Ajker Patrika

রংপুর চিড়িয়াখানার ইজারা অনিয়মে কিউরেটর

রংপুর প্রতিনিধি
Thumbnail image

রংপুর জেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালের ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ডা. আম্বর আলী তালুকদার অতিরিক্ত দায়িত্বে পাঁচ বছর ধরে রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কিউরেটর পদেও আছেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় ছত্রচ্ছায়ায় থেকে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে আম্বর আলীর বিরুদ্ধে।

রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানার একাধিক সূত্র বলছে, পছন্দের লোককে ইজারা দেওয়া, চিড়িয়াখানায় পশুখাদ্য সরবরাহে অনিয়ম, সরকারি পুকুরে মাছ চাষ, অবৈধভাবে দোকান বসিয়ে ভাড়া আদায়সহ নানা অভিযোগ রয়েছে ডা. আম্বর আলীর বিরুদ্ধে।

উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহসহ প্রায় ২০০ প্রজাতির প্রাণী আছে সেখানে। প্রতিদিন রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসেন এখানে। বনভোজনের বেশ কিছু স্পট ছাড়াও এখানে রয়েছে শিশুপার্ক, বড় আকারের পুকুর, ভ্রাম্যমাণ হোটেলসহ বিনোদনের নানা আয়োজন।

নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, ভারপ্রাপ্ত কিউরেটর হিসেবে যোগদানের পর একটি প্রতিষ্ঠানকে চিড়িয়াখানার প্রাণীর খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ এবং শিশুপার্কের ইজারা দেন তিনি। এ ছাড়া আগে চিড়িয়াখানার পুকুর ও শিশু উদ্যান লিজ দেওয়া হলেও বর্তমানে আম্বর আলী নিজেই সেগুলো পরিচালনা করছেন।

চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চিড়িয়াখানার গেট, পার্কিং এরিয়া ও শিশুপার্ক ইজারার দরপত্র আহ্বান করা হলে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ঘোষণায় সর্বোচ্চ দরদাতা হয় চৌধুরী স্টোর। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা সুমনা এন্টারপ্রাইজকে ১ কোটি ২ লাখ টাকায় কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এ নিয়ে চৌধুরী স্টোর আদালতের শরণাপন্ন হলে ছয় মাসের স্থগিত আদেশ দেন উচ্চ আদালত। কিন্তু আদালতের আদেশ অমান্য করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতাকেই ইজারা দেন কিউরেটর। 
সর্বোচ্চ দরদাতা চৌধুরী স্টোরের প্রতিনিধি হযরত আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সুমনা এন্টারপ্রাইজের চেয়ে ২০ লাখ টাকা বেশি দিয়ে আমরা দরপত্র জমা দিই। কিন্তু কিউরেটর দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমার সঠিক কাগজপত্রকে ত্রুটিপূর্ণ দেখিয়ে দরপত্র বাতিল করে। পরে তাঁর পছন্দের সুমনা এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেন।’

দর্শনার্থী ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন বলেন, পশুগুলোর অবস্থা খারাপ। এগুলো দেখলেই বোঝা যায়, এখানে কেমন দুর্নীতি অনিয়ম হচ্ছে। এখানেও সংস্কার খুব প্রয়োজন।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর কেরানিপাড়া মহল্লার মৌবনের মোড়ে ৯ শতক জমি কিনে পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন আম্বর আলী। সেখানে একটি ফ্ল্যাটে সপরিবার বসবাস করেন তিনি। বাকি ফ্ল্যাটগুলো ভাড়া দেওয়া।

স্থানীয়রা বলছেন, বর্তমান বাজারমূল্যে আম্বর আলীর বাড়ি ও জমির মূল্য ১০ কোটি টাকার বেশি।

দীর্ঘ সময় দুই পদে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে কিউরেটর আম্বর আলী তালুকদার বলেন, ‘আমাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে কিউরেটর পদে রাখা হয়েছে। আমি তো জোর করে নাই। দুবার বদলি নিয়েছি। তারপরও সরকার আমাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে কিউরেটর রেখেছে। এতে আমার করার কী আছে।’

নগরীর প্রাণকেন্দ্রে বিলাসবহুল বহুতল ভবনের বিষয়ে আম্বর আলী বলেন, ‘২০২০ সালে আমি বাড়ি করেছি। কারও বৈধ টাকা না থাকলে এত বড় বাড়ি করতে পারে? এসব নিয়ে কেন কথা হচ্ছে? চিড়িয়াখানার টাকা দিয়ে আমি বাড়ি করি নাই। কাল আসেন, কথা হবে।’

সর্বনিম্ন দরদাতাকে ইজারা দেওয়ার বিষয়ে আম্বর আলী বলেন, ‘সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্রে ত্রুটি ছিল। এ জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতাকে কার্যাদেশ দিই। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সব মিথ্যা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত