Ajker Patrika

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি

সড়কে হাট, ঝুঁকি-দুর্ভোগ

  • পৌরসভা কার্যালয়ের সামনের সড়কে ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে বেচাকেনা।
  • এলোমেলোভাবে রাখা গাড়ি ও ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ের কারণে যাত্রী এবং যান চলাচলে দুর্ভোগ।
  • ইজারা নেই, তবু খাজনা আদায়; ‘কিছু টাকা’ পৌরসভার কার্যালয়েও যায়।
সবুজ সরকার, বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ)আব্দুল্লাহ আল মারুফ, সিরাজগঞ্জ
সড়কে ধানের হাট। ভিড়ে যান চলাচল ব্যাহত। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌর কার্যালয়ের সামনের সড়কে গতকালের চিত্র। আজকের পত্রিকা
সড়কে ধানের হাট। ভিড়ে যান চলাচল ব্যাহত। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌর কার্যালয়ের সামনের সড়কে গতকালের চিত্র। আজকের পত্রিকা

সকাল সাড়ে ৭টা। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌরসভার সামনের আঞ্চলিক সড়ক ধীরে ধীরে ভরে উঠতে থাকে ধান ও সরিষার বস্তায়। আশপাশের চরাঞ্চল থেকে আসা কৃষকেরা নৌকা বা ভ্যানগাড়িতে করে ধান নামাতে থাকেন আর ব্যাপারীরা দরদামে ব্যস্ত। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাস্তাটি পরিণত হয় বড়সড় হাটে। কেনাবেচা চলে দুপুর পর্যন্ত।

সপ্তাহে এক দিন (বুধবার) বসে এই হাট। হাটে আসা বিভিন্ন গাড়ি এলোমেলোভাবে রাখা হয়। ফলে এই সড়ক দিয়ে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। একই সঙ্গে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও তৈরি হয়। সরকারিভাবে হাটটি ইজারা দেওয়া হয় না, তবু সেখান থেকে খাজনা তোলা হয়।

কৃষকেরা জানান, মেঘুল্লা চর, ক্ষিদ্রচাপড়ি, বাঙ্গা চর, ক্ষিদ্রমাটিয়া, জামতৈল, চরবেল, মেহেরনগর, দিগুলিয়া, সরদুল, গাপচাপড়ি ও বড়ধুল ইউনিয়নসহ অন্তত এক ডজন এলাকার কৃষিপণ্য এখানে আসে। স্থানীয় লোকজন ছাড়াও টাঙ্গাইল ও আশপাশের জেলার ব্যবসায়ীরা ধান, সরিষা, গম, ভুট্টা কিনতে এ হাটে ভিড় জমান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবারের সাপ্তাহিক এই হাট একসময় পৌরসভার পাশের ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে বসত। জমির মালিক জমি দিতে না চাইলে পৌরসভার সহযোগিতায় পরে সেটি স্থানান্তর হয়। বসে সড়কের ওপরই। এখানে কোনো সরকারি ইজারা নেই। তবে প্রতি বস্তা ধানে ৩৫-৪০, সরিষায় ৬০-৭৫ টাকা খাজনা তোলা হয় স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে।

গতকাল বুধবার সকালে হাটে গিয়ে কথা হয় স্থানীয় ব্যাপারীদের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, সকাল ৭টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত এখানে ১০-১২ লাখ টাকার ধান কেনাবেচা হয়। সঙ্গে সরিষা, গম ও ভুট্টা বিক্রি হয় আরও ৮-১০ লাখ টাকার।

এই সড়ক দিয়ে সিরাজগঞ্জ শহর, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক ও এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সংযোগ। হাট বসার দিনগুলোতে ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে।

সড়কে হাট বসার বিষয়ে পথচারী কামাল উদ্দিন বলেন, ‘প্রচণ্ড যানজট হয়। আমাদের চলাচলে এবং গাড়ি যাতায়াতে কষ্ট হয়।’ সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ইয়াসিন বলেন, ধান কেনাবেচার সময় নসিমন ও ব্যাটারিচালিত গাড়ি এলোমেলোভাবে রাখা হয়। তখন রাস্তার ধারে গাড়ি খালে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

ধান ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন বলেন, আজ (গতকাল বুধবার) ২৯ জাতের ধান ১ হাজার ৩২০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। আমি টাঙ্গাইল পাঠানোর জন্য ৫০-৬০ মণ ধান কিনেছি।’ তিনি বলেন, ‘রাস্তার ওপর হাট বসার কারণে আমরাও সমস্যায় পড়ি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের কয়েকজন এ হাট থেকে খাজনা তোলেন। তবে এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে চাননি।

পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আমিনুজ্জান বলেন, ‘আমরা বহুবার হাট ইজারা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাবে আগ্রহীরা এগোয়নি। এতে সরকারের বছরে কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। আর বর্তমানে নামে মাত্র কিছু টাকা পৌরসভার কার্যালয়ের আসে।’

বেলকুচি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক আফরিন জাহান বলেন, ‘আঞ্চলিক সড়কে দোকানপাট বসিয়ে হাট বসানো ঠিক নয়। এ বিষয়ে আমি আগে অবগত ছিলাম না, আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।’ তিনি বলেন, অন্য কোনো জায়গায় স্থানান্তরের সুযোগ আছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত