Ajker Patrika

চলনবিল

নির্বিচারে শামুক নিধনে ঝুঁকিতে জীববৈচিত্র্য

আব্দুল্লাহ আল মারুফ, সিরাজগঞ্জ
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯: ১৭
চলনবিলের বিভিন্ন স্থানে রাতভর বিশেষ জাল দিয়ে ধরা হয় শামুক। ভোর হলে সেসব বোঝাই করা নৌকা ভেড়ে সিরাজগঞ্জের শামুকের আড়ত মাকড়শনে। সকাল থেকেই এখানে শুরু হয় জমজমাট কেনাবেচা। ছবি: আজকের পত্রিকা
চলনবিলের বিভিন্ন স্থানে রাতভর বিশেষ জাল দিয়ে ধরা হয় শামুক। ভোর হলে সেসব বোঝাই করা নৌকা ভেড়ে সিরাজগঞ্জের শামুকের আড়ত মাকড়শনে। সকাল থেকেই এখানে শুরু হয় জমজমাট কেনাবেচা। ছবি: আজকের পত্রিকা

দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে নৌকার পর নৌকা ভিড়ছে চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মাকড়শনে। এটি শামুকের আড়ত। সকাল থেকে এখানে শুরু হয় জমজমাট ক্রয়-বিক্রয়।

রাতভর চলনবিলের নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর ও সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ জাল দিয়ে ধরা হয় শামুক। ভোর হলে সেসব বোঝাই করা নৌকা ভেড়ে মাকড়শনে। এই এলাকায় এ রকম ২০-২৫টি আড়ত রয়েছে।

প্রতিটি আড়তে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই টন শামুক কেনাবেচা হয়। স্থানীয় ব্যাপারীদের হাতবদল হয়ে সেগুলো চলে যায় দেশের নানা প্রান্তে, বিশেষ করে মাছের ঘের ও হাঁসের খামারে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি দীপক কুমার কর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শামুক আসলে পানির প্রাকৃতিক ফিল্টার হিসেবে কাজ করে এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চলনবিল থেকে নির্বিচারে শামুক নিধন প্রতিরোধ করতে না পারলে এখানকার ইকোসিস্টেম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ যাঁরা শামুক সংগ্রহ করছেন, তাঁদের বেশির ভাগই কৃষক বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এটি তাঁদের জীবিকার প্রধান উৎস নয়, বরং অতিরিক্ত আয়ের উৎস। এই কাজ বন্ধ করলে তাঁদের জীবন-জীবিকায় তেমন প্রভাব পড়বে না, বলেন দীপক কুমার।

তাড়াশ উপজেলার কামাড়শোন, দিঘি সগুনা, কুন্দল মাকড়শন বিল-নাদো, মান্নাননগর, ঘরগ্রাম, মাগুরা বিনোদসহ আশপাশের ২০-২৫টি এলাকায় প্রতিদিন প্রায় ৫০০ নৌকায় শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ করে স্থানীয়রা। প্রতিদিন এলাকা ভেদে দুই-তিন টন শামুক তোলেন স্থানীয়রা। কিছু ব্যবসায়ী এসব ছোট নৌকা ও জাল সরবরাহ করে থাকেন।

প্রতিটি নৌকায় ৪-৫ জন কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা দিনমজুর মিলে ২৫-৩০ বস্তা শামুক তোলেন। প্রতি নৌকার শামুক বিক্রি হয় ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকায়। এর মধ্যে তেলসহ আনুষঙ্গিক খরচ হয় ৯০০-১১০০ টাকা।

কামাড়শোন গ্রামের আব্দুল মোতালেব ও জালাল উদ্দিন বলেন, বর্ষার সময়ে চাষাবাদ বন্ধ থাকে। পেটের দায়ে তাঁরা শামুক ধরেন। প্রতিদিন তিন-চার বস্তা শামুক সংগ্রহ করে পান ৪০০-৫০০ টাকা। প্রতি বস্তার দাম ৩৫০-৪০০ টাকা।

ব্যবসায়ী মো. কামাল জানান, স্থানীয় সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে কিনে তাঁরা খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মাছের খামারে শামুক সরবরাহ করেন। বর্ষার তিন-চার মাস চলে এই ব্যবসা। তাঁর ভাষায়, ২০-২৫ জন ব্যবসায়ী মিলে কোটি টাকার শামুক বিক্রি করেন প্রতিবছর।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ৭-৮ বছর ধরে চলছে অবাধে শামুক-ঝিনুক নিধন। প্রকাশ্যে কেনাবেচা হয়। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব। নেওয়া হচ্ছে না যথাযথ ব্যবস্থা। তাঁরা আরও বলেন, চলনবিলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় শামুক ও ঝিনুকের গুরুত্ব অপরিসীম। এগুলো শুধু মাছের খাদ্য নয়, পানির ক্ষুদ্র জীব খেয়ে জলাশয়কে পরিচ্ছন্ন রাখে। শামুক মাটির গুণাগুণও ধরে রাখে। কিন্তু বছরজুড়ে নির্বিচার নিধনে ঝুঁকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য।

এ বিষয়ে জানতে শনিবার মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হয় তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত জাহানকে। তিনি বলেন, ‘যাঁরা শামুক আহরণ করছেন, তাঁরা যখন সেগুলো বিক্রি করবেন তখন আমরা দেখব, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না।’ যেখান থেকে শামুক তোলা হয়, সেখানে গিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে? তিনি বলেন, ‘কয়েকটি পয়েন্টের খোঁজ পেয়েছি। সরেজমিনে ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত