Ajker Patrika

স্বজনদের নিয়োগ দেওয়া সেই প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত, তদন্ত কমিটি গঠন

শিপুল ইসলাম, রংপুর
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩: ০০
স্বজনদের নিয়োগ দেওয়া সেই প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত, তদন্ত কমিটি গঠন

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজ পরিবারের সাত স্বজনকে গোপনে বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া সেই প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আজ রোববার ইউএনও রুবেল রানা নিয়োগ–বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম–দুর্নীতি প্রধান শিক্ষক আলিয়ার রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এ সময় ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। 

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ঘনিরামপুর বড়গোলা উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আলিয়ার রহমান। অভিযোগ উঠেছে, বিদ্যালয়ে ২১ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পরিবারের স্বজনই সাতজন। আধিপত্য বিস্তারের জন্য গোপনে প্রধান শিক্ষক আলিয়ার রহমান নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে স্ত্রী, ভাই, ভাতিজা, ভাতিজা বউকে চাকরি পাইয়ে দেন। এরপর গড়ে তোলেন অনিয়ম-দুর্নীতির সাম্রাজ্য। 

এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় ২২ সেপ্টেম্বর ‘২১ শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের স্বজন ৭’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে ইউএনও রুবেল রানা প্রধান শিক্ষক আলিয়ার রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করেন এবং ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। 

তারাগঞ্জের ইউএনও রুবেল রানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বেশি কিছুদিন ধরে নিয়োগ–বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম–দুর্নীতি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় আজ (রোববার) মিটিং করে প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে তা শিক্ষা বোর্ডে পাঠানো হবে। বোর্ড তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। 

শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় অভিভাবকদের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে যমুনেশ্বরী নদীর উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের বড়গোলা এলাকায় ঘনিরাপুর বড়গোলা উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। ১৯৯৬ সালে ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান আলিয়ার রহমান। এরপর তাঁর বড় ভাই মফিজাল রহমানকে কৌশলে ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি করেন। প্রধান শিক্ষক আলিয়ার রহমান ও সভাপতি মফিজাল মিলে আধিপত্য বিস্তারের জন্য নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গোপনে ভাই, ভাতিজা, ভাতিজা বউকে নিয়োগ পাইয়ে দেন। ২০০০ সালে প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী আলেয়া বেগম সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০৪ সালে ভাতিজা আজম আলী, ২০১৬ সালে ভাতিজার স্ত্রী মোরশেদা বেগমকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপর ২০২২ সালে আরেক ভাতিজা আজমির সরকারকে পিয়ন ও ভাতিজার স্ত্রীকে মালি পদে নিয়োগ দেন। ২০২৩ সালে প্রধান শিক্ষক তাঁর আরেক ভাতিজাকে ঝাড়ুদার পদে নিয়োগ দেন। 

ফলে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পরিবারের শিক্ষক-কর্মচারী হওয়ায় তাঁদের ওপর কেউ কথা বলতে পারেন না। অন্য শিক্ষকেরাও সব সময় ভয়ে থাকেন। এই সুযোগে প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক দুর্নীতিসহ নানা অনিয়ম করেন। কেউ কিছু বললে দেন হুমকি–ধমকি। শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে বিদ্যুৎ বিল বাবদ প্রতি মাসে ৫০ টাকা, বই বিতরণে রসিদ ছাড়াই ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, প্রতিটি পরীক্ষার ফি বাবদ ৬০০-৮০০, এসএসসি পরীক্ষার নিবন্ধনের নামে ৮০০ টাকা, ফরম পূরণের সময় বোর্ড ফির চার গুণ অতিরিক্ত টাকা, নম্বরপত্র উত্তোলনে ৩০০ টাক, প্রশংসাপত্রের জন্য ৪০০ ও সনদ উত্তোলন বাবদ ৪০০ টাকা বাধ্যতামূলক আদায় করেন প্রধান শিক্ষক। এগুলোর কোনো রসিদ দেন না। এভাবে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে গত কয়েক বছরে টাকা আদায় করে অঢেল সম্পদ অর্জন করেছেন। রংপুর শহরে গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল বাড়ি। 

উল্লেখ্য, সরকার পতনের পর প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ–বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম–দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজন। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজন দুই দফায় সেপ্টেম্বর মাসে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুটি লিখিত অভিযোগ ইউএনওকে দেন। ১৫ সেপ্টেম্বর রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক পাঁচ ঘণ্টা অবরোধ করে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের বিপক্ষে সেমির আগেই ধাক্কা খেল অস্ট্রেলিয়া

পরমাণু শক্তিধর হতে চেয়েছিল তাইওয়ান, সিআইএ এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বপ্নভঙ্গ

এলপি গ্যাস, তেল, আটাসহ বেশ কিছু পণ্যে ভ্যাট তুলে দিল এনবিআর

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: রিজার্ভ-ডেতেও সেমিফাইনাল না হলে হৃদয়বিদারক সমীকরণ

অমর্ত্য সেনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন জামায়াতের আমির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত