Ajker Patrika

সিলেট মহানগর: একলাফে ৬৬ গুণ বাড়ল গৃহকর

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
Thumbnail image

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম ও আব্দুল করিম। তাঁদের ছোট ভাই আব্দুল মুমিন ওয়ার্কশপে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করেন। সিলেট নগরের বন্দরঘাটের পত্যপাড়ায় আধা পাকা তিন কক্ষের বাসায় তাঁরা তিন ভাই পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। বছরে তাঁদের হোল্ডিং কর ছিল ১২০ টাকা। ৬৬ গুণ বেড়ে সেটা এখন ৭ হাজার ৯২০ টাকা। হঠাৎ একলাফে এই অস্বাভাবিক হোল্ডিং কর বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। শুধু রহিম, করিম নয়; এ অবস্থা নগরের ধনী-গরিব সবার।  

গতকাল সোমবার বিকেলে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) হোল্ডিং করের অ্যাসেসমেন্ট/রি-অ্যাসেসমেন্ট বুথে গিয়ে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া যায়। সিসিকের পুরোনো ২৭টি ওয়ার্ডের হোল্ডিং করের পঞ্চবার্ষিক মূল্যায়ন উপলক্ষে নগর ভবনের সামনে ২০টি বুথে ৩০ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই অ্যাসেসমেন্ট/রি-অ্যাসেসমেন্ট চলবে ১৪ মে পর্যন্ত।

এ সময় নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ১০ জনের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তাঁরা সবাই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জানান, নজিরবিহীনভাবে ভৌতিক হোল্ডিং কর নির্ধারণ করা হয়েছে। কারও কারও শত গুণও বাড়ানো হয়েছে। অনেকেই অমানবিক হোল্ডিং কর আদায়ের এই কার্যক্রম বন্ধ করে পুনরায় যাচাই-বাছাই করে যৌক্তিক কর নির্ধারণের দাবি জানান। প্রয়োজনে তাঁরা মামলা এবং গণ-আন্দোলনেরও হুমকি দেন। ইতিমধ্যে আরোপিত ‘অযৌক্তিক’ হোল্ডিং কর বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), হোল্ডিং করসহ নাগরিক দুর্ভোগ নিরসনে ৭ দফা প্রস্তাবও দিয়েছে দুর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ। এর আগে বিবৃতি দিয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সিলেট মহানগর বিএনপি। গতকাল সোমবার রাতে একই বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে জাসদের উদ্যোগে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হোল্ডিং কর বৃদ্ধি হওয়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। স্বাভাবিক হারে সেটি সব জায়গায় বৃদ্ধি করা হয়। আমাদের ১০০ গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখনো সময় আছে মেয়র এটি বন্ধ বা বাতিল করে নগরবাসীকে নিয়ে বসে যৌক্তিক কর নির্ধারণ করার। অন্যথায় তিনি একজন বিতর্কিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে পরিচিতি লাভ করবেন।’

সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারের সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল জব্বার জলিল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যারা হোল্ডিং কর দেয়, তাদের ওপর বোঝা না চাপিয়ে নতুন করদাতা তৈরি করা উচিত। হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর আগে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে যখন মানুষের নাভিশ্বাস, তখন এমন ভৌতিক হোল্ডিং ট্যাক্স মেনে নেওয়া যায় না। এই কার্যক্রম স্থগিত করে সহনীয় হারে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হোক।’

সিসিকের প্রধান অ্যাসেসর মো. আব্দুল বাছিত জানান, ‌‘বর্গফুটপ্রতি বাণিজ্যিকে ৮ ও আবাসিকে ৫ টাকা ধার্য করে হোল্ডিং কর নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন ওয়ার্ডগুলোতে অ্যাসেসমেন্টের কাজ চলছে, শেষ হলে হোল্ডিং করের পরিমাণ জানিয়ে দেওয়া হবে। ভুল-বোঝাবুঝি হচ্ছে, কেউ কেউ একটু বাড়িয়েও বলছেন। আগে কম ছিল না, রিভিউ করে কমিয়ে দেওয়া হতো।’ 

সিসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান খান বলেন, ‌‘মূলত হোল্ডিং কর খুব বেশি বাড়ানো হয়নি। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণত প্রতি ৫ বছর পর একবার করে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করার নিয়ম। কিন্তু সিসিকে প্রায় ২০ বছর পর নতুন হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করায় মানুষের কাছে একটু বেশিই মনে হচ্ছে। তারপরও সিসিক কর্তৃপক্ষ আপত্তি করার সুযোগ রেখেছে। নির্দিষ্ট ডি-ফরম পূরণ করে যৌক্তিক দাবি তুলে ধরলে তা যাচাই করা হবে। এ জন্য কয়েক দিনের মধ্যেই রিভিউ (পর্যালোচনা) বোর্ড গঠন করা হবে। এই বোর্ড পরবর্তী সময়ে শুনানির দিন ধার্য করবে এবং আপত্তিকারীর দাবি যৌক্তিক হলে তাঁর কর কমিয়ে দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত