Ajker Patrika

কারমাইকেল কলেজ

টানা আন্দোলনে অচলাবস্থা

  • গতকাল টানা চতুর্থ দিনের মতো শাটডাউন কর্মসূচি পালন।
  • সমস্যা নিরসনে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হবে।
শিপুল ইসলাম, রংপুর 
রংপুরের কারমাইকেল কলেজে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে ক্যাম্পাসে আসেন জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী ও ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম। গতকাল বেলা ১১টার দিকে কলেজের ফটকে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রংপুরের কারমাইকেল কলেজে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে ক্যাম্পাসে আসেন জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী ও ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম। গতকাল বেলা ১১টার দিকে কলেজের ফটকে। ছবি: আজকের পত্রিকা

শিক্ষা, অবকাঠামো ও প্রশাসনিক সংকটে জর্জরিত রংপুরের কারমাইকেল কলেজে চলছে টানা আন্দোলন। শিক্ষার্থীদের ৩৭ দফা দাবিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউনে’ বন্ধ হয়ে গেছে ক্লাস, পরীক্ষা ও ভর্তি কার্যক্রম। শতবর্ষ পার করেও উন্নয়নের ছোঁয়া না পাওয়া এই কলেজ এখন রূপ নিয়েছে অবহেলা, বঞ্চনা আর অচলাবস্থার প্রতীকে।

কলেজের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, ১৯১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত কারমাইকেল কলেজে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি। এসব শিক্ষার্থী জন্য সাতটি হল রয়েছে। ছাত্রদের তিনটি হলে সিটের সংখ্যা ৩০০টি ও ছাত্রীদের হলে সিটের সংখ্যা ৬০০টি। হলগুলোয় নেই পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। আশির দশকের ফিটনেসবিহীন ৫২ সিটের দুটি বাস দিয়ে চলছে পরিবহন সেবা। রয়েছে শিক্ষকসংকটও। ১৯টি বিভাগে শিক্ষক রয়েছেন ১৮১ জন, পদ শূন্য ৩৯টি। কোনো কোনো বিভাগে মাত্র তিনজন শিক্ষক রয়েছেন। আটটি ভবনের দুটি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে সেগুলোয় পাঠদান চলছে। রয়েছে ক্লাসরুমের ঘাটতিও। ৩০০ একরের কলেজ ক্যাম্পাসের ২ হাজার ২৮৫ বর্গফুট সীমানাপ্রাচীর নেই। দুর্বৃত্ত ও ব্যবসায়ীরা দখল করে নিয়েছে প্রায় চার একর জমি।

গত রোববার থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে ২৫ দফা এবং শিক্ষা উপদেষ্টা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে ১২ দফাসহ মোট ৩৭ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। প্রথম দিনে অধ্যক্ষকে কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন ও রেল-সড়কপথ অবরোধ করে সাড়ে তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন। গত সোমবার থেকে কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। কলেজের অধ্যক্ষ গত মঙ্গলবার ১৪ দফা দাবি পূরণের আশ্বাস দিলেও আন্দোলন চালিয়ে যান তাঁরা। শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, শিক্ষা উপদেষ্টা সরাসরি কলেজে এসে আশ্বাস দিলে তবেই আন্দোলন বন্ধ হবে।

গতকাল বুধবার টানা চতুর্থ দিনের মতো শাটডাউন কর্মসূচি পালন করায় ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে বেলা ১১টার দিকে আন্দোলনের চতুর্থ দিনে শিক্ষার্থীদের কাছে ছুটে যান রংপুরের জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী ও ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম। তাঁরা প্রায় এক ঘণ্টা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং পরবর্তী সময়ে কলেজ ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন।

কলেজ ক্যাম্পাস পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যে দাবিগুলো করেছে, সেগুলো আসলেই যৌক্তিক। একটি হল ১৫ বছর ধরে বন্ধ। সেটি সংস্কার করে দেওয়া হবে। শিক্ষার্থী ও কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হবে। সে কমিটি ঢাকায় গিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের সঙ্গে কথা বলে দাবিদাওয়া প্রস্তাব করবেন। সেই অনুযায়ী রোডম্যাপ করে দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।’

তবে শিক্ষার্থীদের বক্তব্য ভিন্ন। আন্দোলনের একজন সমন্বয়কারী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা ক্লাসে ফিরতে চাই, কিন্তু তার আগে চাই সমস্যার স্থায়ী সমাধান। দাবি আদায় না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

ঠাকুরগাঁও থেকে রসায়নে মাস্টার্সে ভর্তি হতে আসা আরিফ হোসেন বলেন, ‘রোববার ভর্তি হতে এসে আন্দোলনের কারণে ঘুরে গেছি। আজও ফিরে যাচ্ছি। বৃহস্পতিবার আসার জন্য বলল। শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিলে এই হয়রানি আমাকে হতে হতো না।’

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক রায়হানুল ইসলাম বলেন, শতবর্ষী হলেও কলেজটি নানা সংকট ও সমস্যায় জর্জরিত। প্রতিটি বিভাগে কমপক্ষে ১২-১৬ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও সমাজবিজ্ঞান বিভাগে মাত্র চারজন শিক্ষক রয়েছেন। নেই প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট, বাস। এগুলো দ্রুত সমাধান করা দরকার।

কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘২৫-৩০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য আমাদের যে জিনিসগুলো দরকার, সেগুলো নেই। শিক্ষার্থীরা যে দাবি করেছে, তা ন্যায্য। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় সেই বরাদ্দ আমরা পাই না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত