত্যেক শিশুর পরনে পোশাক থাকবে। প্রত্যেক শিশু বাসযোগ্য ঘর পাবে। প্রত্যেক শিশু স্কুলে যাবে, অসুস্থ হলে চিকিৎসা পাবে। যদি একটি শিশুও ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমুতে যায়, তাহলে আমাদের সমস্ত অর্জন ম্লান হয়ে যাবে। একজন শিশুসাহিত্যিক হিসেবে প্রত্যেক শিশুর পাঁচটি মৌলিক অধিকার নিশ্চিত দেখতে চাই আমি।
অটোয়া, ২০ জুলাই ২০২৩
লেখক: শিশুসাহিত্যিক

ভবিষ্যতে কেমন বাংলাদেশ চাই, সে বিষয়ে বলতে গেলে প্রথমে বাংলাদেশ থেকে প্রায় সাড়ে বারো হাজার কিলোমিটার দূরের একটি দেশে আমার যাপিত জীবন, সাম্প্রতিক ভৌগোলিক অবস্থান, পরিপার্শ্ব এবং বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতাটা তুলে ধরতে হবে।
০২. ২২ বছর হতে চলল কানাডায় থিতু হয়েছি। তার আগেই ইংল্যান্ড-জার্মানি-ফ্রান্স-আমেরিকা-জাপানসহ পৃথিবীর নানা দেশের নানা শহরে সপরিবারে ভ্রমণ এবং স্বল্পকালীন অবস্থানের সুবাদে একটা বিষয় জানা হয়ে গিয়েছিল, আর তা হচ্ছে স্বদেশনিবাসী এবং বিদেশপ্রবাসী বাঙালিদের একটা দৃষ্টিগ্রাহ্য অংশই বঙ্গবন্ধুবিদ্বেষী। আবার এই বঙ্গবন্ধুবিদ্বেষী বাঙালিদের সিংহভাগই ইংরেজি জানা।
আড়াই কলম ইংরেজি জানা বাঙালিদের বঙ্গবন্ধুবিদ্বেষের কারণ খুঁজতে গিয়ে লক্ষ করেছি—জামায়াত-বিএনপিজাত পাকিস্তানিদের ছানাপোনারা বংশানুক্রমিকভাবেই উত্তরাধিকারটি বহন করছে। কিন্তু তার বাইরে আপাতশিক্ষিত একটা এলিট শ্রেণির সদস্যরাও একই রোগে আক্রান্ত। এই শ্রেণিটা নীরব ঘাতকের মতো। সরাসরি জামায়াতি না হলেও এরা প্রধানত বঙ্গবন্ধুবিদ্বেষী, তারপর শেখ হাসিনাবিরোধী এবং দিন শেষে প্রচণ্ড আওয়ামীবিরোধী। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামীবিরোধিতা করতে করতে একপর্যায়ে ওরা জামায়াতিদের কোলে গিয়ে সমর্পিত হয়।
নিজের অবস্থান আরেকটি মহাদেশে হলেও জাতীয় নির্বাচনে ওরা জামায়াত-বিএনপির রোলটাই প্লে করে। স্বদেশে থাকা আত্মীয়-পরিজনের কাছে টাকা পাঠানোর পাশাপাশি এরা আওয়ামী লীগকে ভোট না দিয়ে বিএনপি, প্রয়োজনে জামায়াত প্রার্থীকে জয়ী করার নির্দেশ পাঠায়। আসুক বিএনপি, আসুক জামায়াত; কিন্তু আওয়ামী লীগকে ঠেকাতেই হবে। প্রয়োজনে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের রাষ্ট্রক্ষমতায় বসাতে হবে; কিন্তু আওয়ামী লীগকে ঠেকাও।
আপাতশিক্ষিত এলিট শ্রেণির প্রতিনিধিত্বকারী স্বদেশনিবাসী এবং বিদেশপ্রবাসীদের অধিকাংশই ধনাঢ্য। পরিপাটি পোশাক কিংবা ঝাঁ-চকচকে গাড়ি এবং অভিজাত এলাকায় দামি বাড়িতে এদের বসবাস। পেশায় এরা প্রায়শ সফল, সরকারি উচ্চ পদে আসীন অথবা বিশাল এনজিও কর্তা। প্রতিরাতে স্যুট-কোট-টাই, বাহারি পাঞ্জাবি কিংবা শাড়ি-টিপ-চশমা পরে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টক শোতে এরা উপস্থিত হয়। তারপর ইনিয়ে-বিনিয়ে গরু রচনাকে নদীতে নিয়ে না ফেলা পর্যন্ত এদের প্যারেড শেষ হয় না। প্রবাসেও সক্রিয় এদের প্রতিনিধিরা।
প্রবাসী বাঙালি পরিবারের একান্ত আড্ডা বা পার্টিতেও এরা পরস্পর ইংরেজিতে কথা বলে। এই শ্রেণির পালোয়ানরা তাদের বাতচিতের বিষয়বস্তু হিসেবে খুব দ্রুতই বাংলাদেশ-শেখ হাসিনা-আওয়ামী লীগ হয়ে শেষমেশ বঙ্গবন্ধুর চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধারপর্বে এসে সমাপ্ত হয়।বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে কথা না বললে এদের আত্মার শান্তি হয় না। সলিড একটা ঘুম হয় না।
স্বদেশনিবাসী এবং বিদেশপ্রবাসী এলিট শ্রেণির প্রতিনিধিরা টুঙ্গিপাড়া নামের অখ্যাত একটা গ্রাম থেকে উঠে আসা মৃত্তিকাসংলগ্ন নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে মেনে নিতে পারেন না। শ্রেণিগত একটা দূরত্ব অনুভব করা বা সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্সে ভুগতে থাকা এই শ্রেণি তাই চিরশত্রুভাবাপন্ন বঙ্গবন্ধুর প্রতি।
এই শ্রেণির সঙ্গে আরেকটি শ্রেণির খুব মিল। এরাও শিক্ষিত, ইংরেজিতে পক্ব-দক্ষ। দর্শন-রাজনীতি, ধর্ম-ইতিহাস, সাহিত্য-পেইন্টিংস, মার্ক্স-অ্যাঙ্গেলস-ফুকো-দেরিদা, ন্যারেটিভ-রিকনসিলিয়েশন-হেজিমনি থিওরি কপচানোতেও অতিশয় দক্ষ। দিন শেষে এরাও হাসিনা-আওয়ামী লীগ ও মুজিববিদ্বেষী। সরকারের সমালোচনা করা যেতেই পারে; কিন্তু অযৌক্তিক এত বঙ্গবন্ধুবিদ্বেষ কেন?
আপাতশিক্ষিত ইংরেজি জানা বঙ্গীয় এলিট সোসাইটি এবং শিল্প ও দর্শনবোদ্ধা বঙ্গসন্তানদের এই দুই শ্রেণির সঙ্গে প্রায়ই দেখা হয়ে যায়। খুব দ্রুতই আমি এদের সঙ্গ ত্যাগে কামিয়াব হই। প্রবাসী বাঙালিদের এ রকম আড্ডা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। তারপরও নিয়তি আমার পিছু ছাড়ে না। কী করে যেন মোলাকাত হয়ে যায় এদের সঙ্গে।
০৩. সেবা প্রকাশনীর বিখ্যাত অনুবাদক-লেখক রওশন জামিল ছিলেন ঢাকায় আমার মহল্লাকা বড়া ভাই। আমি থাকতাম ওয়ারীর হেয়ার স্ট্রিটে আর তিনি ঠাটারিবাজার বিসিসি রোডে। রওশন ভাই আমার বহু আগেই থিতু হয়েছেন নিউইয়র্কে। টেলিফোনে তাঁর সঙ্গে প্রায়ই কথা হয়। ফেসবুকে তাঁর স্ট্যাটাস দেখি নিয়মিত।
নিউইয়র্কপ্রবাসী আবেদিন কাদের একসময় বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিউজ প্রডিউসার ছিলেন। বিদ্বান মেধাবী এই মানুষ নিউইয়র্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। তিনিও মোটামুটি সক্রিয়, ফেসবুকে। এই দুজন জ্ঞানী মানুষ আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড।
বছর তিনেক আগে, রওশন জামিল ফেসবুকে নিজের একটি স্ট্যাটাসে লিখলেন, ‘বদরুদ্দীন উমরের বুদ্ধিজীবিতার বড় কৃতিত্ব, তিনি তাঁর বুঝের সঙ্গে আপস করেননি কখনো। ক্ষমতার খয়ের খাঁগিরি করেননি, যেটা তাঁর সমসাময়িকেরা কম-বেশি প্রায় সবাই করেছেন, করে যাচ্ছেন। বদরুদ্দীন উমরের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অমত করতে পারি, কিন্তু তাঁর সততাকে সালাম ঠুকতেই হয়।’
শিক্ষিত এলিট বদরুদ্দীন উমরের বুদ্ধিবৃত্তিক সততা নিয়ে আমার দ্বিমত ছিল। আমি তাই মন্তব্যের ঘরে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলাম এইভাবে—‘বদরুদ্দীন উমরের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অমত করতে পারি, কিন্তু তাঁর সততাকে সালাম ঠুকতেই হয়।—সততা?’
আবেদিন কাদের প্রত্যুত্তরে বললেন, ‘Yes, honest, I consider him intellectually honest...’
সাধারণত ফেসবুকে আমি কোনো বাহাসেই অংশ নিই না। কম্পোজ বা টাইপিংয়ে আলস্যের কারণে এমনিতেই আমার প্রচুর পরিকল্পনা অলিখিতই থেকে যায়। যতটা সময় খরচ করে আমি একটা বাহাস করব, টাইপ করব, ততটা সময় ব্যয় করলে অনায়াসেই একটা ছড়া লেখা হয়ে যায়। আমি তাই দ্বিতীয়টাই প্রেফার করি। শামিল হই না তর্কে।
কিন্তু আবেদিন কাদেরের উত্তরটা, বিশেষ করে ‘I consider him intellectually honest’ বাক্যটির জবাব দেওয়া জরুরি মনে করে মূল স্ট্যাটাসদাতা রওশন জামিলকে ফোন করে বিষয়টা ব্যাখ্যা করি।
জনাব বদরুদ্দীন উমরের একটা আত্মকথা ধরনের স্মৃতিগদ্য ঢাকার ২০০০ কিংবা সাপ্তাহিক-এ খুব আগ্রহ নিয়ে পড়েছিলাম। একটি পর্বে তিনি উনসত্তরের ঢাকার বিশেষ একটি দিনের বর্ণনা করছিলেন। নবাবপুর রোডের কম দামি হোটেলের গমগমে ভিড়ের আড্ডায় সাধারণ মধ্যবিত্ত নাগরিকদের চিন্তা-চেতনা, স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষার টুকরো টুকরো ঘটনার বয়ান তিনি করছিলেন।
নবাবপুর রোড থেকে জিন্নাহ অ্যাভিনিউ (বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ), বায়তুল মোকাররম স্টেডিয়াম অঞ্চলের বিপুল জনস্রোতের ডিটেইল একটি চিত্র তিনি ফুটিয়ে তুলছিলেন। সেদিনের বিকেলের উল্লেখযোগ্য প্রায় সবকিছুই উঠে এসেছিল তাঁর রচনায়, শুধু একটি বিষয় ছাড়া।সবকিছুই অবলোকন করেছিলেন তিনি সেই বিকেলের, শুধু একটি বিষয় ছাড়া। আর সেটা হচ্ছে—ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদের শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেওয়া। উনসত্তরের ২৩ ফেব্রুয়ারির সেই বিকেলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল সেটা।
এত কিছু আমি কমেন্টে লিখতে অনাগ্রহী বলে টেলিফোনে রওশন জামিলকে খুলে বলেছিলাম। রওশন সে কথা উল্লেখ করেছিলেন তাঁর প্রত্যুত্তরের ঘরে– ‘কাল রিটনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ওর আপত্তির জায়গা বদরুদ্দীন উমরের বৌদ্ধিক চর্চায় শেখ মুজিবুর রহমানকে কৃতিত্ব না দেওয়া বা যেমন একটি দিনের তাৎপর্য ব্যাখ্যায় বা তাঁর ডায়েরিধর্মী লেখায় সাধারণ সব ঘটনার কথা এসেছে, কিন্তু সেদিন যে শেখ মুজিবকে পল্টন ময়দানে “বঙ্গবন্ধু” উপাধি দেওয়া হয়েছিল, সেই ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়নি; যা এ দেশের প্রেক্ষাপটে একটা ঐতিহাসিক ঘটনা ছিল। সে কারণে রিটন বলতে চাইছে, উমরের “মুজিববিদ্বেষ” তাঁর (উমরের) বৌদ্ধিক সততার পরিচয় দেয় না।’
রওশনের এই মন্তব্যের জবাবে আবেদিন লিখলেন, ‘সেটা রিটন বলতেই পারেন। কিন্তু তাতে উমরের বুদ্ধিবৃত্তিক সততা প্রশ্নবিদ্ধ হয় না। একজন মানুষ বঙ্গবন্ধুকে তাঁর জীবনের কোনো লেখায় উল্লেখ না করেও বৌদ্ধিকভাবে সৎ থাকতে পারেন।’
আবেদিনের জবাবের প্রত্যুত্তরে আমি শুধু লিখলাম, ‘মারহাবা!’ ‘কিন্তু তাতে উমরের বুদ্ধিবৃত্তিক সততা প্রশ্নবিদ্ধ হয় না’ শোনার পরে ‘মারহাবা’ বলা ছাড়া কী আর বলতে পারতাম সংক্ষেপে!
০৪. কিছুদিন আগে নায়াগ্রা জলপ্রপাত এলাকার একটা চমৎকার বুকশপে গিয়েছিলাম বন্ধু দিনু বিল্লাহর সঙ্গে। ওখানে একটা র্যাকে পেঙ্গুইন সাইজের ছোট্ট একটা বইয়ের দিকে তাকাতেই প্রচ্ছদে মুদ্রিত BANGLADESH শব্দটায় আমার চোখ আটকে গেল। বইটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখে খুবই আগ্রহী হয়ে উঠলাম।
বইটির নাম The essential guide to customs & culture BANGLADESH. বইটি CULTURE SMART সিরিজের একটি প্রকাশনা। প্রকাশিত হয়েছে লন্ডনভিত্তিক ব্রিটিশ লাইব্রেরি থেকে। লিখেছেন লেখক-সাংবাদিক ঊর্মি রহমান। আকর্ষণীয় মেকআপ গেটআপ-সমৃদ্ধ ১৬৮ পৃষ্ঠার চমৎকার এই বইয়ে ৯টি চ্যাপ্টারে বিভিন্নশিরোনামে অনেক এন্ট্রি আছে।
প্রতিটি অধ্যায়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি ভুক্তি। আছে পাতায় পাতায় প্রাসঙ্গিক অনেক ছবি। যেমন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বর্ণনার সঙ্গে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ছবি আছে। কিন্তু সত্তরের নির্বাচনে শেখ মুজিবের বিপুল বিজয় এবং ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ কিংবা ২৫ মার্চ রাতে গ্রেপ্তারের আগে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বর্ণনায় শেখ মুজিবের কোনো ছবি নেই। অথচ প্রফেসর ইউনূসের ছবি আছে গ্রামীণ ব্যাংকের বর্ণনায়।
বইটির সঙ্গে ব্যবহারের জন্য প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয় ছবিগুলো সরবরাহ করেছেন কে? অনুমান করি, স্বয়ং লেখক নিশ্চয়ই। সেটাই হওয়ার কথা। তাই যদি হয়, তবে আমার প্রশ্ন—বঙ্গবন্ধুর ছবি কই? বাংলাদেশের পরিচিতিমূলক একটা গাইডবই বা পুস্তিকা বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাড়া কি পরিপূর্ণ হয়? হয় না। বাংলাদেশের নামোচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গেই যে মানুষের ছবি সবার আগে দীপ্যমান হয়ে ওঠে, সেটি শেখ মুজিবুর রহমানের, বাংলাদেশের স্থপতির। পায়ে কাদামাটি মাখা যিনি উঠে এসেছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মৃত্তিকা থেকে। বঙ্গবন্ধু ও সাম্প্রতিক বাংলাদেশ বিষয়ে তথাকথিত শিক্ষিতদের এই বিদ্বেষপ্রবণতাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখতেই হবে আগামীর বাংলাদেশ নিয়ে ভাবতে গেলে।
কোনো রূপকথার দেশ নয় আমার বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৩০ লাখ শহীদের রক্তস্রোতের ওপর জন্ম হয়েছে বাংলাদেশ নামের স্বাধীন দেশটির। চার বছরের মাথায় স্বাধীনতার বিরুদ্ধ পক্ষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর স্বাধীন বাংলাদেশ ইউটার্ন নিয়েছিল পাকিস্তানের দিকে। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধীরা আবার একটা পাকিস্তান পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়েছিল। এরপর টানা একুশ বছর ধরে বঙ্গবন্ধু ছিলেন নির্বাসিত।
শেখ মুজিবুর রহমান নামটা প্রায় মুছেই ফেলা হয়েছিল ইতিহাস থেকে। সংবিধানকে কেটে-ছিঁড়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের দেওয়া হয়েছিল দায়মুক্তি। একাত্তরের চিহ্নিত ঘাতক-রাজাকার-আলবদরদের গাড়িতে উড়ছিল ৩০ লাখ শহীদের রক্তস্নাত লাল-সবুজ পতাকাটি।
একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে পাল্টে যেতে থাকে দৃশ্যপট। আবার একটা ইউটার্ন নেয় বাংলাদেশ। এবার স্বাধীনতার দিকে। মিনি পাকিস্তান পুনরায় বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়। জাতির পিতার খুনিদের বিচারকাজ শুরু হয়। ধাপে ধাপে দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়ায় আদালত মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন খুনিদের। সেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মাধ্যমে মোচন করা সম্ভব হয় বাংলাদেশের কপালে লেপ্টে থাকা কলঙ্কতিলকটি। কলঙ্কমুক্ত হয় বাংলাদেশ।
অতঃপর মানবতাবিরোধী বেশ কয়েকজন শীর্ষ অপরাধীর বিচার এবং আদালতের রায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে আরেক দফা শুদ্ধ হয় বাংলাদেশ। কিন্তু একাত্তরের পরাজিত শক্তির বিনাশ হয় না। দালাল-রাজাকারদের ছানাপোনা সক্রিয় থাকে রাজনীতিতে। ফলে পরিস্থিতি মোটেও স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অনুকূলে থাকে না
একাত্তরের পরাজিত শক্তির ছানাপোনাদের সঙ্গে আড়াই কলম ইংরেজি জানা শিক্ষিত এলিট শ্রেণিটি সংহতি প্রকাশ করে প্রায়ই বিভিন্ন ব্যানারের আনুষ্ঠানিকতায়। স্যাটেলাইট টিভির রাতের টক শোগুলোতে তারা নানান থিওরি কপচায়। এদের পোশাকি নাম সুশীল।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, ৩০ লাখ মানুষের আত্মত্যাগ এবং তার বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার ব্যাখ্যায় তারা শৃগালচাতুর্যে ‘ন্যারেটিভ-রিকনসিলিয়েশন-ডায়ালেক্ট-হেজিমনি’ ইত্যাকার শব্দের তুবড়ি ছুটিয়ে এমন একটা সিচুয়েশন তৈরি করে যে তখন খুব সাধারণ মানুষের কাছে, এমনকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী চলচ্চিত্র ‘মেহেরজান’কেও মনে হয় মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র।
যে চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে—একাত্তরে পাকিস্তানি সৈনিকদের হত্যালীলা ও পৈশাচিক ধর্ষণকালে ধর্ষক পাকিস্তানি সৈন্যের প্রেমে আকুল বাঙালি মেয়েটি তার বাবার কাছে কান্নাকাটি করে বলছে, ‘বাবা, আমাকে সৈন্য এনে দাও...সৈন্য এনে দাও!’
একাত্তরের পরাজিত শক্তির ছানাপোনা এবং আড়াই কলম ইংরেজি জানা বাংলাদেশবিরোধী এই দুই শ্রেণিকে সঠিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রতিহত করার মাধ্যমেই এগিয়ে যেতে হবে আগামী দিনের বাংলাদেশকে।
একাত্তরের ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আসা বাংলাদেশ, পঁচাত্তরের পর পাকিস্তানের দিকে ক্ষিপ্রগতিতে ধাবমান বাংলাদেশ যে ছিয়ানব্বইয়ের পর ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, সেই অগ্রযাত্রা মাঝখানে বছরকয়েক বিপর্যস্ত হয়ে পুনরায় সঠিক ট্র্যাকে চলমান। বাংলাদেশ এখন আর ‘বটমলেস বাস্কেট’ নয়।
আমি সেই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, যে বাংলাদেশে একটি শিশুও অনাহারে থাকবে না। প্রত্যেক শিশুর পরনে পোশাক থাকবে। প্রত্যেক শিশু বাসযোগ্য ঘর পাবে। প্রত্যেক শিশু স্কুলে যাবে, অসুস্থ হলে চিকিৎসা পাবে। যদি একটি শিশুও ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমুতে যায়, তাহলে আমাদের সমস্ত অর্জন ম্লান হয়ে যাবে। একজন শিশুসাহিত্যিক হিসেবে প্রত্যেক শিশুর পাঁচটি মৌলিক অধিকার নিশ্চিত দেখতে চাই আমি।
অটোয়া, ২০ জুলাই ২০২৩
লেখক: শিশুসাহিত্যিক
লুৎফর রহমান রিটন

ভবিষ্যতে কেমন বাংলাদেশ চাই, সে বিষয়ে বলতে গেলে প্রথমে বাংলাদেশ থেকে প্রায় সাড়ে বারো হাজার কিলোমিটার দূরের একটি দেশে আমার যাপিত জীবন, সাম্প্রতিক ভৌগোলিক অবস্থান, পরিপার্শ্ব এবং বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতাটা তুলে ধরতে হবে।
০২. ২২ বছর হতে চলল কানাডায় থিতু হয়েছি। তার আগেই ইংল্যান্ড-জার্মানি-ফ্রান্স-আমেরিকা-জাপানসহ পৃথিবীর নানা দেশের নানা শহরে সপরিবারে ভ্রমণ এবং স্বল্পকালীন অবস্থানের সুবাদে একটা বিষয় জানা হয়ে গিয়েছিল, আর তা হচ্ছে স্বদেশনিবাসী এবং বিদেশপ্রবাসী বাঙালিদের একটা দৃষ্টিগ্রাহ্য অংশই বঙ্গবন্ধুবিদ্বেষী। আবার এই বঙ্গবন্ধুবিদ্বেষী বাঙালিদের সিংহভাগই ইংরেজি জানা।
আড়াই কলম ইংরেজি জানা বাঙালিদের বঙ্গবন্ধুবিদ্বেষের কারণ খুঁজতে গিয়ে লক্ষ করেছি—জামায়াত-বিএনপিজাত পাকিস্তানিদের ছানাপোনারা বংশানুক্রমিকভাবেই উত্তরাধিকারটি বহন করছে। কিন্তু তার বাইরে আপাতশিক্ষিত একটা এলিট শ্রেণির সদস্যরাও একই রোগে আক্রান্ত। এই শ্রেণিটা নীরব ঘাতকের মতো। সরাসরি জামায়াতি না হলেও এরা প্রধানত বঙ্গবন্ধুবিদ্বেষী, তারপর শেখ হাসিনাবিরোধী এবং দিন শেষে প্রচণ্ড আওয়ামীবিরোধী। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামীবিরোধিতা করতে করতে একপর্যায়ে ওরা জামায়াতিদের কোলে গিয়ে সমর্পিত হয়।
নিজের অবস্থান আরেকটি মহাদেশে হলেও জাতীয় নির্বাচনে ওরা জামায়াত-বিএনপির রোলটাই প্লে করে। স্বদেশে থাকা আত্মীয়-পরিজনের কাছে টাকা পাঠানোর পাশাপাশি এরা আওয়ামী লীগকে ভোট না দিয়ে বিএনপি, প্রয়োজনে জামায়াত প্রার্থীকে জয়ী করার নির্দেশ পাঠায়। আসুক বিএনপি, আসুক জামায়াত; কিন্তু আওয়ামী লীগকে ঠেকাতেই হবে। প্রয়োজনে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের রাষ্ট্রক্ষমতায় বসাতে হবে; কিন্তু আওয়ামী লীগকে ঠেকাও।
আপাতশিক্ষিত এলিট শ্রেণির প্রতিনিধিত্বকারী স্বদেশনিবাসী এবং বিদেশপ্রবাসীদের অধিকাংশই ধনাঢ্য। পরিপাটি পোশাক কিংবা ঝাঁ-চকচকে গাড়ি এবং অভিজাত এলাকায় দামি বাড়িতে এদের বসবাস। পেশায় এরা প্রায়শ সফল, সরকারি উচ্চ পদে আসীন অথবা বিশাল এনজিও কর্তা। প্রতিরাতে স্যুট-কোট-টাই, বাহারি পাঞ্জাবি কিংবা শাড়ি-টিপ-চশমা পরে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টক শোতে এরা উপস্থিত হয়। তারপর ইনিয়ে-বিনিয়ে গরু রচনাকে নদীতে নিয়ে না ফেলা পর্যন্ত এদের প্যারেড শেষ হয় না। প্রবাসেও সক্রিয় এদের প্রতিনিধিরা।
প্রবাসী বাঙালি পরিবারের একান্ত আড্ডা বা পার্টিতেও এরা পরস্পর ইংরেজিতে কথা বলে। এই শ্রেণির পালোয়ানরা তাদের বাতচিতের বিষয়বস্তু হিসেবে খুব দ্রুতই বাংলাদেশ-শেখ হাসিনা-আওয়ামী লীগ হয়ে শেষমেশ বঙ্গবন্ধুর চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধারপর্বে এসে সমাপ্ত হয়।বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে কথা না বললে এদের আত্মার শান্তি হয় না। সলিড একটা ঘুম হয় না।
স্বদেশনিবাসী এবং বিদেশপ্রবাসী এলিট শ্রেণির প্রতিনিধিরা টুঙ্গিপাড়া নামের অখ্যাত একটা গ্রাম থেকে উঠে আসা মৃত্তিকাসংলগ্ন নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে মেনে নিতে পারেন না। শ্রেণিগত একটা দূরত্ব অনুভব করা বা সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্সে ভুগতে থাকা এই শ্রেণি তাই চিরশত্রুভাবাপন্ন বঙ্গবন্ধুর প্রতি।
এই শ্রেণির সঙ্গে আরেকটি শ্রেণির খুব মিল। এরাও শিক্ষিত, ইংরেজিতে পক্ব-দক্ষ। দর্শন-রাজনীতি, ধর্ম-ইতিহাস, সাহিত্য-পেইন্টিংস, মার্ক্স-অ্যাঙ্গেলস-ফুকো-দেরিদা, ন্যারেটিভ-রিকনসিলিয়েশন-হেজিমনি থিওরি কপচানোতেও অতিশয় দক্ষ। দিন শেষে এরাও হাসিনা-আওয়ামী লীগ ও মুজিববিদ্বেষী। সরকারের সমালোচনা করা যেতেই পারে; কিন্তু অযৌক্তিক এত বঙ্গবন্ধুবিদ্বেষ কেন?
আপাতশিক্ষিত ইংরেজি জানা বঙ্গীয় এলিট সোসাইটি এবং শিল্প ও দর্শনবোদ্ধা বঙ্গসন্তানদের এই দুই শ্রেণির সঙ্গে প্রায়ই দেখা হয়ে যায়। খুব দ্রুতই আমি এদের সঙ্গ ত্যাগে কামিয়াব হই। প্রবাসী বাঙালিদের এ রকম আড্ডা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। তারপরও নিয়তি আমার পিছু ছাড়ে না। কী করে যেন মোলাকাত হয়ে যায় এদের সঙ্গে।
০৩. সেবা প্রকাশনীর বিখ্যাত অনুবাদক-লেখক রওশন জামিল ছিলেন ঢাকায় আমার মহল্লাকা বড়া ভাই। আমি থাকতাম ওয়ারীর হেয়ার স্ট্রিটে আর তিনি ঠাটারিবাজার বিসিসি রোডে। রওশন ভাই আমার বহু আগেই থিতু হয়েছেন নিউইয়র্কে। টেলিফোনে তাঁর সঙ্গে প্রায়ই কথা হয়। ফেসবুকে তাঁর স্ট্যাটাস দেখি নিয়মিত।
নিউইয়র্কপ্রবাসী আবেদিন কাদের একসময় বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিউজ প্রডিউসার ছিলেন। বিদ্বান মেধাবী এই মানুষ নিউইয়র্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। তিনিও মোটামুটি সক্রিয়, ফেসবুকে। এই দুজন জ্ঞানী মানুষ আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড।
বছর তিনেক আগে, রওশন জামিল ফেসবুকে নিজের একটি স্ট্যাটাসে লিখলেন, ‘বদরুদ্দীন উমরের বুদ্ধিজীবিতার বড় কৃতিত্ব, তিনি তাঁর বুঝের সঙ্গে আপস করেননি কখনো। ক্ষমতার খয়ের খাঁগিরি করেননি, যেটা তাঁর সমসাময়িকেরা কম-বেশি প্রায় সবাই করেছেন, করে যাচ্ছেন। বদরুদ্দীন উমরের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অমত করতে পারি, কিন্তু তাঁর সততাকে সালাম ঠুকতেই হয়।’
শিক্ষিত এলিট বদরুদ্দীন উমরের বুদ্ধিবৃত্তিক সততা নিয়ে আমার দ্বিমত ছিল। আমি তাই মন্তব্যের ঘরে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলাম এইভাবে—‘বদরুদ্দীন উমরের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অমত করতে পারি, কিন্তু তাঁর সততাকে সালাম ঠুকতেই হয়।—সততা?’
আবেদিন কাদের প্রত্যুত্তরে বললেন, ‘Yes, honest, I consider him intellectually honest...’
সাধারণত ফেসবুকে আমি কোনো বাহাসেই অংশ নিই না। কম্পোজ বা টাইপিংয়ে আলস্যের কারণে এমনিতেই আমার প্রচুর পরিকল্পনা অলিখিতই থেকে যায়। যতটা সময় খরচ করে আমি একটা বাহাস করব, টাইপ করব, ততটা সময় ব্যয় করলে অনায়াসেই একটা ছড়া লেখা হয়ে যায়। আমি তাই দ্বিতীয়টাই প্রেফার করি। শামিল হই না তর্কে।
কিন্তু আবেদিন কাদেরের উত্তরটা, বিশেষ করে ‘I consider him intellectually honest’ বাক্যটির জবাব দেওয়া জরুরি মনে করে মূল স্ট্যাটাসদাতা রওশন জামিলকে ফোন করে বিষয়টা ব্যাখ্যা করি।
জনাব বদরুদ্দীন উমরের একটা আত্মকথা ধরনের স্মৃতিগদ্য ঢাকার ২০০০ কিংবা সাপ্তাহিক-এ খুব আগ্রহ নিয়ে পড়েছিলাম। একটি পর্বে তিনি উনসত্তরের ঢাকার বিশেষ একটি দিনের বর্ণনা করছিলেন। নবাবপুর রোডের কম দামি হোটেলের গমগমে ভিড়ের আড্ডায় সাধারণ মধ্যবিত্ত নাগরিকদের চিন্তা-চেতনা, স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষার টুকরো টুকরো ঘটনার বয়ান তিনি করছিলেন।
নবাবপুর রোড থেকে জিন্নাহ অ্যাভিনিউ (বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ), বায়তুল মোকাররম স্টেডিয়াম অঞ্চলের বিপুল জনস্রোতের ডিটেইল একটি চিত্র তিনি ফুটিয়ে তুলছিলেন। সেদিনের বিকেলের উল্লেখযোগ্য প্রায় সবকিছুই উঠে এসেছিল তাঁর রচনায়, শুধু একটি বিষয় ছাড়া।সবকিছুই অবলোকন করেছিলেন তিনি সেই বিকেলের, শুধু একটি বিষয় ছাড়া। আর সেটা হচ্ছে—ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদের শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেওয়া। উনসত্তরের ২৩ ফেব্রুয়ারির সেই বিকেলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল সেটা।
এত কিছু আমি কমেন্টে লিখতে অনাগ্রহী বলে টেলিফোনে রওশন জামিলকে খুলে বলেছিলাম। রওশন সে কথা উল্লেখ করেছিলেন তাঁর প্রত্যুত্তরের ঘরে– ‘কাল রিটনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ওর আপত্তির জায়গা বদরুদ্দীন উমরের বৌদ্ধিক চর্চায় শেখ মুজিবুর রহমানকে কৃতিত্ব না দেওয়া বা যেমন একটি দিনের তাৎপর্য ব্যাখ্যায় বা তাঁর ডায়েরিধর্মী লেখায় সাধারণ সব ঘটনার কথা এসেছে, কিন্তু সেদিন যে শেখ মুজিবকে পল্টন ময়দানে “বঙ্গবন্ধু” উপাধি দেওয়া হয়েছিল, সেই ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়নি; যা এ দেশের প্রেক্ষাপটে একটা ঐতিহাসিক ঘটনা ছিল। সে কারণে রিটন বলতে চাইছে, উমরের “মুজিববিদ্বেষ” তাঁর (উমরের) বৌদ্ধিক সততার পরিচয় দেয় না।’
রওশনের এই মন্তব্যের জবাবে আবেদিন লিখলেন, ‘সেটা রিটন বলতেই পারেন। কিন্তু তাতে উমরের বুদ্ধিবৃত্তিক সততা প্রশ্নবিদ্ধ হয় না। একজন মানুষ বঙ্গবন্ধুকে তাঁর জীবনের কোনো লেখায় উল্লেখ না করেও বৌদ্ধিকভাবে সৎ থাকতে পারেন।’
আবেদিনের জবাবের প্রত্যুত্তরে আমি শুধু লিখলাম, ‘মারহাবা!’ ‘কিন্তু তাতে উমরের বুদ্ধিবৃত্তিক সততা প্রশ্নবিদ্ধ হয় না’ শোনার পরে ‘মারহাবা’ বলা ছাড়া কী আর বলতে পারতাম সংক্ষেপে!
০৪. কিছুদিন আগে নায়াগ্রা জলপ্রপাত এলাকার একটা চমৎকার বুকশপে গিয়েছিলাম বন্ধু দিনু বিল্লাহর সঙ্গে। ওখানে একটা র্যাকে পেঙ্গুইন সাইজের ছোট্ট একটা বইয়ের দিকে তাকাতেই প্রচ্ছদে মুদ্রিত BANGLADESH শব্দটায় আমার চোখ আটকে গেল। বইটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখে খুবই আগ্রহী হয়ে উঠলাম।
বইটির নাম The essential guide to customs & culture BANGLADESH. বইটি CULTURE SMART সিরিজের একটি প্রকাশনা। প্রকাশিত হয়েছে লন্ডনভিত্তিক ব্রিটিশ লাইব্রেরি থেকে। লিখেছেন লেখক-সাংবাদিক ঊর্মি রহমান। আকর্ষণীয় মেকআপ গেটআপ-সমৃদ্ধ ১৬৮ পৃষ্ঠার চমৎকার এই বইয়ে ৯টি চ্যাপ্টারে বিভিন্নশিরোনামে অনেক এন্ট্রি আছে।
প্রতিটি অধ্যায়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি ভুক্তি। আছে পাতায় পাতায় প্রাসঙ্গিক অনেক ছবি। যেমন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বর্ণনার সঙ্গে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ছবি আছে। কিন্তু সত্তরের নির্বাচনে শেখ মুজিবের বিপুল বিজয় এবং ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ কিংবা ২৫ মার্চ রাতে গ্রেপ্তারের আগে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বর্ণনায় শেখ মুজিবের কোনো ছবি নেই। অথচ প্রফেসর ইউনূসের ছবি আছে গ্রামীণ ব্যাংকের বর্ণনায়।
বইটির সঙ্গে ব্যবহারের জন্য প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয় ছবিগুলো সরবরাহ করেছেন কে? অনুমান করি, স্বয়ং লেখক নিশ্চয়ই। সেটাই হওয়ার কথা। তাই যদি হয়, তবে আমার প্রশ্ন—বঙ্গবন্ধুর ছবি কই? বাংলাদেশের পরিচিতিমূলক একটা গাইডবই বা পুস্তিকা বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাড়া কি পরিপূর্ণ হয়? হয় না। বাংলাদেশের নামোচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গেই যে মানুষের ছবি সবার আগে দীপ্যমান হয়ে ওঠে, সেটি শেখ মুজিবুর রহমানের, বাংলাদেশের স্থপতির। পায়ে কাদামাটি মাখা যিনি উঠে এসেছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মৃত্তিকা থেকে। বঙ্গবন্ধু ও সাম্প্রতিক বাংলাদেশ বিষয়ে তথাকথিত শিক্ষিতদের এই বিদ্বেষপ্রবণতাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখতেই হবে আগামীর বাংলাদেশ নিয়ে ভাবতে গেলে।
কোনো রূপকথার দেশ নয় আমার বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৩০ লাখ শহীদের রক্তস্রোতের ওপর জন্ম হয়েছে বাংলাদেশ নামের স্বাধীন দেশটির। চার বছরের মাথায় স্বাধীনতার বিরুদ্ধ পক্ষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর স্বাধীন বাংলাদেশ ইউটার্ন নিয়েছিল পাকিস্তানের দিকে। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধীরা আবার একটা পাকিস্তান পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়েছিল। এরপর টানা একুশ বছর ধরে বঙ্গবন্ধু ছিলেন নির্বাসিত।
শেখ মুজিবুর রহমান নামটা প্রায় মুছেই ফেলা হয়েছিল ইতিহাস থেকে। সংবিধানকে কেটে-ছিঁড়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের দেওয়া হয়েছিল দায়মুক্তি। একাত্তরের চিহ্নিত ঘাতক-রাজাকার-আলবদরদের গাড়িতে উড়ছিল ৩০ লাখ শহীদের রক্তস্নাত লাল-সবুজ পতাকাটি।
একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে পাল্টে যেতে থাকে দৃশ্যপট। আবার একটা ইউটার্ন নেয় বাংলাদেশ। এবার স্বাধীনতার দিকে। মিনি পাকিস্তান পুনরায় বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়। জাতির পিতার খুনিদের বিচারকাজ শুরু হয়। ধাপে ধাপে দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়ায় আদালত মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন খুনিদের। সেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মাধ্যমে মোচন করা সম্ভব হয় বাংলাদেশের কপালে লেপ্টে থাকা কলঙ্কতিলকটি। কলঙ্কমুক্ত হয় বাংলাদেশ।
অতঃপর মানবতাবিরোধী বেশ কয়েকজন শীর্ষ অপরাধীর বিচার এবং আদালতের রায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে আরেক দফা শুদ্ধ হয় বাংলাদেশ। কিন্তু একাত্তরের পরাজিত শক্তির বিনাশ হয় না। দালাল-রাজাকারদের ছানাপোনা সক্রিয় থাকে রাজনীতিতে। ফলে পরিস্থিতি মোটেও স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অনুকূলে থাকে না
একাত্তরের পরাজিত শক্তির ছানাপোনাদের সঙ্গে আড়াই কলম ইংরেজি জানা শিক্ষিত এলিট শ্রেণিটি সংহতি প্রকাশ করে প্রায়ই বিভিন্ন ব্যানারের আনুষ্ঠানিকতায়। স্যাটেলাইট টিভির রাতের টক শোগুলোতে তারা নানান থিওরি কপচায়। এদের পোশাকি নাম সুশীল।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, ৩০ লাখ মানুষের আত্মত্যাগ এবং তার বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার ব্যাখ্যায় তারা শৃগালচাতুর্যে ‘ন্যারেটিভ-রিকনসিলিয়েশন-ডায়ালেক্ট-হেজিমনি’ ইত্যাকার শব্দের তুবড়ি ছুটিয়ে এমন একটা সিচুয়েশন তৈরি করে যে তখন খুব সাধারণ মানুষের কাছে, এমনকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী চলচ্চিত্র ‘মেহেরজান’কেও মনে হয় মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র।
যে চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে—একাত্তরে পাকিস্তানি সৈনিকদের হত্যালীলা ও পৈশাচিক ধর্ষণকালে ধর্ষক পাকিস্তানি সৈন্যের প্রেমে আকুল বাঙালি মেয়েটি তার বাবার কাছে কান্নাকাটি করে বলছে, ‘বাবা, আমাকে সৈন্য এনে দাও...সৈন্য এনে দাও!’
একাত্তরের পরাজিত শক্তির ছানাপোনা এবং আড়াই কলম ইংরেজি জানা বাংলাদেশবিরোধী এই দুই শ্রেণিকে সঠিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রতিহত করার মাধ্যমেই এগিয়ে যেতে হবে আগামী দিনের বাংলাদেশকে।
একাত্তরের ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আসা বাংলাদেশ, পঁচাত্তরের পর পাকিস্তানের দিকে ক্ষিপ্রগতিতে ধাবমান বাংলাদেশ যে ছিয়ানব্বইয়ের পর ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, সেই অগ্রযাত্রা মাঝখানে বছরকয়েক বিপর্যস্ত হয়ে পুনরায় সঠিক ট্র্যাকে চলমান। বাংলাদেশ এখন আর ‘বটমলেস বাস্কেট’ নয়।
আমি সেই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, যে বাংলাদেশে একটি শিশুও অনাহারে থাকবে না। প্রত্যেক শিশুর পরনে পোশাক থাকবে। প্রত্যেক শিশু বাসযোগ্য ঘর পাবে। প্রত্যেক শিশু স্কুলে যাবে, অসুস্থ হলে চিকিৎসা পাবে। যদি একটি শিশুও ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমুতে যায়, তাহলে আমাদের সমস্ত অর্জন ম্লান হয়ে যাবে। একজন শিশুসাহিত্যিক হিসেবে প্রত্যেক শিশুর পাঁচটি মৌলিক অধিকার নিশ্চিত দেখতে চাই আমি।
অটোয়া, ২০ জুলাই ২০২৩
লেখক: শিশুসাহিত্যিক

ভবিষ্যতে কেমন বাংলাদেশ চাই, সে বিষয়ে বলতে গেলে প্রথমে বাংলাদেশ থেকে প্রায় সাড়ে বারো হাজার কিলোমিটার দূরের একটি দেশে আমার যাপিত জীবন, সাম্প্রতিক ভৌগোলিক অবস্থান, পরিপার্শ্ব এবং বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতাটা তুলে ধরতে হবে।
০২. ২২ বছর হতে চলল কানাডায় থিতু হয়েছি। তার আগেই ইংল্যান্ড-জার্মানি-ফ্রান্স-আমেরিকা-জাপানসহ পৃথিবীর নানা দেশের নানা শহরে সপরিবারে ভ্রমণ এবং স্বল্পকালীন অবস্থানের সুবাদে একটা বিষয় জানা হয়ে গিয়েছিল, আর তা হচ্ছে স্বদেশনিবাসী এবং বিদেশপ্রবাসী বাঙালিদের একটা দৃষ্টিগ্রাহ্য অংশই বঙ্গবন্ধুবিদ্বেষী। আবার এই বঙ্গবন্ধুবিদ্বেষী বাঙালিদের সিংহভাগই ইংরেজি জানা।
আড়াই কলম ইংরেজি জানা বাঙালিদের বঙ্গবন্ধুবিদ্বেষের কারণ খুঁজতে গিয়ে লক্ষ করেছি—জামায়াত-বিএনপিজাত পাকিস্তানিদের ছানাপোনারা বংশানুক্রমিকভাবেই উত্তরাধিকারটি বহন করছে। কিন্তু তার বাইরে আপাতশিক্ষিত একটা এলিট শ্রেণির সদস্যরাও একই রোগে আক্রান্ত। এই শ্রেণিটা নীরব ঘাতকের মতো। সরাসরি জামায়াতি না হলেও এরা প্রধানত বঙ্গবন্ধুবিদ্বেষী, তারপর শেখ হাসিনাবিরোধী এবং দিন শেষে প্রচণ্ড আওয়ামীবিরোধী। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামীবিরোধিতা করতে করতে একপর্যায়ে ওরা জামায়াতিদের কোলে গিয়ে সমর্পিত হয়।
নিজের অবস্থান আরেকটি মহাদেশে হলেও জাতীয় নির্বাচনে ওরা জামায়াত-বিএনপির রোলটাই প্লে করে। স্বদেশে থাকা আত্মীয়-পরিজনের কাছে টাকা পাঠানোর পাশাপাশি এরা আওয়ামী লীগকে ভোট না দিয়ে বিএনপি, প্রয়োজনে জামায়াত প্রার্থীকে জয়ী করার নির্দেশ পাঠায়। আসুক বিএনপি, আসুক জামায়াত; কিন্তু আওয়ামী লীগকে ঠেকাতেই হবে। প্রয়োজনে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের রাষ্ট্রক্ষমতায় বসাতে হবে; কিন্তু আওয়ামী লীগকে ঠেকাও।
আপাতশিক্ষিত এলিট শ্রেণির প্রতিনিধিত্বকারী স্বদেশনিবাসী এবং বিদেশপ্রবাসীদের অধিকাংশই ধনাঢ্য। পরিপাটি পোশাক কিংবা ঝাঁ-চকচকে গাড়ি এবং অভিজাত এলাকায় দামি বাড়িতে এদের বসবাস। পেশায় এরা প্রায়শ সফল, সরকারি উচ্চ পদে আসীন অথবা বিশাল এনজিও কর্তা। প্রতিরাতে স্যুট-কোট-টাই, বাহারি পাঞ্জাবি কিংবা শাড়ি-টিপ-চশমা পরে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টক শোতে এরা উপস্থিত হয়। তারপর ইনিয়ে-বিনিয়ে গরু রচনাকে নদীতে নিয়ে না ফেলা পর্যন্ত এদের প্যারেড শেষ হয় না। প্রবাসেও সক্রিয় এদের প্রতিনিধিরা।
প্রবাসী বাঙালি পরিবারের একান্ত আড্ডা বা পার্টিতেও এরা পরস্পর ইংরেজিতে কথা বলে। এই শ্রেণির পালোয়ানরা তাদের বাতচিতের বিষয়বস্তু হিসেবে খুব দ্রুতই বাংলাদেশ-শেখ হাসিনা-আওয়ামী লীগ হয়ে শেষমেশ বঙ্গবন্ধুর চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধারপর্বে এসে সমাপ্ত হয়।বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে কথা না বললে এদের আত্মার শান্তি হয় না। সলিড একটা ঘুম হয় না।
স্বদেশনিবাসী এবং বিদেশপ্রবাসী এলিট শ্রেণির প্রতিনিধিরা টুঙ্গিপাড়া নামের অখ্যাত একটা গ্রাম থেকে উঠে আসা মৃত্তিকাসংলগ্ন নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে মেনে নিতে পারেন না। শ্রেণিগত একটা দূরত্ব অনুভব করা বা সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্সে ভুগতে থাকা এই শ্রেণি তাই চিরশত্রুভাবাপন্ন বঙ্গবন্ধুর প্রতি।
এই শ্রেণির সঙ্গে আরেকটি শ্রেণির খুব মিল। এরাও শিক্ষিত, ইংরেজিতে পক্ব-দক্ষ। দর্শন-রাজনীতি, ধর্ম-ইতিহাস, সাহিত্য-পেইন্টিংস, মার্ক্স-অ্যাঙ্গেলস-ফুকো-দেরিদা, ন্যারেটিভ-রিকনসিলিয়েশন-হেজিমনি থিওরি কপচানোতেও অতিশয় দক্ষ। দিন শেষে এরাও হাসিনা-আওয়ামী লীগ ও মুজিববিদ্বেষী। সরকারের সমালোচনা করা যেতেই পারে; কিন্তু অযৌক্তিক এত বঙ্গবন্ধুবিদ্বেষ কেন?
আপাতশিক্ষিত ইংরেজি জানা বঙ্গীয় এলিট সোসাইটি এবং শিল্প ও দর্শনবোদ্ধা বঙ্গসন্তানদের এই দুই শ্রেণির সঙ্গে প্রায়ই দেখা হয়ে যায়। খুব দ্রুতই আমি এদের সঙ্গ ত্যাগে কামিয়াব হই। প্রবাসী বাঙালিদের এ রকম আড্ডা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। তারপরও নিয়তি আমার পিছু ছাড়ে না। কী করে যেন মোলাকাত হয়ে যায় এদের সঙ্গে।
০৩. সেবা প্রকাশনীর বিখ্যাত অনুবাদক-লেখক রওশন জামিল ছিলেন ঢাকায় আমার মহল্লাকা বড়া ভাই। আমি থাকতাম ওয়ারীর হেয়ার স্ট্রিটে আর তিনি ঠাটারিবাজার বিসিসি রোডে। রওশন ভাই আমার বহু আগেই থিতু হয়েছেন নিউইয়র্কে। টেলিফোনে তাঁর সঙ্গে প্রায়ই কথা হয়। ফেসবুকে তাঁর স্ট্যাটাস দেখি নিয়মিত।
নিউইয়র্কপ্রবাসী আবেদিন কাদের একসময় বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিউজ প্রডিউসার ছিলেন। বিদ্বান মেধাবী এই মানুষ নিউইয়র্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। তিনিও মোটামুটি সক্রিয়, ফেসবুকে। এই দুজন জ্ঞানী মানুষ আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড।
বছর তিনেক আগে, রওশন জামিল ফেসবুকে নিজের একটি স্ট্যাটাসে লিখলেন, ‘বদরুদ্দীন উমরের বুদ্ধিজীবিতার বড় কৃতিত্ব, তিনি তাঁর বুঝের সঙ্গে আপস করেননি কখনো। ক্ষমতার খয়ের খাঁগিরি করেননি, যেটা তাঁর সমসাময়িকেরা কম-বেশি প্রায় সবাই করেছেন, করে যাচ্ছেন। বদরুদ্দীন উমরের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অমত করতে পারি, কিন্তু তাঁর সততাকে সালাম ঠুকতেই হয়।’
শিক্ষিত এলিট বদরুদ্দীন উমরের বুদ্ধিবৃত্তিক সততা নিয়ে আমার দ্বিমত ছিল। আমি তাই মন্তব্যের ঘরে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলাম এইভাবে—‘বদরুদ্দীন উমরের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অমত করতে পারি, কিন্তু তাঁর সততাকে সালাম ঠুকতেই হয়।—সততা?’
আবেদিন কাদের প্রত্যুত্তরে বললেন, ‘Yes, honest, I consider him intellectually honest...’
সাধারণত ফেসবুকে আমি কোনো বাহাসেই অংশ নিই না। কম্পোজ বা টাইপিংয়ে আলস্যের কারণে এমনিতেই আমার প্রচুর পরিকল্পনা অলিখিতই থেকে যায়। যতটা সময় খরচ করে আমি একটা বাহাস করব, টাইপ করব, ততটা সময় ব্যয় করলে অনায়াসেই একটা ছড়া লেখা হয়ে যায়। আমি তাই দ্বিতীয়টাই প্রেফার করি। শামিল হই না তর্কে।
কিন্তু আবেদিন কাদেরের উত্তরটা, বিশেষ করে ‘I consider him intellectually honest’ বাক্যটির জবাব দেওয়া জরুরি মনে করে মূল স্ট্যাটাসদাতা রওশন জামিলকে ফোন করে বিষয়টা ব্যাখ্যা করি।
জনাব বদরুদ্দীন উমরের একটা আত্মকথা ধরনের স্মৃতিগদ্য ঢাকার ২০০০ কিংবা সাপ্তাহিক-এ খুব আগ্রহ নিয়ে পড়েছিলাম। একটি পর্বে তিনি উনসত্তরের ঢাকার বিশেষ একটি দিনের বর্ণনা করছিলেন। নবাবপুর রোডের কম দামি হোটেলের গমগমে ভিড়ের আড্ডায় সাধারণ মধ্যবিত্ত নাগরিকদের চিন্তা-চেতনা, স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষার টুকরো টুকরো ঘটনার বয়ান তিনি করছিলেন।
নবাবপুর রোড থেকে জিন্নাহ অ্যাভিনিউ (বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ), বায়তুল মোকাররম স্টেডিয়াম অঞ্চলের বিপুল জনস্রোতের ডিটেইল একটি চিত্র তিনি ফুটিয়ে তুলছিলেন। সেদিনের বিকেলের উল্লেখযোগ্য প্রায় সবকিছুই উঠে এসেছিল তাঁর রচনায়, শুধু একটি বিষয় ছাড়া।সবকিছুই অবলোকন করেছিলেন তিনি সেই বিকেলের, শুধু একটি বিষয় ছাড়া। আর সেটা হচ্ছে—ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদের শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেওয়া। উনসত্তরের ২৩ ফেব্রুয়ারির সেই বিকেলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল সেটা।
এত কিছু আমি কমেন্টে লিখতে অনাগ্রহী বলে টেলিফোনে রওশন জামিলকে খুলে বলেছিলাম। রওশন সে কথা উল্লেখ করেছিলেন তাঁর প্রত্যুত্তরের ঘরে– ‘কাল রিটনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ওর আপত্তির জায়গা বদরুদ্দীন উমরের বৌদ্ধিক চর্চায় শেখ মুজিবুর রহমানকে কৃতিত্ব না দেওয়া বা যেমন একটি দিনের তাৎপর্য ব্যাখ্যায় বা তাঁর ডায়েরিধর্মী লেখায় সাধারণ সব ঘটনার কথা এসেছে, কিন্তু সেদিন যে শেখ মুজিবকে পল্টন ময়দানে “বঙ্গবন্ধু” উপাধি দেওয়া হয়েছিল, সেই ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়নি; যা এ দেশের প্রেক্ষাপটে একটা ঐতিহাসিক ঘটনা ছিল। সে কারণে রিটন বলতে চাইছে, উমরের “মুজিববিদ্বেষ” তাঁর (উমরের) বৌদ্ধিক সততার পরিচয় দেয় না।’
রওশনের এই মন্তব্যের জবাবে আবেদিন লিখলেন, ‘সেটা রিটন বলতেই পারেন। কিন্তু তাতে উমরের বুদ্ধিবৃত্তিক সততা প্রশ্নবিদ্ধ হয় না। একজন মানুষ বঙ্গবন্ধুকে তাঁর জীবনের কোনো লেখায় উল্লেখ না করেও বৌদ্ধিকভাবে সৎ থাকতে পারেন।’
আবেদিনের জবাবের প্রত্যুত্তরে আমি শুধু লিখলাম, ‘মারহাবা!’ ‘কিন্তু তাতে উমরের বুদ্ধিবৃত্তিক সততা প্রশ্নবিদ্ধ হয় না’ শোনার পরে ‘মারহাবা’ বলা ছাড়া কী আর বলতে পারতাম সংক্ষেপে!
০৪. কিছুদিন আগে নায়াগ্রা জলপ্রপাত এলাকার একটা চমৎকার বুকশপে গিয়েছিলাম বন্ধু দিনু বিল্লাহর সঙ্গে। ওখানে একটা র্যাকে পেঙ্গুইন সাইজের ছোট্ট একটা বইয়ের দিকে তাকাতেই প্রচ্ছদে মুদ্রিত BANGLADESH শব্দটায় আমার চোখ আটকে গেল। বইটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখে খুবই আগ্রহী হয়ে উঠলাম।
বইটির নাম The essential guide to customs & culture BANGLADESH. বইটি CULTURE SMART সিরিজের একটি প্রকাশনা। প্রকাশিত হয়েছে লন্ডনভিত্তিক ব্রিটিশ লাইব্রেরি থেকে। লিখেছেন লেখক-সাংবাদিক ঊর্মি রহমান। আকর্ষণীয় মেকআপ গেটআপ-সমৃদ্ধ ১৬৮ পৃষ্ঠার চমৎকার এই বইয়ে ৯টি চ্যাপ্টারে বিভিন্নশিরোনামে অনেক এন্ট্রি আছে।
প্রতিটি অধ্যায়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি ভুক্তি। আছে পাতায় পাতায় প্রাসঙ্গিক অনেক ছবি। যেমন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বর্ণনার সঙ্গে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ছবি আছে। কিন্তু সত্তরের নির্বাচনে শেখ মুজিবের বিপুল বিজয় এবং ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ কিংবা ২৫ মার্চ রাতে গ্রেপ্তারের আগে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বর্ণনায় শেখ মুজিবের কোনো ছবি নেই। অথচ প্রফেসর ইউনূসের ছবি আছে গ্রামীণ ব্যাংকের বর্ণনায়।
বইটির সঙ্গে ব্যবহারের জন্য প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয় ছবিগুলো সরবরাহ করেছেন কে? অনুমান করি, স্বয়ং লেখক নিশ্চয়ই। সেটাই হওয়ার কথা। তাই যদি হয়, তবে আমার প্রশ্ন—বঙ্গবন্ধুর ছবি কই? বাংলাদেশের পরিচিতিমূলক একটা গাইডবই বা পুস্তিকা বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাড়া কি পরিপূর্ণ হয়? হয় না। বাংলাদেশের নামোচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গেই যে মানুষের ছবি সবার আগে দীপ্যমান হয়ে ওঠে, সেটি শেখ মুজিবুর রহমানের, বাংলাদেশের স্থপতির। পায়ে কাদামাটি মাখা যিনি উঠে এসেছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মৃত্তিকা থেকে। বঙ্গবন্ধু ও সাম্প্রতিক বাংলাদেশ বিষয়ে তথাকথিত শিক্ষিতদের এই বিদ্বেষপ্রবণতাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখতেই হবে আগামীর বাংলাদেশ নিয়ে ভাবতে গেলে।
কোনো রূপকথার দেশ নয় আমার বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৩০ লাখ শহীদের রক্তস্রোতের ওপর জন্ম হয়েছে বাংলাদেশ নামের স্বাধীন দেশটির। চার বছরের মাথায় স্বাধীনতার বিরুদ্ধ পক্ষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর স্বাধীন বাংলাদেশ ইউটার্ন নিয়েছিল পাকিস্তানের দিকে। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধীরা আবার একটা পাকিস্তান পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়েছিল। এরপর টানা একুশ বছর ধরে বঙ্গবন্ধু ছিলেন নির্বাসিত।
শেখ মুজিবুর রহমান নামটা প্রায় মুছেই ফেলা হয়েছিল ইতিহাস থেকে। সংবিধানকে কেটে-ছিঁড়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের দেওয়া হয়েছিল দায়মুক্তি। একাত্তরের চিহ্নিত ঘাতক-রাজাকার-আলবদরদের গাড়িতে উড়ছিল ৩০ লাখ শহীদের রক্তস্নাত লাল-সবুজ পতাকাটি।
একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে পাল্টে যেতে থাকে দৃশ্যপট। আবার একটা ইউটার্ন নেয় বাংলাদেশ। এবার স্বাধীনতার দিকে। মিনি পাকিস্তান পুনরায় বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়। জাতির পিতার খুনিদের বিচারকাজ শুরু হয়। ধাপে ধাপে দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়ায় আদালত মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন খুনিদের। সেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মাধ্যমে মোচন করা সম্ভব হয় বাংলাদেশের কপালে লেপ্টে থাকা কলঙ্কতিলকটি। কলঙ্কমুক্ত হয় বাংলাদেশ।
অতঃপর মানবতাবিরোধী বেশ কয়েকজন শীর্ষ অপরাধীর বিচার এবং আদালতের রায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে আরেক দফা শুদ্ধ হয় বাংলাদেশ। কিন্তু একাত্তরের পরাজিত শক্তির বিনাশ হয় না। দালাল-রাজাকারদের ছানাপোনা সক্রিয় থাকে রাজনীতিতে। ফলে পরিস্থিতি মোটেও স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অনুকূলে থাকে না
একাত্তরের পরাজিত শক্তির ছানাপোনাদের সঙ্গে আড়াই কলম ইংরেজি জানা শিক্ষিত এলিট শ্রেণিটি সংহতি প্রকাশ করে প্রায়ই বিভিন্ন ব্যানারের আনুষ্ঠানিকতায়। স্যাটেলাইট টিভির রাতের টক শোগুলোতে তারা নানান থিওরি কপচায়। এদের পোশাকি নাম সুশীল।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, ৩০ লাখ মানুষের আত্মত্যাগ এবং তার বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার ব্যাখ্যায় তারা শৃগালচাতুর্যে ‘ন্যারেটিভ-রিকনসিলিয়েশন-ডায়ালেক্ট-হেজিমনি’ ইত্যাকার শব্দের তুবড়ি ছুটিয়ে এমন একটা সিচুয়েশন তৈরি করে যে তখন খুব সাধারণ মানুষের কাছে, এমনকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী চলচ্চিত্র ‘মেহেরজান’কেও মনে হয় মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র।
যে চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে—একাত্তরে পাকিস্তানি সৈনিকদের হত্যালীলা ও পৈশাচিক ধর্ষণকালে ধর্ষক পাকিস্তানি সৈন্যের প্রেমে আকুল বাঙালি মেয়েটি তার বাবার কাছে কান্নাকাটি করে বলছে, ‘বাবা, আমাকে সৈন্য এনে দাও...সৈন্য এনে দাও!’
একাত্তরের পরাজিত শক্তির ছানাপোনা এবং আড়াই কলম ইংরেজি জানা বাংলাদেশবিরোধী এই দুই শ্রেণিকে সঠিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রতিহত করার মাধ্যমেই এগিয়ে যেতে হবে আগামী দিনের বাংলাদেশকে।
একাত্তরের ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আসা বাংলাদেশ, পঁচাত্তরের পর পাকিস্তানের দিকে ক্ষিপ্রগতিতে ধাবমান বাংলাদেশ যে ছিয়ানব্বইয়ের পর ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, সেই অগ্রযাত্রা মাঝখানে বছরকয়েক বিপর্যস্ত হয়ে পুনরায় সঠিক ট্র্যাকে চলমান। বাংলাদেশ এখন আর ‘বটমলেস বাস্কেট’ নয়।
আমি সেই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, যে বাংলাদেশে একটি শিশুও অনাহারে থাকবে না। প্রত্যেক শিশুর পরনে পোশাক থাকবে। প্রত্যেক শিশু বাসযোগ্য ঘর পাবে। প্রত্যেক শিশু স্কুলে যাবে, অসুস্থ হলে চিকিৎসা পাবে। যদি একটি শিশুও ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমুতে যায়, তাহলে আমাদের সমস্ত অর্জন ম্লান হয়ে যাবে। একজন শিশুসাহিত্যিক হিসেবে প্রত্যেক শিশুর পাঁচটি মৌলিক অধিকার নিশ্চিত দেখতে চাই আমি।
অটোয়া, ২০ জুলাই ২০২৩
লেখক: শিশুসাহিত্যিক

উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।
নাদিম নেওয়াজ

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

ভবিষ্যতে কেমন বাংলাদেশ চাই, সে বিষয়ে বলতে গেলে প্রথমে বাংলাদেশ থেকে প্রায় সাড়ে বারো হাজার কিলোমিটার দূরের একটি দেশে আমার যাপিত জীবন, সাম্প্রতিক ভৌগোলিক অবস্থান, পরিপার্শ্ব এবং বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতাটা তুলে ধরতে হবে।
২৫ জুলাই ২০২৩
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।
আসাদুজ্জামান নূর

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

ভবিষ্যতে কেমন বাংলাদেশ চাই, সে বিষয়ে বলতে গেলে প্রথমে বাংলাদেশ থেকে প্রায় সাড়ে বারো হাজার কিলোমিটার দূরের একটি দেশে আমার যাপিত জীবন, সাম্প্রতিক ভৌগোলিক অবস্থান, পরিপার্শ্ব এবং বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতাটা তুলে ধরতে হবে।
২৫ জুলাই ২০২৩
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম।
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

ভবিষ্যতে কেমন বাংলাদেশ চাই, সে বিষয়ে বলতে গেলে প্রথমে বাংলাদেশ থেকে প্রায় সাড়ে বারো হাজার কিলোমিটার দূরের একটি দেশে আমার যাপিত জীবন, সাম্প্রতিক ভৌগোলিক অবস্থান, পরিপার্শ্ব এবং বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতাটা তুলে ধরতে হবে।
২৫ জুলাই ২০২৩
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

ভবিষ্যতে কেমন বাংলাদেশ চাই, সে বিষয়ে বলতে গেলে প্রথমে বাংলাদেশ থেকে প্রায় সাড়ে বারো হাজার কিলোমিটার দূরের একটি দেশে আমার যাপিত জীবন, সাম্প্রতিক ভৌগোলিক অবস্থান, পরিপার্শ্ব এবং বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতাটা তুলে ধরতে হবে।
২৫ জুলাই ২০২৩
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫