Ajker Patrika

তিস্তার ভাঙনে বিলীন তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

মাসুদ পারভেজ রুবেল, ডিমলা (নীলফামারী)
নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তার ভাঙনে বিদ্যালয় ভবন হারিয়ে বেড়িবাঁধে তৈরি করা হয়েছে টিনের ঘর। আজকের পত্রিকা
নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তার ভাঙনে বিদ্যালয় ভবন হারিয়ে বেড়িবাঁধে তৈরি করা হয়েছে টিনের ঘর। আজকের পত্রিকা

নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়া তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। এখন তাঁদের পাঠদান চলছে বাঁধের ওপর অস্থায়ী ঘর ও আশ্রয়কেন্দ্রের খোলা বারান্দায়।

এমন অস্থায়ী জায়গায় পড়াতে গিয়ে শিক্ষকেরা যেমন অস্বস্তিতে পড়ছেন, তেমনি শিক্ষার্থীরাও মনোযোগী হতে পারছে না। এ ছাড়া সেখানে শ্রেণিকক্ষে নেই বিদ্যুৎ-সংযোগ। মাঠের অভাবে শিশুরা খেলাধুলাও করতে পারে না। এ অবস্থায় দিন দিন কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা।

তিস্তার গর্ভে চলে যাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের নব্য কিসামত ছাতনাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খালিশাচাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা তিস্তার চর শিশুকল্যাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের পূর্ব ছাতুনামা আমিনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পাশাপাশি আরও তিনটি বিদ্যালয় ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে বলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে।

চরাঞ্চলে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত নব্য কিসামত ছাতনাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ২০২২ সালের জুনে তিস্তায় বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির পাঠদান চালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে ৩ কিলোমিটার দূরে দোহলপাড়া বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রের খোলা ছাদের নিচে।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আঁখি ও সুরাইয়া আকতার জানায়, খোলা জায়গায় বৃষ্টি ও ধুলাবালুর কারণে ক্লাসে থাকা যায় না। পাশে কোনো বেড়া নেই। সে জন্য ছাত্রছাত্রীও নিয়মিত উপস্থিত হয় না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেরিনা আকতার বলেন, বিদ্যালয়ের ভবনটি ২০১০ সালে প্রথমবার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর শিক্ষকদের নিজস্ব অর্থায়নে পাশেই ৪০ শতক জমি কিনে ঘর নির্মাণ করে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হতো। ২০২২ সালে সেটিও ভেঙে গেলে দুই দফা স্থান পরিবর্তনের পর এখন শতাধিক শিশুর পাঠদান চলছে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রের নিচে।

পূর্ব ছাতুনামা আমিনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ২০২০ সালের জুনে নদীগর্ভে চলে যায়। এখন পাশে তিস্তা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর অস্থায়ী ঘর তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান জানান, বিদ্যালয় ভবন ভেঙে গেলে পাঁচ দফা স্থান পরিবর্তনের পর বাঁধের ওপর আশ্রয় নেওয়া হয়। শিক্ষকেরা নিয়মিত উপস্থিত থাকলেও ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি কম।

ছোটখাতা তিস্তার চর শিশুকল্যাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে বাঁধের নিচে টিনের ছাপড়া ঘরে। সেখানে কাদাপানি জমে থাকে এবং কক্ষগুলোও সংকীর্ণ ও জরাজীর্ণ।

শিক্ষকেরা জানান, এভাবে পাঠদানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে। ছাপড়া ঘরে একসঙ্গে তিন শ্রেণির পাঠদান চলায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেউ কারও কথা ঠিকমতো শুনতে পায় না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুর রহমান বলেন, তিন বছর ধরে বাঁধের নিচেই ক্লাস চালানো হচ্ছে। বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য জমি কেনার বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না।

এ নিয়ে কথা হলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বীরেন্দ্র নাথ রায় বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ও নদীগর্ভে বিলীন হওয়া বিদ্যালয়গুলোর জন্য নতুন ভবন নির্মাণ এবং জায়গা নির্ধারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।

উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল মিয়া বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রুয়া নির্বাচন: বিএনপিপন্থীদের বর্জন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জামায়াতপন্থী ২৭ জন নির্বাচিত

সৌদি আরবের কেনা ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলকে দেওয়ার অনুরোধ যুক্তরাষ্ট্রের, প্রত্যাখ্যান করে কিসের ইঙ্গিত দিল রিয়াদ

‘পাপ কাহিনী’র হাত ধরে দেশের ওটিটিতে ফিরল অশ্লীলতা

বীর্যে বিরল অ্যালার্জি, নারীর বন্ধ্যাত্ব নিয়ে চিকিৎসকদের নতুন সতর্কতা

আওয়ামী লীগ নেতাকে ধরতে গিয়ে ছেলের বঁটির আঘাতে এসআই আহত, আটক ২

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত