Ajker Patrika

আগাম বেচাকেনায় হাঁড়িভাঙা, দাম পড়ে যাওয়ায় হতাশ চাষি-ব্যবসায়ীরা

মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি 
হাঁড়িভাঙা আমে বাজার সয়লাব, কিন্তু বেচাকেনা কম। ৩৫ টাকা দরে কেনা কাঁচা আম দ্রুত পেকে যাওয়ায় বিক্রি হয় ২৫-৩০ টাকা দরে। গতকাল বুধবার রংপুরের মিঠাপুকুর সদর বাজারে। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাঁড়িভাঙা আমে বাজার সয়লাব, কিন্তু বেচাকেনা কম। ৩৫ টাকা দরে কেনা কাঁচা আম দ্রুত পেকে যাওয়ায় বিক্রি হয় ২৫-৩০ টাকা দরে। গতকাল বুধবার রংপুরের মিঠাপুকুর সদর বাজারে। ছবি: আজকের পত্রিকা

রংপুরের বিখ্যাত ব্র্যান্ড হাঁড়িভাঙা আম বাজারজাতের দিনক্ষণ ঘোষণার আগেই বাজারে উঠেছে। ফলে চাহিদা-জোগানের ভারসাম্য ভেঙে গিয়ে দাম পড়ে গেছে, হতাশ হয়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তীব্র গরমে আগেভাগে আম পেকে যাওয়ায় অনেকেই বাধ্য হয়ে বিক্রি শুরু করলেও কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও হাঁড়িভাঙা আম পরিষদ সূত্র জানায়, এ বছর মিঠাপুকুর উপজেলায় ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙা আমের বাগান হয়েছে। এতে ২৬ থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের ২০ জুন থেকে বাজারে আম উঠলেও এবার দিনক্ষণ ঘোষণায় বিলম্ব হয়। গরমে আম দ্রুত পেকে যাওয়ায় ১০ জুন থেকেই চাষিরা আম বিক্রি শুরু করেন।

বাজার সয়লাব হওয়ার সাত দিন পর গত মঙ্গলবার (১৮ জুন) আনুষ্ঠানিকভাবে হাঁড়িভাঙা আমের বেচাকেনা উদ্বোধন করা হয় মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ হাটে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রংপুরের জেলা প্রশাসক মো. রবিউল ফয়সাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সেরাজুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মুলতামিস বিল্লাহ।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, হাঁড়িভাঙা আমকে রপ্তানিযোগ্য করতে পারলে কৃষক ও অর্থনীতি উপকৃত হবে। তবে মান ধরে রাখতে হবে। রাসায়নিকমুক্ত আম উৎপাদনে বাগানমালিকদের উৎসাহ দেওয়া হয়।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত বছর প্রতি কেজি হাঁড়িভাঙা আম ৮০ টাকা দরে বিক্রি হলেও এ বছর শুরুতে দাম ছিল ৬০ টাকা। বর্তমানে তা নেমে এসেছে ২৫-৫০ টাকায়। মিঠাপুকুর উপজেলা সদরের আম ব্যবসায়ী বাবলু মিয়া জানান, ‘তীব্র গরমে আম বেশি পেকেছে, তাই বাজারে আমদানি বেড়ে গেছে। এতে দাম কমেছে।’

হাঁড়িভাঙা আম পরিষদের সভাপতি আব্দুস সালাম সরকার বলেন, ‘আমি আমার বাগান এ বছর ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। অথচ গত বছর সেটির দাম ছিল ১৪ লাখ। আরও ১০-১৫ দিন অপেক্ষা করলে আম ভালোভাবে পরিপক্ব হতো। কিন্তু কিছু মুনাফালোভী ব্যবসায়ী কৃত্রিমভাবে পাকানো আম আগেভাগে বাজারজাত করেছেন।’

তিনি জানান, কৃত্রিমভাবে পাকানো আমের স্বাদ কম এবং তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এতে করে ‘জিআই’ স্বীকৃত এই আমের গুণগত মান ও সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমের ভেতরে গলে নরম হয়ে যাচ্ছে, তাই ক্রেতারা আগ্রহ হারাচ্ছেন।’

ভোক্তা আইনুল কবির লিটন জানান, ‘আম দেখে বাইরেরটা ঠিকঠাক লাগলেও ভেতরে নরম হয়ে থাকে, যা খেতে ভালো লাগে না।’

দুর্গাপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য স্বপন সরকার বলেন, ‘বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে হাঁড়িভাঙা আমের স্বাদ ও গুণাগুণ কমে যাচ্ছে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল আবেদীন বলেন, ‘বাজারজাতের দিনক্ষণ ঘোষণায় দেরি হলেও এখনই হাঁড়িভাঙা আমের উপযুক্ত সময়। তবে গলে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আমরা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা করেছি। কৃষকদের পরিপক্ব আম বাজারজাত ও কৃত্রিমভাবে পাকানো আম খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত