Ajker Patrika

বৃষ্টি ও ঢলে কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, পানিবন্দী ৫ শতাধিক পরিবার 

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
Thumbnail image

ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুড়িগ্রামে তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তিস্তার পানি রংপুরের কাউনিয়ার সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সৃষ্ট বন্যায় ভাটিতে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় তীরবর্তী পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র আজ রোববার সন্ধ্যা ৬টায় দেওয়া এক বার্তায় জানায়, রংপুর বিভাগের উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমেছে। তিস্তায় সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি আগামী ১৮ ঘণ্টা স্থিতিশীল থেকে পরবর্তী দুই দিনে উন্নতি হতে পারে। অপর দিকে ধরলা ও দুধকুমারের পানির সমতল আগামী ৩ দিন বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। 

পাউবো নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রোববার দুপুর ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। দিনভর ধীর গতিতে বাড়লেও সন্ধ্যা ৬টায় তা কিছুটা কমে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও এখনো বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

এদিকে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকা তিস্তার পানিতে জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ওই দুই ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক পরিবারের প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে পানিবন্দী পরিবারের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দুর্গত পরিবারগুলোর মাঝে শুকনা খাদ্য বিতরণ শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। 

শনিবার রাতভর তিস্তার পানি দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের ৫ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের হাজারো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। আরও ভাটিতে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের বেশ কিছু বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। তিস্তার বাম তীরের চেয়ে ডান তীরে পানিবন্দী পরিবারের সংখ্যা বেশি। ডুবে গেছে গ্রামীণ সড়ক ও ফসলি জমি। বাজারের দোকানপাট ও বিভিন্ন স্থাপনায় পানি প্রবেশ করেছে। কিছু স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন। 

ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝের চর, সরিষাবাড়ি ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বড় দরগা, স্লুইচ গেট, চর খিতাবখাঁ, মাঝের চর ও বুড়িরহাটের নদী তীরবর্তী শত শত পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছে এসব পরিবারের নারী, শিশু ও গবাদিপশু। যুবে গেছে সবজি ও আমন খেত। 

ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মামুন বলেন, ‘এলাকায় হাজারো মানুষ পানিবন্দী। রাস্তাঘাট সব পানির নিচে। মানুষের জমির ফসলও তলিয়ে গেছে। দ্রুত পানি না নামলে এলাকায় হাহাকার শুরু হবে।’ 

 ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডের আড়াই’শ এর বেশি পরিবার পানিবন্দী। রোববার দুপুরের পর থেকে হু হু করে পানি বাড়তেছে। পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। বেশির ভাগ পরিবারের ঘরবাড়িতে কোমর সমান পানি। শনিবার দুপুর থেকে এসব পরিবারে চুলা জ্বলছে না। মানুষের ফসলি জমি পানিতে তলায় গেছে।’ 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আসাদুজ্জামান বলেন, ‘উপজেলার দুই ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারের মাঝে সরকারিভাবে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও ২ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সোমবার থেকে তা বিতরণ করা হবে।’ 

জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া শুরু হয়েছে। আমরা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত