Ajker Patrika

হোয়াইট হাউসের নামে ভুয়া বিতর্ক: রাকিব ও তার পরিবার প্রতারণার শিকার

রংপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২৩, ২১: ৫২
হোয়াইট হাউসের নামে ভুয়া বিতর্ক: রাকিব ও তার পরিবার প্রতারণার শিকার

৭৩টি দেশের ৫৩৪ জন বিতার্কিককে পেছনে ফেলে ১৪৪টি বিতর্ক প্রতিযোগিতা জিতে যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে সেরা বিতার্কিক নির্বাচিত হয়েছে রংপুরের শাহ মুহাম্মদ রাকিব হাসান (১৭)। এর মধ্য দিয়ে রাকিব অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। দেশের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের অনলাইন ও প্রিন্ট সংস্করণে এমন খবর প্রকাশ হয়। সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে রাকিবকে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়। সেখানে রংপুর জেলা প্রশাসকও উপস্থিত ছিলেন। 

কিন্তু পরে জানা যায় খবরটি ভুয়া। হোয়াইট হাউস এমন কোনো বিতর্কের আয়োজনই করেনি। 

খবরটি ভুয়া প্রমাণিত হওয়ার পর রাকিবকে প্রতারণার জন্য দায়ী করে কোনো কোনো গণমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। আজকের পত্রিকার কাছে এ নিয়ে তার পরিবার উষ্মা প্রকাশ করে। রাকিবের পরিবারের দাবি, একটি চক্রের মাধ্যমে তাঁরা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এ জন্য তাঁরা উল্টো গণমাধ্যমকে দোষারোপ করেছেন। তাঁরা বলেন, এ-সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করতে গিয়ে কোনো গণমাধ্যমই রাকিব বা তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। 

রাকিবের ওই কথিত অর্জনের বিষয়ে গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউসের উদ্যোগে ‘ফাইন্ডিং ওয়ার্ল্ড ফিউচার লিডার্স ২০২৩’ আয়োজনে একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বাংলাদেশের রংপুরের স্কুলছাত্র শাহ মুহাম্মদ রাকিব হাসান সেরা বিতার্কিক হয়েছে। এতে বলা হয়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে প্রতিযোগিতাটি শেষ হয় ১৪ মার্চ। অনলাইনে হওয়া সেই বিতর্কে অংশ নেয় বিভিন্ন দেশের ৫৩৪ জন বিতার্কিক। 

গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ভবিষ্যতের নেতা খুঁজতে’ প্রতিবছর দুটি ক্যাটাগরিতে সংসদীয় বিতর্কের আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। একটি ব্রিটিশ সংসদীয় বিতর্ক, অন্যটি এশিয়ান সংসদীয় বিতর্ক। এবারের আয়োজনে চ্যাম্পিয়ন দেশ রাশিয়া। এরপরের অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাষ্ট্র। 

প্রতিবেদনগুলোতে আরও বলা হয়, হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশি স্কুলছাত্র রাকিব ৫৩৪ জন প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে সেরা বিতার্কিক হয়েছে। রাকিব ১৪৪টি বিতর্কে অংশ নিয়ে সবকটি জিতেছে। এর মধ্য দিয়ে হোয়াইট হাউসের রেকর্ড বুকে নাম উঠেছে রাকিবের। রাকিবের আগে লুইস অ্যান্ডারসন নামের একজন টানা ১৩৯টি বিতর্কে জিতে রেকর্ড গড়েছিলেন। 

এদিকে গণমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হলে বাংলাদেশি ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে জানতে পারে, হোয়াইট হাউস সম্প্রতি এমন কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজন করেনি। এ বিষয়ে হোয়াইট হাউস বা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কোনো সংশ্লিষ্টতারও প্রমাণ মেলেনি। হোয়াইট হাউসের ডোমেইনের সঙ্গে মিল রেখে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে ভুয়া প্রতিযোগিতার খবর ছড়ানো হয়। বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাস থেকেও এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। 

রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে আরও জানতে পারে, রাকিব তার ফেসবুক পোস্টে প্রতিযোগিতার ‘লিগ্যাল ডকুমেন্টস’ দাবি করে কিছু ছবি প্রকাশ করেছিল। এতে যুক্তরাষ্ট্রের দুজন কর্মকর্তার জাল স্বাক্ষরের প্রমাণ মিলেছে। তা ছাড়া রাকিব দুটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে জড়িয়ে ভুয়া খবরের স্ক্রিনশট তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেছে। 

এমনকি কথিত এই আয়োজনের পুরস্কার বিতরণের প্রস্তুতি সভার একটি ছবিও হোয়াইট হাউসের নামে খোলা ভুয়া সাইটটিতে রয়েছে। রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, এটি মূলত ২০১৮ সালের বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক প্রতিযোগিতার ছবি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাকিব আজকের পত্রিকাকে জানায়, সে নিয়মিত বিভিন্ন বিতর্কে অংশ নেয়। বিভিন্ন সময় দেশে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সে অনেক পুরস্কার জিতেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ফেসবুকের একটি পেজে ‘২৫ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ কাউন্সিলের বিতর্ক প্রতিযোগিতা হবে’, এমন পোস্ট সামনে এলে সেখানে সে নাম, মোবাইল নম্বর, ই-মেইল ঠিকানা দিয়ে নিবন্ধন করে। এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি তাকে একটি ই-মেইলের মাধ্যমে জানানো হয় যে, ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে অনলাইনে বিতর্কটি অনুষ্ঠিত হবে। 

 ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ মার্চ রাকিব অনলাইনে বিতর্কটিতে অংশ নেয়। ২০ মার্চ একই ই-মেইল ঠিকানা থেকে জানানো হয়, রাকিব সেরা বিতার্কিক হয়েছে। সেরা বিতার্কিক হিসেবে স্বীকৃতির প্রমাণ হিসেবে একটি ওয়েবসাইট লিংকও তাকে দেওয়া হয়। তাকে জানানো হয়, ২৮ মার্চ স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউস সাউথ কোর্ট অডিটোরিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার বিতরণ করা হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, বিশেষ অতিথি থাকবেন জেফ জায়েন্টস। 

পরিবার বলছে, পাসপোর্ট না থাকায় রাকিব ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেনি। 

এরপর বিষয়টি পারিবারিকভাবে যাচাই করার জন্য রাকিব তার দাদা (বাবার চাচা) ভোরের কাগজ পত্রিকার দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলা প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান বকুলকে জানায়। 

রাকিবের পরিবারের দাবি, শুরু থেকে গণমাধ্যমে রাকিবের বিশ্বসেরা বিতার্কিক হওয়ার যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলোর একটিতেও রাকিব বা তার পরিবারের কারও বক্তব্য নেই। ফলে কোনো গণমাধ্যমকে তাঁরা এ সংক্রান্ত খবর সরবরাহ করেছেন—এমন দোষ দেওয়া যায় না। গণমাধ্যমগুলো নিজেরা অতি উৎসাহী হয়ে খবরটি প্রকাশ করে। যাচাই-বাছাই ছাড়া, রাকিব ও তার পরিবারের সঙ্গে যোগযোগ না করে খবরটি প্রকাশ করে গণমাধ্যমগুলো দায়িত্বশীল কাজ করেনি। 

এ বিষয়ে রাকিবের বাবা শাহ মুহাম্মদ আবু সায়েম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডিবেট নিয়ে আমরা একবার প্রতারিত হয়েছি। আমরা নিউজ করার বিষয়ে কোনো মিডিয়াকে বলিনি। কোনো মিডিয়া আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করেই নিউজ ছাপিয়ে দিয়েছে। এখন দেখছি গণমাধ্যমই আমাদের প্রতারণার দোষ দিচ্ছে। আর যে রিউমর স্ক্যানার রাকিবকে প্রতারক বলছে, তারও কোনো ভিত্তি নেই। রিউমর স্ক্যানারও রাকিব বা আমাদের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।’ 

রাকিবের মা রোকেয়া বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার ছেলে প্রতারণার শিকার হয়েছে। আমার ছেলেকে আর কোনো এক্সট্রা কারিকুলারের সঙ্গে যুক্ত রাখব না। যেখানে আমি ভুক্তভোগী, আমাদের কোনো কথাবার্তা না শুনে নিউজ করা হলো। নিউজ করার আগে আমাদের সঙ্গে মিডিয়াগুলো যোগাযোগ করলে আজ আমার ছেলেকে কেউ প্রতারক বলতে পারত না।’ 

রোকেয়া বেগম আরও বলেন, ‘আমার ছেলে একজন প্রতিবন্ধী। যেখানে ওর নিজের কাজ নিজেই ঠিকঠাক করতে পারে না, সেখানে সে এত বড় প্রতারণা কীভাবে করবে? বিভিন্ন টেলিভিশন, পত্রিকা অনলাইন এখন আমার ছেলেকে প্রতারক বলছে। নানা ভাষায় গালমন্দ করছে। সংবাদমাধ্যমে এসব প্রকাশ না হলে আজ এই প্রতারণার কথা শুনতে হতো না। এসব কিছুর জন্য দায়ী মিডিয়াগুলোই। বর্তমানে আমরা কী পরিস্থিতির মধ্যে আছি, আপনাদের বোঝানো যাবে না।’ 

কথিত ফেসবুক পেজ থেকে আমন্ত্রণ, বিতর্কে অংশ নেওয়া এবং সেরা বিতার্কিক নির্বাচিত হওয়ার খবর রাকিব তার ফেসবুক আইডিতে বেশ উচ্ছ্বাসের সঙ্গে শেয়ার করেছে। প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়ার স্বীকৃতির সনদও এই ফেসবুক পেজ থেকে তাকে সরবরাহ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে রাকিব। সেগুলোও সে ফেসবুকে শেয়ার করেছে। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শাহ মুহাম্মদ রাকিব আজকের পত্রিকাকে বলে, ‘আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি। এখন আমাকে নিয়ে মানুষ বাজে মন্তব্য করছে। বাংলাদেশসহ আমেরিকার নিউজগুলো সব একই রকম। সব মিডিয়াই কপি-পেস্ট সাংবাদিকতা করেছে। একটা ঘটনা বিস্তারিত না জেনে কীভাবে দেশের গণমাধ্যম এমন কাজ করল বুঝতে পারছি না।’ 

এদিকে সেরা বিতার্কিক হওয়ার খবর পেয়ে রংপুর পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহ মুহাম্মদ রাকিব হাসানকে ২ এপ্রিল সম্মাননা দেয় সমাজসেবা অধিদপ্তর। রংপুর গ্রাস রুট কো-অপারেশনের সহযোগিতায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের আয়োজনে রংপুর জেলা প্রশাসনের সৌজন্যে রাকিবের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়। 

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক আব্দুল মতিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা সিভিল সার্জন মো. জাহাঙ্গীর কবির, বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মোশাররফ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) গোলাম রব্বানী প্রমুখ। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. চিত্রলেখা নাজনীন এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি তো ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলাম মাত্র। অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। তা ছাড়া প্রতিযোগিতার খবরটি যে ভুয়া, তা আমরা জানতাম না।’ 

উল্লেখ্য, শুরুতেই খবরটি আজকের পত্রিকার হাতে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে রাকিব ও তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এ-সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্যাদি যাচাই করে এবং রাকিবের সঙ্গে কথা বলে খবরটির সত্যতা না পাওয়ায় আজকের পত্রিকা এ-সংক্রান্ত খবর প্রকাশ থেকে বিরত থাকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএফআরআইতে মাছের খাদ্য প্রস্তুত ও প্রক্রিয়াকরণে সক্ষমতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ উদ্বোধন

বাকৃবি প্রতিনিধি 
বিএফআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্র আজ সকাল সাড়ে ৮টায় প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিএফআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্র আজ সকাল সাড়ে ৮টায় প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) উদ্যোগে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) সম্মেলনকক্ষে পাঁচ দিনব্যাপী একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন করা হয়েছে। ‘প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সিবিও সদস্যদের সক্ষমতা উন্নয়ন’ শীর্ষক কর্মশালাটি আজ মঙ্গলবার সকালে শুরু হয়।

বিএফআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্র সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এফএওর জাতীয় সক্ষমতা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ বিশেষজ্ঞ কিংকর চন্দ্র সাহা, বিএফআরআইয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কেন্দ্রপ্রধান (ফ্রেশ ওয়াটার স্টেশন) ড. মো. হারুনুর রশিদ এবং প্রশিক্ষণ শাখার প্রধান ড. মো. শরীফুল ইসলাম।

প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি আয়োজিত হয়েছে বাংলাদেশে কমিউনিটিভিত্তিক জলবায়ু সহনশীল মৎস্য ও অ্যাকুয়াকালচার উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায়, যা যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে মৎস্য অধিদপ্তর (ডিওএফ), বাংলাদেশ এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। প্রকল্পটি অর্থায়ন করছে গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (জিইএফ)।

প্রশিক্ষণে বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন কমিউনিটিভিত্তিক সংগঠনের (CBOs) ২১ জন সদস্য অংশগ্রহণ করছেন। প্রশিক্ষণ চলবে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত।

প্রশিক্ষণার্থীরা মাছের খাবার তৈরি ও প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত মেশিনের কার্যকর পরিচালনা, ত্রুটি শনাক্তকরণ ও রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন। পাশাপাশি স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার করে টেকসই মাছের খাদ্য প্রণয়ন সম্পর্কেও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি), মৎস্য অধিদপ্তর এবং বেসরকারি মাছের খাদ্য শিল্পের বিশেষজ্ঞরা প্রশিক্ষণে তাত্ত্বিক সেশন ও ব্যবহারিক প্রদর্শন পরিচালনা করবেন।

আয়োজকেরা জানান, এই উদ্যোগ অংশগ্রহণকারীদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও উদ্যোক্তা সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। এর ফলে তাঁরা নিজ নিজ এলাকায় কার্যকরভাবে ফিড মেশিন পরিচালনা করতে পারবেন এবং জলবায়ু সহনশীল, টেকসই মৎস্য চাষ সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখতে পারবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মৌসুমি রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে ব্রাহ্মণপাড়ায়, ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার জটিলতায় রোগীর ভিড়

মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) 
চিকিৎসা নেওয়ার অপেক্ষায় ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে রোগীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
চিকিৎসা নেওয়ার অপেক্ষায় ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে রোগীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় মৌসুমি রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। উপজেলাজুড়ে শিশু, বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষ জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া, পেটব্যথা, শ্বাসকষ্টসহ নানা উপসর্গে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্রে রোগীর চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ।

এই সময়ে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বিদ্যমান থাকায় চিকিৎসা বিভ্রান্তি ও জটিলতা তৈরি হচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের অনেকের উপসর্গ এক রকম হওয়ায় সঠিক ডায়াগনসিস না হলে রোগ নির্ণয়ে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকেই রোগী ও স্বজনদের উপচে পড়া ভিড়। অধিকাংশ রোগী জ্বর, সর্দি-কাশি, শরীর ব্যথা, গিঁটে ব্যথা, পেটব্যথা ও ডায়রিয়ায় ভুগছে। কেউ কেউ দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠলেও কারও কারও সেরে উঠতে সময় লাগছে বেশি। চিকিৎসকদের মতে, এসব রোগীর ইমিউন সিস্টেম দুর্বল থাকায় সুস্থ হতে দেরি হচ্ছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, এই সময়ে মৌসুমি জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রভাব দেখা দিচ্ছে। এ জন্য রোগীদের সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। এতে অল্প সময়ে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে রোগীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে রোগীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা কামাল হোসেন বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে ছেড়ে ছেড়ে জ্বর আসছে। ফার্মেসি থেকে ওষুধ খেয়েও কাজ হয়নি, তাই হাসপাতালে এসেছি।’

এক রোগীর মা শিরিনা বেগম জানান, তাঁর সাড়ে চার বছরের মেয়ে খাদিজা এক সপ্তাহ ধরে জ্বর ও সর্দি-কাশিতে ভুগছে। স্থানীয় পল্লিচিকিৎসকের ওষুধে কাজ না হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন।

লিপি আক্তার নামের এক রোগী বলেন, ‘দুই দিন ধরে জ্বর, মাথাব্যথা আর ডায়রিয়ায় ভুগছি। আজ খুব দুর্বল লাগছে। ডাক্তার ওষুধ লিখে দিয়ে বলেছেন, নিয়ম মেনে খেলেই সুস্থ হয়ে যাব।’

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শেখ হাসিবুর রেজা বলেন, ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে মৌসুমি রোগের প্রকোপ স্বাভাবিকভাবে বাড়ে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। জ্বর, কাশি, সর্দি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া এখন বেশি দেখা যাচ্ছে। যাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল, তারা দ্রুত আক্রান্ত হচ্ছে।

শেখ হাসিবুর রেজা আরও বলেন, ‘এই সময়ে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রভাবও রয়েছে। তাই অসুস্থ হলে দেরি না করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অথবা রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। আমরা হাসপাতালে আসা রোগীদের পরামর্শ দিচ্ছি এবং বিনা মূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নালিতাবাড়ীতে কম মুনাফায় ওষুধ বিক্রি করায় ফার্মেসিকে জরিমানা ও দোকান বন্ধ

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি 
পৌর শহরের নালিতাবাড়ী বাজার এলাকায় সততা ড্রাগ হাউস। ছবি: আজকের পত্রিকা
পৌর শহরের নালিতাবাড়ী বাজার এলাকায় সততা ড্রাগ হাউস। ছবি: আজকের পত্রিকা

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে কম মুনাফায় ওষুধ বিক্রির অভিযোগে ‘সততা ড্রাগ হাউস’ নামে একটি ফার্মেসিকে ১ হাজার টাকা জরিমানা ও ৬ ঘণ্টার জন্য দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি। সোমবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে পৌর শহরের নালিতাবাড়ী বাজার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনায় রাতে উপজেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি আবু সিনা তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দোকান বন্ধের ছবি দিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি লেখেন, ‘সমিতির আইন লঙ্ঘনের দায়ে সততা ড্রাগ হাউসকে ১ হাজার টাকা জরিমানা ও ৬ ঘণ্টা দোকান বন্ধ করে দিল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি।’ পোস্টটি ভাইরাল হলে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ওই দিন বিকেলে একজন ক্রেতার কাছে কম মুনাফায় পাইকারি দরে ওষুধ বিক্রি করেন দোকানের মালিক মিজানুর রহমান। পরে বিষয়টি সমিতির নেতাদের কানে গেলে তাঁরা দোকানে এসে জরিমানা করেন ও ৬ ঘণ্টা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এ সময় কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন না।

সততা ড্রাগ হাউসের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান বলেন, ‘একজন ব্যবসায়ীর কাছে একটু কম দামে ওষুধ বিক্রি করেছিলাম। এ জন্য সমিতি আমার দোকান বন্ধ ও জরিমানা করেছে। অথচ আমিও ওই সমিতির সদস্য।’

এ বিষয়ে উপজেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি আবু সিনা বলেন, ‘এটা আমাদের সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে জেলা কমিটির সঙ্গে কথা বলতে পারেন।’

শেরপুরের ঔষধ তত্ত্বাবধায়ক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ওষুধ কম বা বেশি দামে বিক্রি করা ব্যবসায়ীর নিজস্ব বিষয়। এ জন্য কোনো সমিতি দোকান বন্ধ বা জরিমানা করতে পারে না। সরকার কোনো সমিতিকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়নি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার ববি বলেন, ‘বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দুমকীতে কোটি টাকার ফেরি অযত্নে নষ্ট, যন্ত্রাংশ হচ্ছে চুরি

দুমকী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি 
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ৪৯
দুমকীর বাহেরচর এলাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে প্রায় কোটি টাকার ফেরি। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুমকীর বাহেরচর এলাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে প্রায় কোটি টাকার ফেরি। ছবি: আজকের পত্রিকা

পটুয়াখালীর দুমকীতে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধীনে থাকা ফেরি বিভাগের প্রায় কোটি টাকার সম্পদ অযত্ন আর অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে। পায়রা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে নদীর তীরে ফেলে রাখা দুটি ফেরি বর্তমানে অচল অবস্থায় পড়ে আছে। নিরাপত্তার অভাবে রাতের আঁধারে এর মূল্যবান যন্ত্রাংশও চুরি হয়ে যাচ্ছে।

রোদ-বৃষ্টি, পানি ও কাদার আস্তরণে এখন অচল দুটি ফেরি। দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক-কর্মচারীদের পদচারণ না থাকায় ও ফেরিটি চলাচল না করায় পুরো এলাকা আগাছায় ছেয়ে গেছে। এই অবস্থায় খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকা কোটি টাকার নৌযান দুটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

সূত্র মতে, ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর পায়রা সেতু চালু হওয়ার পর ফেরি দুটি দুমকীর বাহেরচর এলাকায় পায়রা নদীর তীরে রাখা হয়। বর্তমানে এগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে এবং বেশির ভাগ মালপত্র চুরি হয়ে গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকায় ফেরি দুটির বেশির ভাগ মূল্যবান যন্ত্রপাতি উধাও। ভেতরের অংশে আবর্জনার স্তূপ জমেছে। পানি ও মাটির আস্তরণে ঢেকে গেছে ফেরি দুটির অধিকাংশ অংশ। সরকারি কোটি টাকার সম্পত্তি রক্ষায় কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

ঝাটারা এলাকার মো. জসিম উদ্দিন বলেন, সরকারি সম্পদ এভাবে নষ্ট হচ্ছে। এগুলো নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা বা অন্য কোথাও কাজে লাগানো উচিত ছিল।

পার্শ্ববর্তী জলিশা এলাকার মো. শাহিন মনে করেন, ফেরিগুলো নিলামে বিক্রি করলেও সরকারি কোষাগারে কিছু টাকা আসত। তা ছাড়া সংস্কার করে জনগণের সেবায় কাজে লাগালে আরও বেশি উপকার হতো। দেশের সম্পদ রক্ষা হতো, মানুষ সেবা পেত।

ফেরিচালকের সহকারী মো. কায়েস জানান, দীর্ঘদিন ধরে ফেরি দুটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ না হওয়ায় নিলামে উঠানো হয়নি। তবে কবে মেয়াদোত্তীর্ণ হবে, তা তিনি বলতে পারেননি।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জামিল আক্তার বলেন, ‘বাহেরচর এলাকায় পায়রা নদীর তীরে থাকা ফেরি সম্পর্কে আমার জানা আছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত