Ajker Patrika

দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় চুয়াডাঙ্গায় হাড় কাঁপানো শীত, মানুষের দুর্ভোগ

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫: ৫৪
দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় চুয়াডাঙ্গায় হাড় কাঁপানো শীত, মানুষের দুর্ভোগ

চুয়াডাঙ্গায় এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে প্রায় ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টায় এ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এবং এ মৌসুমে চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। হাড় কাঁপানো শীত ও উত্তরের হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে চুয়াডাঙ্গার জনপদ, ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তীব্র শীতে আজ জেলার সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের দেখা মিললেও হিমেল বাতাসে ঠান্ডার মাত্রা কমেনি। ফলে বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে এই এলাকার মানুষ। তীব্র শীতে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, গতকাল সোমবার এ জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই দিন রাত ৯টায় তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এক দিনের ব্যবধানে জেলার তাপমাত্রার পারদ নেমে এসেছে ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রিতে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গাগাকাগিয়া গ্রামের শিপন আলী বলেন, ‘শীতে বাড়ি থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। লেপের মধ্যে থেকেই বের হতে মন চায় না। তার পরও কাজে আসতে হয়েছে। তবে সকাল থেকে দাঁড়িয়ে থেকেও আজ আমি কাজই পাইনি।’

শহরের ভ্যানচালক সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের দেখার কেউ নেই। ভ্যান নিয়ে না বের হলে ঘরে খাবার জুটবে না। দেখার কেউ নেই।’

পুরোনো কাপড় বিক্রেতা আরিফ হোসেন বলেন, শীতে কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে। মানুষ গরম কাপড় কিনতে আসছে।

রিকশাচালক কাশেম আলী বলেন, ‘আমি রাতে রিকশা চালাই। রাত থেকেই খুব ঠান্ডা। হাত অবশ হয়ে যাচ্ছে। তাই গত রাতে বেশিক্ষণ বাইরে থাকতে পারিনি।’ 

গৃহকর্মী হাসি খাতুন বলেন, বাড়ির মধ্যে থেকেও মহিলাদের অনেক কষ্ট। এত শীতে সকালে পানিতে হাত দেওয়া খুব কষ্টের। শীতে প্রচণ্ড সমস্যায় আছি।

আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদহ গ্রামের রমিজ আলী বলেন, ‘আমাদের এদিকে মাঠ বেশি। আবার আমার বাড়িও মাঠের মধ্যে। যে শীত, বাড়িতে থাকা মুশকিল।’

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সিনিয়র আবহাওয়া পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ, যা দেশের এবং এই মৌসুমে চুয়াডাঙ্গার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আজ চুয়াডাঙ্গা ও সিরাজগঞ্জে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া, আজ সকাল ৬টায় এই জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ৯৬ শতাংশ।

প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করেই জরুরি কাজে বের হয়েছে মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকাতিনি আরও জানান, এর আগে ২০২২ সালের ১২ জানুয়ারি এ জেলার তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। আর ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি এযাবৎকালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তবিবুর রহমান জানান, গত সোমবার চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের সঙ্গে কথা বলে তাপমাত্রা আরও কমার পূর্বাভাস পাওয়ায় খুলনা বিভাগীয় উপপরিচালকের নির্দেশে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ও মঙ্গলবারের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমান জানান, তীব্র শীতের কারণে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা মাথায় রেখে বিদ্যালয়গুলোর পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে শিক্ষকেরা স্কুলে উপস্থিত হয়ে দাপ্তরিক কার্যক্রম চালাবেন।

জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলায় শীতের পরিমাণ একটু বেশি। সরকারিভাবে আসা শুকনা খাবার ও কম্বল বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকেও সহযোগিতা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত