Ajker Patrika

আ.লীগ সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে দোষ দিত ইসলামপন্থীদের: ডা. শফিকুর রহমান

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১: ৫৬
ঠাকুরগাঁওয়ে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে ডা. শফিকুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঠাকুরগাঁওয়ে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে ডা. শফিকুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘুদের জায়গা-জমি দখল করেছে। ইজ্জতের ওপর হাত দিয়েছে, সম্পদ লুণ্ঠন করেছে, কাউকে কাউকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তারা নিজেরা এসব করে দোষ দিয়েছে ইসলামপন্থীদের ওপর।’ আজ সোমবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও জেলা সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় বড় মাঠে দলের কর্মী সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

জামায়াতের আমির বলেন, ‘যারা আল্লাহর বান্দা, যারা আল্লাহর ওপর ইমান রাখে, তারা কখনো কোনো মানুষের ক্ষতি করতে পারে না; কোনো মানুষের প্রতি কখনো হিংসা পোষণ করে না; কোনো মানুষের জীবন নিয়ে তামাশা করে না; কোনো মানুষের ইজ্জতের ওপর হাত দেয় না; কোনো মানুষের সম্পদকে তাদের সম্পদ মনে করে না।’

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা দাবি জানিয়েছিলাম জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কমিশনকে একটি চিঠি দিয়েছিলাম ২০১৩ সালে। আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো দেওয়া হয়, আমরা তার তদন্ত দাবি করছি। এই তদন্ত করবে জাতিসংঘ। আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। আমরা চাই, বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু করে চব্বিশের ৫ আগস্ট পর্যন্ত, এমনকি আজকের দিন পর্যন্ত বাংলাদেশে এ রকম যত অঘটন ঘটেছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। তার শ্বেতপত্র জাতির সামনে প্রকাশ করা হোক। সেই শ্বেতপত্রে আমি ব্যক্তিটি যদি কালো বলে চিহ্নিত হই, দুষ্কৃতকারী হিসেবে চিহ্নিত হই, আমাকেও যেন ক্ষমা করা না হয়। আমরা দেখতে চাই, সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুর মারামারি লাগিয়ে দিয়ে কারা এই জাতির সর্বনাশ করে।’

আমিরে জামায়াত বলেন, ‘এ দেশটা বিভিন্ন ধর্মের বর্ণের মানুষের। যুগ যুগ ধরে আমরা এখানে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে আসছি। কিন্তু যে দলটি (আওয়ামী লীগ) জাতিকে বিভিন্ন অংশে ভাগ-বিভক্ত করে রেখেছিল সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু বলে। তারা ফায়দা লুটেছে আর সংখ্যালঘু বলে যদি কিছু থাকে তাদের সর্বনাশও করেছে। বাংলাদেশে মসজিদ পাহারা দরকার না হলে মন্দিরও পাহারা দেওয়ার দরকার হবে না। আমরা সেই সামাজিক নিরাপত্তার বলয় দেখতে চাই। আমরা চাই না, নির্দিষ্ট কোনো ধর্মাবলম্বীদের উৎসব আসবে অনুষ্ঠান আসবে সে উপলক্ষে তাদের পাহারা দিতে হবে।’

ডা. শফিক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষের অনেক আওয়াজ, অনেক বিপক্ষের কথা, অনেক বিষ ছড়ানো কথা আমরা শুনেছি। আমি প্রশ্ন করতে চাই, এবারের মহান বিজয় দিবসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এটাকে ভারতের বিজয় দিবস দাবি করে টুইট করেছেন। তিনি তাঁর দেশের সৈনিকদের ও দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। একটা শব্দ তিনি বাংলাদেশ নামে উচ্চারণ করেননি। আপনাদের চেতনা তখন কোথায় ছিল? এ বিজয় বাংলাদেশের, নাকি ভারতের? ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের যদি বিজয় হয়ে থাকে আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী যদি এই বিজয় তাদের বলে দাবি করেন, আপনারা চুপ কেন? আপনাদের চেতনা কোথায় যায় তখন?’

জামায়াতের আমির প্রশ্ন রাখেন, ‘সীমান্তে যখন ফেলানীর লাশ ঝোলানো থাকে, আপনাদের চেতনা তখন কোথায় থাকে? দিনের পর দিন নিরীহ মানুষকে যখন সীমান্তে হত্যা করা হয়, তখন আপনাদের মুখে আওয়াজ বের হয় না। বরং আপনাদের সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, সীমান্তে যারা বাংলাদেশি মারা যায়, তারা দুষ্কৃতকারী। এটি লজ্জা এবং জাতীয় লজ্জা। আপনারা এই দেশের মন্ত্রী হয়ে ভিন্ন দেশের গান করেন। কারণ আপনাদের মাথা অন্য জায়গায় বন্ধক রেখেছেন।’

ঠাকুরগাঁওয়ে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে ডা. শফিকুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঠাকুরগাঁওয়ে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে ডা. শফিকুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

জামায়াতের প্রধান বলেন, ‘আমরা প্রতিবেশী দেশের প্রতি সব সময় শ্রদ্ধাশীল থাকতে চাই। আমরা এ-ও আশা করি, তারা আমাদের দেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে। আমরা চাই, আমাদের প্রতিবেশীরা শান্তিতে থাকুক। আবার আমরা চাই, তারাও যেন আমাদের অশান্তির কারণ না হয়। কিন্তু মাঝেমধ্যে তারা বাউন্ডারি ক্রস করে। বাংলাদেশের মসনদে কে বসবে, কে কার সঙ্গে জোট বাঁধবে, কে সরকার গঠন করবে, তারা বাংলাদেশে এসে তরকারিতে লবণ দেয়। আমরা ভবিষ্যতে আমাদের তরকারিতে আর কাউকে লবণ দিতে দেখতে চাই না। আমাদের তরকারি আমরা পাকাব। বাংলাদেশের মানুষ ঠিক করবে এখানে কে ক্ষমতায় আসবে, কে আসবে না।’

ঠাকুরগাঁওয়ে জামায়াতের কর্মী সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত
ঠাকুরগাঁওয়ে জামায়াতের কর্মী সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল হালিম, শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলাওয়ার হোসেন, জেলা জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা আব্দুল হাকিম, জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক বেলাল উদ্দীন প্রধান প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তিতাসে অস্ত্র-গুলিসহ ৪ নারী গ্রেপ্তার

হোমনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি 
উদ্ধার হওয়া গুলি ও অস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত
উদ্ধার হওয়া গুলি ও অস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার তিতাসে যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্র-গুলিসহ চার নারীকে গ্রেপ্তার হয়েছে। গতকাল শনিবার (২৫ অক্টোবর) দিবাগত রাত থেকে আজ রোববার ভোর পর্যন্ত উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়নের শাহপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

তিতাস-অস্ত্র২
তিতাস-অস্ত্র২

গ্রেপ্তার নারীরা হলেন শাহপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের স্ত্রী ফারজানা (২৯), জসিমের স্ত্রী আমিনা (৩৭), জহিরের স্ত্রী জুবেদা (৩৩) ও আব্দুল কাদিরের স্ত্রী শান্তি বেগম (৬০)।

থানা সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিতাস থানা-পুলিশের একাধিক টিম শাহপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় সেখান থেকে ১টি বিদেশি রিভলবার, ৬টি গুলি, ১টি এলজি বন্দুক, ২টি পাইপগান উদ্ধারসহ তিন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় একই রাতে একই এলাকার আব্দুল কাদিরের বাড়িতে পৃথক অভিযান চালিয়ে ১০টি সিসা কার্তুজ ও ৫টি ধারালো দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার এবং আরও এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে তিতাস থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। আজ দুপুরে তাঁদের কুমিল্লা আদালতে পাঠানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডিমলায় টিকা নিতে গিয়ে পিকআপের ধাক্কায় নানি-নাতনি নিহত

ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি 
উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের গয়াবাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজসংলগ্ন ঘোড়ামারা রোড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা
উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের গয়াবাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজসংলগ্ন ঘোড়ামারা রোড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা

নীলফামারীর ডিমলায় টিকা নিতে যাওয়ার পথে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় নানি তাঁর ১৪ দিনের নবজাতক নাতনিসহ নিহত হয়েছেন। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের গয়াবাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজসংলগ্ন ঘোড়ামারা রোড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের শুটিবাড়ি বাজারসংলগ্ন এলাকার আব্দুস ছাত্তার খানের স্ত্রী মোছা. সূর্য খাতুন (৫৫) এবং তাঁর নাতনি সামিয়া আক্তার (১৪ দিন) একই এলাকার বাসিন্দা বাবুল হোসেনের মেয়ে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সকালে সূর্য খাতুন নাতনি সামিয়াকে নিয়ে টিকাদান কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন। রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুতগতির একটি মালবাহী পিকআপ তাঁদের ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই নবজাতক সামিয়া মারা যায়। স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় সূর্য খাতুনকে উদ্ধার করে ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

দুর্ঘটনার পর পিকআপের চালক পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

নিহত নবজাতকের স্বজনেরা বলেন, নানি তাঁর নাতনিকে নিয়ে টিকা দিতে গিয়েছিল। সকালবেলায় হাসিখুশি ছিল সবাই। কিন্তু মুহূর্তেই সব শেষ হয়ে গেল।

স্থানীয়রা জানান, ওই সড়কে বেপরোয়া গতির কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।

ডিমলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করেছে। পিকআপের চালককে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্টেশনমাস্টারের দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে মানববন্ধন

আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি 
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের স্টেশনমাস্টারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের স্টেশনমাস্টারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের স্টেশনমাস্টার খাদিজা খাতুনের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে মানববন্ধন করা হয়েছে। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে আক্কেলপুর রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ‘আক্কেলপুরবাসী’র ব্যানারে এই মানববন্ধন হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অর্ধশতাধিক মানুষ অংশ নেন।

মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, খাদিজা খাতুন ২০ বছরের বেশি সময় ধরে আক্কেলপুরের স্টেশনমাস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সান্তাহার জংশনের দায়িত্বেও আছেন। স্থানীয় যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া এবং তাঁর মনগড়া প্রতিবেদনের কারণে চিলাহাটী এক্সপ্রেস ট্রেনের আক্কেলপুরে যাত্রাবিরতি বন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ করেন বক্তারা। তাঁকে দ্রুত এখান থেকে অপসারণের দাবি জানান তাঁরা।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন আক্কেলপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও চিলাহাটী এক্সপ্রেসের যাত্রাবিরতির সমন্বয়ক আব্দুর রউফ মাজেদ। বক্তব্য দেন পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম চপল, তিলকপুর ইউপির সদস্য মামুনুর রশিদ পিন্টু, কলেজশিক্ষক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম তুহিন, মাসুদ চৌধুরী, ছাত্রদল নেতা আরমান হোসেন কানন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, আক্কেলপুর, ক্ষেতলাল, নওগাঁর বদলগাছী-পত্নীতলা এবং বগুড়ার দুপচাঁচিয়া এলাকার যাত্রীরা এই স্টেশন ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করে। চিলাহাটী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতি পেলে মানুষের ভোগান্তি অনেকটা কমবে। কিন্তু স্টেশনমাস্টার খাদিজা খাতুনের মনগড়া প্রতিবেদনের কারণে তা বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে আক্কেলপুরের স্টেশনমাস্টার খাদিজা খাতুন বলেন, ‘আমি চিলাহাটী এক্সপ্রেসের যাত্রাবিরতির বিরোধিতা করে কোনো মৌখিক বা লিখিত প্রতিবেদন দিইনি। ২০২৪ সাল থেকে সান্তাহার জংশনের অতিরিক্ত দায়িত্বও পালন করছি। এক বছর তিন মাসে কোনো যাত্রী আমার দ্বারা হয়রানির শিকার হয়নি। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। একটি স্বার্থান্বেষী মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বন্য প্রাণী সংরক্ষণের নতুন আইনে জামিনের সুযোগ না রাখার প্রস্তাব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।  ফাইল ছবি
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ফাইল ছবি

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণে নতুন করে যে আইন করা হচ্ছে, তার খসড়ায় জামিনের সুযোগ না রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন যেটা নতুন ড্রাফট করেছি, সেখানে কগনিজেবল (পুলিশ যেখানে আদালতের অনুমতি ছাড়াই গ্রেপ্তার ও তদন্ত শুরু করতে পারে) এবং নন-বেইলেবল (জামিন অযোগ্য) অপরাধ যুক্ত করেছি, যা এখনো খসড়া আকারে রয়েছে এবং ক্যাবিনেটে যায়নি।’

আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বন ভবনে ‘আন্তর্জাতিক মিঠাপানির ডলফিন দিবস ২০২৫’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘বন্য প্রাণী রক্ষায় শুধু আইন নয়, মনস্তাত্ত্বিক ও আচরণগত পরিবর্তন জরুরি। যদি মানুষ নিরীহ প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর হয়, তা সমাজের মূল্যবোধের অবক্ষয়ের প্রতিফলন। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর মেছো বিড়াল নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করলাম। মেছো বিড়ালকে শুধু শুধুই আমরা মেছো বাঘ বলি। বাঘ বলে একটা ভীতি সঞ্চার করি। নিরীহ একটা প্রাণীকে মেরে ফেলি। মারি যে, লজ্জাও পাই না। মেরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা প্রকাশ করি। বন্য প্রাণী আইন বলেন, বিধিমালা বলেন, বন বিভাগ বলেন, সব যদি সক্রিয় হয়; কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন যদি না আসে, তাহলে এই প্রাণীগুলোকে বাঁচানো যাবে না। এই নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে সমাজকে দাঁড়াতে হবে।’

অনুষ্ঠানে ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটির কান্ট্রি ডিরেক্টর ও ডলফিন বিশেষজ্ঞ ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দেশের ৪৫টি বড় নদীতে জরিপ করে ৩৯টি নদীতে ২ হাজার ৮২টি ডলফিনের সংখ্যা নির্ণয় করা হয়েছে। আমাদের প্রায় ২৫০টি ডলফিন মারা যাওয়ার তথ্য আছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ আমরা দেখেছি কারেন্ট জাল অথবা ফাঁস জালে আটকে মারা গেছে।’

এ বিষয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘ডলফিনগুলোকে বাঁচানোর জন্য বা বংশবৃদ্ধি করার জন্য যা প্রয়োজন, তা একটা সভ্য সমাজের মানদণ্ডের নির্ণায়ক। আপনি যদি বলেন, শুশুক বা আমাদের ডলফিন থাকবে পরিষ্কার পানিতে, তাহলে যেকোনো সভ্য জাতিও থাকবে পরিষ্কার পানির পাশেই। যে জাতি নিজেকে সভ্য দাবি করবে, সে জাতি তার নদীগুলোকে আবার দূষিত করবে—দুটো একসঙ্গে হতে পারে না। দুটো সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে।’

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘যখন ডলফিনের সংখ্যা বাড়বে, তখন বুঝতে হবে, নদীদূষণ আমরা নিয়ন্ত্রণ করছি। যখন আমার ডলফিনের সংখ্যা কমবে, তখন আমি বুঝব, নদীগুলোকে আমি ঝুঁকিপূর্ণ করে ফেলছি। নদী মানুষের জন্য যখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়, তখন তা ডলফিনের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। নদী যখন ডলফিনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, তখন তা মানুষের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ।’

ডলফিন নদীর ‘সুস্থতার প্রতীক’ উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, যেখানে ডলফিন টিকে থাকে, সেখানে নদীও টিকে থাকে। আর নদী টিকে থাকলেই মানুষ বাঁচে। ডলফিন নিয়ে কথা বলা মানে আমাদের বেঁচে থাকার কথাই বলা। কারণ নদীর পানি যদি দূষিত হয়, তাহলে তা যেমন ডলফিনের জন্য বিপদ, তেমনি মানুষের জন্যও। নদী পরিষ্কার রাখাই মানুষের ও ডলফিনের জীবনের অন্যতম শর্ত।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি আশা করি, দেশের প্রতিটি জেলায় বন বিভাগকে সহায়তা করার জন্য স্বেচ্ছাসেবী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে। এতে প্রাণী উদ্ধার ও সুরক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হবে। বন্য প্রাণী রক্ষায় যাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করছেন, তাঁদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’

প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বন সংরক্ষক মো. ছানাউল্যা পাটওয়ারী, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত