Ajker Patrika

ছাত্র সংসদ নেই ২৬বছর, তবু ফি আদায়

  • ১৯৫৩ সালে স্থাপিত এ কলেজটি ২০১৮ সালে সরকারিকরণ করা হয়।
  • সর্বশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে ১৯৯৯ সালে।
রেজা মাহমুদ, সৈয়দপুর (নীলফামারী) 
সৈয়দপুর সরকারি কলেজ। ছবি: সংগৃহীত
সৈয়দপুর সরকারি কলেজ। ছবি: সংগৃহীত

নীলফামারীর সৈয়দপুর সরকারি কলেজে ২৬ বছর ধরে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হচ্ছে না। অথচ প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ছাত্র সংসদের ফি নেওয়া হচ্ছে। এদিকে বিভিন্ন খাতে আদায় করা অর্থ শিক্ষার্থীদের জন্য ঠিকভাবে ব্যয় করা হয় না বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

কলেজের শিক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংসদের নির্বাচন না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটছে না। অধিকার বাস্তবায়নে কোনো সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে জোরালো আওয়াজ তুলতে পারছেন না তাঁরা।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৩ সালে স্থাপিত এ কলেজটি ২০১৮ সালে সরকারিকরণ করা হয়। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ছাত্র সংসদ ব্যবস্থাপনা ফি ২৫, সাহিত্য ও সংস্কৃতি ফি ১০, খেলাধুলা ফি ২৫, ম্যগাজিন ফি ৩০, পরিবহন ৫০, দরিদ্র তহবিল ফি ২৫ টাকাসহ সেমিনার, হোস্টেল তহবিল, জামানত, নৈশপ্রহরী, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগের জনপ্রতি ছাত্রদের ৪ হাজার ৩১৯, ছাত্রীদের ৪ হাজার ৭৯, মানবিক বিভাগে ৪ হাজার ৫৯ ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৩ হাজার ৮১৯ টাকা। আর অনার্স ও ডিগ্রিতে জনপ্রতি ৫ হাজার ৮২০ টাকা করে নেওয়া হয়। কিন্তু কলেজের পাঠাগারে কোনো ম্যাগাজিন রাখা হয় না। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য পরিবহনব্যবস্থাও নেই। কলেজে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার শিক্ষার্থী এসব খাতে টাকা দিয়ে যাচ্ছেন।

সূত্রটি আরও জানায়, প্রাচীন এ বিদ্যাপীঠে এখন পর্যন্ত ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়েছে মাত্র ৪টি। ১৯৯৯ সালে শেষবার ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়। পরবর্তী সময়ে ছাত্র সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রতিবছর ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে একটি করে সাময়িকী প্রকাশের কথা থাকলেও তা হচ্ছে না।

নির্বাচন না হওয়ার কারণ সম্পর্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, যখন যে দল ক্ষমতায় এসেছে, সেই দলের ছাত্রসংগঠন ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপের কারণে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি।

কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কলেজে ভর্তির পর ছাত্র সংসদ কী, তা-ই দেখলাম না। অথচ প্রতি পর্বে ছাত্র সংসদ ফি দিয়ে যাচ্ছি।’

ছাত্রশিবিরের সৈয়দপুর শহর শাখার সাবেক সভাপতি সাহাবাজ উদ্দীন সবুজ বলেন, ছাত্র সংসদের মূল উদ্দেশ্য নেতৃত্বের বিকাশ। ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলা। ছাত্র সংসদ যখন ছিল, তখন কলেজে একটি গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত ছিল।

ছাত্রদলের সৈয়দপুর কলেজ। শাখার সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান হৃদয় বলেন, জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দেবে—এমন রাজনৈতিক নেতা উঠে আসে ছাত্র সংসদ থেকেই। এই অঞ্চলের ছাত্ররাজনীতির সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত সৈয়দপুর সরকারি কলেজে ছাত্র সংসদ

নির্বাচন হওয়া জরুরি।

সৈয়দপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু তাহের খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকার তো আর ফি আদায় করতে নিষেধ করেনি। সরকারি বিধি অনুসারে অন্যান্য তহবিলের মতোই ছাত্র সংসদের ফি আদায় করা হচ্ছে। আদায় করা ফি ওই তহবিলেই রয়েছে। ওখান থেকে ১ টাকাও খরচ করার কোনো সুযোগ নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমি এ কলেজে নতুন। ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত লিখিত কোনো আবেদন আমার কাছে আসেনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত