Ajker Patrika

রংপুরে আলুর দামে ধস: কেজিতে কৃষক পায় ৫ টাকা

  • হিমায়িত আলুতে লোকসান প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা
  • হিমাগার খরচসহ প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে ব্যয় ৩০ টাকা
শিপুল ইসলাম, রংপুর 
আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮: ০২
রংপুরে আলুর দামে ধস: কেজিতে কৃষক পায় ৫ টাকা

রংপুরে আলুর দামে ধস নেমে কৃষকেরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন। সরকারি দর ২২ টাকা নির্ধারণ করা হলেও হিমাগার খরচ বাদে কৃষকের হাতে আসছে মাত্র ৫ টাকা। উৎপাদন খরচের তুলনায় এত কম দাম পাওয়ায় চাষিদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার মৌসুমে শুধু রংপুর জেলায় ৬৬ হাজার ২৮০ হেক্টরে প্রায় ২০ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু হিমাগার রয়েছে মাত্র ৪০টি, যার ধারণক্ষমতা প্রায় ৪ লাখ ৬০ হাজার টন, যা উৎপাদনের চার ভাগের এক ভাগ।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ৪০ হিমাগারে মজুত ৪ লাখ ৬১ হাজার ৭৪৭ টনের মধ্যে এ পর্যন্ত আলু বের হয়েছে মাত্র ১ লাখ ১ হাজার ৫৯৪ টন, যা মজুতের চার ভাগের এক ভাগেরও কম। এদিকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হবে নতুন আলুর চাষ। ৬০ দিনে এই আলু বাজারে উঠবে। এমন অবস্থায় এবার হিমাগারেই আলু থেকে যাওয়ার আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।

চাষিদের হিসাব অনুযায়ী, মাঠপর্যায়ে আলু উৎপাদনের খরচ কেজিপ্রতি ১৮-২০ টাকা। হিমাগারে সংরক্ষণসহ এ খরচ দাঁড়াচ্ছে কেজিপ্রতি ৩০ টাকারও বেশি। কিন্তু বর্তমানে বাজারে আলুর দর কেজিপ্রতি ১২ টাকা। হিমাগারে প্রতি কেজি আলুর দর ১২ টাকা হলেও খরচ বাদ দিয়ে কৃষকের হাতে আসছে মাত্র ৫ টাকা। ফলে সরকারি দর ২২ টাকা আর বাস্তবে কৃষকের প্রাপ্তি ৫ টাকার মধ্যে বিশাল বৈষম্য রয়েছে।

রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় এবার আলু চাষ হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৯৮৫ হেক্টরে। আলু উৎপাদন হয় ৫৬ লাখ ৬৮ হাজার ৯৯২ টন। ১১৬টি হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয় মাত্র ১১ লাখ ৯ হাজার ৬৯২ টন। শুধু হিমায়িত আলুতে কৃষকের লোকসান এবার ১ হাজার ৯৯৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

গতকাল শুক্রবার রংপুরের অন্তত পাঁচটি হিমাগার ঘুরে দেখা গেছে, প্রকারভেদে প্রতি কেজি আলু সাড়ে ১০-১২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। টুকটাক কেনাবেচা চলছে। চাহিদা না থাকায় তেমন কর্মব্যস্ততা দেখা যায়নি। হিমাগারের শেডগুলো অধিকাংশ ফাঁকা রয়েছে।

সিনহা কোল্ডস্টোরে কথা হয় বামনদীঘি গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা নাহিদুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি জানান, সাড়ে ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪ একর জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। তাঁর উৎপাদন খরচ কেজিপ্রতি ২০ টাকা পড়েছে। মৌসুমের শুরুতে ১৪ টাকা কেজি হওয়ায় ৭০০ বস্তা (প্রতি বস্তায় ৬০ কেজি) আলুই হিমাগারে সংরক্ষণ করেন। গত মাসে ১২ টাকা দরে ৩০০ বস্তা বিক্রি করেছেন। হিমাগার খরচ ৬ টাকা ৭৫ পয়সা বাদে তিনি ৫ টাকা ২৫ পয়সা পেয়েছেন।

এনএন হিমাগারে গিয়েও একই চিত্র দেখা যায়। ২ লাখ ৬০ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণ থাকলেও এ পর্যন্ত বের হয়েছে মাত্র ৪৫ হাজার বস্তা।

তারাগঞ্জের ফকিরপাড়া গ্রামের কৃষক নুর আলম বলেন, ‘১ কেজি আলু তুলতে খরচ পড়ছে ২০ টাকা। বস্তা, গাড়িভাড়া ও খরচ মিলিয়ে ৩০ টাকা পড়ে। অথচ বাজারে পাচ্ছি ১০ টাকা করে। হিমাগারের খরচ কেটে নিলে হাতে আসে ৫ টাকা। তাহলে সরকার কোথায় ২২ টাকায় আলু কিনছে। এ লোকসান দিয়ে আমরা কীভাবে টিকে থাকব? এভাবে চলতে থাকলে কৃষকেরা আলু চাষ ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন।’

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারিভাবে রংপুরে আলু কেনা হলে কৃষকেরা উপকৃত হবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কোনো তথ্য পাইনি। আগামী মৌসুমে আলুর চাষ কমবে। কৃষকেরা যেন পরিকল্পিতভাবে আলু চাষ করেন সে বিষয়ে মাঠে কাজ করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাবশালী ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ গ্রেপ্তার

জুলাই সনদে স্বাক্ষর নিয়ে শেষ মুহূর্তে এসে অনিশ্চয়তা, সন্ধ্যায় ‘অতি জরুরি’ বৈঠক

ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ক্রিপ্টো কেলেঙ্কারি, ১৪ বিলিয়ন ডলারের কয়েন জব্দ

বিহার নির্বাচন: লড়বেন না প্রশান্ত কিশোর, ‘নিশ্চিত পরাজয়’ দেখছেন বিজেপি জোটের

প্রাপ্তবয়স্কদের কনটেন্ট চালু করছে চ্যাটজিপিটি, শিশুদের নিরাপত্তা কোথায়

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত