Ajker Patrika

দিনে অফিসে তালা দিয়ে রাতে বাগানে কাজ

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২১, ১২: ৩৩
দিনে অফিসে তালা দিয়ে রাতে বাগানে কাজ

সরকারি অফিসে সাধারণত কাজের সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা। কিন্তু গাইবান্ধা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রউফ তালুকদার দাপ্তরিক কাজকর্ম শুরুই করেন সন্ধ্যার পর, চলে মধ্যরাত এমনকি গভীর রাত পর্যন্ত। তা-ও আবার রাতের অফিস বসে ডাকবাংলোর সামনে বাগানে।

এ অবস্থায় প্রয়োজনীয় সেবা পেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। আর বিপাকে পড়েছেন জেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাঁরা চেয়ারম্যান এবং ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কাজের পরিবেশ নষ্ট করাসহ নানা অভিযোগ করেছেন।

সরেজমিনে শহরের থানাপাড়া রোডে জেলা পরিষদে গিয়ে দেখা যায় দোতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহীর কার্যালয়ে ঝুলছে তালা। নিচতলার কয়েকটি কক্ষ খোলা থাকলেও বেশির ভাগ কক্ষে কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পরিষদের এক কর্মচারী জানান, দিনের বেলায় সাধারণত চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী অফিস করেন না। অফিসে এলেও কিছুক্ষণ থাকার পর চলে যান। তবে রাতে নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত তাঁরা জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর বাগানে বসেন। সেখানে বসেই করেন দাপ্তরিক কাজকর্ম। ডাকবাংলোর এই বাগান জেলা পরিষদের একই কম্পাউন্ডের মধ্যেই।

জেলা পরিষদে সেবা নিতে আসা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের মোতালেব মিয়া বলেন, ‘চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করার জন্য কয়েক দিন ধরে আসছি, কিন্তু পাচ্ছি না। চেয়ারম্যানের একটা স্বাক্ষর আমার খুব দরকার। প্রধান নির্বাহীর কক্ষে দেখা যায় তালা দেওয়া।’

রাতে ডাকবাংলোর বাগানে দাপ্তরিক কাজের সময় চেয়ারম্যান আতাউর রহমানছেলের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্যের আবেদন নিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করতে তিন-চার দিন ধরে আসছেন গিদারী ইউনিয়নের দিনমজুর রফিক মিয়া। তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যানের দেখা পাচ্ছি না। অফিসের লোকজন শুধু বলে আবেদন জমা দিয়ে যান। কিন্তু এর আগেও একটি আবেদন জমা দিয়ে কোনো প্রতিকার পাইনি। তাই এবার চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম, যদি কোনো সাহায্য পাই।’

দিনে অফিস না করা এবং রাতে বাগানে অফিস করার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পরিষদের হিসাবরক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা ছোট চাকরি করি। আমাদের যেভাবে চালাবে আমার সেভাবেই চলব। তবে এভাবে অফিস করতে আমাদের বেশ অসুবিধা হয়।’

আর জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নিরুপায় হয়েই রাতে অফিস করছি।’

গাইবান্ধা জেলা নাগরিক মঞ্চের সদস্যসচিব ও জেলা বার সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, ‘জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী একজন সরকারি কর্মকর্তা, তাঁর উচিত সরকার নির্ধারিত অফিস সময় মেনে চলা। আর চেয়ারম্যানও যেহেতু জনসেবার সঙ্গে যুক্ত, তিনি দিনে অফিস না করলে মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। এর বাইরে তিনি চাইলে অন্য সময়ে দাপ্তরিক কাজ করতে পারেন, সেটা তাঁর বিষয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রউফ তালুকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাতে কাজ করা যদিও নিয়মের মধ্যে পড়ে না, তবু আমাদের করতে হচ্ছে।’ দিনে অফিসে তালা দিয়ে রাতে বাগানে অফিস কেন করেন এমন প্রশ্নে তিনি নিশ্চুপ থাকেন।

বক্তব্য জানতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমানকে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ফোন করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি ফোনে কোনো কথা বলব না, আপনি অফিসে আসেন।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শাস্তি পাচ্ছেন বিটিআরসির মহাপরিচালকসহ ৩০ জনের বেশি কর্মকর্তা

ভূমি অফিসের কাণ্ড: এসি ল্যান্ড দপ্তরের নামে দেড় কোটি টাকা আদায়

‘তেলের ক্রেতা’ হিসেবে ভারতকে আর পাবে না রাশিয়া, জানালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

হোলি আর্টিজানের ঘটনায় ‘জঙ্গি সন্দেহে’ আটক ছিলেন অনিন্দ্য, রাজশাহীর সাবেক মেয়র লিটনের চাচাতো ভাই তিনি

বরখাস্ত সৈনিককে অস্ত্র দিয়েছেন বিএনপি নেতা, অডিও নিয়ে তোলপাড়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত