আশরাফ-উল-আলম, ঢাকা

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর সাড়ে ৪টা/৫টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আক্রমণ করে উচ্চাভিলাষী কতিপয় সেনা কর্মকর্তা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী (আবাসিক) মহিতুল ইসলাম। তিনি ওই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তৎকালীন পুলিশের বিশেষ শাখার উপ পুলিশ সুপার (ডিএসপি) নুরুল ইসলাম (পরবর্তীতে এসপি), বঙ্গবন্ধুর সেনারক্ষী হাবিলদার কুদ্দুস সিকদার, নায়েক সুবেদার আবদুল গনি, সেনাসদস্য সোহরাব আলী প্রমুখ। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর বাড়ির গৃহকর্মী আবদুর রহমান রমা ও সেলিমও প্রত্যক্ষদর্শী। তাঁরা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দেন। তাঁদের বর্ণনায় জানা যায়, কী ঘটেছিল সেই রাতে।
বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম ঘটনার পর কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর কেউ কিছু করতে পারছে না। চারদিকে থমথমে অবস্থা। কিছুদিন নিশ্চুপ থাকেন তিনি। কিন্তু প্রতিনিয়তই মনে হতে থাকে যে, অত্যন্ত নির্মম ও নৃশংস সেই হত্যাকাণ্ড, যা তিনি দেখেছেন, তার বিচার না হলে সেটা হবে জাতির জন্য কলঙ্কজনক। ঘটনার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর তিনি ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে মহিতুল তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, তিনি ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঘুমিয়েছিলেন। ১৪ আগস্ট রাত ৮/৯ টার দিকে বঙ্গবন্ধু বাসায় ফেরেন। তাঁর সঙ্গেও রক্ষীরা চলে যান। রাত ১টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু বাড়িতে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে গল্প করেন। এর পর তিনি শুতে যান। ভোর আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে বঙ্গবন্ধু টেলিফোন অপারেটরকে ফোন দেন। অপারেটর আবদুল মতিন ফোন ধরেন। মহিতুল ইসলামকে ডেকে তোলেন মতিন। মহিতুল ফোন ধরলে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সেরনিয়াবাতের (আব্দুর রব সেরনিয়াবাত) বাসায় দুষ্কৃতকারীরা আক্রমণ করছে। জলদি পুলিশ কন্ট্রোল রুমে লাগা।’
সঙ্গে সঙ্গে মহিতুল পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু লাইন না পাওয়ায় গণভবনে ফোন করেন। সেখানে টেলিফোন রিসিভ করলেও কেউ কথা বলেনি। এ সময় বঙ্গবন্ধু দোতলা থেকে নিচে নেমে আসেন। মহিতুল ‘হ্যালো হ্যালো’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু মহিতুলের হাত থেকে রিসিভার নিয়ে বলে, ‘আমি প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব বলছি।’ ঠিক সেই মুহূর্তে এক ঝাঁক গুলি জানালার কাচ ভেঙে অফিস ঘরের দেয়ালে লাগে। অনর্গল গুলি আসতে থাকে। বঙ্গবন্ধু টেবিলের পাশে শুয়ে পড়েন। মহিতুলকেও শুয়ে পড়তে বলেন। কিছুক্ষণ পর গুলি বন্ধ হয়। ওপর থেকে বঙ্গবন্ধুর কাজের ছেলে পাঞ্জাবি ও চশমা নিয়ে আসেন। বঙ্গবন্ধু তা পরেন। পরে তিনি বারান্দায় যান। তিনি বলেন, ‘আর্মি সেন্ট্রি, পুলিশ সেন্ট্রি এত গুলি চলছে, তোমরা কী করো?’ এই বলে বঙ্গবন্ধু ওপরে উঠে যান। এরপরই শেখ কামাল নিচে বারান্দায় আসেন। তিনি বলেন, ‘আর্মি, পুলিশ ভাই আপনারা আমার সঙ্গে আসেন।’ বলার সঙ্গে সঙ্গে তিন-চারজন কালো ও খাকি পোশাক পরা লোক অস্ত্রসহ শেখ কামালের সামনে এসে দাঁড়ান। ডিএসপি নুরুল ইসলাম ও মহিতুল পেছনে ছিলেন। এ সময় মেজর বজলুল হুদা শেখ কামালকে গুলি করেন। শেখ কামাল পড়ে গিয়েও বলেন, ‘আমি শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল।’ ওরা সঙ্গে সঙ্গে কামালকে আবার গুলি করে। তিনি সেখানেই মারা যান। ডিএসপি নুরুল ইসলাম ও মহিতুলকে চুল ধরে টেনে নিয়ে বাড়ির মূল ফটকে লাইনে দাঁড় করানো হয়। সেখানে পুলিশের লোক ও টেলিফোন অপারেটর মতিনকেও দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসেরকেও সেখানে দাঁড় করানো হয়। রান্না ঘর থেকে বুড়ি (গৃহকর্মী) ও রাখাল আজিজকেও নিয়ে আসা হয়। অস্ত্রধারী লোকেরা গুলি করতে করতে ওপরে ওঠে। এ সময় বঙ্গবন্ধুর উচ্চকণ্ঠ শোনা যায়।
মূল ফটকের লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা শেখ নাসের খুনিদের বলেন, ‘স্যার আমি তো রাজনীতি করি না। আমি ব্যবসা-বাণিজ্য করে খাই।’ তখন পাশে দাঁড়ানো একজন অস্ত্রধারী বলেন, ‘শেখ মুজিব ইজ ব্যাটার দ্যান নাসের।’ আরেকজন বলেন, ‘ঠিক আছে নাসের সাহেব পাশের রুমে গিয়ে বসেন।’ নাসের পাশের কক্ষে যান। একটু পরই তাঁকে সেখানে গুলি করে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর আগে শেখ নাসের পানি চান। কিন্তু তাঁকে পানি না দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করতে আবার গুলি করা হয়। তিনি মারা যান। এ সময় শিশু রাসেল ও গৃহকর্মী রমাকে নিচে নিয়ে আসা হয়। শিশু রাসেল রমা ও মহিতুলকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে। সে বলে, ‘ভাইয়া আমাকে মারবে না তো। পরে খাকি পোশাকধারী একজন জোর করে রাসেলকে নিয়ে যায়। রাসেল মায়ের কাছে যেতে চায়। মায়ের কাছে নেওয়ার কথা বলে তাকে ভেতরে নিয়ে যায়। একটু পরই গুলির শব্দ শোনা যায়। এদিকে ওপরের তলায় বঙ্গবন্ধু, শেখ ফজিলাতুন্নেছা, শেখ জামাল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী ও এসবির একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করে ঘাতকেরা।
মহিতুল তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, মেজর ফারুক, মেজর নুর, মেজর ডালিম, মেজর বজলুল হুদাকে তিনি হত্যাকাণ্ডের সময় অন্যদের সঙ্গে ৩২ নম্বরের বাড়িতে দেখেছেন। হত্যাকাণ্ড শেষ হওয়ার পর বাড়ির মূল ফটকের কাছে বজলুল হুদা মেজর ফারুককে বলেন, ‘অল আর ফিনিশড।’ পুরো ঘটনার সময় বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে দিয়ে ট্যাংক যাওয়া-আসা করে। ট্যাংকের ওপর সেনাবাহিনীর লোকজন ছিল।
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার নুরুল ইসলাম (তৎকালীন ডিএসবির প্রোটেকশন ফোর্স হিসেবে বঙ্গবন্ধুর বাসার গার্ডদের চার্জে ছিলেন) সাক্ষ্যে বলেন, ১৪ আগস্ট দিবাগত রাত আনুমানিক ১টার সময় তিনি ও একজন পুলিশ সার্জেন্ট বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে নিচের তলার বৈঠকখানায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর পিএ কাম রিসেপশনিস্ট মহিতুল ইসলাম সেখানে ছিলেন। ভোর আনুমানিক ৫টার সময় দোতলা থেকে বঙ্গবন্ধুর গলার আওয়াজ শুনতে পান তিনি। এর পর মহিতুলের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি ঘটনার বর্ণনা দেন।
হত্যার আগে বঙ্গবন্ধু খুনিদের প্রশ্ন করেন, ‘তোরা কী চাস?’—এমন বর্ণনা এসেছে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে কাজ করা আবদুর রহমান শেখ রমার সাক্ষ্য থেকে। বঙ্গবন্ধু নিচে নামার পর আবার ওপরে ওঠার বর্ণনা দিয়ে রমা বলেন, ‘একসময় বঙ্গবন্ধু তাঁর শোয়ার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। কিছুক্ষণের জন্য গোলাগুলি থেমে যায়। এর পর বঙ্গবন্ধু বের হন। তাঁকে খুনিরা ঘিরে ধরে। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘তোরা কী চাস? আমাকে কোথায় নিয়ে যাবি?’ খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে সিঁড়িতে নিয়ে যায়। সিঁড়ির দুই-তিন ধাপ নেওয়ার পর তাঁকে গুলি করা হয়। রমা তখন বঙ্গবন্ধুর পেছনে ছিলেন। খুনিরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুই কে?’ রমা উত্তর দেন, তিনি এ বাসায় কাজ করেন। তাঁকে তারা বলে, ‘তুই ওপরে যা।’ রমা ওপরে গিয়ে বেগম মুজিবকে বলেন, ‘আম্মা আর্মিরা সাহেবকে গুলি করেছে।’ বেগম মুজিব এ সময় বাড়ির অন্য সবাইকে নিয়ে বাথরুমে আশ্রয় নেন। পরে বেগম মুজিব বলেন, ‘মরলে সবাই একসঙ্গে মরব। তোরা বের হয়ে আয়।’ এর আগেই খুনিরা বেগম মুজিবের কক্ষে ধাক্কা মারে। বেগম মুজিব বের হয়ে আসেন। সবাই তখন তাঁকে নিচে নামানোর চেষ্টা করে। বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখে তিনি চিৎকার করেন। বলেন, ‘আমি নিচে যাব না। আমাকে এখনেই মেরে ফেল।’ এর পর সবাইকে দোতলায় নিয়ে যায়। সবাইকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
সেই দিন বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের আরেক গৃহকর্মী সেলিম শয়নকক্ষের সামনে করিডরে ঘুমিয়ে ছিলেন। গোলাগুলির শব্দে তিনি শেখ কামালের কক্ষের বাথরুমে আশ্রয় নেন। উঁকি দিয়ে ঘটনা দেখতে গেলে তাঁকে টেনে বাইরে এনে গুলি করা হয়। তাঁকে টেনে বঙ্গবন্ধুর সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু এ সময় বলেন, ‘ছেলেটি অনেক দিন আমার কাছে আছে। তাকে কে গুলি করল। তোরা কেন বেয়াদবি করছিস?’ এরপরই বঙ্গবন্ধুকে গুলি করা হয়।
নারীদের আর্ত চিৎকার
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বেগম মুজিবসহ বাড়ির নারীদের নিচে নামানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বেগম মুজিব সিঁড়িতেই তাঁদের মারতে বলেন। খুনিরা এ সময় তাঁদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর শয়নকক্ষে নিয়ে যান। এর পর তাঁদের গুলি করা হয়। এ সময় আর্ত চিৎকার শোনা যায়। মহিতুল তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, নারীদের আহাজারি, আর আর্ত চিৎকারও তিনি শোনেন। কিন্তু এসব খুনিদের মন গলাতে পারেনি। কুদ্দুস সিকদার, সেলিম, রমা, নুরুল ইসলামও তাঁদের সাক্ষ্যে বাড়ির মহিলাদের চিৎকারের বর্ণনা দেন জবানবন্দিতে।
বঙ্গবন্ধুর সেনারক্ষী হাবিলদার কুদ্দুস সিকদার বলেন, তিনি ওই রাতে ৩২ নম্বরে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে সিঁড়িতে নেওয়ার পর তিনি খুনিদের বিভিন্ন প্রশ্ন করার সময় মেজর নুর ও মেজর বজলুল হুদা ইংরেজিতে কী কী যেন বলেন। তাঁদের হাতে থাকা স্টেনগান দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে তাঁরা গুলি করেন। আজিজ পাশা ও রিসালদার মোসলেম বেগম মুজিব, শেখ জামাল, সুলতানা কামাল, রোজী জামালকে গুলি করে হত্যা করে।
বঙ্গবন্ধুর পরনে লুঙ্গি গায়ে পাঞ্জাবি ছিল
যখন গুলি করা হয়, তখন বঙ্গবন্ধুর পরনে লুঙ্গি, গায়ে পাঞ্জাবি ছিল। চোখে চশমা, হাতে সিগারেটের পাইপ ও একটি ম্যাচ ছিল। কুদ্দুস সিকদার তাঁর জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন।
মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে খুনিরা
বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সবাইকে খুন করার পর সেনা জোয়ানরা ওই বাড়ির আলমারি ও আসবাবপত্র তছনছ করে। বিভিন্ন স্থান থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। আলমারির ড্রয়ার খুলেও জোয়ানরা কিছু মালামাল নেয়। সুবেদার মেজর ওয়াহাবও (আবদুল ওয়াহাব জোয়ারদার) জোয়ানদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি একটি ব্রিফকেস, সোনার গয়না, বিদেশি মুদ্রা, রেডিও, টেলিভিশন নিয়ে নিচে থাকা একটি গাড়িতে তোলেন। অন্য জিনিসপত্র অন্য জোয়ানরা ব্যাগে করে নিয়ে যায়। ওই বাড়ি ও লাশ পাহারা দেওয়ার জন্য কুদ্দুস সিকদারকে রেখে যান। এর মধ্যে কর্নেল জামিলের লাশ একটি গাড়িতে করে ওই বাড়িতে আনা হয়।
এই মামলায় আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মহিউদ্দিন (আর্টিলারি), তাহের উদ্দিন ঠাকুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। প্রত্যেকে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন। ওই রাতে বিভিন্ন অপারেশনেও ছিলেন তাঁরা। তবে তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে ঠিক যখন হত্যা করা হয়, তখন উপস্থিত ছিলেন না। আগে-পরে ছিলেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর সাড়ে ৪টা/৫টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আক্রমণ করে উচ্চাভিলাষী কতিপয় সেনা কর্মকর্তা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী (আবাসিক) মহিতুল ইসলাম। তিনি ওই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তৎকালীন পুলিশের বিশেষ শাখার উপ পুলিশ সুপার (ডিএসপি) নুরুল ইসলাম (পরবর্তীতে এসপি), বঙ্গবন্ধুর সেনারক্ষী হাবিলদার কুদ্দুস সিকদার, নায়েক সুবেদার আবদুল গনি, সেনাসদস্য সোহরাব আলী প্রমুখ। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর বাড়ির গৃহকর্মী আবদুর রহমান রমা ও সেলিমও প্রত্যক্ষদর্শী। তাঁরা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দেন। তাঁদের বর্ণনায় জানা যায়, কী ঘটেছিল সেই রাতে।
বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম ঘটনার পর কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর কেউ কিছু করতে পারছে না। চারদিকে থমথমে অবস্থা। কিছুদিন নিশ্চুপ থাকেন তিনি। কিন্তু প্রতিনিয়তই মনে হতে থাকে যে, অত্যন্ত নির্মম ও নৃশংস সেই হত্যাকাণ্ড, যা তিনি দেখেছেন, তার বিচার না হলে সেটা হবে জাতির জন্য কলঙ্কজনক। ঘটনার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর তিনি ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে মহিতুল তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, তিনি ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঘুমিয়েছিলেন। ১৪ আগস্ট রাত ৮/৯ টার দিকে বঙ্গবন্ধু বাসায় ফেরেন। তাঁর সঙ্গেও রক্ষীরা চলে যান। রাত ১টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু বাড়িতে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে গল্প করেন। এর পর তিনি শুতে যান। ভোর আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে বঙ্গবন্ধু টেলিফোন অপারেটরকে ফোন দেন। অপারেটর আবদুল মতিন ফোন ধরেন। মহিতুল ইসলামকে ডেকে তোলেন মতিন। মহিতুল ফোন ধরলে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সেরনিয়াবাতের (আব্দুর রব সেরনিয়াবাত) বাসায় দুষ্কৃতকারীরা আক্রমণ করছে। জলদি পুলিশ কন্ট্রোল রুমে লাগা।’
সঙ্গে সঙ্গে মহিতুল পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু লাইন না পাওয়ায় গণভবনে ফোন করেন। সেখানে টেলিফোন রিসিভ করলেও কেউ কথা বলেনি। এ সময় বঙ্গবন্ধু দোতলা থেকে নিচে নেমে আসেন। মহিতুল ‘হ্যালো হ্যালো’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু মহিতুলের হাত থেকে রিসিভার নিয়ে বলে, ‘আমি প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব বলছি।’ ঠিক সেই মুহূর্তে এক ঝাঁক গুলি জানালার কাচ ভেঙে অফিস ঘরের দেয়ালে লাগে। অনর্গল গুলি আসতে থাকে। বঙ্গবন্ধু টেবিলের পাশে শুয়ে পড়েন। মহিতুলকেও শুয়ে পড়তে বলেন। কিছুক্ষণ পর গুলি বন্ধ হয়। ওপর থেকে বঙ্গবন্ধুর কাজের ছেলে পাঞ্জাবি ও চশমা নিয়ে আসেন। বঙ্গবন্ধু তা পরেন। পরে তিনি বারান্দায় যান। তিনি বলেন, ‘আর্মি সেন্ট্রি, পুলিশ সেন্ট্রি এত গুলি চলছে, তোমরা কী করো?’ এই বলে বঙ্গবন্ধু ওপরে উঠে যান। এরপরই শেখ কামাল নিচে বারান্দায় আসেন। তিনি বলেন, ‘আর্মি, পুলিশ ভাই আপনারা আমার সঙ্গে আসেন।’ বলার সঙ্গে সঙ্গে তিন-চারজন কালো ও খাকি পোশাক পরা লোক অস্ত্রসহ শেখ কামালের সামনে এসে দাঁড়ান। ডিএসপি নুরুল ইসলাম ও মহিতুল পেছনে ছিলেন। এ সময় মেজর বজলুল হুদা শেখ কামালকে গুলি করেন। শেখ কামাল পড়ে গিয়েও বলেন, ‘আমি শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল।’ ওরা সঙ্গে সঙ্গে কামালকে আবার গুলি করে। তিনি সেখানেই মারা যান। ডিএসপি নুরুল ইসলাম ও মহিতুলকে চুল ধরে টেনে নিয়ে বাড়ির মূল ফটকে লাইনে দাঁড় করানো হয়। সেখানে পুলিশের লোক ও টেলিফোন অপারেটর মতিনকেও দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসেরকেও সেখানে দাঁড় করানো হয়। রান্না ঘর থেকে বুড়ি (গৃহকর্মী) ও রাখাল আজিজকেও নিয়ে আসা হয়। অস্ত্রধারী লোকেরা গুলি করতে করতে ওপরে ওঠে। এ সময় বঙ্গবন্ধুর উচ্চকণ্ঠ শোনা যায়।
মূল ফটকের লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা শেখ নাসের খুনিদের বলেন, ‘স্যার আমি তো রাজনীতি করি না। আমি ব্যবসা-বাণিজ্য করে খাই।’ তখন পাশে দাঁড়ানো একজন অস্ত্রধারী বলেন, ‘শেখ মুজিব ইজ ব্যাটার দ্যান নাসের।’ আরেকজন বলেন, ‘ঠিক আছে নাসের সাহেব পাশের রুমে গিয়ে বসেন।’ নাসের পাশের কক্ষে যান। একটু পরই তাঁকে সেখানে গুলি করে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর আগে শেখ নাসের পানি চান। কিন্তু তাঁকে পানি না দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করতে আবার গুলি করা হয়। তিনি মারা যান। এ সময় শিশু রাসেল ও গৃহকর্মী রমাকে নিচে নিয়ে আসা হয়। শিশু রাসেল রমা ও মহিতুলকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে। সে বলে, ‘ভাইয়া আমাকে মারবে না তো। পরে খাকি পোশাকধারী একজন জোর করে রাসেলকে নিয়ে যায়। রাসেল মায়ের কাছে যেতে চায়। মায়ের কাছে নেওয়ার কথা বলে তাকে ভেতরে নিয়ে যায়। একটু পরই গুলির শব্দ শোনা যায়। এদিকে ওপরের তলায় বঙ্গবন্ধু, শেখ ফজিলাতুন্নেছা, শেখ জামাল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী ও এসবির একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করে ঘাতকেরা।
মহিতুল তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, মেজর ফারুক, মেজর নুর, মেজর ডালিম, মেজর বজলুল হুদাকে তিনি হত্যাকাণ্ডের সময় অন্যদের সঙ্গে ৩২ নম্বরের বাড়িতে দেখেছেন। হত্যাকাণ্ড শেষ হওয়ার পর বাড়ির মূল ফটকের কাছে বজলুল হুদা মেজর ফারুককে বলেন, ‘অল আর ফিনিশড।’ পুরো ঘটনার সময় বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে দিয়ে ট্যাংক যাওয়া-আসা করে। ট্যাংকের ওপর সেনাবাহিনীর লোকজন ছিল।
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার নুরুল ইসলাম (তৎকালীন ডিএসবির প্রোটেকশন ফোর্স হিসেবে বঙ্গবন্ধুর বাসার গার্ডদের চার্জে ছিলেন) সাক্ষ্যে বলেন, ১৪ আগস্ট দিবাগত রাত আনুমানিক ১টার সময় তিনি ও একজন পুলিশ সার্জেন্ট বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে নিচের তলার বৈঠকখানায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর পিএ কাম রিসেপশনিস্ট মহিতুল ইসলাম সেখানে ছিলেন। ভোর আনুমানিক ৫টার সময় দোতলা থেকে বঙ্গবন্ধুর গলার আওয়াজ শুনতে পান তিনি। এর পর মহিতুলের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি ঘটনার বর্ণনা দেন।
হত্যার আগে বঙ্গবন্ধু খুনিদের প্রশ্ন করেন, ‘তোরা কী চাস?’—এমন বর্ণনা এসেছে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে কাজ করা আবদুর রহমান শেখ রমার সাক্ষ্য থেকে। বঙ্গবন্ধু নিচে নামার পর আবার ওপরে ওঠার বর্ণনা দিয়ে রমা বলেন, ‘একসময় বঙ্গবন্ধু তাঁর শোয়ার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। কিছুক্ষণের জন্য গোলাগুলি থেমে যায়। এর পর বঙ্গবন্ধু বের হন। তাঁকে খুনিরা ঘিরে ধরে। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘তোরা কী চাস? আমাকে কোথায় নিয়ে যাবি?’ খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে সিঁড়িতে নিয়ে যায়। সিঁড়ির দুই-তিন ধাপ নেওয়ার পর তাঁকে গুলি করা হয়। রমা তখন বঙ্গবন্ধুর পেছনে ছিলেন। খুনিরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুই কে?’ রমা উত্তর দেন, তিনি এ বাসায় কাজ করেন। তাঁকে তারা বলে, ‘তুই ওপরে যা।’ রমা ওপরে গিয়ে বেগম মুজিবকে বলেন, ‘আম্মা আর্মিরা সাহেবকে গুলি করেছে।’ বেগম মুজিব এ সময় বাড়ির অন্য সবাইকে নিয়ে বাথরুমে আশ্রয় নেন। পরে বেগম মুজিব বলেন, ‘মরলে সবাই একসঙ্গে মরব। তোরা বের হয়ে আয়।’ এর আগেই খুনিরা বেগম মুজিবের কক্ষে ধাক্কা মারে। বেগম মুজিব বের হয়ে আসেন। সবাই তখন তাঁকে নিচে নামানোর চেষ্টা করে। বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখে তিনি চিৎকার করেন। বলেন, ‘আমি নিচে যাব না। আমাকে এখনেই মেরে ফেল।’ এর পর সবাইকে দোতলায় নিয়ে যায়। সবাইকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
সেই দিন বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের আরেক গৃহকর্মী সেলিম শয়নকক্ষের সামনে করিডরে ঘুমিয়ে ছিলেন। গোলাগুলির শব্দে তিনি শেখ কামালের কক্ষের বাথরুমে আশ্রয় নেন। উঁকি দিয়ে ঘটনা দেখতে গেলে তাঁকে টেনে বাইরে এনে গুলি করা হয়। তাঁকে টেনে বঙ্গবন্ধুর সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু এ সময় বলেন, ‘ছেলেটি অনেক দিন আমার কাছে আছে। তাকে কে গুলি করল। তোরা কেন বেয়াদবি করছিস?’ এরপরই বঙ্গবন্ধুকে গুলি করা হয়।
নারীদের আর্ত চিৎকার
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বেগম মুজিবসহ বাড়ির নারীদের নিচে নামানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বেগম মুজিব সিঁড়িতেই তাঁদের মারতে বলেন। খুনিরা এ সময় তাঁদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর শয়নকক্ষে নিয়ে যান। এর পর তাঁদের গুলি করা হয়। এ সময় আর্ত চিৎকার শোনা যায়। মহিতুল তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, নারীদের আহাজারি, আর আর্ত চিৎকারও তিনি শোনেন। কিন্তু এসব খুনিদের মন গলাতে পারেনি। কুদ্দুস সিকদার, সেলিম, রমা, নুরুল ইসলামও তাঁদের সাক্ষ্যে বাড়ির মহিলাদের চিৎকারের বর্ণনা দেন জবানবন্দিতে।
বঙ্গবন্ধুর সেনারক্ষী হাবিলদার কুদ্দুস সিকদার বলেন, তিনি ওই রাতে ৩২ নম্বরে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে সিঁড়িতে নেওয়ার পর তিনি খুনিদের বিভিন্ন প্রশ্ন করার সময় মেজর নুর ও মেজর বজলুল হুদা ইংরেজিতে কী কী যেন বলেন। তাঁদের হাতে থাকা স্টেনগান দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে তাঁরা গুলি করেন। আজিজ পাশা ও রিসালদার মোসলেম বেগম মুজিব, শেখ জামাল, সুলতানা কামাল, রোজী জামালকে গুলি করে হত্যা করে।
বঙ্গবন্ধুর পরনে লুঙ্গি গায়ে পাঞ্জাবি ছিল
যখন গুলি করা হয়, তখন বঙ্গবন্ধুর পরনে লুঙ্গি, গায়ে পাঞ্জাবি ছিল। চোখে চশমা, হাতে সিগারেটের পাইপ ও একটি ম্যাচ ছিল। কুদ্দুস সিকদার তাঁর জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন।
মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে খুনিরা
বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সবাইকে খুন করার পর সেনা জোয়ানরা ওই বাড়ির আলমারি ও আসবাবপত্র তছনছ করে। বিভিন্ন স্থান থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। আলমারির ড্রয়ার খুলেও জোয়ানরা কিছু মালামাল নেয়। সুবেদার মেজর ওয়াহাবও (আবদুল ওয়াহাব জোয়ারদার) জোয়ানদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি একটি ব্রিফকেস, সোনার গয়না, বিদেশি মুদ্রা, রেডিও, টেলিভিশন নিয়ে নিচে থাকা একটি গাড়িতে তোলেন। অন্য জিনিসপত্র অন্য জোয়ানরা ব্যাগে করে নিয়ে যায়। ওই বাড়ি ও লাশ পাহারা দেওয়ার জন্য কুদ্দুস সিকদারকে রেখে যান। এর মধ্যে কর্নেল জামিলের লাশ একটি গাড়িতে করে ওই বাড়িতে আনা হয়।
এই মামলায় আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মহিউদ্দিন (আর্টিলারি), তাহের উদ্দিন ঠাকুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। প্রত্যেকে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন। ওই রাতে বিভিন্ন অপারেশনেও ছিলেন তাঁরা। তবে তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে ঠিক যখন হত্যা করা হয়, তখন উপস্থিত ছিলেন না। আগে-পরে ছিলেন।
আশরাফ-উল-আলম, ঢাকা

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর সাড়ে ৪টা/৫টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আক্রমণ করে উচ্চাভিলাষী কতিপয় সেনা কর্মকর্তা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী (আবাসিক) মহিতুল ইসলাম। তিনি ওই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তৎকালীন পুলিশের বিশেষ শাখার উপ পুলিশ সুপার (ডিএসপি) নুরুল ইসলাম (পরবর্তীতে এসপি), বঙ্গবন্ধুর সেনারক্ষী হাবিলদার কুদ্দুস সিকদার, নায়েক সুবেদার আবদুল গনি, সেনাসদস্য সোহরাব আলী প্রমুখ। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর বাড়ির গৃহকর্মী আবদুর রহমান রমা ও সেলিমও প্রত্যক্ষদর্শী। তাঁরা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দেন। তাঁদের বর্ণনায় জানা যায়, কী ঘটেছিল সেই রাতে।
বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম ঘটনার পর কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর কেউ কিছু করতে পারছে না। চারদিকে থমথমে অবস্থা। কিছুদিন নিশ্চুপ থাকেন তিনি। কিন্তু প্রতিনিয়তই মনে হতে থাকে যে, অত্যন্ত নির্মম ও নৃশংস সেই হত্যাকাণ্ড, যা তিনি দেখেছেন, তার বিচার না হলে সেটা হবে জাতির জন্য কলঙ্কজনক। ঘটনার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর তিনি ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে মহিতুল তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, তিনি ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঘুমিয়েছিলেন। ১৪ আগস্ট রাত ৮/৯ টার দিকে বঙ্গবন্ধু বাসায় ফেরেন। তাঁর সঙ্গেও রক্ষীরা চলে যান। রাত ১টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু বাড়িতে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে গল্প করেন। এর পর তিনি শুতে যান। ভোর আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে বঙ্গবন্ধু টেলিফোন অপারেটরকে ফোন দেন। অপারেটর আবদুল মতিন ফোন ধরেন। মহিতুল ইসলামকে ডেকে তোলেন মতিন। মহিতুল ফোন ধরলে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সেরনিয়াবাতের (আব্দুর রব সেরনিয়াবাত) বাসায় দুষ্কৃতকারীরা আক্রমণ করছে। জলদি পুলিশ কন্ট্রোল রুমে লাগা।’
সঙ্গে সঙ্গে মহিতুল পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু লাইন না পাওয়ায় গণভবনে ফোন করেন। সেখানে টেলিফোন রিসিভ করলেও কেউ কথা বলেনি। এ সময় বঙ্গবন্ধু দোতলা থেকে নিচে নেমে আসেন। মহিতুল ‘হ্যালো হ্যালো’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু মহিতুলের হাত থেকে রিসিভার নিয়ে বলে, ‘আমি প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব বলছি।’ ঠিক সেই মুহূর্তে এক ঝাঁক গুলি জানালার কাচ ভেঙে অফিস ঘরের দেয়ালে লাগে। অনর্গল গুলি আসতে থাকে। বঙ্গবন্ধু টেবিলের পাশে শুয়ে পড়েন। মহিতুলকেও শুয়ে পড়তে বলেন। কিছুক্ষণ পর গুলি বন্ধ হয়। ওপর থেকে বঙ্গবন্ধুর কাজের ছেলে পাঞ্জাবি ও চশমা নিয়ে আসেন। বঙ্গবন্ধু তা পরেন। পরে তিনি বারান্দায় যান। তিনি বলেন, ‘আর্মি সেন্ট্রি, পুলিশ সেন্ট্রি এত গুলি চলছে, তোমরা কী করো?’ এই বলে বঙ্গবন্ধু ওপরে উঠে যান। এরপরই শেখ কামাল নিচে বারান্দায় আসেন। তিনি বলেন, ‘আর্মি, পুলিশ ভাই আপনারা আমার সঙ্গে আসেন।’ বলার সঙ্গে সঙ্গে তিন-চারজন কালো ও খাকি পোশাক পরা লোক অস্ত্রসহ শেখ কামালের সামনে এসে দাঁড়ান। ডিএসপি নুরুল ইসলাম ও মহিতুল পেছনে ছিলেন। এ সময় মেজর বজলুল হুদা শেখ কামালকে গুলি করেন। শেখ কামাল পড়ে গিয়েও বলেন, ‘আমি শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল।’ ওরা সঙ্গে সঙ্গে কামালকে আবার গুলি করে। তিনি সেখানেই মারা যান। ডিএসপি নুরুল ইসলাম ও মহিতুলকে চুল ধরে টেনে নিয়ে বাড়ির মূল ফটকে লাইনে দাঁড় করানো হয়। সেখানে পুলিশের লোক ও টেলিফোন অপারেটর মতিনকেও দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসেরকেও সেখানে দাঁড় করানো হয়। রান্না ঘর থেকে বুড়ি (গৃহকর্মী) ও রাখাল আজিজকেও নিয়ে আসা হয়। অস্ত্রধারী লোকেরা গুলি করতে করতে ওপরে ওঠে। এ সময় বঙ্গবন্ধুর উচ্চকণ্ঠ শোনা যায়।
মূল ফটকের লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা শেখ নাসের খুনিদের বলেন, ‘স্যার আমি তো রাজনীতি করি না। আমি ব্যবসা-বাণিজ্য করে খাই।’ তখন পাশে দাঁড়ানো একজন অস্ত্রধারী বলেন, ‘শেখ মুজিব ইজ ব্যাটার দ্যান নাসের।’ আরেকজন বলেন, ‘ঠিক আছে নাসের সাহেব পাশের রুমে গিয়ে বসেন।’ নাসের পাশের কক্ষে যান। একটু পরই তাঁকে সেখানে গুলি করে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর আগে শেখ নাসের পানি চান। কিন্তু তাঁকে পানি না দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করতে আবার গুলি করা হয়। তিনি মারা যান। এ সময় শিশু রাসেল ও গৃহকর্মী রমাকে নিচে নিয়ে আসা হয়। শিশু রাসেল রমা ও মহিতুলকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে। সে বলে, ‘ভাইয়া আমাকে মারবে না তো। পরে খাকি পোশাকধারী একজন জোর করে রাসেলকে নিয়ে যায়। রাসেল মায়ের কাছে যেতে চায়। মায়ের কাছে নেওয়ার কথা বলে তাকে ভেতরে নিয়ে যায়। একটু পরই গুলির শব্দ শোনা যায়। এদিকে ওপরের তলায় বঙ্গবন্ধু, শেখ ফজিলাতুন্নেছা, শেখ জামাল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী ও এসবির একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করে ঘাতকেরা।
মহিতুল তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, মেজর ফারুক, মেজর নুর, মেজর ডালিম, মেজর বজলুল হুদাকে তিনি হত্যাকাণ্ডের সময় অন্যদের সঙ্গে ৩২ নম্বরের বাড়িতে দেখেছেন। হত্যাকাণ্ড শেষ হওয়ার পর বাড়ির মূল ফটকের কাছে বজলুল হুদা মেজর ফারুককে বলেন, ‘অল আর ফিনিশড।’ পুরো ঘটনার সময় বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে দিয়ে ট্যাংক যাওয়া-আসা করে। ট্যাংকের ওপর সেনাবাহিনীর লোকজন ছিল।
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার নুরুল ইসলাম (তৎকালীন ডিএসবির প্রোটেকশন ফোর্স হিসেবে বঙ্গবন্ধুর বাসার গার্ডদের চার্জে ছিলেন) সাক্ষ্যে বলেন, ১৪ আগস্ট দিবাগত রাত আনুমানিক ১টার সময় তিনি ও একজন পুলিশ সার্জেন্ট বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে নিচের তলার বৈঠকখানায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর পিএ কাম রিসেপশনিস্ট মহিতুল ইসলাম সেখানে ছিলেন। ভোর আনুমানিক ৫টার সময় দোতলা থেকে বঙ্গবন্ধুর গলার আওয়াজ শুনতে পান তিনি। এর পর মহিতুলের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি ঘটনার বর্ণনা দেন।
হত্যার আগে বঙ্গবন্ধু খুনিদের প্রশ্ন করেন, ‘তোরা কী চাস?’—এমন বর্ণনা এসেছে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে কাজ করা আবদুর রহমান শেখ রমার সাক্ষ্য থেকে। বঙ্গবন্ধু নিচে নামার পর আবার ওপরে ওঠার বর্ণনা দিয়ে রমা বলেন, ‘একসময় বঙ্গবন্ধু তাঁর শোয়ার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। কিছুক্ষণের জন্য গোলাগুলি থেমে যায়। এর পর বঙ্গবন্ধু বের হন। তাঁকে খুনিরা ঘিরে ধরে। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘তোরা কী চাস? আমাকে কোথায় নিয়ে যাবি?’ খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে সিঁড়িতে নিয়ে যায়। সিঁড়ির দুই-তিন ধাপ নেওয়ার পর তাঁকে গুলি করা হয়। রমা তখন বঙ্গবন্ধুর পেছনে ছিলেন। খুনিরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুই কে?’ রমা উত্তর দেন, তিনি এ বাসায় কাজ করেন। তাঁকে তারা বলে, ‘তুই ওপরে যা।’ রমা ওপরে গিয়ে বেগম মুজিবকে বলেন, ‘আম্মা আর্মিরা সাহেবকে গুলি করেছে।’ বেগম মুজিব এ সময় বাড়ির অন্য সবাইকে নিয়ে বাথরুমে আশ্রয় নেন। পরে বেগম মুজিব বলেন, ‘মরলে সবাই একসঙ্গে মরব। তোরা বের হয়ে আয়।’ এর আগেই খুনিরা বেগম মুজিবের কক্ষে ধাক্কা মারে। বেগম মুজিব বের হয়ে আসেন। সবাই তখন তাঁকে নিচে নামানোর চেষ্টা করে। বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখে তিনি চিৎকার করেন। বলেন, ‘আমি নিচে যাব না। আমাকে এখনেই মেরে ফেল।’ এর পর সবাইকে দোতলায় নিয়ে যায়। সবাইকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
সেই দিন বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের আরেক গৃহকর্মী সেলিম শয়নকক্ষের সামনে করিডরে ঘুমিয়ে ছিলেন। গোলাগুলির শব্দে তিনি শেখ কামালের কক্ষের বাথরুমে আশ্রয় নেন। উঁকি দিয়ে ঘটনা দেখতে গেলে তাঁকে টেনে বাইরে এনে গুলি করা হয়। তাঁকে টেনে বঙ্গবন্ধুর সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু এ সময় বলেন, ‘ছেলেটি অনেক দিন আমার কাছে আছে। তাকে কে গুলি করল। তোরা কেন বেয়াদবি করছিস?’ এরপরই বঙ্গবন্ধুকে গুলি করা হয়।
নারীদের আর্ত চিৎকার
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বেগম মুজিবসহ বাড়ির নারীদের নিচে নামানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বেগম মুজিব সিঁড়িতেই তাঁদের মারতে বলেন। খুনিরা এ সময় তাঁদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর শয়নকক্ষে নিয়ে যান। এর পর তাঁদের গুলি করা হয়। এ সময় আর্ত চিৎকার শোনা যায়। মহিতুল তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, নারীদের আহাজারি, আর আর্ত চিৎকারও তিনি শোনেন। কিন্তু এসব খুনিদের মন গলাতে পারেনি। কুদ্দুস সিকদার, সেলিম, রমা, নুরুল ইসলামও তাঁদের সাক্ষ্যে বাড়ির মহিলাদের চিৎকারের বর্ণনা দেন জবানবন্দিতে।
বঙ্গবন্ধুর সেনারক্ষী হাবিলদার কুদ্দুস সিকদার বলেন, তিনি ওই রাতে ৩২ নম্বরে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে সিঁড়িতে নেওয়ার পর তিনি খুনিদের বিভিন্ন প্রশ্ন করার সময় মেজর নুর ও মেজর বজলুল হুদা ইংরেজিতে কী কী যেন বলেন। তাঁদের হাতে থাকা স্টেনগান দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে তাঁরা গুলি করেন। আজিজ পাশা ও রিসালদার মোসলেম বেগম মুজিব, শেখ জামাল, সুলতানা কামাল, রোজী জামালকে গুলি করে হত্যা করে।
বঙ্গবন্ধুর পরনে লুঙ্গি গায়ে পাঞ্জাবি ছিল
যখন গুলি করা হয়, তখন বঙ্গবন্ধুর পরনে লুঙ্গি, গায়ে পাঞ্জাবি ছিল। চোখে চশমা, হাতে সিগারেটের পাইপ ও একটি ম্যাচ ছিল। কুদ্দুস সিকদার তাঁর জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন।
মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে খুনিরা
বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সবাইকে খুন করার পর সেনা জোয়ানরা ওই বাড়ির আলমারি ও আসবাবপত্র তছনছ করে। বিভিন্ন স্থান থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। আলমারির ড্রয়ার খুলেও জোয়ানরা কিছু মালামাল নেয়। সুবেদার মেজর ওয়াহাবও (আবদুল ওয়াহাব জোয়ারদার) জোয়ানদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি একটি ব্রিফকেস, সোনার গয়না, বিদেশি মুদ্রা, রেডিও, টেলিভিশন নিয়ে নিচে থাকা একটি গাড়িতে তোলেন। অন্য জিনিসপত্র অন্য জোয়ানরা ব্যাগে করে নিয়ে যায়। ওই বাড়ি ও লাশ পাহারা দেওয়ার জন্য কুদ্দুস সিকদারকে রেখে যান। এর মধ্যে কর্নেল জামিলের লাশ একটি গাড়িতে করে ওই বাড়িতে আনা হয়।
এই মামলায় আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মহিউদ্দিন (আর্টিলারি), তাহের উদ্দিন ঠাকুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। প্রত্যেকে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন। ওই রাতে বিভিন্ন অপারেশনেও ছিলেন তাঁরা। তবে তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে ঠিক যখন হত্যা করা হয়, তখন উপস্থিত ছিলেন না। আগে-পরে ছিলেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর সাড়ে ৪টা/৫টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আক্রমণ করে উচ্চাভিলাষী কতিপয় সেনা কর্মকর্তা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী (আবাসিক) মহিতুল ইসলাম। তিনি ওই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তৎকালীন পুলিশের বিশেষ শাখার উপ পুলিশ সুপার (ডিএসপি) নুরুল ইসলাম (পরবর্তীতে এসপি), বঙ্গবন্ধুর সেনারক্ষী হাবিলদার কুদ্দুস সিকদার, নায়েক সুবেদার আবদুল গনি, সেনাসদস্য সোহরাব আলী প্রমুখ। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর বাড়ির গৃহকর্মী আবদুর রহমান রমা ও সেলিমও প্রত্যক্ষদর্শী। তাঁরা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দেন। তাঁদের বর্ণনায় জানা যায়, কী ঘটেছিল সেই রাতে।
বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম ঘটনার পর কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর কেউ কিছু করতে পারছে না। চারদিকে থমথমে অবস্থা। কিছুদিন নিশ্চুপ থাকেন তিনি। কিন্তু প্রতিনিয়তই মনে হতে থাকে যে, অত্যন্ত নির্মম ও নৃশংস সেই হত্যাকাণ্ড, যা তিনি দেখেছেন, তার বিচার না হলে সেটা হবে জাতির জন্য কলঙ্কজনক। ঘটনার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর তিনি ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে মহিতুল তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, তিনি ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঘুমিয়েছিলেন। ১৪ আগস্ট রাত ৮/৯ টার দিকে বঙ্গবন্ধু বাসায় ফেরেন। তাঁর সঙ্গেও রক্ষীরা চলে যান। রাত ১টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু বাড়িতে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে গল্প করেন। এর পর তিনি শুতে যান। ভোর আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে বঙ্গবন্ধু টেলিফোন অপারেটরকে ফোন দেন। অপারেটর আবদুল মতিন ফোন ধরেন। মহিতুল ইসলামকে ডেকে তোলেন মতিন। মহিতুল ফোন ধরলে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সেরনিয়াবাতের (আব্দুর রব সেরনিয়াবাত) বাসায় দুষ্কৃতকারীরা আক্রমণ করছে। জলদি পুলিশ কন্ট্রোল রুমে লাগা।’
সঙ্গে সঙ্গে মহিতুল পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু লাইন না পাওয়ায় গণভবনে ফোন করেন। সেখানে টেলিফোন রিসিভ করলেও কেউ কথা বলেনি। এ সময় বঙ্গবন্ধু দোতলা থেকে নিচে নেমে আসেন। মহিতুল ‘হ্যালো হ্যালো’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু মহিতুলের হাত থেকে রিসিভার নিয়ে বলে, ‘আমি প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব বলছি।’ ঠিক সেই মুহূর্তে এক ঝাঁক গুলি জানালার কাচ ভেঙে অফিস ঘরের দেয়ালে লাগে। অনর্গল গুলি আসতে থাকে। বঙ্গবন্ধু টেবিলের পাশে শুয়ে পড়েন। মহিতুলকেও শুয়ে পড়তে বলেন। কিছুক্ষণ পর গুলি বন্ধ হয়। ওপর থেকে বঙ্গবন্ধুর কাজের ছেলে পাঞ্জাবি ও চশমা নিয়ে আসেন। বঙ্গবন্ধু তা পরেন। পরে তিনি বারান্দায় যান। তিনি বলেন, ‘আর্মি সেন্ট্রি, পুলিশ সেন্ট্রি এত গুলি চলছে, তোমরা কী করো?’ এই বলে বঙ্গবন্ধু ওপরে উঠে যান। এরপরই শেখ কামাল নিচে বারান্দায় আসেন। তিনি বলেন, ‘আর্মি, পুলিশ ভাই আপনারা আমার সঙ্গে আসেন।’ বলার সঙ্গে সঙ্গে তিন-চারজন কালো ও খাকি পোশাক পরা লোক অস্ত্রসহ শেখ কামালের সামনে এসে দাঁড়ান। ডিএসপি নুরুল ইসলাম ও মহিতুল পেছনে ছিলেন। এ সময় মেজর বজলুল হুদা শেখ কামালকে গুলি করেন। শেখ কামাল পড়ে গিয়েও বলেন, ‘আমি শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল।’ ওরা সঙ্গে সঙ্গে কামালকে আবার গুলি করে। তিনি সেখানেই মারা যান। ডিএসপি নুরুল ইসলাম ও মহিতুলকে চুল ধরে টেনে নিয়ে বাড়ির মূল ফটকে লাইনে দাঁড় করানো হয়। সেখানে পুলিশের লোক ও টেলিফোন অপারেটর মতিনকেও দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসেরকেও সেখানে দাঁড় করানো হয়। রান্না ঘর থেকে বুড়ি (গৃহকর্মী) ও রাখাল আজিজকেও নিয়ে আসা হয়। অস্ত্রধারী লোকেরা গুলি করতে করতে ওপরে ওঠে। এ সময় বঙ্গবন্ধুর উচ্চকণ্ঠ শোনা যায়।
মূল ফটকের লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা শেখ নাসের খুনিদের বলেন, ‘স্যার আমি তো রাজনীতি করি না। আমি ব্যবসা-বাণিজ্য করে খাই।’ তখন পাশে দাঁড়ানো একজন অস্ত্রধারী বলেন, ‘শেখ মুজিব ইজ ব্যাটার দ্যান নাসের।’ আরেকজন বলেন, ‘ঠিক আছে নাসের সাহেব পাশের রুমে গিয়ে বসেন।’ নাসের পাশের কক্ষে যান। একটু পরই তাঁকে সেখানে গুলি করে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর আগে শেখ নাসের পানি চান। কিন্তু তাঁকে পানি না দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করতে আবার গুলি করা হয়। তিনি মারা যান। এ সময় শিশু রাসেল ও গৃহকর্মী রমাকে নিচে নিয়ে আসা হয়। শিশু রাসেল রমা ও মহিতুলকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে। সে বলে, ‘ভাইয়া আমাকে মারবে না তো। পরে খাকি পোশাকধারী একজন জোর করে রাসেলকে নিয়ে যায়। রাসেল মায়ের কাছে যেতে চায়। মায়ের কাছে নেওয়ার কথা বলে তাকে ভেতরে নিয়ে যায়। একটু পরই গুলির শব্দ শোনা যায়। এদিকে ওপরের তলায় বঙ্গবন্ধু, শেখ ফজিলাতুন্নেছা, শেখ জামাল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী ও এসবির একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করে ঘাতকেরা।
মহিতুল তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, মেজর ফারুক, মেজর নুর, মেজর ডালিম, মেজর বজলুল হুদাকে তিনি হত্যাকাণ্ডের সময় অন্যদের সঙ্গে ৩২ নম্বরের বাড়িতে দেখেছেন। হত্যাকাণ্ড শেষ হওয়ার পর বাড়ির মূল ফটকের কাছে বজলুল হুদা মেজর ফারুককে বলেন, ‘অল আর ফিনিশড।’ পুরো ঘটনার সময় বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে দিয়ে ট্যাংক যাওয়া-আসা করে। ট্যাংকের ওপর সেনাবাহিনীর লোকজন ছিল।
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার নুরুল ইসলাম (তৎকালীন ডিএসবির প্রোটেকশন ফোর্স হিসেবে বঙ্গবন্ধুর বাসার গার্ডদের চার্জে ছিলেন) সাক্ষ্যে বলেন, ১৪ আগস্ট দিবাগত রাত আনুমানিক ১টার সময় তিনি ও একজন পুলিশ সার্জেন্ট বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে নিচের তলার বৈঠকখানায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর পিএ কাম রিসেপশনিস্ট মহিতুল ইসলাম সেখানে ছিলেন। ভোর আনুমানিক ৫টার সময় দোতলা থেকে বঙ্গবন্ধুর গলার আওয়াজ শুনতে পান তিনি। এর পর মহিতুলের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি ঘটনার বর্ণনা দেন।
হত্যার আগে বঙ্গবন্ধু খুনিদের প্রশ্ন করেন, ‘তোরা কী চাস?’—এমন বর্ণনা এসেছে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে কাজ করা আবদুর রহমান শেখ রমার সাক্ষ্য থেকে। বঙ্গবন্ধু নিচে নামার পর আবার ওপরে ওঠার বর্ণনা দিয়ে রমা বলেন, ‘একসময় বঙ্গবন্ধু তাঁর শোয়ার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। কিছুক্ষণের জন্য গোলাগুলি থেমে যায়। এর পর বঙ্গবন্ধু বের হন। তাঁকে খুনিরা ঘিরে ধরে। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘তোরা কী চাস? আমাকে কোথায় নিয়ে যাবি?’ খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে সিঁড়িতে নিয়ে যায়। সিঁড়ির দুই-তিন ধাপ নেওয়ার পর তাঁকে গুলি করা হয়। রমা তখন বঙ্গবন্ধুর পেছনে ছিলেন। খুনিরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুই কে?’ রমা উত্তর দেন, তিনি এ বাসায় কাজ করেন। তাঁকে তারা বলে, ‘তুই ওপরে যা।’ রমা ওপরে গিয়ে বেগম মুজিবকে বলেন, ‘আম্মা আর্মিরা সাহেবকে গুলি করেছে।’ বেগম মুজিব এ সময় বাড়ির অন্য সবাইকে নিয়ে বাথরুমে আশ্রয় নেন। পরে বেগম মুজিব বলেন, ‘মরলে সবাই একসঙ্গে মরব। তোরা বের হয়ে আয়।’ এর আগেই খুনিরা বেগম মুজিবের কক্ষে ধাক্কা মারে। বেগম মুজিব বের হয়ে আসেন। সবাই তখন তাঁকে নিচে নামানোর চেষ্টা করে। বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখে তিনি চিৎকার করেন। বলেন, ‘আমি নিচে যাব না। আমাকে এখনেই মেরে ফেল।’ এর পর সবাইকে দোতলায় নিয়ে যায়। সবাইকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
সেই দিন বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের আরেক গৃহকর্মী সেলিম শয়নকক্ষের সামনে করিডরে ঘুমিয়ে ছিলেন। গোলাগুলির শব্দে তিনি শেখ কামালের কক্ষের বাথরুমে আশ্রয় নেন। উঁকি দিয়ে ঘটনা দেখতে গেলে তাঁকে টেনে বাইরে এনে গুলি করা হয়। তাঁকে টেনে বঙ্গবন্ধুর সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু এ সময় বলেন, ‘ছেলেটি অনেক দিন আমার কাছে আছে। তাকে কে গুলি করল। তোরা কেন বেয়াদবি করছিস?’ এরপরই বঙ্গবন্ধুকে গুলি করা হয়।
নারীদের আর্ত চিৎকার
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বেগম মুজিবসহ বাড়ির নারীদের নিচে নামানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বেগম মুজিব সিঁড়িতেই তাঁদের মারতে বলেন। খুনিরা এ সময় তাঁদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর শয়নকক্ষে নিয়ে যান। এর পর তাঁদের গুলি করা হয়। এ সময় আর্ত চিৎকার শোনা যায়। মহিতুল তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, নারীদের আহাজারি, আর আর্ত চিৎকারও তিনি শোনেন। কিন্তু এসব খুনিদের মন গলাতে পারেনি। কুদ্দুস সিকদার, সেলিম, রমা, নুরুল ইসলামও তাঁদের সাক্ষ্যে বাড়ির মহিলাদের চিৎকারের বর্ণনা দেন জবানবন্দিতে।
বঙ্গবন্ধুর সেনারক্ষী হাবিলদার কুদ্দুস সিকদার বলেন, তিনি ওই রাতে ৩২ নম্বরে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে সিঁড়িতে নেওয়ার পর তিনি খুনিদের বিভিন্ন প্রশ্ন করার সময় মেজর নুর ও মেজর বজলুল হুদা ইংরেজিতে কী কী যেন বলেন। তাঁদের হাতে থাকা স্টেনগান দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে তাঁরা গুলি করেন। আজিজ পাশা ও রিসালদার মোসলেম বেগম মুজিব, শেখ জামাল, সুলতানা কামাল, রোজী জামালকে গুলি করে হত্যা করে।
বঙ্গবন্ধুর পরনে লুঙ্গি গায়ে পাঞ্জাবি ছিল
যখন গুলি করা হয়, তখন বঙ্গবন্ধুর পরনে লুঙ্গি, গায়ে পাঞ্জাবি ছিল। চোখে চশমা, হাতে সিগারেটের পাইপ ও একটি ম্যাচ ছিল। কুদ্দুস সিকদার তাঁর জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন।
মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে খুনিরা
বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সবাইকে খুন করার পর সেনা জোয়ানরা ওই বাড়ির আলমারি ও আসবাবপত্র তছনছ করে। বিভিন্ন স্থান থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। আলমারির ড্রয়ার খুলেও জোয়ানরা কিছু মালামাল নেয়। সুবেদার মেজর ওয়াহাবও (আবদুল ওয়াহাব জোয়ারদার) জোয়ানদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি একটি ব্রিফকেস, সোনার গয়না, বিদেশি মুদ্রা, রেডিও, টেলিভিশন নিয়ে নিচে থাকা একটি গাড়িতে তোলেন। অন্য জিনিসপত্র অন্য জোয়ানরা ব্যাগে করে নিয়ে যায়। ওই বাড়ি ও লাশ পাহারা দেওয়ার জন্য কুদ্দুস সিকদারকে রেখে যান। এর মধ্যে কর্নেল জামিলের লাশ একটি গাড়িতে করে ওই বাড়িতে আনা হয়।
এই মামলায় আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মহিউদ্দিন (আর্টিলারি), তাহের উদ্দিন ঠাকুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। প্রত্যেকে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন। ওই রাতে বিভিন্ন অপারেশনেও ছিলেন তাঁরা। তবে তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে ঠিক যখন হত্যা করা হয়, তখন উপস্থিত ছিলেন না। আগে-পরে ছিলেন।

উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।
নাদিম নেওয়াজ

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে মহিতুল তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, তিনি ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঘুমিয়েছিলেন। ১৪ আগস্ট রাত ৮/৯ টার দিকে বঙ্গবন্ধু বাসায় ফেরেন। তাঁর সঙ্গেও রক্ষীরা চলে যান। রাত ১টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু বাড়িতে...
১৫ আগস্ট ২০২২
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।
আসাদুজ্জামান নূর

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে মহিতুল তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, তিনি ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঘুমিয়েছিলেন। ১৪ আগস্ট রাত ৮/৯ টার দিকে বঙ্গবন্ধু বাসায় ফেরেন। তাঁর সঙ্গেও রক্ষীরা চলে যান। রাত ১টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু বাড়িতে...
১৫ আগস্ট ২০২২
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম।
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে মহিতুল তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, তিনি ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঘুমিয়েছিলেন। ১৪ আগস্ট রাত ৮/৯ টার দিকে বঙ্গবন্ধু বাসায় ফেরেন। তাঁর সঙ্গেও রক্ষীরা চলে যান। রাত ১টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু বাড়িতে...
১৫ আগস্ট ২০২২
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে মহিতুল তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, তিনি ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঘুমিয়েছিলেন। ১৪ আগস্ট রাত ৮/৯ টার দিকে বঙ্গবন্ধু বাসায় ফেরেন। তাঁর সঙ্গেও রক্ষীরা চলে যান। রাত ১টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু বাড়িতে...
১৫ আগস্ট ২০২২
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫