মধ্যরাতে আবার ফিরে আসে হাতির পালটি, চালায় ভাঙচুর

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বাতকুচি টিলার ঢালে মানুষের বাড়িঘরে আবারও তাণ্ডব চালিয়েছে বন্য হাতির পাল। গতকাল শুক্রবার রাতে সেখানে অন্তত ৩০টির বেশি বসতবাড়ি ভাঙচুর ও আসবাবপত্র তছনছ করে ৩৫-৪০টি বন্য হাতি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৩টি পরিবার।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে একই এলাকায় হাতির আক্রমণে সুরতন নেছার (৬০) মৃত্যু হয়। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী কাটাবাড়ি এলাকায় বন বিভাগের বিট অফিসসহ ৬টি ঘর ভেঙে তছনছ করে বন্য হাতির পাল। ২০ মে পার্শ্ববর্তী ঝিনাইগাতী গ্রামে এক ঘণ্টার ব্যবধানে হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয় দুজনের। সব মিলিয়ে গত ১১ দিনে জেলায় হাতির আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছে ৩ জন।

বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জের কর্মকর্তা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার দাওধারা-কাটাবাড়ি পাহাড়ের টিলায় ৭-৮ দিন ধরে ৩৫-৪০টি বন্য হাতি দল বেঁধে অবস্থান করছিল। কয়েক দিনে বাতকুচি বিট কার্যালয়, দাওধারা-কাটাবাড়ি ৬টি বসতঘর ভেঙে ধান-চাল খেয়ে ও পা দিয়ে নষ্ট করা ছাড়াও গত বুধবার রাতে মধুটিলা ইকোপার্কে ক্যান্টিন ভেঙে ফেলে হাতিগুলো। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার অবিরাম বৃষ্টির মধ্যে রাত ৩টার দিকে হাতির পালটি বাতকুচি নামাপাড়া এলাকায় সুরতন নেছার ঘরে হানা দেয়। এ সময় হাতির আক্রমণে তাঁর মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবার থেকে হাতির পালটি বাতকুচি পাহাড়ের টিলায় জঙ্গলে অবস্থান করছে। গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে হাতির পালটি জঙ্গল ছেড়ে বাতকুচি এলাকায় নেমে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু বন বিভাগের কর্মকর্তা, এলাকাবাসী ও এ্যালিফেন্ট রেসপন্স টিমের সদস্যরা রাত ১১টা পর্যন্ত মশাল জ্বালিয়ে হইহুল্লোড় করে হাতি দলকে বাতকুচি জঙ্গলের দিকে ফিরিয়ে দেয়। মধ্যরাতে ফের হাতির দলটি বাতকুচি নামাপাড়ায় হানা দেয়। এ সময় হাতির আক্রমণের ভয়ে কয়েকটি পরিবারের লোকজন নিরাপদ দূরত্বে চলে যায়। পরে ৩৫-৪০টি হাতির দল আক্রমণ চালিয়ে ৩০টি বসতঘর ভেঙে আসবাব তছনছ করে দেয়। শেষ রাতে দলটি বাতকুচি জঙ্গলে ফিরে যায়।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক হোসেন আলী (৪৫) বলেন, ‘২৩টি পরিবারের প্রায় ৩০টির বেশি বসতঘর ও আসবাব ভেঙে নছনছ করেছে বন্য হাতিগুলো। ঘরে এখন ধান-চাল দূরের কথা, এক মুঠো সরিষাও নাই। আমরা নিঃস্ব হইয়া গেলাম।’

এ ব্যাপারে বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. দেওয়ান আলী বলেন, ‘মশাল জ্বালিয়ে হইহুল্লোড় করে হাতির দলকে বাতকুচি জঙ্গলের দিকে ফেরাতে গ্রামবাসীসহ আমরা রাত ১১টা পর্যন্ত চেষ্টা করেছি। পরে রাতে হাতির আক্রমণে বাতকুচি নামাপাড়া এলাকায় ৩০টি বসতঘর ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ পেতে আবেদন করতে বলা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, হাতি দলটি এখন বাতকুচি এলাকার জঙ্গলে অবস্থান করছে। এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।